#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৪
সোনালী এক মুঠো রোধ চোখে মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় মহুয়ার। আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় বসে থাকে থম মরে কিছুক্ষণ। খুদায় তার পেট চু চু করছে। কাল সকাল থেকে পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি মহুয়ার। মহুয়া উঠে দাঁড়ালো। বিছানার এক কোনো তার পড়নের কাপড় সুন্দর করে ভাজ করে রাখা। সেগুলো নিয়ে এগিয়ে গেলো সে ওয়াশরুমের দিক।কিছু সময় নিয়ে ফ্রেস হয়ে ভিজে লম্বা চুল ছেড়ে বের হয়। কিছুক্ষণ রুমে পায়চারি করে পা বাড়ায় বাহিরে। পেট এবার কথাই শুনচ্ছে না। মহুয়া সব সইতে পারে। কিন্তু খুদা তার সহ্য ক্ষমতা চুরমার করে দেয়। পা টিপে টিপে রুমের বাহির এসে থ মহুয়া। এত বড় বাড়ি আর সাজসজ্জা দেখে হা হয়ে গেছে সে। মধ্য বিত্ত ঘরের মেয়ে সে। এসব কিছু শুধু টিভিতেই দেখছে। মহুয়া ছোট শ্বাস ছাড়লো৷ এদিক ওদিক খুঁজে কাউকে না পেয়ে রান্না ঘর খুঁজে বের করলো।
সকলের প্রর্থনা শেষে ইয়ামিন জগিং করতে বের হয়েছে। সারা রাত ঝুম বৃষ্টির পর সকালের মিষ্টি রোদের ঝলমলে আলো প্রকৃতির রূপ আরো বৃদ্ধি করছে। পাহাড়ি এলকা আর জঙ্গলে ঘেরা শহরের এই এলাকাটিতে বড়বড় জামরুল গাছের ডাল পালা থেকে ঝিলিক দিচ্ছে। ইয়ামিনের এমন পরিবেশ খুব ভালো লাগে। শহর থেকে কোলাহল মুক্ত এলাকাই সে বেছে নিয়েছে নির্জনে থাকার জন্য। জগিং শেষে ঘামে চিটচিটে অবস্থা বাসার সদর দরজায় প্রবেশ করতেই ভ্রুকুচকে যায় ইয়ামিনের। রান্না ঘরে থেকে টুংটাং শব্দ আসচ্ছে। এদিকে চোর ডাকাতে উপদ্রব আছে ভেবেই পাশে থাকা হকি স্টিক নিয়ে নরম পায়ে এগিয়ে যায়। সামনে এগিয়ে যেতেই ভ্রু জোরার মাঝ বরাবর সুক্ষ ভাজ পরে। রাতের মেয়েটি টেবিলের উপর বসে হাপুসহুপুস খাবার খাচ্ছে। ইয়ামিন বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই মহুয়া থতমত খেয়ে যায়। গলায় খাবার আটকে আসে তার। খুক খুক করে কাশতে থাকে সে। হুট করে ইয়ামিনকে দেখে হেচকি উঠে গেছে। ইয়ামিন গাল ফুলে শ্বাস ছেড়ে পানি এগিয়ে দিল। মহুয়া এক ডুকে পানি খেয়ে শেষ করে বলল,,
“খুব খিদে পেয়েছিলো। সরি না বলে খাবার খেয়ে ফেলেছি আপনার! আমি না হয় আবার রেধে দিবো!”
ইয়ামিন আড় চোখে তাকালো। মেয়েটির মুখ কাচুমাচু করে থুতনি ঠেকিয়ে ফেলেছে গলার নিচে।ভেজে চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ে ফ্লোর মাখামাখি। ইয়ামিনের হাসি পেলো। মেয়েটির বয়স ১৮/১৯ এর ঘরেই হবে ভাবলো। ইয়ামিন গম্ভীর কন্ঠে বলল,,
“আপনি খেয়ে নিন। তারপর কথা হবে!”
মহুয়া প্লেটের খাবার দ্রুত গতিতে শেষ করে ফেললো। ইয়ামিন মুগ্ধ নয়নে দেখলো। এর আগে এমন কখনো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না তার। কিন্তু এতো রাতে ওই রাস্তায় কি করছিলো এই মেয়ে?
“আপনি এত রাতে বড় রাস্তায় কি করছিলেন?”
মহুয়ার খাবার বন্ধ হয়ে গেলো। রাতের সেই ভয়ংকর রকমের খারাপ অনুভূতির কথা মনে আসতেই চুপ করে রইলো।
ইয়ামিন আবার জিগ্যেস করলো,
“কি হলো মিস?”
মহুয়া ইয়ামিনের কথাটা এড়িয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,
“আমি এখন কোথায় আছি?”
“বান্দরবান।”
বিস্ময়ে চোখ দুটি বড় বড় হয়ে গেলো মহুয়ার। মহুয়া খানিক চেঁচিয়ে বলল,
” আমি কিভাবে এলাম এখানে!”
ইয়ামিন আবার দেখে নিলো মহুয়াকে।মেয়েটি কিভাবে এখানে এসেছে তা ইয়ামিন কিভাবে জানবে? সে তো আর ধরে বেঁধে এ শহরে আনেনি! হঠাৎ করে বুঝতে পারলো তার বিরক্ত লাগচ্ছে। বিরক্তিতে গা শিরশির করছে। কঁপাল কুচকে বিরক্ত মাখা কন্ঠেই বলল,,
“সেটা কি আমার জানার কথা?”
মহুয়া চুপ করে থেকে মিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,,
” আসলে আমি বাসে ছিলাম। বাস নষ্ট হয়ে যাওয়াতে রাস্তায় নামতে হয়। কখন কোন পথে চলে গেলাম বুঝি নি। তার উপর কিছু খারাপ লোক পিছু নিলো। আর আপনি ফেরেস্তার মতো এসে সাহায্য করলেন!”
ইয়ামিন আর কিছু জিগ্যেস করলো না। মেয়ে মানুষ মানেই আজাইরা ঝামেলা। ইয়ামিন কে চুপ থাকতে দেখে মহুয়া বলল,,
” আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।”
ইয়ামিন তার ফিডব্যাক দিলো না উল্টো উঠে যেতে যেতে আবার ঘাড় বাকিয়ে মহুয়ার দিক কাত করে বলে উঠলো,,
” আপনি এখন সুস্থ আছেন। আপনার গন্তব্য চলে যাওয়া উচিত মিস, আপনার পরিবার হয়তো চিন্তা করছে!”
মহুয়া অপমানিত বোধ করলো। গলা উচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,
” আমি আপনার বাসায় থাকতও চাই না। আপনি আমার জন্য রাতে যা করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ টুকু জানানোর জন্যই ছিলাম। ”
ইয়ামিন সহজ স্বীকারোক্তি,
” আপনার ধন্যবাদ লাগবেনা আমার মিস..।”
মহুয়া আর দাঁড়ালো না অপমানে তার গা রি রি করছে। লোকটিকে ভালো ভেবে ছিলো মহুয়া। এতটা কেয়ার করেছিলো তাকে। কিন্তু এখন তো উল্টো। বদমেজাজি লোক একটা।মহুয়ার বুক ফেঁটে কান্না পেলো।সব দোষ গিয়ে ঘুরে ফিরে পড়লো পত্র প্রেমিকের ঘারেই। আজ এসব দেখতে হচ্ছে সেই পত্র প্রেমিকের জন্য অথচ সে নিজেই লাপাতা হয়ে গেছে হুট করেই। মহুয়া তার ব্যাগ নিয়ে গটগট করে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চায়ের ধোয়া উঠা কফি তে চুমুক দিচ্ছে ইয়ামিন। মহুয়া বাসার গেট ক্রশ করতেই শান্তির শ্বাস ছাড়লো ইয়ামিন। আজ কাল মেয়েরা তার কাছে এলার্জীর মতো। যতক্ষণ আশেপাশে থাকে রিয়াকশন ছাড়ায়!
———-
বর্ষার মাঝামাঝি সময় চলছে । কিছুক্ষণ পর পরই ঝুমঝুমিয়ে পুরো দুনিয়া আধার করে নামচ্ছে বৃষ্টি তো পরক্ষণেই দেখা দিচ্ছে সূর্যী মামার খিলখিল করা হাসি। রাস্তা ঘাটে কাঁদা মাখা আর ভাঙ্গা অংশে জমে থাকা পানি দেখে নাক ছিটকায় মহুয়া।খুব কষ্টে বাসস্টেন্ড খুঁজে বৃষ্টি মাথায় খুঁজে বের করতে নাজেহাল অবস্থা। বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে মহুয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বাস চলছে না রাস্তা বন্ধ রাতের ঝড়ে বড় বড় গাছ ভেঙ্গে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ঢল নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কি করবে মহুয়া এখন? অপরিচিত এক শহরেই বা কি করবে সে? মাথায় হাত দিয়ে পাশের বেঞ্চে বসে পড়লো মহুয়া। একা একা নিজ বাসা থেকে বের হওয়া ভাড়ি পড়লো তার উপর। সে কি করবে এখন? কোথায় যাবে?যেদিকে তাকাছে, যত দূর চোখ যাচ্ছে সব অপরিচত লাগচ্ছে তার কাছে। কিছু কিছু মানুষকে মহুয়ার দিক তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীতি তৈরি হচ্ছে।গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আবার শুরু হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাস স্ট্যান্ড খালিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শুধু মহুয়া পড়েছে অতুল সাগরে। হু হু করে কেঁদে উঠলো দু হাতে মুখ গুঁজে মহুয়া।
“এক্সকিউজ মি মিস?”
পরিচিত এক কন্ঠে চট করে তাকালো মহুয়া মনের ভয় ভীতি ঠেলে ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরলো। হাউমাউ করে কেঁদে দিল বুকে মুখ গুঁজে। বেচারা ইয়ামিন হতবিহ্বল ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
চলবে,❤️