যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৬৩
আফনান লারা
‘আচ্ছা যদি আমি ভুল না হই,তুমি কি রিদম?তিথির ছোট ভাই?ঐ যে কাইল্লা করে,এখন তো সাদা।ঐ যে পিচ্চি করে এখন যদিও লম্বা হইছো ‘
‘জ্বী,আমিই সেই’
‘বাহ বাহ,মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ!দেশে এসেছো ভাল করেছো। তা আর কটাদিন পর আসতে পারলেনা?পিংকি আর তোমাকে নিয়ে আমার যে সন্দেহ ছিল তা দূর হতে আজকের দিনটাই দরকার ছিল’
‘ওসব কিছুনা,আমি পিংকিকে বোনের চোখে দেখি’
‘তাই নাকি,বেশ বেশ!তবে খুব ভাল।তবে আজ বিয়েতে আসার দরকার নাই,বোন থেকে অনেকে বউ বানিয়ে ফেলে।যুগের বিশ্বাস নাই কোনো’
রিদম হাসি দিয়ে চলে যাওয়া ধরতেই গিয়াস সাহেব ওকে ঝাপটে ধরে বললেন,’আহা মজা করেছি,চলো তো!আজ তোমায় স্পেশাল বাঙালিয়ানা খাবার খাওয়াবো।বিদেশের সাদা খাবার খেয়ে খেয়ে তোমার চামড়াও সাদা হই গেছে।আচ্ছা ওরা কি তরকারিতে হলুদ দেয়না?হলুদ খেলে ফর্সা হয় জানতাম কিন্তু হলুদ না খেয়ে এত ফর্সা হওয়া যায় সেটা তো জানতাম না।আজ থেকে আমি হলুদ ছাড়া তরকারি,ডাল খাবো’
‘না ব্যাপারটা তা নয়।তারা হলুদ খাবার খায় তো!কে বলেছে খায় না?’
‘আরে খায়না ওরা।আমি জানি।এসো ভেতরে এসো।তোমার সাথে আলাপ করে দিবো আমাদের পান্নার হবু জামাইর সাথে’
এটা শুনে রিদমের পা আটকে যায়।সে আর কদম ফেলেনা।চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ওখানেই।
‘কি হলো?এসো’
গিয়াস সাহেব জোর করে ওকে টেনে সাবিদের কাছে নিয়ে আসলেন এরপর সাবিদের ঘাড়ে হাত রেখে বললেন,’সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সে।আমার ভীষণ পছন্দ ছেলেটা।মজার কথা বলে,আর বড় কথা হলো সে আমার পান্নাকে বড়ই পছন্দ করে।’
রিদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,সাবিদ হাত বাড়িয়ে ওর সাথে হাত মেলালো এরপর ওর পরিচয় জানতে চাইলো।
‘আমি রিদম……’
‘চিনলাম না,পিংকি ভাবীর কি হন?’
‘আরেহ আমাদের প্রতিবেশী সে,খুবই কাছের তারা।’
“ওহ হো!নাইস টু মিট ইউ রিদম,তা আপনি কি করছেন এখন?’
‘সিনিয়র ম্যানেজার ‘
“কোন কোম্পানি? ‘
রিদম কিছু বলতে যাবে তার আগেই গিয়াস সাহেব বলে উঠলেন,’ইশানের কোম্পানিতে না তো?ওমাগো!এত বড় পর্যায়ে চলে গেছো তুমি?গাড়ী কয়টা তোমার?’
রিদম কোনো কিছু না বলেই চলে যাওয়া ধরলো ঠিক তখনই তার সামনে দিয়ে পান্নাকে যেতে দেখে,হাতে ডালা নিয়ে সে বাসার ভেতর যাচ্ছিল।রিদম রাগ করে ওদের বাসা থেকে চলে গেছে।তানিয়া বাসায় সাজছিল বিয়েতে আসার জন্য।রিদমকে হনহনিয়ে এসে রুমে ঢুকে দরজা লাগাতে দেখে সে বাইরে থেকে জানতে চাইলো কি হয়েছে।রিদম কোনো উত্তর দেয়না।
তানিয়া ও আর জানতে চায়নি,তবে বুঝতে পেরেছে পান্নাদের বাসায় কিছু একটা হয়েছে।মা বলেছিল রিদম তখন পান্নাদের বাসার দিকে গিয়েছিল।
—-
‘রিদম কোথায়?’
‘দরজা বন্ধ করে বসে আছে’
‘পান্নাকে নিয়ে কিছু হয়েছে?জানিস?’
‘না রে টুকু!আচ্ছা আমি এখন যাব তো বিয়ে খেতে,গিয়ে খবর আনবো।তোরা কবে আসবি?’
‘আসবো,তোর ভাইয়া সময় করে নিক’
——–
পান্না এতই ব্যস্ত ছিল যে সে তখন রিদমকে দেখতে পায়নি।কিন্তু সে জানতে পেরেছে রিদম এসেছিল,তার মানে নিশ্চয় সাবিদকেও দেখেছে।সে কি জেনেছে সাবিদের সাথে ওর বিয়ে হবার কথা চলছে?’
‘পান্না?’
‘আপু!এসেছো।এত দেরি করলে কেন?’
‘ওসব ছাড়ো।আগে বলোতো রিদমের কি হয়েছে?
‘কি হয়েছে?’
‘সে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে।বুঝলাম না কি হলো,কিছু বলছেও না।’
পান্না বুঝে গেলো রিদম সব খবর পেয়ে গেছে।সে হাতের কাজ সেরে রিদমদের বাসায় চলে আসলো ওর সাথে এই নিয়ে কথা বলতে।কলিংবেল চাপার অনেকক্ষণ পর বুয়া এসে দরজা খুলে দেয়।পান্নাকে দেখেই বুয়া অন্য কাজে চলে গেছে।পান্না বুয়ার পিছু পিছু এসে জানতে চাইলো রিদমের আম্মু কোথায়।বুয়া জানায় রিদমের আম্মু ছাদে গেছেন।
পান্না এবার রিদমের কথা জানতে চায়।বুয়া বলে সে জানেনা।তাই পান্না নিজেই ওকে খুঁজতে থাকে।রিদমের রুমের বিপরীতে একটা করিডোর আছে,যেটা সোজা বাসার পিছনের দরজা অবধি যায়।পান্না রিদমকে খুঁজতে খুঁজতে সেই করিডোর দিয়েই চলছিল।
‘আমাকে খুঁজছো?’
রিদমের গলার স্বর খুব কাছ থেকে পেয়ে পান্না আমচকা ভয় পেয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।করিডোরের মাঝ থেকে রিদমের বারান্দা।সে বারান্দাতেই ছিল।
‘না মানে হ্যাঁ,’
রিদম রুম থেকে বের হয়ে আরও কাছে এসে দাঁড়ায় এর কিছুক্ষণ পর পান্নার সামনের দোয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
‘তুমি এত হাঁপাচ্ছো কেন?আমি তো এখনও তোমায় ধরলামই না’
এটা শুনে পান্না ঢোক গিললো।রিদম হাত ভাঁজ করে বলে,”চুমু ও খেলাম না আর গলা শুকিয়ে গেলো?’
পান্না এবার চোখ বড় করে রিদমের সামনে থেকে একটুখানি সরে দাঁড়ায়।
‘একা একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে খুঁজতে,একা বাসায় এসেছো।এসব হওয়া কি স্বাভাবিক নাহ?’
‘হ্যাঁ,না মানে না।আপনি তো আত্নীয়’
‘নাহ,আমি তোমার আত্নীয় না।প্রতিবেশী।’
‘আপনি রাগ করেছেন কেন?’
‘কেন?কেন বলোতো?আমার কি রাগ করা উচিত না?’
‘আপনি ওভাবে কথা বলছেন কেন?আমি কি করে…….’
রিদম পান্নার দুপাশে দুহাত দিয়ে দাঁড়ায় এরপর বলে,’বলো!কথা শেষ করো’
‘আমি কিছুই করিনি,তবে আমার উপর রাগ……’
রিদম তার ঠোঁট পান্নার শুস্ক চুলে বোলাচ্ছিল।এরপর আবার বললো,’কথা শেষ করো পান্তুয়া ‘
‘আমার উপর রাগ করে আছেন কেন?’
‘তোমার দোষটা কি সেটা আগে খুঁজে বের করো এরপর আমায় খুঁজতে এসো’
এটা বলে রিদম পান্নাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।পান্না দম ফেলে ওর পিছু পিছু এসে বলে,’বিয়েতে আমার মত নেই,বাবা তার পরেও জোর করছেন’
‘তোহ?অন্য মেয়েদের মতন পরিবারের চাপে বিয়ে করে নেবে?আমাকে দেবদাস বানাবে?তা তো হবেনা,আমি দেবদাস নই আর তুমিও পারও না।আমি রিদম!আমাকে যদি বিয়ে নাই করো তবে চিরজীবন কুমারিই থেকে যাবে কোনো সাবিদের ঘরের বউ আর হতে পারবেনা।কি করে হও আমিও সেটা দেখবো’
—-
‘কে এসেছে আসমা?’
‘ঐ বাসার পান্না এসেছে রিদম ভাইকে খুঁজতে’
মায়ের গলা শুনে রিদম পান্নাকে রেখেই নিজের রুমে চলে যায়।পান্না তখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে এক জায়গায়।
‘একি পান্না?কখন এলে?’
‘এই তো অল্প কিছুক্ষণ হলো,আমি আসি আন্টি’
এটা বলেই পান্না দৌড়ে চলে গেলো।আর থামলোনা।
——–
‘রিদম?পান্নার সাথে কথা হয়েছে তোর? সে নাকি তোকে খুঁজতেই এসেছিল ‘
‘জানিনা’
মা রুমের ভেতরে এসে রিদমের কপালে হাত বুলিয়ে বললেন,’তুই ফোন করেছিস কিনা,তোর কি অবস্থা,কদিন পর পর বাসায় এসে ইনিয়েবিনিয়ে জানতে চাইতো।মেয়েটার সাথে এসেই এত রাগ দেখাচ্ছিস কেন?’
‘ও খুব খারাপ’
‘খারাপ হতে পারে,জঘন্য তো নয়।যা মনমালিন্য হলো সব সমাধা করে নে।যোগ্য প্রার্থী হারালে,কাঁদতে হবে আড়ালে, বুঝেছিস?’
এ কথা বলে মা হাসতে হাসতে চলে গেলেন।রিদম বালিশ বুকের নিচে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলো আর ভাবতে থাকলো অনেককিছু।
——-
পিংকি আর সায়ানের বিয়েটা হয়ে গেছে।এখন তার চলে যাবার পালা।পান্নাকে দেখে পিংকি কান্না শুরু করে দিলো।যতই হোক,বোন তো!
সাবিদ লজ্জায় লাল হয়ে আছে পান্নাকে দেখে।সে পারছেনা ওখানেই লুকিয়ে পড়তে সবার সামনে থেকে।যেদিন থেকে মায়ের মুখে শুনেছে পান্নার সাথে তার বিয়ে হবে,সেদিন থেকে সে আর ধৈর্য্য রাখতে পারছেনা।কবে ভাইয়ার বিয়ে হবে আর কবে সে বিয়ে করবে।
পান্না চোখ মুছে বাসায় চলেই যাচ্ছিল ঐ সময় বাবা বললেন তাকে নাকি পিংকির সাথে ওর শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে।
পান্না অবাক হয়ে বলে,’আমি তো যেতে পারবোনা বাবা’
‘কেন?’
‘গেলে আগুন লাগবে’
‘কোথায় আগুন লাগবে?’
‘আমার শরীরে।আমি অসুস্থ বাবা,আমার ভীষণ জ্বর,কাশি,সর্দি’
‘সেকি?কবে থেকে?’
‘এখন থেকে ‘
পান্না কাশতে কাশতে বাসার ভেতর চলে আসে।
—–
সাবিদ বুঝতে পারলো পান্না ওর ভয়ে আসেনি,পান্নার জায়গায় তার খালাতো বোন নিশি গেছে পিংকির সাথে।পান্না রুমে এসে যেন দম ফেললো শান্তির।আজ যদি সে ঐ বাড়িতে যেতো তবে আগুন লাগতো রিদমের গায়ে,আর এই বাসায়।আজ ওর যে রুপ সে দেখে এসেছে,এর চাইতে বাজে রুপ সে দেখতে চায়না কখনও।
চলবে♥