যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো পর্ব-০৫

0
690

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৫.

মেরুন রঙের একটি সুতির থ্রি পিস পরিহিত নারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি পলাশী মোড়ের পরিচিত এক চায়ের দোকানে বসে রয়েছে। বিকেলের এই আবহাওয়াটা তার খুব প্রিয়। বছরের যেকোনো ঋতুই হোক না কেন বিকেল বেলার এই প্রশান্তিদায়ক অনুভূতিটা সবসময় একই থাকে। ইউনিফর্ম পরিহিত পুরুষটা তার পাশে এসে বসেই সবার আগে তার ওড়নার আচল টেনে নিজের ঘর্মাক্ত মুখটা মুছে নেয়। পরপরই ক্লান্ত গলায় বলে উঠে,

“ বুঝলে মধু, ডিসিশন ফাইনাল। হবু শশুড় আব্বা যদি তোমাকে আমার হাতে তুলে না দেয় তাহলে নিজেই তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো। পুলিশ মানুষ বলে কথা। এইটুকু সাহসিকতা না দেখালে বুড়ো বয়সে নাতি নাতনিদের শোনানোর জন্য গল্প খুঁজে পাবো না। “

মধুমিতা নিজের হাতের ছোট হ্যান্ড ফ্যানটা শোভনের মুখের দিকে ধরে। ঘেমে নেয়ে মানুষটা একাকার। বিচলিত গলায় বলে,

“ এতো ঘেমে গেলে কিভাবে? “

“ রাস্তার মাঝে জ্যাম লেগেছিলো। অপেক্ষা করলে আগামী এক ঘন্টায়ও এসে পৌঁছাতে পারতাম না। তাই গাড়ি একপাশে পার্ক করে দৌড়ে এসেছি। “

মধুমিতা নিজের টোটে ব্যাগ থেকে একটা পানির বোতল বের করে শোভনের দিকে এগিয়ে দেয়। শোভন বিনা বাক্যে সেই বোতল নিয়ে অর্ধেকটা পানি খেয়ে নেয়। পরপর নিজের হাতের শপিং ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করে মধুমিতার হাতে দিয়ে বলে,

“ তোমার শাশুড়ি মা স্পেশাল কাচ্চি। “

মধুমিতা বিনাবাক্য ব্যয়ে সামান্য পানি দিয়ে হাত ধুয়ে বক্সের ঢাকনা খুলে এক লোকমা বিরিয়ানি তুলে শোভনের দিকে ধরে। শোভন চুপচাপ সেই লোকমা মুখে নিয়ে বলে,

“ আম্মার রান্না আর তোমার হাতে খাওয়ার সৌভাগ্য ইজ দ্যা বেস্ট কম্বিনেশন। “

নিজের মুখেও এক লোকমা নিয়ে মধুমিতা বলে উঠে,

“ আন্টির মতো এতো অথেনটিক টেস্ট আসে না আমার রান্না করা কাচ্চিতে। “

শোভন মৃদু হেসে বলে,

“ আম্মা পুরান ঢাকার মেয়ে। উনাকে কাচ্চি রান্নায় হারাতে পারবে না জীবনে। “

মধুমিতা সামান্য হেসে কথার ফাঁকে ফাঁকে শোভনকে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত। আচমকা সে প্রশ্ন করে,

“ এরকম মিডেল ক্লাস স্টাইলে প্রেম করতে কি তুমি কখনো বিরক্তবোধ করো না? “

শোভন হেসে শুধায়,

“ আমার কাছে তিক্ততা মেটানোর জন্য মধু আছে। মধুর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত এবং মধু সম্পর্কিত প্রতিটা বিষয়ই আমার মধুময় মনে হয়। “

__________

রাতের দিকে পরিবারের সবাই যখন বাড়িতে উপস্থিত তখন তিন ছেলেমেয়েকেই লিভিং রুমে ডেকে পাঠান আফজাল সাহেব। পার্থ, শোভন, পৃথা তিনজনই এই মুহুর্তে আফজাল সাহেবের মুখোমুখি সোফায় বসে আছে। সাদিকা বেগমও একপাশে নীরব দর্শকের ন্যায় বসে আছে। সবার প্রথম আফজাল সাহেব মুখ খুলেন,

“ মেয়েটার পরিবার সম্পর্কে বলো। “

কথাটা যে শোভনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তা সবাই বুঝতে পারে। শোভন ভদ্র ছেলের ন্যায় জবাব দেয়,

“ আংকেল সিলেটের একটি প্রাইমারি স্কুলের টিচার। আন্টি হাউজ ওয়াইফ। আর ওর বড় বোন ম্যারিড। “

মধুমিতার পারিবারিক বিবরণে যে আফজাল সাহেব খুব একটা সন্তুষ্ট না তা উনার মুখশ্রী দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তবুও উনি আবার প্রশ্ন করে,

“ মেয়ে কি করে? “

“ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। “

আফজাল সাহেব আরো একবার চোখমুখ কালো করে ফেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনে কিছুটা ভালো মনে হলেও সাবজেক্টটা উনার মোটেও পছন্দ হয়নি। উনি মুখ কিছুটা বিকৃত করে বলে,

“ এই মেয়ে কোথায় পেলো তোমাকে? “

শোভনের সোজাসাপ্টা জবাব,

“ মধু আমাকে পায় নি বরং আমি ওকে পেয়েছি। ওর জন্য আমার থেকেও আরো বেটার অপশন ছিলো কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ যে ও আমার ভালোবাসা গ্রহণ করেছে। আমাকে অপশন নয় বরং প্রায়োরিটি হিসেবে ট্রিট করে ও। “

পৃথা দুই ভাইয়ের মাঝে বসে গালে হাত দিয়ে নিজের ছোট দা’র কথা শুনতে ব্যস্ত। ঠোঁটের কোণে লেপ্টে সুদীর্ঘ হাসি। এসব বিষয়ে তার আগ্রহ বরাবরই বেশি৷ আফজাল সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“ আমাদের সাথে এই মেয়ের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস যায় না। “

শোভন শব্দ করে হেসে উঠে। পরপর বলে,

“ আপনার এই হাই ক্লাস সোশ্যাল ইমেজের সাথে তো আমার জবটাও যায় না আব্বা। আপনি কিভাবে ভাবলেন যেই ছেলে জবের ক্ষেত্রেই আপনার কথা মানেনি, সে নিজের লাইফের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিসিশনে আপনার অপিনিয়নের তোয়াক্কা করবে? “

আফজাল সাহেব রাগে গর্জে উঠে।

“ তোমার জীবনে কি আমার অপিনিয়নের কোনো ভ্যালু নেই? “

“ অবশ্যই আছে। তবে আপনার ভুলভাল অপিনিয়নকে আমি কখনো ফাইনাল ডিসিশন হিসেবে মেনে নিবো না। “

কথাটা বলেই শোভন উঠে চলে যেতে নিয়েও ফিরে তাকায়। শান্ত গলায় বলে,

“ সামনের সপ্তাহে আমি সিলেট যাচ্ছি মধুর ফ্যামিলির সাথে দেখা করতে। উনাদের রাজি করিয়ে বিয়েটা তো আমি অবশ্যই করবো। কিন্তু আপনারা কি করবেন সেটা আপনাদের ডিসিশন। মধুকে মেনে নিতে যদি আপনাদের জাত যায় দ্যান আই হ্যাভ নো প্রব্লেম। আমি আমাদের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবো। “

কথাটুকু শেষ করেই শোভন বড় বড় কদম ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করে। আফজাল সাহেব স্তব্ধ মূর্তির ন্যায় বসে আছেন। সাদিকা বেগম আঁতকে বলে উঠেন,

“ পার্থর আব্বা? আমার ছেলে ঘর ছেড়ে গেলে কিন্তু আমি মরে যাবো। “

আফজাল সাহেব নিরুত্তর বসে রয়। পার্থ এতক্ষণে নীরবতা ভেঙে বলে,

“ আপনাকে আমি সম্মান করি আব্বা। কিন্তু শোভন ইতিমধ্যে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে আমাদের থেকে। ওকে আর দূরে ঠেলে দিয়েন না। মধুমিতা এই ঘরের বউ হয়ে আসলে আমাদের সম্মান যাবে না, বরং ঘরের ছেলে এবং ছেলের বউ ঘর ছেড়ে গেলে আমাদের আর কোনো সম্মান থাকবে না। বিষয়টা ভেবে সিদ্ধান্ত নিবেন। “

কথাটা বলেই পার্থ উঠে উপরে চলে যায়। পৃথাও ভাইয়ের পিছু পিছু নিজের রুমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বিশাল লিভিং রুমে রয়ে যায় কেবল আফজাল সাহেব এবং সাদিকা বেগম। সাদিকা বেগম উঠে এসে আফজাল সাহেবের পাশে বসে। ছলছল চোখ মেলে বলে,

“ আমার পয়ত্রিশ বছরের তিলে তিলে সাজানো সংসার আপনার এই সামান্য জিদের জন্য তছনছ করে দিয়েন না পার্থর আব্বা। যেই সোশ্যাল স্ট্যাটাসের আপনি অযুহাত দেখাচ্ছেন সেই সোশ্যাল স্ট্যাটাস দেখে আমি আপনাকে বিয়ে করি নি। আমি যখন আপনাকে বিয়ে করি তখন এসব কিছুই ছিলো না আপনার। বহু বছর আগে আমার আব্বা যেই কারণ দেখিয়ে আমাদের বিয়েতে বাধা দিয়েছিলো, আপনিও সেই একই কারণ দেখিয়ে নিজের ছেলেকে দূরে যেতে বাধ্য করবেন না। “

আফজাল সাহেব কোনো জবাব দেন না। তিনি নীরবে উঠে প্রস্থান করেন।

__________

পার্থর রুমটা মূলত দুই রুম বিশিষ্ট। দোতলার বাম পাশের তৃতীয় ঘরটাতে ঢুকতেই প্রথমে একটা মোটামুটি লিভিং রুমের মতো রুম লক্ষনীয়। সেই লিভিং রুমের একপাশের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে পার্থর বেডরুমে যাওয়া যায়। এরকম ধরনের রুম সেটাপের পিছনে একটা কারণও আছে বটে। পার্থর সাথে কেউ দেখা করতে এলে সে বাহিরের সেই লিভিং রুম পর্যন্তই আসার অনুমতি পায়। নিজের বেডরুমে বাহিরের কারো প্রবেশ তার কখনোই পছন্দের না। তার দলীয় কেউ আসলেও তার সাথে নিজের প্রয়োজনীয় আলাপটুকু পার্থ ওই লিভিং এরিয়াটুকুতেই বসে সেড়ে নেয়।

রাতের মধ্য প্রহর। দরজার ঠকঠক শব্দে পার্থ চোখ মুখ কুচকে উঠে বসে। সবসময় ফর্মাল গেটাপে থাকা সে আপাতত একটা টি-শার্ট এবং ট্রাউজার পড়ে এলোমেলো চুল নিয়ে দরজা খুলতে উদ্যত হয়। নিজের বেডরুম পেরিয়ে পার্সোনাল লিভিং রুমের দরজাটা ভিতর থেকে খুলে দিতেই দরজার সামনে পৃথার হাসি হাসি মুখটা দেখে সে বোকা বনে যায়। রাত ২ টা ২৪ বাজে তার ছোট বোনের তার কাছে কি কাজ তা সে বুঝতে পারছে না। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“ কি হয়েছে? এতো রাতে করে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছিস? “

পৃথা কোনো জবাব না দিয়ে বড় ভাইয়ের হাত ধরে নিজের সাথে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে উঠে,

“ তুই এখন আমার সাথে যাবি। “

“ কিন্তু কোথায়? “

“ গেলেই দেখতে পারবি। “

অগ্যতা পার্থ আর কোনো প্রশ্ন না করে বোনের সাথে যেতে থাকে। দুজনে একসাথে রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় শোভন অলরেডি কিচেন কেবিনেটের একপাশে দাঁড়িয়ে ক্যাপসিকাম কাটতে ব্যস্ত। পার্থ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

“ কি করছিস শোভন? “

পৃথা নিজেই জবাব দিয়ে বলে উঠে,

“ ছোট দা ক্যাপসিকাম কাটছে। আর তুমি এখন চিকেন কাটতে লেগে পড়ো। “

শোভন অসহায় মুখ করে পার্থর দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে তাকেও এইমাত্র ঘুম থেকে টেনে তুলে আনা হয়েছে। পার্থ হাই তুলতে তুলতে প্রশ্ন করে,

“ কিন্তু ক্যাপসিকাম আর চিকেন দিয়ে তুই কি করবি? “

“ সারপ্রাইজ। আমার তরফ থেকে মিড নাইট পিজ্জা পার্টি ফর ইউ গাইস। আমাকে থ্যাংকস বলার কোনো প্রয়োজন নেই। “

পার্থ আর শোভন দুজনেই চোখমুখ কুচকে পৃথার দিকে তাকিয়ে আছে। পার্থ বলে,

“ তোর পিজ্জা খেতে মন চাইলে অর্ডার দিয়ে খা। আমাদের ডেকে তুলছিস কেন? “

পৃথা নিজের মাথা চাপড়ে বলে,

“ ওহ গড বড় দা! আমার বাসায় যখন আগে থেকেই দুজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস শেফ হাজির আছে, তখন আমি শুধু শুধু মাঝরাতে অন্য মানুষদের কেন বিরক্ত করবো? “

শোভন বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে উঠে,

“ ভেজিটেবল আর চিকেন কাটবো আমরা। পিজ্জার টপিংস সাজাবো আমরা। পিজ্জা বেকও করবো আমরা। আর পার্টি তোর তরফ থেকে? এটা কেমন হিসাব? “

“ সেসব তোমরা বুঝবে না। আপাতত তাড়াতাড়ি নিজেদের কাজ করো তোমরা। “

যতই বিরক্ত হোক না কেন, আদরের বোনের আবদার ফেলার সাধ্যি নেই দুই ভাইয়ের। তাই দু’জনই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে চপিং বোর্ডে পিজ্জার টপিংস কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পৃথা হাসি হাসি মুখে একপাশে কেবিনেটের উপর বসে পা ঝুলাতে ব্যস্ত। হাতে থাকা নিজের সেলফোনে একটা হিন্দি গানও প্লে করতে ভুলে না সে। শোভন আচমকা প্রশ্ন করে,

“ বাই দ্যা ওয়ে। হঠাৎ করে তোর এই মিড নাইট পার্টির পিছনে কারণ কি? “

“ কারণ তো তিনটা আছে। প্রথমটা হলো যে আমার এতো ভালো একটা রেজাল্ট এসেছে। দ্বিতীয়টা হলো তুই খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছিস। আর তৃতীয়টা হলো বড় দা ও খুব শীঘ্রই ইলেকশনটা জিতে যাবে। “

পার্থ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

“ তুই কিভাবে শিওর যে আমি ইলেকশন জিতবো? “

পৃথা গুরু মাতার মতো মুখের ভাবমূর্তি করে বলে উঠে,

“ আই ক্যান ফিল ইট বড় দ্যা। আমার ইনার ফিলিংস বলছে খুব শীঘ্রই আমাদের লাইফে চেঞ্জেস আসতে চলেছে। “

পৃথা কথা বলতে বলতে শোভন আর পার্থ একটা পিজ্জা সাজিয়ে সেটা ওভেনেও দিয়ে দেয়। অত:পর পার্থ খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

“ কিন্তু তোর পার্টি খুব বোরিং। মোটেও জমে নি। “

পৃথা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

“ আমার কি এখন পার্টি জমানোর জন্য সাউন্ড বক্সে গান প্লে করা উচিত? “

পার্থ শোভনের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে। শোভনও মৃদু হেসে শুধায়,

“ উহু। আমাদের কাছে তার থেকেও বেটার অপশন আছে। “

কথাটুকু বলেই শোভন হাত ভর্তি এক মুঠো আটার গুড়ো পৃথার দিকে ছুড়ে মারে। আকস্মিক ঘটনায় পৃথা হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রয়। তার চুল মুখ সব আটায় একদম সাদা হয়ে গিয়েছে। তাকে দেখে শোভন হাসতে হাসতে বলে উঠে,

“ পারফেক্ট। একদম তেঁতুল গাছের ভূতনি লাগছে তোকে। “

শোভনের হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আচমকা তার দিকেও একমুঠো আটার গুড়ো নিক্ষেপ করা হয়। পার্থ এবার হাসতে হাসতে বলে উঠে,

“ এখন মানাচ্ছে তোদের। একদম ভূত আর ভূতনি। “

শোভন আর পৃথা দুজনেই একে অপরের দিকে তাকায়। পরমুহুর্তেই দুজনে নিজেদের দুহাত ভর্তি আটা নিয়ে পার্থর দিকে তেড়ে আসে। আত্মরক্ষার জন্য পার্থ সম্পূর্ণ রান্নাঘর জুড়ে দৌড়ানো শুরু করে। কিন্তু বেশিক্ষণ পালাতে পারে না। পিছন থেকে শোভন আর সামনে থেকে পৃথা এসে ঘিরে ধরে তাকে। দুজনই একসাথে তাকে জাপ্টে ধরে তার সারা মুখে আটা মেখে দেয়। তিন ভাই বোনের এই অমূল্য মুহুর্ত চলে বেশ অনেকক্ষণ। তিনজনেই একসাথে জগতের সকল চিন্তা ভুলে বসে।

__________

ঘড়িতে কয়টা বাজে সেদিকে খেয়াল নেই তূর্যর। সে কফির মগ হাতে ঘরময় পায়চারি করতে ব্যস্ত। মনে মনে ভাবছে এক অদ্ভুত জিনিস। সেই মিস এ বি সি তথা পৃথা নামক মেয়েটা আজ রাতে আর তাকে কল করলো না কেন? গত দু’দিনে কি বেশ লজ্জা দিয়ে ফেলেছে সে? তূর্যর কি উচিত ছিলো বোকা, সহজ সরল মেয়েটার সামনে নিজেও বোকা সাজা? উহু। তাহলে তো মোটেও ঠিক হতো না। সেই অষ্টাদশীর জানা উচিত যে সে যাকে এপ্রোচ করছে সেই মানুষটা তার ভাবনার মতো এতোটা বোকা নয়। সেদিন কলেজে মেয়েটার তার দিকে চঞ্চল দৃষ্টি তূর্য লক্ষ্য করেছিলো। তার কেন জানি মনে হচ্ছিলো মেয়েটা তার প্রতি আগ্রহী। তার ধারণা ঠিক হয়। আগ্রহী মেয়েটা পরপর দুদিন তাকে কল করে নিজের আগ্রহ প্রকাশ সরূপ। প্রথম দিন কল করে যখন সেই অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে পৃথা তখন তূর্য নীরবে বেশ ক্ষাণিকক্ষণ হেসেও ছিলো।

এসব ভাবতে ভাবতেই তূর্য নিজের ফোন হাতে নেয়। তার দুটো সিম আছে ফোনে। একটা জবের জন্য ইউজ করে। আরেকটা পার্সোনাল ইউজের জন্য রয়েছে। পৃথা সেদিন যেই নাম্বারে কল দিয়েছিলো সেটা তার অফিশিয়াল নাম্বার ছিলো। তাই আজ সে নিজের পার্সোনাল নাম্বার থেকে কল করে পৃথাকে। কিছুক্ষণ কল বাজার পরই কল রিসিভ হয়। অপরপাশ থেকে একটি চঞ্চলতায় পূর্ণ স্বর বলে উঠে,

“ যদি অন্য কারো উদ্দেশ্যে কলটা হয়ে থাকে তাহলে সরি রং নাম্বার। আর যদি আমাকে ডিস্টার্ব করার উদ্দেশ্যে কলটা হয়ে থাকে তাহলে আমার এক ভাই পুলিশে আরেক ভাই পলিটিক্সে জড়িত। একদম মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে। “

“ যদি বলি কলটা আপনার তথাকথিত স্বামীর তরফ থেকে আপনার খোঁজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে? “

পৃথার চঞ্চল কণ্ঠস্বর মুহুর্তেই শীতল হয়ে গেলো। সে কম্পিত সুরে প্রশ্ন করে,

“ কে? “

“ কে আর? আপনার ফোনালাপের স্বামী। “

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে