যদি তুমি বলো পর্ব-৫০+৫১

0
366

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫০
আফনান লারা

ইশান এত বড় ভুল করেছে তা নিজেই বুঝতে পেরে সে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে থাকলো।গাছগুলো থেকে সরলেই যুদ্ধ শুরু হবে। তিথি ইশানের গালদুটো টিপে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,’চুল আপনি ছিঁড়বেন নাকি আমি ছিঁড়ে দিতাম?’

‘চুপ কর!পান্না যাও তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে আসো’

তিথির মাথা এখনও ব্যাথা করছে,আসমান আলীর লোক যে জোরে চুল টান দিয়ে ছিঁড়েছিল।ইশান ও তো অপরাধ করেছে,ওকেও তো শাস্তি পেতে হবে।
তিথি ওমনি দাঁত কেলিয়ে চিঁৎকার করে বলতে থাকে,’দাদু দেখে যান,আপনার বিলাতি চারা গাছ নষ্ট করে দিছে’

এটা শুনে দাদুর যেন মাথার রগই ছিঁড়ে গেছে।ইশান কপালে হাত দিয়ে সরে দাঁড়ালো চারা গাছ থেকে।দাদু এসে তার চারা গাছের এই করুণ দশা দেখে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেললেন।পালোয়ানদের আবার ডাকলেন ইশানকে ধরে চুল ছেঁড়ার জন্য।
ইশান তখন দাদুকে থামিয়ে নিজেই নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে ওনাকে দিয়ে দিলো।

‘একটা দিছো কেন?৪টা চারাগাছ নষ্ট করেছো তুমি।আরও ৩টা চুল ছিঁড়ো বলছি!’

তিথি মিটমিট করে হেসেই চলেছে।ইশান আরও ৩টা চুল ছিঁড়ে ওনার হাতে দেয়।এরপর নিজের মাথা ঘঁষতে থাকে।

পান্না তৈরি হয়ে এসে ইশানের গাড়ীতে বসে।তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে।তানিয়া বারবার কল করে জিজ্ঞেস করছে ওরা আসলে কোথায়।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে কিছুক্ষণ পরেই।
তিথি ওকে আশ্বাস দেয় তারা দ্রুত ফিরছে।

অনেকটা পথ আসার পর লুকিং গ্লাসে ইশান দেখতে পায় পান্না পেছনের সিটে ঘুমিয়ে আছে।তখন তারা জ্যামে ছিল,ইশান আস্তে করে এগিয়ে এসে তিথির গালে চুমু একটা দিয়ে আবার ঠিক হয়ে বসে পড়ে।তিথি ফোনে তানিয়ার হলুদের ছবি দেখছিল,হঠাৎ এরকম ছোঁয়ায় সে অবাক হয়ে গেলো।গালে হাত দিয়ে ইশানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো সে।

‘কি?ওভাবে তাকানোর কি আছে?টমেটোর মতন গালটাকে ধরে দেখতে মন চাইলো।তাতে দোষ কি?’

‘ধরে তো দেখেননি।একেবারে থুথু লাগিয়ে দিয়েছেন।আর টমেটো মানে?আমি কি ভুটকি যে আমার গাল টমেটোর মতন হতে যাবে?

‘সব ভুটকির গাল টমেটোর মতন হয়না,আবার সব টমেটোর মতন গালের মানুষ ভুটকি হয়না’

‘আমার পারমিশন ছাড়া এরকম আর করবেন না’

জ্যাম ছেড়ে দেয়ায় ওরা মেইন রোড থেকে এলাকার গলিতে নেমে গেছিলো।ওমনি ইশান কারের লাইট নিভিয়ে তিথিকে ঝাপটে ধরে বললো,’পারমিশন যদি না নেই,তবে কি করবি বল?’

তিথি চেঁচিয়ে বললো,’পান্না দেখো!’

ওমনি ইশান তিথিকে ছেড়ে দিয়ে আলো জ্বালায়।পান্না তখনও ওঠেনি, সে ঘুমিয়েই যাচ্ছে।

তিথি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।আর রাগী চোখে ইশানের দিকে চেয়ে থাকলো।ছেলেটা ভারী অসভ্য হয়ে যাচ্ছে।এতদিন ভালই ছিল!

বাসায় ফিরে তিথি পান্নাকে নিয়ে সোজা তার রুমে যায়।এরপর নিজের ক্লাস সিক্সের একটা শাড়ী বের করে যেটা কমলা রঙের ছিল।

‘এটা পরে নাও।আমার ছোটবেলার শাড়ী।তোমার গায়ে ফিট হবে।’

পান্না শাড়ী দেখে বলে,’আমি তো পরতে জানিনা ‘

‘আমি পরাই দিচ্ছি’

তিথি হাতের ফোন রেখে পান্নাকে সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে সাজিয়ে তোলে।এরপর ওর থুঁতনি টেনে বলে,’নাও!তুমি রেডি।এবার আমি যাই,আমার অনেক কাজ।তুমি বরং ছাদে গিয়ে অনুষ্ঠান দেখো’

তিথি চলে যাবার পর পান্না আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়।আজ বাসায় যত মানুষ এসেছে সবাই ওর অচেনা।তার শুধু ভয় হচ্ছে পিংকিকে নিয়ে।যদি ওর সামনে একবার পড়ে তাহলে শেষ!

চারিদিকে নজর রাখতে রাখতে পান্না হাঁটছিল ওমনি তার ধাক্কা লাগে রিদমের সাথে।রিদম পানির বোতল নিয়ে ফ্রিজের কাছ থেকে এদিকেই আসছিল।শুরুতে শাড়ী পরা পান্নাকে এই প্রথমবার দেখে সে চিনতে পারেনাই।বাসার অন্য আত্নীয় মনে করেছিল,কিন্তু পান্নার মিষ্টি হাসি দেখে সে ঠিকই চিনে ফেলেছে।

‘তুমি?’

‘আমাকে কেমন লাগছে ভাইয়া?তিথি আপু সাজিয়ে দিয়েছে’

‘তুমি এখানে কি করো?তুমি না দাদুর বাড়ি গেছো?’

‘হুম তো।কিন্তু তিথি আপু আর ইশান ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছে।আপনি চলে যাবেন তাই আপনাকে বিদায় দেয়ার জন্য’

‘শাড়ী এটা কার?’

‘তিথি আপু দিয়েছে।ভাল না?’

‘খুব সুন্দর,তোমাকে খুব মানিয়েছে।আপুকে বলে এটা নিয়ে যেও।পিংকি কোথায়? ‘

পান্না ওমনি রিদমের মুখে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে,’বুবুকে বলিয়েন না আমি যে এখানে’

‘কেন?’

‘সমস্যা আছে।’

‘তোমার হাতের থেকে গাঁদা ফুলেরগন্ধ আসছে কেন?গাঁদা ফুল তো ছাদে!তার মানে তুমি তিথি আপুর রুমে আমি যে গাঁদা ফুলের মালা রেখেছিলাম,ওটা নিয়েছো?’

‘হুম।এই যে চুলে লাগিয়েছি।আচ্ছা আপনি কি করতেন ঐ মালা দিয়ে?’

রিদম হাসি দিয়ে চলে গেলো।আর কিছুই বললোনা।তার এতক্ষণ যে মনমরা চেহারা ছিল,পান্না আসায় সেই চেহারা বদলে সতেজতা ফিরে এসেছে।কাউকেই কাজ করতে দিচ্ছেনা সে,সব নিজেই করে চলেছে।পান্না চুলে গাঁদা ফুলের মালাটা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ছাদে এসেছে। বুবু আর বাবা মা মনে হয় এখনও আসেনি,তাই এই সুযোগে সে তানিয়ার গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়।তানিয়া টিটকারি করে বললো,’দেখো নিজের গায়ে লাগিওনা।অবিবাহিত মেয়েরা গায়ে হলুদ লাগালে বিয়ে হয়না’

পান্না চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।তানিয়া ফিক করে হেসে ফেলে পান্নার বিয়ের প্রতি এতো সিরিয়াসনেস দেখে।

তিথি শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে ছাদে আসছিল,ওমনি চিলেকোঠার কাছাকাছি আসতেই কেউ একজন ওকে টান দিয়ে কোণায় নিয়ে গেলো।তিথি চিৎকার করলোনা কারণ সে হাতের স্পর্শ চিনতে পেরেছে।

‘আপনার কি হলো বলুন তো?নেশাজাতীয় কিছু খেয়েছেন?’

‘তোরে সামনে দেখলে আমার নেশা গ্রহণ করা লাগেনা,তুই নিজেই একটা আস্ত নেশা’

‘তাই নাকি?তো এখন কি করতে চান?’

‘এই নেশা ঢোক গিলে খেয়ে ফেলতে চাই ‘

‘কোন পাশ থেকে শুরু করবেন শুনি?’

ইশান হাসি দিয়ে তিথির হাত কামড়ে ধরে এরপর ওর কপালে চুমু এঁকে দেয়।তিথি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল।ইশান যখন দেখলো তিথি বেশ সুখে আছে তখন সে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে তিথির হাতে একটা কামড় দিয়ে চলে যায়।
তিথি ব্যাথায় হাত নাড়তে নাড়তে বলে,’আজ রাতে আমি যদি তানিয়ার সাথে না শুইছি তো আমি মিসেস ইশান আরাফাত না’
——
‘আসসালামু আলাইকুম ভাই’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।আপনি কে ভাই?’

‘আমি গিয়াসউদ্দিন।দি গ্রেট গিয়াস উদ্দিন।ঐ যে পিংক কালারের বাড়িটা আছেনা?ওটা পুরোটাই আমার’

‘বাহ বাহ! ঢাকা শহরে নিজেদের বাড়ি থাকা খুবই বড় বিষয়।তা আপনি তানিয়াদের কি হোন?’

‘আমি তো তানিয়ার আপন প্রতিবেশী।আর আপনি?’

‘আপন প্রতিবেশী!ওহ! বুঝলাম।আমি তো বর পক্ষ।রকিবের মামা হই।ডালা নিয়ে আসলাম’

‘আচ্ছা আপনারা ডালা যে সাজিয়েছেন, ঐ ডালাগুলো কোথা থেকে নিয়েছেন?আসলে আমার মেয়েদের বিয়ে তো।সেম টু সেম ডালাই নিবো ভাবছি।তানিয়াদের চেয়েও আপনাদের ডালাগুলো আমার অতিরিক্ত ভাল লেগেছে’

‘আপনার মেয়ে আছে?কিসে পড়ে তারা?’

‘একজন সিক্সে পড়ে,আরেকজন ফোরে পড়ে’

‘এত ছোট বয়সে বিয়ে দিবেন?’

‘না তো,আমি বিয়ে দিব ওরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে।আগে থেকে ভেবে রাখছি যাতে পরে সময় নষ্ট না হয়’

‘ওহহহ!ভাল খুবই ভাল।কিন্তু যুগের সাথে সাথে ডিজাইন বদলে।এখন আপনার যে ডিজাইন ভাল লাগছে,পরে সেটা নাও লাগতে পারে।ঐ সময়ে দেখা গেলো আরও সুন্দর সুন্দর ডালা বের হবে’

‘আচ্ছা আপনার কি ছেলে আছে?রকিবের মতন’

‘হ্যাঁ,আমার দুটো ছেলে।আদিত্য ও আরিফ।দুজনেই এমবিএ করছে’

‘মাশাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ! মারহাবা!!!’

‘মানে বুঝতেছিনা।আপনার কি হলো ভাই!কোনো সুসংবাদ নাকি?’

‘আমার মেয়ে দুটোর সাথে বিয়ে দিবেন?’

‘এসব কি বলেন ভাই?সঠিক সময়ে বিয়ে দিলে আমার ছেলেদের আপনার মেয়ের বয়সী মেয়ে থাকতো।এত বড় বয়সের গ্যাপে বিয়ে দেয়া উচিত না’

‘নিক জোনাস আর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বয়সের গ্যাপ ১০বছর হলে আপনার ছেলেরা কেন আমার মেয়েদের বিয়ে করতে পারবেনা?’

‘এখানে তো ১০বছর না। বরাবর ১২/১৩বছরের গ্যাপ’

‘আরে বর বউ সাজালে পারফেক্ট জুটি মনে হবে।আপনি এক কাজ করেন,আগামীকাল বিয়ের দিন দু পক্ষকে দেখিয়ে দিবেন।মেয়েরাও ছেলেদের দেখে নিলো আর ছেলেরাও মেয়েদের দেখে নিলো।ভাল হবেনা?’

‘তানু!তানু!’

‘জ্বী মামা?’

‘তোমার চেনা কোনো মানসিক ডাক্তার আছে?’

‘কেন মামা?কার কি হয়েছে?’

‘এই যে এই লোকটা…..একি গেলো কই?আরে ভাইই চলে যাচ্ছেন কেন?মেয়ে বিয়ে দিবেন না?’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৫১
আফনান লারা

পিংকিকে এক নজর দেখতে পেয়ে পান্না লুকিয়ে তিথির রুমে এসে বসে আছে।সে এখান থেকে আর বের হবেনা বলে ঠিক করেছে।রিদম বিরিয়ানির প্লেট হাতে পান্নাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল,এদিকে পান্না মানা করে দেয়ায় ওকে নাম ধরেও ডাকতে পারছেনা সে।প্লেট হাতে হন্তদন্ত হয়ে সে পান্নাকেই কেবল খুঁজে চলেছে,ঠিক তখনই সে পিংকির সামনে পড়ে।

‘রিদম?খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’

‘এটা আসলে..আমি খাব আমার খিধে পেয়েছে তো খুব। তাই। ‘

‘চলো,আমি তোমার পাশে বসে বসে তোমার খাওয়া দেখবো।’

‘না’

‘কেন?’

‘আমি আসলে আগে এই পাঞ্জাবি টা বদলাবো,তারপর খাব।সো এক্সকিউজ মি?’

এটা বলে রিদম তিথির রুমে ঢুকে ভেতর দিয়ে দরজা লক করে দেয়।
এরপর দরজার সাথে লেগে সে শুনার চেষ্টা করে পিংকি চলে গেছে কিনা।
পান্না ওখানেই ছিল,রিদমকে এরকম করতে দেখে সে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে ওর পিঠে আঙ্গুল দিয়ে ওকে ডাকতে শুরু করে।
রিদম এত বেশি ভয় পেয়ে গেলো যে সে পিছিয়ে দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে পড়ে।পিংকি বাহিরেই ছিল,সে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,’কি হয়েছে রিদম?দরজা খোলো’

‘না না,কিছু হয়নি। তুমি যাও,আমি চেঞ্জ করবো’

রিদম এবার পান্নাকে ফিসফিস করে বলে,’আর একটু হলে তো আমার হার্ট এটাক হয়ে যেতো। এভাবে কেউ ডাকে?তোমায় আমি কত খুঁজেছি জানো?’

‘কেন খুঁজেছেন?’

‘বিরিয়ানি খেতে,নাও ধরো।ইশ আমি তো এখন বের হতে পারবোনা।বের হলেই পিংকি দেখে ফেলবে,সাথে তোমাকেও দেখবে।আমি বরং বসে থাকি,তুমি খাও’

পান্না মাথা নাড়িয়ে খেতে বসে,খেতে খেতে সে রিদম খেয়েছিনা কিনা তা জানতে চায়।

‘না,আমার খিধে নেই।আমি প্রথমে যখন বিরিয়ানি রান্না হয়েছিল তখন খেয়ে নিছিলাম একবার তাই এখন আর খিধে নেই’

পান্না ছোট ছোট হাতে খাবার খেতে ব্যস্ত,তার ছোট ছোট ঠোঁটজোড়া,খাবারের ধরন।মাথায় গাঁদা ফুলের মালা,সব একত্রিত হয়ে এক বিশাল সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে।রিদম হা করে তাকিয়ে ছিল।ছেলেদের যৌবন যে কাল থেকে শুরু হয় রিদম সেই কালে সবেমাত্র পদার্পণ করেছে।এ কালে যাকে সবার আগে মনে ধরে তাকেই আজীবন মনে থাকে।রিদমের মনে হয়েছিল তার সেই ভাললাগা হলো পিংকি।কিন্তু নাহ!আজ পান্নার এই অসামান্য রুপ তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ভাললাগা আর ভালবাসার মাঝে আকাশ পাতাল তফাত।
রঙচটা লিপস্টিক হোক কিংবা শীর্ণ ঠোঁটজোড়া হোক,পাউডারে মাখা সাদা মুখ হোক কিংবা সন্ধ্যার ঘুম থেকে ওঠা শুকনো মুখ হোক!ভালবাসার কাছে এসব কি এসে যায়?

রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পান্না বলে,’কি হয়েছে ভাইয়া?’

‘নাহ কিছুনা।খাও’
——
তিথি তানিয়ার মুখে হলুদ লাগিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় হলুদ ভর্তি করে নিয়ে ইশানকে খুঁজছে। ইশান রকিবের বড় খালাতো ভাই একটার সাথে স্টেজ নিয়ে আলাপ করছিল।তিথি সুযোগের অপেক্ষায় আছে,কখন শরীফ ভাইয়া উঠে যাবে আর সে গিয়ে ইশানের মুখে হলুদ লেপটে দিয়ে আসবে।
সুযোগ খুঁজতে খুঁজতেই সে ঐ মোক্ষম সুযোগটা পেয়ে যায়,ওমনি আর দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ছুটে এসে ইশানের দুইগালে মনমত হলুদ লেপটে দেয় সে।
কিন্তু শরীফ উঠে যাবার পর পরই ঐ সিটে এসে বসেছিলেন ইশানের মা।তিনি এই অবস্থা দেখে রাগান্বিত হয়ে বলেন,’এইসব কি তিথি?তুমি কি ছোট বাচ্চা মেয়ে?এত লোকের সামনে কি করলে এটা? আজ কি তোমাদের গায়ে হলুদ?’

তিথি লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে।
ইশান তখন মাকে থামিয়ে বলে,’আমি ওর গালে এমন করে লাগিয়েছিলাম, তাই সেও এমনটা করেছে’

‘তুই করেছিস সে বিষয়টা নেয়া যায়।কিন্তু ও মেয়ে মানুষ হয়ে এমন কেন করবে?’

‘দাঁড়াও এর প্রতিশোধ আমি ওর থেকে এখনই নিবো’

এটা বলে ইশান তানিয়ার সামনে গিয়ে হলুদের কৌটা এনে তিথির দুই গালে ভাল করে লাগিয়ে দিয়ে বললো,’দেখো মা,ভাল হয়েছে না?’

মিসেস আরাফাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।এমনটা আশা করেন নাই,তিথিও আশা করেনি।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে তিথির গাল টিপে বললো,’নাও,এবার গোসল করতে যাও।নাহয় বাবুর্চি হলুদ বাটা মনে করে মাংসের ঝোলে ঢেলে দিবে’
——-
পান্নার খাওয়া শেষ হতেই রিদম ওর হাতে কোকাকোলা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।পান্নার মন খারাপ,বুবু আর বাবার ভয়ে সে চেয়েও অনুষ্ঠানটা দেখতে যেতে পারছেনা।গায়ে হলুদে মানুষ কত মজা করে!গান,নাচ এগুলাই তো এই অনুষ্ঠানকে চমকপ্রদ করে তোলে!অবশ্য মন খারাপ করার কিছু নেই।নরসিংদী দাদুর বাড়িতে থাকলে তো এসব ও দেখতে পারতোনা।তার ভাগ্য ভাল যে এত সুন্দর মনের মানুষেরা মিলেছে।সবাই তাকে কত ভালবাসে!রিদম কত কেয়ার করে!

এইসব ভেবে পান্না মিটমিট করে হাসছিল রুমের এক কোণায় বসে।তিথি গোসল করতে এসে দেখে পান্না লজ্জা পাচ্ছে একা একা।

‘একি!এত লজ্জা কিসের?’

পান্না চোখ মেলে তিথিকে পুরো হলুদে হলুদ দেখে ফিক করে হেসে দেয়।তিথি এবার নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো।

‘এরকম কি ইশান ভাইয়া করেছে আপু?’
——–
‘আপা ভাল আছেন?’

মিসেস আরাফাত পাশে তাকিয়ে দেখলেন গিয়াসউদ্দিন সশরীরে দাঁড়িয়ে আছে।উনি যেন চোখের সামনে ভূত দেখেছেন।লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলেন এরপর ঢোক গিলে বললেন,’জ্বী ভাল ছিলাম’

‘বসুন না,উঠলেন কেন?’

গিয়াস উদ্দিন বসে পড়ে ওনাকেও বসতে বললো কিন্তু উনি আর একটা সেকেন্ড ও ওখানে দাঁড়াননি।ছুটে পালালেন।গিয়াস সাহেব গালে হাত দিয়ে পাশে চেয়ে দেখেন এক ভদ্রমহিলা।

‘আসসালামু আলাইকুম আপা?’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

‘ভাল আছেন?’

‘কেমনে ভাল থাকবো ভাই?বউকে দেখেন!হিন্দি গানে ডেং ডেং করে নাচছে।এসব দেখলে ভাল লাগে?’

‘ঠিক! আজকালকার মেয়েরা সংস্কৃতির ‘স’ ও জানেনা’

‘সব চাইতে বড় বেয়াদব ঐ মেয়েটা ঐ যে হলুদ রঙের থ্রি পিস পরা।কেমন ওড়না খুলে নাচছে!’

গিয়াস উদ্দিন ঐদিকে তাকাতে তাকাতে বললেন ‘হুম!ঐ যে পারিবারিক শিক্ষার অ…..
কথা শেষ করতে না করতেই তিনি দেখলেন তার গুণী মেয়ে পিংকি ওটা।ওমনি ঢোক গিলে তিনি কথাটা পাল্টে বললেন,’আপা আপনার ছেলে-পেলে আছে?মানে বলতে চাইছি বাসায় আপনারা কজন? ‘

‘আমরা চারজন,আমি আমার হাসবেন্ড,আমার ছেলে আর আমার একজন ননাস।’

‘বাহ!অসাধারণ।আমি না একটা ভাল ছেলে খুঁজছি।আমার খুবই গুনবতী,রুপবতী দুটো মেয়ে আছে।তা আপনার ছেলে কি করে?’

‘ব্যবসা করে’

‘বাহ বাহ!ঢাকা শহরে ব্যবসা মানে তুমুল কিছু।তা আপনার ছেলের নাম কি?কিরকম মেয়ে তার পছন্দ যদি একটু বলতেন!!আসলে বিয়ে বাড়িতেই তো মানুষ বিয়ে খেতে এসে আরেকজনের বিয়ে ঠিক করে।তাই না?’

সেই ভদ্র মহিলা উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন,’আমার ছেলের নাম রকিব।তার সাথেই তানিয়ার বিয়ে হচ্ছে’

ওমনি তানিয়ার মামা শ্বশুর এসে বললেন,’আপা তোকেও ধরেছে?এই লোকটাকে পাগল বললেও পাগল লজ্জা পাবে।উনি একটা মেন্টাল!’

‘ভাই মেন্টাল মানেও তো পাগল।বাংলা ভাষার সৎ ব্যবহার করতে শিখুন তারপর পাগল বলতে আসবেন।’

‘রাখেন তো মিয়া!এই লোককে ভেতরে ঢুকতে দিছে কে!আর এক মিনিট থাকলে তো অনুষ্ঠানের সবার চৌদ্দ গুষ্টির সাথে নিজের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তারপর ছাড়বে!’

‘ভাই শোনেন!ঠিক আছে মজা টজা বাদ।সিরিয়াসলি নেন!একবার ভেবে দেখিয়েন,বয়স কোনো ফ্যাক্টই না।আমার ওয়াইফ যখন জন্মেছিল তখন আমি জেএসসি পরীক্ষা দিছি।তাহলে ভাবেন কত বড় বয়সের গ্যাপ।আর আপনি কিনা ১২/১৩ বছর নিয়ে ভাবছেন।আমার মেয়ে গুলো কিন্তু খুব সুইট।’

‘আমি তবে একটা কথা বলি আপনাকে? আপনার পাবনার মানসিক হাসপাতাল একবার ঘুরে আসা উচিত’

‘উফ বুঝলাম না!সবাই আমাকে পাবনাতে যেতে বলে কেন’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে