যদি তুমি বলো পর্ব-৪৮+৪৯

0
343

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৮
আফনান লারা

পিংকির যে বয়স এ বয়সে মেয়েরা কাছের মানুষকেও হিংসার চোখে দেখে।হিংসার কারণ না থাকলেও হিংসা করে,তাদের মনে হয় ঐ মানুষটা অনেক খারাপ,তার খুশি চায়না।তাই তারা দুচোখে সহ্য করতে পারেনা অপর প্রান্তের মানুষটিকে।
পান্নাকে সেরকমই লাগে পিংকির কাছে।তার হিংসা বেড়ে দাঁড়ালো পাঁচগুণ যখন সে জানতে পারলো রিদম পান্নাকে একটা মালা গিফট করেছে।রিদম তো পারতো তাকেও একটা মালা দিতে।তাহলে সে এমনটা কেন করলোনা?
পান্না গলায় মালাটা পরে আয়নাতে নিজেকে দেখছিল অনেক গুলো খুশি মনের মাঝে জুড়ে রেখে।তার এতটা খুশি লাগছিল যে, সে ভাষায় তা প্রকাশ করতে পারছিল না।

‘পান্না এদিকে আয় ‘

পান্না খুশি মনে পিংকির কাছে এসে দাঁড়ায়।
‘কি বুবু??’

পান্নার কথাটা শেষ হতে না হতেই পিংকি মালাটা টেনে ছিঁড়ে ফেললো ওর গলা থেকে।এরপর চিৎকার করে বললো,’তুই জানিস রিদম আর আমি একজন আরেকজনকে পছন্দ করি।তার পর কোন সাহসে তুই রিদমের কাছ থেকে মালা চেয়ে নেস?তোর লজ্জা করেনা?’

পান্না ছিঁড়ে যাওয়া মালাটার দিকে চেয়ে আছে।তার যেন বুকটা ফেটে গেছে ঐ মালা ছিঁড়ার সাথে সাথে।চোখে পানি নিয়ে সে মালাটার যত অংশ ছিল সব জোড়া লাগাতে শুরু করে।
পিংকি উঠে চলে যায় তখনই।
—–
তানিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছাদে হবে।রিদম অনেক বেশি ব্যস্ত। তার এই ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দিলেন বাবা।রকিবদের বাসা থেকে আসা ডালার ফল তিনি এইবার গিয়াস সাহেবের বাসায় পাঠাতে চান,আগেরবার তিথির বিয়ের ডালার ফল আরাফ আঙ্কেলের বাসায় পাঠিয়েছিলেন।
রিদম সোজা মানা করে দেয় সে গিয়াস সাহেবের বাসায় যাবেনা।কিন্তু বাবা ওর হাতে ডালা দিয়ে আরও পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে বললেন তার ভিডিও গেমসের অনলাইন পেমেন্টের টাকা এটা।
রিদম অবাক হয়ে গেছে।বাবা তাকে টাকাটা দিয়েই দিলো শেষমেশ?

কি আর করার!ডালা নিয়ে সে ঐ বাসায় এসে হাজির।আঙ্কেল দরজা খুলবেনা এটা নিয়ে সে নিশ্চিত কারণ উনি তো এখন হুইলচেয়ারে
কিন্তু যেটার ভয় ছিল সেটাই হলো।দরজা খুলেছেন সয়ং গিয়াসউদ্দিন।তার পা ভাল হয়ে গেছে আজকে ভোরবেলায় ওয়াশরুম থেকে পিছলে পড়ে যাবার সময়।
রিদম ওনাকে দেখে ভয়ে ভয়ে ডালাটা এগিয়ে ধরে বলে,’বাবা পাঠিয়েছে ‘

তিনি ডালা দেখে খুশি হয়ে গেলেন।ফলফলাদি তার খুব বেশি পছন্দ,খুশির চোটে তিনি দরজা খোলা রেখে ডালাটা নিয়ে চলে গেছেন।সেই সময় পিংকি রিদমকে দেখে এগিয়ে আসে কথা বলার জন্য।

‘দেখলাম পান্নাকে মালা দিছো।আমার জন্য কি কিনেছো?দিলে না যে?’

‘তুমি তো অনেক কিছু কিনলে দেখলাম।তাই তোমার জন্য কিছু কেনা হয়নি।তবে হ্যাঁ এই ব্রেসলেট টা পান্নাকে দিতে ভুলে গেছি।ও কোথায়?ওকে ডেকে দাও’

পিংকি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ব্রেসলেটটা নিয়ে যাও।আর দেয়া হবেনা’

‘কেন?’

‘কারণ পান্না চলে গেছে দাদুর বাড়িতে। এখন থেকে ওখানেই থেকে পড়াশুনা করবে’

‘কিন্তু কেন?আর হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো?গেলোই বা কখন?একবার দেখা করে গেলো না কেন?’

‘তাতে কি রিদম?তোমার তো খুশি হবার কথা যে পান্নার মতন আমিও দাদুর বাড়ি চলে যাইনি’

রিদম চুপ করে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ কি এমন হলো যে সে দাদুর বাড়িতে একেবারে চলে গেছে?
——
তিথি হলুদ শাড়ী একটা পরে তানিয়ার সাথে পার্লারে বসে আছে।তানিয়া সাজছে আর তিথি বসে বসে ফোন টিপছে। ইশানের কড়া নিষেধ,তিথি সাজতে পারবেনা।

‘আপু ইশান ভাইয়া আর রকিবের মাঝে আকাশপাতাল তফাৎ’

‘তা তো থাকবেই।রকিব খুবই ভদ্র একটা ছেলে।আর ইশান তো কিছু হলেই ছ্যাঁত করে ওঠে।’

‘না সেটা নয়।ইশান ভাইয়া তুমি না বলতেই সব করে দেয় আর রকিবকে আমার ধরে ধরে করাতে হয়।বিয়ের পর কি হবে আমার!’

‘সব দিক দিয়ে তো পাওয়া যায়না।’

‘তুমি তো পেলে’

‘কোথায়?রকিবের মতন ভদ্র হলে তো হতোই।একেবারে অভদ্র একটা ছেলেকে হাসবেন্ড হিসেবে পেয়েছি আমি।’

‘তাই না?’

ইশানের কথা শুনে তিথি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।মেয়েদের পার্লারে ওকে ঢুকতে দিয়েছে কিভাবে সেটাই ভাবছে তিথি তখনই পার্লারের আপুটা বললো ইশান নাকি তার ক্লাসমেট ছিল।
তিথি জিভ কামড়ে এক পাশে গিয়ে লুকিয়ে আছে।তার মানে এতক্ষণ যা যা বলেছে সব এই মেয়েটা ইশানকে বলে দিবে নয়ত ইশানই সব শুনেছে আগেই এসে।

‘তানিয়া তুমি সাজো,আমি আমার বোনকে তোমায় নিয়ে বাসায় ফিরতে বলেছি।এখন তোমার আপুকে নিয়ে আমি একটু আমার বাসায় যাব কাজ আছে’

‘কি কাজ?’

‘গেলেই দেখবি,চল চল’

ইশান তিথিকে আর একটা কথাও বলতে দেয়নি।টেনে নিয়ে গেছে।
তিথি বের হয়ে বলে,’কি হলো বলুন না,কেন যাচ্ছি?’

‘আমরা বাসায় যাচ্ছিনা একচুয়ালি’

‘তাহলে কোথায়?’

‘আমি অভদ্র’

‘না না একদমই না’

‘আমি কিছু না কিছু হলেই ছ্যাঁত করে উঠি’

‘না না,এগুলা মিথ্যা কথা।আপনি তো খুব ভাল’

ইশান আর কিছু বললোনা,গাড়ীর ভেতর তিথিকে ঢুকিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজেও এসে বসে।
তিথি ভয়ে শেষ,না জানি আজকে ওর ১২টা বাজায়।
ইশান গাড়ীর সামনের কাঁচের উপর হাত রেখে বলে ‘এই কাঁচ ভেঙ্গেছিলি, মনে আছে?’

‘হুম’

‘ভাঙতে খুব ভালো লেগেছিল তাই না?ভেবেছি তোর থেকে আর প্রতিশোধ নিবোনা।কিন্তু এখন মনে হয় এতদিন যা প্রতিশোধ নিছি ওগুলার একশান কম ছিল।’

তিথি ঢোক গিলে বলে,”আমি সত্যি ফান করে বলেছিলাম।সরি’

‘এখন আর সরি বলে কি লাভ?’

‘আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

‘নরসিংদী ‘

‘এতদূর?কেন?’

‘গেলেই দেখবি ‘
——-
রিদম মন খারাপ করে এক কোণায় বসে আছে,কোনো কাজেই হাত দিচ্ছেনা,তানিয়ার কাজিন যারা আছে তারা রিদমের অনুপস্থিতিতে সব কাজে হেল্প করছে।তানিয়া পার্লার থেকে সেজে আসার পর থেকে খেয়াল করেছে রিদম মনমরা হয়ে বসে বসে টিভি দেখছে।

‘কিরে?তোর আদরের টুকুর গায়ে হলুদ,কাজ না করিস অন্তত কথায় কথায় নাচবি তো!কি হলো তোর?’

‘কিছু হয়নি’

‘বল আমায়।’

‘না তো কিছু হয়নি’
——
তিথিকে নিয়ে ইশান এসেছে পান্নার দাদার বাড়ি।রিদমের মন খারাপ দেখে ইশান জানতে পারে পান্না নাকি কাল রাতেই তার চাচ্চুর সাথে দাদার বাড়ি চলে গেছে।ওর বাবা মা আগেও চাইতে সে যেন দাদুর বাড়িতে থেকে মানুষ হয়,কারণ দাদা দাদি একা থাকেন।পান্না রাজি হতোনা,কিন্তু কাল রাতে হঠাৎ করে সে মত পাল্টায় এবং যাওয়ার জন্য জেদ করে।
তার চাচ্চু ঢাকায় ছিলেন বলেন যাবার সময় ওকে নিয়ে গেছেন।
ইশান তিথিকে নিয়ে এখানে আসার কারণ যে ঘটনা ঘটেছে তাকে ঠিক করা।তার বারবার মনে হচ্ছিল কিছু তো একটা হয়েছে যার জন্য পান্না এতদিন যেটাতে রাজি হয়নি,সেটাই করতে রাজি হয়ে গেলো,রাতারাতি চলেও গেলো!

এসব শুনে তিথি বলে,’রিদম তো পিংকিকে পছন্দ করে জানি’

‘তোর মন্ডু জানিস!’

গাড়ী থেকে বের হয়ে দুজনে আসমান আলীর বাড়ি খুঁজতে লাগলো।দ্রুত কাজ করতে হবে,সন্ধ্যার পর তানিয়ার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।দেরি হলে সে আবার রেগে যাবে।
তিথি হাতে ঠিকানা নিয়ে ছুটতে গেলো ওমনি ইশান ওর হাত টেনে ধরে।

‘একি!মানুষ দেখলে কি বলবে?আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?’

‘আমি অভদ্র তাই না?’

‘না রে ভাই।তুমি অনেক ভদ্র,আমাকে মাফ করে দাও।আর বলবোনা’

‘ভাই??তাই না?’

‘রাস্তার মধ্যে কি শুরু করেছেন?’

‘রাস্তাটা ফাঁকা,আর আমি যতদূর জানি এই রাস্তায় দুই ঘন্টা ওর একটা সাইকেল যায়।সুতরাং আমার যেটা করার সেটা করতে সময় নিতেই পারি’

‘মানে!’

“করেন করেন, কেউ দেখছেনা ভাই’

এ কথা শুনে ইশান আর তিথি দুজনেই দূরে সরে উপরে তাকায়।একটা বন্ধ দোকানের ছাদে বসা এক যুবক কথাটা বললো।ইশান সানগ্লাস ঠিক করে বলে,’আসমান আলীর বাড়ি চিনো?’

‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকে শুনছিলাম।বাড়ির নাম দিয়ে চুমু ঢাকতে এ প্রথম শুনলাম’

‘হোয়াট চুমু!কি বুঝাতে চাইছো তুমি?’

‘ওটাই বুঝাতে চাইছি যেটা এখন করতে চাইছিলেন আপনারা।আমি কিন্তু সব দেখছি’

‘কি দেখছো?’

তিথি লজ্জায় লাল হয়ে ইশানের পকেট হাতিয়ে মানিব্যাগ বের করে এক হাজার টাকার নোট নিয়ে বলে,’নাও ধরো,চা বিসকিট খেয়ে নিও’

ছেলেটা হাসি দিয়ে নোটটা নিয়ে এক দৌড় দিছে।

‘আপনার জন্য এক হাজার টাকা লস হলো।গাড়ীতে অভদ্রগিরি দেখাতে পারতেন না?’

‘কিসের লস!ছেলেটাকে যে টাকা দিছিস, ওটা নকল টাকা ছিল।তানিয়ার হলুদে টাকা ছিঁটাবো বলে নকল টাকা এক বান্ডেল জোগাড় করেছি’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৯
আফনান লারা

পান্নার দাদুর বাড়িকে স্বাভাবিক মনে করেই এসেছিল ইশান আর তিথি।কিন্তু গিয়াস উদ্দিনের মতন একটা লোকের পৈতৃক বাড়ি আর কিরকমই আশা করা যায়?উনি যেরকম তার চেয়ে দ্বিগুণ হওয়াই তো স্বাভাবিক।
গিয়াস সাহেবের পছন্দ ভিনদেশী ফলফলাদি,আর তার বাবা আসমান আলীর পছন্দ ফুল গাছ।গেইট দিয়ে ঢোকাই যায়না বাগানবিলাসের লতাপাতার জন্যে।তারা লতাপাতা কাটেনা কারণ আসমান আলী নাকি মনে করেন গাছ কাটা মানে আখিরাতে নিজের মাথার একটা করে চুল ছেঁড়া।
তাই কেউ যদি ভুলবশত গাছ কেটেও ফেলে তাকে এর প্রতিদান হিসেবে একটা চুল ছিঁড়ে ওনাকে দিতে হবে।ওনার নিজস্ব জাদুগর আছে এসব মানুষের চুল দিয়ে।সেখানে কাঁচের বাক্সে চুল থাকে আর অপরাধ করা ব্যাক্তির নাম লেখা থাকে।
এইসব বলছিল আসমান আলীর বাগানের কেয়ারটেকার মন্টি।তার মাথায় একটা চুল ও নাই।ইশান জানতে চাইলো এই বয়সে সে টাক হয়েছে কেন।তখন ছেলেটা লজ্জা পেয়ে বলে,’হে হে!টাক হবো কেন!আসলে আমি বাগানের দেখাশুনি করি তো!মাঝে মাঝে ভুলবশত গাছের ঢাল ভেঙ্গে ফেললে চুল ছিঁড়ে প্রতিদান দিতে হয়।’

‘তার মানে তুমি প্রতিদিন ঢাল ভাঙ্গো?’

‘নাহ তা কেন!নতুন চুল গজালেই ঢাল ভেঙ্গে ফেলি ভুলে তখন আর কি!’

‘সাংগাতিক!’

‘চলুন না আমরা চলে যাই।আমার ভয় করছে।কদিন আগেই চুলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করেছি।আমার এত স্বাদের চুল।যদি ছিঁড়তে হয়?’

‘আমরা কি গাছ কাটবো নাকি?আমরা গিয়ে শুধু কথা বলবো’

কোনোরকমে দুজনে ভেতরে প্রবেশ করে।বাড়িটা এত সুন্দর যে বলে বোঝানো দায়।বাগান থাকা বাড়ি যত শ্যাওলা জমেই থাকুক না কেন,দর্শনার্থীর চোখে সে বাড়ি অপরুপ সুন্দর।ইশান আর তিথির কাছে সেরকম সুন্দরই লাগছে বাড়িটা।তারা দেখতে দেখতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা খোলাই ছিল।

ভেতরে এসে তারা তো অবাক,সব কিছু প্লাস্টিকের,একটাও কাঠের ফার্নিচার নেই। কি আজব!

আরেকটু ভেতরে যেতেই তারা একজন ভদ্র লোককে দেখে থেমে যায়।উনার ইয়া বড় বড় চুল।শুরুতে মেয়ে মনে করেছিল তিথি,পরে পোশাক আশাকে ছেলে চিহ্নিত করলো।

‘আপনিই কি আসমান আলী?’

‘কে তোমরা? ‘

‘আমরা পান্নার আত্নীয় হই,ওকে ডেকে দিবেন?’

‘তার আগে বলো তোমরা আমার কোনো গাছের পাতা ছিঁড়ো নাই তো?

‘না,ভুলেও না’

‘ঠিক আছে,বসো।কফি আনার ব্যবস্থা হচ্ছে’

তিথি বললো,’আপনারা চা খান না?’

‘চা গাছের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে বানানো হয়।কোনো গাছপ্রেমী মানুষ এই জঘন্য কাজ করতে পারেনা।আমি কফি খাই।কফি বীজ থেকে তৈরি হয়।বুঝেছো?’

‘জ্বী দাদু’

তিথি ভয়ে ভয়ে ইশানকে দেখছে। ইশান ও চুপচাপ ওর পাশে বসে পড়ে।এরপর হেসে হেসে বলে,’আপনাদের দেখছি সব ফার্নিচার প্লাস্টিকের।ভালো ভালো!।তা শোয়ার খাট ও কি প্লাস্টিকের?’

‘গাছপ্রেমী হতে হলে সর্বদিক দিয়ে হতে হয়।আমার বাড়ির সব খাট সিমেন্ট দিয়ে ঢালায় করে বানানো।বুঝেছো?’

‘হুম বুঝেছি।আচ্ছা আপনার চুল এত লম্বার কারণ জানতে পারি?যদি কিছু মনে না করেন?’

‘কিছু মনে করি কিনা সেটা ভাবলে আর জিজ্ঞেস করেছো কেন?এমনিতেও হুটহাট আসা মেহমান আমার পছন্দ না।পান্নাকেও পছন্দ হয়নি,আসার সময় বলে আসতে পারতো!’

এই শুনে তিথি আর ইশান চোরের মতন বসে থাকলো।ভদ্রলোক এবার ওদের সামনের চেয়ারে বসলেন।এরপর বললেন,’গাছের পাতা অযথা ছিঁড়লে তাদের মাথার চু্ল ছিঁড়াই আমি।কিন্তু আমি কোনোদিন গাছের পাতা ছিঁড়ি না।তাই আমার চুল ভাল এবং সুস্থ এবং লম্বা আছে।বুঝেছো?’

ইশান আর তিথি মাথা নাড়ায়।কফি এসে গেলো। দুজনেই চুপচাপ কফি খাচ্ছে।পান্না নাকি জাদুগর পরিষ্কার করতে গেছে তাই ওর আসতে দেরি হচ্ছে।
এই সুযোগে ইশান বলে সে আর তিথি ওনার বাগানটা ঘুরে দেখতে চান।

‘আপনার কি মাথা গেছে?জেনেশুনে কুয়োতে লাফ দিতে চান কেন?বাই চান্স গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেললে কি অবস্থা হবে জানেন?’

‘আরে সমস্যা নাই।এতদূর যখন এসেছি এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যায়না’

ইশান তিথিকে জোর করে বাগানের দিকে নিয়ে আসে।বাগান দেখে তিথি অবাক হয়ে যায়।এত সুন্দর ফুলের বাগান!
তিথি হাত দুটো পিঠের সাথে লাগিয়ে হাঁটছে যাতে ভুলেও তার হাত দিয়ে কোনো পাতা না ছিঁড়ে,আসমান আলী ওদের পিছু পিছু আসছে।
ইশান তখন বললো,’ এত এত ফুল আপনার গাছে। বিক্রি করলে তো অনেক টাকা পেতেন’

‘ফুল বিক্রি করেই তো আমার বাগানের এত বিস্তর হলো।ফুল ছেঁড়া যায় তবে গাছ না।প্রতিদিন ভোর ৫টায় দুটো ট্রাক আসে।সাদা,হলুদ আর লাল গোলাপ,অর্কিড,গাঁদা এসব নিয়ে চলে যায়।’

‘আপনার তাহলে অনেক টাকা’

‘হুম।আমি বাগান আরেকটা করেছি সেটা নরসিংদী থেকে অনেকদূরে।’

‘তার মানে ফুল ছেঁড়া যাবে?’

এটা বলেই তিথি একটা গোলাপ গাছ থেকে ফুল কতগুলা নিয়ে নিলো।খুশি আর তার ধরেনা।
ইশান তখন ওকে বলে ধীরে সুস্থে করতে,তাড়াহুড়া যেন না করে।
কিন্তু তিথি এতটাই এক্সাইটেড ছিল যে গোলাপ ছিঁড়ার জন্য টান দিতেই গাছটা গোড়া থেকে উঠে ওর হাতে চলে আসলো।এটা দেখে আসমান আলীর যেন মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়েছে।

তিথি ভয়ে ভয়ে গাছটাকে মাটিতে পুঁতে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই আর আগের মতন ঠিক করতে পারেনা।যেমন গাছ তেমনই পড়ে থাকে।

ইশান তখন আসমান আলীকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,’দাদু আমরা গাছটাকে আবার পুঁতে দিবো,আপনি এত প্যানিক হইয়েন না।একটু সময় দিন’

‘খামোশ!!মন্টি চন্টি,খন্টিকে ডাক দে!’

ওমনি দুজন পালোয়ান এসে হাজির হলো।তিথি ভয়ে ইশানের পেছনে লুকিয়ে পড়ে।
আসমান আলীর নির্দেশে ইশান আর তিথিকে একটা বড় গাছের সাথে বাঁধা হলো।তিথি কান্নাকাটি করছে তার চুল নিয়ে।ইশানকে বাঁধা হয়েছে কারণ তার হাত খোলা থাকলে সে তিথিকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে।

‘মন্টি!এই মেয়ের মাথার চুল ছিঁড়ো।লম্বা দেখে একটা ছিঁড়বে’

‘না না!ইশান আপনি কিছু করছেন না কেন!’

ইশান ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তোকে ১০০বার করে বলছি গাছে হাত দিস না,দিস না!তাও শুনলিনা তো!এবার ভোগ!’

‘কেমন স্বামী আপনি?’

মন্টি তিথির মাথার চুল একটা ছিঁড়ে জাদুঘরে রাখতে চলে গেছে। তিথি চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো।কত বড় পাগলের পাল্লায় পড়েছে তার হুশ ওর এখন আসলো।তাই ভয়ে আর শোকে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে তিথি।

এবার তিথির আর ইশানের হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হলো।পান্না এসে এই অবস্থা দেখে নিজেই ট্রমাতে চলে গেছে।দাদুকে সে বকাও দিলো এমনটা করার কারণে।কিন্তু দাদুর কাছে অপরাধ মানে অপরাধই।সে যেই হোক না কেন!গাছের ক্ষতি করলে শাস্তি পেতেই হবে’

ইশান পান্নাকে জানায় সে যেন ওদের সাথে ফিরে ঢাকায়।কিন্তু পান্না সাথে সাথে মানা করে দেয়।

‘কি হয়েছে পান্না?রিদম কিছু বলেছে?’

‘না ভাইয়া।আমার ইচ্ছে আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো ‘

‘কিন্তু কেন?আমাদের বলতে কি সমস্যা? ‘

‘কিছু হয়নি’

‘ঠিক আছে থেকো।কিন্তু বিয়েটাতে তো অন্তত এটেন্ড করবা।চলো!ব্যাগ গোছাও’

‘আমি যাব না ভাইয়া’

তিথি কাছে এসে পান্নার হাত দুটো ধরে বলে,’আমাকেও শেয়ার করবেনা?’

তিথির মায়া জড়িত কথায় পান্না আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলোনা।হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।তিথি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,’আমায় বলো,আমি সব সমাধান করে দিবো’

‘আমি চাই রিদম ভাইয়া আর পিংকি আপু যেন বিয়ে করে।কিন্তু আমি কখনও তাদের খারাপ চাইনা আপু।বিশ্বাস করো!’

তিথি ইশানের দিকে তাকায়।তার মানে গোড়ার ভেজাল পিংকি লাগিয়েছে।
তিথি পান্নাকে বলে,’ঠিক আছে!এখানেই থেকো।কিন্তু তুমি কি জানো?আমরা তানিয়ার বিয়ে শেষ হলে জাপান যাবার সময় রিদমকে সাথে নিয়ে যাবো?’

‘একটু শুনেছি ‘

‘এটাই সত্যি।শেষবার ওকে দেখবেনা?’

‘উনি কি আর আসবেন না কখনও?’

‘বিয়ে করার জন্য আসবে কয়েক বছর পর’

‘ওহ!ঠিক আছে।কিন্তু আমি বাসায় যাব না।বুবু দেখলে রাগ করবে’

‘যেতে হবেনা।তুমি আমাদের বাসায় থাকবে, কেমন?’
—-
‘স্যার?স্যার?’

ইশান বিরক্ত হয়ে পেছনে চেয়ে বললো,’কি?’

মন্টি বললো,’আমাদের দাদার জানের জান,কলিজার কলিজা বিদেশী বুনো ফুলের চারার উপর দাঁড়িয়ে আছেন আপনি।যে চারা দাদাজান নিজে বিদেশ গিয়ে এনেছিল তিনদিন আগে’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে