রঙ বদল পর্বঃ ০২
লেখকঃ আবির খান
একটা মেয়ে একা থাকে। পরিবার তাকে ত্যাগ করেছে। শুধুমাত্র সে ধর্ম পরিবর্তন করেছে বলে। দিন রাত খেটে নিজের পেট চালাচ্ছে। ইসলামিক সব নিয়মকানুন সে মেনে চলছে। মেয়েটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো মেয়ে। যার চোখ দেখলেই হারিয়ে যাওয়া যায় গভীর অতলে। সায়েম এসব ভাবছে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে। ও উঠে দাঁড়ায়। ফাতেমা এখনও সায়েমের উত্তরের জন্য ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। ফাতেমা বলেই উঠে,
~ আমার উত্তর বোধহয় আমি পেয়ে গিয়েছি। এটা আমার জানাই ছিল। যাই হোক ভালো হয়েছে। আপনি সত্যিটা জানলেন। এখন আর আমার প্রতি আপনার কোন টান থাকবে না। আপনি চাইলেই একজন সুন্দরী মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন। এখন আসি কাজ আছে আমার। ভালো থাকবেন।
সায়েম এখনও কিছু বলেনি ফাতেমাকে। ফাতেমা ভেবেছে সায়েম কিছুই বুঝবে না। কিন্তু ফাতেমার ওই দুচোখের কোণায় যে বিন্দু বিন্দু অশ্রুর আগমন হয়েছে তা সায়েমের চোখ এড়ায় নি। কিন্তু সায়েমের এই নিস্তব্ধতার কারণ কি? সে কী কাপুরুষ? ফাতেমার এই চরম বাস্তবতা তার মনের ভেতরের ভালবাসাকে মুহূর্তেই শেষ করে দিয়েছে? ফাতেমার উপর থেকে মন উঠিয়ে দিয়েছে? এসব হয়তো কান্নাসিক্ত ফাতেমা ভাবছে। ভাবছে সায়েমও। কিন্তু এর উত্তর ফাতেমা না জানলেও সায়েম জানে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
ওর এই নিস্তব্ধতার পিছনে লুকিয়ে আছে একটা বাস্তবতা। আর সেটা হলো ওর পরিবার। সায়েম চায় না একটা সম্পর্কের শুরুতেই ফাতেমাকে মিথ্যা আশা দেখিয়ে ওর মন ভেঙে দিতে। কারণ সায়েম জানে ওর পরিবার কখনো ফাতেমাকে মেনে নিবে না। কিন্তু ও শেষ একটা চেষ্টা করতে চায়। ভালবাসাটাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। ফাতেমার মতো হয়তো আর কাউকে কখনো পাওয়া হবে না। আর ও পেতেও চায় না। তাই এই নিস্তব্ধতা। সায়েম সেদিন কারো সাথে আর কোন কথা বলেনি। ফাতেমা দূর থেকে বারবার ছলছল চোখে সায়েমকে দেখছিল। মানুষটা সেদিন কারো সাথে কথা বলেনি। নিজেকে কেবিনে একা করে কোন অজানা চিন্তায় যেন ডুবে ছিলো। ফাতেমা কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক নজর করে সায়েমকে দেখেছে। ফাতেমা ভাবছে, “আমার এসব বাস্তবতা হয়তো তাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। আমার বোধহয় এই অফিসটা এবার ছাড়তে হবে। নাহলে উনি প্রতিনিয়ত কষ্ট পাবে। কালই এই অফিসটা ছেড়ে দিব। এরপর দূরে অন্য কোন শহরে চলে যাবো। সবার থেকে অনেক দূরে। অনেক।”
রাত ৮.৩৪ মিনিট,
সায়েম ক্লান্ত আর চিন্তিত মুখখানা নিয়ে বাসায় ফিরে। আজকের পূর্বে সায়েম ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলেও মুখে একটা হাসি থাকতো। কিন্তু আজ সে হাসির বদলে আছে দুশ্চিন্তা আর একরাশ ভয়। সায়েমের মা ওকে রুমে যেতে থামিয়ে দিয়ে পিছ থেকে বলে উঠে,
~ সায়েম, কি হয়েছে বাবা?
সায়েম আস্তে করে পিছনে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কিছু না মা। একটু ক্লান্ত। তুমি খাবার দেও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
~ আচ্ছা আয়।
সায়েয় ওর রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে বিছানায় বসে আছে অসহায়ের মতো। ও কখনো ভাবেনি জীবন এভাবে তার রঙ বদল করবে। নীল আকাশটা হঠাৎ দুশ্চিন্তা আর ভয়ের কালো মেঘে ছেয়ে যাবে। সায়েম ভেবেই পাচ্ছেনা কীভাবে এতোগুলো মানুষকে ও বুঝাবে।
সায়েমের পরিবারটা যে ছোট তা কিন্তু নয়। সায়েমরা তিন ভাই বোন। ও সবার ছোট। বাকি দুজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ভাই আর বড় আপু বাবা-মার কথা মতো বিয়ে করেছে। সেখানে সায়েম ফাতেমাকে ভালবাসে। তার উপর ওর এই বাস্তবতা। কীভাবে সবাইকে বুঝাবে? সায়েমের মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বড় ভাই বাবা মা তো বাসায়। ভাবিও আছে। সায়েম ওর বড় বোন লিমাকে ফোন দিয়ে একটু আসতে বলে। লিমা ওদের পাশের বিল্ডিয়েই থাকে। সায়েম হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আজ যেন ও সফল হয়। এরপর ও ফ্রেশ হতে চলে যায়। অন্যদিকে,
~ আরে লিমা তুই এখন? এই রাতে? সব ঠিক আছে মা? (সায়েমের মা লিমাকে দেখে)
~ হ্যাঁ ঠিক আছেতো। আমাকে সায়েম আসতে বলল।
~ কি বলিস! ও তোকে কেন আসতে বলল হঠাৎ?
এর মধ্যে সায়েমের বড় ভাই শরিফ এসে উপস্থিত। সেও লিমাকে এতো রাতে এখানে দেখে বেশ অবাক। শরিফ বলে উঠে,
– আরে লিমা তুই? এখন কি মনে করে? সব ঠিক আছে?
সায়েমের মা বলে উঠে,
~ আমিও ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু ও বলল সায়েম নাকি ওকে ডেকেছে।
– সায়েম ওকে কেন ডাকলো এতো রাতে? কই সায়েম কই?
~ ওর রুমে ফ্রেশ হতে গেছে। ওই তো সায়েম। (মা)
শরিফ সায়েমকে দেখে ডাক দেয়। আর বলে,
– কিরে লিমাকে নাকি ডেকে পাঠিয়েছিস?
– হ্যাঁ ভাইয়া। তোমাদের সাথে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তাই আরকি।
লিমা বলে উঠে,
~ কি কথা সায়েম?
– তোমরা বসো আমি খেয়ে আসছি। তারপর সব বলবো।
~ আচ্ছা আয়। লিমা চল তোর বাবার সাথে দেখা করবি। শরিফ তুইও আয়।
মা আর বোনকে নিয়ে বাবার রুমে যেতে যেতে শরিফ ওর মাকে বলে,
– হ্যাঁ চলো। আজ সায়েমকে অন্যরকম লাগছে তাইনা মা?
~ ঠিক বলেছিস। অফিস থেকে এসেছেও মুখ ভারী করে। কি যে হলো ওর।
~ ভাইটার হঠাৎ কি হলো কে জানে। যাক গে ওই বলবে নে৷ চলো বাবার কাছে যাই। (লিমা)
সায়েমের বাবাও লিমাকে দেখে অবাক। সায়েমের মা তাকে বলল যে, সায়েম লিমাকে আসতে বলেছে। ও সবাইকে কি যেন বলবে। সায়েমের বাবাও চিন্তায় পড়ে যায় কি এমন বলবে ও। সায়েম এদিকে খাচ্ছিলো। ওর ভাবি মানে শরিফের বউ সায়েমকে খাবার দিচ্ছিলো। সায়েমের খাবার মাঝে তিনি বলে উঠেন,
~ ভাই তোমার কিছু হয়েছে? খুব অন্যরকম লাগছে তোমাকে। তুমি চাইলে আমাকে সব বলতে পারো। আমি কাউকে কিছু বলবোনা।
– ভাবি আপনি ভাইয়াকে অনেক ভালবাসেন তাইনা?
~ হ্যাঁ অনেক ভালবাসিই। কেন?
– আচ্ছা আপনি কখনো চাইবেন আপনার এই ভালবাসার মানুষকে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে একা ছেড়ে যেতে?
~ না কখনো চাইবো না। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাশে থাকবো।
– ভাবি আমিও যে একজনের পাশে আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকতে চাই। আপনারা কি আমাকে সাহায্য করবেন না থাকতে?
ভাবি হেসে দেয়। আর বলে,
~ বোকা ছেলে একটা। আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। তুমি ভয় পেও না। আমরা আছি। সবাই মেনে নিবে। আল্লাহ ভরসা।
– সত্যি তো ভাবি? আমাকে পর করে দিবেন না তো?
~ পাগল ছেলে। খাওয়া শেষ করে ঝটপট মনের কথা আর মনের মানুষের কথাটা সবাইকে বলে ফেলো। তারপর একটা হবেই নে।
– জ্বী ভাবি দোয়া করবেন আর সাথে থাকবেন।
~ আছি ভাইটু আছি।
সবাই সায়েমের জন্য অপেক্ষা করছে। খাওয়া শেষে ইশার নামাজ পড়ে সায়েম ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে। সবাই সায়েমের দিকে তাকিয়ে আছে। ও সবার চোখ পড়ে বুঝলো বড় ভাবি সবাইকে কিছুটা ইংগিত দিয়েছে। সায়েম সবার সামনে বসে। ও বসতেই ওর বাবা বলে উঠে,
– কিরে তুই নাকি কাউকে পছন্দ করিস কে সে বল?
সায়েম বড় ভাবির দিকে তাকায়। সে হাসি দিয়ে নিশ্চিতে বলতে বলে। সায়েম একটা খোলা নিঃশ্বাস নিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে বলতে শুরু করে,
– বাবা কথাটা সত্য। অফিসে একটা মেয়ে আছে খুব ভালো ও। ওর ভদ্রতা আচার আচরণ আর বেশ পরহেজগারি দেখে আমি মুগ্ধ হই। ওর ফেইস আমি আজও দেখিনি। সবসময় মুখ ঢেকে আসে কাজে। আবার কাজ করে চুপচাপ চলে যায়। আল্লাহকে প্রচুর ভয় পায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। একদম আর্দশ একটা মুসলিম মেয়ে। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। তাই তোমাদের মতামত চাচ্ছি।
সায়ের বোন বলে উঠে,
~ মাশাল্লাহ এরকম মেয়েই তো আমরা তোর বউ হিসেবে চাই।
ভাবিও বলে উঠে,
~ হ্যাঁ হ্যাঁ। মেয়েটা নিশ্চয়ই অনেক ভালো।
শরিফ বলে উঠে,
– বাবা তুমি কি বলো?
সায়েমের বাবা এবার বলে,
– আমার আপত্তি নেই। সায়েমের মা তোমার আছে?
~ তোমরা রাজি থাকলে আমিও রাজি। সায়েম কোন দিন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
– তাহলে তো হলোই। আমাদের কষ্ট করে ওর জন্য আর কাউকে খুঁজতে হলো না। তবে মেয়েকে আমরা দেখতে যাবো। মেয়ের পরিবার কেমন? সব কিছু খুটিয়ে দেখবো। তোর মা, বোন আর ভাবি মেয়েকে দেখবে। সব কিছু ঠিক থাকলে তারপর আমরা ফাইনাল করে আসবো।
সায়েমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। হাত-পা চিন্তায় ঠান্ডা হয়ে আসছে। কারণ এখনো আসল কথাটাই বলা হয়নি। সায়েম নিজেকে সামলে বলে উঠে,
– বাবা আরো একটা কথা বলার ছিল তোমাদের।
– হ্যাঁ বল।
– মেয়েটা একা। আর ও নতুন মুসলিম হয়েছে। যার জন্য ওর পরিবার ওকে ত্যাজ্য করেছে। ওর এখন আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই।
সায়েমের এ কথা বলা মাত্রই সবাই যেন পাথর হয়ে যায়। কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। সবার চোখে যেন আগুন জ্বলছে। সায়েম মাথা নিচু করে আছে৷ সায়েমের বাবা গরম গলায় শরিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– শরিফ ওকে বলে দে এই প্রসঙ্গে যেন আর একটা কথা না তুলে। কাল ওর জন্য মেয়ে দেখবি তুই। আর তোমরা বাকিরা যেতে পারো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
সায়েম অসহায় হয়ে পড়ে। ও বলে উঠে,
– বাবা আমি…
– সায়েম আমি আর একটা কথা শুনতে চাইনা। তুই বড় বলে গায় হাত তুললাম না। আর কিছু বললে আমি কিন্তু ভুলে যাবো সব। (অনেক রাগী ভাবে)
সায়েম একদম অসহায় হয়ে পড়ে। সবাই একদিকে আর ও একা একদিকে। কি করবে ও? কীভাবে বুঝাবে নিজের পরিবারকে? চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে ওর। অন্যদিকে আরেকজন জায়নামাজে অঝোরে কাঁদছে। কি হবে সামনে?
চলবে..?
সবার ভালো সাড়া চাই। কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।