যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৬.
আকাশের এককোণে মস্ত বড় চাঁদ। নীরবে নিভৃতে একই শহরের দুই প্রান্তের দুটি মানুষের ফোনালাপ শুনতে ব্যস্ত সে। আজ আর পৃথা আচমকা ফোন কেটে দেয় নি। বরং যেচে চুপচাপ শেয়ানা মানুষটা দ্বারা কাবু হতে ব্যস্ত সে। পৃথা নিজের বিছানায় বসে একটা বিশাল টেডি বিয়ার জড়িয়ে ধরে আছে। ফোনের অপর পাশ থেকে তূর্য বলে উঠে,
“ আপনি কি রাত জাগাদের দলে নিজের নাম লেখাতে চান নাকি? “
পৃথা শান্ত শীতল স্বরে বলে,
“ এমন কেন মনে হলো? “
“ এতো রাতে কল দিলাম, অথচ আপনি জেগে ছিলেন। “
“ আমার ভাইদের সাথে ছিলাম এতক্ষণ। “
তূর্য একগাল হেসে বলে,
“ আপনার সেই পলিটিশিয়ান এবং পুলিশ ভাই? “
পৃথা লজ্জা পায়। মনে মনে ঠিক করে আর কখনো অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলে নিজে আগে কথা বলে উঠবে না সে। কি একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো! তূর্য হয়তো তার লজ্জা বুঝতে পারলো। তাই কথা ঘুরিয়ে সে বলে উঠে,
“ এখন তবে ঘুমোতে যাই মিস এ বি সি। কাল সকালে আমার অফিস আছে। “
পৃথা অকপটে প্রশ্ন করে বসে,
“ আপনি কালও ফোন করবেন? “
তূর্য রহস্যময় গলায় প্রশ্ন করে,
“ আপনি কি চান? “
লজ্জায় কথা পৃথার গলায় আটকে আছে। সে মুখ ফুটে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলতে পারে না,
“ অবশ্যই করবেন। “
কোনো জবাব না পেয়ে তূর্য নিজ থেকেই হেসে বলে,
“ বলুন তো মিস।
আপনি প্রেমিকা হতে চান না বউ? “
মেয়েদের কেসে আঠারো বয়স এবং প্রথম প্রেমে পড়া দুটোই খুব আবেগের সময়। পৃথার কেসে আঠারো বয়সেই তার জীবনে প্রথম প্রেম এসেছে। এই বয়সে কেউ ভেবে চিন্তে প্রেমে পড়ে না। এই প্রেমটা যতটা লজিকলেস হয় ততটাই মিষ্টি অনুভূতির বার্তার ন্যায় হয়। নিজের ঘরে সবসময় মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ে বেড়ানো চঞ্চল পৃথা লাজে মুখ ফুটে তূর্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। চুপ রয়। তূর্য নিজেই কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
“ কাল রাতে আবার কল করবে আপনার ফোনালাপের স্বামী।
আপনি নাহয় ততক্ষণ অপেক্ষা করবেন সাজিয়ে ফুলদানি। “
তূর্যের এতোটুকু কথাই অষ্টাদশীর শান্ত মনে ঝড় তুললো। অপেক্ষা নিবেদন কভু এতো মধুর হয়? হয়তো হয়। পৃথার কাছে এই অনুভূতি খুব নতুন। তাই তো তূর্য তাকে আর বেশি এলোমেলো করে দেয়না। চুপচাপ ভদ্র ছেলের ন্যায় কল কেটে দেয়।
__________
আজকে সন্ধ্যার পর একটা পেশেন্টের কেস নিয়ে কার্ডিওলোজি ডিপার্টমেন্টের ডাক্তারদের বোর্ড মিটিং বসে। সেই মিটিং শেষ হতে হতে প্রায় বেশ রাত হয়ে যায়। তরী ডিরেক্ট সার্জারি থেকে মিটিংয়ে যোগ দেওয়ায় ওর পড়নে সার্জিক্যাল ইউনিফর্ম ছিলো। এখন বাসায় ফিরার আগে নিজের কেবিনে ফিরে ড্রেস চেঞ্জ করে নেওয়ার জন্য আসে সে। কেবিনের ভিতর থেকে ডোর লক করেই তরী রুমের একপাশের একটা কেবিনেট থেকে নিজের ড্রেস বের করে নিতে থাকে। হঠাৎ কিছু একটার শব্দ শুনে সে পিছনে ফিরে তাকায়। সাথে সাথে দেখতে পায় ডক্টর রায়হানকে। তার কেবিনের পেশেন্ট চেক আপ এরিয়া এবং বাকি রুমের মাঝে একটা বিশাল পর্দা আছে। সেই পর্দার আড়ালেই এতক্ষণ রায়হান দাঁড়িয়ে ছিলো। যাকে দেখে তরীর মেজাজ ইতিমধ্যে সপ্তম আকাশে পৌঁছে গিয়েছে। সে চেঁচিয়ে উঠে,
“ এটা কোন ধরনের অভদ্রতা? আমার অনুপস্থিতিতে আমার কেবিনে প্রবেশ করার পারমিশন কে দিয়েছে আপনাকে? গেট আউট রাইট নাও। “
রায়হান তরীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
“ আমি আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। আপনি প্লিজ ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনুন। “
“ আমার আপনার সাথে জব লাইফের বাহিরে কোনো ধরনের কথা থাকতে পারে না। তাই এই মুহুর্তে বেরিয়ে যান। “
“ কথা আছে তরী। আমি আপনাকে আমার মনের কথা জানাতে চাই। “
কথাটা বলতে বলতে রায়হান তরীর ঘাড়ে হাত রাখে। সাথে সাথে তরীর পুরো শরীরে যেনো আগুন ধরে যায়। সে রাগে পা দিয়ে রায়হানের হাঁটুর জয়েন্ট বরাবর লাথি মারে। এতে রায়হান কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে। লাথিটা এতো জোরে লেগেছে যে তার মনে হচ্ছে তার পায়ের হাড় হয়তো ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে। এই শুটকির মতো শরীরের মেয়েটার গায়ে এতো জোর কই থেকে এলো তা বুঝতে পারে না রায়হান। সে আপাতত পায়ের ব্যাথায় আর্তনাদ করতে ব্যস্ত।
রাগে থরথর করে কাপতে থাকা তরী উঁচু গলায় বলে উঠে,
“ অসভ্য, পাভার্ট কোথাকার। ইউ চুজড দ্যা রং পার্সন। তোর পার্সোনাল লাইফ আর ক্যারিয়ার আমি এখন কিভাবে শেষ করি শুধু দেখ। ঘরে বউ বাচ্চা রেখে হসপিটালে ডাক্তারির নাম করে লুইচ্চামি করতে আসোস? “
কথাটা বলেই তরী দরজা খুলে বেরিয়ে উচ্চস্বরে সিকিউরিটিকে ডাকতে থাকে। বেশ রাত হওয়ায় ওপিডি এরিয়াটায় তেমন একটা মানুষ ছিলো না। কিন্তু তরীর উচ্চস্বর শুনে মুহুর্তেই কয়েকজন ডাক্তার, নার্স এবং সিকিউরিটি এগিয়ে আসে। সকলেই তরীর কেবিনে এভাবে রায়হানকে পড়ে থাকতে দেখে তরীকে প্রশ্ন করে,
“ কি হয়েছে? “
তরী তেজী গলায় সিকিউরিটিকে উদ্দেশ্য করে বলে দেয়,
“ এই পাভার্টকে বাহিরে নিয়ে ছুড়ে ফেলেন। আর আজকের পর যদি কেউ এই ক্যারেক্টারলেসকে হসপিটালে প্রবেশ করতে দেয় তাহলে তাকে আমি দেখে নিবো। “
রায়হান যতই সিনিয়র ডাক্তার হোক না কেনো, তরী হলো হসপিটালের সিইওর মেয়ে। তার কথাই প্রাধান্য পাওয়া স্বাভাবিক। আর তাছাড়া ডক্টর রায়হানের দৃষ্টি যে খুব একটা ভালো না তা নিয়ে হসপিটালের সকলের মধ্যেই কম বেশি গুঞ্জন শোনা যায়। তাই সকলেই সহজে তরীর কথা বিশ্বাস করে নেয়।
একজন সিকিউরিটি রায়হানের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই রায়হান চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“ শি ইজ লায়িং। ও শুধুমাত্র আমাকে ডিফেম করে এটেনশিন সিকিং এর চেষ্টা করছে। ক্যারেক্টারলেস যে কে তা সকলের জানা আছে। আমি একজন হ্যাপিলি ম্যারিড লোক। আর মিস তরীর অলরেডি একবার এনগেজমেন্ট ভেঙেছে। বয়স ২৭ অথচ এখনো উনার বিয়ে হয়নি। নিশ্চয়ই উনার ক্যারেক্টারেই কোনো সমস্যা আছে। তাই তো হুমায়ুন স্যারের মেয়েকে বিদায় করতে এতো কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে। “
রায়হানের কথা যেন জ্বলন্ত পেট্রোলের মতো কাজ করে তরীর উপর। সে কিছুক্ষণ আগে রায়হানের বাম পায়ের হাঁটু বরাবর লাথি মেরেছিলো। এবার সে রায়হানের ডান হাঁটু বরাবর আরেকটা জোরে লাথি মারে। একজন নার্স দূর হতে ফিসফিসিয়ে বলে,
“ শিট। এই লোক জীবনে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। “
পাশ থেকে একজন নতুন ইন্টার্ন আগ্রহী সুরে প্রশ্ন করে,
“ এমন কেন? “
“ ডক্টর তরী ক্যারাটে জানে। উনার লাথির বেশ জোর আছে। “
তাদের কথার মাঝেই তরী আবার চেঁচিয়ে উঠে। সাথে সাথে সিকিউরিটি দৌড়ে এসে রায়হানকে টেনে হিচড়ে হসপিটালের বাহিরে নিয়ে যায়। তরী তার কেবিনের সামনে ভীড় জমানো মানুষদের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“ আই ওয়ান্ট টু স্টে এলোন। “
ধীরে ধীরে কেবিনের সামনে থেকে ভীড় কমে আসতেই তরী ধপ করে তার টেবিলের সামনে একটি চেয়ারে বসে পড়ে। দু মিনিট ব্রিথিং এক্সারসাইজ করে আগে নিজেকে শান্ত করে। পরপরই নিজের পাপার নাম্বারে কল করে সে এইমাত্র ঘটে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনা উনাকে জানায়। সব শুনে ফোনের অপর পাশ হতে হুমায়ুন রশীদ বলে উঠেন,
“ আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই প্রিন্সেস। তুমি একটুও চিন্তা করো না। আই’ল টেক কেয়ার অফ দিস কেস। “
ফোন রাখতেই তরী নিজেকে হালকা অনুভব করে। এই একটা অভ্যাস তার ছোটবেলা থেকে। যেকোনো বিষয় কিংবা যেকোনো ঘটনা সে সবসময় নিজের পাপার সাথে শেয়ার করে। নাহয় মোটেও হালকা অনুভব করে না সে। হঠাৎ তরীর মনে পড়ে রায়হানের তার এনগেজমেন্ট ভাঙা নিয়ে বলা কথাটা। সবাই যা ইচ্ছা ভাবুক। তা দিয়ে তরীর কিছু আসে যায় না। সে আর তার পরিবার তো সত্যিটা জানে। এটাই তার জন্য যথেষ্ট।
__________
সবেমাত্র বাসায় ফিরেছে শোভন। লিভিং রুম পেরিয়ে উপরে যাওয়ার সময় দেখতে পায় তার পরিবারের সকলেই লিভিং রুমে উপস্থিত। শোভন চুপচাপ সালাম দিয়ে উপরে যেতে নিলেই আফজাল সাহেব বলে উঠে,
“ তুমি একা সিলেট যাবে না। আমি আর তোমার আম্মাও তোমার সাথে যাবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। “
শোভনের এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো সে ভুল শুনছে। সে অবাক স্বরে প্রশ্ন করে,
“ আর ইউ সিরিয়াস? “
আফজাল সাহেব মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,
“ এই ছেলে? তোমার সাথে কি আমার রসিকতার সম্পর্ক? “
শোভন পার্থর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ তুইও যাবি দাদা? “
“ উহু। আব্বা আম্মা শুধু যাবে এখন। আমার ব্যবসার কিছু কাজ আছে। একবার কথা বলে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে তো পরে আমরা আছিই। “
পৃথা লাফিয়ে শোভনের পাশে এসে বলে,
“ সিলেট থেকে ফিরেই আমাকে ছোট ভাবীর সাথে সবার আগে দেখা করিয়ে দিবি ছোট দা। “
শোভনের চোখেমুখে খুশি ফুটে উঠে। পৃথা মজা করে বলে উঠে,
“ একবার ছোট ভাবি আসুক। পরে আমরা দুজন মিলে বড় দার জন্যও বউ খুঁজে বের করবো। “
পার্থ উঠে এসে পৃথার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
“ খুব পেকেছিস তুই। সবার আগে তোকে বিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বিদায় করা উচিত। “
পার্থর কথা শুনে পৃথা গাল ফুলিয়ে বসে রয়। তা দেখে দুই ভাই হাসিতে মেতে উঠে। দূর হতে এই দৃশ্য দেখে আফজাল সাহেবের চেহারায় স্বস্তি ফুটে উঠে। নিজের তিন ছেলেমেয়ের খুশির থেকে মূখ্য আর কোনো কিছুই নেই উনার কাছে।
__________
আজ তরীর মনটা বেশ ফুরফুরে। সামনের সপ্তাহেই তার পাপা দেশে ফিরে আসছে। হসপিটাল থেকে বের হতেই এক দমকা হাওয়া এসে তার গায়ে লাগে। উড়িয়ে দেয় ওড়নার আচল। তরী মৃদু হেসে নিজের গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগ মুহুর্তেই সে দেখতে পায় রাস্তার অপরপাশে সেদিনের ওই কালো রঙের গাড়িটা। তরী ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে গাড়ির ভিতর সেদিনের একটা লোক বসা আর তার সাথে অন্য আরেকটা নতুন লোক বসা। তরী আগ্রহ ভরা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তখনই সে লক্ষ্য করে হসপিটাল থেকে একটা ছেলে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের পকেট হতে ফোন বের করে কল করে কারো সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়।
তরী বুঝতে পারছে না এখানে কি হচ্ছে। কিন্তু সেই ছেলেটার দিকে গাড়ির সেই লোক দুটোর স্থির দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারে নিশ্চিত কোনো একটা ঘ্যাপলা আছে। তরী অধৈর্য্য হয় না। চুপচাপ অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বাইক এসে সেই ছেলেটার সামনে থামে। ছেলেটা হাসতে হাসতে সেই বাইকে উঠে পড়ে। বাইকটা চলতে শুরু করলেই সেই গাড়িটাও বাইকের পিছু পিছু চলতে শুরু করে। তরী মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় আজ সে এই ঘটনার পিছনের কাহিনী জেনেই ছাড়বে।
সে নিজেও ওই গাড়িকে ফলো করতে শুরু করে। এক হাতে ড্রাইভ করতে করতে আরেক হাতে নিজের ফোন বের করে তূর্যকে কল দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তূর্য কল রিসিভ করে। তরী ফোন স্পিকারে রেখে বলে উঠে,
“ শুন ছোট। ইম্পোর্টেন্ট কথা বলবো। মোটেও রিয়েক্ট করবি না। একটা গাড়ির নাম্বার বলছি। তাড়াতাড়ি নোট কর। “
তূর্য কেবল মাত্র বাসায় ফিরেছে। এমন সময় বোনের থেকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত কল পেয়ে সে কিছুটা চিন্তিত হয়। ঘাবড়ে প্রশ্ন করে,
“ আপি? তুই ঠিক আছিস? “
“ অযথা প্রশ্ন করিস না তো। যা বলছি তা কর। “
তূর্য বোনের কথামতো একটা কাগজে গাড়ির নাম্বারটা তুলে। তারপর প্রশ্ন করে,
“ কি হয়েছে এখন বল। “
তরী সাবধানতার সহিত ড্রাইভ করতে করতে তূর্যকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। তূর্য সাথে সাথে আতংকিত গলায় বলে,
“ আপি তুই কোথায়? আমাকে এড্রেস বল। আর তুই ফোলো করা বন্ধ কর। “
তরী বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে,
“ আমি কিভাবে জানবো ওরা কোথায় যাচ্ছে? কিন্তু তুই আমার সাথে কলে কানেক্টেড থাক। কোনো কিছু ঘাপলা মনে হলে আমি তোকে জানাবো। “
তূর্য ফোনের অপরপাশ থেকে বোনের উপর রাগারাগি করতে থাকে। কিন্তু তরী সেটার তোয়াক্কা করে না। আচমকা সে দেখে তারা শহর ছেড়ে কিছুটা দূরে শুনশান জায়গার দিকে যাচ্ছে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তরীর মনে ভূত প্রেত নিয়ে কোনো ভয় নেই। কিন্তু তার ভয় অন্য জায়গায়। সে সাথে সাথে গাড়ির সব দরজা লক করে দেয় আর গাড়ির লাইটও বন্ধ করে দেয়।
সে যথেষ্ট দূরত্ব মেইনটেইন করে গাড়িটাকে ফোলো করছে যেনো তারা কোনোভাবেই টের না পায়। আচমকা সামনের গাড়িটা সেই বাইককে পিছন থেকে হিট করে রাস্তার একপাশে ফেলে গাড়ি ব্রেক করে। এই দৃশ্য দেখে তরী তাড়াতাড়ি গাড়ি স্লো করে ফেলে নিজের।
সেই কালো রঙের গাড়িটা থেকে দুজন পুরুষ নামে। বাইকের সেই দুটো ছেলেকে বেশ কিছুক্ষণ মারধর করে তাদের দড়ি দিয়ে বেধে গাড়িতে তুলে। এই সম্পূর্ণ দৃশ্যটা তরী নিজের ফোনে রেকর্ড করে। তূর্যর কলটা কেটে দিয়ে সে এই ভিডিওটা তূর্যকে সেন্ড করে আর নিজের ফোন সাইলেন্ট মুডে দিয়ে দেয়।
কালো রঙের গাড়িটা আবার চলতে শুরু করে। তরীও নীরবে সেই গাড়ি ফোলো করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দেখে ওই গাড়িটা একটা প্রাইভেট প্রোপার্টি জাতীয় এরিয়ায় প্রবেশ করছে। তরী নিজের গাড়ি দূরেই একটা ঝোপের আড়ালে পার্ক করে। দূর হতে সে ভ্রু কুচকে সেই প্রাইভেট প্রোপার্টির ভিতরের সুউচ্চ দালানটা দেখতে থাকে। এটা তো একটা আন্ডার কন্সট্রাকশন বিল্ডিং। এখানে এই লোক গুলোর কি কাজ?
তরী আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিয়ে গাড়ি থেকে নামে। সাথে করে নিজের ফোনটা নিতে ভুলে না। শব্দহীন ভঙ্গিতে পা ফেলে সে ওই প্রাইভেট প্রোপার্টির ভিতর প্রবেশ করে। লোক দুটো ওই ছেলে দুটোকে ধরে বেধে বিল্ডিংয়ের ভিতর নিয়ে যাচ্ছে। তরী নিজেকে যথাসম্ভব আড়াল করে তাদের অনুসরণ করতে থাকে।
দ্বিতীয় তলায় উঠতেই ছেলে দুটোকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয় তারা। চারিদিকে দেয়ালহীন হওয়ায় শা শা বাতাস এসে তরীর গায়ে লাগছে। সে আড়াল হয়ে সিঁড়িকোঠার এখানেই দাঁড়িয়ে রয়। ভ্রু কুচকে বুঝার চেষ্টা করছে এখানে চলছে কি।
মাঝখানে একটা হলদে রঙের বাল্বের আলোতে চারিদিকটা তেমন স্পষ্ট নয়। সেই আলোর নিচেই অপরদিকে ফিরে চেয়ারের উপর বসে আছে একজন পুরুষ। তার আশেপাশে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তরী নিজের ফোন অন করে সম্পূর্ণ দৃশ্যটা রেকর্ড করতে থাকে। আচমকা সে একপাশে সেদিনের ওই বাইকের ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়। তাকেও একই ভঙ্গিতে বেধে রাখা হয়েছে।
তিনটা ছেলে হাত পা বাধা অবস্থা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। ইনিয়ে বিনিয়ে মাফও চাইছে। কিন্তু কেউই তাদের কথা কানে তুলছে না। তখনই সেখানে একটা লোক বলে উঠে,
“ শু’রের পোলা গুলারে ধইরা আনসি ভাই। “
চেয়ারে বসা লোকটা বেশ শান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়। একহাতে নিজের ঘাড়ের একপাশে কিছুটা ম্যাসাজ করে পিছনে ফিরে তাকায়। লোকটাকে দেখতেই তরীর সম্পূর্ণ শরীর জমে যায় পাথরের ন্যায়। ঘৃণায়, রাগে তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। অস্ফুটে বলে উঠে,
“ স্ক্রাউন্ডেল। “
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]