#যে_আসে_অগোচরে
পর্ব ২
রচনায়:
#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা
” মা বাইকের চাবিটা দাও, আমি বের হবো, এক ইতরকে ক্যালানি দিতে হবে এক্ষুণি”
নুভার এমন কথা শুনে নিষাদ বিষম খেলো। নুভা বেশ কড়া আদেশের স্বরেই তার মাকে কথাটা বললো, তবুও মীনারার করুন দৃষ্টি পাত্রপক্ষের দিকে। কি ভাববে পাত্র আর তার বন্ধু ও মামা? এ সম্বন্ধ কি আর আদৌ বিয়ে পর্যন্ত গড়ানোর কোন সম্ভাবনা থাকলো? কোনো ক্রমেই না! তাই মীনারা শোকাহত হয়ে মাথা চাপড়াতে থাকলো। কত কষ্ট করে বুঝিয়ে শুনিয়ে সে মেয়েটাকে শাড়ী পড়িয়ে বসিয়েছিলো পাত্র পক্ষের সামনে! আর হায় হায়! এ মেয়ে কিনা পাত্রপক্ষ না যেতে যেতেই তার আসল রুপ দেখিয়ে দিলো। বেরিয়ে এলো ছেলেদের পোশাক গায়ে দিয়ে!
নিষাদের মামা আবুল হক নুভার কথাবার্তা থ মেরে শুনছিলো।
ওদিকে বিষম খেতে খেতেই নিষাদ বলে উঠলো পূর্বের ন্যায় বিনীতস্বরেই,
” এত চিন্তা করছেন কেনো মিস নুভা? কে আপনাকে বিরক্ত করেছে? আর কাকে ক্যালানী দিতে হবে বলুন, আমি দিয়ে দিচ্ছি, আফটার অল কয়েকদিন বাদেই আমি আপনার হাজবেন্ড হতে যাচ্ছি, আপনাকে কেউ বিরক্ত করে মানে, সে আমাকেই বিরক্ত করছে!”
নুভা নিষাদের কথাগুলোকে চরমভাবে অগ্রাহ্য করলো, সে বরং ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি দেখিয়ে তার মা মিনারার দিকে চেয়ে বললো,
” মা, তোমার এ ডাক্টার মশাইকে বলো, এত বেশি বকর বকর না করতে, এ জানেই না ক্যালানী দেওয়া কাকে বলে! এর মুরদ আছে বড়জোর ছু’রি কাঁচি দিয়ে কে’টেকুটে পরে সেলাই আর ড্রেসিং৷ ব্যান্ডেজ করার, এর বেশি এ আর কি জানে? আর এক তোমার অনুরোধেই আমি এখানে পাত্রী সেজে বসেছিলাম পাত্রী দেখার আসরে, তাছাড়া আমি…”
এটুকু বলতে বলতেই মীনারা দৌড়ে এসে নুভার মুখ চেপে ধরলো,
” আর একটা কথাও না, চল এখান থেকে!”
এই বলে জোর করে নুভার বাহু টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো। মীনারা একা পারছিলো না বলে আমীর আলী ও তূর্ণা এই তিনজনে মিলে নুভাকে টেনে ভেতরে নিয়ে এলো। কিন্তু নুভা আরো কতগুলা বলেই ছাড়বে। তাই মীনারা তার মুখ চেপে ধরে ভেতরে নিয়ে চলল।
নিষাদ মিনারাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,
” উনাকে যেতে দেন আন্টি! কোনো সমস্যা নাই!”
কিন্তু মিনারা তার কথা মানলো না বরং নুভাকে টেনে হিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে গেলো।
নুভাকে ভেতরে নিয়ে যেতেই নিষাদের মামা আব্দুল হক গটগটে স্বরে হটহট করে নিষাদকে বলা শুরু করলেন,
” নিষাদ মামা! এ তো দেখছি আজব কান্ড এক! আমার নাম আব্দুল হক, আমি একটা কথাও বলবোনা বেহক! তোমার আম্মা অর্থাৎ আমার আপা এই মেয়েকে তার ছেলের বউ হিসেবে কোনোক্রমেই মেনে নেবে না!”
নিষাদ হেসে বললো,
” মামা ও মামা, ডোন্ট ওরি, ছেলের বউ হিসেবে না মানলেও, মেয়ে হিসেবে আমার মা ওকে ঠিকই মেনে নেবে, এই আমি বললাম! আর তুমি তো আছোই, মা কে রাজী করানোর দায়িত্ব তোমার! তুমি যদি তোমার এই দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করো, তাহলে তোমার সাথে আমার দোস্তি বেদোস্তি হয়ে যাবে বলে রাখলাম! ”
আব্দুল হক নিষাদের হাসি বিনিময় করে একটা ঢোক গিলে শুষ্ক মুখে বললো,
” দেখি! কি হয়! আই শ্যাল ট্রাই মাই লেভেল বেস্ট!”
একথা বলতেই নিষাদ আব্দুল হকের গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো আনন্দে।
একথা উল্লেখযোগ্য যে আব্দুল হকের সাথে নিষাদের বয়সের ব্যবধান মাত্র পাঁচ বছরের। মামা হলেও আব্দুল হকই নিষাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। একে অপরকে সকল কিছুই শেয়ার করে। নিষাদের জীবনে প্রথম প্রেম এসেছে, একথা সে প্রথম তার মামাকেই বলেছে। আর মামা তার মাকে বলেছে, অত:পর নুভাকে দেখতে পাঠিয়েছে। আর একজন বন্ধু যে তার সাথে এসেছে, তার নাম অয়ন। অয়ন আর নিষাদ বাল্যকালের বন্ধু।
অয়ন এবার নিষাদের মুখপানে চেয়ে বললো,
” তো বন্ধু, তোর গালের হাল তো বেহাল দেখছি! হবু ভাবী তো এক আগুনের গোলা! এত জোরে থাপ্পড় দিছে তোরে? কি এমন বলছিলি তুই?”
নিষাদ উত্তরে শুধু হাসলো, আর কিচ্ছু বললো না।কারন সে ও জানে, ভুল কথাই বলছিলো সে। একটা মেয়েকে তার কুমারিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা, একটা অভদ্রতাই বটে! কারন মিনারা যখন নিষাদকে যখন নুভার সাথে একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দেয় তখন নুভা বেশ হাসিখুশি ভাবেই কথা বলছিলো, কিন্তু নিষাদের খুব করে নুহার রাগী চেহারা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। তাই শুধুমাত্র রাগানোর জন্যই ইচ্ছে করে নুভাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ” আর ইউ ভার্জিন?”
.
.
” হাউ ডেয়ার হি? তোকে জিজ্ঞেস করছে তুই ভার্জিন কিনা? সাহস কত দুলাভাইয়ের বাচ্চার!”
শান্ত একথা বলে উঠার সাথে সাথেই তার পিঠে একটা থাপ্পড় পড়লো,
” ঐ শান্তর বাচ্চা! ঐ? তুই ঐ ডাক্টারকে দুলাভাই বললি কেন?”
নুভার ক্রোধে ফেটে পড়া প্রশ্ন শান্তর প্রতি।
শান্ত তার দোষ স্বীকার করে কানে চিমটি কেটে বললো,
” ওহ! স্যরি দোস্ত! আমি তো এতদিন ভুলেই গেছিলাম, তুই ছেলে না মেয়ে, তবে এখন পাত্রপক্ষ দেখতে আসলে আমার মনে পড়লো যে, তুই একটা মেয়ে, আর তুই তো বয়সে আমার চেয়ে বড়, তাই তোর হবু জামাইরে কি বলমু? দুলাভাই না তো কি? দুলায়াপা?”
এই কথা বলার পর শান্তর পিঠে পুনরায় ধুপুস ধাপুস পড়লো।
তবে এতক্ষন চুপ করে থাকা রুমি বলে উঠলো,
” তোর মায়ে বললো, বিয়ে যদি হয় তোর এই ছেলের সাথেই হবে, না হলে হবেই না কোনোদিন, তাইতো শান্ত ওরে দুলাভাই ডাকলো, ওর দোষ কোথায়?”
নুভা এবার নিজেকে সংযত করে বললো,
” তোদের কোনো দোষই নাই, দোষ সব ঐ ডাক্টারের, ঐ ডাক্টার শুরু থেকেই আমারে শুধুশুধু রাগিয়ে দিচ্ছে। প্রথম দিন তো আমাকে কোলে তুলে নিলো, লুইচ্চামি করলো। আর আজ আমাকে বলে কিনা আমি ভার্জিন নাকি? সাহস কত?”
রুমি বলে উঠলো,
” এত ভদ্র পোলারএই প্রশ্ন তো করার কথা না, তো তুই কি বলছিলি রে?”
নুভা কূট হাসি দিয়ে বললো,
” আমি ওরে বলছিলাম, আমারে বিয়ে করো না ডাক্টার, আমার অনেক ছেলের সাথে উঠাবসা, চলাফেরা, রাত্রে বাড়িও ফিরি না মাঝে মাঝে, ছেলে বন্ধু ছাড়া আমার চলেই না। আর যখনই এসব বললাম, তখন সে আমাকে বলে আমি কি ভার্জিন নাকি? আরে! কতবড় সাহস ওর, তোরাই বল আমি কি খারাপ!”
নুভার এসব কথা শুনে শান্ত আর রুমি মাথায় হাত দিলো। এই মেয়ে একটা চিজ বটে! নিজেই বলে যে ছেলেদের সাথে উঠাবসা করে, থাকে, চলে। আর এসব শুনে এই প্রশ্ন অমূলক কিভাবে হতে পারে?
.
.
পাড়ার মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়ে মা’রামারি লেগেছে। একদলের একজন এল বি ডব্লিও হয়েও মানতে নারাজ বলে লেগেছে দারুন এক বিপত্তি। ন নুভার দলকেই এভাবে ঘাত ত্যাড়ামী করে হারিয়ে দিচ্ছে অপর দল বিধায় নুভা ব্যাট হাতে মা’রতে গিয়েছে অপর দলের ক্যাপ্টেনকে। নুভা অপর দলের ক্যাপ্টেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেখানে উপস্থিত হলো নিষাদ।
নিষাদকে দেখেই সবাই সমীহ করে বলতে লাগলো,
“ঐ যে ডক্টর নিষাদ এসেছে, কি বলতে চায় সে? ”
নিষাদ নুহাদের দলের হয়ে বোলিং করার অনুমতি চাইলো ক্যাপ্টেনের কাছে।
অপর দলের ক্যাপ্টেন হেসে হেসে বললো,
” আমাদের ব্যাটসম্যানেরে এল বি ডব্লিউ দিয়া আউট করে, সব আকাইম্মার দল, আপনিই দেখেন ডাক্টার সাহেব, কত ভালো ব্যাটসম্যান সে! দুধর্ষ ব্যাটসম্যান”
এসব বলে সে নিষাদের হাতে বল তুলে দেয়।
ডক্টর নিষাদ বলে কথা। তাকে অমান্য করা যায়?
সবার শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিক্ষা।
নিষাদের বল ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে পুনরায় তার হাতেই এসে পড়লো।
নিষাদের এক বলেই বোল্ড আউট হয়ে গেলো সেই দুধর্ষ ব্যাটসম্যান।
নুভা নিজের দলের সদস্যদের সাথে উচ্ছ্বাস করতে লাগলো।
একে একে সবাই চলে গেলো মাঠ ছেড়ে। নুভা তার দরকারী জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যেতে ধরতেই সেখানে নেমে গেলো বৃষ্টি।
নিষাদ যেনো সর্বজ্ঞ, সে যেনো আগেই জানতো বৃষ্টি নামবে। নিজের ব্যাগে থাকা ছাতাটা মেলে ধরলো নুভার মাথায়।
নুভা রেগে গিয়েও হেসে দিয়ে বললো,
” ঐ ডাক্টার, আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্ঠা করো না খুবরদার! আমি তোমাকে জীবনেও বিয়ে করবো না!”
(চলবে)