রঙধনু?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
শেষ পর্ব
?
দেখতে দেখতে দিন চলে আসছে ফারিহার জন্মদিনে তবে এভ্রিলের ইচ্ছে নাই ধুমধাম জন্মদিন পালন করার..সে খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে হলেও সুলেমানকে বিয়ে করে সে মুসলিম ধর্ম নিয়েছে।।
ফারিহার জন্মদিন পালন না করলেও ফারিহার জন্য সুখ শান্তির বাসায় ইমাম সাহেব ডেকে মিলাদ দিবে,ফারিহার পছন্দের খাবার সে আর মোহ মিলে বানাবে।।
মোহকে ফারিশ আর ফারিহার রুমে ঘুমাতে দেয় না..এইতো কিছুদিন আগ,মোহ ফারিহার রুমে এসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ওমনি পিছন দিক থেকে এসে ফারিশ মোহকে কাধের উপর তুলে নিয়ে যাচ্ছে রুমের দিকে,মোহ এদিক ওইদিক তাকাচ্ছে কেও দেখলো কি না শরমে তার মাথা শেষ হয়ে যাবে কেও দেখল।।
ঘরে এসে বিছানায় ধপ করে দিলো ফারিশ মোহকে,মোহ উঠতে চাইলে মোহকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলছে সে,
“তোরে বলছিই না যা শাস্তি দেয়ার আমার পাশ থেকে আমারে সামনে রাইখা শাস্তি দিতে??তুই কোন সাহসে ফারিহার রুমে ঘুমাস??নাকি দেখতে চাস আমি রেগে কিছু করি??”
এরকম কথা শুনে মোহ ত এক প্রকার ভয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে আছে..ফারিশ নিজেকে শান্ত করে মোহর চোখজোড়ার উপর লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে চুমু খেলো..বুকের মধ্যে নিয়ে বললো,
“সব সহ্য করতে পারবো কিন্তু তোমার কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করার এক বিন্দু টর্চার আমি সহ্য করতে পারবো না”ফারিশ মোহর কপালে ঠোট রেখে কথা গুলো বলছিলো।।
এদিকে ফারিহা ঘুমাতে পারছে না নুহাসের কলের জন্য..এই বজ্জাত ছেলে ওর নাম্বার কিভাবে পেলো??আবারো ফোন বাজছে..ধরলো না সে বাজতে থাকুক..মেসেজ আসলো,
” ফোন না ধরার সাহস দেখাও??ওয়েট তোমার বাসায় আসছি”
ফারিহা এই হুমকিতে ভয় পেলো কারন এর কিছুদিন আগে সে বাসার নিচে গাড়ি দাড়িয়ে ছিলো,ফোন না ধরাতে।।
ফোন বেজে উঠলো আবার ফারিহা অগত্যা উপায় না দেখে ফোন রিসিভ করলো..
“হ্যালো.এই এই আপনার সমস্যা কি??নিজের ঘুম হয় না বলে আমারে ঘুমাতে দিবেন না আস্ত একটা খাটাশ লোক” ফারিহা রাগে গজরাতে গজরাতে বললো
“এই আমি ডেইলি শাওয়ার নি, কই থেকে খাটাশ হলাম??আর তুমি ফোন না ধরে,আমার শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে কিভাবে ঘুমাও কুম্ভকর্ণ?? নুহাস বললো
” এই শুনেন এতো পেচাল পারার টাইম নাই..ঘুম ভাল্লাগে আমার আমি ঘুমাবো..ঘুমকেই দরকার রাখেন ফোন” ফারিহা বললো
“এহ,বললেই হলো ঘুম দরকার??আমার তোমাকে দরকার,ঘুম সাইডে রাখো..মাথা গরম করো না…একটু সুন্দর করে কথা বলো বাবু?” নুহাস একটু নুইয়ে বললো
“কে বাবু?? আমি কি দুই বছরের বাচ্চা?? ফিডার খায় যে বাবু ডাকেন আস্ত একটা শয়তানের নানা”ফারিহা বলো দাত কিড়মিড় করে।।
এইভাবে চলতে থাকে তাদের টম এন্ড জেরীর মতো সারাক্ষন খুনশুটি..আজকাল নুহাসের উপরেও ফারিহার মায়া জন্মে গেছে..এক মিনিট কল দিতে দেরী বেচারাকে একদম ধুয়ে দেয়..তবে নুহাস ফারিহা এই ঝাসি কি রানী ওয়ালা লুক টা সে প্রচন্ড ভালোবাসে কারন এইজন্য সে তার প্রেমে উপুত করে পরে গেছিলো।।
জন্মদিন,
রাতে কেও উইশ করতে আসে নাই ফারিহাকে কিন্তু এই নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেয় কিন্তু নুহাস তাকে একটাবারের জন্য কল করে উইশ করার প্রয়োজনবোধ করলো না এই ভেবে তার কান্না পাচ্ছে।।
এভ্রিল আর মোহ দুজন মিলে অনেক রকমের রান্না করছে সব ফারিহার পছন্দের।।
দুপুরে সবাই মজা করে খেলেও ফারিহা খাবারে মন বসাতে পারে নি,ভিতর থেকে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে মনে হচ্ছে ঠেলে বের হয়ে আসবে..সারাদিনেও একটাবার নুহাস ফোন দেয় নি ফারিহাকে।।
বিকালবেলা,
মিলাদ পরানো শেষ হলো কিছুক্ষন আগে..মোহ সবার হাতে মিস্টির প্যাকেট দিচ্ছে।।
“এতিমরে এখনো ঘরের বউ রাখছো??যার জন্য তোমার ছেলে দেশ ছাড়লো,তিন বছর আসলো না তারে কিভাবে মাথায় রাখো??অবশ্য মেয়ে লোভী না হইলে কি থাকে??আমি হইলে ওইদিন ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম” কটুক্তি করে বললো এক মহিলা
মোহর চোখে পানি এসে পরেছে অলরেডি..চলে যাওয়ার জন্য অন্যদিকে পা বাড়ালে,কেও তার কোমর শক্ত করে ধরে সামনে আনলো।।
এভ্রিল আর ফারিহা রেগে কিছু বলতে যাবে,সুলেমান ইশারা দিয়ে চুপ করতে বলে সামনের দিকে তাকাতে বললো।।
“আচ্ছা তাই মিসেস মজুমদার??আমার বউ না হয় এতিম,আমি ওর জন্য ঘর ছেড়েছি কিন্তু ওর জন্য যে আমি পাগল হয়ে ওর সাথে সংসার করার জন্য আসছি সেইটা দেখলেন না??আর কি বলছিলেন লোভী??আই থিংক আপনার মেয়ের থেকে আমার বউ কম আসে এই ক্ষেত্রে?? আমার বউ আমার ভালোবাসার লোভী,আমার বউ আমার ফ্যামিলির প্রতিটা মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য লোভী!! কিন্তু আপনার মেয়ে বাচ্চা দুইটা হয়েও,পরকীয়া করে টাকার জন্য??কেন স্বামী তার ব্যবহারের জন্য তার হাতে হাত খরচের টাকা দেয় বলে??” ফারিশ মুচকি হেসে কথাগুলো বললো
মিসেস মজুমদারের মুখ অপমানে লাল হয়ে গেছে..তিনি চলে যেতেই ফারিশ মোহর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
“ট্যাংক অলওয়েজ অন থাকে??নিজের স্ট্যান্ড নিতে পারো না?? খালি ভ্যা ভ্যা করে কাদতে জানো,আর আমারে কিভাবে চিপায় ফেলতে হয় সেইটা জানো?”
মোহ ভাবছে সে কখন তাকে চিপায় ফেললো..ফারিশের মোহর প্রতি স্ট্যান্ড নেয়াতে ফারিহা সোফার উপর দাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শিশ বাজালো।।
সন্ধ্যাবেলা,
সবাই বসে নুডুলস খাচ্ছে,ওই মুহূর্তে এক ফ্যামিলি বাসার মধ্যে আসলো বিভিন্ন থালি নিয়ে..থালির উপরে কাপড় দেয়া,বুঝায় যাচ্ছে থালির নিচে কিছু আছে।।
ফারিহা চোখ তুলে তাকালে সে ঝটকা খায়,সামনে আর কেও না নুহাস সাদা পাঞ্জাবি পরে কিলার লুক দিয়ে হেসে আসছে।।
ফারিহার মাথা এক প্রকার ভৌ ভৌ করছে এরা কেন??
“ব্রো!! কেমন আছো??” বলেই ফারিশের সাথে ম্যানলি হাগ করলো নুহাস ফারিশকে
ফারিশ ও সেইম ভাবে জড়িয়ে ধরলো,অবাক করার বিষয় ফারিহার কাছে তা হলো তার ভাই নুহাসকে তুই তুকারি করছে।।
তার মাথা ভার হয়ে যাচ্ছে এইসব দেখে,সে জানতে পারলো আমেরিকার ইউনিভার্সিটি তে জুনিয়র ছিলো নুহাস..আর তাদের সম্পর্ক অনেক ভালো..উঠাবসা সবখানে প্রায় জায়গায় উপস্থিত থাকতো সে..কিন্তু দেশে আসার পর দেখা হয় নি তাদের আর..
ফারিহার মাথায় আরেকটা ঝটকা পরলো যখন সে শুনলো আজ তার আকদ তাও আবার নুহাসের সাথেই..তার ভাই শুধু না তার ফ্যামিলি সবাই মিলে আগে থেকে মিট করে এটা প্ল্যান করে রেখেছে,আগে আকদ হবে তারপর ফারিহার ভার্সিটি শেষে অনুষ্ঠান হবে।।
ফারিহার মুখ দেখার মতো হয়ে আছে সে শুধু কাদতে বাকি রেখেছিলো..মোহ ফারিহাকে শাড়ি পরিয়ে নিচে নিয়ে আসলো..দেখতে নীল শাড়িতে নীল টুকটুকে পরী লাগছিলো।।
চোখের সামনে নুহাস আর ফারিহার বিয়ে হয়ে গেলো..নুহাস সবার আড়ালে ফারিহার কোমর চেপে ধরলো,ফারিহা চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে।।
“হ্যাপি বার্থডে আমার ঝাসি কি রানী!!এইটা তোমার বার্থডে গিফট??এইটা দিব বলে সারাদিন কল দি নাই,গতরাতেও অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করেছি..গেট রেডি টু টলারেট মাই টর্চার বেবি??নুহাস ফিসফিসিয়ে বলে বাকা হাসি দিলো।।
” আমার সুখের দিন শেষ” ফারিহা বিড়বিড় করে বললো।।
সবাই মিলে একটা হ্যাপি ফ্যামিলি ফটো নিলো,দুই ফ্যামিলি মিলে।।
নয় মাস পর,
মোহকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অপারেশনে..সে প্রেগন্যান্ট..হ্যা সে ফারিশে বাচ্চার মা হতে চলেছে..ফারিশকে সে শাস্তি দিতে না পারলেও,প্রেগন্যান্সির সময় ফারিশকে সে চড়কা আকারে ঘুরিয়েছে..কখনো এই খাওয়ার আবদার,কখনো গোসল করানোর কখনো বমি পরিষ্কার কখনো মাথায় তেল দেয়া..ফারিশকে নাকানি চুবানি দিয়েছে সে কিন্তু ফারিশ এইসব করতে কখনো ক্লান্ত হয় নি.. ফারিশ যখন দেখলো মোহ প্রেগন্যান্ট তখন এতোবেশি খুশি হয়েছিলো মোহকে নিয়ে সারারাত কোলের মধ্যে ছিলো সে..
নার্স দুইটা এসে দুইটা বাচ্চা নিয়ে আসলো..মোহর টুইন বেবি
হয়েছে..বাচ্চা কোলে নেয়ার আগে ফারিশ জিজ্ঞেস করলো,
“আমার ওয়াইফ কেমন আছে?”
নার্স হেসে বললো,”তিনি আশংকা মুক্তো..দেখা করতে পারেন”
এভ্রিল দুই নাতি আর নাতনী কে নিয়ে মহাখুশি, সারা হসপিটাল জুড়ে মিস্টি দিচ্ছে সুলেমান।।
“আমরা কখনো নিব বাচ্চা বেবি??” নুহাস ফারিহাকে বলছে.তারাও,ফুফা ফুপি হওয়ার আনন্দে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে..
“বেবি ডাকো??আবার বাচ্চাও চাও..আস্ত একটা হাদারাম” ফারিহা মুখ ভেঙচি দিলো।।
নুহাস ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো..এই মেয়ের মুখে কিছু আটকায় না??
ফারিশ কেবিনের দরজা খুলে মোহর কাছে গেলো,ক্যানোলা হাতে নিয়ে শুয়ে আছে।।
কারো উপস্থিতিতে সে চোখ খুললো,সে ইশারায় পাশে বসতে বললো ফারিশকে।।
ফারিশের ভয় এতোবেশি ছিলো যে মোহর প্রেগ্ন্যাসির সময় তাদের উপরের রুমটা নিচে করেছিলো..মোহকে বেড থেকে নামতে দিতো না,নামলেই অনেক বকতো সে।।
“ভালোবাসি” মোহ ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো..এই প্রথম মোহ ফারিশকে তার ভালোবাসি কথাটা বললো
“আমিও ভালোবাসি,খুব ভালোবাসি” ফারিশ মোহকে জড়িয়ে ধরলো।।
কিন্তু এর মধ্যে এভ্রিল, সুলেমান,ফারিহা আর নুহাস দরজা ঠেলে বেবিদের নিয়ে ঢুকলো।।
“এখন আর রোমান্স হবে না..এখন আমাদের বেবিদের সময়” নুহাস বলে উঠে মোহ আর ফারিশের মাঝে দুইটা বেবি রেখে দিলো।।
রুমে সবার হাসির রোল পরলো।।এইভাবে কেটে যাক তাদের সুখশান্ত্রি জীবন..