যদি তুমি বলো পর্ব-৫৯+৬০

0
386

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৯
আফনান লারা

তিথি ইশানের রুমে এসে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল ঠিক সেখানেই ছিল ইশানের একটা পাঞ্জাবি।
এটা ইশান বের করে রেখেছে বুয়াকে দিয়ে ধোয়ানোর জন্য।
এটা সে কয়েকবার পরেছে,তাই পাঞ্জাবিটা থেকে ওর গায়ের তীব্র মিষ্টি একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছিল।
তিথি পাঞ্জাবিটা তুলে নিয়ে নাকের কাছে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখে।তার মনে হলো ইশান ওর সামনেই আছে।মুখের হাসিটা তার আরও গাঢ় হলো।
ইশান ওকে ধরতে রুমে এসে দেখে সে পাঞ্জাবি জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে রেখেছে।তাই সে ওর কাছে এসে দৃশ্যটা প্রাণ ভরে দেখে চলেছে। তিথি যে ওকে ভালবাসলে সবটা দিয়েই বাসবে এই নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না ইশানের।তাই এত কিছুর পরেও সে তিথিকেই বউ করে এনেছে,এত বাধা বিপত্তির পরেও।
ইশান তিথির হাতটা ধরে টান দিয়ে ওকে কাছে নিয়ে আসে।তিথি আচমকা ইশানকে দেখে হাত থেকে পাঞ্জাবিটা ছেড়ে দিলো।

‘কি??আমার পাঞ্জাবিতে কি আছে?’

‘না তো,কিছুই না’

‘তাহলে ওরকম করে গন্ধ শুকার মানে কি বুঝায় বল,আমিও একটু বুঝি’

‘না দেখছিলাম বাজে গন্ধ আসে কিনা,বুয়ার দিক ও তো ভাবতে হবে।উনি যদি দেখে তার মালিকের পাঞ্জাবি থেকে এরকম দূর্গন্ধ আসে তাহলে কি ভাববে?পুরা কলোনি করবে এই কথা দিয়ে।জানেন?’

‘তাই না??’

ইশান এবার তিথির দুহাত চেপে ধরে বলে,”আবার বল তো,কি কি বলছিলি?আসলেই কি এরকম গন্ধ আসছে?’

‘না না,মজা করলাম,সত্যি।ছেড়ে দেন।আর বলবোনা’
——
দুই দফা পলাশীর যুদ্ধ শেষ করে বাবা মা ঘুমোতে যাওয়ার পর তানিয়া আর রকিব ও রুমে চলে আসে।
তানিয়া আগের মতই শুয়েছিল, রকিব বসে বসে তার ফোনে ফ্ল্যাটটির সব ছবি দেখছিল আবারও।কাল যেহেতু টাকা জমা দিবে তাই ভাল করে শিউর হয়ে তারপরই টাকা হস্তান্তর করবে।

সকালে খুব ভোরে তানিয়া উঠে যায়।রকিব তখন ঘুমাচ্ছিল,রকিবকে সে এ একটা মাসে প্রচণ্ড রকমের ভালবেসেছিল,কিন্তু ও যে এমন কিছু করবে তা সে ভাবতেও পারেনি।এখন সে নিজেকে ২ রাস্তার মুখে আবিষ্কার করেছে,কোনদিকে গেলে ভাল হবে তাই ভাবছে সে।বাবা তাকে একবার বলেওনি এ কথা।বাবার কথা কি বলবো!ইশান ভাইয়াই তো বলেনি।পুরো ফ্ল্যাটের টাকা ইশান ভাইয়ার দেয়ার কথা ছিল।
আমাকে না জানিয়ে এটা করে তারা অন্যায় করেছে।অনেক বড় অন্যায়।আমি মাফ করবোনা তাদের।আর রকিবকে তো কোনোদিন ও না।

তানিয়া এসব ভাবতে ভাবতেই রুম থেকে বেরিয়ে দেখে মা আর খালা রকিবের জন্য সকাল সকাল খিচুড়ির আয়োজন করছেন।

‘বুঝছো মতি,আমার এই মেয়ের জামাইটাও একেবারে ইশানের মতই ভাল,কম কথা বলে।’

‘ভাল আর কিসের,যৌতুক চেয়ে বসছে’

‘সেটা তো বুঝলাম,এত বড়লোক ছেলে,এগুলা তো চাইবেই’

‘আপা ইশান ও কিন্তু বড়লোক,রকিবের চেয়ে অনেক বেশি টাকা পয়সা ওয়ালা।কই সে তো এক টাকাও চায় নাই,আরও গহনা শাড়ী দিয়ে তিথিকে মুড়িয়ে নিছিলো।রকিবরা এসব কি দিছে একবার নজর দিছেন?’

‘তাও ঠিক,তানিয়াকে যে নেকলেস টা দিছে ওটা একেবারে পাতলা।যাক ওসব আমরা চাইনা,তানিয়াও চায়না কিন্তু তারা যে এত দামী একটা কিছু চেয়ে বসলো এ কথা কি তানিয়ার জানার প্রয়োজন নেই?’

‘এখন জানালে,আপনার যে মেয়ে আপা!যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিবে’

‘কি যুদ্ধ বাঁধাবো খালা?’

এ কথা শুনে সবাই চুপ।মা হেসে কথাটাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন,’তুই এই পোশাকে থাকবি? কেমন বুড়া বেডির মতন লাগছে।যা এইসব বদলে গোসল করে সুন্দর একটা শাড়ী পরে রকিবের পাশে বসে থাক।

‘থাক! এত যত্নের কোনো কারণ আমি দেখছিনা তো’

‘ওমা আপা,আপনার মাইয়া কয় কি!নতুন জামাইকে নাকি যত্নের প্রয়োজন নাই।’

তানিয়ার আম্মু কাছে এসে ওর কান টেনে ধরে বললেন,’যা!যেটা বলছি ওটা কর।মানুষের কাছে হাসিরপাত্র বানাইস না আমাকে’
——
রকিব চোখ মেলে চশমা খুঁজতে থাকে।ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখে তার প্রিয়তমা ড্রেসিং টেবিলের কাছে গুন গুন করে গান গাইছে।গানটা তার পরিচিত,নতুন রিলিজ হয়েছে তবে ওর প্রিয়তমা যে লিরিক্সে গাইছে তা আসল গান নয়।সে গাইছিল,’যদি বিয়ে তোমায় কাঁদায়,তবে সংসারই কোথায় আর স্বামীই বা কোথায়’

রকিব উঠে বসে তাকায়।ঝাপসা চোখে গোলাপি রঙটাই বুঝতে পারলো আর তানিয়ার কালো চুল,এই দুইটা রঙ বুঝতে পারলেও ডিজাইন বোঝা মুশকিল হলো তার জন্য।তাই সে হাতিয়ে হাতিয়ে চশমা খুঁজতে ব্যস্ত এবার,
অনেক খোঁজার পর অবশেষে সে চশমা পেয়ে চোখে পরে দেখে এক নতুন তানিয়াকে।বিয়ের সাজেও তাকে এত সুন্দর লাগেনি,যতটা এখন লাগছে।তার ভেজা চুল দেখে রকিবের কাল রাতের কথা মনে পড়লো।সেও জানে কিছু হয় নাই,তানিয়াও জানে কিছু হয় নাই।কিন্তু সবাই জানে কিছু হইছে তাই হয়ত জোরপূর্বকই সে গোসল করে নিয়েছে।

তানিয়া গান গাইতে গাইতে পেছনে ফিরে দেখে রকিব বসে বসে ওকে দেখছে।তানিয়া এবার গান বন্ধ করে ওর কাছে এসে বলে,’আজকে সকালে জামাই বাজার করে দিয়ে সোজা আপনার বাসায় চলে যাবেন,আর হ্যাঁ!আমি কিন্তু যাচ্ছিনা’
—–
‘তিথি?’

‘হু’

‘উঠ,তোদের বাসায় যেতে হবে তো আমাদের।’

‘আমার শরীরটা ভাল নেই,আপনি যান বরং’

‘কেন ভাল নেই?দেখি,জ্বর?কই জ্বর তো নেই।তবে কিসের শরীর খারাপ?’

‘এমনি ভাল লাগছেনা,আপনি যান,গিয়ে ঘুরে আসুন।আমি ঘুমাই’

‘আচ্ছা তবে আমিও যাব না,তোকে একা রেখে যাওয়ার এতটাও দরকার পড়েনি।তুই ঘুমা আমি বাগান থেকে ঘুরে আসি,সকালে কি খাবি বল,বুয়াকে বলে যাই’

‘বেগুন ভাজি আর ইলিশ মাছ ভাজা’

‘ইলিশ মাছ আর তুই?’

‘হ্যাঁ,লাইফে ফার্স্ট টাইম ট্রাই করার ইচ্ছা জাগলো’

‘তবে তাই হবে মহারাণী’

এটা বলে ইশান ফোন নিয়ে বাগানে চলে আসে।তার আসলে তানিয়ার বাবার সাথে কথা আছে।রকিবদের ফ্ল্যাটের টাকা ট্রান্সফার করার আগে ওনার থেকে সিউর হয়ে নিতে হবে।তিথি এখনও জানেনা এসবের কথা।জানবেও না,সেও তার বোনের মতই।যৌতুকের কথা শুনলে হুলস্থুল করবে।

‘ইশান টাকা পাঠিওনা’

‘কেন?’

‘রকিব আমার কাছে এসে মাফ চাইলো,ও নাকি এসব জানতো না।এখন সে ফ্ল্যাট কিনলে নিজের টাকাতেই কিনবে,এবং সেটা আজকেই’

‘এটা তো খুব ভাল একটা নিউজ’

‘হ্যাঁ বাবা,ঠিক বললে।আমার এখন দুটো মেয়ে জামাইকে নিয়েই গর্ব হচ্ছে ভীষণ ‘
——-
রকিব নাস্তা খেতে বসে দেখে সবাই আসলেও তানিয়া আসেনি।মা তানিয়াকে টিভির সামনে থেকে টানতে টানতে এনে ওর পাশে বসালেন,ধমকালেন ওর এরকম ব্যবহারের জন্য।কিন্তু তানিয়াকে কেউ বোঝাতে পারেনা।সে পারেনা রকিবকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
রকিব সব বুঝতে পারছে,তাই সে এসবে রাগ না করে আরও অনুতপ্ত। কারণ চঞ্চল সেই মেয়েটি যে তাকে খুব ভালবাসতো সে কিনা এখন এরকম আলগা আলগা থাকছে!

তানিয়া গাল ফুলিয়ে রেখে রকিবের পাশে বসে।তার ইচ্ছা করছে সবাইকে চিৎকার করে বলে দিতে এত আদর যত্নের কিছু নাই।এই লোকটা খারাপ!এর মতলব খারাপ!

ইশান বাসায় ফিরে এসে দেখে তিথি তখনও ঘুমায়।বুয়া বললো তার রান্না করা শেষ।ইশান সে কারণে বুয়াকে চলে যেতে বলে নিজে তিথির কাছে আসে।তিথির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আগেকার দিনগুলোর কথা ভাবতে থাকে।তিথিকে নিয়ে সবসময় ইশান এইসবই ভাবতো।তার বাড়ি হবে,গাড়ী হবে।তিথি তার বউ হবে।তাদের অনেকগুলো বাচ্চা হবে।সুন্দর একটা সংসার হবে।

তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ইশানের কেমন যেন খটকা লাগলো।তিথির মুখটা চেয়ে দেখে সে ভাল করে।যেটার আন্দাজ করছে যদি সেটা হয় তবে খুব তাড়াতাড়ি তাদের জাপানে পাড়ি জমাতে হবে।
——-
রকিব বাজার করে দিয়ে চলে যাবার সময় তানিয়ার সাথে দেখা করতে আসে,তানিয়া নিজের রুমে বসে বসে ফোন টিপছিল। রকিব ওর কাছে এসে বালিশের তলা থেকে নিজের ফোন নিয়ে বলে,’আমি যাচ্ছি,বাসাটা আজকেই উদ্ভোধন করবো,তবে একা একা।যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে এসো। আমার অনেক ইচ্ছা তোমাকে নিয়ে নতুন বাসায় আলাদা সময় কাটাবো,একা একা।আমাকে মাফ না করো!অন্তত এক সাথে নতুন কিছুর শুরু তো করতে পারো!
বিশ্বাস করো!তোমার পারমিশন ছাড়া তোমায় আমি ছুঁবো না”
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৬০
আফনান লারা

রকিব ফ্ল্যাট কিনে কিছু মোমবাতি,গোলাপফুল দিয়ে সাজিয়ে এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল আরও কিছু জিনিস কেনার জন্য,কিন্তু দরজা খুলতেই সে মা,বাবা,খালা,ফুফু সবাইকে দেখে অবাক হয়ে যায়।সবাই তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে।মা বাবা মনে করেছেন রকিব ও তাদের সারপ্রাইজই দিতে এসেছিল নতুন বাসায়।

‘কিরে রকিব?তানিয়া কই?ওর বাবা মা কই?’

রকিব চুপ করে তাকিয়ে থাকে বাবা মায়ের দিকে।মা ফোন নিয়ে বললেন তানিয়াকে ডাকতে,কারণ তিনি মনে করছেন তানিয়ার পরিবারের টাকাতেই এই ফ্ল্যাট কেনা।তাই তো তার এত আদর আসছে।

রকিব জানায় তারা পরে আসবে।মা খুশি খুশি পুরো ফ্ল্যাটটা ঘুরে দেখে বললেন সে যেন তানিয়াকে নিয়ে আজকে এখানে থাকে।এই বলে সবাই চলে গেলো।রকিবের খারাপ লাগছে কারণ সে মা বাবার যৌতুক চাওয়ার কথা সবার আগে তানিয়ার থেকে জানলো।এটার মতন কষ্টের আর কিছু হয়না।

সবাই চলে যাবার পরে রকিব আরও কিছু সাজানোর জিনিসপাতি এনে ফ্ল্যাটটাকে যতটা পেরেছে রাঙিয়েছে।এরপর মেঝেতে বসে বসে ফোন টিপছিল,আর তানিয়ার অপেক্ষা করছিল।কেন জানি মনে হয় তানিয়া আজ আসবেনা।
রকিবকে এই মেঝের বিছানায় একাই ঘুমাতে হবে।
——
‘টুকু এবার বল আমার কি করা উচিত?বেডা মানুষ এরকম হয় কেন?সে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছে এটা ভাবতেই আমার ইচ্ছা করে কাবিন নামা ছিঁড়ে ফেলি,আসলে সব বেডা খারাপ!’

তানিয়ার কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে তিথি উঠে বসে।যৌতুকের কথা সে মাত্র জানলো।তার সামনেই ইশান বসে বসে ওর নুডুলসের বাটিতে ফু দিচ্ছে,ঠাণ্ডা হলেই খাওয়াবে।

তিথি ইশানের ঐ নিষ্পাপ চোখজোড়ারর দিকে চেয়ে থেকে বলে,’সব বেডা মানুষ খারাপ না রে টুকু।বুঝতে পারলে তারা দারুণ মানুষ। ‘

‘আমি হয়ত রকিবকে বুঝতেই পারি নাই।এখন কি করবো?আমাকে আজ যেতে বলেছে ‘

‘গিয়ে দেখ!ভাল না লাগলে চলে আসবি।কিন্তু এভাবে না যাওয়াটা ঠিক হবেনা’

কলটা রেখে তিথি ইশানের দিকে গম্ভীর চাহনিতে চেয়ে বলে,”আপনি যৌতুকের কথা জানতেন?’

ইশান নিশ্চুপ।

‘কি হলো?বলুন?’

‘জানতাম’

‘আমাকে বলার কি দরকার নাই?’

‘না নাই,তুই জানলে তানিয়াও জেনে যেতো’

‘এখন যে জেনে গেলাম আমরা দুজনেই?’

‘লাভ নেই,কারণ বিয়েটাও হয়ে গেছে আর রকিব ও যৌতুক নেয়নি’

‘সত্যিই?’

‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্য’
——–
তানিয়া রকিবের অপছন্দের টপস আর জিন্স পরে,ওর অপছন্দে চুল বেঁধে সেই ফ্ল্যাটে চলে আসে।এরপর কলিংবেলে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।রকিব যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল।

‘তুমি এসে,,,,,’

‘সুন্দর লাগছেনা?’

‘একদম না’

‘নতুন বউকে অসুন্দর বলতে রুহু কাঁপে নাই আপনার মিঃ রকিব?’

‘নতুন বরের অপছন্দের পোশাক পরতে শরীর কাঁপে নাই তোমার মিসেস তানিয়া?’

‘না কাঁপে নাই,আমি ইচ্ছা করেই পরেছি।কোনো প্রবলেম?’

‘নাহ! প্রবলেম ছিল তবে তুমি এসেছো যখন তখন আর কোনো প্রবলেম হতেই পারেনা।এসো এসো’

রকিব ভেতরে আসার পথ দেখিয়ে দিলো।তানিয়া ভেতরে ঢুকে বলে,’ফার্নিচার নাই,কিছু নাই।এখানে পুরো রাত থাকবো কি ভাবে?’

‘আমার রুমকে থাকার মতন বানিয়ে নিয়েছি। চলো দেখাই’

রকিব তানিয়ার হাত ধরতে যেতেই তানিয়া হাতটা সরিয়ে বলে,’থাক,আমি নিজে নিজে হাঁটতে পারি’

রকিবের রুমে এসে সে তো অবাক।বাহিরে সদরঘাট আর ভিতরে ফিটফাট!
হা করে শুধু দেখেই যাচ্ছিল সে।
রকিব দেয়ালে হেলান দিয়ে দেখছিল সব।তানিয়া একটা গোলাপ হাতে নিয়ে বলে,’ডেকোরেশন সুন্দর হলো’

‘থ্যাংক ইউ’

তানিয়া এবার কোমড়ে হাত রেখে বলে,’তবে আমি যাই?আমার খিধে পেয়েছে।বাসায় গিয়ে বিরিয়ানি খাবো’

‘আমি বিরিয়ানি আনছি ‘

তানিয়া ব্রু কুঁচকে ধপাস করে মেঝেতে বিছানো বিছানায় বসে পড়ে।ওকে বসতে দেখে রকিব ফোন নিয়ে খাবার অর্ডার করে।

দুজনেইই বসে থাকে চুপচাপ।রকিব নিজের ল্যাপটপে গান ছাড়ে।
‘জারা জারা বেহেকতা হে’

তানিয়া নড়েচড়ে একটু সরে বসে।রকিব গানটা দেখছে মনযোগ দিয়ে,তানিয়া আড় চোখে দেখছিল। গানটা শেষ হয়ে অন্য গান শুরু হয়।
রকিব হাতটা নিয়ে তানিয়ার হাতের উপর রাখতেই তানিয়া রেগে গিয়ে বলে,’ওল্ড ফ্যাশন ছেলেদের মতন আগে হাত পরে ঠোঁট এসব শুরু করছেন কেন?’

রকিব তানিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে এরপর বলে,”কোনো ছেলে আগে হাত ধরেছিল ঠোঁট ধরার আশায়?’

‘হ্যাঁ,তারপর থাপ্পড় খেয়েছিল’

রকিব আস্তে করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। খাবার এসে যায়।দুজনে খাবারটা খেয়েও নেয় চুপচাপ।তানিয়া এবার বললো,’তবে আমি যাই?ঘুম আসছে’

রকিব মাথা নাড়ায়।তানিয়া এবার রেগে গিয়ে বলে,’আজব!আমাকে থাকতে বলবেন না?’

‘এই বিছানায় ঘুমাতে হয়ত তোমার কষ্ট হবে’

‘না হবেনা’

এটা শুনে রকিব ওকে বিছানা খালি করে দেয়।তানিয়া ও চুপচাপ শুয়ে পড়ে।
রকিব লাইট বন্ধ করে সেও এক পাশে শোয়।

‘ভাল আছো?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ‘

‘আর কিছু বলবেনা?’

‘গুড নাইট’

‘আর কিছু না?’

‘আর কি?আসেন আবার বিয়ে করি’

‘না সেটা না,বলতে চাইছি গল্প টাইপের কিছু’

‘আপনার আম্মু আপনাকে রাজা রাণীর কাহিনী বলে ঘুম পাড়াইতো?’

‘আগে’

‘তাহলে আমি ও শুনাই।এক ছিল রাজা এক ছিল রাণী।তারপর তারা ঘুরতে যায় বনে।এরপর সিংহ ওদের দুটোকে চিবিয়ে খেয়ে নেয়।কাহিনী শেষ’

‘তুমি খুব রুড’

‘রুড হবো না তো কি হবো?একটু বলবেন?আমার কেমন রিয়েক্ট করা উচিত যৌতুকের কথা শুনে’
——-
সকাল সকাল রিদম নিজের ব্যাগ গুছাচ্ছিল,এতদিন দুলাভাই বলছিলেন তাকে নেয়ার সঠিক সময় এটা না।কিন্তু এখন বলছেন যেতেই হবে।
রিদমের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে পান্নাকে নিয়ে।ওর কথা সব চাইতে বেশি মনে পড়বে।
কি আর করার,সয়ং দুলাভাইর আদেশ,তাছাড়া জাপানে গিয়ে পড়াশুনা স্টার্ট করা,ক্যারিয়ারে ফোকাস করা তার জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দাঁড়াবে।তাই সময়টাকে কাজে লাগাতেই হবে যে করে হোক।

ইশান তিথিকে জানায় যেহেতু তানিয়া আর রকিবের বিয়েটা শেষ হলো তাহলে তাদের আর এখানে থাকতে হবেনা,অনেক কাজ পড়ে আছে।
তিথি জানতে চাইলো কি কাজ কিন্তু ইশান তার জবাব দেয়নি।কল আসায় চলে গেছে।

তিথি সেইসময় বাসায় কল দিয়ে রিদমকে বলাতেই রিদম তড়িগড়ি করে তৈরি হয়ে নিচ্ছে সেইসময়ে পান্না আসে ওদের বাসায়।
পান্নাকে দেখে রিদমের আম্মু মিষ্টি দিলেন খাওয়ার জন্য।পান্না চামচ দিয়ে মিষ্টি কাটছিল আর দেখছিল রিদম এমন ভাবে মিষ্টিটার দিকে চেয়ে আছে যেন সে ওভাবেই পান্নাকে নয়ত অন্য কাউকে কাটবে।

‘কি হলো ভাইয়া?’

‘তোমার হবু জামাই ভাল আছে?’

এ কথা শুনে পান্না ফিক করে হেসে মিষ্টি খেতে থাকে।রিদমের খুব রাগ হলো।সে আর একটু সময়ও অপেক্ষা না করে পান্নার সামনে থেকে চলে গেলো।
পান্না এর মানে মতলব কিছুই বুঝলোনা।সে আসলে বুঝতেই পারলোনা এখানে হচ্ছিল টা কি!

রিদম বাবার রুমে এসে তার ফোন হাতে নেয়,এরপর ইশানের নাম্বার বের করে কল দেয়

‘হ্যালো বাবা বলুন,কেমন আছেন?’

‘আমি রিদম বলছি ইশান ভাইয়া’

‘তুমি?কি হলো?সব ঠিক আছে তো?’

‘ভাইয়া আমরা কবে যাব?’

‘এই তো পরশুদিন’

‘ঠিক আছে’

লাইনটা কাটা গেলো।এতদিন রিদমের গাল ফুলা ছিল সে যাবে বলে আর এখন সে নিজ থেকেই তারিখটা জানতে চাইছে,যেন তার জাপান যাবার ইচ্ছে সবার চাইতে বেশি।
ফোন রেখে রিদম আবারও ড্রয়িং রুমে এসে দেখে পান্না নেই।রিদম কিছুই আর করলোনা।গাল ফুলিয়ে তার বেডে বসে থাকলো।

তখন ভেতরের রুম থেকে মা এসে রিদমের হাতে একটা বক্স দিয়ে বললেন,’পান্না দিয়ে গেলো,তোকে দেয়ার জন্য’

‘সে দিতে পারে না?’

‘তার বাবা বাসার নিচে এসেছিলেন ওকে নিতে’

রিদম বক্সটা খুলে দেখে ভেতরে একটা ঘড়ি। সম্ভবত এলার্ম ঘড়ি।আর একটা চিরকুট।তাতে লেখা সময়ের মূল্য অপরিসীম।

রিদম ঘড়িটাও ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে।সময়ের গুরুত্ব সে অবশ্যই দিবে।তার জন্যই তো বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে।কিন্তু যে কাজের জন্য এত কিছু করবে সেটা থাকবে তো!
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে