যদি তুমি বলো পর্ব-৪৬+৪৭

0
387

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৬
আফনান লারা

হাতে হাত রেখে পথ চলতে চলতে সেরাতে ইশান,তিথির বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।যখন তারা বাসায় পৌঁছে ততক্ষণে গভীর রাত।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,কিন্তু তানিয়া জেগেছিল কারণ সে জেগে জেগে রকিবের সাথে কথা বলছিল।তাই দরজা সে এসে খুলে দেয়,দরজা খুলেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়।
তার হাসিটা রহস্যময় ছিল।
ইশান বুঝতে না পারলেও তিথির কাছে খটকা লাগতে শুরু করে।তানিয়ার হাসির মানে বুঝতে বুঝতে তারা এসে যখন রুমের দরজা খোলে,দেখে ফুল দিয়ে সাজানো রুম।
তিথি দেখেই অবাক,তানিয়া এত কিছু করলো কখন?আর করলোই বা কেন!
ইশানের বেশ ভাল লাগলো,এই উপলক্ষে তানিয়া বিয়েতে ডাবল গিফট পেতে চলেছে।সে রুমে ঢুকেই দরজা লক করে নেয় ভেতর থেকে।
তিথি হা করে সব দেখছিল। ইশান তখন হাই তুলতে তুলতে বলে,’ঘুমা!এত দেখার কিছু নাই’

‘ঘুমাবো?’

‘নয়ত কি?বাসর করবি?’

তিথি থতমত খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ইশান বিছানার উপর থেকে ফুল সরিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে।লম্বা একটা জার্নি করে এসেছে, শরীর আর টানছেনা।মন চাইছে চোখ জোড়া বন্ধ করে টাটকা ঘুমটা দিতে। কিন্তু তা সম্ভব নাহ,কারণ এই ফুলের রুমটা সাজিয়েছে তানিয়া এই ভেবে যে আজ রাতটাকে একটু মধুর করে গড়তে।তাই শুধু ঘুমালে তো এর মর্ম বোঝা যাবেনা।
তিথি মুখ ধুয়ে এসে দেখে ইশান চোখ বুজে শুয়ে আছে।তিথিও চুপচাপ ওর পাশে এসে বসে ওকে দেখতে থাকে।তখন ইশানের সেই বাসর করার কথাটা মনে আসতেই সে ফিক করে হেসে দেয়।ওমনি ইশান চোখ মেলে বলে,’কি?’

‘নাহ কিছুনা,ঘুমান’

‘ভাবছি ঘুমাবোনা এই রাতে’

‘তাহলে কি করবেন?’

‘ঐ সে বাসর করবো বললাম’

তিথি পিছিয়ে যায় যতটুকু,তার দ্বিগুণ এগিয়ে আসে ইশান।তিথির আর পালানোর জায়গা নেই কোথাও।সেদিন না পালালেও আজ তার মন পালাই পালাই বলে।
নেশায় মাতাল ইশানকে আজ একটু জ্বালিয়ে দেখার ইচ্ছা হলো।
তিথি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে গেলো।ইশান তখন ফুলের পাপড়িতে বসে বসে ওকে দেখছিল।তিথি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে ইশানের দিকে ধরে বলে,’ফুলের সুবাস নিবেন?’

ইশান উঠে চলে আসে।তিথির হাত থেকে রজনীগন্ধাটা কেড়ে ওর গলার কাছে ফুলটাকে লেপটে সরিয়ে নেয়,এরপর সেখানে নাক ডুবিয়ে,ফিসফিস করে বলে,’নিলাম’

অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর বারান্দায় গিয়ে ইশানের শার্টের ভেতর দিয়ে নিজেকে নিয়ে নেয় তিথি।এরপর ওর গায়ের উষ্ণতায় চোখ বুঝে রাখে ওরই বুকের উপর।
আরামে,আবেশে তিথি জানতে চায় আর কোনোদিন ইশান তাকে কষ্ট দেবে কিনা,প্রতিশোধ বলে আদৌ কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা।
ইশান উত্তরে জানায় সব শেষ,প্রতিশোধের খাতা আজ থেকে শূন্য।
——–
রিদমের সাথে বাসে বসে গিয়াস সাহেব রিদমের মাথাটাকে যেন কিনে নিয়েছেন।পুরো জার্নিতে রিদমের চৌদ্দ গুষ্টিকে তিনি উদ্ধার করে ছেড়েছেন।

বাস থেকে যখন ব্রেকে নামানো হলো রিদম একটা ছেলের হাতেপায়ে ধরে সিট বদল করে নিয়েছে সেই সুযোগে।

গিয়াস উদ্দিন তো প্রচণ্ড রেগে গেলেন।রিদমের এত বড় সাহস!সে তার সাথে বসার ভয়ে সিট বদলায়!তাকে তো পরে দেখে নিবেন তিনি।এখন এই ছেলেটার সাথে কথা বলা যাক।

‘এই ছেলে তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?’

‘সেভেন’

‘রিদমকে চিনো?’

‘হুম।’

‘পিংকিকে চিনো?’

‘হুম’

‘আমাকে চিনো? ‘

‘হুম’

‘বেয়াদব ছেলে!ফোন হাতে দিছে কে তোমায়?আমি যে প্রশ্ন করছি,শুনতে পারছোনা?বার বার হুম হুম করছো কেন?’

‘পিকনিকে ফোন টিপবোনা তো কি আপনার পরীক্ষার এমসিকিউর আন্সার করবো?’

‘দেখছো কি বেয়াদব ছেলে!অবশ্য বেয়াদব হবেই না কেন!ঐ রিদমের ক্লাসের ছেলে তো বেয়াদবই হবে!এই ছেলে!তোমাকে যে বেয়াদব বলেছি তুমি কিছু বলছো না কেন?’

‘আমাকে আম্মু আব্বু ও বেয়াদব বলে।ইটস ওকে!’

‘বেয়াদব বললেও তোমায় গায়ে লাগেনা?তবে তুমি একটা আস্ত অসভ্য’

‘আমরা জাতিরা সভ্য হলাম কবে আঙ্কেল?’

‘আমি কি জানি?’

‘তবে আপনিও অসভ্য।যে জাতি জানেনা সে সভ্য হলো কবে,সে নিজেই তবে অসভ্য”

‘(ছেলেটার কথায় কারেন্ট আছে তো।)আচ্ছা ছেলে,, তোমার বাবা কি বিদ্যুৎ অফিসার?’

‘জ্বী,আপনি জানলেন কি করে?’

‘বাতাসে জেনে গেছি।সরকারি চাকরি করে!আল্লাহ গো!’
বাবা তোমার নাম কি?’

‘সিয়ামুল কারিম’

‘ডাকনাম কি?’

‘কারিম’

‘বাবা কারিম,তোমার ভাই বোন কয়টা?’

‘আমি একজনই।বাবা মায়ের অতি আদরের লাস্ট প্রোডাক্ট ‘

‘(এক পিস মানে সব সম্পত্তির মালিক+পেনশন!)বাবা তোমাদের কি নিজস্ব বাসা ঢাকায়?’

‘জ্বী’

‘(নিজেদের বাসা+এক পিস মানে সব সম্পত্তির মালিক+পেনশন+সরকারি চাকরি=সোনায় সোহাগা)
তোমার কেমন মেয়ে ভাল লাগে বাবা?আমি তো আঙ্কেলই,আমাকে বলতে পারো।আমি কাউকে বলবোনা’

ওমনি পিকনিক স্পট এসে গেলো।ছেলেটি নামতে নামতে বললো,’ক্লাস সিক্সে একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছিলাম।বিয়েও করেছি হুজুরের মাধ্যমে।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া অবধি মেয়েটা তার বাসায় আর আমি আমার বাসায়।আপনি চাইলে আপনার মেয়েকেও বিয়ে করতে পারি।বিয়ের বেলায় আমার কোনো বাহানা নাই’

‘এই ছেলেটা আসলেই একটা অসভ্য ছেলে! ”
——
‘ভাই তুই এই লোকের মেয়েকে পছন্দ করিস?’

‘মোটেও না।মেয়ের বাবাকে দেখার পর থেকে মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট কমে গেছে’

‘আমাকে বিশ মিনিটে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দশ বছর পুরোনো পাগল বানিয়ে দিয়েছে।’

‘আর আমাকে তো পাগল বলেই ব্যাখ্যা দেন উনি’

‘রিদম!’

‘নে!এসে গেছে তোর কারিনা কাপুর’

এটা বলে কারিম চলে যায়।রিদম চেয়ে দেখে পিংকি দাঁড়িয়ে।সে ওর কাছে এসে আইসক্রিম খেতে খেতে বলে,’বাবা তোমার কাছে আসতেই দেয়না।কি ঝামেলা!এখন ওয়াশরুমে গেছে কালামের সাথে। তাই তো এলাম।ভাবলাম পিকনিকে কত মজা করবো।তা আর হলো কই!বাবা শুরু থেকে সিসি ক্যামেরার মতন নজর রাখছে’

‘তুমি এখন যাও।তোমাকে আমার সাথে দেখলে আবার ঝামেলা করবে’

গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে একটা পাহাড়ে ওঠার চিন্তাভাবনা করছেন তখন কালাম সহ আর যারা আছেন সবাই তাকে মানা করলেন কিন্তু তিনি শুনছিলেন না,পরে নিজের চোখে একজনকে পাহাড়ে উঠতে দেখে জন্মে পাহাড়ে ওঠার শখ মিটে গেলো তার।
এরপর তিনি দেখলেন একটা লোক কতগুলা গাছ বিক্রি করছে,লোকটা বলছে অরিজিনাল ড্রাগন ফল গাছ।এই ড্রাগন ফলের রঙ নাকি নীল হবে।কমলা উদ্ভোধন করে মানুষ খাওয়াতে পারেন নি কিন্তু নীল ড্রাগন ফল উদ্ভোধন করে নিশ্চয় মানুষ খাওয়াতে পারবেন আর কেক ও কাটতে পারবেন।কেকের উপর লেখা থাকবে”গিয়াস সাহেবের নীল ড্রাগন’
কি সুন্দর!ভাই গাছ যে নীল রঙের,ফল ও কি নীল হবে?নাকি আমাদের দেশের গুলার মতন গোলাপি হবে?’

‘না ভাই,নীলই হবে।আর যদি নীল না হয় তবে কালো হবে তাও গোলাপি হবেনা আমার কথা মিলাইয়া নিয়েন’

‘তাই নাকি!কালো ও ভাল!! নীল বা কালো একটা হলেই হয়।তাও তো অানকমন একটা রঙ পাবো।দাম কত ভাই?’

‘১৭০০টাকা’

‘এত বেশি কেন?’

‘মানুষ সবুজ পেঁপে কম খায় আর কমলা রঙের পেঁপে বেশি খায় কেন বলুন তো?’

‘কমলা পেঁপে মিষ্টি তাই’

‘সেটাই তো বুঝাইলাম।নীল ড্রাগন স্বাদ বেশি’

গিয়াস সাহেব ১৭০০টাকা দিয়ে নীল ড্রাগন ফল গাছ কিনে নিলেন।কোলে ফলটা নিয়ে কিছুদূর হুইলচেয়ার টেনে যাবার পর মনে পড়লো ফল কবে আসবে সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি তাই আবার আসলেন ওখানে।এসে দেখলেন লোকটা নাই।সেখানে আবার একটা লোক মাইকিং করতে করতে যাচ্ছে’কেউ নীল ড্রাগন ফল বলে নীল রঙের গাছ বেচতে আসলে কিনবেন না।ওটা নীল ড্রাগন বা,কলমি শাকের ডাটাতে নীল রঙ করে টবে পুরে বিক্রি করে প্রতারণা করছে এক চক্র!আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে গাছ বিক্রি করে চক্রটি উধাও হয়ে যাবে।সহজেই বোকা হবেন না,নিজেকে সংযত রাখুন এবং ভেবে চিনতে ভাল জিনিস কিনুন-প্রচারে জনসেবা কমিটি’

‘আসলেই সবগুলা অসভ্য!আমার ১৭০০টাকা কলমি শাকের মতন পানিতে ডুবে গেলো🙂’

‘স্যার এবার ভাজি করে খান।মনের ড্রাগনই বড় ড্রাগন’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৭
আফনান লারা

ইশান তিথিকে নিয়ে একবার মায়ের কাছে গেছে আজকে।মা বলেছেন আজকের দিনটা তার কাছে থাকার জন্য।তাই আসা।
তিথি তো ভয়ে ভয়ে ছিল।না জানি আবার কি না কি কথা ধরে টান দেয়।
বাসায় এসে তিথি তো অবাক,শুধু তাকেই না।ইশানের অনেক আত্নীয় স্বজনকেও দাওয়াত করেছেন তিনি।তিথি এমন জানলে কাতানের ঐ শাড়ীটা পরে আসতো যেটা বাবা তানিয়ার বিয়েতে পরার জন্য দিয়েছে।ইশান,তিথির বিয়েতে যারা যারা তিথিকে দেখেননি মূলত আজ তারাই দাওয়াত পেয়েছেন।
তিথি হলুদ রঙের একটা শাড়ী পরে এসেছিল।এত এত মানুষ দেখে সে এক কোণায় গিয়ে চুপটি করে বসে আছে।ইশান মায়ের কাছে কি নিয়ে যেন আলাপ করছে।
সবাই তিথিকে দেখে কত কি বলে চলেছেন।সেটা অবশ্য তিথিও শুনছে।তারা বলছেন ইশানের সাথে মানাচ্ছে ওকে।
এটা শুনে তিথির মন আনন্দে ভরে উঠলো।তাকে মিটমিট করে হাসতে দেখে ইশান,সে তখন মায়ের রুম থেকে বেরিয়েছিল সবেমাত্র।ওখানে এসে তিথিকে মায়ের কাছে যেতে বলে ইশান।তিথিও চুপচাপ মায়ের রুমের দিকে যায়।যাবার পথে ইশানের কাছে জানতে চাইলো ব্যাপার কি।ইশান বলে মা নাকি ওকে বকার জন্য ডাকছেন।
তিথির তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো তখন।ঢোক গিলে দরজা হালকা করে খুলে উঁকি দিয়ে সে বলে,’আন্টি আসবো?’

‘এসো’

তিথি পা টিপে টিপে গিয়ে দাঁড়ায় ওখানে।মিসেস আরাফাতের হাতে একটা রুপার নেকপিস।উল্টে পাল্টে দেখছিলেন তিনি।তিথি ওটা দেখে ভাবছে তার তো রুপা পছন্দ না,কিন্তু তানিয়ার ভীষণ পছন্দ রুপা।ওমনি তিনি বললেন,’এটা আমি তোমার বোনের বিয়েতে দেবো ভাবছি।আমাদের পরিচিত এক কারিগর কে দিয়ে রুপার উপর পাথর বসিয়ে সেটটা তৈরি করেছি।তোমার বোনের বিয়েরদিন আমি ঢাকায় থাকবোনা।আমার বড় ভাই ভীষণ অসুস্থ। আমাকে যেতে হবে ওখানে,তুমি আর ইশান বিয়েতে যেও।এটা আমার পক্ষ থেকে তানিয়াকে দিও কেমন?’

‘এসবের কি দরকার ছিল আন্টি?’

‘দরকার ছিল।তানিয়া তোমার বিয়েরদিন আমার পায়ে মুভ মালিশ করেছিল আমার পায়ে ব্যাথা ওঠায়।মেয়েটা অনেক বেশি ভাল,আমার ইশানের আরেকটা ভাই থাকলে আমি তোমার বোনকেই বউ করে আনতাম, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।এটা ওকে দিও ‘

তিথি আচ্ছা বলে চলে যাচ্ছিল ওমনি মিসেস আরাফাত বললেন ‘তোমাকে যেতে বলেছি?’

‘না!সরি’

‘এটা ধরো’

তিথি দেখে তানিয়ারটার মতনই অন্য একটা নেকপিস,কিন্তু এটা স্বর্ণের। তিথি চোখ বড় করে তাকিয়েছিল।

‘কি?পছন্দ হয়েছে?’

‘হ্যাঁ,কিন্তু আমাকে কেন?’

‘বিয়েতে আমি তোমায় কিছুই দেইনি,সব ইশানই কিনে দিছে। আমার থেকেও তো তোমার হক আছে’

তিথি মুচকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায়।কি সুন্দর এটা!নিশ্চয় ইশান বলেছে। কারণ এয়ারপোর্টে তো ইশানকে সে বলেছিল তার ডায়মন্ড পছন্দ না,স্বর্ণ পছন্দ।
——
দুটো বক্স নিয়ে ইশানের রুমে আসে তিথি,সেগুলোকে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে নিজের নেকপিসটা নিয়ে গলায় পরার চেষ্টা করে,সেসময় ইশান আসে সেখানে।সে এগিয়ে এসে তিথিকে নেকপিসটা পরাতে হেল্প করলো।সম্পূর্ণ পরিয়ে দিয়ে মুচকি হাসে সে।

‘আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা আপনার কেনা’

‘আমার পছন্দ এত খারাপ?’

‘এটা দেখতে খারাপ বুঝি?’

‘হুম।’

ইশান সোফায় বসে পড়ে।তিথি পেছনে তাকিয়ে বলে,’তবে বলতে হয় আসলেই আপনার পছন্দ খারাপ।আমার না একটুও পছন্দ হয়নি এটা।কেমন যেন পুরোনো পুরোনো!’

‘পুরোনো?একদিন আগে কেনা এটা।অরজিনাল!’

‘তার মানে সিওর হলাম এটা আপনিই কিনেছেন।’

ইশান জিভ কামড়ে ধরে,তিথি কিভাবে যে বুদ্ধি খাটিয়ে কথাটা বের করে নিলো।ইশ!
——
পিকনিক থেকে ফেরার পুরো পথে গিয়াস সাহেব অজ্ঞান ছিলেন।তার অভিযোগ পৃথিবীর সবাই তাকে ঠকায়,আজীবন ঠকেই গেলেন।
এই শোকে তিনি চার ঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন।তার জ্ঞান ফিরেছে বাসায় ফিরে।তানিয়া রিদমকে নিয়ে গিয়াস সাহেবকে দেখতে এসেছে,মা জোর করে পাঠিয়েছিল ওদের। নাহয় রিদম আর তানিয়া কারোরই ইচ্ছা নাই এমসিকিউ পরীক্ষা দেয়ার।

গিয়াস সাহেব বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়ে বলছেন,’জানো তোমরা!নিজেকে কাঁটা ছাড়া মাদার গাছ মনে হয়!মাদার গাছের পরিচয় তার কাঁটা দিয়ে,আর সেই গাছেই যদি কাঁটা না থাকে তবে কেউ মূল্যায়ন করবে?আমার জীবনটা সেরকম হয়ে গেছে।যাই করিনা কেন ডোজ খেতেই হয়।মানসিক অবসাদগ্রস্ত রুগী হই গেছি।ইচ্ছে করছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে একবার ঘুরে আসতে’

কালাম বলে,’স্যার আপনি ওদের সাথে থাকবেন নাকি?এতবড় প্রতিদান দিবেন?’

‘আরেহ না আমি তো যাবো পাগলদের দেখতে।তাদের দেখলে মনটা ভাল হয়ে যাবে।নিজেকে বুঝাতে পারবো আমার চেয়েও পাগল আছে দুনিয়াতে।’

কালাম মাথায় হাত দিয়ে চলে যায়।সে বের হতেই তানিয়া আর রিদম ঢুকলো রুমে।রিদমকে দেখে গিয়াস সাহেব চটে গেলেন।দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলেন,আজ এই রুমে তানিয়া না থাকলে ওর খবর ছিল!ওর কারণেই পিংকিকে পাহারা দিতে এতদূর যেতে হলো হুইল চেয়ার নিয়ে,১৭০০টাকা লস হলো!’

‘আঙ্কেল এখন কেমন আছেন?’

‘দেখতেই তো পারছো মরেও বেঁচে আছি’

‘জ্বী?বুঝলাম না’

‘টুকু,উনি বুঝাতে চাইছে বেঁচেও মরে আছেন’

‘ওহ আচ্ছা।আঙ্কেল আমি আপনার জন্য ড্রাগন ফল এনেছি।শুনলাম বান্দরবনে নাকি আপনার ড্রাগন ফল নিয়ে মন খারাপ হয়েছিল?’

‘তোমাদের বংশ এমন কেন?যেটা দিয়ে এক্সিডেন্ট হয় সেটার নামে ফল আনো!আশ্চর্য! ‘

তানিয়া ও তব্দা খেয়ে গেলো।এ লোক কথায় কথায় এত চটে যায় কেন?সে আর ওখানে থাকলোনা চুপটি করে বেরিয়ে গেলো রিদমকে নিয়ে।
—–
রিদম পিংকিদের বাসা থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল তখন পান্না এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’বাবা বান্দরবন থেকে আসার সময় কিছু আনতে পারেনি। বাবার কাছে টাকা ছিল না।’

এই বলে সে হাত পেতে ধরে।তানিয়া এসে সেও শুনতে পায় পান্নার এ কথা।তখন সে আফসোস করে বলা ধরে রিদমের কাছে টাকা নেই,সে কিনতে পারেনি কিছু।তানিয়া ওকে কিনে দিবে।
কিন্তু তানিয়াকে অবাক করে দিয়ে রিদম পকেটের ভেতর থেকে একটা মালা নিয়ে পান্নার হাতে দেয়।
পান্না তো ভীষণ খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
তানিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল রিদমের দিকে।সে জানতে চাইলো এটা কেনার টাকা রিদম কই পেয়েছে।তখন রিদম জানায় তাকে মা সবজি কিনার জন্য যে টাকা দেয় তার থেকে বাঁচিয়েছে।

‘বাহঃ কি ভালুবাসা’

‘টুকু তুমিও মজা নিচ্ছো?পান্না হচ্ছে আমার সফটকর্ণার’

‘এ্যাহ?সফট কর্ণার?তোদের বয়সে সফট কর্নার জানা চেনা তো দূরের কথা,এই বয়সে আম্মু আমাদের সফট ফুড দিতো।যাকে বলে সেরেলাক’

আর কথা না বাড়িয়ে রিদম তানিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে গেছে।ওখানে আর এক মূহুর্ত থাকলে গিয়াস সাহেব আবার এমসিকিউ পরীক্ষা শুরু করে দিবে।
——
রাতের খাবার খেয়ে ইশান আর তিথি চলে আসতে চেয়েছিল কারণ পরেরদিন তানিয়ার গায়ে হলুদ।অনেক অনেক কাজ। কিন্তু মা কিছুতেই তাদের আজ রাতে যেতে দিবেন না।জোর করে রেখেই দিলেন।
তিথি ভারী ডিজাইনের শাড়ী পরে এসেছিল।খুবই ভারী।এখন এই শাড়ীটা বদলে সুতির একটা শাড়ী কিংবা সেলোয়ার সুট পরলে আরাম লাগতো,ঘুম ও আসতো।

ইশান মায়ের সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে রাত সাড়ে দশটার দিকে রুমে এসে অবাক হয়ে যায়।তিথি ওর একটা শার্ট পরে ওয়ারড্রবের উপর উঠে বসে বসে পেয়ারা খাচ্ছে।

ইশান কোমড়ে হাত রেখে বলে,’আমি কাল গায়ে হলুদে যে শার্ট পরবো বলে ভেবে রেখেছিলাম,ওটাই পরতে হলো?’

‘কি করতাম?আমার শাড়ী জামা সব জাপানে নিয়ে গেছিলাম একটাও নেই এখানে,তামিয়ার কাছে চাইতে গিয়ে দেখি তার রুম ভেতর থেকে লক করা আর সে নাকি ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে বুয়া বললো।’

‘নাম!’

‘উহু!’

ইশান কাছে এসে তিথির পায়ের পাতা মুঠো করে ধরতেই তিথি লাফ দিয়ে নেমে যায়।নামার সময় ইশান ওকে ধরে ফেলে।দুজনেই খিলখিল করে হাসছিল,তিথির পায়ের পাতার সুরসুরি লাগায় তার হাসি আর থামছিলই না।
——
‘হে!কে মরে গেছে?’

‘বললাম খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।খাবেন না কিছু্?’

‘ওহ!ঐ রিদম কোথায়?গেছে নাকি এখনও আছে?সারাদিন আমার বাসাতেই থাকে ঐ ছেলে।আমার বাসায় এত কি তার?’

পিংকির মা গাল ফুলিয়ে বললেন,’বাসায় আসবেনা তো কি করবে?আপনি যে দিনে ১০০বার এক্সিডেন্ট হোন তার জন্যই তো আপনাকে দেখতে আসে’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে