রঙ তুলির প্রেয়সী ১৯.

0
2724

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৯.

রাত বিরেতে পুকুরপাড়ে এসে বসে আছে টুনি। কিছুক্ষণ পরপর কিছু একটা বিড়বিড় করছে আর আপন মনেই মুখ ভেংচি দিচ্ছে। সিঁড়িতে এসে বসার আগে পুকুরপাড়ের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে এসেছিলো টুনি। চাঁদের আলোয় পুকুরের পানিগুলো চিকচিক করছে। আর সেদিকে তাকিয়ে আছে সে এক দৃষ্টিতে, তাই এখনও টের পায়নি তার পাশেই আব্দুল সেই কখন থেকে এসে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর টুনি একটু নড়েচড়ে বসতে গিয়ে ডান পাশে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠলো। পরক্ষণেই আবার মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকালো। আব্দুল বললো, ‘রাইত বিরাইতে এনে বইসা আছোস ক্যান?’

‘ভালা করছি। যাও এন থিকা।’, মুখ ঝামটি মেরে বললো টুনি। আব্দুল হেসে দিলো। টুনিকে ডাকলো দু’একবার নাম ধরে, কিন্তু টুনি পাত্তা দিলোনা। আব্দুল তখন হুট করেই সেই গানটা গাইতে লাগলো, যেই গান একটু আগে টুনি গেয়েছিলো খেলায়। গান শেষ হওয়ার আগেই খিলখিল করে হেসে উঠলো টুনি। হাসতে হাসতে বললো, ‘আর গাইওনা, কানের আঠারোটা বাইজা যাইবো।’

আব্দুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, ‘হাসোস ক্যান ছ্যামড়ি? আমি গাড়ি চালাই। গানের ইশকুল চালাই নাকি?’

‘তাইলে আমিও তো ঘরের কাম করি। হারমুনি বাজাই নাকি যে রুনা লায়লার মতো গান গামু?’

টুনির বলার ধরনে আব্দুল হেসে দিলো। তারপরে বললো, ‘এনে আইসা বসলি যে, কেউ যদি খুঁজে তোরে তাইলে কী করবি?’

টুনি হাত নেড়ে বললো, ‘না খুঁজবোনা। আমি খালাম্মারে কইয়া আসছি যে ওজু করতে যামু। মটর নষ্ট না? পানিতো নাই হেগো উশরুমে।’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘উশরুম কী? নয়া কিছু আছে নাকি এনে এই নামে?’, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আব্দুল।

‘আরে! এরলিগাই কই কিছু ইংরিজি বই পড়ো। উশরুম গোসলখানারে কয় ইংরিজিতে।’, বিজ্ঞের মতো বললো টুনি।

‘মুক্কুসুক্কু মানুষ আমি। তুই ইকটু শিখাই দিলেই পারিস।’

‘আইচ্ছা এহন থিকা শিখাই দিমু।’

‘যা এলা ঘরে যা। এনে রাইতে বিরাতে বই থাহিসনা। যা।’, তাগদা দিলো আব্দুল।

‘আইচ্ছা। ইট্টু পরে খাওন রেডি হইবো। ঘরেই থাইকো।’, বলে টুনি একটা হাসি দিয়ে ওজু করে চলে গেল।
___________

তিথির মাথা কিছুক্ষণ নিজের বুকে চেপে ধরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো জাওয়াদ। তারপর দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি, রিয়াদ, মাহি, অন্তু, নুহা… আমরা সবাই একসাথে লেখাপড়া করেছি। সমবয়সী আমরা। গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করার পরেও আমাদের বন্ধুত্ব আগের মতোই ছিলো। আড্ডা, হ্যাংআউট সব চলতো আগের মতোই। অন্তু মাহিকে পছন্দ করতো। কিন্তু আমার কারণে ভয় পেতো সে। তখন আমি আমার চারুকলার কিছু বন্ধুদের সাথে একটা উদ্দেশ্যে আউট ওব কান্ট্রি ছিলাম। একদিন হুট করে আমার ফোনে নুহার ম্যাসেজ আসে…’

এইটুকু বলে থামলো জাওয়াদ। গলাটা খানিক কেঁপে উঠলো শেষের কথাটা বলতে গিয়ে। ঢোঁক গিললো সে। তার বুক কাঁপছে মৃদুভাবে। হৃদপিণ্ডের কম্পন শুনতে পাচ্ছে তিথি। বুকটা কেমন হুহু করে উঠলো তিথির। সে আরো নিবিড়ভাবে মাথা চেপে ধরলো জাওয়াদের বুকে। আর তারপর… এতোক্ষণ যে কাজটা করতে সংকোচ বোধ করছিলো সেটা করে ফেললো। দু’হাত জাওয়াদের পেছনে নিয়ে পিঠের ওপর রাখলো। খুব সন্তর্পণে। জাওয়াদ হাসলো নিঃশব্দে। তারপর আবার বলতে লাগলো, ‘সেই ম্যাসেজে একটা ছবি ছিলো। সেই ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো, অন্তু মাহিকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে। আর জায়গাটা… জায়গাটা ছিলো অন্তুর বেডরুম।’

আবারও থামলো জাওয়াদ। এবার তিথি মাথা তুলে তাকালো ওর দিকে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো তিথি, জাওয়াদের চোখে মুক্তর মতো চিকচিক করছে জল। ইশ! কতো কষ্ট হয়েছিলো তখন জাওয়াদের? আর এখনই বা কতো কষ্ট হচ্ছে? কান্না পেয়ে গেলো তিথির। সে নিজের চোখের পানি লুকানোর জন্য আবার জাওয়াদের বুকে মাথা রাখলো। জাওয়াদ নিশ্বাস নিলো লম্বা করে। তারপর বললো, ‘হুটহাট রেগে যাই আমি। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। সেদিন কল করে মাহিকে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি। স্ল্যাং ইউজ করেছি। কিন্তু মাহি আমাকে কিচ্ছু বলেনি, একটা টু শব্দও করেনি। তাতে আমার রাগ আরো বেড়ে যায়। আমি আমার মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলি। ব্যস, আর মাহির সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দেই। বন্ধুর ফোন থেকে শুধু পরিবারের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু ওদিকে বেদনায় কাতরাচ্ছিলো আমার মাহি। আমি বুঝতে পারিনি সে বেদনা। নিজের রাগ আর জেদ নিয়ে বসে ছিলাম।’

এটুকু বলে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো জাওয়াদ। বুকটা ব্যথায় চিনচিন করছে। ঢোঁক গিলে আবার বললো, ‘অথচ, আমার মাহি যে এমন করতেই পারেনা কোনোদিন সেটা একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি। আমি ক্রোধে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দেশে আসার পরে জানতে পারলাম… জোর করে ওসব করেছে অন্তু মাহির সাথে। নুহাও জড়িত ছিলো। যে করেই হোক আমাদের আলাদা করতে চেয়েছে ওরা। কারণ? নুহা আমাকে পছন্দ করতো।’

তিথি মাথা তুলে তাকালো। জাওয়াদ হাসছে! হালকা শব্দ করে হাসছে। তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে জাওয়াদ বললো, ‘জানো? অন্তুকে বেধম পিটিয়েছিলো রিয়াদ। আমাকে বলেনি, কিন্তু আমি জানি। তারপর থেকে আমি হয়ে গেলাম মুডি জাওয়াদ। কারো সাথে মিশিনা খুব একটা। সবসময় একা একা থাকতে ভালো লাগতো। মাহি যাওয়ার পরে আর কারো প্রতি আমি মনোযোগ দিতে পারি নি।’

থমলো জাওয়াদ। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিথি জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদ দু’হাতে তিথির মুখটা ধরে উঁচু করলো। তারপর আচমকা ঠোঁট ছোঁয়ায় তিথির কপালে। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো তিথি। দু’গালে লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পড়লো। হৃদপিণ্ডের চারপাশে ভালোবাসার পাখিরা কিচিরমিচির করতে লাগলো। নিশ্বাস পড়ছে দ্রুত। জাওয়াদ বললো প্রায় ফিসফিস করে, ‘তারপর একদিন এক এলোকেশীকে দেখলাম বৃষ্টি বিলাস করতে। তার মাঝে আমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। সেদিনই হুট করে অনুভব করলাম, আরো একবারের জন্য আমার হৃদয় বেসামাল হয়ে পড়েছে। হৃদয় ধুকপুক করে জানান দিচ্ছিলো, প্রাণনাশী ভালোবাসার জানান দিচ্ছিলো। তুমি আমাকে ভালোবাসার বানে মেরেই ফেলেছো তিথি… আরো একবার…’

তিথি চোখ খুললো। বুকের ভেতর ঝড় উঠেছে যেন। কান থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এসব সত্যি? জাওয়াদ এসব কী বললো? ভালোবাসা! টুপ করে তিথির গাল বেয়ে এক ফোটা জল গড়ালো। তিথি কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু আশ্চর্য! গলায় সব কথা আটকে আছে। তিথি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জাওয়াদের হাত দুটো একটু ঠেলে দিতেই জাওয়াদ তিথির কপালের সাথে নিজের কপাল লাগালো। তিথির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। ঠোঁট কামড়ে ধরেছে সে নিজের। জাওয়াদ এবার আস্তে আস্তে বললো,

‘আমার শুধু “তুমি” চাই।
”তোমার” চোখের দিকে তাকিয়ে-
বিভোর হয়ে,
”তোমাকে” নিয়ে শত শত কবিতা লিখে ফেলতে চাই।
হ্যাঁ, আমি ”তোমাকেই” চাই।’

তিথি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বললো, ‘আমি, আ-আমি এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবো… আমার সবকিছু স্বপ্ন লাগছে!’

তিথির কোমর ধরে তিথিকে উঁচু করে নিজের মুখোমুখি করলো জাওয়াদ। তিথি চোখ খুলে তাকালো। চাঁদের আলোয় ঐ চোখে তাকিয়ে জাওয়াদ অনুভব করলো, এই চোখে তাকিয়েই সে শান্তিতে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। সে হাসলো। তারপর বললো, ‘আমার রঙ তুলির প্রেয়সী হবে তিথি? কথা দিচ্ছি, হারিয়ে যেতে দেবো না। হৃদয়ে তো রাণী হয়ে বসেই আছো, চলো তোমাকে আমার জীবনের রাণী বানাবো।’

কান্নারা অনেক যুদ্ধ করছে তিথির সাথে, বেরিয়ে আসবে বলে। কিন্তু তিথি নাছোড়বান্দা, চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ার পরেও কান্নাদের আসতে বাধা দিচ্ছে। ঢোঁক গিলে কাঁদো কাঁদো গলায় সে বললো, ‘এভাবে কথা বলে আমাকে কাঁদানোর মানে কী, হ্যাঁ? আমার যে এখন মাথা ঘুরছে… মনে হচ্ছে এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবো। আচ্ছা, অজ্ঞান হলে কি আপনি আমাকে কোলে তুলে নেবেন?’

জাওয়াদ হেসে দিলো। তিথিকে আবার বুকে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, ‘পাগলি!’
____________

চলবে…….
#ফারজানা_আহমেদ
সবাই একটু এই গ্রুপে গিয়ে এই পোস্টে রিয়েক্ট করে আমার ভাইকে জিতিয়ে দিবেন। লিংক- https://m.facebook.com/groups/282291599350918?view=permalink&id=591227661790642

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে