রঙধনু?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব ছয়
?
খুব একটা মিষ্টি গন্ধ মোহর নাকে এসে বারি খাচ্ছে বারবার..তার ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছে কেও তাকে অনেক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে..চোখ খুলতে তার ইচ্ছা করছে না..
চোখ যখন খুললো তখন দেখলো কারো বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে..বুকটা ধক করে উঠলো..চোখ তুলে উপরের তাকালো দেখলো ফারিশ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে..কল্পনা কি না ফারিশের উদাম বুকে একটা চিমটি দিলো।।
“আউচ” ফারিশ হালকা চিৎকার দিলো
মোহ ওমনিতে ধড়াস দিয়ে উঠে দাড়িয়ে গেলো..সাথে সাথে এক চিৎকার,
“মাআআআআআআআআআআআ”
মোহর এমন চিৎকারে ফারিশের কানে মনে হয় তালা লেগে গেলো..রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়ার সুবাদে চিল্লানী বাহিরে যায় নি..
মোহ থরথর করে কাপছে..আর মোহর এই কাপাকাপি দেখে ফারিশ ভিতর ভিতর আনন্দ পেলেও মোহর সামনে গম্ভীর মুখ প্রকাশ করে আছে..
“কাম হেয়ার” গম্ভীরমুখে বললো ফারিশ
মোহ এখনো ঠায় মেরে দাড়িয়ে আছে..তিন বছর পর এই মানুষটার সামনে সে,নিজের চোখ দেখেও দেখছে না,মন বাধাও মানছে না আর বেহায়া কানের কথা কি বলবো..আরেকটা লাইন শুনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে..
মোহর রিয়াকশন না দেখে ফারিশ নিজে টেনে হাত ধরে নিয়ে আসলো..মোহর সারা শরীর বেয়ে মনে হচ্ছে কারেন্ট বয়ে গেলো..বুকটা কেমন ধুকপুক করছে..
“চিল্লালে কেন??” মোহর চুল কানের পিছে গুজে দিয়ে ফারিশ বললো
ফারিশের এমন বিহেভিয়ার দেখে মোহর চোখ ত কপালে..কারন,সে যতটুকু জানে ফারিশে তাকে মেনে নিতে পারে নি বিধেয় বিয়ের দিন তার মুখ না দেখে এইভাবে চলে গেছে..
চোখভর্তি জল নিয়ে তাকিয়ে আছে মোহ ফারিশের দিকে.. একটু সরে আসলো সে ফারিশের থেকে..ফারিশ আরেকটু কাছে গেলে মোহ ইশারায় না করে কাছে না আসার জন্য।।
ফারিশের ভিতরটা মনে হচ্ছে ছ্যাৎ করে উঠলো মোহর এমন এমন ইশারায় কাছে না আসার, অনুমতি না দেয়ার।।
মোহ চোখের জল এক হাত দিয়ে মুছে বেরিয়ে যেতে লাগলে..ফারিশ বলে উঠলো,
“স্টপ!!আই ডোন্ট গিভ ইউ পারমিশন টু গো আউট”
এমন থমথমে গলা শুনে মোহ দাড়ালো ঠিকই কিন্তু পিছন ফিরে তাকালো না..সে ভেবেছে ফারিশ এইবার তাকে হয়তো ডিভোর্স দেয়ার জন্য এসেছে।।
ফারিশ অয়ায়ের কদম চালিয়ে মোহর কোমর দুই হাত দিয়ে ধরতে গেলে..
“আপনি যা চাইবেন বা যে জন্য এসেছেন এখানে এসেছেন আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না” কোনকিছুর না বুঝে এই জবাব দিয়ে গেট খুলে বেরিয়ে পরলো।।
ফারিশের চোখ রাগে একদম লাল হয়ে গেছে..
“এতো এভোয়েড??হাহ??সে ত এখনো জানেই নাই আমি ফাইজান ফারিশ,আমাকে ইগনর করার শাস্তি একদম তিলে তিলে সুদে আসলে দিব..আর কি বললো ও?? আমি যা চাই সে দিবে না??বাট সরি টু সে বেবি,আমি যা চাই তা নিয়েই ছাড়ি…আর সেখানে তুমি আমার বউ..তোমাকে ত আমি চাইইই চাইইই সেটাতে তোমার অনুমতি না থাকলেও” বাকা হেসে বললো..
লিভিংরুম,
সবাই নিচে বসে আছে,অপেক্ষা করছে মোহ আর ফারিশ নিচে নেমে আসার কিন্তু এখনো আসছে না শুধু ফারিশের রুম থেকে বিভিন্ন ভাঙচুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে..
“এই এক সমস্যা এই ছেলের,কিছুই হইলেই ভাঙচুর আরম্ভ করে” সুলেমান বিড়বিড় করে উঠলো
এভ্রিল উপরে অনেকবার যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ফারিহা আর সুলেমান আটকে রেখেছে তাকে..পায়চারি করছে সারা লিভিং এরিয়া জুড়ে।।
মোহ ওয়াশরুম দরজা বন্ধ করে মুখ চেপে কাদছে..এতোবছর পর তার স্বামীকে দেখছে..কিজন্য আসছে তাকে মেনে নিতে?? অবশ্যই না..তাকে তার জীবন থেকে একদম বিতাড়িত করার জন্য এসেছে সে..
রাতেরবেলা,
লিভিংরুমের পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে…কারন,ফারিশ আর মোহ কেও নিচে নামে নাই..মোহ মাথাব্যাথার অজুহাত দিয়ে আগেই রুম লক করে শুয়ে গেছে..
ফারিহা থাকতে না পেরে এই দমবন্ধ কর পরিস্থিতিতে, উপরে গেলো ভাইয়ের রুমে..দুই একবার নক করলো তবে সাড়া নাই..
“ভাইয়া দরজা খোল..তোদের টেনশনে বাকি সব মরে যাইতেছে আর রুম লক করে কি জপ করতেছোস??” ফারিহা বলে উঠলো
এই কথায় মনে হয় টনিকের মতো কাজ হলো তার..দরজা খুলে বের হয়ে আসলো সে..কিন্তু ফারিহাকে কিছু সুযোগ না দিয়ে নিচে চলে ধপাধপ পা ফেলে..ফারিহা রুমের হাল দেখে হতবাক..রুমের সব জিনিসের উপর যে মর্মান্তিক অত্যাচার হয়েছে সেটা সে বুঝতে পারছে,বুয়াকে ডেকে রুম পরিষ্কার করতে বললো..
ফারিহা নিচে যেয়ে দেখলো বাবা মায়ের সামনের সোফাতে ফারিশ বসে আছে..দুই হাটুর উপরে দুই হাত ভর দিয়ে থুতনীতে রাখছে..
“কি হয়েছে বলবা কি??” সুলেমান জিজ্ঞেস করলো
“তুমি না বললে বুঝতে পারবো কি করে???তাছাড়া তুমি এখানে এসেছো কোনকিছু বলার জন্যই তাই না??” এভ্রিল ইতস্ততভাবে বললো
ফারিশ এইবার চোখ তুলে তাকালো..চোখগুলো দেখে এভ্রিলের বুকটা ধক করে উঠলো..অসম্ভব লাল হয়ে আছে,আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় সে যে কেদে চোখ ফুলিয়ে রেখেছে সেটা..কারন,ফারিষ কষ্ট দিবে কিন্তু নেয়ার মানুষ না..
ফারিশ ধীর পায়ে কাছে এসে মায়ের হাটুর কাছে বসলো।।
“মা!!” ফারিশ এভ্রিলকে ডেকে থেমে গেলো..আসলে সেও এই প্রথকবারের মতো গুছিয়ে কথা বলতে যেয়েও পারছে না।।
এভ্রিল হয়তো আন্দাজ করতে পারছে ছেলের পরিস্থিতি..তাই তিনি এগিয়ে এসে ফারিশের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে..চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।।
“আই নো দ্যাট আই মেড এ মিসটেক..আই অলসো নো দ্যাট হোয়াট ই ডিড ইন পাস্ট,ইট ইজ রং” ফারিশ এইটুকু বলে থামলো।।
কিছুক্ষন থেমে আবার বলা শুরু করলো,
“আমার ভুলের জন্য আমাকে যা শাস্তি দিবা তুমি দাও কিন্তু ও যেন আমারে ছেড়ে চলে না যায়.. ও আমাকে ভুল বুঝে আছে আমি জানি,আমার উচিত হয় নি তাকে এইভাবে ফেলে চলে যাওয়াটা কিন্তু মা আমি আসলে জড়াতে চাই নাই কোন শিকলে..কিন্তু এই শিকলটায় আমাকে তার সাথে এমনভাবে আবদ্ধ করেছে যে আমি চাইলেও তার থেকে দূরে থাকতে পারবো না..আমি যদি একটু চিন্তাও করি দূরে চলে যাবে সে,আমার দম টা বন্ধ হয়ে আসে মা” এক নাগাড়ে কথা গুলো বললো ফারিশ
এভ্রিল স্তব্ধ হয়ে গেছে ফারিশের এমন কথা শুনে..সে এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।।
“আই নো মা..আমার এই দুইদিনে যতটা দম বন্ধ হয়ে আসছে ঠিক ততোটাই ওর এই তিন বছরের হয়ে আসছে কিন্তু মা আমি ত এখন ওকেই চাই..যে করেই হোক” ফারিশ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।
“কিন্তু এতো বছরের ঘা যা সে পেয়েছে মুছে ফেলা কি সম্ভব??এভ্রিল বলছে
” আমি সব পারবো”বাকা হাসি দিয়ে উপরে চলে গেলো ফারিশ
এভ্রিল,সুলেমান আর ফারিহা এখনো হতভম্ব হয়ে নিচে আছে..
রাতেরবেলা,
“ওই তোর রুমে চল..মোহ ওখানে ঘুমাবে ক্যান??আমি আসছি আমার ঘরে ঘুমাবে” ফারিশ ভ্রু কুচকে ফারিহাকে বলে উঠলো
“ভাইয়া তোমার কি মনে হয় ভাবী তোমার রুমে যাবে?” ফারিহা বললো
“কেন যাবে না হু?? ওর ঘাড় যাবে!!অভিমান করছে ভাঙায় দিব..কিন্তু এখন আমার ঘরে আমার সাথে থাকা লাগবে,আমি থাকতে পারবো না আর ঘুমাতেও পারবো না ওরে ছাড়া” ফারিশ ব্যাকুল কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি এই রিস্ক নিতে পারুম না ভাই..ভাবী যদি জানে কষ্ট পাবে..একটু সময় দাও তাকে এবং নিজেকে..গুছিয়ে উঠতে হবে সবকিছু..তাড়াতাড়ির ফল খারাপ হয়” ফারিহা বললো।।
অগত্যা ফারিশকে নিজের রুমে যেতে হলো..মোহকে আর রাতে দেখতে পেলো না।।
“ইউ আর মোস্ট ডিয়ারেস্ট পানিশমেন্ট অফ মাই লাইফ সুইটি” এই বলে বাকা হাসি দিয়ে ফারিশ ঘুমানোর চেষ্টা চালাতে লাগলো।।
সকালবেলা,
ফারিহা কোচিং থাকার কারনে সে একেবারে কলেজ ড্রেস পরে কোচিং এর উদ্দেশ্য রওনা দিলো..আজ গাড়ি নিয়ে বের হবে না,কানে হেডফোন গুজে রিক্সাতে উঠে চিপ্স খাইতে খাইতে গেলো কোচিং এ।।
কোচিং এ আসার পর,রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে নিচে নামলো যখন..এক বাইকওয়ালা কই থেকে জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলো দূর্ভাগ্যবশত ফারিহাকে লেগে যায়..বেশি ব্যাথা না পেলেও কব্জি খানিকটা ছিলে যায়..
“আহ!!” বলে নিচে বসে পরলো ফারিহা
বেচারা বাইকওয়ালা মাথা থেকে হেলমেট খুলে হন্তদন্ত হয়ে আসলো ফারিহা কাছে..কাছে এসে দেখতে চাইলে,ফারিহা এমন কটমট করে তাকালো যে এখনি ওকে খেয়ে ফেলবে।।
“ধাক্কা দিয়া ফালাইয়া কি তামাশা দেখতে আসছেন??একদম টাচ করবেন না!!সরেন” ফারিহা নিজে উঠে দাড়িয়ে জামা ঝেড়ে ভিতরে গেলো..
এদিকে আশেপাশের মেয়েরা ছেলেটাকে হা করে গিলে খাচ্ছে..
“আরে ব্রো মেয়েটা তোরে একেবারে ভাউ না দিয়ে চলে গেলো” একটা ছেলে বললো
“এইটা দ্যা পলিটিশিয়ান সুলেমান আঙ্কেলের একমাত্র মেয়ে” ছেলেটি বলে উঠলো অবাক যখন ফারিহাকে দেখতে পেলো।।
“সুলেমান ফাজের একমাত্র ফাবিহা ফারিহা ফাজ এই নুহাস চৌধুরীকে ইগনরে করে মনের ভিতর যে ভালোবাসার আগুন জ্বালালো সেটার কি হবে” শয়তানী হাসি দিয়ে বললো নুহাস
রাফাইয়েত নুহাস চৌধুরী সন অফ কবির চৌধুরীর একমাত্র ছেলে..নামীদামী ব্যবসায়ীদের মাঝে একজন..পড়াশোনা শেষে কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে..বাবার ব্যবসাতে হাত লাগানোর আগে একটু লাইফটাকে ইনজয় করছে..বাইক তারই,তার বাবার থেকে কাল শোরুম থেকে লেটেস্ট মডেলের নিয়েছে..চেহারা,এটিটিউড এবং চলাফেরা অলওয়েজ খাতারনাক..মেয়ে মানুষের ক্রাশ হলেও,মেয়ে মানুষের কাছ থেকে অলওয়েজ দূরে থেকেছে সে।।
ফারিহার কটমট করে তাকানো নুহাসের মনে একটা আলাদা উত্তেজনার জ্বালা সৃষ্টি করেছে..
“আই কান্ট ওয়েট টু সি হার ফর নেক্সট টাইম..এন্ড অভিয়েশলি আই নিড হার মাই লাইফ..ওয়েলকাম হানি..গেট রেডি টু কাম নুহাস কিংডম”
বাকা হাসি দিয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ কিনে পাঠালো নুহাস ফারিহার জন্য।।
সুলেমান আর এভ্রিল অবাক হয়ে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে..সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটি বলছে,
“আমার ছেলে আপনার মেয়েকে শপিংমলে দেখে পছন্দ করে ফেলছে..সে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়” ভদ্রলোক বলে উঠলো..
এভ্রিলের চিনতে অসুবিধা হয় নি ছেলেটাকে..এই ছেলেটা সেদিন মোহকে নাম আর ও কি কি জিজ্ঞেস করছিলো।।
“আমার মেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়ে এখন বিয়ে দিবো না” সুলেমান বললো
“আঙ্কেল আমি আপনার ছোট মেয়েকে চিনি..আপনার বড় মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই” স্যুট পরা একটা সুদর্শন ছেলে বলে উঠলো
“ওটা আমার মেয়ে না,ওটা আমার বড় ছেলের বউ” এভ্রিল বললো
“হোয়াট!!” ছেলেটা এক প্রকার চিৎকার দিলো..
মোহ ওই সময় বুয়াকে দিয়ে চা আর নাস্তা দিয়ে পাঠালো
“এই তুমি ম্যারিড আগে বলো নি কেন?আর হলেও আমি ডিভোর্স দিয়ে ছাড়াবো মাইন্ড ইট” ছেলেটি রেগে বললো
মোহ ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে আচমকা প্রশ্নে..এভ্রিল সামনে এসে দাড়ালো।।
“গিভ সাম গ্যাপ বয়..ইউ আর টকিং টু মাই ডটার ইন ল..কিপ ইউর ভয়েস ডাউন” এভ্রিল রেগে বললো
এদিকে ফারিশ উপর থেকে শার্ট ফোল্ড করতে করতে আসছে..যখনি ছেলেটা মোহর কাছে এসে দাড়িয়েছে,তা দেখে মেজাজ গরম হয়েছে আবার যখন সে বললো ডিভোর্স দিয়েই ছাড়বে..এইটা শুনে মাথার রগ রাগে ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে..
নিচে নেমে এসে ছেলেটার কাছে যেয়ে মুখের উপর এক ঘুষি দিলো ফারিশ..
“আমার বউ কে আমার কাছে আলাদা করবি??সাহস কত তোর?? ফারিশের জানের দিকে তাকাইছোস?? আই কিল ইউর ব্লাডি বিচ” ফারিশ রাগে আরো কয়েকটা ঘুষি দিলো।।।
চলবে?