Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"যদি প্রেম দিলে না প্রাণেযদি প্রেম দিলে না প্রাণে পর্ব-০৪

যদি প্রেম দিলে না প্রাণে পর্ব-০৪

#যদি প্রেম দিলে না প্রাণে

পর্ব ৪

🖋️রিয়া সেন দত্ত 🖋️

—দুপুরে ইন্দ্রানী আর সুপ্রতীক বসু ভিলায় এসেছে | সেখানে কয়েকদিন থেকে আবার অপর্ণার সাথে দেখা করে আলিপুরদুয়ার ফিরে যাবে | সুপ্রতীককে যা করতে হবে, তা এর মধ্যেই করতে হবে | তীর্থ ছেলেটি সৎ, যতদূর সম্ভব নিরপরাধও | কাজেই এই লড়াই তে অপর্ণাকে সাহায্য সুপ্রতীককে করতেই হবে |

ওদিকে মৈনাক এর সাথে সুপ্রতীক এর দীর্ঘদিন পর দেখা | অপর্ণা আসবে না | এতো কাছে থেকেও সে আসতে চায় না | কিন্তু কেন? মৈনাক তো তাকে মেনে নিতে প্রস্তুত তাও কেন? এসবই বসে বসে ভাবছিলো মৈনাক | অপর্ণাকে সেদিন কোর্টে দেখার পর থেকেই মৈনাক একবার তার সাথে দেখা করতে চায় কিন্তু আজ আর সেটা সম্ভব না | ওরা একে অপরের প্রতিপক্ষ মামলাগত কারণে | তার ওপর অপর্ণার প্রতি স্বামী হিসেবে নিজের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তাকে লজ্জিত করে | তাই আজ জামাইবাবুর থেকেই অপর্ণার যাবতীয় খোঁজ সে নেবে |

…..আজ অনেকদিন পর সারাদুপুর শালা – জামাইবাবুর আড্ডা চলবে | গত কয়েকবছরে এই চিত্রটা বাড়ির সবাই ভুলতে বসেছিল | এককালে সুপ্রতীক বাড়ি আসা মানেই মৈনাক এর পোয়া বারো | সারাদিন জামাইবাবুর সাথে বাড়ির পেছনে বাড়ির পুকুরে মাছ ধরা, গাড়ি নিয়ে কাছে পিঠে যাওয়া এসবই চলতো | মৈনাক নিজের যাবতীয় কথা সব বলতো সুপ্রতীককে | মল্লিকার সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল সুপ্রতীকের |

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

—সেরাতে যখন অপর্ণার সাথে মৈনাক ওভাবে ব্যবহার করলো তখন মনপ্রভা একটাই সমাধান পেয়েছিলো সুপ্রতীক | কিন্তু সুপ্রতীক আসবে শুনে মৈনাক নিজেকে কাজের মধ্যে এতটাই ব্যস্ত করে রাখলো যাতে জামাইবাবুর মুখোমুখি তাকে না হতে হয় | যতদিন বাড়িতে সুপ্রতীক ছিল মৈনাক রাতেও চেম্বারে থাকত | অপর্ণার বেহুঁশ জ্বরের সময় ও মৈনাক দেখতে যায়নি | জ্বর কমলে সুপ্রতীক অপর্ণার সাথে কথা বলে স্বাভাবিকভাবেই |

অপর্ণার মনে তখন সেই রাতের প্রভাব এতটাই পড়েছিল যে সে দিনদিন চুপচাপ হয়ে যাচ্ছিলো | মৈনাক তাকে ভালোবাসে না সে জানে, কিন্তু এতটা ঘৃণার পাত্র কেন সে তা একবার সুপ্রতীককে জিজ্ঞেস করলে সুপ্রতীক ও কোনও জবাব দিতে পারে না |

— ফিরে যাওয়ার দুদিন আগে বাধ্য হয়ে সুপ্রতীক নিজেই চেম্বারে গিয়ে মৈনাকের সাথে কথা বলে | মৈনাকের সাথে কাজ নিয়ে কথা বলতে বলতেই তার নতুন স্ত্রী এর সাথে কেমন সময় কাটছে জানতে চাইলে মৈনাক বিরক্তির সাথে উত্তর দেয় তাকেও | সুপ্রতীক শেষ অবধি শুধু বলে ”বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো আর কিছুই করার নেই, তুমি নিজেই রাজি হয়েছিলে বিয়েতে বরং ওর মতামতটাই কেউ নেয়নি – মেয়েটি অসহায় ওর মা নেই বাবা দায়িত্বজ্ঞানহীন – ওর যদি কেউ থেকে থাকে তা কেবল তুমিই আছ, ওর ভরসা হয়ে দাঁড়াও, ও ভালো মেয়ে |”

মৈনাক জানিয়ে দেয় সুপ্রতীককে, তার পক্ষে মল্লিকার জায়গায় ওই মেয়েটিকে বসানো সম্ভব নয় | আর অপর্ণা মিথ্যে বলছে | যা হয়ে গেছে তার জন্যে তার মা দায়ী, সে নিজে নয় | এমন উত্তর শুনে সুপ্রতীক কোনও কিছু না বলে চলে যায় | সে বোঝে মৈনাক এখন সবরকম বোঝানোর উর্দ্ধে চলে গেছে |

এদিকে আরেক বিপত্তি বাধে ইন্দ্রানী সুপ্রতীকের ফিরে যাওয়ার দিন যত এগোয় অপর্ণা ততই ইন্দ্রানীকে আঁকড়ে ধরে | কিছুতেই ছাড়তে চায় না তাকে | সুপ্রতীক বাধ্য হয়ে একাই ফিরে যায় | মনপ্রভা অপর্ণার ব্যাপারে নিজেকেই দোষারোপ করে চলেন | সুপ্রতীক যাওয়ার পর মৈনাক ও মগ্ন হয়ে ভাবতে থাকে সে যা করেছে তা ঠিক না ভুল!

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

ওদিকে অপর্ণা আস্তে আস্তে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে | ঐটুকু মেয়ে তার ওপর গ্রামের | এতো কিছু সে জানবে কি করে? ইন্দ্রানীর খুব রাগ হয় নিজের ভাই এর ওপর | তার থেকেও বেশি রাগ হয় নিজের মা এর ওপর | ছেলে ছেলে করেই মনপ্রভা ছোট থেকে একটু ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন | ছেলের দোষ ধরার সময় খানিক অন্ধ হয়ে যান |

–ইন্দ্রানী অপর্ণার আরো কাছের হওয়ার জন্যে মৈনাকের আর তার নিজের ছোটবেলার গল্প শোনাতে থাকে | কিন্তু অপর্ণা সে রাতের পর থেকে সবসময় চুপচাপ থাকে | মৈনাককে দূর থেকে দেখলে ভয়ে লুকিয়ে পড়ে | ব্যাপারটা মৈনাক ও লক্ষ্য করে | বাধ্য হয়ে ইন্দ্রানী তার মা এর সাথে আলোচনা করে অপর্ণাকে একজন মনের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি অপর্ণাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে বলেন | এই কাজটা মৈনাক করলে সবচেয়ে ভালো হত কিন্ত সে তো রাজিই হবে না | কাজেই বাধ্য হয় ইন্দ্রানী নিজের সাথে অপর্ণাকে আলিপুরদুয়ার নিয়ে যেতে | মনপ্রভা না করেননি এতে | অপর্ণা চলে যায় আলিপুরদুয়ার |

…..প্রকৃতির সানিধ্যে এসে অপর্ণা ধীরে ধীরে ঠিক হতে শুরু করে | সুপ্রতীক আর ইন্দ্রানীর কোনও সন্তান নেই | কিন্তু স্বামী-স্ত্রী র মধ্যে কি যে অগাধ ভালোবাসা সেটা অপর্ণা অনুভব করতো | দেখে খুব ভালো লাগতো | মৈনাকের কথা মনে পড়ে অপর্ণার | ওই রাগী মুখটার আড়ালে একটা অন্য মানুষকে যেন ও দেখতে পায় | কিন্তু এখানে আসার পর প্রায় একমাস হতে চললো তাও মৈনাক একবারও তার খোঁজ নেয়নি | অপর্ণার মনে একটা শূন্যতা তৈরী হয় | উদাস হয়ে দূরে চেয়ে থাকে | আগের থেকে কথা একটু আধটু বলে | সুপ্রতীক মাঝেমধ্যেই ছোট গিন্নী বলে নিজের কাজের গল্প শোনায় অপর্ণাকে | অপর্ণাও মন দিয়ে শোনে সেসব গল্প | তার ইচ্ছে হয় আবার পড়াশোনা করার |

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

— ইন্দ্রানীর কাছ থেকে মল্লিকার ব্যাপারে জেনেছে অপর্ণা | মৈনাক মল্লিকাকে ভালোবেসে “মলি” ডাকতো | মলি চলে যাওয়ার পর থেকেই মৈনাকের এমন পাগল পাগল দশা | সে কাজের মধ্যেই বেঁচে আছে | চলমান যন্ত্রের মতো সে শুধু কাজ করে | কোনোদিকে খেয়াল রাখে না – কিন্তু মৈনাক ছিল হাসি খুশি মানুষ – এমনিতে কম কথা বললেও মিশুকে ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিল – ছোট থেকে ওকালতি করার বিশেষ ইচ্ছে না থাকলেও পরবর্তীকালে বাবার কথায় এই পেশার সাথে যুক্ত হয় | মৈনাক খুব ভালো আঁকত | মলি চলে যাবার পর সেসবের পাঠ চুকেছে |
স্টাডি রুমে মলির ছবিটা মৈনাকের নিজের হাতে আঁকা | ওটা মলিকে প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে মৈনাক দিয়েছিলো | দুজন যেন দুজনের জন্যেই তৈরী হয়েছিল | অগাধ ভালোবাসা ছিল একে অপরের প্রতি |

বিয়ের দুবছরের মাথায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মল্লিকা মারা যায় | মৈনাক তখন কাজের জন্যে এলাহাবাদে | একটু একটু করে সবে পসার শুরু হয়েছে | হঠাৎ ঝড়ে ওর জীবনটা ওলোট পালট হয়ে যায় | নিজেকে একটা শক্ত আবরণে ঢেকে রেখে যাহোক করে বেঁচে আছে |
মল্লিকার সাথে মৈনাকের আলাপ হয় ওদেরই এক বন্ধুর বিয়েতে | তারপর প্রেম পর্ব | মল্লিকার বাবা প্রফেসর, মা ফ্যাশন ডিসাইনার | মল্লিকা নিজেও ছিল তার মা এর মতো ফ্যাশন ডিসাইনার | আধুনিকা, সুন্দরী, শিক্ষিতা, মার্জিত একেবারে বসু ভিলার আদর্শ বৌ | আর মৈনাকের চোখের মণি |

—কিন্তু যেদিন দুর্ঘটনাটা হয় সেদিন ওর কাজে যাওয়ার সময় ড্রাইভার ছুটিতে থাকায় বাড়ির গাড়ি না নিয়ে রাস্তা থেকে ট্যাক্সি ধরে বেড়িয়ে যায় | একটা বাসের সাথে ট্যাক্সিটার রেষারেষি করতে গিয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটে | মৈনাক ফিরে এসে ওর মল্লিকার সাদা চাদরে ঢাকা শরীরটা দেখেছিল | মৈনাক একফোঁটা চোখের জল ফেলেনি সেদিন | পাথরের মতো দাঁড়িয়ে দেখেছিলো ওর মলির শরীরটা পুড়ে যেতে | সেই যে চুপ করে গেল আর কথা বলতো না কারোর সাথে | একমুখ দাড়ি নিয়ে বসে থাকতো | জীবন থেকে বাঁচার ইচ্ছেটুকু চলে গেলো | সারাদিন শুধু কাজে ডুবে থাকলো | মদ ধরলো | চোখের সামনে ছেলের এরকম অবস্থা কোন মা মেনে নিতে পারে | মনপ্রভাও পারেনি | সব শুনে অপর্ণার চোখে জল চলে আসে |

ইন্দ্রানী অপর্ণাকে ওর পড়াশোনার ব্যাপারে জানতে চাইলে অপর্ণা সব খুলে বলে | সব শুনে ইন্দ্রানী অপর্ণাকে আবার পড়াশোনা শুরু করার কথা বলে | অপর্ণা নিজেই ইন্দ্রানী আর সুপ্রতীককে জানায় সে আইন নিয়ে পড়তে চায় | ভবিষ্যতে ওকালতি করার ভীষণ ইচ্ছে তার | শুনে ইন্দ্রানী আর সুপ্রতীক ভীষণ খুশি হয় | সুপ্রতীক বুঝতে পারে এই মেয়েই পারবে মৈনাক বসুকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে | অপর্ণা ইন্দ্রানীর বাড়িতে থেকেই আবার পড়াশোনা শুরু করে | তাকে যে পারতেই হবে | নিজের সম্মান আদায় করে নিতেই হবে |

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

মৈনাক ইন্দ্রানীর কাছ থেকে পরে খবর পেয়েছিলো অপর্ণা আইন নিয়ে পড়াশোনা করছে যদিও এবিষয়ে জানার তার খুব একটা আগ্রহ ছিল না | এরমধ্যে গ্রামে অপর্ণার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হলে চিঠি আসে বসু ভিলায় | চিঠিটা সেদিন বাড়ির কাজের লোক মৈনাকের হাতেই দেয় | বিয়ের পর একবারও মৈনাক সে মুখো হয়নি | কিন্তু এবার কৌতূহলবশত কিছু জানার জন্যে অদৃষ্টের টানেই একপ্রকার গ্রামে অপর্ণাদের বাড়ি যায় | সেখানে দেখে অপর্ণার বাবা মৃত্যুশয্যায় | মেয়ের বিষয়ে সব ঘটনা সেদিন মৈনাককে খুলে বলে | মৈনাক অবাক হয়ে যায় সেটা শুনে যে অপর্ণা সত্যি কিছুই জানত না | সম্পূর্ণ দোষ তার বাবার | যেমন তার নিজের মা এর ক্ষেত্রে |

এরপর অপর্ণার বাবার হাতে কিছু টাকা দিয়ে মৈনাক ফিরে আসে বসু ভিলায় | সারাদিন ভাবে যেদিন অপর্ণা তার দিদি ইন্দ্রানীর সাথে চলে যাচ্ছিলো | একবার শুধু তাকে বলতে এসেছিলো | চোখে একরাশ ভয় নিয়ে | সেদিন তার স্টাডি রুম এর বাইরে দাঁড়িয়ে বলেছিলো “আমার কেন দোষ নেই আমি সত্যিই কিছুই জানতাম না | ” মৈনাক সিগরেট খেতে খেতে শুধু আড়চোখে একবার দেখেছিলো কিছুই বলেনি |

… অপর্ণাকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মৈনাক কোনও মন্তব্যই সেদিন করেনি | মনে মনে চেয়েছিলো অপর্ণা বাড়ি থেকে, ওর চোখের সামনে থেকে চলে যাক | কিন্তু পরবর্তী সময় অপর্ণার বাবার কাছ থেকে সব জানার পর এক তীব্র অপরাধবোধে ভুগতে থাকে মৈনাক | একেই ওইটুকু মেয়ে বয়সে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট তার চেয়ে এর ওপর এভাবে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে তার বাবা | মৈনাক নিজের ব্যবহার এর কথা মনে করে নিজেকেই ভৎসনা করে | মল্লিকার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা |

…. অপর্ণার ছবি নেই বিশেষ ওই বৌভাতের দিনের কয়েকটাই যা আছে – সেগুলো মন দিয়ে দেখে মৈনাক | এই প্রথম মৈনাক অপর্ণাকে মন দিয়ে দেখলো | নিষ্পাপ চোখ দুটো দেখে বড়ো মায়া হয় মৈনাকের | কিকরে পারলো সে এতো নিষ্ঠুর হতে?

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

এদিকে অপর্ণা কলেজে ভর্তি হবার পর থেকেই মন দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে | এরই মধ্যে তীর্থর সাথে অপর্ণার আলাপ হয় কলেজে | সেখান থেকেই বন্ধুত্ব | অপর্ণা নিজেকে সবসময় একটু গুটিয়ে রাখতো | সবার সাথে মেলামেশা করতে পারতো না | অপর্ণার কলেজের কেউই জানতো না সে বিবাহিতা | সুপ্রতীক – ইন্দ্রানী সবাইকেই জানিয়েছিল তাদের এক আত্মীয়র মেয়ে এখানে থেকে পড়াশোনা করে | ছোট জায়গা সবাই তাই জানতো |

কোচিং ক্লাসের নোটস সব কিছুতেই অপর্ণা তীর্থকে সাহায্য করতো | তীর্থ কলেজে যেত ঠিকই কিন্তু ইউনিয়ন রুমে কাটাতো বেশিক্ষন | মাঝে মধ্যে ক্লাসে আসতো | আগাগোড়াই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল | আসলে তীর্থ মানুষের জন্যে কিছুই করতে চাইতো | তীর্থর বাড়িতে শুধু মা আছে বাবা অন্য জায়গায় সংসার পেতে চলে গেছে | তার মা বাড়িতে খাবার হোম ডেলিভারি দেয় | তীর্থ মনে মনে অপর্ণাকে পছন্দ করে সেটা জানায় | প্রথমে অপর্ণা রাগ করে বেশ কয়েকদিন কথা বন্ধ করলেও পরে তীর্থ নিজের এসে ঠিক করে সব | অপর্ণা সব কথা জানায় তীর্থকে |

তীর্থ ভীষণ কষ্ট পেলেও অপর্ণাকে বুঝতে দেয় না শুধু বলে যদি কখনো কোনও সমস্যা হয় তার দরজা অপর্ণার জন্যে চিরকাল খোলা থাকবে | কিন্তু অপর্ণা নিজের প্রতিজ্ঞায় অবিচল | শুধু বাড়ি এসে ইন্দ্রানীকে তীর্থর ব্যাপারে জানালে, ইন্দ্রানী অপর্ণাকে বলে জীবনে এমন কোনও ভুল যেন না সে করে যাতে তার নিজের বিবেককে জবাবদিহি করতে হয় | ইন্দ্রানী বিষয়টি সুপ্রতীককে জানালে সে বলে অপর্ণার ওপর তার ভরসা আছে |

এদিকে ধীরে ধীরে সময় কাটলো | অপর্ণা আর তীর্থ ভীষণ ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো একে অপরের | তীর্থর বাড়ি ও অপর্ণা গিয়েছিলো | যদিও ব্যাপারটা ইন্দ্রানীর সেদিন খুব একটা ভালো লাগেনি | এরপর থেকে ইন্দ্রানী অপর্ণাকে ছেলেটির সাথে খুব বেশি মেলামেশা করতে দিতে চাইতো না | যদি অপর্ণা কোনও ভুল করে বসে | বছর কাটতে লাগলো এক এক করে | তীর্থ আস্তে আস্তে দলের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো | ফাইনাল ইয়ারে অপর্ণা পরীক্ষায় বসলো ঠিকই কিন্তু তীর্থ দলের কাজের জন্যে বসতে পারে না | কলেজ ছাড়ার পর অপর্ণার সাথে তার যোগাযোগ ফোনেই হত | ধীরে ধীরে সেটাও কমলো | আসলে তীর্থ নিজে থেকেই সরে গেছিলো সেদিন কারণ সে জানত অপর্ণাকে ফিরে যেতে হবে মৈনাকের কাছে | তাই মনের ভালোবাসা মনে রেখে সে নিজের কাজ নিয়ে নতুন উদ্যোমে লেগে পড়লো |
অপর্ণার পরীক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্ট বেরোলে খুব ভালো ফল করে |

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

সুপ্রতীকের কাছে থেকে হাতে কলমে সব শেখে অপর্ণা | সুপ্রতীকের সাথে প্রতিদিন কোর্টে গিয়ে বসে দেখত কোর্টের কাজ | এভাবে কয়েক বছর কেটে গেলে অপর্ণা কলকাতায় চলে আসে কিন্তু বসু ভিলায় ফেরে না | সে সুপ্রতীকের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু কিরে সব ব্যবস্থা সুপ্রতীক করে | যদিও এ বিষয়ে ইন্দ্রানী নিমরাজি ছিল তাও অপর্ণার কথা ভেবে তার সিদ্ধান্তে সায় দেয় |

এরপর মৈনাকের কাছে অপর্ণার বাবার মৃত্যু সংবাদ আসে | সে আরেকবার সেই গ্রামে যায় | ফিরে আসার পর কাউকে এ সংবাদ সে জানায়নি এমনকি অপর্ণাকেও না | এতগুলো বছরে দিদি জামাইবাবু দু একদিনের জন্যে আসলে নিজেকে চেম্বারে বন্দী রাখত | অপর্ণা ওকালতি পড়ছে জেনে প্রথমে একটু অবাক হলেও বিশেষ গুরুত্ব দেয় না | কিন্তু অপর্ণার বাবার সাথে দেখা করার পর থেকে মৈনাকের অপর্ণা সম্পর্কে ধারণার খানিক বদল ওদের শেষ হতে যাওয়া সম্পর্ককে নতুন আলোর দিশা দেখাতে শুরু করে | অপর্ণা কলকাতায় তার ই জামাইবাবুর ফ্ল্যাটে থাকে | মৈনাকের ইচ্ছে করে একবার যাওয়ার | চরম দ্বন্দ্ব নিয়ে নিজের মনকে বোঝায় সে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য | তাই ওই মেয়েটিকে আইনত মুক্তি দেওয়াই হয়তো তার উচিত কাজ হবে |

❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤

(চলবে )

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ