যুগলবন্দী পায়রা পর্ব-১১+১২

0
853

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-১১
সন্ধ্যা থেকে আকাশ মেঘলা করে বৃষ্টি পড়ছে। মাঝে মাঝে দমকা বাতাস দিচ্ছে। বাতাসের বেগ বেশ প্রবল। এ বাতাসক মশা মারা বাতাস নামে পরিচিত। ঝড়ের সময় দরজা জানালা বন্ধ করে রাখলেও এ সময় খোলা রাখতে হয়। গ্রামের মানুষ এসময় ঘর ভর্তি করে ধোয়া দেয়। ধুপ ধোয়া। মহুয়াকে যে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, আপাতত তার দরজা-জানলা সটান করে খোলা। ঝড়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে গেছে। মহুয়া খাটের একপাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। তার পাশেই টেবিলের ওপর হারিকেন জ্বলছে। থেকে থেকে বাতাসের ঝাপটা আসতেই হারিকেনের শিখার দপ দপ করে বেড়ে উঠছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি নিভে যাবে। ইয়ামিন নিঃশব্দে ঘরে ঢুকলো। মহুয়া কি ঘুমিয়ে গেছে? না মেয়েটির বুক পিঠ কেঁপে কেঁপে উঠছে, মাঠে কি কাঁদছে?

ইয়ামিন হারিকেনের আলোয় মহাকে দেখার চেষ্টা করল। হারিকেনের হলদে আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠলো মেয়েটির মুখ। মহুয়া ঘন শ্বাস ছাড়ছে। তাহলে কি মেয়েটিকে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল? ইয়ামিনের ডাকতে ইচ্ছা করলো না। কিন্তু ডাকা দরকার আজ যা হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বলা দরকার! ইয়ামিন চুপ্টি করে বিছানার আরেক পাশে বসলো। মহুয়া ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। চাইলেও মুখখানা দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ফিরে শুলে ভালো হতো । মাঝে মাঝে মহুয়ার বাচ্চা-বাচ্চা মুখখানা দেখা যেত। জাগ্রত মহুয়ার মুখ খানা একরকম আর ঘুমন্ত মুখখানায় আরেকরকম। মহুয়া যখন ঘুমিয়ে থাকে তাকে অসহায় লাগে। খুব মায়া লাগে মহুয়ার জন্য। মহুয়া এখনো জানেনা ইয়ামিনের সাথে কাটানো রাতগুলো শুধু তাকিয়ে থেকেছে তার দিকে।বেশিরভাগ সময়ই লুকিয়ে দেখেছে। এইতো কাল নিশি রাত পর্যন্ত ড্যাবড্যাব করে দেখেছে মহুয়াকে। এক সময় ঘোর লেগে যায় ইয়ামিনের। হেঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। কি স্নিগ্ধ মুখ খানা মহুয়ার। কি ভয়ঙ্কর কথা। একটি ঘুমন্ত মানুষকে এতবার দেখার কি আছে? জানা নেই তার। এই যে এখনো তার মন চাইছে মেয়েটিকে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে পিশে ফেলতে।। ইয়ামিন গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। মহুয়ার পিঠের দিকে তাকিয়ে মনে করতে চাইল কিছু ঘন্টা আগের কথা। গ্রামের মাতব্বর ভালো লোক নয়। দাদাজানকে হেনস্ত করবেন বলেই তাকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিল মহুয়ার সাথে। মেটিয়া পরপর দুটি ধাক্কা খেলো কেঁদে উঠে যান শেষ তারপর বজ্জাত মাতাব্বর তাদের আটকে রেখেছে। ঘরের বাহিরে অস্ত্রধারী দুটি লোক পায়চারি করছে। দাদাজানকে খবর দেওয়া হয়েছে। কখন আসবে কে জানে, এখান থেকে পালাতে ইচ্ছে করছে ইয়ামিনের। কোথায় ফেঁসে গেল সে? আচ্ছা মেয়ে টি এ সব কিভাবে নিবে সে কি বিয়েটা সিরিয়াস নিবে? নাকি সম্পর্কটা এখান থেকে বের হতেই ইতি টানবো??

ইয়ামিনের মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মেয়েটিকে এবার জাগিয়ে তোলা তুলতে ইচ্ছে করছে। ইয়ামিন এবার খুটখুট শব্দ শুরু করলো মেয়েটিকে জাগানো দরকার কী আশ্চর্য ব্যাপার আজ তাদের এতটা সিনেমাটিক ভাবে বিয়ে হল আর মেয়েটি ঘুমোচ্ছে?? যথেষ্ট ঘুম হয়েছে আট না ভেবেই পাশে থাকা স্টিলের গ্লাসটি ফ্লোরে ফেলে দিলো ইয়ামিন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মহুয়া ধড়মড় করে উঠে বসল। ফ্যালফ্যাল করে ইয়ামিনের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,,

“কিসের শব্দ? ”

ইয়ামিন ভাবলেশহীন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,,

“হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে গেছে! ”

মহুয়া ভাঙ্গা গলায় বলল,

“বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছে ”

“হুম!”

মহুয়া বিছানা থেকে নেমে একছুটে জালনা কাছে গেল। বাহিরে বৃষ্টি সাথে তাল মিলিয়ে স্ব স্ব বাতাস বইছে।মহুয়া হাত বাড়িয়ে দিলো বাহিরে।গম গম কন্ঠে বলল,

“বৃষ্টি বাতাস একসাথে হলে কি হয় জানেন?”

” না! কি হয়?”

“চখাচখির বিয়ে হয়।”

ইয়ামিন বিস্মিত হলো বিছানা থেকে নেমে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আপনাকে এসব কে বলেছে মিস মহুয়া নাকি এসব শ্লোক আপনি বানান। ”

মহুয়া জবাব দিল না। হাত বের করে বৃষ্টির পানি নিয়ে গালে স্পর্শ করল খিলখিল করে হেসে উঠলো। ইয়ামিন হাঁ করে চেয়ে রইল মেয়েটি কি পাগল হয়ে গেছে? কথায় আছে অতি শোকে মানুষ পাগল হয়ে যায়। মহুয়ার বেলায় কি তাই হল ইয়ামিন অবাকতা ধরে রাখতে না পেরে বলল,,

“আর ইউ ওকে মিস মহুয়া? ”

“হে আমি ঠিক আছি!”

“মনে হচ্ছে না!”

মহুয়া ইয়ামিনের দিক তাকালো। লোকটি তার এত কাছে? হুট করেই বুকটা ধক করে উঠলো। সে অন্য দিকে ফিরে বলল,

“কি মনে হচ্ছে?”

ইয়ামিনের সহজ স্বীকারোক্তি,

“পাগল মনে হচ্ছে!”

মহুয়ার চোখে মুখে হঠাৎ করে বিষণ্নতা ফুটে উঠল নিজের ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চাইল। নিচের দিক তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,

“আমি আপনাকে বড্ড বিপদে ফেলে দিয়েছি। তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখীত।”

“দুঃখীত হওয়ার কিছু নেই মিস মহুয়া। আমরা পরিস্থিতির স্বীকার।!”

মহুয়া ফুপিয়ে উঠলো। ইয়ামিন কাছে সরে এলো মহুয়ার। খুব কাছে। চোখের জল মুছে দিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,

“কাঁদবেন না মিস মহুয়া। আপনার কান্না সহ্য করতে পারছি না। বুকে লাগচ্ছে! ”

মহুয়া চমকে তাকালো। ইয়ামিনের চোখে মুখে তখন কি যেন। বড্ড অদ্ভুত সেই চাহনি। মহুয়া সরে আসতে চাইলো। ইয়ামিন মহুয়ার দু বাহু চেপে ধরলো। মহুয়া ভরকে গেলো। ইয়ামিনকে ধাক্কা দিয়ার বৃথা চেষ্টা করলো।

“কি করছেন? ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি!”

“আপনাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না মিস! কেন আপনাকে বড্ড আপন মনে হয়?”

মহুয়া কি বলবে বুঝতে পাড়লো না। তাকিয়ে রইলো ভীতু চোখে। ইয়ামিন আবার বলল,

“আমি এ বিয়ে টা মন থেকে মানতে চাই মহুয়া! ”

মহুয়া চোখ বড় বড় করে বলল,

” কি সব হাবিজাবি বলছেন?”

“সত্যি বলছি!”

“কিন্তু আমি চাই না!”

ইয়ামিন অধৈর্য গলায় বলল,

“কিন্তু কেন মিস মহুয়া? ”

“কারণ আমি আমার পত্র প্রেমিকে ভালোবাসি। ”

“সে মারা গেছে!”

মহুয়া তপ্ত চোখে তাকালো এবার। বলল,

“সে মরে নি। আমি জানি সে বেঁচে আছে! আমার পত্র প্রেমিক আমার কাছে একদিন ঠিক ফিরে আসবে!”

ইয়ামিন অসহায় চোখে তাকালো।চাপা গলায় বলল,

“এসবের কোনো ভিত্তি নেই! আপনি এখন আমার অর্ধাঙ্গিনী। ”

মহুয়া মুহূর্তেই চর বসিয়ে দিলো ইয়ামিনের গালে। ইয়ামিন স্তম্ভিত হলো। পর পর তার সাথেই এমন কেনো হয়? সে ও তো ভালোবাসা চায়। সেতো ভালোবেসে ছিলো। তারোও তো একটি পত্র প্রেমিকা হয়েছিলো। কিন্তু সে ধোকা পেলো। শুধুই ধোকা।

————-

পরেরদিন ঠিক ভোর বেলাই দাদাজান তাদের নিয়ে যান। গম্ভীর ফ্যাকাসে মুখ আর ঢোলা চামড়ার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকচি ফ্যাস ফ্যাস করে বলল,,

“ইয়ামিন কাজটি তুমি ভালো করো নি। এ বিয়ে আমি মানি না!”

ইয়ামিন মহুয়ার দিক এক পলক তাকিয়ে দাদাজানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“আপনি মানেন আর না মানেন। এ বিয়ে হয়েছে দাদাজান!”

দাদাজান নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,,

“মেয়েটির পরিচয় কি? নিচু জাতের মনে হচ্ছে? এমন মেয়ে আমার ঘরের বউ হতে পারবে না!”

ইয়ামিন চেঁচিয়ে উঠলো,

” মেয়েটি যেমন হোক আমার বউ। ওর সম্পর্কে আর একটি কথাও শুনবো না!”

ইয়াসিন সাহেব আবাক দৃষ্টিতে নাতিকে দেখছেন। ইয়ামিন তার সাথে এত উঁচু কথা কিভাবে বলতে পারলো?উনি মনে মনে ঠিক করে ফেললেন এর একটি ব্যবস্থা তিনি নিবেন। জ্বর উঠলে যেমন মাথা ঠান্ডা করতে পানি দিতে হয়? শরীর পঁচন ধরলে পঁচা অংশ কেঁটে ফেলতে হয়।ঠিক তেমনি,শরীরকে নীরোগ রাখতে নানান চিকিৎসা করতে হয়। তিনিও করবেন। রোগ বারার আগেই উপরে ফেলবেন।

————

চলবে,

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-১২
বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়চ্ছে। ঘর শীতল। মৃদু টিমটিম লাল-নীল আলো।বিছানার পাশে ছোট ছোট মোম জ্বলজ্বল করছে। বাসর রাতের মতো সাজানো ঘরটি আজ ইয়ামিনের। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশকুসুম ভাবচ্ছে। মহুয়া তার অংশ হয়ে গেছে। অথচ তার যে একটি অতীত আছে! তাতো বলার সুযোগ পায়নি। তো কি হয়েছে তখন পায়নি? আজ রাতটুকু তো পেয়েছে? নতুন সম্পর্কে গড়ে উঠার আগে অবশ্যই পুরাতন সম্পর্কে জানানো দরকার? ইয়ামিন মনে মনে স্থীর করে ফেললো আজ সব বলবে সে মহুয়াকে সব শোনার পর যদি সে চায়! নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে? তাহলে তাই হবে। ইয়ামিন গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। সেই মুহূর্তে দরজা বাহিরে শোনা গেলো একদল কিশোরী, তরুণীর খিলখিল শব্দ।তারা দরজা ঠেলে মহুয়াকে ভিতরে নিয়ে এলো।সুন্দর মুখশ্রীর আর পিটানো শরীরের চকচকে ঝকঝকে লাল লেহেঙ্গা। খিলখিল করে হেসে এগিয়ে এসে বলল,

“ভাইয়া টাকা দাও। নয়তো বউ কিন্তু নিয়ে পালিয়ে যাবো!”

তারপর খানিক ফিসফিস করে বলল,

“সারা রাত পরে কিন্তু কাছে পাবে না!”

মেয়েটির কথায় হাসির রোল পড়লো। ইয়ামিন কাছে এসে মেয়েটির কান চেঁপে ধরে বলল,

“আয়দা খুব পেকে গেছিস তুই!”

কানে ধরতেই “ব্যাধা পাচ্ছি” বলে ন্যাকামো কান্নার ভঙ্গি করে বলে,,

“এই ভাইয়া ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি কিন্তু। আমি কিন্তু সত্যি বলছি, টাকা নাই বউ, ফউ নাই। ভাবিকে নিয়ে চলে যাবো হুম!”

ইয়ামিন হেসে দিলো। আয়দার চুলে জোরে টান দিয়ে বলল,

“ড্রামা কুইন। নাটক, ফাটকে নাম লিখিয়ে ফেল। ভালো ইনকাম হবে তোর। আমার টাকা গুলো বাঁচবে!”

ইয়ামিন ১০ হাজার টাকা একটি বান্ডিল বের করতেই ছু মেরে নিয়ে গেল আয়দা।বান্ধবীদের সাথে দৌড়ে পালাতে পালাতে বলল,

“আমি যত টাকাই ইনকাম করি না কেন! ভাইয়ের টাকাতো নিবোই, ইহাতে আলদা মজা আছে যে!”

ইয়ামিন হাসলো। মহুয়ার দিক একপলক তাকিয়ে বসতে বলল।গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো মহুয়া। ইয়ামিন কাঁধ বাকিয়ে এক বার তাকিয়ে আবার বাহিরে তাকালো। মহুয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

“আমার পাশে এসে দাঁড়া-ও। ”

মহুয়া কাচুমাচু হয়ে ইয়ামিনের পাশে দাঁড়ালো। অনেকটা জড়তা কাজ করছে। ইয়ামিন কোনো ভণিতা ছাড়াই বলতে শুরু করলো,

” অনার্সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আমি। টগবগ জোয়ান, ভার্সিটির সেরার খাতায় আমার নাম। সব স্টুডেন্ট, শিক্ষকের আকর্ষণ। আমার ধারণা ছিলো পড়াশোনার বাহিরে কোনো দুনিয়ায় নেই। কিন্তু সব পাল্টে এক তরুনী আগমন ঘটলো আমার জীবনে।ধাপিয়ে প্রেম শুরু হলো আমাদের। বেপরোয়া ভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো যেন ছিলো আমাদের কাজ।”

এ পর্যায় একটু হাসলো ইয়ামিন। পুরোনো স্মৃতি ভেসে উঠতেই চোখের কোনে টলমল করে উঠলো বিষাদ। ইয়ামিন বিছানায় হেলে বসলো। মহুয়া তাকিয়ে রইলো যন্ত্রণায় নিঃশেষ হওয়া মানবটির দিকে।ইয়ামিন আবার বলতে শুরু করলো,

“আমার তানিশার ধারণাও ছিলো তোমার মতো। খুব চাইতো পায়রা প্রেম করবে। তার প্রেমের সাক্ষী হবে আকাশ, চাঁদ, তারা, বৃষ্টি, গাছ-পালা। কিন্তু হলো না। তাই মনে দুঃখ পুষিয়ে রাখতো সব সময়। তাই আমি বার্থডেতে পায়রা গিফট করি। কিন্তু সে হোস্টেলে থাকতো বলে পায়রা আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসি। আমার বাসায় তানিশা প্রায় আসতো। পায়রাদের সাথে খেলতো। আমি সব ক্যামেরাবন্দি করে রাখতাম।”

আবার হাসলো ইয়ামিন। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোঁটা। মহুয়া ইয়ামিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ইয়ামিন এবার বাচ্চাদের মতো কাঁদে দিলো। মহুয়া ইয়ামিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ইয়ামিন মহুয়াকে ঝাঁপটে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো। মহুয়ার চোখেও বৃষ্টি নামলো। আকড়ে রাখলো ইয়ামিকে। ইয়ামিন বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

“সব ঠিক ছিলো। তাহলে কেনো এমন হলো? সে কেনো চলে গেলো? কেন চলে গেলো? আমরা তো এক সাথে বাঁচবো, মরবো বলেছিলাম। সে কেন তার ওয়াদা ভাঙ্গলো!জানো সাদা কাপড়ে মোড়ানো ওর রক্তে লাল হওয়া মুখখানি ভুলতে পারি না। এই দুই হাতে ওর মুখ স্পর্শ করেছি। তানিশার রক্তে লাল হয়েছিল আমার হাত। আমি ভুলতে পারি না। পারি না ভুলতে।”

কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা। ইয়ামিন এখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মহুয়ার কষ্ট হচ্ছে। কি বলবে এখন ইয়ামিনকে? কি বলা উচিত এ মুহূর্তে? ইয়ামিনের আম্মু অবশ্য সব বলেছেন। তানিশা মেয়েটি রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। কোনো এক ট্রাক চাপা দিয়েছিলো তানিশার সি এন জিকে আর সেখানেই তানিশা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। মহুয়ার বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বান বের হয়। ইয়ামিনের দিকে পানি এগিয়ে দিলো। এক ঢুক পানি খেয়ে ইয়ামিন আবার জানালার ধারে এসে ঠাই নেয়। রাতের নিকেশ কালো অন্ধকারে ঢাকা চারিপাশ।ইয়ামি আবার বলতে শুরু করলো,

“তানিশা চলে যাওয়ার পর আমি নিজেকে বন্ধ করে ফেলি ঘরের চার দেয়ালের মাঝেই। আমার সঙ্গী হয়ে উঠে পায়রা। ”

“পায়রা?”

“হে পায়রা! সাদা পালকে ঘেরা নির্জীব প্রাণী! ”

মহুয়া অবাক হয়ে চাইলো ইয়ামিনের দিক। মনে মাঝে কেমন ভয় ভয় করছে। সারা শরীর হালকা কাঁপুন দিচ্ছে। মহুয়া শুকনো ঢুক গিললো। ইয়ামিন হেসে বলল,

“৯০ দশকের পাগলো প্রেম আমিও করেছি মহুয়া!”

মহুয়া হা হয়ে গেলো। পরের কথা টুকু শুনে শরীর শিরশির করে উঠলো।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে