যদি তুমি বলো পর্ব-৪৪+৪৫

0
363

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৪
আফনান লারা

মিসেস আরাফাত অনেক বিরক্ত হচ্ছেন।গিয়াস সাহেব বকবক পকপক করে ওনার মাথাটাকে ঝাঁঝরা করে ফেলছেন।ইচ্ছে করছে ধরে হুইল চেয়ার থেকে ফেলে দিতে।

‘কি হলো আপা,কিছু বলছেন না যে?’

‘না ভাবছি!’

‘কি ভাবছেন? ‘

‘ভাবছি আমার বোধহয় বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত।প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে’

‘তা তো হবেই,আপনার শুনলাম দুটো মেয়ে’

‘একটার বিয়ে হয়ে গেছে।আর অন্যটাকে নিয়ে আমার মোটেও চিন্তা নেই।মাথা ধরেছে অন্য কারণে’

‘কি কারণে?’

‘আক্কল মানুষের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। ‘

এটা বলে তিনি চলে যান।গিয়াস সাহেব গালে হাত রেখে ভাবছেন কি হচ্ছে,কি বলছে?আর কি ঘটছে?
ভাবতে ভাবতেই তিনি দেখলেন পিংকি রিদমকে দেখে মিটমিট করে হাসছে।ওমনি তার গায়ে যেন কারখানার আগুন লেগে গেলো।ধমকে পিংকিকে ডাকলেন নিজের কাছে,এরপর ওখানেই বসিয়ে রাখলেন।
পান্না রান্নাঘরে তানিয়ার সাথে গল্প করছিল,তানিয়া তার নতুন বাসা নিয়ে বলছে আর পান্না মনযোগ সহকারে সেসব শুনছে।
তিথিও এসে যোগ দেয়।তানিয়া ওকে দেখে চায়ের কেটলিতে চাপাতা ঢেলে বলে,’কি হলো টুকু?এই গরমে বাসার ভেতর হিজাব পরে আছো কেন?আমাদের কি তোমাদের মতন এসি আছে?’

‘নাহ আসলে একটু ঠাণ্ডা লাগছে’

‘তাহলে চায়ে তুলসি পাতা দেবো?’

‘দিতে পারিস। আচ্ছা পিংকিকে তো চিনলাম।ও কে?’

‘ওকে চিনলেনা?অবশ্য ও তো বেশি বের হয়না।পিংকির ছোট বোন পান্না’

‘ওহ!!এবার চিনলাম।কেমন আছো বাবু?’

‘এই তো ভাল। আপনি খুব কিউট দেখতে,আর আপনার বর ও’

তিথি মুচকি হাসতে গেলো ওমনি তানিয়া দাঁত কেলিয়ে বলে,’কি?কেমন কাটলো বিদেশী জীবনযাপন? এখনও সেই টম এন্ড জেরি ভাব চলছে নাকি রোমিও জুলিয়েট হয়ে গেছে?’

‘তোর যে দুলাভাই! অভ্যাস জানিস তো!আমাকে পনেরো ঘাটের পানি খাইয়ে তারপর ছেড়েছে।’

‘তারপর?এখন ঠিক হয়েছে তো সব?’

‘আপাতত ঠিক।দেখি সামনে কি হয়’
——–
গিয়াস সাহেব রিদমের দিকে গাল ফুলিয়ে রেখে তাকিয়ে আছেন,কোনো কথা বলছেন না। পারছেন না উপর দিয়েই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে।
রিদম আর সইতে না পেরে উঠে ওখান থেকে পালানো ধরলো ওমনি ইশান এসে ওকে ধরে আবার বসিয়ে দেয় পাশে।এরপর ফিসফিস করে বলে,’এটাই সেই পিংকি?’

‘হুম,আর ঐ তো রান্নাঘরের কিনারায় হেলানো দোলানো পান্তুয়া ‘

‘পান্তুয়া? আমি শুনলাম ওর নাম পান্না’

‘ঐ তো আদর করে ডাকি,পান্তুয়ার মতন দেখতে তো তাই’

‘আদর করে?সিটের প্যাজেঞ্জার বদলেছে?’

‘ছিলোই বা কবে!আমি এখনও ছোট।ওদের কথা বাদ দেন,আমাকে একাই বিদেশ নিয়ে চলেন এখানে এত ঝামেলা ভাল লাগেনা’

‘কিসের ঝামেলা?শুনি একটু, দেখি বিদেশে না গিয়েই সমাধান করে ফেলতে পারি কিনা’

‘সমস্যা হলো গিয়াস আঙ্কেল মনে করেন আমি তার মেয়ে পিংকিকে পছন্দ করি,এদিকে পিংকিও আমাকে পছন্দ করে।এইটুকুই চলছিল কিন্তু মাঝখানে পান্না এসে যায়।এবার পান্নাও আমাকে পছন্দ করে,কিন্তু গিয়াস আঙ্কেল তার মেয়ে পিংকিকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করেন’

‘ওহ মাই গড!এই দেখি তুলকালাম বাঁধিয়েছো।আচ্ছা আমি বুদ্ধি দিচ্ছি।
যখন অনেকবছর আগে আমি তোমার টুকুকে পছন্দ করতাম সেসময়ে আমাকে কেউ পছন্দ করতোনা,তোমার বোন ও না। কিন্তু আমি যখন প্রতিষ্ঠিত হলাম তখন তোমার বোন সমেত আশেপাশের সব মেয়েরা আমাকে পছন্দ করতে লাগলো।
এমনটা হলো কারণ আমি সেই আগের যুগে রিজেকশান দেখে দমে যাইনি,চেষ্টা করে গেছি বড় কিছু করার।আমি পেরেছি ও।
তোমার কাছে প্লাস পয়েন্ট হলো কেউ তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়াই পছন্দ করছে।কিন্তু তোমায় দেখতে হবে জীবনের ঐ সময়টাতে কে তোমার পাশে থাকবে।মানে যখন তুমি একটা পরিপূর্ণ বয়সে পা রাখবে,প্রতিষ্ঠিত হবে, তোমার বিয়ে করা জরুরি হবে,সময় হবে, তখন তোমার জন্য কে থাকছে,রয়েছে তাকেই তুমি বেছে নিবে।তাই এই সুন্দর সমাধানটা পেতে হলে আগে তোমাকে সব ছেড়ে ক্যারিয়ারে মনযোগ দিতে হবে।বুঝেছো?’

‘বুঝেছি,কিন্তু যদি তখন এরা দুজনই থেকে যায়,তবে কাকে বেছে নিবো?’

‘প্রতিষ্ঠিত হওয়া এত সহজ পথ না।এই ধাপ গুলোতে তোমার একটা মানসিক শান্তির জায়গা গড়ে তুলতে হবে।এই দুজনের মাঝে যে তোমায় মানসিক শান্তি দেবে তাকেই তুমি বেছে নাও।’
——-
‘আপা আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’

‘হু,কে!!!’

‘আমি আমি’

মিসেস আরাফাত লাফ দিয়ে উঠে বসলেন।গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে দরজার ফাঁক বরাবর ড্রয়িং রুম থেকে এ কথা বললেন।মিসেস আরাফাত বুকে থুথু দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হলেন।
জীবনে এরকম মেয়ের বাপ তিনি চোখে দেখেন নাই।আজ চোখে দেখে নিলেন।এই লোকটাকে একটা শাস্তি দেয়া দরকার।

‘আচ্ছা ভাই,আপনি যে মেয়ে বিয়ে দিবেন।আপনার মেয়েরা শিক্ষিত,মার্জিত না হলে তো ইশানের মতন ছেলে পাবেন না’

‘আরে রাখেন ঐসব।সুন্দর হইলেই হয়,আর কিছু লাগেনা।মাশাল্লাহ আমার মেয়ে দুইটা একেবারে কাশফুলের মতন নরম আর সুন্দর’

‘তিথিও সুন্দর।কিন্তু আমার ছেলে তিথিকে কেন বিয়ে করেছে জানেন?’

‘কেন?’

‘কারণ সে মার্জিত এবং শিক্ষিত’

‘তো আমার মেয়েরাও শিক্ষিত হবে,মার্জিত হবে’

‘সেটার জন্য তো সময় লাগবে,অনেক বছর লাগবে।আপনার কি উচিত না অপেক্ষা করা?’

‘কত বছর?’

‘আমার বোনের ছেলেরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এ বছর।দুজনে জমজ।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলে ওদের ইশান জাপান নিয়ে নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিবে,ভাল পোস্ট।তাদের জন্য রেখে দেন নাহয়!পড়ান,মেয়েদের বিয়ের বয়সটাও হোক।এবার বিয়ের বিষয়টা বন্ধ করলে ভাল হয় না ভাই?’

গিয়াস সাহেব গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকলেন।অনেকক্ষণ পর বললেন,’কিন্তু আমি শুনেছি তিথি অনার্সের একটা বিষয়ে ফেল করেছে,ইম্প্রুভ দিয়েছে।তাহলে সে শিক্ষিত হয় কি করে?’

‘এটা সেই শিক্ষিত না ভাই।এই শিক্ষিত মানে যে বাচ্চাকাচ্চাকে একটা নূন্যতম জ্ঞান দিতে পারবে যেটা অশিক্ষিত মেয়ে দিতে পারবেনা।’

‘তা অবশ্য ঠিক।এই তো মিলে গেলো!আমার পিংকি অংকতে ৩পাইছে।তার মানে সেও তিথির মতন বর পাবে’

(‘এই লোকটা জঘন্য একটা লোক!’)

‘কিছু বললেন আপা?’

‘না বলেছি ঠিক বলেছেন।’
——-
তানিয়া চায়ের ট্রে নিয়ে চলে গেছে,তার পিছু পিছু পান্নাও গেছে।
তিথি তাকের সাথে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছিল।সেসময় রান্নাঘরে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে সে না দেখেই বলে,’তানু? নে তোর চা খেয়ে নে’

এ কথা শেষ করার আগেই মাথায় ওড়নার বাহিরে দিয়ে কানের কাছে কারোর ঠোঁটের আওয়াজ শুনতে পেলো।সেই ঠোঁটজোড়া বলছে,’প্রতিশোধ শেষ করি?’

তিথি ভয় পেয়ে পেছনে তাকায়।
‘প্রতিশোধ? এখনও বাকি?’

ইশান একটু ঝুঁকে বলে,’শুরুই বা হলো কবে?’

‘আর কি করতে চান?’

‘যদি বলি এই খানেই…..?’

তিথি চোখ বড় করে পিছিয়ে যায়।ইশান ওর হাতটা টেনে ফাউন্ডেশন দিয়ে বলে,’এটা লাগালে দাগ দেখা যাবেনা আই গেস!”

‘আপনাকে কে বলেছে শুনি?’

‘অনলাইনে দেখেছি,এই টুকু বুঝি’

এই বলে ইশান ওর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে যায়।
তিথি বলতে থাকে সে চা খাবে,তার চা খাওয়া দরকার।
ইশান হাসতে হাসতে চলে গেছে।
এরপর ড্রয়িং রুমে এসে সে তানিয়াকে বলে তার কাপটা তিথিকে দিয়ে আসতে। সে রান্নাঘর থেকে এটা এনেছে।
——
‘আপা আরও একটা কথা ছিল। বলি?’

‘না,আমি চা খেয়ে নিই?’

‘আপা চায়ের আড্ডাতেই তো মানুষ আলাপ আলোচনা করে।বলি?শুনুন না একটু!আপনি আমার মায়ের পেটের বোন নাহলেও আপনাকে দেখে আমার কেমন রগে রগে টান খাচ্ছে, যেন আপনি আমার মায়ের নাড়ি-ছেঁড়া ধন!’

‘কিহ!’

‘মানে আমারই আপন বোন, দেখুন না ডান হাতের রগটা পু পু করেছে’

‘কই দেখছিনা তো’

‘আপনি দেখবেন কিভাবে!রগটা তো আমার। যা বলছিলাম শুনুন,ঐ ছেলে দুটোর ছবি দেখাতে পারবেন?মানে নিজের হবু মেয়ে জামাইদের একটু দেখে নিতাম।চোখের শান্তি বলেও তো একটা ব্যাপার আছেনা?’

মিসেস আরাফাত ইশানকে ডেকে বললেন,’গুলু- চুলুর ছবি আছে তোর কাছে?’

‘কেন?’

‘ওনাকে একটু দেখানোর জন্য’

‘এক মিনিট আপা,গুলু -চুলু কি আমার হবু মেয়ে জামাইদের নাম?’

‘আমার বোনের ছেলেদের নাম।’

‘এটা কেমন নাম?নামের মধ্যেই ফাজলামি মিশে আছে।ছেলেগুলা আর কিরকমই বা হবে।আমি ছবি দেখবোনা’
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৫
আফনান লারা

গিয়াস সাহেবের সাথে পাল্লায় না পেরে মিসেস আরাফাত সেদিনই বাসায় ফিরে গেছেন।কিন্তু গিয়াস সাহেব যাবেন না,তার হাতে এখনও ইশান,তিথি আছে। ওদের কচলিয়ে কচলিয়ে পাত্র খুঁজে পেতেই হবে।মেয়ে বিয়ে দিলে এই বংশেই দেবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।
ইশান অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে টুকুস করে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেছে, এদিকে তিথি পালাতেই পারছেনা।রুম থেকে বের হলেই গিয়াস সাহেব কথা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরছেন।কি একটা ঝামেলা!

গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েন একটা সময়।তখন তিথি রিদমকে দায়িত্ব দেয় গিয়াস সাহেবকে তুলে বাসায় দিয়ে আসতে,উনি ঘুমাচ্ছেন,কিছু টের পাবেন না।
রিদম হাতেপায়ে ধরে মানা করতে থাকলো,তাকে দিয়ে এই অসাধ্য সাধন হবেনা।কিন্তু তিথি আপু তাকে আশ্বাস দেয়,সে যদি এই অসাধ্য সাধন করতে পারে তাহলে তাকে বিদেশ নেয়ার জন্য তিথি ইশানের কাছে অনুরোধ করবে।
রিদম আর কি করবে!
গিয়াস সাহেবের হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে লিফটে ঢুকলো।লিফটের দরজা আটকাতে যেতেই পাশে এসে দাঁড়ায় পান্না।রিদম ওকে দেখে যেন আশার আলো খুঁজে পেলো।একা একা যেতে কেমন যেন ভয় ভয় কাজ করছিল,এই বুঝি আঙ্কেল জেগে যায় আর ওকে ধরে মারপিট শুরু করে!
চলতে চলতে রিদম পিংকির কথা জানতে চায় পান্নার কাছে।কারণ তাকে কোথাও দেখেনি আসার সময়।

‘আসলে আপু তো তিথি আপু আর তানিয়া আপুর কাছে।চকলেট ভাগ করছে’

‘তোমার ভাগ লাগবেনা?’

‘বুবু বলেছে আমার ভাগটা নিয়ে আসবে।’

গিয়াস সাহেব ঘুমে থেকে বলে উঠলেন,’পিংকি আমার আদরের মেয়ে রিদম! আমি ওরে কোটিপতি ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।সে তোমার হতে পারেনা না না না না!’

রিদম ওমনি থেমে যায়।ঘুমে থেকেও মানুষ হুমকি দিতে পারে তা ওনাকে না দেখলে রিদম জানতোই না।ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।পিংকিদের বাসার কাছাকাছি আসতেই গিয়াস সাহেব উঠে পড়লেন।ওমনি পান্না রিদমকে সরিয়ে নিজে হুইল চেয়ারটা ধরে বলে,’কি হলো বাবা?’

‘আমাকে বাসায় আনলি কেন?’

‘অনেক রাত হয়ে গেলো তাই’

‘তার মানে পিংকি ঐ বাসাতে একা একা?’

রিদম চুপটি করে লুকিয়ে পড়েছিল,পান্না ওকে বাঁচাতেই এভাবে ওর পাশে পাশে এসেছিল, সে তো শুরুতে বুঝতে পারেনি।গিয়াস সাহেব যদি দেখতেন রিদম ওনাকে নিয়ে আসতেছেন তাহলে রেগে যেতেন।

এদিকে তিনি এখনও রেগে আছেন। কারণ হলো তার ধারণা পিংকি ঐ বাসায় রিদমের কাছাকাছি থাকলে সমস্যা আছে।
তাই পান্নাকে বললেন ওনাকে নিয়ে আবার চলতে।কিন্তু ঐ সময় ওনার স্ত্রী বাসা থেকে বের হয়ে এসে বললেন,’এটা কি ব্যাপার বলুন তো!একে তো বিনা দাওয়াতে আজ সারাটাদিন তিথিদের বাসায় থাকলেন,এখন আবার বাসায় ফিরে আবার ঐ বাসায় যেতে চাইছেন?’

‘আহা তুমি বুঝতেছোনা,পিংকি রয়ে গেছে’

‘থাকুক। পান্না গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে।পান্না যা তো,দ্রুত গিয়ে পিংকিকে নিয়ে আয়’
——
পান্নার পাশে পাশে রিদম ও আসছে।চলতে চলতে রিদম সেদিনের ঐ ছেলেটার কথা জানতে চাইলো, এরপর আর ডিস্টার্ব করেছে কিনা জানার জন্য।

‘আচ্ছা আপনি নাকি বিদেশ চলে যাবেন,শুনেছি’

‘হুম।জাপান যাবো,ভাল দেশ।ভাল না?’

‘ঐ ছেলেটা যদি আমায় আবার ডিস্টার্ব করে?’

‘তাহলে ফোন…..ওহ হো!ফোন দিয়ে তো লাভ হবেনা।ওখানে থেকে আমি তো আর বাঁচাতে পারবোনা।কি করা যায় বলোতো?’

‘যাইয়েন না’
——–
ইশান তিথিদের বাসার কাছের পার্কটাতে বসেছিল,হঠাৎ মনে হলো তিথিকে দরকার।তাই একটা দোকান থেকে ফোন নিয়ে তানিয়ার নাম্বারে কল দেয় সে,তিথিকে পার্কে আসতে বলে।তিথি মানা করে তাও ইশান জোরাজুরি করায় সে রাজি হয়।
মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে সে পার্কটাতে চলে আসে।দুজনে বেঞ্চের মাঝ বরাবর বসে। তিথি পা দোলাতে দোলাতে বলে,’এই পার্কে আদিলের সাথে বহুবার দেখা করেছে সে’

ইশান চুপ করে একটা ফুলগাছ দেখছিল ল্যাম্প পোস্টের আলোয়।

‘জানিস তিথি?আমি তোকে মাফ করে দিয়েছিলাম সেই একটা দিনে।যেদিন আদিল তোর গলার দিকে তাকানোই তুই ওড়না টেনে দিয়েছিলি।
আদিলের হাত বহুবার ধরতে চেয়েছিলি তাতে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু দেহের কিছু কিছু অংশ আছে যাকে কেবল আমিই ছুঁতে চেয়েছিলাম,আমিই সেই নজরে দেখতে চেয়েছিলাম।
সেদিন আমার এত ভাল লেগেছিল যে আমার ইচ্ছে হয়েছিল তোকে ঐদিনই বউ করে আনি।কিন্তু তখনও আমার সেই প্রোপার্টি হয়নি যার কারণে দমে থাকতে হয়েছিল।’

‘এতকিছু দেখলেন কি করে?’

‘আমি সেদিন ঐ জায়গাতেই ছিলাম। রেস্টুরেন্টে তোর আর আদিলের সামনের সিটে।দুদিন আগে দেশে ফিরে তোদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমি ফলো করেছি।তোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি’

‘ব্লু শার্ট?’

ইশান চমকে তাকায় তিথির দিকে।তিথি হাসি দিয়ে বলে,’আমার রুমাল ছিল টেবিলে।অন্যমনস্ক হয়ে যখন হুশ আসে তখন আর রুমালটা খুঁজে পায়নি। এরপর দেখলাম একজন ভদ্রলোক চলে যাচ্ছেন তার হাতে আমার রুমাল ঝুলছে।শুরুতে খেয়াল করতে না পারলেও যখন বুঝতে পারলাম ওটা আমারই রুমাল ছিল তখন আর আপনাকে কোথাও পাইনি।অবাক করার বিষয় হলো আদিল বারবার বলছিল এক রুমাল গেলে আরেক রুমাল আসবে।
আচ্ছা সেসব বাদ,আমার জানতে ইচ্ছা করে,অনেক আগে মাফ করে দিলে এত কষ্ট কেন দিছেন? ‘

‘কারণ মাকে যে কষ্ট দিছিস,তার দেনা রয়ে গেছিলো। ‘

‘এখন কি সেসব শেষ?আন্টি মনে হয় আমাকে এখনও মাফ করেননি’

‘করবে,কোলে নাতিপুতি ধরিয়ে দিলে দেখবি আমাকেও চিনবেনা।শুধু তুই আর তুই!’

‘এখন এই সময় এখানে ডাকলেন কেন?রুমেও তো কথা বলা যেতো’

‘গিয়াস আঙ্কেলের ভয়ে।উনি কি গেছেন নাকি এখনও পটরপটর করছেন?’

‘রিদমকে দিয়ে পাঠিয়েছি’

‘রিদম অনেক স্মার্ট। ওকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলে মনে হয় ভাল হতো।কিন্তু ওর তো এসএসসি শেষ হয়নি।এখন নিলে পড়াশুনার ক্ষতি হবে।আগে এসএসসিটা দিক।আমি নিয়ে আসবো’
——-
পান্না আর পিংকি একা একা বলে তিথির আম্মু রিদমকে বললেন ওদের দুজনকে বাসায় দিয়ে আসতে। রিদম রাজি হয়ে দুজনকে নিয়ে চললো।
পিংকি হাঁটতে হাঁটতে বলে,’কাল স্কুল থেকে পিকনিকে যাবে।তুমি যাবে তো রিদম?’

‘হুম,সব গুছিয়ে নিয়েছি’

পান্নার মন খারাপ হলো।সে প্রাইমারিতে বলে ওদের সাথে যেতে পারবেনা,আর পান্নার স্কুল ও আলাদা।মন এত খারাপ হলো যে রাস্তায় আর টু শব্দ টুকু ও সে করেনি।
বাসায় পৌঁছে রিদম ওদের বাই বলে পেছনে তাকাতেই দেখে গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে আছেন।তার কাজের একটা লোক তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

‘কি বাছা! বডিগার্ড হইছো নাকি?’

‘না আঙ্কেল,আম্মু বললো ওরা মেয়ে মানুষ,কি না কি হয়ে যায় রাতের বেলা।কত দুষ্টু ছেলে আছে তো এলাকায়’

‘তাদের নিয়ে আমার চিন্তা নাই।আমার একমাত্র চিন্তা তোমায় আর পিংকিকে নিয়ে।তুমি ওর থেকে দূরে থাকবা এ কথা কি দরখাস্ত করে পাঠাতে হবে?’

রিদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।গিয়াস সাহেব আবার বললেন,’যত কিছুই করো না কেন!আমি তোমাদের বিয়ে কিছুতেই মানবোনা।কালাম আমাকে নিয়ে চলো’
——
ইশান তিথিকে নিয়ে ফাঁকা পথে হাঁটছে,তিথির হাতটা ঝুলছিল,ইশান হাঁটতে হাঁটতেই ওর হাতটা শক্ত করে ধরে।তিথি চুপ করেই ছিল তখনও।
চলতে চলতে একটা সময়ে ইশান থেমে যায়।একটা গাছের নিচে দুজনে দাঁড়িয়ে,মৃদু হাওয়ায় গাছের হলুদ রঙের পাতা গুলো ঝরে ঝরে পড়ছিল।
ইশান তিথির মাথার ওড়নাটা টেনে দিয়ে বলে,’যদি তুমি বলো আমি হবো তোমার শেষ অধ্যায়ের শেষ পাতাটি।যেটাকে তুমি কখনওই ছিঁড়বেনা ,বরং লিখে রাখবে নিজের নাম অথবা হাতে আঁকা কোনো ফুল।যদি তুমি বলো আমি ভুলে যেতে পারি তোমার দেয়া সেই আঘাত যে আঘাতে আজ আমি এই জায়গায়,,,,যদি তুমি একবার বলো “তোমায় আমি ভালবাসি” তবে আমি পৃথিবীর ভালবাসার সব সংজ্ঞাকে সত্যি করে এনে দেবো তোমার হাতে’
——
পরেরদিন ভোর পাঁচটায় পিকনিকের বাস স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকলো,সবাই এক এক করে আসছে। রিদম পিংকির জন্য সিট রেখে বসে ছিল ওমনি বাইরে পিংকিকে দেখে সে সিট থেকে ব্যাগটা সরিয়ে রাখে।কিন্তু রিদমের মন্দ ভাগ্য,আজকে পিংকির সাথে গিয়াস সাহেব ও যাবেন।তিনি হুইল চেয়ার সমেত বাসে উঠেছেন কাজের লোকের হেল্পে এবং রিদমকে সরিয়ে বাসের সেই সিটেও বসেছেন।

‘কি?ভাবছো আমার মেয়ের সাথে বসে বান্দরবন যাবে,বসাচ্ছি।বান্দর কোথাকার!’
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে