যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো পর্ব-২৯+৩০

0
702

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২৯.

সকাল ১০ টা বাজে শুরু হওয়া সমাবেশ দুপুর পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলো। সমাবেশে উপস্থিত ছিলো পার্থর পার্টির সকল উচ্চপদস্থ নেতারাও। আচমকা সেই চলতি সমাবেশ স্তব্ধ হয়ে যায় দূর হতে নিক্ষিপ্ত এক টিয়ার সেলের ধোঁয়া দেখে। মুহুর্তেই পরিবেশ বিক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে। সেই সাথে টিয়ার সেল এবং বোমা হামলার গতি বেড়েই চলে। এরকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সমাবেশ বানচাল হয়। অনেকে আহত হয় তো অনেকে নিহত। আবার কেউ কেউ জীবন নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয় তো কেউ কেউ সেই হামলার মধ্যেই ঝাপিয়ে পড়ে আক্রমণকারীদের খুঁজতে।

পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কিছু সময়ের ব্যবধানেই পুলিশ এসে উপস্থিত হয় সেখানে। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষয়ক্ষতি যতদূর হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। দূর্বৃত্তরা ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে। তবে পরিস্থিতি তখনো ভীতিকর। রাস্তা জুড়ে বিভিন্ন আহত মানুষের মেলা। বিভিন্ন যানবাহন এবং দোকান আগুনে জ্বলজ্বল করছে।

সেই পরিস্থিতির মাঝেই সেখানে এসে উপস্থিত হয় তরী। আসিফের মুখ থেকে খবরটা পেতেই সে দৌড়ে কোনোমতে গাড়িতে করে ড্রাইভ করে এসে এখানে পৌঁছেছে। পায়ে এখনো হসপিটালের স্লিপারস তার। আর সামনে গাড়ি নেওয়ার পরিস্থিতি নেই। তাই সেখানেই নেমে পড়ে সে। ভীত চোখে চারিদিক দেখছে সে। ছোট ছোট কদম ফেলে বিশাল রাস্তা ধরে সামনে এগুতে এগুতে আবার পার্থর নাম্বার ডায়াল করে। নাম্বারটা এখনো আনরিচেবল আসছে। এতো মানুষের ভীড়ে এখন পার্থকে কিভাবে খুঁজে বের করবে সে?

আরেকটু সামনে যেতেই তরী দেখে রাস্তার একপাশে আহত অবস্থায় পড়ে আছে একজন লোক। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এখনো কোনো এম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় নি। তরী দ্রুত লোকটার কাছে এগিয়ে গিয়ে উনার ফেটে যাওয়া মাথার জখম দেখতে শুরু করে। আশপাশ হতে আরেকটা ছেলেকে ডেকে উনার মাথা চেপে ধরে সামনের দিকে যেতে বলে। আর নিজের ফোন থেকে হসপিটালে কল করে কিছু এম্বুলেন্স ইমারজেন্সি এখানে পাঠাতে বলে।

ফোনটা রাখতেই কাছ থেকে শোভনের গলার স্বর ভেসে আসে,

“ ভাবী? “

তরী চকিতে নিজের বামে ফিরে তাকায়। তরীকে এখানে দেখে যেন শোভন বিস্মিত। সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“ আপনি এখানে কেন? “

“ তোমার দাদা? পার্থ কোথায়? “

তরীর উৎকণ্ঠা দেখে শোভন বুঝে যে সে-ও তার মতো এখানকার পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেই ছুটে এসেছে। শোভন আশাহত গলায় বলে,

“ দাদার দলের একজনের সাথে দেখা হলো একটু আগে। দাদা নাকি যেদিক থেকে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিলো সেদিকে ছুটে গিয়েছিলো। এরপর আর কেউ দাদাকে দেখে নি। “

তরীর শরীর ভয়ে যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে। তবুও সে দৃঢ় মনবল রেখে বলে,

“ কিছু হয় নি। হি ইজ অলরাইট। “

শোভন চিন্তিত গলায় বলে,

“ ভাবী আমার সাথে চলুন। আপনার এখানে থাকা উচিত হবে না। দাদা জানতে পারলে রাগ হবে। “

তরী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে বাদে আর কোনো নারী এখানে উপস্থিত নেই। পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সে আরেকবার পার্থর নাম্বারের কল করে। এবার কল বেজে গিয়েছে। কিন্তু রিসিভ হয় না। কিছুদূর বেজেই কেটে যায়। কিন্তু সাথে সাথেই তরীর নাম্বারে একটা ম্যাসেজ আসে।

“ ঠিক আছি জান৷ “

ম্যাসেজটুকু দেখেই তরী একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। শোভনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ পার্থ ম্যাসেজ করেছেন। ঠিক আছেন উনি। “

“ যাক আলহামদুলিল্লাহ। “

তরী শোভনের সাথে নিজের গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠে,

“ এসব যারা করেছে ওদের ধরে জেলে দেওয়া হবে না? “

“ এসব কারা করেছে সেটা তো একটা ওপেন সিক্রেট ভাবী। কিন্তু আমাদের উপর উপরমহল থেকেও প্রেশার থাকে। চাইলেই সবাইকে এরেস্ট করা যায় না। “

“ তুমি এসবের তোয়াক্কা করো শোভন? “

প্রশ্নটা সরাসরি শোভনের চোখের দিকে তাকিয়ে করে তরী। শোভন হেসে জবাব দেয়,

“ আমি এখানে পুলিশ অফিসার হিসেবে নয় ভাই হিসেবে এসেছি ভাবী। তাই এই কেসের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যেসব কেস আমি নিজে সামলাই সেগুলোর ক্ষেত্রে কেবল সত্যের তোয়াক্কা করি আমি। “

শোভনের উত্তর শুনে তরী মৃদু হেসে তার হাতের বাহুতে হাত রেখে বলে উঠে,

“ সবসময় এমন থেকো। ইনশাআল্লাহ একদিন তুমি তোমার সততার পুরুষ্কার পাবে। সেদিন সবথেকে বেশি খুশি আব্বাই হবে দেখে নিও। “

তরীর কথা শুনে শোভন চুপচাপ হাসে। আসলেই কি তার আব্বা কখনো তার প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারবে? আব্বা তো তার এই চাকরিটা কখনোই পছন্দ করে না।

__________

একটা আন্ডার কন্সট্রাকশনের বহুতল ভবনে দাঁড়িয়ে আছে পার্থ। তার সাথে রয়েছে কেবল দু’জন মানুষ। একজন হলো আসিফ এবং অন্যজন এই মুহুর্তে তাদের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়ানো। পার্থ আসিফের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে উঠে,

“ এতো বোকা কেন তুই আফিস? তরী ফোন করলেই তোর ওকে সব বলতে হবে? “

“ সরি ভাই। তখন আসলে মাথা কাম করতেসিলো না। একদিকে এমন পরিস্থিতি আরেকদিকে ভাবী ফোন দিসে। তাই মুখ ফসকায় বইলা ফেলসি। “

“ আর কখনো এসব সিচুয়েশন সম্পর্কে তরী কিংবা আম্মা আব্বাকে জানাবি না। রাজনীতি যেহেতু করছি তাই এরকম বহু পরিস্থিতিতে পরতেই হবে। কিন্তু তার জন্য পরিবারকে টেনশনে রাখার মানে হয় না। ভাগ্যিস জহিরকে তরীকে ফোলো করার জন্য রেখেছি। নাহয় তো জানতেও পারতাম না যে তরী আমাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়বে। “

“ থাক ভাই আর চিন্তা কইরেন না। বেডি মাইনষে জামাইর ব্যাপারে একটু আবেগী হয়। কিন্তু জহিরে তো কইলোই যে ভাবী শোভন ভাইর লগে হসপিটাল গেসে গা। তাইলে আর চিন্তার কিছু নাই। “

“ তুই যা এখন। আমার এর সাথে জরুরি কথা আছে। “

আসিফ সরু চোখে তাদের থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষকে দেখে বলে উঠে,

“ আপনি শিওর এরে বিশ্বাস করা উচিত হইবো ভাই? “

পার্থও একই দিকে দৃষ্টি রেখে বলে উঠে,

“ কথাটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয়। আমার দিকে আগুন ছুড়ে মারা হয়েছিলো। ও যদি সেই মুহুর্তে আমাকে টেনে না সড়াতো তাহলে এতক্ষণে আমার জানাজা পড়তি তোরা। “

আসিফ আঁতকে উঠে বলে,

“ আল্লাহ মাফ করুক ভাই। “

পার্থ আর কথা না বাড়িয়ে বলে,

“ এখন যা। “

আসিফ চলে যেতেই পার্থ দু কদম এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারের উপর বসে প্রশ্ন করে,

“ এখন বলো আমাকে বাঁচানোর পিছনে তোমার কি স্বার্থ রয়েছে? “

__________

ভর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পার্থ। সাদিকা বেগম এবং আফজাল সাহেব তখন লিভিং রুমেই বসে ছিলেন। টেলিভিশন নিউজের কল্যাণে ইতিমধ্যে আজকের সমাবেশ বানচালের পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা অবগত। তরী হতে এটাও জেনেছে যে পার্থ ঠিক আছে। তবুও সন্তানের জন্য পিতামাতার মনে যেই ভয় থাকে একই ভয় তাদের ভিতরেও কাজ করছিলো। কিন্তু ছেলেকে স্বচক্ষে সুস্থ দেখে কিছুটা শান্ত হয় তারা। পার্থ সাদিকা বেগমকে প্রশ্ন করে,

“ তরী বাসায় ফিরেছে আম্মা? “

“ হ্যাঁ। কিছুক্ষণ আগেই তো ফিরলো। “

পার্থ অবাক হয়। সাধারণত তরী আগে বাসায় ফিরলে সবসময় পার্থ বাসায় ফিরে তাকে নিচতলায়ই আব্বা আম্মার সাথে দেখতে পায়। তাহলে আজ তরী নামলো না কেন? সে আর অপেক্ষা না করে উপরে চলে আসে। বেডরুমে প্রবেশ করতেই তরী দৌড়ে এসে তার বুকে হামলে পড়ে। এতক্ষণ রুমে বসে সে পার্থর উপরে আসার অপেক্ষায়ই ছিলো। আচমকা তরী জড়িয়ে ধরতেই পার্থর বুক শীতল হয়ে আসে। কিন্তু পিঠে অনুভব করে বিষের ন্যায় ব্যাথা। না চাইতেও মুখ দিয়ে চাপা আর্তনাদ করে উঠে সে।

সাথে সাথে তরী ছিটকে তার থেকে দূরে সড়ে যায়। এতক্ষণের আকুল চোখে এখন চিন্তার রাজ্য এসে ভর করেছে তার। সে উৎকণ্ঠিত গলায় প্রশ্ন করে,

“ কি হয়েছে আপনার? “

পার্থ জবাব দেয় না। দাঁতে দাঁত খিচে চোখের পলকে ব্যথাটুকু গিলে নেয় সে। হাসিমুখে বলে,

“ কিছুনা। “

তরী পার্থর কথাটুকু বিশ্বাস করে না। তাকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলে,

“ পাঞ্জাবি খুলুন। “

পার্থ ঠাট্টার স্বরে বলে,

“ নির্লজ্জের হাওয়া লেগেছে বুঝি আপনার? “

তরী চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে,

“ আমি আপনার সাথে মশকরা করছি না। “

স্ত্রীর চোখ পাকানো দেখে পার্থ হার মেনে নেয়। সাবধানে নিজের পাঞ্জাবিটুকু খুলতেই তরী ব্যস্ত নয়নে তার পিঠের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তরী আঁতকে উঠে,

“ আল্লাহ! কিভাবে হয়েছে এসব? “

পার্থর শুভ্র পিঠের একপাশে কালসিটে দাগ হয়ে আছে। অপরপাশে বিশাল এক ব্যান্ডেজ। সেই ব্যান্ডেজের কাপড় ভেদ করে গাঢ় খয়েরী রক্তও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এতটুকু দৃশ্য দেখেই তরীর মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে যায়। সকালেই তো মানুষটা সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বেরিয়েছিলো। দুপুরে সেই ঘটনার পর তরীকে জানিয়েছে যে উনি ঠিক আছে। তবে সন্ধ্যা বেলায় এ কি অবস্থা দেখছে সে?

তরীর আতংকিত দৃষ্টি দেখে পার্থ তাড়াতাড়ি নিজের পিঠ আড়াল করে ফেলে। তরীকে টেনে নিজের সামনে বসিয়ে দিয়ে বলে,

“ ওদিকে আপনার তাকাতে হবে না। আমার চোখের দিকে তাকান। “

তরী পার্থর চোখের দিকে তাকাতেই তার অশ্রুসিক্ত চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। আহত গলায় বলে,

“ মিথ্যা বলেছেন আপনি। “

“ মিথ্যা বলি নি তরী। ঠিক না থাকলে কি এখন আপনার সামনে থাকতাম আমি? “

তরী পার্থর কথার ধরনে বিরক্ত হয়। রাগ মিশিয়ে বলে,

“ ঠিক থাকলে পিঠে কি হয়েছে আপনার? “

পার্থর মনে পড়ে যায় দুপুরের দৃশ্য। মানুষের দৌড়াদৌড়ির মাঝে আচমকা একটা ইট এসে তার পিঠের উপর পড়ে। সেইটার আঘাত সামলে উঠতে উঠতে আরেকটা ইটের কোণা এসে পিঠে লেগে মুহুর্তেই শুভ্র পাঞ্জাবির পিঠের কাছটা রক্তে ভিজে যায়। এজন্যই পিঠে ব্যান্ডেজ করানোর পর সে আসিফকে দিয়ে একটা নতুন পাঞ্জাবি কিনে আনিয়ে পড়ে বাসায় ফিরে। কিন্তু সেইসব বিবরণ আপাতত তরীকে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। মেয়েটা দুপুর থেকে বেশ ভীতিকর একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতি তার পরিবারের জন্য পুরনো হলেও তরীর জন্য নতুন। পার্থ তাই বলে,

“ তেমন কিছু না। ব্যান্ডেজ করানো হয়েছে। সেড়ে যাবে। “

তরী এবার অধৈর্য্য গলায় বলে,

“ আপনার এই কিছু না শুনে আমার প্রচুর রাগ উঠছে পার্থ। সারাদিন আমি কি অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি আপনার ধারণা আছে কোনো? থাকলে আপনি আমায় অন্তত একটা কল দিতেন। সারাদিন আপনাকে নিজ চোখে দেখার জন্য আকুল হয়ে বসেছিলাম। হসপিটাল থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসেছি শুধু আপনাকে দেখার জন্য। আর আপনি আমাকে কিছু খুলে বলছেন না। “

পার্থ এই মুহুর্তে তরীকে টেনে বুকে আগলে নিয়ে বলে,

“ আপনি কি অবস্থায় ছিলেন সেই ধারণা আছে বলেই এখন এই ব্যাপারে কিছু খুলে বলছি না। আর তাছাড়া খুব মাথা ব্যথা করছে আমার। সারাদিন প্রচুর ধকল গিয়েছে। “

তরীর সাথে সাথে ধ্যান হয়। পার্থকে এই অবস্থায় দেখে সে এতক্ষণ অস্থির আচরণ করছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলে,

“ আ’ম সরি। আপনি ভুলেও কোথাও পিঠ ঠেকাবেন না। উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। আমি ফার্স্ট এইড করে দিচ্ছি ঠিক করে। “

পার্থ নীরবে হেসে বলে,

“ ওকে ডক্টর। “

ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই তরী ফার্স্ট এইড বক্স রেখে বলে উঠে,

“ আপনি নড়বেন না, উঠবেনও না। আমি গিয়ে খাবার নিয়ে আসছি। এসে যাতে দেখি এখানেই আছেন। “

পার্থ বিছানায় একটা বালিশ জড়িয়ে উবুড় হয়ে ছিলো। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তরীর দিকে তাকায়। তরী দরজার কাছে যেয়ে আচমকা থেমে পার্থর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

“ একটা জিনিস রিয়েলাইজ করলাম আজকে। “

“ কি? “

“ ভালোবেসে ফেলেছি। “

কথাটুকু বলেই তরী সাথে সাথে বেডরুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পার্থ উৎফুল্ল গলায় পিছন থেকে প্রশ্ন করে,

“ কাকে? “

তরী তখনো সিটিং এরিয়া পেরিয়ে বেরোয়নি। পার্থর এমন বোকার ন্যায় প্রশ্ন শুনে সে সেখান থেকেই জবাব দেয়,

“ কলা গাছের মূলাকে। “

__________

রাত তখন দুটো বাজে। পার্থর উবুড় হয়ে শুয়ে থেকে ঘুম আসছিলো না। তরী এতক্ষণ জেগে থেকে তার উপর নজর রাখছিলো। কিছুক্ষণ আগেই ক্লান্তিতে চোখ বুজতেই ঘুমে তলিয়ে যায় সে। পার্থ শোয়া থেকে নীরবে উঠে বসে। বেশ তেষ্টা পাচ্ছে তার। বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল নিয়ে সামান্য পানি খায় সে। অত:পর নীরবেই নিজের রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে সে।

রুম থেকে বের হতেই সে দেখে শোভনের রুমের দরজা খোলা। রুমের ভেতর আলোও জ্বলছে। পার্থর ভ্রু কুচকে আসে। শোভন কি এখনো ঘুমায় নি? কৌতূহল বসত একবার চেক করার জন্য এগিয়ে যায় পার্থ। কিন্তু রুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই সে দেখে রুমে কেউ নেই। এসময় শোভনকে রুম ব্যতীত আর কোথায় পাওয়া যেতে পারে তা ভালো করেই জানে পার্থ। তাই দাঁড়িয়ে না থেকে ছাদের দিকে পা বাড়ায় সে।

ছাদের এককোণে ইট সিমেন্টের তৈরী একটা বসার জায়গায় বসে একটা ফাইল দেখছে শোভন। ছাদের এইপাশটা বেশ গাছপালা এবং রঙ বেরঙের লাইট দ্বারা সাজানো। ছাদের এইটুকু অংশ পৃথার সাজানো।

আচমকা পার্থ ভরাট কণ্ঠে বলে উঠে,

“ এখানে একা বসে আছিস কেনো? “

শোভন মাথা তুলে একবার ভাইকে দেখে নিয়ে আবার ফাইলের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,

“ একা কোথায়? এতক্ষণ মধু আমাকে কোম্পানি দিচ্ছিলো আর এখন এই ফাইল আমাকে কোম্পানি দিচ্ছে। ‘“

পার্থ নিঃশব্দে ভাইয়ের পাশে বসে। পার্থকে বসতে দেখে শোভন ফাইলটা বন্ধ করে পাশে রেখে বলে,

“ কিছু বলবি? “

“ কিছু নিয়ে স্ট্রেসড তুই? “

শোভন লুকায় না। সোজাসাপ্টা বলে,

“ একটা কেস নিয়ে সামান্য স্ট্রেসড। এখনো সলভ করতে পারছি না। “

পার্থ বিষয়টা আর বেশি ঘাটায় না। কেবল শোভনের কাধে হাত রেখে আশ্বস্তের সুরে বলে উঠে,

“ তুই পারবি আমি জানি। “

শোভন বলে,

“ ভাবী অনেক ভয় পেয়েছিলো আজকে। এখনো এই রাজনীতি ছাড়বি না তুই? “

পার্থ হাসে। হাসতে হাসতেই বলে,

“ তুই সবসময় বলিস না আব্বা তোর চাকরি অপছন্দ করে? বিষয়টা আসলে সেটা নয়। আব্বা তোকে নিয়ে চিন্তা করে। সেই চিন্তা থেকেই উনি তোকে অনেক কথা বলে। কিন্তু তুই কথাগুলো অন্যভাবে বুঝিস। “

কথাটুকু বলেই পার্থ এবার সিরিয়াস মুখে বলে,

“ কথা সেটা না। কথা হলো আমাদের চিন্তার জন্য কি তুই তোর চাকরি কখনো ছাড়তে পারবি? জানি পারবি না। একইভাবে রাজনীতিটাও আমি কখনো ছাড়তে পারবো না। রিস্ক সব কিছুতেই আছে। ভালো খারাপ সব কিছুতেই আছে। তাই বলে তো আমরা সব ছেড়েছুড়ে ঘরে বসে থাকতে পারবো না। তাই না? “

শোভন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একমনে কথাগুলো শুনে। সে কিছু বলবে তার আগেই একটা নারীকণ্ঠ ভেসে আসে,

“ সরি টু ডিস্টার্ব ইউ গাইস বাট আমি কি আসতে পারি? “

তরীকে দেখতে পেয়েই শোভন উঠে গিয়ে তার হাত থেকে কফির ট্রে নিয়ে বলে উঠে,

“ আরে ভাবী। আপনি দাঁড়িয়ে কেন? আসুন বসুন। “

তরী এসে বসতে বসতে বলে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেতেই দেখি পার্থ রুমে নেই। উনাকে খুঁজতে বেরিয়ে দেখি তুমিও রুমে নেই। ছাদের দরজা খোলা দেখে দৌড়ে গিয়ে তিনজনের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসি।

পার্থ হেসে বলে উঠে,

“ আর কয়েকদিন পর থেকে চারজনের জন্য কফি বানিয়ে আনতে হবে আপনাকে। “

তরী হেসে শোভনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ তা শোভন? মাঝরাতে ছাদে বসে মধুমিতার সাথে জমিয়ে প্রেম করছিলে বুঝি? “

“ ইশ ভাবী। ইউ মিসড ইট। আপনিও যদি বিয়ের আগে দাদার প্রেমে পড়ে যেতেন তাহলে প্রি ম্যারিড লাইফের প্রেমের এক্সপেরিয়েন্স হয়ে যেতো। “

তরী পার্থর দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বলে,

“ পোস্ট ম্যারিড লাইফের প্রেমও মন্দ নয়। “

চলবে…

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৩০.

ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা। তূর্য ল্যাপটপের সামনে বসে আছে। পৃথা তার পাশে বসে একবার তূর্যর চেহারা দেখছে তো আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে। তার তুলনায় তূর্যের চেহারায় চিন্তার ছাপ বেশি। পৃথা বিরক্তি মাখা গলায় বলে,

“ এতো টেনশন নিয়ে লাভ নেই। মেডিক্যালে আমি জীবনেও টিকবো না জানি। পরীক্ষা দিয়েছে লাখ লাখ স্টুডেন্ট। সবাই তুখোড় মেধাবী। তাদের মাঝে সিলেক্ট হবে মাত্র কয়েক হাজার। সুতরাং আমার টিকার চান্স জিরো। “

তূর্য বিরক্তি মাখা গলায় বলে,

“ একদম ব্যাডবাজ দিবে না পৃথা। আর তুমি এতো চিলড হয়ে বসে আছো কেন? যাও নামাজে বসে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করো। “

পৃথা ভ্রু কুচকে বলে,

“ এইযে মশাই! অতি চিন্তায় আক্কেল কি গোয়াল ঘরে ফেলে এসেছেন? এখন ফজরের ওয়াক্তও না, যোহরের ওয়াক্তও না। তাহলে আমি কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়বো? “

পৃথার কথা শুনে তূর্য সামান্য চোখ পাকিয়ে তাকায়। পৃথা তার তোয়াক্কা না করে তূর্যের কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলে উঠে,

“ আর তাছাড়া আল্লাহ অলরেডি আমাকে এতো কিছু দিয়ে রেখেছে যে আমার আর চাওয়ার কিছু নেই। “

তূর্য প্রশ্ন করে,

“ কি কি পেয়েছো শুনি? “

পৃথা একগাল হেসে জবাব দেয়,

“ এতো হ্যান্ডসাম হাজবেন্ড, কেয়ারিং পাপা, হ্যাপি ফ্যামিলি, আবার একই বছরে দুইটা ভাবীও পেয়ে গেলাম। আমার তো মনে হয় এটা আমার লাকি ইয়ার। ১৮ তেই সব পেয়ে গিয়েছি আমি। “

তূর্য পৃথার কথা শুনতে মশগুল তখনই তার ফোন বেজে উঠে। সে ফোন হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে পৃথাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ ল্যাপটপের দিকে নজর রাখো। এনি মোমেন্ট রেজাল্ট এসে পড়বে। “

কথাটুকু বলে সে ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পৃথা বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে অলস নয়নে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকে। বার কয়েক নিজের রোল নম্বর বসিয়ে ট্রাইও করতে থাকে। এরকম করতে করতে আচমকা রেজাল্টের পেজ তার সামনে ওপেন হয়ে যায়।

পৃথা ভাবলেশহীন ভাবে নিজের নাম দেখে চোখ বুলিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই একলাফে উঠে বসে। চোখ কচলে নিয়ে আবার স্ক্রিনের দিকে তাকায় সে। সাথে সাথে সে চিৎকার করে তূর্যর নাম ডাকে। এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিচ থেকে তূর্যের কথা বলার শব্দ ভেসে আসছে।

পৃথার চিৎকার শুনে তূর্যও কথা বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিলো। কিন্তু পৃথাকে দৌঁড়ে নিচে নামতে দেখে সে সেখানেই থেমে যায়। মনে মনে বিরক্ত হয়। এভাবে লাফিয়ে নামার মানে কি? পড়ে হাড্ডি ভাঙতে চায় নাকি এই মেয়ে?

সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমেই পৃথা একলাফে তূর্যের গলা জড়িয়ে ধরে। তূর্য একহাতে কানে ফোন ধরে রেখে আরেক হাতে পৃথার কোমর জড়িয়ে ধরে। এখন আর পৃথার পা জোড়া মেঝে স্পর্শ করছে না। সে তূর্যের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

‘’ আই পাসড তূর্য। আই ডিড ইট। “

তূর্য সাথে সাথেই প্রশান্তির সাথে চোখ বুজে ফেলে। তাড়াতাড়ি কোনো এক বাহানা দেখিয়ে ফোনটা কেটে পকেটে রেখে এবার দু’হাতে পৃথাকে আগলে ধরে সে। কপালে শান্ত ভঙ্গিতে একটা চুমু খেয়ে কোমল গলায় বলে,

“ জানতাম তুমি পারবে। “

পৃথা তূর্যকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

“ আমি আম্মা, আব্বা আর পাপাকে জানিয়ে আসি। উনারা নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে। “

কথাটা বলেই পৃথা যেভাবে দৌড়ে নিচে নেমেছিলো একইভাবে দৌড়ে উপরে চলে যায়। তূর্য তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসে। অত:পর নিজের ফোন বের করে জার্নালিস্ট হারুনুর খলিদকে কল দিয়ে বলে,

“ সেদিন আপনার প্রক্সিতে আমাকে পাঠানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। নেক্সট যেদিন দেখা হচ্ছে আপনি আমার থেকে ট্রিট পাবেন। লিখে রাখেন। “

__________

দুপুর বেলায়ই পাঁচ কেজি মিষ্টি নিয়ে স্ত্রী সমেত শশুড় বাড়ি হাজির হয় তূর্য। বিয়ের পর কেবল তরীর বিয়ের উছিলায়ই কয়েকবার এই বাসায় আসা হয়েছে তার। এরপর একদিনের জন্যও তার সময় কিংবা সুযোগ হয় নি আসার। কিন্তু আজ না আসলে তা বেমানান দেখাতো।

ফোন কলের মাধ্যমে সকালেই এই বাড়ির সকলে পৃথার রেজাল্ট সম্পর্কে জেনে যায়। আফজাল সাহেব সাথে সাথে বেরিয়ে যায় বাজারের উদ্দেশ্যে। সাদিকা বেগমও একমাত্র মেয়ে এবং মেয়ে জামাইর জন্য নিজ হাতে রান্না করে হরেক রকমের খাবার।

পৃথা ঘরে প্রবেশ করতেই সবার আগে শোভনকে সামনে পায়। এক দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরতেই শোভন থাট্টার স্বরে বলে উঠে,

“ তূর্য ভাই। এই পড়া চোরকে কি গুলিয়ে খাইয়েছেন আপনি? আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা আসলেই আমার বোন তো? “

তূর্য ঘরে প্রবেশ করতে করতে হেসে বলে উঠে,

“ তোমারই বোন। বিশ্বাস না হলে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে দেখতে পারো। “

পৃথা মুখ ফুলিয়ে বলে,

“ একদম মজা নিবি না ছোট দা। “

সাদিকা বেগম ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আগে মেয়ে জামাইর কাছে যায়। শাশুড়িকে দেখেই তূর্য সালাম দিয়ে বলে,

“ ভালো আছেন আম্মা? “

“ আলহামদুলিল্লাহ বাবা। বেঁচে থাকো। “

আফজাল সাহেবও উপর থেকে নেমে আগে মেয়ে জামাইর কাছে যায়। কুশল বিনিময় করেই তারা একসাথে লিভিং রুমে গিয়ে বসে। মুহুর্তেই বাসায় উৎসব উৎসব রব লেগে যায়। সকলেই পৃথাকে রেখে তূর্যকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পৃথা দূর হতে এই দৃশ্য দেখে কোমরে হাত রেখে বলে,

“ রেজাল্ট আমার দিলো নাকি তূর্যর? সবাই আমাকে রেখে উনাকে নিয়ে মাতামাতি করছে কেন? “

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শোভন তার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

“ রেজাল্ট তোর দিয়েছে। কিন্তু ক্রেডিট তূর্য ভাইয়ের। আর তাছাড়াও উনি এই বাড়ির একমাত্র জামাই। উনার খাতিরযত্ন হবে না তাহলে কি তোর মতো ভুতনির খাতিরযত্ন হবে? “

পৃথা ঠোঁট উল্টে চেচিয়ে বলে,

“ আম্মা! তোমার ছোট ছেলে আমাকে ভূতনি বলেছে। “

মুহুর্তেই লিভিং রুমের সকলের মনযোগ তাদের দিকে স্থির হয়। সাদিকা বেগম কিছু বলবে তার আগেই শোভন পৃথাকে ভেংচি কেটে বলে,

“ ক্রাই বেবি। এখনো আমাকে বিচার দিতে হয় তোর? ভূতনিকে ভূতনি বলবো না তাহলে কি পেত্নী বলবো? “

পৃথা রাগে হাতের কাছে থাকা ফুলদানি হতে একগুচ্ছ কৃত্রিম ফুল নিয়ে শোভনকে ধাওয়া করে। শোভন দৌড়ে ডাইনিং টেবিলের চারিদিক দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বলতে থাকে,

“ পৃথা ইজ এ ভূতনি।
ক্রাইস লাইক এ পেত্নী। “

পৃথা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠে,

“ ছোট’দার বাচ্চা। থাম এখুনি। “

শোভন দৌড়াতে দৌড়াতেই বলে,

“ বিয়ে হয় নি এখনো আমার বাচ্চা কই থেকে আসলো? “

লিভিং রুম হতে এই দৃশ্য দেখে সাদিকা বেগম এবং আফজাল সাহেব বার কয়েক ছেলে মেয়ে দুটোকে ডাকে। কিন্তু এদের থামার কোনো নামগন্ধ নেই। এতোদিন পর দেখা হয়েছে সাথে সাথে তাদের টম এন্ড জেরির চ্যাপ্টার শুরু। তূর্য ভ্রু কুচকে দেখছে পৃথাকে। নিজের ঘরে ফিরে আসতেই এই মেয়ের দস্যীপনা শুরু। যেভাবে দৌড়াচ্ছে এখন যদি পড়ে পায়ে একটা ব্যথা পায়?

তূর্যর ভাবতে দেরি কিন্তু তা ঘটতে দেরি না। নিজের ওড়নার সাথে পা পেচিয়ে পৃথা পড়ে যেতে নিলেই সে দৌড়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু সে পৃথার কাছে পৌঁছানোর আগেই একটা বলিষ্ঠ হাত পৃথাকে আগলে ধরে। দূর হতে পার্থকে দেখে তূর্য আর এগোয় না।

সবেমাত্র একসাথে বাড়ি ফিরেছে পার্থ এবং তরী। ঘরের দরজা খোলা থাকায় সোজা তারা ভিতরে প্রবেশ করে। পৃথাকে পড়ে যেতে দেখেই পার্থ এগিয়ে এসে তাকে সামলে কঠিন স্বরে বলে,

“ তোর কি আক্কেল জ্ঞান হবে না কখনো? “

বড় ভাইয়ের ধমক শুনে পৃথা ঠোঁট উল্টে বলে,

“ আমার দোষ নেই। তোর ভাই আমাকে আজেবাজে নামে ডাকছিলো। শাসন করতে মন চাইলে ওকে কর। “

পার্থ একবার শোভনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

“ কি আজেবাজে নামে ডেকেছে ও তোকে? “

পৃথা এবার নালিশের সুরে বলে,

“ আমাকে ভূতনি, পেত্নী আর ক্রাইবেবি বলেছে। “

পার্থ কুচকানো ভ্রু দ্বয় শিথিল করে বলে,

“ ভুল কি বলেছে? “

পৃথা হা করে বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়। পার্থ তার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছিলো। পৃথার রাগান্বিত দৃষ্টি দেখেই সে দৌড়াতে দৌড়াতে বলে উঠে,

“ শোভন ভাগ। পেত্নী ঘাড় মটকাতে আসবে। “

মুহুর্তেই পৃথা দুই ভাইকে ধাওয়া করতে শুরু করে। টম এন্ড জেরি এখন ওগি এন্ড দ্যা কোক্রোচেসে পরিণত হয়। তরী সেদিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে নিজের ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যায়। তূর্য বোনকে দেখেই উঠে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“ কেমন আছিস আপি? “

“ অনেক ভালো। “

তরী এবং তূর্যের মধ্যের মনমালিন্য অনেক আগেই মিটে গিয়েছে। কিন্তু তখনও তরী খুশি ছিলো না। কিন্তু আজকে তরীকে দেখে সত্যিকার অর্থেই খুশি মনে হচ্ছে। তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে দোয়া করে তার বোন যেন সবসময়ই খুশি থাকে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে