যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৬১
আফনান লারা
সেই এলার্ম ঘড়িটার দিকে চেয়েই রিদম চলে গেছে।পান্নাকে শেষবার দেখারও ইচ্ছা পোষণ করে নাই,একই অনুভূতি কাজ করছিল ওপার থেকেও।পান্না বুঝি জেনে গেছিলো,রিদম ও তার মতই শেষবার দেখা করা নিয়ে ভীত!
পিংকি তার বাবার সাথে ঠিকই এয়ারপোর্ট অবধি পৌঁছে গেছে।রিদম,তিথি,ইশানকে বিদায় ও জানিয়েছে।রিদমের মা অনেক কেঁদেছিলেন,দেশে তার কাছে থাকলো শুধু তানিয়া।বুকের দুটো ধনই একসাথে চলে গেলো বিলেত।
তিথির প্রথমবার যেতে কষ্ট লাগছিল এবার আর সে কষ্ট লাগেনি,তবে রিদমকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল এই বিদায়বেলার এফেক্ট তার উপর পড়েছে সব চাইতে বেশি।মা বাবা বুঝলেন তাদের ছাড়া যেতে বুঝি ওর কষ্ট হচ্ছে,কিন্তু নাহ,তার মন অন্য কিছু বলছিল।সে জানে এই যাওয়া অনেক দীর্ঘ হবে!
মা বলেছেন দু তিন বছর পর পর এসে দেখা করতে তিথি ইশানের সাথে।কিন্তু রিদম মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যাচ্ছে সে ঠিক সেইসময়ে ফিরবে যে সময়ে তার ফেরা দরকার।
জাপানে পাড়ি জমানোর পর তিথি আর ইশান তাদের সংসারটাকে গুছিয়ে নেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।রিদমের এডমিশন হয় তাদের বাসা থেকে অনেক দূরে।স্কুলটা অনেক নাম করা হওয়ায় ইশান সিদ্ধান্ত নেয় রিদমকে সেখানে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিবে।রিদম এখন আর বাচ্চা নয় যে এত ভাবার কিছু আছে,তাছাড়া এ বয়স থেকেই তাকে শক্ত হতে হবে।সব জানতে হবে,শিখতে হবে।ঐ স্কুলে বোর্ডিং নেই বলেই ঝামেলাটা বেড়ে গেলো।
তার পরেও ইশান নিজ দায়িত্বে সবটা করে ওকে সেখানে ভর্তি করায়,তার পেছনে একমাত্র কারণ ছিল রিদমের সম্মতি।সে চেয়েছিল একা থাকতে।
রিদমকে একা ছেড়ে দিয়ে আসতে কষ্ট হচ্ছিল তিথি আর ইশানের,কিন্তু তাদের তো এটা করতেই হতো।
সেইদিনটা ইশানের জন্য এত ব্যস্ততার একটা দিন ছিল যে সে বাসায় এসেই বিছানায় শুয়ে পড়েছিল।খাবার ও খায়নি।পরেরদিন সকাল সকাল তিথি প্লেটে করে কি যেন একটা এনে ইশানের বেডের সামনে টেবিলে রেখে চলে যায়।তিথির ডাক শুনে ইশান উঠে বসে,মনে পড়ে যায় আজ তার ফ্যাক্টরিতে যাবার কথা।তাই দেরি না করে দ্রুত উঠে বসে সে।এরপর পায়ে জুতোটা পরে দু কদম ফেলতেই তার চোখ গেলো টেবিলের উপর রাখা প্লেট টার উপর। সেটাতে প্রেগনেন্সি কিট রাখা।ইশান শুরুতে বুঝতে পারেনি এটা আসলে কি ছিল।সে চোখ ডলে ভাল করে ঘুরিয়ে দেখে এরপর তার হুশ আসলো এটা আসলে কি।
দুটো দাগ দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেছে।
পাশের রুম থেকে খিলখিল করা হাসি শোনা যাচ্ছে।ইশান পেছনে ফিরতেই তিথি দিলো এক দৌড়।
ইশান ওমনি বাহিরে এসে বলে,’গুড নিউজ জানিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস কেন?ধরা দিবিনা?’
তিথি হাসি আটকিয়ে দূরে থেকে বলে,’শেষ প্রতিশোধ এমন হবে তা ভেবেই হাসি পাচ্ছে অনেক,কি করি বলুন?’
——
হাসির ছটা দিয়ে কেটে গেছে পনেরোটা বছর।ইশান আর তিথির কোলজুড়ে এখন দুজন সন্তান।লেজিন ও ইকরা।
দুজন রাজকন্যা তাদের।তাদের স্কুল, তাদের লেখাপড়া, বিনোদন সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে ইশান আর তিথির।
তানিয়ার সংসারে টানা এক বছর টক ঝাল লেগে থাকলেও দু বছরে পা রাখার পর মিষ্টির দেখা মিলেছে। তার একটি রাজকন্যা আর একটি রাজপুত্র ও আছে।
তার সেই রাজকন্যার নাম আবার মিষ্টি রাখা হয়েছে।আর রাজপুত্র সে তো সবার ছোট সদস্য। বয়স চার বছর, নাম তার ভুলু।সে সব ভুলে যায়।ডাক্তার বলেছে আস্তে আস্তে এ রোগ সেরে যাবে,ছোট কালে এমনটা হতেই পারে,এই টুকুন ছেলের কি এরিস্টটলের তত্ত্ব মনে থাকবার কথা?
ভুলুর ভাল নাম আদিত্য।আদর করে তাকে সবাই আদি বলে ডাকে।যাই হোক শুরু করা যাক ইশান আর তিথির সংসার থেকেই।
ইশান অফিসের কাজ হোল্ডে রেখে লেজিনকে আনতে ওর স্কুলে গেছে,ওর এখনই ছুটি হবে।বাহিরে গেটের কাছে দাঁড়িয়েই সে অপেক্ষা করছিল ঠিক ঐ সময়ে তার ফোনে কল আসে অফিস থেকে।
ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জানায় সিনিয়র ম্যানেজার কাল থেকে অফিস আসছেনা,আজও আসেনি।
ইশান ঠিক আছে বলে অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে কল করে সিনিয়র ম্যানেজারকে।এই সিনিয়র ম্যানেজারই হলো রিদম।
সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে,গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে সে ইশানের ফ্যাক্টরিতে ভাল বেতনের চাকরি করছে।
রিদম ফোন ধরছেনা,তার ফোন বন্ধ,চারদিন আগে তার রিদমের সাথে কথা হয়েছিল,তখনও রিদমের কথায় মনে হয়নি সে ফোন বন্ধ করতে পারে, হঠাৎ কি এমন হলো যে ফোনই বন্ধ করে দিলো?
——–
রিদম বাংলাদেশে চলে এসেছে,তাকে একজনে খবর দিয়েছে আজ নাকি পান্নার বিয়ে।সে এসেই পান্নাদের বাসার সামনে হাজির হয়েছে।তাকে দেখে এখন কেউই চিনবেনা।
থ্রি কোয়াটার আর হাফ হাতা শার্ট পরা ছেলেটা এখন সাহেব হয়েছে,পরনে তার জিন্স আর টি শার্ট।হাতে ঝুলিয়ে রেখেছে ব্লেজার।আসার সময় কোনো ব্যাগও সে আনেনি।
শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে।মনের ভেতর আগুন জ্বলছে তার।
বিদেশ থেকে কত টাকা খরচ করে সে পান্নার জন্য কার্গোতে পার্সেল পাঠিয়েছিল,যাতে গিফট ছিল আর লেখা ছিল ‘আমার জন্য অপেক্ষা করবা পান্তুয়া’
আর সেই মেয়ে কিনা আর কটা দিন অপেক্ষা করতে পারলোনা!এর জন্য এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে সে রিজেক্ট করে আসছিল!নাহ!এভাবে সে ঠকাতে পারেনা!
রিদম ভেতরে ঢুকে যায়,এরপর পান্নাদের বারান্দা আর সুপারি গাছটা দেখতে থাকে।
—–
‘আম্মু,গাঁদা ফুলের পলিথিনটা আমি ফ্রিজের উপরে রেখেছি, জিসান ভাইয়াকে বলো’
‘ইশ আমি শাড়ীটা যে পরলাম খুলতেই ভুলে গেছি কাজের চাপে,নতুন বউয়ের শাড়ী পরে দেখার শখ ছিল বলে পরেছি আর খোলার কথাই মনে থাকলোনা,বউ দেখলে আমার উপর খুব রাগ করবে’
এই বলে শাড়ীর আঁচলের উপর থেকে সেফটিপিন খুলতেই পেছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরে মুখ চেপে ধরেই মুখে কিছু একটা বেঁধে দিয়ে রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে ফেললো।এটা রিদমই ছিল।
রিদমের চোখে আগুন জ্বলছে।।সে দরজা লাগিয়ে এক হাতে মেয়েটার গলা আর অন্য হাতে দুহাত একত্রে চেপে ধরে বললো,’এই রিদমের জন্য অপেক্ষা করলে মরে যাইতা তুমি?’
রিদম নাম শুনে মেয়েটার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।আজ বিয়ে হচ্ছে সেটা ঠিক হবে সেটা আসলে পিংকির,পান্নার নয়।রিদমকে যে খবর দিয়েছে সে ভুল খবর দিয়েছে,সে ভেবেছে এই বাড়ির মেয়ে মানেই পান্না,পিংকির কথা সে জানেনা,পিংকিকে চিনেও না।
পান্না চুপচাপ রিদমকে দেখছিল, বিদেশে থেকে সুন্দর হয়ে গেছে রিদম,আর কত যে লম্বা হয়ে গেছে সে!
পান্না মুগ্ধ হয়ে রিদমকে দেখেই যাচ্ছে,পান্নার শাড়ীর সেফটিপিন খোলা ছিল বলে ওর গায়ের থেকে আঁচল সরে যেতেই রিদম ওর হাত ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে দাঁড়ায়,এরপর চোখের পানি মুছে বলে,’কি লাভ হলো এত অপেক্ষা করে?এই প্রতিদান পেলাম আমি?’
পান্না আঁচল ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে মুখের বাঁধনটা খোলে।তার খুশির হাসি থামছিলই না।
রিদম আবার পেছনে ঘুরে বলে,’এটা ঠিক করলেনা!’
ওমনি ওপাশ থেকে পিংকি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,’পান্না দরজা খোল!আমার বিয়ের শাড়ীটা পাচ্ছিনা,তুই নিয়েছিস?যদি এখন তোর গায়ে দেখি তবে খুব খারাপ হয়ে যাবে!’
এ কথা শুনে রিদম যেন আকাশ থেকে পড়লো।পান্না মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’না বুবু!পরি নাই।এই তো গুছিয়ে দিচ্ছি’
রিদম ওমনি ছুটে এসে পান্নাকে খুব শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।যতটা শক্ত করে ধরলে তার পনেরো বছরের বাসনার অবসান ঘটবে ততটা শক্ত।
পান্নার মুখ ডুবেছিল রিদমের বুকে।পান্নার শরীর আগে যেমন তুলতুলে ছিল এখনও তাই।রিদমের ইচ্ছে করছিল তখনই ওকে বিয়ে করে কোলে তুলে নিয়ে আসতে আর সব ভালবাসা আজই ওকে বুঝিয়ে দিতে। পান্না যখন দেখলো পিংকি দরজাটাই ভেঙ্গে ফেলছে চেঁচামেচি করে, তখন সে রিদমকে নিজ থেকে সরানোর চেষ্টা করে ।কিন্তু রিদম ছাড়ার পাত্র নয়।সে পান্নাকে আরও শক্ত করে ধরে বললো,’ইংকি পিংকি,পংকি দূর হয়ে যাক,বিয়ে হয়ে যাক,বাচ্চা হয়ে যাক!আর আমার পান্তুয়ার বিয়ের সিরিয়াল শুরু করে যাক!’
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৬২
আফনান লারা
পিংকিকে দরজা খুলে দেবার পর পিংকি সবার আগে নিজের শাড়ীটা ভাল ভাবে দেখে নিচ্ছে তাতে কোনো ছেদ কিংবা ত্রুটি আছে কিনা যা দিয়ে এখন পান্নাকে আচ্ছামতো বকা যাবে।কিন্তু নাহ,শাড়ী যেমন করে ছেলেপক্ষ পাঠিয়েছিল তেমনই আছে,রঙটা বেশ দারুণ।লাল জবা ফোটার আগে কলি অবস্থায় যে রঙটা থাকে,একেবারে সেই রঙের শাড়ী তারা পাঠিয়েছে।এটা অবশ্য পিংকির কথায় নয়।
পান্না বলেছিল এই রঙে পিংকিকে অসাধারণ লাগবে। পিংকির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পান্নার কথায় প্রাধান্য দেয়,তার কারণ পান্নাকে তাদের অনেক পছন্দ,এদিকে পিংকিকেও পছন্দ।অন্যদিকে তাদের আবার দুটো ছেলে অবিবাহিত।বড় ছেলের বিবাহ সম্পন্ন হলেও বাকি দুজন এখনও আবিয়াতি।তাই মেজোকে দিয়েই তারা নামলো।মনে মনে অবশ্য ভেবে রেখেছে,ছোট টার বউ হয়েই পান্না এ ঘরে আসবে।তাকে হাতছাড়া করা যাবেনা।
কানাঘুষোয় বাবা জানতে পারে পিংকির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পান্নাকেও তাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চায়।তিনি জানতেন ইশানের প্রস্তাবের সেই ছেলের কথা। কিন্তু হঠাৎই মত বদলে ফেললেন।দুটো মেয়েকে চোখের সামনে দেখে রাখতে চান আর যতটা সময় তার কাছে বাকি আছে।আদরের পান্নাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিলে বছর বছরেও তার দেখা পাওয়া যাবেনা।তাই তিনিও মনে মনে রাজি।
পিংকি শাড়ীটা দেখা শেষ করে খেয়াল করলো পান্নার গাল দুটো লাল লাল হয়ে আছে।পিংকি ওমনি ওর গাল টিপে ধরে বললো,’কিরে কি হলো তোর?আমার ব্লাশ লাগিয়েছিস?’
‘না তো’
‘দেখি? ‘
পিংকি পান্নার গায়ের গন্ধ শুঁকে বললো,’কি রে!এত সুন্দর ঘ্রাণ আসছে কেন!উমমম এটা তো দেশি পারফিউম মনে হচ্ছেনা। কে দিলো তোকে বিদেশী পারফিউম? ‘
‘আহা বুবু,তৈরি হয়ে নাও না!দেরি হয়ে
যাচ্ছে।আমাকে নিয়ে ইনভেস্টিগেশন না করে নিজের কাজে মন দাও তো”
পিংকি ব্রু কুঁচকে শাড়ীটা তুলে চলে যায়।পান্না দম ফেলে ছুটে বারান্দায় এসে দেখে নিচে রিদমের সাথে একটা লোক কথা বলছে।মনে হয় রিদমকে চিনে ফেলেছে।
পান্না মিটমিট করে হাসছিল ওকে দেখে।
—–
‘তোর আদরের ছোট ভাই,কাউকে কিছু না বলে বাংলাদেশ চলে গেছে।ঐ টুকুন ছিল,এখান থেকে ওখানে একা যেতে পারতোনা।আর সে এখন একা একা ফ্লাইট ধরে দেশে পৌঁছে গেছে’
‘পৌঁছাবেই তো!পিংকির বিয়ে শুনলাম’
‘তো?রিদম তো পান্নাকে ভালবাসে,ওর কেবিনে পান্নার ছোটকালের ছবি দেখতে দেখতে আমি তিক্ত হয়ে ওর কেবিন চেঞ্জ করিয়েছি এক মাস হলো।’
‘বুঝেন নাই,সেই বলদ মনে করেছে হয়ত পান্নার বিয়ে’
‘ভেরি ইন্টারেস্টিং,আমাদের উচিত আগুনে তুষ ঢেলে দেয়া’
‘আপনার আর কাজ নেই?’
‘নেই তো তিথি, আপাতত কোনো ব্রিফিং নেই।হাতে ছুটি আছে।আওনের হাতে কাজটা সঁপে কদিনের জন্য সাপলুডো খেলে আসতে চাই,যাবি আমার সাথে?’
‘যেতে পারি,পান্নাকে দেখার ইচ্ছা করে।রিদম তো মনে হয় এই প্রথম দেখবে।এত গুলা বছরে আমরা গিয়ে গিয়ে ঘুরে আসলেও সেই গাধাকে একবারও নিতে পারিনি।সে পণ করেছিল গেলে চাকরি পেয়েই যাবে।কথাটা রেখেই ছেড়েছে।’
——
তানিয়া মাকে নিয়ে শপিং করতে এসেছে,পিংকির বৌভাতে পরার জন্য একটা শাড়ী কিনবে বলে।তার সব ওকেশানে নতুন শাড়ী লাগে।
‘ভাইয়া এটার দাম কত?’
‘এটা নিয়ে নিন ম্যাম,বিল পে হয়ে গেছে’
‘ওমা কে দিলো?রকিব?কিন্তু সে তো অফিসের কাজে কুষ্টিয়া গেছে।ওহ হো আমার কোনো গুপ্ত প্রেমিক আসলো নাকি?🙈’🐸
‘না ম্যাম,লোকটা আপনার ভাইয়ের বয়সী ছিল’
‘ভাইয়ের বয়সী!আমাকে কি আপনার আন্টি মনে হয়?আমার ভাই কি লোক হবে?আমার ভাই হবে পাঁচ বছরের শিশু,বুঝেছেন?’
‘তানিয়া চুপ করবি?তোর সিজারের পরে পেট যতটা বের হয়েছে,তার উপর তাড়াহুড়া করে বাসার জামা পরে এসেছিস।তোকে তো আমার চাইতেও বেশি বুড়া লাগছে দেখতে।’
দোকানদার মুখে হাত দিয়ে হাসছিল।
‘আপনারা হাসি বন্ধ করেন,নাহয় শাড়ী ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবো’
—-
শাড়ীটা প্যাকেট করে তানিয়া ওর মাকে নিয়ে শপিং মল থেকে বের হতেই দেখে একটা ক্যাব দাঁড়িয়ে আছে,ড্রাইভার ওদের বসতে বলছে।
‘না ভাই,আমরা এরকম উড়ে এসে জুড়ে বসা ক্যাবে উঠিনা।আপনি অন্য লোক দেখেন।’
‘আরে উঠ না,কত দেরি হয়ে গেলো। ভুলুকে ডে-কেয়ার থেকে আনতে হবে’
‘ঠিক আছে চলো,অবশ্য আমাকে আর কিডন্যাপ করেই বা কি হবে।আমার কাছে তো কিছুই নাই’
দুজনেই গাড়ীতে উঠতে গিয়ে দেখলো আগে থেকে একজন বসে আছে মুখের সামনে খবরের কাগজ ধরে।
কি আর করবে চেপেচুপে বসলো দুজন।লোকটা আসলে রিদম ছিল।
‘মা দেখো,ছেলেটার চুল আমাদের রিদমের মতন কাট করা দেখো ‘
‘এত জোরে ফিসফিস করিস না,ড্রাইভার ও শুনছে’
“ওহ আচ্ছা,মা দেখো ছেলেটার হাতের আঙ্গুল ও রিদমের মতন চিকন চিকন’
‘তুই মাইকিং করা বন্ধ করবি?লোকটা কি ভাববে?’
‘আচ্ছা ভাইয়া আপনার মুখটা দেখতে পারি?’
‘সরি টুকু’
‘আচ্ছা’
তানিয়া আচ্ছা বলে ভাবতে থাকে,টুকু নামটা তার খুব পরিচিত । এতই পরিচিত যে!
ও মাই গড!
তানিয়া এক লাফে জড়িয়ে ধরে রিদমকে।এরপর কান্না করতে থাকে।মা তখনও কিছু বুঝতে পারলেন না।
‘কিরে?লোকটা কে?’
‘তোমার অকর্মার ঢেঁকি!’
এটা শুনে মাও জড়িয়ে ধরলেন কাঁদতে কাঁদতে’
ড্রাইভার লুকিং গ্লাসে এই অবিশ্বাস্য চিত্র দেখে আপলুত হয়ে বললেন,’কি আস্টচ্ছ!কি আস্টচ্ছ!’
তানিয়া কান্না থামিয়ে বলে,’আস্টচ্ছ না আশ্চর্য হবে!’
——-
‘ভাল আছেন? ‘
‘জ্বী’
‘আমার বউ না হয়েই এত ভাল আছেন?’
‘আপনার বউ না হলে আরও বেশি ভাল থাকবো।’
‘আচ্ছা পান্না আমাকে দিয়ে তোমার এত কি সমস্যা? ‘
‘যে ঘরে আমার বোন বউ হয়ে গেছে,সেই ঘরে আমাকেও যেতে হবে এমন তো কোনো বিধিবিধান নেই’
‘অবশ্যই আছে,কিরোরেট বিবাহ করিবো আমরা দুজন’
‘কিরোরেট বিবাহ কি আবার?সরোরেট শুনেছিলাম’
‘কিরোরেট মানে ভাবীর ছোট বোনকে বিবাহ’
‘মা দেখোনা,এইই লোকটা আমাকে জ্বালাচ্ছে’
পান্না বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।এক পাগলের ভাত নাই আর নতুন পাগলের আমদানি!
—
‘ভাইয়া তোমার শালিকে পটানো আমার পক্ষে সম্ভব নাহ,এমন ভাবে কথা বলে যেন তার বিয়ে হয়ে গেছে,তাই চোখে মুখে সর্ষেফুল দেখছে।আর কোনো ছেলের প্রতি তার আগ্রহ কাজ করছেনা,করবেও না’
‘এত অধৈর্য্য হলে কি করে হবে সাবিদ?আমরা আছি তো।হয়ত সে লজ্জা পাচ্ছে’
পান্না গাল ফুলিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে হাতে বাটি নিয়ে সামনের দিকে চলছিল,মা বলেছে রুবি আন্টির বাসা থেকে কাঁচা হলুদ আনতে।কি কাজে যেন লাগবে।
সেটা নেয়ার জন্য পথ চলছিল পান্না হঠাৎ ওড়নায় টান লাগায় চেঁচিয়ে উঠে পান্না বলে,’আপনি এত বেয়াদব কেন? ছেসড়ার মতন পিছে পিছে ঘুরতে লজ্জা করেনা আপনার?’
এই বলে ওড়না ছাড়িয়ে পিছনে চেয়ে দেখলো রিদম দাঁড়িয়ে আছে’
‘আপনি?’
‘কাকে বললে এসব?কে বিরক্ত করে?’
‘নাহ কেউ না,’
‘বলো আমায়’
‘নাহ কেউ না।আপনি তানিয়া বুবুর সাথে বিয়েতে আসবেন না আজকে?বরপক্ষ তো এসে গেছে’
‘আসছিনা,আমার একটু কাজ আছে।তার আগে বলো কে বিরক্ত করে?’
‘কেউ না’
রিদম পান্নার কোমড়ে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলে,’আসলাম সবে,এখনই যাই যাই করছো?’
‘মানুষ দেখলে কি বলবে?’
‘বলবে ঐ দেখো রিদমের বউ যাচ্ছে,রিদমকে নিয়ে’
পান্না মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে।রিদম চলতে চলতে বলে,’যেই বিরক্ত করুক,অনুরক্ত করতে পারবেনা।বহুকাল আগে রিদম অনুরক্ত করে রেখে গেছে।’
‘খামোশ!!!!!’
পান্না আর রিদম থেমে গেছে।সামনে গিয়াস সাহেব দাঁড়িয়ে।
পান্নার চোখ কপালে,
রিদম ওর কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সেও রোবট হয়ে আছে।মনে হয় মাটির তলার পা থুক্কু পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।
‘উহঃ!চশমাটা কই!এই মেয়ে আমার চশমাটা খুঁজে দেবে?’
রিদম ফিসফিস করে বলে,’একি?আঙ্কেল তোমায় চেনেন না?’
‘বাবার চোখে ভাল দেখেন না দু বছর হলো,চশমা না থাকলে কিছুই দেখেন না’
রিদম দাঁত কেলিয়ে কাছে এসে গিয়াস সাহেবকে খপ করে ধরে চুমু একটা দিলো কপালে,এরপর চশমাটা তুলে ওনাকে পরিয়ে দিলো।
‘একি তুমি কে!বড় চেনা চেনা লাগছে।আচ্ছা এখানে তো একটা মেয়েও ছিল মনে হয়’
পান্না পালিয়েছে ততক্ষণে।
রিদম পান্নার ওড়না টান দিয়ে রেখে দিয়েছিল,মুচকি হাসি দিয়ে সে বললো,’নাহ তো!আমিই ছিলাম।এই যে আমার ওড়না’
‘এই ওড়নাটাও চেনা চেনা লাগছে।’
চলবে♥