যুগলবন্দী পায়রা পর্ব-০৯

0
903

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-৯

“ছেলে গুলো কে মিস মহুয়া? ”

“আমি কিভাবে বলব!”

ইয়ামিন বিরক্তি নিয়ে বলল,

“তারা আপনাকেই মারতে এসেছিলো? আর আপনি চিনেন না?”

মহুয়া আকাশ ছুঁয়া অবাক হয়ে বলল,

“এটা অসম্ভব। আমাকে কেন মারতে চাইবে?”

” সেটা তো আপনি ভালো জানেন?”

“বিশ্বাস করুন আমার তেমন এনিমি নেই৷ বরং আমি নিজেই মধ্যে বিত্ত ঘর থেকে বিলং করি। শত্রু তত্রু আমার কেন হবে বলুন?”

“সেটা আপনার ভালো জানা কথা মিস? আমি তাই বলছি যা ওই ছেলে গুলো বলেছে!”

মহুয়া গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। পরক্ষণেই প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! তখন সময় মতো আপনি পুলিশে হুইসেল না বাজালে এতক্ষণে পটল তুলতাম!”

বলেই হাসলো মহুয়া। কিন্তু ইয়ামিনের দিক চোখ যেতেই ইয়ামিনের দাম্ভীক গম্ভীর মুখখানী দেখে চুপসে গেলো মুখ। আসহায় চাহনি নিয়ে বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলল,

“আমি সত্যি জানি না। বিশ্বাস করুন!”

ইয়ামিন অন্যদিকে তাকালো। মহুয়া কৌতূহল নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” তা মিস্টার ইয়ামিন? আপনি সব সময় এমন সিরিয়াস মুডে কেন থাকেন? হাসতেও তো পারেন? হাসলে কিন্তু সুন্দর লাগে বড্ড আপনাকে!”

মহুয়ার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না ইয়ামিনের। মহুয়া ইয়ামিন মুখ পানে চেয়ে বাহিরে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল,

“বেটা অল্প বয়সেই বয়সী বয়সী ভাব করে কেন। উফ? মিঃ ইয়াং বুড়ো!”

মহুয়াকে বিড়বিড় করতে দেখে ইয়ামিন বলল,

“এটা কি আপনার রোগ মিস মহুয়া? নিজের সাথে বিড়বিড় করা?”

মহুয়া কিছু বুঝতে না পেরে হা করে চেয়ে রইলো কতক্ষণ। পরক্ষনেই বোকা বোকো হেসে বলল,

” আমি একটু এমনি!”

ইয়ামিন মনে মনে হাসলো। মেয়েটিকে বিড়বিড় করার সময় ঠোঁট দুটি নন স্টোপ নড়াতেই থাকে। ভালোই লাগে তার কাছে। ইয়ামিন হুট করেই বলল,

” চলুন তবে এবার আপনার পত্র প্রেমিক খোঁজা যাক?”

মহুয়া বিস্ময় নিয়ে তাকালো বলল,

“সত্যি আপনি আমার হেল্প করবেন?”

ইয়ামিন বাঁকা হাসলো। মুগ্ধ নয়নে দেখলো মহুয়া। ছেলেটি কি সুন্দর হাসে। আনমনে বলেই ফেললো সে,

” আপনার হাসি খুব সুন্দর। চান্দের মতো ঝকঝকে, চকচকে।”

ইয়ামিন থতমত খেয়ে গেলো। গলা পরিস্কার করে বলল,

” যাওয়া যাক? তার আগে বরং পেট পূজ হোক?”

মহুয়া সায় দিলো। ইয়ামিন গাড়ি স্টার্ট করে স্বাই করে চলে গেলো অচেনা -অজানা গন্তব্য!

——-

বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে। এদিক ওদিক ছাতা নিয়ে ছুটছে ব্যস্ত মানুষ। দূর কোথাও টং দোকানের ধোয়ায় চুমুক দিচ্ছে চায়ের কাঁপে কেউ কেউ পড়ছে খবরের কাগজ তো করছে রাজনৈতিক, সমাজিক বা ধার্মিক কথা বার্তা। মেঘলা ঘোলাটে দিন মৃদু ঠান্ডা আবেশে ছুটে ঢুকলো সেখানে মহুয়া আর ইয়ামিন। ভেজা চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। গায়ের শার্ট লেপ্টে প্রশস্ত বুক ভাস্যমান। মহুয়া উচ্ছলতা মুখ, ঠোঁটের কোনে প্রাপ্তির হাসি। ভেজা কাপড়ে লেপ্টে থাকা কোমড় সমান চুল টেনে ডান পাশে আনলো।খোলা বাম পাশের হলদাটে কাঁধের উপর গোল কালো কুচকুচে বড় তীলটিতে চোখ আটকালো ইয়ামিনে। পরমুহূর্তে চোখ ফিরিয়ে নিলো।মহুয়া ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করলো। মৃদু এসে লোকটি জিজ্ঞেস করলো, ঠিকানার কথা। কথা বলার সময় মহুয়া ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে ঝাড়তে লাগলো। বড় বড় চোখের ভাড়ী পল্লব ফেলছে মেয়েটি। হুট করেই ইয়ামিনের বুকে ধুরু ধুরু ব্যথা অনুভব করলো। মিষ্টি ব্যথা।মুগ্ধতার ব্যথা। চিন চিন ব্যথা। ইয়ামি হঠাৎ অবাক হলো, কোনো প্রেমিক কি তৃতীয় বারের মতোও প্রেমে পড়ে? আচ্ছা তার অনুভতি গুলো কি অযুক্তিক নয়?তার মনে এখনো একজন বসত করছে! তারপরও এ কেমন অনুভূতি কাজ করছে? তার প্রেম, ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো?? ইয়ামিন দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ঘাড় ঘুরিয়ে আরেকবার চাইলো মেয়েটির দিক। মহুয়ার কিছুক্ষন আগের উচ্ছলতার বদলে নেমে এসেছে ঘনকালো মেঘ। ইয়ামিন থমকালো, মেয়েটির মলিন মুখে। মেয়েটি কি কাঁদচ্ছে? আগাগোড়া নিরক্ষন করে বলে উঠলো ইয়ামিন,,

“কি হয়েছে মিস মহুয়া!”

মহুয়া আহত চোখে তাকালো। ভেঁজা কন্ঠে বলল,,

“আমি কি তাকে সত্যি হারিয়ে ফেলেছি? কেউ এই ঠিকানা চিনছেই না!”

ইয়ামিন মহুয়ার কাছে এলো৷ ভিজে চুল গুলো আবারো ঠেলে দিয়ে মহুয়ার হাত থেকে কাগজের টুকরোটি নিয়ে বলল,

“ভেঙে পরবেন না মিস মহুয়া। উনি না জানুক, কেউ তো জানবেই? আসুন আমরা ওই দিকটাই দেখি!”

মহুয়া মাথা হেলালো। ইয়ামিনের পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে এলো একটি দোকানে। হাতে কাগজটি এগিয়ে, গম্ভীর কিন্তু বিনয়ী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“মামা এই ঠিকানাটা বলতে পারবেন? ”

লোকটি পান চিবাচ্ছিলো। চোখের সামনে শহরে দুই নর-নারীরকে দেখে চোখ কুচকালো। কাগজটি হাত বাড়িয়ে নিয়ে, এক পলক তাকালো তাদের দিক। আবারও কাগজে নজর বুলিয়ে পিক করে পানের রস ছিটালো বাহিরে। বাম হাতে মুখের পানে রস টুকু মুছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,

” মল্লিক বাড়ি যাইতে চান? কি জন্নি? ”

“আপনি চিনেন?”

“হয় চিনি। কিন্তু কেন যাবেন?”

” আমাদের একটু কাজ আছে। আপনি একটু ঠিকানা বলে দিন!”

লোকটি কিছু বলল না। এদিকে মহুয়ার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে! প্রিয় মানুষটির এত কাছে এসে গেছে ভেবেই ভয়ে আত্মা কাঁপচ্ছে। কিন্তু লোকটি কিছুই বলছে না কেন?মহুয়া শুকনো ঢুক গিললো। জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, অধৈর্যর মতো বলল,

“মামা চুপ করে আছেন কেন কিছু বলেন প্লীজ?কোথায় এই ঠিকানা? ”

লোকটি এবার মাথা তুলে তাকালো। মহুয়া ছলছল চেখে তাকিয়ে বলল,

“আম্মাজান ওই বাড়িতে কেউ থাকে না। দুই বছর আগে ওই বাড়িতে আগুন লাইগা সব মানুষ মইরা গেছে। একটাও বাইচা নাই!”

মহুয়ার বুক ধক করে উঠলো। মুহূর্তে মনে হলো শরীর হালকা লাগচ্ছে। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসচ্ছে। চোখের জল গড়িয়ে পড়তেই তোতলানো কন্ঠে বলল,

“আ-প-নি মিথ্যা বলছেন? এমন হতে পারে না!”

ঢুকরে উঠলো মহুয়া। ইয়ামিন মহুয়াকে তার বুকে সাথে চেপে ধরলো। লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনার কোথাও ভুল গচ্ছে না তো? এ গ্রামে কি আর কেনো মল্লিক বাড়ি নেই!”

লোকটি মাথা দুলালো এদিক অদিক। বলল,

“না মামা। আর নাই!”

ইয়ামিন এক পলক তাকালো মহুয়ার দিক। মেয়েটি শরীরের ভর ছেড়ে নেতিয়ে পড়ছে।হু হু করে কাঁদচ্ছে। আজ বড্ড অভিমান হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার উপর ইয়ামিনের। ভালোবাসার মানুষ গুলোকে উনি এভাবে কেড়ে নিয়ে কেন যায়? এত কষ্ট, বুক চিঁড়া দুঃখ, উল্টো-পাল্টে করে দিয়ে যায় সব। কেন? মহুয়া এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আশেপাশে চোখ জোড়া তাকিয়ে রইলো তাদের দিক। ইয়ামিনের বুকেও পুরোনো জখম তাজা হয়ে উঠলো। মহুয়ার মাথা হাত বুলিয়ে আকাশের দিক তাকালো। অভিমানী চোখ দুটি দিয়ে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে বৃথা চেষ্টা করলো উপর ওয়ালাকে। মৃদু কন্ঠে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,,

“কেন এমন হয় আল্লাহ? ”

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে