যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪২
আফনান লারা
ইশানের ইচ্ছে ছিল আরও কটাদিন তিথিকে কষ্ট দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া সে আসলে কি অন্যায়টা করেছিল অতীতে।কিন্তু তিথির কাছে হেরে বসে আছে।অতীতে হেরে গিয়েছিল আজ আবার হেরে গেলো।
ইশান মনে করেছে তিথি ওকে বাধা দেবে,কারণ তিথি তো ইশানকে ভালোইবাসেনা।
কিন্তু সে এটা না করে নিজের ইচ্ছাতেই ইশানকে কাছে আসতে দিলো।
ইশান ওকে ছুঁতে গিয়ে শুধু একবার বলেছিল,’যদি তুমি বলো তবেই আমি আজ নিজেকে মিলিয়ে নিবো তোমার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে’
তিথি মাথা নাড়িয়েছিল।হুট করে এরকমটা হয়ে যাবে তারা দুজনেই হয়ত ভাবেনি। আচমকা হওয়া ঘটনাগুলো মনে দাগ কাটে বেশি।
ইশান অনুমতি ছাড়া এসব কিছুই করতোনা,আর যাই হোক এই একটা বিষয় যেটা অনুমতি ছাড়া করলে মেয়েরা আজীবন মাথায় রাখে।
(বুঝে নেন ক,খ,গ,ঘ সব হই গেছে।এত বলতে পারবোনা,আমার শরম করে🥱)
—-
তিথি সকাল সকাল উঠে বসে ইশানের ফোনের আওয়াজে।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে একটা লোক পাংপুং ছা কত কি বলে গেলো যার মাথামুণ্ড কিছু বুঝলোনা তিথি।তাইই সে বাধ্য হয়ে ইশানকে উঠাতে থাকলো।চোখ ডলতে ডলতে সে দেখে ইশান উদম শরীরে ঘুমায়, এটা দেখে তিথি একটা মূহুর্তের জন্য চমকে গেলেও কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই ইশানের পিঠ থেকে হাতটা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দশ কদম দূরে চলে যায় সে।হেসে হেসে কাল যে সে অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে এটা মনে করে মাথা ঘুরছিল ওর।আর ইশানই বা কেমন করে সব ভুলে গিয়ে ওকে মাফ করে দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছে!
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বড় করে এসবই ভাবছিল সে ওমনি ইশানের কল আবারও আসায় এবার সে নিজেই উঠে বসে।ফোনটা ধরে সেও জাপানি ভাষায় উত্তর দেয় তারপর ফোন রেখে দেখে তিথি দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে
‘কি?সব ঘোরের মতন লাগছে?’
‘না মানে হ্যাঁ।বিশ্বাস হচ্ছেনা’
‘এদিকে আয় তো’
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলে,’কেন?’
‘প্রমাণ দেখাবো’
‘না না থাক।আমার বিশ্বাস হয়েছে’
এটা বলে তিথি দৌড় দিলো।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’রেডি হয়ে নে।এয়ারপোর্ট থেকে কল এসেছে।অফিসের সবাই বিদায় দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।এমনিতেও লেট হয়ে গেলো।
——-
পিংকি গোসল করতে অনেক সময় লাগায়,তাই পান্নাই মায়ের কাছ থেকে নাস্তা নিয়ে এসে রিদমের সামনে দিয়েছে।গিয়াস সাহেব নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন।
যখনই রিদম কথা বলার জন্য মুখ খুললো ওমনি তিনি চোখ মেলে বললেন,’কে মরে গেছে?’
‘না আঙ্কেল,আমি বলেছি কমলার টুকরা পড়ে গেছে’
‘ওহ!তাহলে কেউ মরে নাই।না জানি কবে আমি মরে যাই।দুইটা মেয়ে বিয়ে না দেয়া মানে মাথার উপর দুইটা আটার বস্তা, দেখতে হালকা হলেও বয়ে বেড়ানো ওজনের’
‘হুম।আমার ও তো দু বোন’
‘তোমার আর কি!তোমার বড় বোন তো প্রেম না করে করে শেষমেশ এমন একজনকে ধরেছে যে একাই তোমাদের বংশের সবার বিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালে দিতে পারবে।তা বাবা ঐ ছেলের কোনো ভাই টাই আছে নাকি?তাহলে বুক করে রাখতাম আমার পিংকি আর পান্নার জন্য’
‘নেই,তবে ওনাকে বললে বিজন্যাস পার্টনার খুঁজে দিতে পারবে ‘
গিয়াস সাহেব তো মহাখুশি হয়ে গেলেন।নড়েচড়ে বললেন,’তবে তাই হোক।তোমার বোনের বিয়েতে একবার গিয়ে তোমার দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে নিবো’
—–
ইশান এয়ারপোর্টে এসে চলে যাবার সময় কুয়িনার বাবার হাতে একটা নেকলেস বক্স ধরিয়ে বললো কুয়িনার বিয়ের গিফট।সে যেদিনই বিয়ে করুক না কেন,এটা যেন তিনি কুয়িনাকে দেয়,কারণ কুয়িনার বিয়েতে সে আসবেনা,সুযোগ থাকলেও আসবেনা।
তিথি ডায়মন্ডের সেটটা উঁকি দিয়ে দেখছিল,তার ডায়মন্ড খুব একটা পছন্দ না তারপরেও সেটটা দেখতে অসাধারণ ছিল,মনে মনে একটু হিংসা কাজ করছিল।বউ হিসেবে তার ও তো প্রাপ্য ছিল এটা!
এসব ভাবতে ভাবতেই তিথি ইশানের সাথে প্লেনে উঠে যায়।তিথি মোটেও মন খারাপ করে বসে ছিল না কিন্তু সে যখন উঁকি দিয়ে সেটটা দেখছিল ইশান সেটা লক্ষ করেছে।তাই সে বসে বসে গ্যালারিতে ডায়মন্ডের অন্য একটা সেট দেখতেছিলো।তিথির আর বুঝতে বাকি নাই যে তার হাসবেন্ড তাকেও গিফট করবে।কিন্তু এটাই বিপদ।ডায়মন্ড দেখতে শুনতে ভাল হলেও পরে বিপদে পড়লে বিক্রি করা ঝামেলা।আর তিথি তো সংসারী মেয়ে তাকে তো এই টুকু ভাবতেই হতো।
‘আমাকে দিবেন?’
‘না তো,তানিয়াকে দিব ভাবছি।তুই তো ওর বিয়ের গিফট কিনলি,আমার ও তো কিছু দেয়া লাগবে’
‘দিবেনই যখন,,,স্বর্ণের কিছু দিন।পরে কাজে আসবে।তাছাড়া অনেকেই দেখলে শুরুতে বুঝবেনা ডায়মন্ড নাকি এমিটেশন।’
‘তবে তাই হোক’
——
রিদম অনেক কষ্টে বেঁচে ফিরছে।গিয়াস সাহেব যেভাবে কথার প্যাঁচে ওকে পেঁচাচ্ছিলেন,সে ভেবেছে না জানি আরও কত কি বলে আজ ওর বাসায় আসাটাই বাতিল করে দিতো।এ সংসারের মেয়ে জামাই যে হবে তার আর রক্ষে নেই!
বুকে থুথু দিয়ে রিদম চলেই যাচ্ছিল,তখনই বারান্দা থেকে পান্না ওর নাম ধরে ডাকে।
পান্নার ডাক শুনে রিদম পেছনে তাকায়
‘কি পান্তুয়া? ‘
‘বাবা বলেছে কারোর সাথে প্রতিদিন দেখা করতে চাওয়া,ফুল দেয়া,বিপদে পাশে দাঁড়ানো এসব মানে প্রেম’
রিদম পান্নার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে।কি বলবে সে নিজেও জানেনা।পান্না আবার বললো,’আমরা কি প্রেম করি?’
‘না’
‘তাহলে প্রতিদিন দেখা হয় কেন?’
রিদম পান্নার দিকে তাকিয়ে আছে।এর উত্তর কি দিবে তা ভাবতে যেয়েই বলে দিলো সে আর দেখা করবেনা।কথাটা পান্নার খুব খারাপ লাগলো।এতটাই খারাপ লাগলো যে সে ওখানেই কেঁদেই ফেলেছে।
——
রিদম বাসায় ফিরে দেখে তার বিশিষ্ট রুমটা খালি করে ফেলা হয়েছে যেটা আসলে তিথির রুম ছিল।
এর কারণ হলো ইশান আর তিথি বিয়ের এ কটাদিন এই রুমেই থাকবে
রিদম তো মহাখুশি,সে দুলাভাইকে আবার বোঝাবে তাকে বিদেশ নিয়ে যাবার জন্য।দেশের এই জঞ্জাল তার ভাল লাগেনা,এ বয়সে দুটো মেয়ে টানাটানি করছে,আরেকটু বয়স হলে মনে হয় এলাকায় থাকা যাবেনা।
আপাতত রিদম ড্রয়িং রুমের সিঙ্গেল বেডেই থাকবে বলে ঠিক করা হলো।
ঐদিকে তানিয়া আজ সকাল থেকে বাসায় নেই।রকিব নতুন ফ্ল্যাট নিচ্ছে।সেটা দেখতে ওর পুরো পরিবার গেছে কিন্তু তানিয়াকে নিয়ে যাওয়া হলোনা কারণ বিয়ের আগে এত বর কনের সাক্ষাত ভাল দেখায়না বলে।কিন্তু তানিয়া তো তিথিরই বোন।
তাকে আটকায় কে?বিয়ের শপিংয়ে তাকে কেউ আটকাতে পারেনি,আর এত বড় একটা কাজের বেলায় তাকে আটকানো যাবে?
মায়ের পুরোনো শাড়ী আর মুখে কালি মেখে সে হাজির রকিবের নতুন ফ্ল্যাট দেখতে।ধরা খেলে বলবে সে কাজের বুয়া।
সবার আগে ধরা খেলো রকিবের কাছেই।কারণ তারা নিজেদের লোকরা ছাড়া বারতি লোক কেন আসছে। এখন কি কাজের বুয়ার দরকার আছে?
‘আপনি কে?’
‘ইয়ে আমি তো কাজের বুয়া।দেখলাম আপনারা নতুন উঠছেন তাই বলতে এলাম আমি ফিরি আছি।আমাকে কাজে রাখতে পারেন।রান্নাবান্না আর ধোয়া মোছা বাদে সব পারি।একেবারে একশোতে দুইশ’
‘তানিয়া?বিয়ের চারদিন আগে কেউ মুখে পাতিলের তলার কালি মাখে?ব্রণ উঠলে কি করবা?’
‘চিনে ফেললেন?’
‘বুয়াদের মুখ কালো আর পা সাদা হয়না’
তানিয়া জিভে কামড় দেয়।সে পায়ে কালি দিতে ভুলে গেছে।তখন সে ফিসফিস করে বলে,”চাচুমা যেন টের না পায়।আমি বাসা দেখতে এসেছি।সব রুমই সুন্দর তবে ঐ যে পশ্চিমের রুমটা ভাল লাগেনি’
‘তবে সেটা গেস্ট রুম হবে।এবার কি কনফার্ম করবো ম্যাডাম?’
‘জ্বী স্যার’
ওমনি মা এসে বললেন,’রকিব বাবা?এই মহিলা কে?এত চিপকাই কথা বলছিস কেন?’
‘আরেহ মা।দেখে যাও,নতুন বুয়া পেয়েছি’
‘ওমা তাই!আমি আরও ভাবছিলাম বুয়া কই পাবো বিয়ের সিজনে।উমমম দেখে তো কম বয়সী মনে হচ্ছে।তা কি কি কাজ পারো?’
‘মা সে রান্নাবান্না আর ধোয়া মোছা বাদে সব পারে’
‘এ কেমন কথা!এগুলাই তো আসল’
‘সে তোমার পা টিপে দিবে।কি বলো রেখে দিবো?’
‘তবে রান্না করবে কে?’
‘সেটা তানিয়া করবে।তাইনা বুয়া?’
তানিয়া দাঁতে দাঁত চেপে মাথা নাড়ায়।মা চলে যেতেই তানিয়া রকিবকে ঝাপটে ধরে ওর গালে চুমু খেয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো ওখান থেকে।মা যেতে যেতে ভাবছেন মেয়েটাকে চেনাপরিচিত মনে হলো।তাই তিনি আবারও পেছনে মুড়তেই দেখলেন রকিবের মুখে কালি আর সে চোরের মতন দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪৩
আফনান লারা
ইশান আর তিথি এয়ারপোর্টে নেমে তাদের বাসার গাড়ীর অপেক্ষা করছিল তখনই তাদের দুজনের নজরে পড়ে একটা ব্যান্ডওয়ালার দল।হাতে লিফলেট লাগানো যাতে লেখা’ওয়েলকাম ব্যাক ইশান,তিথি’
ওরা দুজনে তো বেশ অবাক হলো।এটা কার কাজ হতে পারে!
দুজনে সেখানে দাঁড়াতেই ফুলের মালা পরিয়ে দেয়া হলো তাদের।
ভীড় থেকে বেরিয়ে এলো গিয়াসউদ্দিন,তাও হুইল চেয়ারে করে।
‘ইশান বাবা ভাল আছো?’
‘আপনি কে আঙ্কেল?’
তখন তিথি সালাম দিয়ে বলে এটা গিয়াস আঙ্কেল,ওদের প্রতিবেশী।
‘ওহ হো।কেমন আছেন?আর এসব কি?ঠিক বুঝতে পারছিনা’
‘কি আর বলবো বাবা!আমার অবস্থা তো দেখছোই।সেসব অনেক কাহিনী।সময় করে বলবো নাহয়।এখন আমার এখানে আসার অন্যতম কারণ হলো তোমাদের রিসিভ করা।দেখলে তো কেউ তোমাদের একটু নিতেও আসেনি,কিন্তু নো ওয়ারি হোয়েন গিয়াস উদ্দিন ইজ হিয়ার।’
‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
‘এবার চলো,আমি তোমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে এসেছি’
এই বলে তিনি তার কর্মচারীকে বললেন হুইল চেয়ার ঠেলার জন্য।
ইশান ফিসফিস করে বলে দূর সম্পর্কের আত্নীয়র এত খাতির আসছে কই থেকে।
তিথি ও বুঝতেছেনা আসলে এনার মতলব টা কি।
গাড়ীতে তিনি ইশান আর তিথির মাঝ বরাবর বসেছিলেন।তিথিদের বাসায় যেতে দেড় ঘন্টার মতন সময় লাগবে তাই এই সুযোগ টাকে তিনি কাজে লাগাবেন।
‘বাবা তোমার কি চাচাতো,ফুফাতো, মামাতো,খালাতো,হুদাতো কোনো ভাই নাই?’
‘হুদাতো মানে কি আঙ্কেল?’
‘মানে এমনি ভাই’
‘ওহ।আছে তো,অভাব নেই কিন্তু কেন?’
‘আমার না ফুটফুটে দুইটা মেয়ে আছে বুঝছো?একটার নাম পিংকি আরেকটার নাম পান্না।দুজনকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা হয়।এতো আর কটা বছর পর তারা বিবাহযোগ্য হয়ে যাবে।তখন আমি যদি তোমার মতো একটা ছেলে না পাই তাহলে কি হবে বলোতো?যদি খারাপ কেউ জুটে তাহলে তো জীবনটাই গেলো’
তিথি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ছোট ছোট দুইটা মেয়ে যাদের এখনও নাক টিপলে দুধ বের হয়,তাদের নিয়ে এত চিন্তা!
ইশানের ও মাথা ঘুরছে।নিজের বিয়ে করেছে কত তিলিসমাতি করে, এখন আবার পাশের বাসার আঙ্কেলের মেয়ের বিয়ে দিতে হবে।
আচ্ছা এটাই কি সেই পিংকি যার কথা রিদম বলেছিল? ‘
‘ঠিক আছে আঙ্কেল জানাবো’
‘তুমি কি জানাবে?ছেলে আছে কিনা সেসব কিছু তো বললেনা।’
‘আছে, থাকবেনা কেন?আপনি শুধু বলুন কিরকম লাগবে?’
‘তোমার মত চুল,তোমার মত দেহগঠন, তোমার মতন বাড়িগাড়ী,তোমার মতন ব্যবসা। আমার এত লোভ নেই,কিন্তু ঐ যে মেয়েরা ভাল থাকুক এটাই চাই’
তিথি বলে,’বাহ আঙ্কেল বাহ!একেবারে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির বংশ চাইছেন দেখছি’
ইশানের হাসি আসলো তাও সে নিজেকে অনেক কষ্টে দমিয়েছে।তিথি আবার বলে,’এরকম পারফেক্ট জামাইয়ের আবার কিছু সাইড এফেক্ট থাকে।যেমন উনি আমায় অনেক অত্যাচার করেন’
‘সেকি!কিরকম অত্যাচার?’
——–
রিদম শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছিল,হঠাৎ মনে হলো পিংকির গায়ের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ। তারপরেও সেটাকে অদেখা করে সে গেমে মন দেয় কিন্তু এরপরই পান্নার গায়ের মিষ্টি গন্ধ নাকে আসতেই সে উঠে বসে।চেয়ে দেখে দুবোন সেজেগুজে এসে হাজির।রিদম হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে সেই সিঙ্গেল বেড থেকে নেমে খাটের তলায় চলে যায়।পান্না আর পিংকি ঘুরে ঘুরে উপরের ঝাড়বাতি দেখছিল।
‘বুবু,মনে হলো রিদম ভাইয়া ছিল এখানে’
‘আরে না,এখানে সে থাকলে তো কথাই বলতো।চল ভেতরের রুমে যাই’
‘না না,এভাবে কারোর বাসায় ঢুকতেই ভেতরের রুমে যাব কেন?আমরা এই খাটে বসে থাকি। তানিয়া আপু আসলে কথা বলবো’
এই বলে পান্না আর পিংকি এসে খাটের উপর বসে পড়ে।রিদম ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
‘বুবু রিদম ভাইয়াকে যে দেখছিনা? ‘
‘এই তুই সারাক্ষণ রিদম রিদম করিস কেন?ও আমার বিএফ নাকি তোর?’
‘বিএফ মানে কি বুবু?’
‘আমি নিজেও জানিনা,ক্লাসে সবাইকে দেখলাম এরকমটাই বলে ছেলে বন্ধুকে ‘
পান্না ভাবছে তবে রিদম ও ওর বিএফই হবে।
——
গিয়াস সাহেব তার দুই মেয়েকে বলে গেছিলেন তারা যেন সেজেগুজে রিদমদের বাসায় চলে যায়,কারণ তিনি ইশানকে এনে ওদের দেখাবেন।
তেমনই হলো।ইশান আর তিথি বাসায় ঢুকতেই গিয়াস সাহেব তার মেয়ে দুটোকে ইশারা করলেন যাতে এসে সালাম করে।
দুজনে তাই করে।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’রিদম কোথায়?’
তিথি তার মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।মা ইশানের কথা শুনে রিদমকে ডাকা শুরু করে।তখন রিদম খাটের তলা থেকে বেরিয়ে সালাম দিলো।
(‘বেয়াদব ছেলে!দুলাভাই বাসায় এসেছে আর সে খাটের তলায় বসে আছে!’)
কথাটা গিয়াস সাহেব বিড়বিড় করে বললেন।
রিদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আচ্ছা পান্না এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!
ওর কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে।এদিকে এখান থেকে নড়তেও পারবেনা।কি একটা মুছিবত!’
——-
তিথি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ইশানের সাথে ধাক্কা লেগে কপালে ব্যাথা পেলো।তারপর কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,’ইচ্ছে করে এমন করেন সবসময়”
‘ইচ্ছে করে করি নাই।যেহেতু অপবাদ দিলি তবে সেটাকে সত্যি করতে হয়’
এই বলে ইশান তিথিকে ধরে কপালে আরেকটা বাড়ি দিয়ে নিলো এরপর হাসতে হাসতে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।
তিথি কপাল মুছে রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয় ইশানের মায়ের সাথে।
ওনাকে দেখে তার তো ভয়ে গলা টলা শুকিয়ে গেলো মূহুর্তেই।
সালাম দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো সে।
‘আমার ছেলে কোথায়?’
‘উনি ওয়াশরুমে’
উনি গাল ফুলিয়ে রুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে পাউডার নিয়ে তিথির গলায় ঘঁষতে লাগলেন এরপর বললেন,’মান সম্মান তো কিছুই রাখবেনা দেখছি।গলায় এমন দাগ নিয়ে নিশ্চয় সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে এসেছো এতদূর?’
তিথি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে,’না আসলে আমি হিজাব পরে এসেছিলাম।হিজাবটা মাত্রই খুলছি’
‘তবে আবার পরো, বাসায় সব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে।তারা কি ভাববে?’
তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।’নিজের ছেলের দোষ সব,আর যেভাবে ঝাড়ি দিচ্ছে যেন আমি ওনার ছেলেকে বলছি,”আসো আমাকে কামড়াও।দিছে তো দিছে।আমার জামাই দিছে তাই বলে এত অপমান করার কি আছে!আর ছোট রা কি ভাববে মানে!ওদের কি বলবো যে আমার জামাই কামড়িয়েছিল?ওদের বলবো বল্লা কামড় দিছিলো।ব্যস হয়ে গেলো।’
সেই সময় ইশান বের হয়।মা তো আবেগে আপ্লুত হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।ইশানই তামিয়াকে বলেছিল মাকে নিয়ে সোজা এই বাসায় চলে আসতে।সেও মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে।তিথি ইশানকে দেখিয়ে গলার দাগটা ইশারা করে মনমত গালি দিলো মনে মনে,তারপর হিজাব বাঁধতে থাকলো।ইশান বুঝে গেছে মা নিশ্চয় উত্তম মধ্যম দিয়েছে ওকে এটা নিয়ে।
সে হাসতে লাগলো, ওকে হাসতে দেখে মা বললেন,’তোর বউকে কিছু শেখা।এভাবে খোলামেলা এসব প্রকাশ করতে নাই।ছোটদের কথা বাদ দিলাম,বড়রা কি ভাববে?দেখলাম পাশের বাসার এক ভদ্রলোক ও এসেছেন’
‘হ্যাঁ মা,আমিও বলছি মৌমাচির চাকের নিচে না যাইতে।তাও সে গেছে এখন দেখছো কিরকম লজ্জাকর পরিস্থিতিতে ওকে পড়তে হলো’
‘মৌমাচির চাক?জাপানে?’
‘হ্যাঁ তো।ঘুরতে গেছিলাম পার্কে,সেখানে বিদেশী তেঁতুল গাছে ধরেছিল।তিথিকে তো চিনোই সব কিছুতে ওর নাক গলানোর স্বভাব”
তিথি রেগেমেগে তেড়ে এসে বললো,”মোটেই না।মিথ্যা কেন বলছেন?মা জানেন,উনি আমাকে ঝাপটে ধরে এই যে এই জায়গায় কামড়েছিল।সেটারই দাগ এটা।আমি নাক গলাইনি’
মা লজ্জায় লাল হয়ে রুম থেকে চলে গেছেন একেবাসে।ইশান তখন তিথির কান টেনে ধরে বললো,’গাধী!তোকে বাঁচানোর জন্য মৌমাছির কথা বলছি,আর তুই কিনা বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিলি!’
ইশান ও বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।তিথি ভাবতে থাকলো দোষটা কোন জায়গায় ছিল তার!
—–
‘আপনার কোনো বোনের ছেলে আছে?কম বয়সী বিসিএস ক্যাডার,কিংবা নুডুলস,কোক,চিপসের কোম্পানির মালিক?আমার এই তো দুটো মেয়ে।ওদের জন্য’
ইশানের মা গিয়াস সাহেবের কথা শুনে চোখ বড় করে চেয়ে রইলেন।তাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গিয়াস সাহেব পান্না আর পিংকিকে যেটা শিখিয়ে এসেছিলেন সেটা ইশারা করলেন করার জন্য।
ওমনি দুবোন এসে ইশানের মায়ের দুপাশে বসে খালামণি খালামণি করতে লাগলো
চলবে♥