রঙ তুলির প্রেয়সী ৩.

0
2644

রঙ তুলির প্রেয়সী
৩.

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে নিজের রুমে তিথি। একটু আগে আদিয়া ডেকে গেছে, ব্রেকফাস্ট করার জন্য। ঘড়িতে সকাল আটটা বাজে। এমনিতে ফজরের নামায পড়ে আরেক দফা ঘুমিয়ে দশটার আগে ওঠেনা সে। কিন্তু এখানে তো পরের বাড়ি, এতো বেলা করে ঘুমানো টা ভালো দেখায় না। হাই দিতে দিতে বেরিয়ে গেল সে রুম থেকে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় হঠাৎ ডাইনিং টেবিলে একজনকে দেখে থমকে গেল সে। খুব চেনা চেনা লাগছে… ভ্রু কুঁচকে ভালোভাবে তাকালো তিথি। আরে হ্যাঁ, এটাতো কালকের সেই মোগ্যাম্বোটা যে ওর রুমে ঢুকে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিলো। যদিও কালকে মুখ দেখেনি, কিন্তু এই লাল রঙের টি-শার্ট টাই পরা ছিল। এহ, খাচ্ছে দেখোনা! এত আস্তে আস্তে কেউ খায়? একটু খেয়ে আবার ছয় ঘণ্টা পরে আরেকটু খাচ্ছে! উফ, স্টাইল দেখে বাঁচা যায়না! এতো প্রানবন্ত রিয়াদ ভাইয়া আর আদিয়া। এদের ভাই কী করে এতো মোগ্যাম্বো হলো ভেবে পায়না তিথি। মনেমনে ভেংচি দিলো সে। গতকাল রাতে নালিশ নিয়ে গিয়েছিলো সে মুনতাহার কাছে। সব শুনে মুনতাহা বলেছিলেন, ‘আসলে ঐ ঘরটায় ওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রাখা ছিল রে মা। মনেহয় বেশিই গুরুত্বপূর্ণ কিছু যা রুমে খুঁজে না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। তাই এমন… তুই মন খারাপ করিসনা। আমি টুনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, সে সব গুছিয়ে দিবে।’ তিথি মুনতাহাকে আর কিছু বলেনি। কিন্তু মনেমনে ঠিকই ঐ মগেম্বোটার গুষ্টি উদ্ধার করছিলো। মানে, এভাবে করতে হবে? অদ্ভুত! তাও কী ভাব বাবারে! পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলোও না এখানে কোনো মানুষ আছে কি না! মনেমনে আবার ভেংচি দিলো তিথি। তারপর সেখানে দাঁড়িয়েই মাথা এদিক সেদিক নাড়িয়ে জাওয়াদের মুখটা দেখার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু ও শুধু মুখের বাম সাইড দেখতে পাচ্ছে।

‘এই তিথি, দাঁড়িয়ে আছিস কী রে? আয় আয় নাস্তা করবি আয়।’ সিঁড়িতে তিথিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাকলেন মুনতাহা। আদিয়া আর রিয়াদও মুনতাহার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো তিথির দিকে। দুজনেই হাসলো।

‘হ-হ্যাঁ…’ বলে নিচে নেমে যেতে লাগলো তিথি। অদ্ভুত তো! মামণি ডাকার সাথেসাথে বাকিরা আমার দিকে ফিরে তাকালো। কিন্তু এ ব্যাটা খাবারের দিক থেকে মাথাই তুললোনা! জন্ম জন্মান্তরের ভুক্কা নাকি রে? এসব ভাবতে ভাবতে নিচে টেবিলে গিয়ে বসলো তিথি।

‘গুড মর্নিং তিথি। কী অবস্থা? ঘুম কেমন হলো?’ রিয়াদ জিজ্ঞেস করলো হেসে।

‘ভালোই।’ হাসলো তিথি।

‘এই তিথি, আজ একটু বেরোবো আমরা। ঠিক আছে? এগারোটার দিকে রেডি থাকবি।’ খেতে খেতে বললো আদিয়া।

‘কোথায়?’ জিজ্ঞেস করলো তিথি।

‘আর বলোনা, মেকাপ টেকাপ কিনবে আরকি। ওর আর কী? আর তোমার জন্য বই কিনবো। সেজন্যেই মূলত যাওয়া।’ বললো রিয়াদ।

‘ও!’ মনটাই খারাপ হয়ে গেল। খালি পড়া পড়া আর পড়া। পৃথিবীতে এটা ছাড়া আর কিছু নাই?

‘কিছু কাপড়চোপড় ও কিনিস মেয়েটার জন্য। এখানে এসেছে, এখনও কিছু দিতে পারিনি ওকে।’ বললেন মুনতাহা।

‘আরে আমার আছেতো মামণি…’ বলে তাকালো তিথি মুনতাহার দিকে। মুনতাহা একবার চোখ বড় করে তাকালেন ওর দিকে, চুপ হয়ে গেল তিথি। মুনতাহা আবার বললেন, ‘খাসনা কেন? এতোক্ষণ থেকে হাত গুটিয়ে বসে আছিস কেন?’

‘খাচ্ছি তো।’ বলে খেতে লাগলো তিথি।

কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর রিয়াদ বললো, ‘এই তিথি, আমাদের বড় সাহেবের সাথে পরিচিত হয়েছো? তুমিতো আগে দেখোনি ওকে। তুমি যখন এসেছিলে সে দেশে ছিলোনা। এইযে, আমাদের বড় সাহেব। জাওয়াদ!’ হাত তুলে জাওয়াদের দিকে ইশারা করলো রিয়াদ। এতোক্ষণে চোখ তুলে তাকালো জাওয়াদ। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে হেসে ভ্রু উঁচিয়ে বললো, ‘ভালো আছো?’

উইসসালা! এ তো হাসতেও জানে! এমন ভাব যেন মনে হচ্ছে এই প্রথম তিথির সামনাসামনি হলো। অবশ্য সামনাসামনি এই প্রথমই, কাল তো পিছ দিয়ে ছিল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘ভালো, ভাইয়া৷ আপনি?’ বলে পরখ করতে লাগলো তিথি জাওয়াদকে। ফর্সা, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, চুলগুলো খাড়া খাড়া। রিয়াদ এর চেহারার সাথে অদ্ভুত মিল আছে। রিয়াদ শুধু একটু শুকনো, আর ওর রিয়াদ এর থেকে একটু হালকা মাংস বেশি, এই যা।

‘হুম।’ বলে আবার খাবারে মনোযোগ দিলো জাওয়াদ। মুনতাহা বললেন, ‘তোর তো দেখা হয়েছে তিথির সাথে।’

‘কখন?’ ভারি অবাক হলো জাওয়াদ।

‘কখন মানে? কাল তো ওর ঘরে গিয়ে সব এলোমেলো করে দিয়ে আসলি।’

হঠাৎ জাওয়াদের মনে পড়ে গেল গত রাতের কথা। তারপর হেসে বললো, ‘ওহ, খেয়াল নেই। বাট ওকে আমি দেখিনি।’ বলে পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে সেটা নামিয়ে টেবিলের ওপর ধরে রাখলো।

ব্যস? খেয়াল নেই? বললেই হলো? আরে ব্যাটা স্যরি তো বলবি নাকি? তোর জন্য আমার ঘুমের দুই ঘণ্টা লেইট হইছে। দেখো দেখো, ভাব দেখো, তাকাচ্ছেই না! এসব ভাবতে ভাবতে হাতের চামচটা প্লেটের ওপর নাড়াচ্ছিলো তিথি। হঠাৎ অসাবধানতায় সিদ্ধ ডিমের ওপর চামচটা এমনভাবে লাগলো যে সেটা উড়ে গিয়ে জাওয়াদের হাতের ওপর পড়লো, সে হাতে সে গ্লাসটা ধরে ছিল। আদিয়া, রিয়াদ ও মুনতাহা খাওয়া থামিয়ে ভয়ার্ত চোখে জাওয়াদকে দেখলেন। কেঁপে ওঠে হাত সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাকায় জাওয়াদ। জাওয়াদকে তার দিকে তাকাতে দেখে তিথি ফোঁস করে বলে উঠলো, ‘এভাবে তাকানোর কী আছে? মুরগীর ডিমই তো পড়েছে। বিষ্ঠা তো আর পড়েনি!’

‘হোয়াট!’ বলে অবাক চোখে তাকালো জাওয়াদ। তার মুখে খেলা করছে অস্বস্তি, অপমান। সবাই নীরব। আদিয়া করুণ চোখে তাকালো মুনতাহার দিকে। মুনতাহার দৃষ্টি খাবারের প্লেটে নিবদ্ধ। তিথি আবার বললো, ‘বাংলা বোঝেন না?’

জাওয়াদ যেনো আরো অবাক হলো। এভাবে মুখেমুখে ওর সাথে কেউ কথা বলেনি একজন ছাড়া। এই মেয়ে কে? রাগ হতে লাগলো জাওয়াদের। সে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো রিয়াদের দিকে। সাথেসাথে হো হো করে হেসে উঠলো রিয়াদ। আদিয়া ও হেসে দিলো। মুনতাহাও নিজেকে আঁটকাতে পারলেন না, হেসে দিলেন। রান্নাঘরের দরজায় টুনি দাঁড়িয়ে ছিলো। ফিক করে হেসে দিলো সেও। সাথেসাথে জাওয়াদ ঘুরে তাকালো সেদিকে। হাসি আঁটকে প্রাণ হাতে নিয়ে রান্নাঘরের ভেতরে চলে গেল টুনি। অবাক চোখে জাওয়াদ তাকালো মুনতাহার দিকে। মুনতাহা প্লেট হাতে উঠে গেলেন সেখান থেকে। জাওয়াদ চোখ কটমট করে তাকালো আদিয়ার দিকে, আদিয়া হাসি বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর তিথির দিকে তাকালো জাওয়াদ, তিথি তাকিয়ে আছে তার চোখের দিকে। কী নির্লজ্জ মেয়ে! ভাবতেই রাগ যেনো বাড়তে লাগলো জাওয়াদের। রিয়াদ তখনও হেসেই চলেছে। ভীষণ বিরক্ত নিয়ে রিয়াদের দিকে তাকায় জাওয়াদ।

‘স্যরি ব্রো, স্যরি স্যরি।’ বলে হাসি আঁটনোর চেষ্টা করলো রিয়াদ। রাগ এবার তুঙ্গে জাওয়াদের। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে হনহন করে চলে গেল।

‘হেই জাওয়াদ, হেই দাঁড়া, আরে স্যরি…’ বলতে বলতে পেছন পেছন গেল রিয়াদ। ভেংচি দিয়ে খেতে লাগলো তিথি। আদিয়া এবার নিজের হাসি উগড়ে দিলো। হাসতে হাসতে বললো, ‘তুই কী রে? এতো সাহস পাস কই?’

‘এখানে এতো সাহসের কী?’

‘আমি বলেছিলাম, আমরা বড় ভাইয়াকে রাগাই না।’

‘তো? রাগালে কী হয়?’

‘বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চায়।’

‘তারপর? যায়না?’

‘না। ছোট ভাইয়া আঁটকায় সবসময়।’

‘এ আবার কেমন রাগ? আরে এসব হচ্ছে ভং বুঝলি? যাবে টাবে না। যাওয়ার হলে এমনিই যেতো। রিয়াদ ভাইয়া আঁটকাতে পারতোনা।’

‘উহু, ওরা ভাই কম, ফ্রেন্ডস বেশি।’

তিথির হঠাৎ মনে হলো এমন ভাব করে বললো, ‘হ্যারে, রিয়াদ ভাইয়া নাম ধরে ডাকে কেন? উনার বড় না?’

‘তোকে কে বললো বড়?’ হাসলো আদিয়া।

‘তুই-ই তো ছোট বড় বলে ডাকিস।’

‘ওরা টুইন। ছয় সেকেন্ডের ব্যবধান দুজনের জন্মে। আমার তো ডাকতেই হয় এভাবে।’

‘ওহ! এজন্যেই চেহারায় দুজনের মিল!’ বলে একবার দোতলার দিকে চোখ বুলালো তিথি। ছেলেটা যেনো কেমন!
____________________________________________________

একটু পর বেরোবে রিয়াদ আর আদিয়ার সাথে তিথি। তাই শাওয়ার করে নিবে চিন্তা করলো। কিন্তু তোয়ালে টা খুঁজে পাচ্ছেনা কেন? কোথায় রাখলো? এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ মনে পড়লো, বারান্দায় মেলে দিয়েছিলো সকালে। নিজের কপালে নিজেই একটা চাপড় মেরে সেদিকে পা বাড়ালো সে। দরজার কাছে যেতেই পাশের বারান্দায় চোখ পড়তেই থমকে গেল তিথি। নিজেকে যথাসম্ভব দরজার আড়ালে রেখে দেখতে লাগলো সে। পাশের বারান্দায় মাত্র শাওয়ার করে এসে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে নিজের মাথা মুছছিলো জাওয়াদ। খালি গা, শুধু ট্রাউজার পরে আছে। শরীরে বিন্দু বিন্দু জল দেখা যাচ্ছিলো। বুকের ওপর লম্বা লোমগুলো লেপ্টে ছিলো। সুঠাম দেহের অধিকারী জাওয়াদকে দেখে চোখ কপালে উঠে গেল তিথির। সে ঢোঁক গিলে বিড়বিড় করে বললো, ‘মোগ্যাম্বো তোহ হট আছে মামা!’

জাওয়াদ তোয়ালে মেলে দিয়ে চলে গেল সেখান থেকে রুমে। তিথি সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। ভুলেই গেল, সে যে নিজের তোয়ালে নিতে এসেছিলো।
___________________________________

চলবে……
@ফারজানা আহমেদ
সবাই এই পেজে একটা লাইক দিয়ে আসবেন। লিংক- https://www.facebook.com/Dear.DepressioNx/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে