যদি তুমি বলো পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0
382

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫২
আফনান লারা

গায়ে হলুদ শেষে তানিয়া পরিশ্রান্ত শরীরে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ে।ঘুমে চোখ জোড়া খুলতেই পারছিল না সে।পান্না ওখানেই বসে বসে জানালা দিয়ে বাহিরের ঝিলিক বাতি দেখছিল।তানিয়াকে ওভাবে এসে শুয়ে পড়তে দেখে সে কাছে এসে ওকে ভালভাবে পরোক করে নেয়।হলুদের সাজটাও সে তোলেনি।তখন ছাদে গিয়ে তানিয়াকে ভাল করে দেখতে পারেনি পান্না।বড় জোর ৫মিনিটের জন্য থেকেছিল ওখানে।তানিয়াকে সুন্দর লাগছে বলে পান্না মুচকি হাসি দেয়,এরপর রুমের খোলা দরজা দেখে ওদিকে আসে সে।এখন কেউ আসবেনা বলে সে বের হয় রুম থেকে। রিদম গায়ের পাঞ্জাবি খুলে গামছা গায়ে ঝুলিয়ে ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।সম্ভবত ভিতরে বাবা।

‘দরজা খোলো বাবা!আমি গোসল করবো।ঘামে চুলের ভেতরে ঘামাচি হয়ে গেছে।সাবান দিয়ে ঘঁষে ঘঁষে সব উঠাইতে হবে।দরজা খোলো বাবা!’

‘আরে আর দশ মিনিট অপেক্ষা কর।আমারও সেম অবস্থা,মাথায় শেম্পু দিচ্ছি’

‘তোমার রুমের ওয়াশরুমের কি হয়েছে বাবা?’

‘ওটাতে তোর মা মনে হয় কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমাচ্ছে’

‘আজিব!’

রিদম গামছা দিয়ে মুখ মুছে পেছনে তাকাতেই দেখে পান্না ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
লজ্জায় লাল হয়ে রিদম গামছা দিয়ে গা ঢেকে বলে,’তুমি এখানে?’

‘নাহ আসলে রুমে থাকতে থাকতে ভাল লাগছিল না।তিথি আপুর রুমে আমি ওয়াশরুম দেখেছি,ওখানে গিয়েও তো করতে পারেন’

‘নাহ,ওখানে ইশান ভাইয়া গোসল করে।বুঝিনা আজ এত গোসল করছে কেন সবাই!অবশ্য আমিও তো গোসল করতেছি!’

পান্না হাসি দিয়ে সোফার রুমে গিয়ে টিভিটা চালু করে বসে।
তারপর কার্টুন দেখতে থাকে।
——-
ইশান গোসল করছে কারণ তিথি ওর মুখের সাথে সাথে গলার সাইডেও হলুদ লাগিয়েছিল,গায়ে কিছু লেগে থাকলে গোসল না করা অবধি ওর ভাল লাগেনা,তাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে সে।তখন থেকে তিথিকে সে এখনও দেখেনি,মেয়েটা গেলো কোথায়!মায়ের কথায় আবার রাগ করেনি তো?
মাথার চুল মুছে তোয়ালেটা রেখে ইশান বাহিরে বেরিয়ে রিদমকে দেখে জিজ্ঞেস করে সে তিথিকে দেখেছে কিনা।রিদম ও জানেনা তিথির খবর।
ইশানের এবার চিন্তা হলো,সে যে ফোন নিয়ে তিথির বাংলাদেশী নাম্বারটাতে কল করা শুরু করে।
অনেকক্ষণ রিং হবার পর তিথি রিসিভ করে।

‘হ্যালো?তুই কোথায়?গাড়ীর আওয়াজ আসছে কেন?আমাকে না বলে কোথায় গেছিস?’

‘আরে আপনার মা তানিয়াকে একটা কাতান শাড়ী গিফট দিবে গহনার সাথে মিলিয়ে, সেটা কিনতে এসেছি।মা তো একা আসতে পারতেন না।’

‘আমাকে নিয়ে যাওয়া যেতোনা?’

‘নাহ!মেয়েদের শপিংয়ে আপনার কি কাজ?আপনাকে না আনি আপনার গাড়ীটা ঠিকই এনেছি।’

‘তোরা কই এখন? আমি আসতেছি, লোকেশান বল”

‘আমরা চৌধুরী টাওয়ারে,শাড়ী কেনা হলেই মা আপনার নানু বাড়ি যাবে,মামা তো অসুস্থ ‘

‘আচ্ছা আমি আসছি,মাকে গাড়ীতে উঠিয়ে দিবো’

‘আপনার গাড়ীতেই ড্রাইভার দিয়ে আসবে’

‘তো?মাকে দেখতে আসতেছি আমি, তোর কোনো সমস্যা আছে?’

‘সমস্যা নাই,আসার সময় আপনার বাসার গাড়ীটা নিয়ে আসিয়েন বরং।তা নাহলে দি গ্রেট ইশানকে লোকাল বাসে চড়তে হবে।’

‘চড়লাম!সমস্যা কোথায়?’
—–
ইশান আর দেরি না করে শপিংমলে চলে আসে।সেখানে এসে দেখে মা কাতান শাড়ী কিনে এখন আরেকটা শাড়ী দেখছে।

‘কি এত শপিং কেন?আমার বিয়ে তো শেষ’

‘দেখ তো ইশান,এইই শাড়ীটা কেমন?’

‘কার জন্য?তিথি?’

তিথি আইসক্রিম খেতে খেতে একটা ছোট বাবুকে দেখছিল।মা মাথা নাড়িয়ে বললেন ওটা তিথির জন্য দেখছেন।
ইশান শাড়ীটা সরিয়ে বলে,’এটা না,কমলা রঙেরটা নাও।আচ্ছা তুমি এত আদর করছো কেন ওকে?বাহিরের মানুষের সামনে দেখতে পারোনা আর একান্তে এত আদর?’

‘একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা!’
———-

‘হ্যালো?’

‘আসসালামু আলাইকুম আব্বা’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি বলবি বল!আমার এখন গাছের আগাছা পরিষ্কার করার সময়,জানিস না?’

‘রাতের ১টার সময়?’

‘হ্যাঁ,তো?তোর তাতে কোনো সমস্যা আছে গিসু?’

‘আব্বা!গিসু বলিয়েন না তো!আমার নাম গিয়াস। নাম তো আপনার আদরের পত্নীই রেখেছিল ‘

‘হুম!তা বটে।তোর মা জীবনে আমার কথায় চলেনা।কত করে বলছিলাম হিয়াস রাখবো।হিয়াস উদ্দিন,সে কয় হিয়াস নাকি হাঁসের মতন লাগে তাই রাখলো গিয়াস।আমিও কম না।আদর করে তোকে ডাকি গিসু’

‘আব্বা যদি হিয়াস রাখতে তাহলে কি এখন হিসু ডাকতেন🥴?’

‘বেয়াদবের বা…..’

‘বলেন বলেন!বেয়াদবের বাচ্চা বলেন!থামছেন কেন?’

‘না বলবোনা কারণ গালিটা আমার উপর এসেই পড়বে।তা কিসের জন্য ফোন করেছিস সেটা বল,সবসময় আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে উল্টা পাল্টা সময়ে কল করিস’

‘আমার পান্না মামণি কেমন আছে?’

‘আর কেমন থাকবে! বেয়াদব দুইটা আসি ওকে নিয়ে গেছে’

‘কে তারা?কখন এলো!কখন নিলো?আপনি যে আমাকে বললেন না!’

‘আমি ফোনে টাকা ঢুকাই যে তোকে কল দিবো?ছয় মাস আগে ইমার্জেন্সি লোড নিয়ে সেটাও শেষ দিছি।কল দিতাম কি করে?’

‘কারা নিছে?দেখতে কেমন?’

‘একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।ছেলেটা ফর্সা মতন,মেয়েটাও ফর্সা।ছেলেটাকে দেখে বড়লোক মনে হয়েছে।কিন্তু তারা দুজনেই প্রচণ্ড রকমের বেয়াদব।আমার কত গুলো গাছ নষ্ট করে দিয়েছে’

‘পান্না কি তাদের চিনেছে?আপনি বাধা দেননি কেন?’

‘আমি বাধা দিব কেন?তোর মেয়েই তো ডেং ডেং করে চলে গেছে’

‘কিহ!এতবড় ঘটনা ঘটলো!হুমমম!ফর্সা ছেলে মেয়ে!
ঐ রিদম তো কাইল্লা।তাহলে কে!ওহ আচ্ছা তাহলে ঐ ইশান আর তিথি!
তাদের আমার পান্নার সাথে কি কাজ যে এতদূর থেকে নিয়ে আসে!পান্না কোথায়?ওকে তো দেখলাম না অনুষ্ঠানে।’
——-
‘আপনাকে কতবার করে বলেছি গিয়াসকে গিসু বলবেন না।কত সুন্দর নাম গিয়াস দিছি আমি।সারাক্ষণ গিসু গিসু কেমন লাগে শুনতে?
আমাদের মেজো ছেলে কাদেমকেও আপনি সারাদিন কেদু কেদু ডেকে বেড়ান।’

‘এটা আদর।তুমি বুঝবেনা,দেখি মাথার একটা চুল ছিঁড়ে দাও তো’

‘আপনার কারণে চুলগুলা লম্বাই করতে পারিনা,এখন আবার কি দোষ করলাম যে চুল ছিঁড়তে হবে?’

‘আজ বিকালে বাগান দেখতে গিয়ে যে ধপাস করে পড়ে আমার সূর্যমুখী গাছ নষ্ট করেছো ভেবেছো আমি দেখি নাই?’

‘নিজের বউকেও শাস্তি দিবেন?’

‘হ্যাঁ দিবো,বউ বলে শাস্তি একটু বেশিই দিবো’
——-
মাকে বিদায় দেয়ার পর ইশান আর তিথি লোকাল বাসে উঠেছে।সিট এলোমেলো হওয়ায় তিথি সামনের সিটে বসেছে আর ইশান পিছনের সিটে।তিথির পাশে একটা মেয়ে বসা ছিল,মেয়েটা নেমে যাওয়ায় ইশান উঠে আসবে তখনই একটা ছেলে এসে তিথির পাশে বসে যায়,
এরপর তিথির দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে কানে ধরে।

‘হ্যাঁ মামা!ভাবতে পারবিনা কি জিনিস একটা পাইছি’

তিথি চোখ বড় করে বসে থাকলো।ইশানের সাথে একটা লোক বসা তাই সে উঠে তিথিকে সরাতেও পারছেনা।এদিকে ছেলেটা তিথিকে শুনিয়ে শুনিয়ে তার বন্ধুর সাথে যা পারছে,যত পারছে বাজে বাজে কথা বলে চলেছে।

একটা সময়ে ছেলেটা কল রেখে তিথির গায়ের সাথে ঘেঁষে বসে।ইশান উঠে কেলাবে তখনই তিথি ঠাস করে চড় একটা বসিয়ে দিলো।এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’কি বললি?আমি জিনিস?আর কি বললি আমাকে পাচার করতে ৫০হাজার টাকা লাগবে?ওজনে ভারী আমি?বেয়াদব ছেলে!’

‘আজব তো!কথা নাই হুটহাট চড় মেরে দিলেন?আপনি জানেন আমি কি নিয়ে কথা বলছিলাম?আমি এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের বিজনেস করি।মালামাল নিয়ে কথা বলছিলাম’

তিথি আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’তোর মালামালের ফিগার হট হয় তাই না?’

ছেলেটা এবার থতমত খেয়ে যায়।ইশান আর কি কেলাবে,তার বউই ছেলেটাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে চলেছে।
তিথি এবার ইশানের দিকে চেয়ে বললো,’কেমন স্বামী আপনি?মারামারি পারেন না?আমাকে যে ছেলেটা ডিস্টার্ব করতেছে এতক্ষণ খেয়াল করেননি?আমাকে কোলে করে নিয়ে যাবার পর একশান নিবেন?’

ইশান যে তিথির বর এটা দেখে ছেলেটা চলন্ত বাস থেকেই নেমে পড়েছে।ইশান উঠে এসে তিথির পাশে বসে বলে,’আমার আগেই তো তুই পেটালি,আমাকে আর সুযোগ দিলি কই?’
—–
‘গিসু’🐸

‘পিংকির মা তুমিও শুরু করছো?’

‘আপনার বাবা ছোট থেকেই আপনাকে গিসু ডাকে?’

‘নাহ বড় থেকে ডাকে,ছোট থাকতে গোদা ডাকতো।ঐ যে নারকেল গাছের ঢালের লম্বা লম্বা করে লাকড়ি বানায় না? সেটাকে গোদা বলে।তাও ভাল এখন আর গোদা ডাকেনা,গিসু ডাকে।শুনতে অদ্ভুত হলেও গোদার চেয়ে ভাল’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৩
আফনান লারা

বাস থেকে নেমে একা পথে হাঁটছিল দুজন,হাঁটতে হাঁটতে ইশান হঠাৎ থেমে যায়। তিথি ভাবে ঐদিন রাতের মতন বুঝি আবারও সেরকম করে স্পর্শ করবে নির্জন এই রোডে।
কিন্তু নাহ!ইশানের মুখের গড়ন আর কুঁচকানো ব্রু অন্য কিছুর ইঙ্গিত করছিল,মনে হচ্ছিল খুব কঠিন ধাঁচের কথা বলবে সে।
ঠিক তাই হলো।ইশান বললো,’আমার যদি আজ এই সময়ে এসেও এতকিছু না থাকতো,তাহলে কি তুই সেই আগের দিনের মতই ব্যবহার করতি?নাকি বাসর রাতের মতন আকুতি মিনতি করতি?যেমনটা করেছিল সেদিন?’

‘আমি যদি বলি আমি ক্ষমা চাইতাম আগের ব্যবহার নিয়ে তবে কি বিশ্বাস করবেন?’

‘ক্ষমা চাইতি কিন্তু বিয়েটা করতিনা’

‘বিয়ে করতাম না সেটা সঠিক,কারণ আমি যদি জানতাম আপনি এত বড় একজন লোক হয়ে গেছেন তবে কখনওই আপনার বউয়ের জায়গায় নিজেকে বসাতাম না,কারণ আমি তখন আপনার যোগ্য থাকলেও আজকের এই দিনে সেই যোগ্যতা আমার নেই।কুয়িনার মতন মেয়েই সেই যোগ্যতা রাখে।আমি তো আমার মতামত প্রকাশ করবার সুযোগই পাইনি।হুট করে বিয়ে হলো,যার সাথে হবার কথা ছিল তার সাথে হলোনা!বিয়ের আগে যার ছবি দেখেছিলাম,যার সাথে কথা বলেছিলাম,বাসর ঘরে অন্য একটা মানুষকে দেখতে পেলাম’

ইশানের ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে ওঠে।এই উত্তরটাই সে তিথির মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিল।হাসি মুখে কাছে এসে তিথিকে টেনে নিজের গায়ের সাথে লাগিয়ে ধরে আবারও হাঁটতে থাকে দুজনে।
——
রাত ২টার সময় কলিং বেলের আওয়াজ শুনে রিদম চোখ ডলতে ডলতে আসে দরজা খুলতে।সে ভেবেছিল ইশান আর তিথি এসেছে।কিন্তু নাহ,এসেছেন গিয়াস সাহেব।রিদমের চোখ ভর্তি ঘুম ছিল বলে সে শুরুতে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে গিয়াস সাহেব এসেছেন।সে মনে করেছে ভুল দেখছে।কিন্তু গিয়াস সাহেবের ধমকে তার সব হুশ ফিরে আসলো।

‘আঙ্কেল আপনি?এতো রাতে?’

‘আমার মেয়ে কোথায়?’

এটা বলেই গিয়াস সাহেব ভেতরে ঢুকে গেলেন।রিদম তখনও চোখ ডলতেছিলো।গিয়াস সাহেব রুমের আলো জ্বালাতে বললেন ওকে।
রিদম দ্রুত গিয়ে আলো জ্বালায়।গিয়াস সাহেব আঙ্গুল তুলে বলে,’তোমার বড় আপু আর দুলাভাইকে ডাকো,আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে বলবো।আর এটাও জানতে চাইবো আমার মেয়েকে দিয়ে তাদের কি কাজ।’

সেইসময় তিথি আর ইশান চলে আসে।গিয়াস সাহেবকে দেখেই তারা টের পেয়েছে উনার এত রাতে এখানে আসার কারণ।

‘আঙ্কেল বসুন,বলছি আমি’

এটা বলেই তিথি ওনাকে সোফায় বসিয়ে রিদমকে ইশারা করে।রিদম যায় মিষ্টি আর শরবত আনতে।

‘কি বলবে তোমরা?পিংকিকে নিয়ে আমার চিন্তা থাকলেও,পান্না কিন্তু কম নয়।পান্নাকে বরং আমি পিংকির চাইতেও বেশি ভালবাসি।সে কোথায়?কেনোই বা তোমরা ওকে ওর দাদুর বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছো?’

ইশান ওনার পাশে বসে বলে,’পান্না অভিমান করে ওর দাদুর বাড়ি গেছে।এ কয়েকদিনে সে আমাদের খুব কাছের এবং আদরের হয়ে গেছে।বাসার এত বড় একটা অনুষ্ঠানে সে থাকবেনা তা কি হয়?তাই নিয়ে এলাম।আর আপনার থেকে লুকিয়ে রাখার কারণ সে তার বড় বোনের উপর অভিমান করেছে।কারণটা আমরা কেউ জানিনা,আপনার ও জানার প্রয়োজন নেই।দুই বোনের ব্যাপার তারাই মিটিয়ে নিবে।এখন পান্নার কথা যাতে পিংকি না জানে,কারণ পিংকি জানলে সে পান্নার সাথে আবার বিবাদ করবে’

‘সে কই এখন? আমি তাকে একবার দেখবো’

তিথি ওনাকে নিয়ে তানিয়ার রুমের কাছে আসে,দরজা ঠেলে ভেতরে দেখায় ড্রিম লাইটের আলোয় তানিয়ার পাশেই ঘুমাচ্ছে পান্না,তানিয়ার নাইট ড্রেস পরে কাঁথা টেনে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে সে।গিয়াস সাহেবের চোখ জোড়া জুড়িয়ে গেলো আদরের ছোট মেয়েকে এত শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে।
তিনি চোখের কোণার পানি মুছে বললেন,’আমি তাহলে যাই?’

‘বিয়ে বাড়ি থেকে খালি মুখে যেতে নেই’

এটা বলে তিথি ওনাকে নাস্তা দিলো।উনি মিষ্টি মুখে দিয়ে বললেন,’ইশান বাবা,কোনো ছেলে দেখেছো?’

‘দেখেছি’

গিয়াস সাহেব অনেক আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন ছেলে কি করে।

‘ছেলে জাপানেই থাকে,পড়াশুনা করছে।পড়াশুনা শেষ হলে আমার কোম্পানিতে যাবে এরপর লাইফ সেটেল’

‘সেকি!এত বড় খবর আমায় বললেনা?’

‘তবে একটা আর্জি আছে’

‘কি?’

‘ছেলের আপনার বড় মেয়েকে নয় বরং ছোট মেয়েকে পছন্দ’

‘তা বেশ!একটা মেয়েকে যদি ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পারি তাহলেও মনটাকে বুঝাতে পারবো আমি’

রিদম ইশানের দিকে তাকিয়ে রইলো চুপচাপ।এত বড় কথা কিনা সে এখন জানছে।ভালই!খারাপ না!পান্নার বিয়ে হবে,লাল টুকটুকে বউ সাজবে!টুকুর মতো করে ওর ও বিয়ে হবে।ইশান দুলাভাইয়ের মতন ওর বর হবে।ওকে অনেক আদর করবে!
এটাই তো কামনা।

‘এই ছেলে!’

‘জ্বী আঙ্কেল’

‘আমাকে একটু বাসা অবধি দিয়ে আসো তো।আমি একা যেতে পারবোনা।ভয় করে’

রিদম মাথা নাড়িয়ে ওনার সাথে চললো।পথে যেতে যেতে গিয়াস সাহেব বললেন,’যাক আমার ছোট মেয়েটার একটা ব্যবস্থা তাহলে হয়েই গেলো।এখন পিংকিটাকে নিয়ে যে কি করবো।ওকে এত করে বলি সাধারণভাবে চলাফেরা করতে পান্নার মতন।এখন হলো তো!মানুষ সাধারণটাকেই বেছে নিলো।এত হাবিজাবি করার কোনো মানে আছে?
আজ গিয়ে বলবো সে যেন পান্নার মতন হয়,চুপচাপ ভদ্র,অমায়িক আর মিষ্টি’

‘হুম।খুব মিষ্টি’

‘কিছু বললে?’

‘নাহ!বললাম বাসা এসে গেছে’

‘ঠিক আছে,আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।তুমি যাও নাহয় তুমি তো আবার বারান্দা দিয়ে উঁকি দিবা।সব পিংকির সাথে দেখা করার ধান্ধা! ‘

রিদম চলে আসে।মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো।পান্নার বিয়ে একটা ভাল ছেলের সাথে হবে এটা জেনে তার এত মন খারাপ করার কি আছে?
——
তিথি আর ইশান চলে গেছে তাদের রুমে।পান্নার খুব পানির পিপাসা পেয়েছিল তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে খাচ্ছিল,ঐ সময়ে রিদম বাসায় ঢোকে।
পান্না ওকে দেখে অবাক হয়ে জানতে চায় এত রাতে সে কোথায় গেছে।
রিদম কিছু না বলেই রুমের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।

‘কি হলো?’

পান্না ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,রিদম কিছুই বলছেনা দেখে সে চলে যায়।বুঝতে পারলোনা তার দোষটা কোথায়।

পরেরদিন সকাল সকাল কাজের ব্যস্ততা শতগুণে বেড়ে গেছে।পান্না হলুদে তিথির শাড়ী পরলেও আজ কি পরবে?দাদুর বাসা থেকে যেগুলো এনেছে সেগুলোর মাঝে তো ভাল নাই।
আজ তো তিথির জামা পরতে পারবেনা।তাই ওকে একবার হলেও বাসায় যেতে হবে।বুকে সাহস নিয়ে সে বাসায় আসে।ভয়ে ভয়ে কলিংবেলে চাপ দেয়।

দরজা খোলে পিংকি।সে পান্নাকে দেখে একটুও আশ্চর্য হয়নি,যেন সে জানে পান্না আসবে।
সে দরজা খুলেই রুমে চলে গেছে।পান্না মায়ের সাথে দেখা করে সেও রুমে আসে,এরপর ওয়ার ড্রোবের ড্রয়ার খুলে নিজের পছন্দের একটা জামা হাতে নেয়।

‘এত কথা শুনালাম তাও আসলি?’

পান্না কিছু বলেনা।চুপ করে জামার ওড়না ভাঁজ করতে থাকে।

‘কি হলো কথা বলছিস না কেন?তোর কি গায়ে চামড়া নাই?আবার এসে পড়েছিস?বাবাকে কি জ্ঞান দিছিস?বাবা সকাল থেকে আমার মাথা খারাপ করে রেখেছে এক কথা বলতে বলতে”পান্নার মতন হতে হবে””
আমি হবো তোর মতন?আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই।তোর মত ন্যাকা করে ভাল সাজতে পারিনা আমি। ”
——-
রিদম লাল পাঞ্জাবি পরে তানিয়ার জন্য গাড়ীতে বসে আছে।বিয়েটা কমিউনিটি সেন্টারে হবে।সেখানেই যাবে ওরা।
তানিয়া এসে বসতেই পান্না আর পিংকি চলে আসে।পান্নাকে দেখে রিদমের মন আবার খারাপ হয়ে যায়।তানিয়া পান্না আর পিংকি বলে ওর সাথে বসতে।পিংকি আগেভাগে উঠে তানিয়ার পাশের খালি সিটে বসে যায়।
এদিকে অন্যান্য মেহমান এসে পিছনের সিট দখল করে ফেলে।
তখন পিংকি বলে,’তুই তিথি আপুদের সাথে আসিস।এখানে তো আর জায়গা নেই’

কিন্তু সেইসময় তানিয়া পান্নাকে দাঁড়াতে বলে।

‘পান্না,তুমি ছোট মানুষ,আসো আমার কোলে বসবে।আমি তোমায় কোলে নিতে পারবো’

পান্না খুশি হয়ে এসে তানিয়ার কোলে বসে।এবার সে রিদমের খুব কাছাকাছি হয়ে গেলো।পিংকি তো জ্বলে আগুন,এদিকে রিদম এক দৃষ্টিতে পান্নার কোঁকড়ানো চুলগুলো দেখছিল।বাজারে যে পুতুল বিক্রি হয়,কিছু পুতুলের চুল এরকমই কোঁকড়ানো থাকে।পান্নাকে সেই পুতুল গুলোর মতন লাগছে আজকে।রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানিয়া একটা খোঁচা দিয়ে বললো সামনে তাকাতে।
——
পেছনের গাড়ীতে গিয়াস সাহেব আর তার স্ত্রী বসেছেন।আজকে গিয়াস সাহেবের ডান পাশে বসেছেন তানিয়ার খালু।

গিয়াস সাহেব দাঁত কেলিয়ে বললেন,’আসসালামু আলাইকুম ভাই’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।কে আপনি?আপনাকে তো আমাদের বংশের কারোর চেহারার মতন লাগছেনা!বিনা দাওয়াতে খেতে আসছেন মিয়া!’

‘আহা সালাম নিয়েই কেউ এত চটে যায়?শান্ত হোন😘।’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫৪
আফনান লারা

‘আচ্ছা আপনি কি আদালতের মুরি পদের চাকরি করেন?’

‘হ্যাঁ,আপনি কি করে জানলেন?’

‘আসলে মুরিরাই দরকারি কথা বাদ দিয়ে বেদরকারি কথা বেশি বলে’

‘আপনি কি আমাকে খোঁচা দিলেন?’

‘না তো,আমি তো গুতা দিলাম’

‘আপনি সত্যি করে বলুন তো,তানিয়ার কি হোন আপনি?’

‘আমরা ঐ যে আপন প্রতিবেশী।আচ্ছা ওসব বাদ,আপনার কোনো ছেলে আছে?’

‘কেন বলুন তো?’

‘শুনতে চান?তবে বলি।আমার না খুব কিউট,সুইট দুটো মেয়ে আছে।একটার বিয়ে ঠিক হইছে,এখন আরেকটা খালি আছে।আমি সেন্টারে গেলে ওকে দেখাবো আপনাকে ‘
——–
বিয়ের অনুষ্ঠানে গাড়ী থেকে নেমে যাবার পর পিংকি পান্না রিদম সব আলাদা আলাদা হয়ে গেছে। কাউকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা,একসাথে দেখাও যাচ্ছেনা।পান্না অবশ্য রিদমকে খুঁজার চেষ্টা করেনি,কিন্তু পিংকি খুঁজে বেড়াচ্ছে কারণ সে পান্নাকে দেখিয়ে দিবে রিদম কেবল ওকেই কেয়ার করে,পছন্দ করে।
কিন্তু সে তো পাচ্ছেই না।এদিকে পান্না তিথির খালামনির সাথে খেতে বসেছিল।রিদম কোথা থেকে এসে পান্নাদের টেবিলে খাবার দাবার ঠিক ভাবে ব্যবস্থা করা শুরু করে দিলো।খালামণি খুশি হয়ে ওকে শিখিয়ে দিচ্ছেন কি কি লাগবে।রিদম ওনাদের খাওয়া শেষ হওয়া অবধি টেবিলের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।
পিংকি তন্নতন্ন করে খুঁজে অবশেষে দেখা পেলো ওর।

‘একি রিদম?তুমি কোথায় হারাই গেছো?তোমাকে কত যে খুঁজলাম।কি করছিলে এতক্ষণ?’

‘টুকুর বিয়ে।অনেক বেশি ব্যস্ত জানোই তো’

পান্না খাবার খেয়ে তানিয়ার কাছে গিয়ে বসে আছে,রকিবরা এখনও আসেনি।এদিকে রিদম ব্যস্ততার কথা বলে আবার গায়েব হয়ে গেছে।
পিংকি ওর পিছু পিছু চলছিল ওমনি গিয়াস সাহেব ওকে ডাকলেন এসে খেতে বসার জন্য।
——
তিথি আর ইশান এখনও আসছেনা তার মোক্ষম কারণটি হলো তিথি ইশানের কথার অবাধ্য হয়ে তানিয়ার সাথে পার্লারে সেজেছে আর তাই ইশান ওকে পুনরায় গোসল করিয়ে আনতেছে,এই জন্য এত দেরি।

‘আপনি খুব অন্যায় করলেন আমার সাথে।এটা ঠিক হলোনা’

‘ঠিক তো তুই আমার সাথে করিসনি।তোকে বলেছি মেকআপ করা আমার পছন্দ না।তার পরেও এত ভারী মেকআপ করেছিস।’

‘এখানে দশ হাজার টাকার মেকআপ ছিল’

‘আমি তোকে দশ হাজার টাকা দিবো,তাও এত পেনপেন করিস না তো।আমাকে ড্রাইভ করতে দে’

‘আপনার কারণে আমার নিজের বোনের বিয়েতে যেতে দেরি হয়ে গেলো।’

‘তাই?আমার কারণে?’
——–
রকিব তানিয়ার পাশে বসার পর চারিদিক খেয়াল করে বলে,’আচ্ছা তিথি আর ইশান ভাই কোথায়?’

‘তিথি আপু মেকআপ করেছিল তাই ভাইয়া ওনাকে গোসল করিয়ে আনতেছে’

‘এরকমই হওয়া উচিত সব হাসবেন্ডকে’

‘তাই নাকি?আমি কিন্তু তিথি আপুর মতন না,আমাকে আপনি শীতকালে ১০দিন ছাড়া গোসল করাতে পারবেন না’

‘ফরজ গোসল বলে কিছু জানো?’

তানিয়া ব্রু কুঁচকে তাকায়।রকিব হাসি দিয়ে বলে,’নামাজ পড়তে হলে গোসল তোমাকে করতেই হবে।এবার ভাবো তুমি দশ দিনের রেকর্ড ধরে রাখবা নাকি নামাজ পরার জন্য ফরজ গোসল করবা’

‘দূরে থাকবেন আমার থেকে।’

রকিব হাসছে মিটমিট করে।ঐ সময়ে ইশান তিথিকে নিয়ে হলে প্রবেশ করে।তিথির আম্মু ওকে খুব বকাঝকা দিলেন এত দেরি করে আসার জন্য। এদিকে তিথি মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা ঠিক কি কারণে এত দেরি হলো।
——
‘বড়টাই সুন্দর ছিল গো আপা,সবই কপাল!আমরা গেছিলাম ওরে দেখতে তখন সে ছিল না,আমার ছেলে ছোটটাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলে।দুজনের চেহারায় অনেক মিল কিনা!আমরা শুরুতে বুঝতে পারিনি যে আমরা ভুল পাত্রীকে দেখছি। মনে হয় যেন জমজ বোন।অবশ্য জামাই একটাও সুন্দর পাইছে।দুজনকে বেশ মানাইছে!’

‘এটাও তো সুন্দর বইন,বড়টার চেয়ে একটু লম্বা বেশি।এটা তো ভালই!’

‘লম্বা ধুই পানি খাব আমি?’

রিদম এসে রকিবের মায়ের পাতে রোস্ট এক্সট্রা একটা দিয়ে বলে,’সুন্দর ধুই পানি খাবেন আন্টি?আনি দিবো?’

তানিয়ার শাশুড়ি চটে গেলেন এ কথায়।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন শুধু।

পান্না একা একা স্টেজের দিকে তাকিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল,পিংকি ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,’আবার কবে দাদুর বাড়ি ফিরছিস?’

‘এই তো তিথি আপুরা জাপান চলে গেলেই’

‘ওনারা জাপান যাওয়ার সাথে তোর দাদুর বাড়িতে যাওয়ার কি সম্পর্ক?’

‘আপুরাই বলেছে ততদিন থাকতে’

‘শুন!এসব করে না কোনো লাভ নাই।রিদম তোর না,আমার ফ্রেন্ড’

‘আমি জানি কোনো লাভ নাই, তাই আমি কিছুই করছিনা’
——-
তিথি তানিয়ার শাড়ীর সেফটিপিন ঠিক করছিল।ইশান রকিবের সাথে ছবি তোলা শেষে রকিব বলে,’ভাই ভাগ্য কি জিনিস দেখলেন?কার বউ কে পেয়ে গেছে’

ইশান হাসি দিয়ে বলে,’কে জিতছে?’

‘আমরা দুজনেই মনে হয় জিতছি।আপনি যেমন চাইলেন,তেমনই পাইলেন।আর আমিও পেলাম ‘

‘নাহ!আমি চাইছি একটু বুদ্ধিশুদ্ধি ধাঁচের,কিন্তু আমার জনের মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই।

‘আমার জনের আবার মহা বুদ্ধি কিন্তু কি লাভ হইলো বলেন!আমাকে এক হাটে বেচে আবার এক হাটে কিনে’

‘নিজের মতন বউ জীবনেও হাসবেন্ডরা পায়না,বিপরীতে পায়।থাক ভাই কাঁদিস না,আমাদের কপালই এমন’

‘আমাদের মতন বউ পেয়ে কপাল এরকম খারাপই যদি হয় তা হলে চুম্মাইতে আসেন কেন?’

তিথির কথা শুনে রকিব লজ্জায় লাল হয়ে তানিয়ার কাছে চলে গেছে এদিকে ইশান তিথির কান টেনে ধরে বলে,’কপাল খারাপ যে সেটা বুঝতে শিখেছি বলি আদর করি।কারণ হাতে আর অপশান নাই’

‘অপশান নাই মানে?’

‘কারণ এরকম বলদের ভেতরে ভাল মানের প্রোডাক্ট আর নেইই তাই’

‘আপনি আমাকে বলদ বললেন?’

‘না সরি,ভুল হলো।বলদি হবে’
——-
বিয়েটা হয়ে যাবার পর যখন বিদায়ের সময় আসলো তখন সবাই কাঁদছিল কিন্তু তানিয়া বাদে।সে ওদের কান্না দেখছিল।সে কাঁদছেনা কারণ তার মেকআপ নষ্ট হই যাবে। মা বাবা, রিদম সবাই কেঁদেছে তাও তানিয়ার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও বের হয়নি।

রিদম চোখ মুছতে মুছতে সেন্টারের বাহিরে চলে গেছিলো,তার এত বেশি কান্না আসছিল,তিথির বেলায় ও এতো কাঁদেনি সে।তানিয়াকে সে একটু বেশি ভালবাসে,কারণ তানিয়া ওর মতই দুষ্টুমি করতো,দুজনে একসাথে সব জায়গায় ঘুরতো।
হঠাৎ সামনে টিস্যু দেখতে পেরে রিদম টিস্যুটা নিয়ে বললো,’থ্যাংকস পান্তুয়া ‘

‘আমি পিংকি’

রিদম চোখ মুছে পেছনে তাকায়।পিংকি রাগান্বিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।এরপর রিদম অন্যদিকে ফিরে বলে,”সরি আমি ভাবলাম পান্না’

‘পান্নাকে পান্তুয়া ডাকো,আমাকে কি ডাকবে শুনি?’

‘তোমার নাম পিংকিই সুন্দর’

‘দাও না একটা নাম,যেটা তুমি ডাকবে’

রিদম বিরক্ত হচ্ছিল,তাও মুখে হাসি ফুটিয়ে সে বলে,’পিংকিই সুন্দর,এর বেশি বাড়ানো কমানো ঠিক না।অতিরিক্ত হয়ে যাবে’

এটা বলে সে সেন্টারের ভেতরে চলে যায়।আসলে পান্না টিস্যু নিয়ে আসছিল রিদমের কাছে কিন্তু পিংকি ওর হাত থেকে টিস্যু নিয়ে নিজেই আগে চলে আসে এখানে।
—–
সবশেষে তিথি তানিয়াকে ধরে কাঁদার সময় ওর কানের কাছে বলে,’কাঁদ একটু বলদি!মানুষ কি বলবে!’

‘তুমি কাঁদো আমি ঠোঁট নাড়াচ্ছি’

‘একটা চড় দিবো।ফাজলামি করিস কেন!খালারা কটু কথা বলবে’

‘খালাগো!!হুহুহু হেহে হেহে😂!!’

তানিয়া কান্নার অভিনয় করতে গিয়ে হেসে দিলো।

গিয়াস সাহেব দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তানিয়ার খালুকে জোর করে ধরিয়ে বললেন,’দেখেন!কি সংস্কার আপনাদের মেয়ের!বিদায়বেলা হে হে করে হাসছে।আর ঐ দেখেন পিংক কালারের জামা পরা আমার মেয়ে পিংকি।কত আদবকায়দা আমি ওকে শিখিয়েছি।আপনার ছেলের ঘরের বউ বানালেই বুঝতে পারবেন।’

‘ওটা আপনার মেয়ে?আরে ঐ তো কিছুক্ষণ আগে আমার পাঞ্জাবিতে মাংসের ঝোল ফেলে একবার সরি তো বলেইনি উল্টে বলে গেলো আমি নাকি চোখে দেখি হাঁটিনা,চোখ আকাশে রেখে হাঁটি’

‘আরেহ না,আমার মেয়ে এমন করতেই পারেনা’

‘তার মানে আপনিও বুঝাতে চাইছেন আমি চোখে কম দেখি?’

‘না না,তা কখন বললাম?’

‘তবে শুনুন,আমার কোনো ছেলে নেই।পাঁচটা মেয়ে আমার।বুঝেছেন?’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে