যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৫
আফনান লারা
তানিয়ার সাথে বোন বা নানুদের যাওয়ার নিয়ম।তানিয়ার নানু নেই,এদিকে তিথি যেতে পারবেনা,ইশান দিবেনা ওকে।তাই সিদ্ধান্ত হলো পান্না যাবে।গিয়াস সাহেব নিজেই বলেছেন যাতে পান্নাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
পান্না যেতে চাইছিল না,তাও কি আর করার বাবার আদেশ,তানিয়াও চাইছে সে যাতে ওর সঙ্গে আসে।তানিয়া পান্নার মন খারাপ দেখে গাড়ীতে বসে বলে,’বাবা রিদমকে বলো আমার সাথে আসতে,ও মনে হয় বেশি ইমোশনাল হয়ে গেছে।ওকেও নিয়ে যাবো তাহলে ওর মনটা ভাল থাকবে’
রকিবের মা সামনের সিটে বসে ছিলেন তিনি বিড়বিড় করে বললেন,’যত্তসব ঢং!পারছেনা গুষ্টিশুদ্ধ সকলকে নিয়ে শশুর বাড়ি যাবে!যেন আমাদের বাসা ফাইভ স্টার হোটেল পাইছে!
‘আন্টি সত্যিই বলছেন?তাহলে তিথি আপু আর ইশান ভাইয়াকেও নেই?’
রকিবের মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন,ঐ সময় রিদম কারের জানালা দিয়ে এসে বলে,’আন্টি আপনি পিছনের গাড়ীতে যাবেন?এই গাড়ীতে আমি টুকুর সাথে বসবো ড্রাইভারের পাশের সিটে,আর পান্না তো টুকুর পাশে বসেছে,জায়গা নেই’
‘এহ!আমার ছেলের গাড়ী।আমি কেন আরেক গাড়ীতে যাবো?আমি এই পিচ্চি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে ঢের বসতে পারবো’
এটা বলে তিনি উঠে এসে তানিয়ার পাশে বসে পান্নাকে কোলে নিলেন।
——-
ইশান তিথিকে নিয়ে তার বাসায় ফিরছে,বাসা খালি জেনে সে ঠিক করে তিথির সাথে আলাদা সময় কাটাবে।তাই আজ আর তিথিকে সেন্টার থেকে বাবার বাড়িতে যেতে দিলোনা সে।
‘হঠাৎ বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?কোনো প্ল্যান আছে?’
‘তা আছে,কিন্তু বলা যাবেনা’
তিথি আড় চোখে তাকায়,ইশানকে সুবিধা ঠেকছেনা,এদিকে কিছু করার ও নাই।তার যা কূল আছে সব ইশানকে ঘিরেই।ওকে ইগনর করে কোথাও ঠাঁই পাবেনা সে।সে কারণে চুপচাপ গাড়ীতে বসে থাকাটাই শ্রেয়।
ইশানের বাসায় ফেরার পর তিথির আবারও মনে পড়ে যায় এ বাসায় তার পরার মতন কিচ্চু নাই।
সে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে থাকে আধ ঘন্টা।ইশান ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে একা একা তার স্পেশাল নতুন লঞ্চ হওয়া নুডুলস বানাচ্ছে দুজনের জন্য।তিথি সোফায় শুয়ে শুয়ে বলে,’আন্টির কোনো শাড়ী পরতে পারি আমি?’
‘নাহ’
‘কেন?’
‘আমার মায়ের একটা রোগ আছে,ওনার জিনিস অন্য কেউ পরলে সেটা আর তিনি ইউজ করেন না।তোকে যে ওনার একটা শাড়ী দিয়েও দিবো তার ও উপায় নাই।মা নতুন আনা শাড়ী পরতে পারেন না,তার রাতে ঘুম হয়না।নরম কোমল কামড় যেগুলা সেগুলাই উনি পরেন।’
‘তোহ?কি করবো আমি?আপনি নাহয় ওনাকে কোমল কাপড় একটা এনে দিয়েন’
‘তা হবেনা কারণ মায়ের জন্য সেই কোমল কাপড়গুলা যে তাঁতি তৈরি করে তিনি গত হয়েছেন।তার বংশে এখন তার মেজো ছেলে ঐ কাপড় বুনে।কিন্তু তার একটা শাড়ী বানাতে ১মাসের বেশি সময় লাগে।সে কারণে তাকে দু মাস আগে জানিয়ে দিতে হয় যে মায়ের জন্য শাড়ী লাগবে’
‘এখন কি করবো আমি?’
‘আমার শার্টের অভাব?’
‘আপনার শার্ট পরবো?রিয়েলি?ওদিনের মতন বকবেন না তো?’
ইশান হাসি দিয়ে কাজ করতে থাকে চুপচাপ।
——–
‘মা আমার খুব ঘুম আসছে,আর কত মিষ্টি খাওয়াইবা?’
রকিবের কথা শুনে খালা বললেন,’দেখ রে বনু!তোর ছেলে বউকে একা পাওয়ার জন্য ঘুমের ভান ধরছে কেমন!”
‘হ্যাঁ তাই তো দেখছি,বউকে দিলে তখন আর তার কোনো ঘুম পাবেনা’
রকিব চশমা ঠিক করে বসে থাকলো। তানিয়া ওর চোখে এক রাশ ঘুমের ক্লান্তি দেখে বললো,’আন্টি উনি যাক ঘুমাইতে,আমি নাহয় আপনার এই কাজগুলা করছি বসে বসে।উনি না থাকলে তো সমস্যা নাই,আমাকেই তো থাকতে হবে’
রকিব দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে,সে ঘুমের নাটক করছিল যাতে সবাই ওদের ছাড়ে আর তারা বাসর ঘরটা উপভোগ করে।
‘এখনই এত দরদ লাগবেনা,বিয়ে দুইজনকে দিয়ে হয়,অনুষ্ঠান ও দুইজনকে দিয়েই হয়।দুুজনে বসে থাকো, রকিব তেঁতুলের জুস খাবি?’
‘না নাহ,এই তো আমার ঘুম পাচ্ছেনা,আমি বেশ আছি’
পান্নাকে রকিবের খালাতো বোনদের সাথে এক রুমে শুতে দেয়া হলো,আর রিদম রকিবের খালুর সাথে ঘুমাতে গেছেন।অবশেষে রকিব আর তানিয়াকে রুমে যাবার পারমিশনটা দেয়া হয়।
রকিব খুব এক্সাইটেড ছিল,খুশি তার আর ধরছিল না।সে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে তানিয়া এক এক করে গয়না গাটি খুলছে আর একটা একদিকে ছুঁড়ছে।
‘আরে আরে করছো কি!আমি খুলবো তো”
এটা শুনে তানিয়া চোখ বড় করে পেছনে তাকিয়ে বলে,’কিরকম অসভ্যর মতন কথা বললেন!আপনি খুলবেন মানে?’
‘না মানে গয়না গুলো আমি খুলে দিবো,তোমার তো একা একা করতে কষ্ট লাগার কথা’
‘ওহ! না থাক।আমিই পারবো।গয়না খুলতে একটা সেটিসফেকশান কাজ করে!আপনি খুলে দিলে সেই সেটিসফেকশানটা আসবেনা’
রকিব শরবতের গ্লাস নিয়ে পুরো গ্লাসটা খালি করে চেয়ারে বসে।তানিয়া সব গয়না খুলে বলে,’মাগো মা!আমাকে মুখেশ আম্বানির বেয়াইন বানাই রাখছিল!যেন হিন্দি সিরিয়ালের বউ গুলার মতন!
এবার এই শাড়ীটা কেমনে খুলবো!যে সেফটিপিন লাগাইছে ঐ পার্লারের মেয়েটা।থাক! যা হবার তা কাল সকালে দেখা যাবে।আমি বরং ঘুমাই’
এটা বলে তানিয়া ধপাস করে ফুলে সাজানো বিছানায় শুয়ে পড়ে।
‘একি!এটা কি হলো।তানিয়া?শুনছো?ঘুমালে?হোয়াট দ্যা হেল!বিয়ে করেছি বাসর রাতের এই অবস্থা দেখার জন্য?তানিয়া?উঠো!’
‘আরে উঠবোনা এখন, বললাম না সেফটিপিন কাল সকালে খুলবো?এখন আর আমার শক্তি নেই।ঘুমিয়ে নিই,সকালে এনার্জি পাবো সেফটিপিন খোলার’
‘খুলিওনা থাক,উঠে তো বসবা একটু।আজকে আমাদের বাসর রাত,কত প্রতিক্ষিত রাত এটা সেটা জানো?’
‘জানবোনা কেন! আজ কয়েকদিন ধরে দাদি,মামি রা আমার মাথা খেয়েছে বাসর ঘরের সিনেমার কাহিনী বলতে বলতে’
‘তোহ!তুমি এখন সেই সিনেমা রি-ক্রিয়েট করবানা?’
‘নাহ!আমি যে করবোনা সেটা কি ওনারা দেখবে?না জানবে?আপনার উপর আমার বিশ্বাস আছে।আপনি সিওর এগুলা বলবেন না কাউকে। ‘
—–
পিংকি বাসার ফেরার পর থেকে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।পান্না আর রিদম যে এক সাথে তানিয়ার শশুর বাড়ি গেছে এটা নিয়ে সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।
গিয়াস সাহেব ওকে কাঁদতে দেখে ভাবলেন পিংকি হয়ত পান্নার বিয়ে ঠিক হবার কথা জেনেছে তাই কাঁদছে,ওনার বেশ খারাপ লাগলো।আসলেই বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে ব্যাপারটা একেবারে বেমানান লাগে।
উনি নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করে বললেন,’মা রে!এভাবে কাঁদিস না।তোকে যে আমি কত ভালবেসে বড় করেছি,কখনও তোকে কাঁদতে দিই নাই।সেই তুই এভাবে অঝরে কেঁদে চলেছিস।আমার না ভীষণ খারাপ লাগছে।চিন্তা করিস না মা,পান্নার জন্য যেমন ছেলের প্রস্তাব এসেছে,তোর এর চেয়ে ভাল একটা আসবে ‘
এ কথা শুনে পিংকি কান্না বন্ধ করে চোখ মুছে পেছনে তাকায়,এরপর বলে,’বিয়ের প্রস্তাব?পান্নার জন্য?’
‘হ্যাঁ রে,ওর খুব ভাল একটা ছেলের সাথে বিয়ের পাকা কথা বলেছি আমি ইশানের সাথে।ছেলেটা জাপানে পড়াশুনা করে’
‘ওমা তাই নাকি! ‘
পিংকি খুব খুশি হলো।কারণ তার মনে হলো রিদমকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা তার নাই
——-
রকিব বসে বসে ঘড়ির কাঁটা দেখছে।বারোটা বাজছে সেই কবেই তাও বারোটা দশ এখনও বাজছেনা,সময় এত ধীরে কেন চলছে!
প্রকৃতি তাকে বোনাস সময় দিছে বাসর রাত উপলক্ষে কিন্তু তার বউ সব কিছুতে পানি ঢেলে দিলো।
তানিয়া উপুড় হয়ে শাড়ী পেঁচিয়ে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে,তার কোনো খবর নাই কিছুর।
‘তানিয়া একটু উঠোই না!একটু গল্প করো তাও তো দিনটা স্মরণীয় করে রাখতে পারবো’
‘যা বেডা বেদ্দপ!কইছিনা দশ টাকার বেশি একটা টাকাও দিতাম না! আমার টাকা মারি কি তুমি বিল্ডিং বানাইবা!’
‘মানে?কাকে কি বলছো?’
তানিয়া ঘুমে থেকে রিকশওয়ালা মামাকে ধুয়ে দিলো ভাল করে,এদিকে তার নতুন বরের এই রাতটা স্মরণীয় হয়ে গেলো নতুন বউয়ের গালি খেয়ে
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৬
আফনান লারা
তিথি ইশানের শার্টের খোঁজে ওর আলমারিটা খুলতেই একটা ঝুলন্ত প্যাকেটের দেখা পেলো।এই প্যাকেট যে তার জন্যই রাখা তা নিশ্চিত করার জন্য সে প্যাকেটের বাহিরে ভালভাবে দেখে এবার ভেতরটা দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে।ধীরে সুস্থে প্যাকেটটা খুলতেই দেখতে পায় কালো রঙের তুঁতির কাজ করা একটা শাড়ী,চিকচিক করছিল ওর হাতে।এমনিতেও তিথির কালো রঙটা অনেক বেশি প্রিয় তার উপর যদি এরকম ঝকমকে শাড়ী হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।
তিথি বুঝতে পারলো ইশান ওর জন্যই শাড়ীটা রেখেছে।
সে আর দেরি না করে দ্রুত শাড়ীটা পরে ফেলে।
ইশান আসলে শাড়ীটা রেখেছিল কাল বৌভাতে পরার জন্য। কিন্তু তিথি তো এত ধৈর্য্য ধরার মেয়ে নয়।সে শাড়ীটা পরে নিয়ে ইশানকে দেখাতে চলে আসে।ইশান নুডুলসের বাটি নিয়ে এদিকেই আসছিল।
আচমকা কালো শাড়ীটাতে তিথি এসে হাজির ওর সামনে।ইশান তো অবাক হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।তিথি যে এখনইই শাড়ীটা পরবে তা সে ভাবতেও পারেনি।
‘কি?কেমন লাগছে?’
‘পোড়া লাল মরিচের মতন’
‘আবার ফান?সিরিয়াসলি বলুন না’
‘হুম, শাড়ীটা যেহেতু আমার পছন্দ করা তার মানে সুন্দর তো হবেই’
‘ আমাকেওও তো আপনি পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন’
‘তাহলে বুঝে নে উত্তর কি হবে?’
তিথি মুচকি হাসি দিয়ে ইশানকে জড়িয়ে ধরে এরপর বলে,’আমার প্রিয় রঙ টাও মনে রেখে দিছেন? ‘
‘বাটিগুলো পড়ে যাবে,রোমান্টিক হবার একটা সময় থাকে।এখন সেই সময় পার হয়ে গেছে’
‘কই পার হয়েছে?সবে তো রাত দেড়টা বাজে’
‘এখন ঘুমানোর সময়’
এই বলে ইশান তিথিকে নুডুলস খেতে বসিয়ে দিলো।
———-
রকিবের মা এসে দরজা ধাক্কাচ্ছেন,সকাল সাড়ে নয়টা বাজে অথচ নতুন বউ কিংবা বর কারোর দেখা মিলে নাই।
‘রকিব দরজা খোল!এত দেরি করে তো তুই নবজাতক কালেও উঠিসনি।আর আজ!’
‘আপা বুঝেন না কেন,কাল বাসর রাত গেছে।’
‘তো গেছে তো কি হইছে?সকালেও কি বাসর সকাল?’
রকিব চশমা ঠিক করতে করতে এসে দরজা খোলে।তানিয়া তখনও ঘুমাচ্ছিল।রকিবের মা ভেতরে ঢুকে দেখলেন তানিয়া লম্বা হয়ে শুয়ে আছে,গায়ের শাড়ীটাও বদলায়নি।তবে যেমনি কাল সেজেছিল এখনও সেরকমই আছে।রকিবের মা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে ওর কাছে গিয়ে জোরে জোরে ওর নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন।
‘এই যে নবাবজাদি! উঠেন!’
‘মা প্লিজ!আজ আমার টিউশান নাই,একটু ঘুমাতে দাও’
‘রকিব আমাকে শরবতের গ্লাস টা দে তো’
‘কেন? ‘
‘ সেটা তোর জানার প্রয়োজন নেই,দিতে বলছি দে’
রকিব গ্লাসটা এনে দিতেই আন্টি পুরো গ্লাসের শরবত তানিয়ার মুখে ঢেলে দিলেন।তানিয়া তখনও ঘুমাচ্ছিল,শরবত ঢালার পর সে বললো,’উমমম হেব্বি মজা তো!তবে নোনতা কেন?কোন ছাগলে শরবতে নুন দেয়?ঐ খবিশদের আমার একেবারে ভাল লাগেনা’
‘সেই খবিশ তোমার শাশুড়ি লাগে!’
রকিব তানিয়ার পিঠে হাত দিয়ে ওকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো।তানিয়া এবার চোখ মেলে রকিবের মাকে দেখে বলে,’আন্টি আপনি এখানে?ওহ সকাল হই গেছে?সরি সরি!আমি তো এলার্ম দিছিলাম বাজলোনা কেন?ওমা ঘড়িতে তো মাত্র সাড়ে নয়টা বাজে। আমি দশটার এলার্ম দিছিলাম। কিছু কি হইছে নাকি?’
‘কিহ!নতুন বউ দশটায় উঠে?’
‘তো কয়টায় উঠে?’
‘রকিব তোর বউকে ঠিক কর নাহয় আজ রফাদফা হই যাবে’
রকিব তানিয়াকে টেনে নামিয়ে বললো,’ও সারা রাত ঘুমায়নি,ওর মাথা ব্যাথা ছিল মা।এই তো এখনই রেডি হয়ে আসবে’
আন্টি কিছু না বলেই হনহনিয়ে চলে গেলেন।
‘তানিয়া?কি হয়েছে তোমার?এরকম কেন করছো?’
‘আমার ক্লান্তি থাকলে এরকম হয়।এই রোগের নাম ক্লান্তিমিয়া রোগ’
‘ফাজলামি বন্ধ করে রেডি হয়ে আসো যাও’
‘এরকম দেমাগ দেখাচ্ছেন কেন?ও আচ্ছা বাসর রাতে আদর সোহাগ করিনি বলি?দাদু ঠিকই বলেছে’
‘কি বলেছে?’
‘বেডা মানুষকে রাতে আদর করতে না দিলে পরেরদিন সকালে তারা হুদাই মেজাজ দেখায়।দোষ না থাকলেও ক্যাচ ক্যাচ করে’
——–
পান্না এক কোণায় বসে পিঠা খাচ্ছে।আজকে সকালের নাস্তা পিঠা ছিল।রিদম তখনও ঘুমে।পিঠা খেয়ে সে রিদমকে দেখতে যেতে চাইলেও পিংকির কথা মনে পড়ায় আর গেলোনা।চুপ করে যেখানে একটু জায়গা দেখছে ওখানেই বসে থাকছে।
তার মন টিকছেনা,কেউ তার বয়সী নাই যে তার সাথে একটু কথা বলবে।রিদম বললে তাও তার সময় টা কাটতো।
রিদম তখনই ঘুম থেকে উঠে এদিকটায় এসে পান্নাকে দেখে বলে,’টুকু কই?’
‘জানিনা,এখনওও দেখলাম না’
‘তুমি খেয়েছো?’
‘হ্যাঁ’
রিদম মাথা নাড়িয়ে তানিয়াকে খুঁজতে চলে যায়।তানিয়া টিয়া রঙের শাড়ী পরে গয়না গাটি পরছিল সেসময় রিদম এসে বলে,’টুকু তোমার ব্যাগটা খুলো তো’
‘কেন রে?’
‘আমি তোমার গয়নার বাক্সে আমার একটা জিনিস রেখেছিলাম,সেটা এখন লাগবে ‘
তানিয়া ব্যাগটা দেখিয়ে দেয় ওকে।রিদম নিচে বসে ব্যাগ খুলে তানিয়ার গয়নার বাক্স থেকে পান্নার জন্য আনা ব্রেসলেট টা নিয়ে নেয় তারপর চলে যাওয়া ধরতেই তানিয়া ওকে ধরে ফেলে বলে,’এত যে বন্ধুত্ব গাঢ় করছিস,জাপানে গেলে মনে পড়বেনা?’
‘যাব বলেই গাঢ় করছি,যেন শেষ অবধি ফ্রেন্ডশিপ বজায় থাকে’
—–
‘আপা সব মেন্যু তো বললাম,তাও কেন জানি মনে হয় কিছু একটা বাদ গেছে গা!সেটা কি!’
রকিবের মা আর খালা বৌভাতের মেন্যু নিয়ে আলোচনা করছিলেন।তারা সেন্টারে খাওয়াবেন না,বাসার ছাদে খাওয়াবেন।
পান্না ওনাদের কথা শুনছিল,তখন সে এগিয়ে এসে বলে,’চিংড়ি মাছ বাদ গেছে’
‘আরে হ্যাঁ তাই তো!পিচ্চি মেয়েটা ঠিক ধরেছে।আপা চিংড়িও তো লাগবে’
পান্না মুচকি হাসছিল ঐ সময়ে রিদম ওকে ফিসফিস করে ডাকে।নিজের নাম শুনে পান্না পেছনে তাকাতেই দেখে সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রিদম ওকে ডাকছে।
‘কি হয়েছে ভাইয়া?’
রিদম পান্নার হাত ধরে বাসার বাহিরে নিয়ে আসে।এরপর দম ফেলে বলে,’আন্টি দেখলে কত কথা বলবে তাই এখানে আসলাম।এই নাও ধরো’
‘এটা কার?’
‘আমি তোমার জন্য এনেছিলাম পিকনিক থেকে আসার সময়’
পান্না ব্রেসলেট টার দিকে চেয়ে থেকে তার মনে পড়ে পিংকি ওকে অনেক কথা শুনিয়েছিল রিদমের উপহার নিয়ে তাই সে বলে এটা নিবেনা।
‘কেন?এটা নিলে কি হবে?’
‘আপনি এটা অন্য কাউকে দিয়ে দিন।আমার লাগবেনা’
‘তোমার লাগবেনা?’
‘না’
রিদমের খুব রাগ হলো।সে পান্নার সামনেই ব্রেসলেটটা ছিঁড়ে ফেলে চলে গেলো বাসার ভেতর।
এ প্রথম পান্না রিদমের এই রুপটা দেখেছে।
রিদম চলে যেতেই পান্না মুক্তা গুলা কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়।পিংকির ভয়েই সে এটা নিতে চাইছিল না,এটা যদি রিদম জানতো তাহলে এরকম রাগ দেখাতোনা।
——-
রকিব তানিয়াকে নিয়ে বের হয়ে বলে,’সবাইকে সালাম দিবা,কাউকে বাদ দিবানা।এখানে সবাই মুরব্বি ‘
‘ওকে!’
তানিয়া সোফার রুমে এসে লাজুক সুরে বলে,’আসসালামু আলাইকুম সবাইকে’
রকিব মাথায় হাত দিয়ে ফেলে। রকিবের মা তো রেগে আগুন,যেন লাভা উপচে পড়লো রুমে।তিনি রাগে কটমট করছিলেন ঐ সময়ে।রকিব তানিয়াকে ধীরে ধীরে বলতে থাকে সবাইকে আলাদা করে সালাম দিতে।
‘ওকে’
‘আসসালামু আলাইকুম আপনাকে খালা,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে খালু,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে চাচা,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে চাচি,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে জেঠা,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে জেঠি😎’
‘থামো তানিয়া ‘
‘যাক বাবা,আপনি তো বললেন সবাইকে আলাদা করে দিতে’
‘রকিব তোর বউকে ঠিক কর নাহয় আজ খুব খারাপ হই যাবে।’
‘তানিয়া তুমি যদি আর একবার দুষ্টামি করছো তো!’
‘তো?আপনি যদি আর একবার আমাকে বকছেন তো আজ রাতেও ঘুমাই যাবো জলদি’
রকিবের মুখটা শুকনা পাতার মতন হয়ে গেলো।সে আর কিছু বলছেনা।তানিয়ার খুব জোর হাসি আসছিল তাও সে হাসিটাকে আটকে রাখে।সে এরকম টা করছে কারণ কাল বিয়ের পরে সে শুনতে পেয়েছে রকিবের মা যৌতুক চেয়েছেন ইনিয়েবিনিয়ে। তাই তানিয়া এরকম করছে কালকের পর থেকে।বিষয়টা তার হজম হয়নি,সে মানতে পারছেনা এরকম বংশের মানুষ হয়ে কি করে এই যুগে এসে যৌতুক চাইতে পারে।এতদিন আলাপ চারিতা করেও সে মানুষগুলোকে ভালভাবে চিনতেই পারেনি।
চলবে♥