যদি তুমি বলো পর্ব-৫৭+৫৮

0
377

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৭
আফনান লারা
.
ইশানের ইচ্ছা ছিল না রিদমকে এত তাড়াতাড়ি জাপান নিয়ে যাওয়ার।কারণ সে চেয়েছিল রিদমের এসএসসিটা অন্তত শেষ করে তারপর যাবে।কিন্তু তার একটা বিশেষ কারণে সে রিদমকে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়,এর মানেটা শুধু তিথি জানে।আর কেউ না।

তিথি ইশানের দেয়া কালো শাড়ীটা পরেই তানিয়ার বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসে।আজ ইশান আর তিথিকে এতটাই ভাল লাগছিল যে বর বউকে ছেড়ে বেশিরভাগ মানুষই তাদের খেয়াল করছিল।কারণ তিথির সাথে মিলিয়ে ইশান কালো রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছে।তিথি বসে বসে একটা খালি রোস্ট খাচ্ছিল,কারণ রোস্ট তার খুব প্রিয়,খাবার সে আগেই খেয়ে নিয়েছে এখন সাগরানা দেখে ওখান থেকে একটা রোস্ট নিয়ে এক পাশে বসে বসে খাচ্ছে সে।ওর পাশেই রকিবের চাচাতো বোন টুম্পা বসে খাচ্ছিল,টুম্পা সেই কখন থেকে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে।সে তখনও জানেনা ছেলেটা আসলে কে হয় রকিবের।এত ভাল লাগছিল তার,একেবারে ক্রাশ খেয়ে গেছে সে ইশানের উপর।ইশান রকিবের সাথে একটা কথা নিয়ে আলাপ করছিল তার এদিকে খেয়াল ছিল না।
টুম্পা তার পাশে বসা মেয়েটিকে বলে,’এই দেখ না,ছেলেটা কি সুন্দর তাই না?’

এ কথা শুনে হাঁড় চিবোতে চিবোতে তিথিও তাকায় সেদিকে।
দেখে ওমা এ তো তার বিয়ে করা বর।টুম্পা বলে,’চল না একটু কথা বলি,দেখ তো আমার লিপস্টিক ঠিক আছে কিনা?’

তিথি এবার মেয়েটাকে দেখে,মোটামুটি দেখতে ভাল!তিথি হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।মেয়েটার টানা টানা চোখ তার উপরে সুন্দর করে আই লাইনার লাগানোই বিয়ে বাড়ির সুন্দরী লাগছিল তাকে।তিথির একবারের জন্য মনে হলো ইশান একে দেখলে ক্রাশ খাবে।
তাও ইশানকে একবার বাজিয়ে দেখার ইচ্ছা হলো তিথির।
সে হাত থেকে মুরগীর হাঁড় রেখে দিয়ে বলে,’আপু!আপু?’

‘কি?’

‘এই ছেলেটাকে তো আমি চিনি’

‘সত্যি?আপনার কে হয়?’

‘আমার ছোট ভাইয়ের ছোট বোনের জামাইর শালার বেয়াইন তামিয়ার বড় ভাইয়া হয়’

‘ওহ তাই!আচ্ছা প্লিজ প্লিজ আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন?’

‘কেন নয়!গিয়ে শুধু বলবে যে উনাকে তুমি পছন্দ করো,ডেইটে যেতে চাও।সিম্পল,উনি তো মেয়ে খুঁজতেছে বিয়ে করার জন্য।মেয়ে পেলে জাপান নিয়ে যাবে’

মেয়েটা চোখ বড় বড় করে বলে ‘তাই?ঠিক আছে দাঁড়াও’

এই বলে মেয়েটা ইতিউতি আর না ভেবে রকিবের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।ইশান আচমকা মেয়েটিকে দেখে রকিবের সাথে কথা বন্ধ করে দেয়।

‘কিরে টুম্পা?কিছু বলবি?খাবার খেয়েছিস’

‘খেয়েছি রকিব ভাইয়া,আসলে উনার সাথে একটু কথা বলতাম’

‘ইশানের সাথে?তুই ওকে চিনিস?’

‘না ঐ যে আমার পাশে একটা আপু বসা ছিল,উনি চিনে।উনার নাকি ছোট ভাইয়ের ছোট বোনের জামাইর শালার বেয়াইনের বড় ভাইয়া হয়’

‘কিহ!!ওয়েট ওয়েট!ছোট ভাইয়ের ছোট বোনের হাসবেন্ডের বেয়াইনের বড় ভাই!তার মানে তিথির হাসবেন্ড!ওহ হো টুম্পা,সামান্য লজিক বুঝলিনা।ইশান হলো তিথির হাসবেন্ড,মানে তোর ভাবীর বড় বোনের জামাই।বুঝেছিস?’

‘কিহ?উনি ম্যারিড?’

‘হ্যাঁ রে পাগলি!’

‘এই যে ভাইয়া,এইদিকে তাকান,এত লজ্জা পাবার নাটক করতে হবেনা।আপনি যখন একজন বিবাহিত পুরুষ তখন এত সেজেগুজে ফিট ফাট হয়ে আসার কি দরকার ছিল?কাকে ইম্প্রেস করার জন্য এত গরজিয়াস সেজে এসেছেন?আমার মতো মেয়েদের ইমোশান নিয়ে খেলতে ভাল লাগে আপনার?’

তিথি যখন দেখলো ঐ মেয়েটা ইশানকে বকেই যাচ্ছে তখন সে এসে সামনে দাঁড়ায় এরপর বলে,’বাসায় তো আমাকে ধরে উত্তমমধ্যম দেন,এখানে কিছু করতে পারেন না?পারবেন কিভাবে!প্রতিশোধ তো শুধু তিথির সাথেই নেয়া যায়।আর এই মেয়ে!তুমি দেখো!ভাল করে দেখো, আমার হাসবেন্ডের হাতে মোটা করে এঙ্গেজমেন্টের রিং।ছেলেরা সচরাচর রিং পরেনা।এই কমন সেন্স তোমার নাই?আর সুন্দর ছেলেরা সাজার দরকার নাই।একশোটাকার গামছা পরলেও তাদের রনভীর কাপুর লাগবে।বুঝছো!আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম আমার গুণধর স্বামী রুপসী রমনী দেখে কেমন রিয়েকশান দেয়।কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম আস্ত গাধা একটাকে বিয়ে করেছি।সে শুধু কাহিনী দেখে যাচ্ছে!’

ইশান এবার রেগে গেলো তিথির উপর।সে ওদের সামনে থেকে তিথিকে বাহিরে নিয়ে আসে।

‘কি হলো?এমন করলেন কেন?’

‘তোর কি কমন সেন্স নাই?এরকম করে মানুষ?মেয়েটা তোকে কি ভাবলো?ছেঁসড়া ছাড়া কিছুই না।এরকম ফান মানুষ হাই স্কুলে থাকতে করে।মাস্টার্স কিংবা অনার্স লেভেলের মেয়েরা এসব করেনা।সব চাইতে বড় কথা হলো তুই আরাফাত বাড়ির বউ,একমাত্র বউ।রকিব তোকে কি ভাবলো সেটা বুঝতে পেরেছিস?’

‘আশ্চর্য, আমি কি এমন অপরাধ করে ফেললাম যে আপনি আমায় এরকম বকছেন!’

‘শুরু থেকে দেখছি,ম্যাচিউরিটি বলতে তোর কাছে কিছু নাই,কিচ্ছু না।আমার সাথে মজা কর প্রবলেম নাই,কিন্তু অন্য মানুষকে নিয়ে মজা করবি কেন?তানিয়ার হাসবেন্ড হয় রাকিব,তোর এই সব পাগলামিতে সে হয়ত কিছু বলেনি কিন্তু মনে মনে কতটা নিচ ভাবছে জানিস?বড় বোন হয়ে এসব করা কি শোভা পায়?’

তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
ঐদিকে রকিব লক্ষ করেছে তানিয়া ওর সাথে ভালভাবে কথাই বলছেনা।রকিব স্টেজে এসে ওর পাশে বসে বলে,”তানিয়া?কি হলো তোমার?’

‘কি হবে?’

‘কথা বলছোনা ঠিক মতন।কিছু কি হয়েছে?’

তানিয়া কিছু বলেনা,নিজের শাড়ীর কুচি হাত দিয়ে গুনতে থাকে বসে বসে।
অনুষ্ঠান শেষ হবার পর রকিব আর তানিয়া বাসায় ফিরে আসে।রিদম আর ওর কিছু কাজিনরা মিলে তানিয়ার রুমটাকে সাজিয়ে রেখেছিল। রকিব আজ মহাখুশি।তানিয়াকে বোঝার চেষ্টা করবে,তার সাথে ভাল একটা সময় কাটবে আজকের রাতটাতে।

সে রুমে ঢুকেই দেখে ফুলে ভরিয়ে রাখা রুমটা,যেন আজ তাদের আবারও বাসর।
সে হেসে হেসে ভেতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে তানিয়ার দিকে তাকায়।তানিয়া গাল ফুলিয়ে রেখে হাতের চুড়ি খুলছিল।
রকিব ওর কাছে এসে কাঁধে তার ঠোঁটজোড়া ছোঁয়ায়।এরপর তানিয়ার কাঁধের উপর থেকে ওর শাড়ীর আঁচলের সেফটিপিন টা খুলতে শুরু করতেই তানিয়া ওর দিকে ফিরে তাকায়।রকিব কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে বলে,’সরি আসলে শুরুতেই এমনটা!!”

‘ইটস ওকে!”

তানিয়া আবারও ঘুরে হাতের চুড়ি খুলতে থাকে।রকিব বিছানায় বসে ওর অপেক্ষা করতে থাকলো এবার।দশ মিনিট পার হয়ে যাবার পরেও যখন তানিয়া আসছিল না তখন রকিব বললো,’তোমার হাতের চুড়ি খোলা কি শেষ হবেনা?’

‘হবে,কেন বলুন তো?’

রকিব চট করে উঠে দাঁড়ায়।তানিয়া তখনও হাতের চুড়ি খুলছিল।রকিব ওর খুব কাছে ঘেঁষে ওর পিঠে নাক ডুবাতেই তানিয়া ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়।যেন তাকে জন্তু ধরেছে।

রকিব ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে,’আমি জানতে চাই তোমার এরকম ব্যবহারের কারণ কি?আমরা দুজনেই বিবাহিত। তবে আমাকে তোমার কাছে আসতে দিচ্ছো না কেন?কি অপরাধ আমার?’

‘কি অপরাধ?নিজেকে প্রশ্ন করুন।প্রশ্ন করুন আপনার ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কেন লাগবে?ইউ নো হোয়াট?আমি আপনাকে চিনতেই পারি নাই!আমি বেকুবের মতন আপনার সাথে সেই ফ্ল্যাট দেখতে গিয়েছি যার টাকা আমার বাবা দিবে,সরি সরি।বাবা দিবেনা,বাবাকে দিয়ে দেওয়ানো হবে।
আমার কি দোষ বলতে পারবেন?আমি টুকুর চেয়ে কম ফর্সা বলে?টুকুর চেয়ে কম মোটা বলে?শুকনা বলে?আমার তো মনে হয় টুকু আপনার বউ হলেও আপনারা একই যৌতুক চাইতেন।আপনাকে আমি আপনার পরিবার থেকে আলাদা মনে করতাম।আমি মনে করতাম অন্তত আপনি তাদের মতন না,আপনি আমাকে বুঝবেন।কিন্তু নাহ!সব এক ঘাটের মাঝি।এখন আমার আপনার সাথে একই রুমে বাসর ঘরের নামের এইসব অনুষ্ঠান পালন করতে ঘৃনা লাগে।আপনি একটা কাপুরুষ!যদি এটা আগে জানতাম তবে কখনওই আমি কবুল বলতাম না,সই করতাম না জীবনের সেই সবচাইতে দামী কাগজে!’

রকিব চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।তানিয়া এবার খোঁপার সেফটিপিন খুলতে থাকে বসে বসে।আর কোনো কথা বলেনা।
ফ্ল্যাট টা রকিব নিজের টাকায় কিনবে বলে ঠিক করেছিল,টাকাও ব্যাংকে জমা আছে,কিন্তু তখনই মা বেঁকে বসলেন।তিনি বললেন টাকা গুলো ফিউচারের জন্য সেভিংসে রাখতে আর এই ফ্ল্যাট তানিয়ার বাবা গিফট করবেন।রকিব কিছুতেই মানতে চায়নি,কিন্তু মা বললেন ওনারা নাকি জোর করেছেন।কিন্তু এই সত্যটা রকিব আসলেই জানতোনা।’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৮
আফনান লারা

তানিয়া চেঞ্জ করে একটা বাসার জামা পরে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়েছে।রকিব তখনও খাটের অন্যপাশে আগের মতই বসা ছিল।তানিয়া তখন শেষবার একটা কথা বলে।সে বলে পরশু রকিব যেন একাই চলে যায়,সে রকিবের সাথে যাবেনা।
রকিব চুপ করে কথাটা শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ঐদিকে তিথি ইশানের সাথেই তার বাসায় উঠেছে।ইশান তাকে যেভাবে বকেছিল সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত সে ইশানের সাথে কোনো কথা বলেনি,ইশানও বলেনি।দুইজনেই চুপ করে পুরোটা সময় ছিল।
বাসায় আসার পর ইশান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে তিথি রুমে নেই, তিথির যে মাথার তার ছিঁড়া এটা ইশান জানে তাই সে আগে থেকেই সদর দরজা লক করে রেখেছে।তাহলে গেলো কোথায়? দোষ নিজেই করবে আবার রাগটাও নিজেই দেখাবে।

তিথি তামিয়ার রুমে বসে আছে,তামিয়াও নেই।সেও তার মায়ের সাথে গ্রামে গেছে। তামিয়ার রুমে ওদের কাপল পিক দেখছিল তিথি।কত খুশি মনে হচ্ছে দুজনকে।ওদের এরকম খুশি দেখে তার চোখে পানি এসে যায়।আচ্ছা হাসান ভাই ও কি তামিয়া আপুকে এরকম বকা ঝকা করে?যদি তাই করে তবে আপু কিরকম রিয়েক্ট করে?
এই ভেবে তিথি কাঁদতে থাকলো।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ভিজে গেছে তার।হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে ইশানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছিল ঐ সময়ে নিজের কোলে কারোর মাথার স্পর্শ পেয়ে সে কান্না থামিয়ে তাকিয়ে দেখে ইশান ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।

তিথি রাগের কারণে কিছু বললোনা,ধীরে ধীরে নিজেই সরে যাওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু ইশান তাকে সরতে দিলোনা,সে আরও চেপে ধরে তিথিকে।

‘কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?’

‘এটাই যে এই কোলটা আমার মাথা রাখার ব্যাক্তিগত জায়গা’

‘নাহ,তা নয়।যদি তাই হতো তবে এই কোলের মানুষটিকে অনেক যত্নে রাখতেন।অপমান অবহেলা করতেন না’

ইশান উঠে বসে বলে,’তোর দোষ ছিল বলেই ঝাড়ি খেয়েছিস। আমি এমনি এমনি কাউকে কিছু বলিনা’

তিথি এবার আরও রেগে গিয়ে বিছানা থেকে নেমে চলে যায় হনহনিয়ে।
——–
তানিয়া একা বিছানায় শুয়ে থাকার সময় রুমের দরজা খোলা খেয়াল করে উঠে বসে।হাই তুলতে তুলতে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে সাড়ে বারোটা বাজে।রকিব এত ভাব কেন দেখাচ্ছে!
তাই সে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হতেই দেখে ড্রয়িংয়ে রকিব বসে বসে টিভিতে খেলা দেখছে।

তানিয়া রেগে গিয়ে বলে,’এরকম নাটক দেখিয়ে সবাইকে বুঝাতে চান আমি আপনাকে কাছে আসতে দেইনা?’

রকিব সাউন্ড কমিয়ে বলে,’পুরুষ মানুষ রাত জেগে খেলা দেখবে,এটাই কি স্বাভাবিক না?’

‘নাহ,বিয়ের পরেরদিন কেউ রাত জেগে খেলা দেখেনা’

‘তবে আর কি করবো বলো?বউ তো প্রেম প্রেম খেলা খেলতে দিচ্ছেনা তাই অন্যের খেলা দেখছি।আমি অবলা পুরুষ জাতি কিনা!অজীবন স্ত্রী শাসন চলবে।আমার তো সবে দুইদিন হলো।’

তানিয়া এগিয়ে এসে টিভিটা অফ করে দিয়ে বলে,’এসব করে লাভ নেই।আমার মন থেকে আপনার সেই বাজে রুপটা কোনোদিনই সরাতে পারবেন না,আজীবনের জন্য কালার হয়ে গেছেন।এসব করে আমাকে আপনি আপনার বাসাতেও নিতে পারবেন না’

‘আমি জানি কি করলে তুমি বাসায় ফিরবে।সেটাই করবো,তোমায় এত ভাবতে হবেনা’

এটা বলে রকিব রুমে চলে যায়।তানিয়ার মনে ভয় জাগলো,রকিব আবার তার সাথে জোরজবরদস্তি কিছু করবে না তো?
ভয়ে ভয়ে সে টেবিলের উপর থেকে কাঁটাচামচ তুলে চুপিচুপি রুমে প্রবেশ করে।রকিব ওয়াশরুমে ছিল।তানিয়া কাঁটাচামচ টা নিয়ে বালিশের তলায় লুকাবে নাকি কোথায় লুকাবে তাই পরিকল্পনা করছিল সেই সময়ে রকিবের হাত তার কোমড়ে স্পর্শ পেতেই তানিয়া পেছনে মুড়ে কাঁটাচামাচ দিয়ে রকিবের হাতে আঘাত করে।

‘আআআআহহহহ!!এটা কি করছো!’

‘আপনাকে না বলছি আমাকে এসব আদর দেখাবেন না!লজ্জা করেনা আপনার?’

‘হাত মুছার জন্য গামছা নিতাম আমি,তুমি তো গামছা কোমড়ে বেঁধে রেখে ঘুরছো।উফ! দিলে তো হাতটা কেটে!’
——
পান্না তাদের বাসার ছাদে বসে রিদমের দেয়া সেই মালাটিকে অত্যন্ত যত্নের সাথে গেঁথে চলেছে।রুমে করলে পিংকি দেখে নিতো তাই তো তার এইখানে আসা।
মালাটা পুরো গেঁথে সেটাকে ওড়নার সাথে লুকিয়ে নিচে চলে আসে সে।রিদম চলে যাবে বলে ওর জন্য বাদামের বিসকিট যেগুলা মা বানায় সেগুলা এক বক্স আলাদা করে রেখেছে।ও চলে যাবার সময় দিয়ে দিবে বলে।

ইশান পুনরায় তিথির কাছে এসে ওর হাতটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয় এরপর বলে,’যদি তুমি বলো তবে ভুলে যাব তোমার সব দোষ,আমি জানি যত দোষ সবে নন্দঘোষ😜’

তিথি অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে।ইশান ওকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে রেখে বলে,’তুই জানিস না তোকে আমি কতটা চাই,কতটা ভালবাসি।যদি জানতি তবে আমার বকা শুনে নিজের দোষটাকে বুঝতি,তা না করে উল্টে রাগ দেখাচ্ছিস।আমি কি তোর খারাপ চাই?’

তিথি চুপ করে ইশানের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে।ওর গায়ের গন্ধটা তার দারুণ লাগছে।
তিথিকে চোখ বুজে থাকতে দেখে ইশান ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।এরপর বলে,’আচ্ছা আর কখনও বকবোনা,কারণ আমি জানি তুই আর এই ভুল করবিনা’

তিথি ওমনি মাথাটা উঠিয়ে বলে,’করবো! একশতবার আমি সেই আগের ভুল করবো’

এটা বলে সে এক ছুট লাগালো ইশানকে ছেড়ে অন্য রুমে।
——-
রকিব একা একা বসে হাতে মলম লাগাচ্ছে,মলমটা অবশ্য তানিয়াই এনে দিয়েছিল,কিন্তু সে লাগিয়ে দিবেনা কারণ সে রকিবকে ঘৃনা করে।

‘আমার জমানো টাকা গুলোই কাল সেই ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে জমা দিতে যাবো,কাল বৃহস্পতিবার।ঐ লোক কাল সন্ধ্যায় দেশের বাড়ি চলে যাবে।তুমি যাবে আমার সঙ্গে?’

‘এখন এসব করে লাভ আছে?’

তানিয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসা ছিল।তানিয়ার এমন কথায় রকিব হাতটাকে নাড়াতে নাড়াতে বলে,’লাভ আছে,নিজের টাকার বাসস্থল ‘

‘আমাকে বলছেন কেন? ‘

‘কারণ তুমিও আমার সাথে সেই ফ্ল্যাটে উঠবে’

‘বিয়ের পর ছেলেরা বউ ভক্ত হয়ে যায় তা ঠিক তবে এতটা ভক্ত ভাল না।ক্ষতিকর!আপনার ইমোশনাল মা এইসব জানলে উল্টো সিধে কিছু একটা করে বসবেন।পরে দোষটা আমার ঘাড়ে এসেই পড়বে’

‘তা হবেনা,মাকে আমি মানিয়ে নিবো। তুমি শুধু আমার সাথে যাবে কিনা তা বলো’

‘না যাব না।আর কিছু?’

রকিব মলমটার ছিপি আটকে উঠে দাঁড়ায়,এরপর বলে,’তোমাদের রান্নাঘরে চা পাতা,চিনি কোথায় আছে তা দেখিয়ে দিবে?’

তানিয়া চট করে কাঁথা টেনে শুয়ে ঘুমানোর ভান ধরে থাকে।
রকিব মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়।

তানিয়া অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরেও তার ঘুম আসছিল না বলে সে উঠে বসে।কাঁথা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে সে দেখতে যায় রকিব করছে টা কি।
বাহিরে বের হতেই রকিবের বুকের সাথে ধাক্কা লাগে ওর।রকিব হাতে চায়ের কাপটা নিয়ে বলে ‘আস্তে আস্তে,সাবধানে।আর একটু হলে চা পড়তো’

‘এর মাঝে বানিয়েও ফেললেন?’

‘না আসলে আমার শাশুড়ি বানিয়ে দিলো’

‘কিহ!আপনি এত রাতে মাকে এসব জানিয়েছেন?’

‘না, আসলে উনি পানি খেতে উঠে আমাকে চা বানাতে দেখে উনিই বানিয়ে দিয়েছেন’

রকিব কথা শেষ করার আগেই তানিয়ার আম্মু পেছন থেকে এসে বললেন,’এটা কেমন কথা তানিয়া?তুই রকিবকে দিয়ে চা বানাইছিস?মাথা কি পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে তোর?নতুর জামাইকে দিয়ে মানুষ এত রাতে কাজ করায়?তোর এইসব স্বভাব আর কোনোদিন ভাল হবেনা বুঝি?’

তানিয়া চোখ বড় বড় করে রকিবকে দেখছিল,তখন রকিব বলে,’না মা ও তো মাত্র জাগছে।আমি তো ওরে একবারও বলিনি চা বানাই দিতে।একা একাই গেছিলাম ‘

‘তাও ওর দোষ। জামাইর ঘুম নাই,সে কিভাবে ঘুমায়?আমার জামাই,আমাদের বিবাহিত জীবনের সাতাশটা বছর ধরে এখন অবধি না ঘুমালে আমি ঘুমাইনা,আর তুই বিয়ের প্রথমেই এসব শুরু করছিস!’

সেইসময় তানিয়ার আব্বু হাই তুলতে তুলতে এসে বললেন,’কোথায় যেন মিথ্যা কথার ভাষণ শুনলাম?’

‘তোমার কাছে আমার কথা মিথ্যা মনে হলো?’

‘আজকেও তো আমি এসে দেখি খাটে তুমি চিটপটাং হয়ে ঘুমাচ্ছো।তারপর তোমাকে সরিয়ে আমায় ঘুমাতে হয়েছে আর এখানে এসে বলো আমার আগে তুমি ঘুমাও না।আসলে কি জানো?তুমি যেরকম তোমার মেয়েও হয়েছে সেরকম।জামাইর কোনো কদর নাই,নিজের কদরই বোঝে’

রকিব মাথা নাড়িয়ে বলে,’আব্বু ঠিক বলেছেন’

‘চুপ শা…..’

তানিয়া মুখে হাত দিয়ে ফেললো।ওর আম্মু তখন দাঁত কেলিয়ে বলে,’আমি বলতে চাইছিলাম চুপ করো শান্ত ছেলে!! বড়রা কথা বলছে তো।তোমার কথা বলতে হবেনা”

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে