রঙধনু?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব চার
?
সকালবেলা,
ওয়াক থেকে এভ্রিল আর সুলেমান ফিরে এসে সামনে গাড়ি থেকে নেমে আসা মানুষটাকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে অবাক..তাদের মুখটা খানিকটা না অনেকটা বড় করে হা করে রয়েছে..
সুলেমান হাসফাস দিয়ে বলে উঠলো,
“ফারিশ”
এভ্রিল ও অবাক হয়েছে অনেকখানি..সেই তিন বছর আগে গিয়েছে আর এখন আসছে..তিন বছরে ছেলের সাথে কথা ত দূরে থাক ওর মুখ দেখার কথা কেও বললে ক্ষেওএ যেতে..কিন্তু একমাত্র পুত্রসন্তানের কথা মনে হলে ভিতরটা সবসময় নাড়া দিতো..
তার ছেলে তার মতো চোখ পেয়েছে,যেমন সে তার মায়ের এই চোখের অধিকারী ছিল..ছেলে আমার আগের থেকে অনেকবেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে,রোদ ফর্সা মুখে পরাতে সারা মুখ লাল হয়ে উঠছে..কিন্তু এতোদিন পর আসছে কিজন্য??মোহকে তালাক দিতে??বুকটা ধক করে উঠলো এভ্রিলের
ফারিশ ক্লান্তমুখে হালকা হাসি এনে তারা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো..এভ্রিল চলে যেতে চাইলে ফারিশ তার মায়ের হাত ধরে সামনে আসে।।
অভিমানী মায়ের মুখ ফারিশ দুই হাতে উপরে তুলে বললো,
“মা!! তিন বছর কথা বলো নি!!এইবার ত বলো??”
এভ্রিল নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি নাই..হাউমাউ করে ছেলেকে ধরে কেদে দিয়েছে..সুলেমান, এভ্রিল আর ফারিশ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে..
“ইনাফ..আই এম সো টায়ার্ড!!নিড টু স্লিপ!!” ফারিশ বলে উঠলো
এভ্রিল ফারিশকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো..
সুলেমান বিড়বিড় করে তখন বলছিলো,
“বাপ কা বেটি?ফারিহা তাহলে এই চার ছক্কা মেরেছে আর সে এটার কথা আমাকে বলেছিলো??ওয়াহ মাইয়া আমার একদম ম্যাক্স ওয়েল..খালি চার ছক্কা মারে”
আপনমনে হাসতে হাসতে বাড়ির ভিতরে চললো..
ফারিশ নিজের রুমে ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে..ফ্রেশ হয়ে ফারিশ দরজা লক করে লম্বা ঘুম দিলো..কাল থেকে ফারিশ যখনি চোখ বন্ধ করছে তখনি ওই মায়াভরা চোখ টা বারবার দেখতে পাচ্ছে..
এদিকে সুলেমান আর এভ্রিল ভাবছে..
“ফারিশ ত আসলো কিন্তু মোহকে যদি ডিভোর্স দেয়??ও ত বেচে থেকেও মরে যাবে??এভ্রিল বললো
” এমন কিছু হবে না..ভরসা রাখো”সুলেমান এভ্রিলের হাত ধরে বললো
সকাল ১১টা,
ফারিশের রুমে যাওয়া চুপিচুপি মোহর কাজ নিত্যদিনের.. আজ ও গেলো কিন্তু অবাক হলো দরজা লক দেখে একটু অবাক হলো..পরে ভাবলো মা হয়তো করেছে যেন আমি না আসতে পারি..তাই আবার ফিরে গেলো নিজের ঘরে..
বেলা ১২টার দিকে ফারিহা ঘুম থেকে উঠলো..উঠেই মোহকে খুজছে
,”ভাবীইইইইইইইইইইই!!!দিল কা পিঞ্জিরা কিধার হ??ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলছে ফারিহা
দুইদিকে চুল বেধে আছে,টিশার্ট মিকি মাউসের আর পায়জামা হাটু অব্দি উঠে আছে..আউলাঝাউলা হয়ে শুয়ে থাকার সব এলোমেলো হয়ে আছে তার।।
ফারিহার এমন ডাক শুনে মোহ জলদি ঘরে আসে আর ভাবছে না জানি কি হলো
“এই কি হয়েছে তোমার??চিলাইতেসো যে?? মোহ জিজ্ঞেস করে উঠলো
” এই মাদার তেরেসা!!ফারিহা মাথা নিচু করে বলছে
মোহ এই নাম শুনে ফিক করে হেসে দিলো..সে মোহকে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময়ে ডাকে..মোহ পাশে এসে বললো,
“কি হয়েছে আমার পাখির দেখি??
” জানো ভাবী”কাদো কাদো কন্ঠে বললো ফারিহা
“কি বলো?” মোহ ও উদগ্রীব হয়ে আছে কি হয়েছে শুনার জন্য
“আসলে আমি কার বাসা আছি এইটা মনে করতে পারছি না??এইটা মেইন ফ্যাক্ট না,মেইন ফ্যাক্ট আমার অত্যন্ত জরুরী ইমারজেন্সি লাইন চালু হয়ে গেসে,যেকোন মুহূর্তে সেখানে না গেলে পরের বাসার পরের ঘরে বাসাইয়া দিব আমি” ফারিহা বললো
মোহ হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না..সে বুঝতে পারলো ফারিহা ইমারজেন্সি লাইন বলতে কাকে বুঝিয়েছে,
“আচ্ছা চলো ওয়াশরুম” হাত ধরে মোহ ফারিহাকে নিয়ে যাচ্ছে
ফারিহা যেতে বললো,”তুমি যদি আজ না থাকতে আমার ইমারজেন্সি লাইন আজ লিক হয়ে যেতো..আই লাভ ইউ”এই বলে মোহর গালে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো..
মোহ ভাবছে,
“এই মেয়ের হুশ থাকে না ঘুম থেকে উঠলে..নিজের বাড়ি চিনতে না পেরে বলে কার বাড়িতে আছি??না জানি বিয়ে হইলে বাসরের পরের দিন না বলে উঠে,এই আপনি কোন আফ্রিকার উগান্ডার মানুষ??
বাসর আর স্বামী শব্দটা উচ্চারণ করেই নিজের মন থেকে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো..
মোহ নিচে যেয়ে দেখলো এভ্রিল আর সুলেমান তখন থেকে কি বিড়বিড় করছে,মোহকে দেখে চুপ হয়ে গেছে আর একটা কেমন হাসি দিলো..
“চা দিব??” মোহ বললো..
“হ্যা চা দে..তোর হাতের চা খাওয়ার জন্য কখন থেকে বসে আছি??সুলেমান কেমন ভড়কে যেয়ে বললো
” আচ্ছা দিচ্ছি “মোহ মিষ্টি করে হেসে বললো
কারো মনের আর কথার প্যাচ কিংবা কেও যে তাকে কটুক্তি করছে তার পিছন ফিরে সামনে হেসে হেসে কথা বলছে এই মেয়ে বুঝতে পারে না..মোহ এতো বেশি সোজা সরল দেখে এই পরিবারের প্রতিটা মানুষ তার জান হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে
“এই বেগম রোকেয়া!!এতো উদারতা কেন??একদম মেরে দিব..চুপচাপ নিজের ছাড়া আর আমার ছাড়া কারো প্রতি দরদ দেখালে” ফারিহা রেগে বলেছিলো কথা গুলো কারন,ফারিহাদের এক কাজিন তাদের বাসায় এসেছিলো,মোহ তাদের সামনে নাস্তার প্লেট রেখেছিলো..
মোহ যাওয়ার পর তাদের মাঝে একজন বলেছিলো,
“এখনো এতিম মাইয়ারে রাখছো তোমরা??এই মেয়ের জন্য তোমার ছেলে এখনো বাড়ি ফিরে না”
মোহ সব শুনেছিলো কিন্তু টু শব্দ না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করাতে ব্যস্ত ছিলো সে..এইসব দেখে সেদিন ফারিহা এতোগুলো ঝেড়েছিলো তাকে..
চা দিয়ে মোহর ফোনে কল আসে ভার্সিটি থেকে..প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নাকি আজ আছে দুপুরে?সেইজন্য যেতে হবে..
মোহ রেডি হয়ে ভার্সিটি গেলো..বাসাতে ত খেতে পারবে না,এভ্রিল আবার টাকা দিলো।।
“মা তোমার দেয়া অনেক টাকা জমায় আছে??এখন লাগতো না” মোহ বললো
“আছে রাখতে দে..তুই খরচ করিস না,এতো তোর দোষ?এভ্রিল বললো
মোহ টাকা নিবে না এভ্রিল ধমক দিয়ে ব্যাগে গুজে দিলো..অবশেষে হার মেনে মোহকে নিতে হলো,” এই এমন পরিবারের মানুষের ভালোবাসা দেখে সে বাঁচার জন্য আস্থা খুজে পায়”
“গাড়ি ওয়েট করছে,বের হ..আর পৌছে কল দিবি??এভ্রিল বললো
” হুম “মোহ বেরিয়ে পরলো..এভ্রিল তাকে গাড়িতে তুলে, যতক্ষন গাড়ি না ছাড়ছে ততক্ষন দাড়িয়ে ছিলো..বিদায় দিয়ে বাড়ি আসলো..
দুপুরবেলা,
ফারিহা,সুলেমান আর এভ্রিল একসাথে খেতে বসেছে..টেবিলের রাখা খাবারের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ফারিহা।।
“ভাইয়ার পছন্দের খাবার সব আজ??আজ ত ওর জন্মদিন ও না??ফারিহা জিজ্ঞেস করে উঠলো
সুলেমান আর এভ্রিল একে অপরের মুখ চাওয় চাওয়ি করছে..
” তুমি কাল যে চার ছক্কা মেরেছো??এইগুলো এখন আমার পক্ষ থেকে পুরষ্কার ” সুলেমান চেয়ার টেনে বসতে বললো
“মারছি আমি…পছন্দের খাবার ও হবে আমার মতো করে??ভাইয়ার পছন্দের ক্যান” নাক ফুলিয়ে বলে উঠলো ফারিহা
উপর থেকে ফারিশ নামছে..থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর ঢিলা টিশার্ট ব্ল্যাক কালার..উফফ মাখনের মতো হয়ে আছে?
ফারিশকে উপর থেকে নামতে দেখে ফারিহা ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে..
“চার ছক্কা ময়দানে মারলাম আমি..আর তুমি এতো জলদি আউট হয়ে চলে আসলা ভাইয়া???” ফারিহা ওর বাবার কানে বলছে।।
“এই লাইলি তোমার মজনু আইসা ভাত খাইবো আর আজই তোমার ক্যাম্পাস যাওয়া লাগলো??? আস্ত একটা বোরিং মাইয়া..যার জন্য তিন বছর ধরে আহামরি করলো,আইসা হাজির আর নায়িকা সিনেমার মতো গায়েব ভুল টাইমে” ফারিহা বিড়বিড় করে চলেই যাচ্ছে।।
চলবে?