গল্প: যোগ্যতা
লেখক: অতিথি পাখি
পর্ব: ০৭
আমি রাত্রে খাওয়া দাওয়া করে নীড়কে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি হঠাৎ মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আর ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে দেখি নীলা আমার পাঁ জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে
আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি তা বুঝতে পেরেছি কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছি তখন আপনি আমার থেকে অনেক দূরে। রাফসান হওয়ার পর আমি আপনাকে নিয়ে নতুন করে সব শুরু করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি চলে গেলেন। আমি আপনাকে আর আমার সন্তানকে খুব ভালোবাসি কিন্তু নিজের ভুলের কারণে আপনাদের হারিয়ে ফেললাম ( কান্না করতে করতে)
নীলাই কথাগুলো বলছিল আর কান্না করছিল আমি সেভাবে শুয়ে রইলাম কিছুক্ষণ পর নিলা উঠে চলে গেল আর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে গিয়ে কোথাও নীলাকে দেখতে পেলাম না।
আমি :মা নীলা কোথায় ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না??
মা: নীলা তো সকাল সকাল কোথাও চলে গেছে আর এই চিঠিটা লিখে গেছে ( এ কথা বলেই মা কান্না করতে লাগলো)
আমি মায়ের হাত থেকে নীলার চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম
প্রিয় স্বামী,,
আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। ভালোবাসি যখন রাফসান আমার গর্ভে ছিল তখন থেকে। আপনাকে কখনো ভালোবাসার কথা বলা হয়নি ভেবে ছিলাম রাফসান হওয়ার পরে বলব। কিন্তু আমার খারাপ কপাল আপনাকে সেই বলার সুযোগ আমার হলো না। বিশ্বাস করুন এই ছয়টি বছর আমি আপনাকে শুধু ভালবেসে গেছি। তাইতো আপনাদের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু এখন আর আমি কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। নিজের ছেলে আমাকে আন্টি বলছে আমার কাছে আসছে না এর থেকে বড় কি কষ্ট হতে পারে। । আপনাকে অবহেলা করেছি আজকে বুঝতে পারছি ভালোবাসার মানুষের অবহেলা কেমন হয়। আমি যে আপনার অবহেলা নিতে পারছি না। তাই অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আপনার ভালোবাসা না পেলাম আপনার স্মৃতিগুলো নিয়ে কাটিয়ে দেবো। আমার রাফসানকে দেখে রাখবেন। তাকে কোন কষ্ট পেতে দিবেন না। হয়তোবা গর্ভে থাকতে তাকে অনেক কথা বলেছি কিন্তু আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। আর হ্যাঁ নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন আমার কথা একদম চিন্তা করবেন না। নতুন কাউকে নিয়ে নিজের জীবন শুরু করবেন।
ইতি
আপনার
অভাগা স্ত্রী
কিছুটা আমার হাত থেকে পড়ে গেল। কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি তো শুধু নীলাকে একটু কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম অবহেলা বোঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তাই বলে নীলা যে এইটুকুতেই এমন করবে আমি তো বুঝতে পারিনি।
আমি আর কোন কিছু চিন্তা না করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়লাম নীলাকে খুঁজতে। সাথে আমার পুরনো লোকদের কেউ লাগিয়ে দিলাম নীলার খোঁজ করতে। আমি যখন আগে আমার শহরে ছিলাম তখন আমার মোটামুটি অনেক ক্ষমতা ছিল অনেকেই আমাকে চিনে। আমি এবং আমার লোকেরা সারাদিন নীলাকে খুজছিলাম।
কিন্তু কোথাও নাই যাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি বারবার নীলার ফোনে ট্রাই করছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল। আমি কি করবো বুঝে পাচ্ছিলাম না।
সারাদিন খোঁজার পরে বিকেলে বাসায় আসলাম। নীলাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। বাসায় আসার পর,,,,,,,,
মা :(কেঁদে )নীলাকে কোথাও খুঁজে পেলি??
আমি:,,,,,,,,
নীড়: আব্বু আমার ওই আন্টিটা কোথায়?? তুমি বলেছিলে আন্টিটা পচা কিন্তু জানো আন্টিটা না অনেক ভালো আমাকে খুব ভালোবাসে। আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।
আমি:,,,,,,,,,,
মা: বল নিলার কোন খোঁজ পেয়েছিস??
নীড়: আব্বু বলো না আন্টি তা কোথায়??
আমি: বাবা ওটা তোমার আন্টি না ওটা তোমার আম্মু। তুমি সব সময় বলতে না তোমার আম্মু কোথায় ওটাই তোমার আম্মু।
নীড় :সত্যি বলছো বাবা ওটা আমার আম্মু?? তাহলে আমার আম্মু কোথায় ??আমার আম্মুকে এনে দাও ।
আমি: হ্যাঁ বাবা তোমার আম্মুর রাগ করে চলে গেছে কিন্তু চিন্তা করো না আমি তোমার আম্মুকে খুঁজে আনবো ।
কিন্তু নীড় কোন কথা শুনতে রাজি না সে তার আম্মুর সাথে দেখা করতে চাই এই বলেই অনেক কান্না করতে লাগলো। আমি মাকে বললাম নীড় শান্ত করতে বলে সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে আসলাম।
ঘরে এসে আমি বিছানায় শুয়ে নীলার আর আমার স্মৃতিগুলো মনে করতে থাকলাম। এই ঘরে কত স্মৃতি আছিল দুজনার । নিলা আমাকে এই ঘরে কত অপমান করেছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ মাঝ রাতে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেল।
ফোন হাতে নিয়ে দেখে নীলার নাম্বার থেকে ফোন আসছে। আমি তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম। কিন্তু ওপাশ থেকে নীলা নয় অন্য কোন লোক এর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। লোকটি বলতে শুরু করল
লোকটি: হ্যালো কে বলছেন??
আমি: হ্যালো এই ফোনটি আপনার কাছে কেমন করে আসলো?? এই ফোনটি আমার স্ত্রীর।
লোকটি: দেখুন একজন একটি বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে সেই বাসের এক যাত্রীর কাছে এই ফোন ছিল । তিনি,,,,,,,,,,,,,, হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন উনার অবস্থা খুব বেশি ভালো নয় বাচার সম্ভাবনা খুব কম।
আমি: আপনি দয়া করে তোমার পাশে থাকুন আমরা এক্ষুনি আসছি।
ফোন কেটে দিয়ে আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম কাউকে কিছু বললাম না। গিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে নীলার বেডে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি নীলাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। একি অবস্থা হয়েছে নীলার ।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে নীলার চিকিৎসার
ব্যাবস্থা করলাম। নীলা কে অপারেশন করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তার বলেছে নীলার বাঁচার আশা খুব কম। নীলার যদি কিছু হয় তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
আমি বাহিরে বসে আছি। নীলার অপারেশন হচ্ছে। বাড়িতে খবর দিয়েছি । সবাই চলে আসবে।
এরই মাঝে ডাক্তার বেরিয়ে এসে বলতে শুরু করল,,,,,
ডাক্তার: দেখুন রায়হান সাহেব আমরা আপনার স্ত্রী কে বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তাঁকে বাঁচাতে পারিনি।
ডাক্তারের কথা শুনে আমার পায়ের নীচে থেকে মাটি সরে গিয়েছে। আমি কোনো কথা বলতে পারছি না । নীলার এই অবস্থায় জন্য আমি দায়ী। আমি আমার ছেলের মাকে মেরে ফেলাছি ।
আমি কিছু চিন্তা করতে পারছিনা। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
৩ বছর পরে,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,