যদি তুমি বলো পর্ব-৪০+৪১

0
369

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪০
আফনান লারা

ইশান তার পরিচিত পুলিশ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেছে।ওনারা ইশানের বাসার সামনের সিসি ক্যামেরায় দেখা প্রাইভেট কারের নাম্বার প্লেট থেকে গাড়ীটি ট্রেস করার চেষ্টা করছেন।
ভোর হয়ে যাওয়ায় ইশানের ভয়টা আরও গাঢ় হয়ে গেলো।তিথি কেমন আছে,সেফ আছে কিনা তা নিয়ে ভীষণ ভয় হতে লাগলো ওর।যদি ওর কিছু হয়ে যায়?
পুলিশকে সে তাড়া দিতে থাকে।কিন্তু এভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়া অপহরণকারীকে খোঁজা আর অন্ধকারে ঢিল মারা একই।
তাও ওনারা নাম্বার প্লেট দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে সেই গাড়ীটি পেয়েও যায়।কিন্তু অপহরণ কারীরা ছিল অনেক চতুর।তারা গাড়ীটিকে একটা নির্জন জায়গায় এনে ফেলে রেখেছে, পুলিশ কিংবা ইশানের মনযোগ হটানোর জন্য,সময় নষ্ট করার জন্য।
কিন্তু গাড়ীটিকে খুঁজে পাওয়া তাদের বৃথা যায়নি।গাড়ীতে একটা লেটার গ্লু দিয়ে আটকানো ছিল।যাতে লেখা ছিল পুলিশ ইনভলব হলে তারা তিথির ক্ষতি করবে।

এদিকে পুলিশ বলছে তারা ভয় পায়না,ইশান ও যেন ভয় না পায়।তাদেরকে কাজ করতে দেয়া হোক।কিন্তু ইশানের ভয় হলো একমাত্র তিথির জন্য।
ওরা যদি সত্যি তিথির ক্ষতি করে ফেলে?
—-
তিথিকে সই করার জন্য হাত খোলা হয়েছিল সেই হাত এখনও তারা বাঁধেনি।ভুলে বসে আছে।
তিথিও ভুলে আছে তার হাত যে খোলা।সে খিধার চোটে নিজের দুহাতের দিকে চেয়ে এরপর সাদা দড়িটা দেখে ভাবছে গিট্টু টা খুললো কে।
তাই নিজে নিজে হাতে রশিটা ঘুরাতে ঘুরাতে বিড়বিড় করে বলছে তার খিধা পাচ্ছে,ঘুম পাচ্ছে।
হাতে একটা গিট্টু দেয়ার পর তিথির হুশ আসলো যে সে তো চাইলেই পালাতে পারে!
ওমনি গিট্টুটা পুনরায় খুলে সে পা টিপে টিপে চেয়ার থেকে উঠে বসে।
কোমড় ধরে চারিদিকটা দেখতে থাকে।যে লোকটাকে তিথিকে পাহারা দেবার জন্য রাখা হয়েছিল সে লোক মদ খেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
“””এটা কোন ধরনের অপহরণকারী! ঝাঁঝ নাইই!
হাত ধরে টানা টানি করবে,তারপর আমি বলবো,”বাঁচাও!প্লিজ,নাহ নাহ!ছেড়ে দে শয়তান! আমার দেহ পাবি কিন্তু সই পাবিনা শয়তান!
তারপর আমাকে ওরা জোর করতে চাইবে ঠিক সেই সময় ইশান কাঁচ ভেঙ্গে ঢুকবে,সেই লেভেলের একটা এন্ট্রি নিবে।সকলে হা করে চেয়ে থাকবে। আর আমি বলবো,”নে কি করবি কর!আমার নায়ক এসে গেছে!’
ধুর কিছুই তো হলোনা।কেমন নিরামিষ টাইপের কিডন্যাপিং হয়ে গেলো’
—-
পুলিশ সেই গাড়ীর আসল মালিককে খুঁজে বের করে তার কাছ থেকে জানতে পারে দুদিন আগে একটা লোক তার থেকে এই গাড়ীটা ভাড়ায় নিয়েছিল। এবং সে বলেছে এক সপ্তাহ পর ফেরত দিবে।
ঐ মালিকের কাছ থেকে পুলিশ সেই লোকের স্কেচ তৈরি করে নেয় এবং পোস্টার ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে,সকল পুলিশ স্টেশনে ছবিটা পাঠিয়ে দেয়া হয়’
তিথি সেই জায়গা থেকে বের হয়ে দ্রুত হাঁটছে।তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা বাজে।
সে হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের মধ্যে পোস্টার লাগানো দেখে থেমে যায়।এটা সেই লোকটার ছবি যে কাল তিথিকে সই করতে বলেছিল।
তিথি পোস্টারটা তুলে দেখে””” Wanted!!
একে ধরিয়ে দিলে ৫০হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
তিথি দাঁত কেলালো এরপর কাগজটা হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলো।ভাগ্য ভাল পোস্টারে ইংরেজীতে ঠিকানা লেখা ছিল।তিথি একটা লোককে সেই ঠিকানা দেখিয়ে কাছাকাছি একটা পুলিশ স্টেশনে চলে আসে।
ইশানের কোনো টাকা খরচ করতে হবেনা,এদিক দিয়ে সে আরও ৫০হাজার টাকা তাকে উপহার হিসেবে দিবে।বাহ তিথি কত জিনিয়াস!
তিথি কাগজটা পুলিশ অফিসারকে দেখিয়ে ইংরেজীতে বললো সে এই লোকটার ঠিকানা জানে।
তখন পুলিশ ইশানের পরিচিত সেই পুলিশের অফিসে কল দিয়ে জানায় তারা এই অপহরণকারীর খোঁজ পেয়েছে।একটি মেয়ে জানিয়েছে সে ঐ লোকের ঠিকানা জানে।
সঙ্গে সঙ্গে ইশান আর সেই পুলিশ অফিসার এই জায়গার ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা হয়।
তিথি লজ্জায় বলতে পারছিল না যে তার টাকাটা কখন দেয়া হবে।
তাই ভাবলো আগে ধরিয়ে দিলে হয়ত তারপর টাকা দিবে।
এদিকে খিধার জ্বালায় সে তো মরেই যাচ্ছে।
——
ইশান আর সেই পুলিশ অফিসারেরা মিলে লোকেশানে পৌঁছে যায়।অপহরণকারীরা সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
তাদের সবাইকে ধরার পরেও তিথিকে কোথাও না পেয়ে ইশান রেগে গিয়ে সেই লোকটাকে মারতে শুরু করে।কিন্তু লোকটা বারবার একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো যে সে কিছু করে নাই,তিথি এখানেই ছিল।ও কিভাবে গায়েব হয়েছে তারা জানেনা।
ইশানের মাথা গরম হয়ে আছে,কি করে সে তিথিকে খুঁজে পাবে।
তিথি সেই পুলিশ স্টেশনে বসে বসে স্যান্ডউইচ খাচ্ছিলো।অফিসার লোকটা ভাল আছে,সে না বলতেই খাবার দিয়ে গেছে।এদিকে ইশান ৫০হাজার টাকার একটা চেকে সই করে দেয় কারণ শর্ত মতে যে মেয়েটা এই অপহরণকারীকে ধরিয়ে দিয়েছে তাকে এই টাকা দিতে হবে।
চেকটা হাতে নিয়ে পুলিশ অফিসার অফিসে ঢুকে তিথিকে সেটা দিয়ে দেয়।
ইশান বাহিরেই ছিল।গাড়ীতে হেলান দিয়ে সে ভাবছিল কি করে তিথিকে খুঁজে পাবে,কই থেকে শুরু করবে।
তিথি চেক নিয়ে লাফাতে লাফাতে অফিস থেকে বের হতেই ইশানের সামনে পড়ে।ইশান ওকে দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে ছিল।

‘তুই এখানে?’

তিথি চেকটা ধরে বললো,’দেখুন আমি কিডন্যাপ হয়ে টাকা কামিয়েছি।’

ইশান চেকটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে তিথিকে জড়িয়ে ধরলো।তিথি শুরুতে ইতস্তত হলেও এর পরে নিজেও তাকে জড়িয়ে ধরে।

‘বোকা মেয়ে,এটা আমার সই করা চেক’

‘ওহ তার মানে আপনি এই পোস্টার লাগিয়েছিলেন?’

‘জ্বী’

‘তাহলে টাকাটা কি আমি নিব নাকি আপনি নিবেন?’
—–
পান্না আর পিংকি তাদের বাবার হাত টিপছে,উনার পা ভাঙছে তো কি হয়েছে?আপাতত হাত ব্যাথা করছে।তাই ওরা দু বোন মিলে হাত টিপতে লেগেছে।
পিংকি হঠাৎ উঠে চলে যায় একটা কাজের বাহানা দিয়ে।পান্না একা আছে দেখে গিয়াস সাহেব বললেন,’পান্নু একটা কথা বলবি?’

‘কি বাবা?’

‘তোর বোন কি লাইন মারে?’

‘হ্যাঁ মারেই তো’

‘তাই?কার সাথে?’

‘পানির বিলের অফিসে লাইন মারে,গ্যাস বিলের অফিসে লাইন মারে,আর….’

‘আরে বোকা,আমি বললাম টাংকি মারে কিনা!’

‘হ্যাঁ মারেই তো’

‘কার সাথে?’

‘ছাদের পানির টাংকি আছেনা?ওখানে বুবু পানি দেখতে যায় তো!কিন্তু মারে কিনা তা তো বলতে পারছিনা!’

‘এ মেয়েকে তো বুঝানোই যাচ্ছেনা।আচ্ছা শোন,আমি বলেছি তোর বোন পিংকি,সে কারোর সাথে প্রেম করে?’

‘প্রেম কি বাবা?’

‘প্রেম কি জানিস না?আচ্ছা প্রেম হলো ধর কারোর সাথে প্রতিদিন দেখা করতে চাওয়া কিংবা দেখা করা,কারোর প্রতি মনযোগী হওয়া,কাউকে চাওয়া,কাউকে দেখার উদগ্রীবতা।বা যাকে চাওয়া সেও একই অনুভূতি প্রকাশ করে,ফুল আনে,বা বিপদে সাহায্য করে,পাশে দাঁড়ায়।
এইসব আছে তোর বোনের মাঝে?’

পান্না গালে হাত রেখে বাবার কথাগুলো ভাবতে থাকে।পিংকির সাথে এসব ঘটে কিনা তার জানা নেই কিন্তু এসব তো তার সাথেই ঘটছে রীতিমত। সে ওমনি বাবাকে চেপে ধরে বললো,’আমার সাথে ঘটছে বাবা’

‘তোকে আমি সন্দেহর কাতারে রাখিনা,তুই ছোট মানুষ।তুই শুধু পিংকির কথা বল’

‘না,বুবু তো এসবে নাই,দেখি ও নাই।কিন্তু আমি প্রেম করছি এটা নিয়ে আমি নিশ্চিত ‘

বাবা পান্নার কথা মাথাতেই নিলেন না।চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন।
———
তিথি সারা রাত ঘুমাতে পারেনি তাই গাড়ীতেই ঘুমাচ্ছে।তিথিকে সেই লোকেরা শহরের বাহিরে নিয়ে এসেছিল।তার থেকে যে সইটা ওরা নিতে চাইছিল তা ছিল ইশানের কোম্পানির যে নমিনী থাকে সেটার ক্ষমতা নেবার দলিল।তারা আন্দাজ করেছিল ইশান তার সব সম্পত্তি তিথিকে নমিনী করে রেখেছে।আর তাই ওরা তিথির সই নেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল।
ইশান তিথির কাছে জানতে চাইলো ও কোনো সই করেছে কিনা।তখন তিথি আধ ঘুম চোখে বলে দেয় সে দলিলে সই বাদে বাকি সব করে এসেছে।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৪১
আফনান লারা

তানিয়ার বিয়ের তারিখ সামনে চলে আসায় সে ফোন করে ইশানের হাতে পায়ে ধরছে যেন সে তিথিকে নিয়ে দেশে ফিরে।শুধুমাত্র ১০দিনের ব্যাপার।
ইশান রাজি হচ্ছেনা কারণ তার অনেক কাজ আছে যেগুলো এখনও সম্পূর্ন হয়নি।সে কথা শুনে তানিয়া তো বলেই দিলো সে আসতে না পারলে যেন তিথি একাই চলে আসে।আপন বোন বলে কথা,এটা কিছুতেই ছাড় দেয়া যাবেনা।তিথির ও ইচ্ছা আছে কিন্তু ইশান না বললে তো আর আসা যায়না,টিকেট থেকে শুরু করে সব খরচ ইশানই বহন করবে।
এদিকে ইশানের কাজ এক দিকে আর তিথি এক দিকে।কাজ বন্ধ করে দিবে তাও তিথিকে সে একা কোথাও যেতে দিবেনা।
অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষে ইশান রাজি হয়।তিথির তো আনন্দ আর ধরেনা।এই জাপানিদের মাঝে থেকে সে তার মাতৃ ভাষাটাই ভুলে যাচ্ছিলো।
কি করে যে দেশে ফিরবে,এবার দেশে ফিরলে রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট গুলো জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে যাতে ইশান আর ওকে জাপানে নিয়ে আসতে না পারে।
এসব ভেবে তিথি মিটমিট করে হাসছিল তখন ইশান এসে বলে,’এত হেসে লাভ নেই,আমি ঠিকই আসার সময় তোকে ধরে নিয়ে আসবো ‘

তিথি খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলে,’হুহ!একবার যদি গিয়ে উঠি।তারপর দেখি কি করে আনেন।আমার দম বন্ধ হয়ে আছে এখনও।দেশের হাওয়া লাগবে’

‘ওকে ফাইন।তুই যদি না আসিস তবে আমি জাপানে এসে কুয়িনার সাথে সংসার করবো ‘

এটা শুনে তিথি রেগে গেলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’আমি যাব না দেশে’

‘কেন?বোনের বিয়ে খাবিনা?’

‘নাহ!’

‘তাহলে সংসারের প্রতি মায়া আছে তোর?বিশ্বাস হচ্ছেনা।ভাল কথা মাথায় এসেছে।আমার তো এখনও প্রতিশোধ নেয়া হয়নি’

‘আর কত অত্যাচার করলে আপনার এই প্রতিশোধের ঘড়া পূর্ণ হবে?’
——
রিদম তানিয়ার বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে পিংকিদের বাসায়।শুধু কার্ডের জন্য নাহ,আঙ্কেলকে একবার দেখে আসতেও বলেছে বাবা মা।
রিদমকে যেন এভারেস্ট জয় করার টার্গেট দিয়েছে বাবা।এত কঠিন কাজ কেউ এত কম বয়সী একটা ছেলেকে দেয়?
অনেকক্ষণ ধরে ওদের মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিদম।কি করে কি করবে সেটাই পরিষ্কার হতে পারছেনা।অনেক অংক কষাকষি করে সে কলিংবেলে চাপটা দিয়েই দেয়।
পিংকির মা এসে দরজা খুললেন।তাকে দেখে রিদম হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।এরপর মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরে এসে বসে সোফায়।তানিয়ার বিয়ের ব্যাপারে বলে কার্ডটা ধরিয়ে দেয় পিংকির মায়ের হাতে। এরপরই পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল রিদম কিন্তু আন্টি বলে উঠলেন,’পিংকির বাবার সাথে দেখা করবেনা?’

যাঃ হয়ে গেলো!রিদম ঢোক গিলে সাড়া জানায়।এরপর হাঁটতে থাকে করিডোর দিয়ে সোজা পিংকির বাবার রুমের দিকে।

‘আআআআসসসাবো আঙ্কেল?’

‘বেয়াদবের বাচ্চা চোরের বাচ্চা চোর!তুই নিবিই যখন আমার ঘরের অলঙ্কার জাতীয় কিছু নিতি।তুই কেন আমার কলিজার টুকরা,জানের জান,আমার কমলা গাছের কমলাটা নিবি!আমি শুধু একবার পাই!দেখিস তোর কি হাল করি!চামড়া তুলে বিন ব্যাগ বানাবো!’

গিয়াস সাহেব কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিলেন।কথাটা বলে তিনি আসতে বললেন ভেতরে।
রিদমকে রুমে ঢুকতে দেখে তার মেজাজটা গেলো খারাপ হয়ে!
‘কি আশ্চর্য! এই ভর দুপুরে কেউ রোগী দেখতে আসে?’

এ কথা শুনে রিদম ভয়ে ভয়ে বলে সে বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে।

‘বিয়ে?কার বিয়ে?তোমার বাবাও না কেমন ধাঁচের মানুষ।মেয়ে বিয়ে দেয়া শুরু করে দিতেই আছেন,দিতেই আছেন।এত টাকা আসছে কোথা থেকে? আমি তো জানতাম উনি ঘুষ খান না’

‘না আসলে আঙ্কেল,,,বাবা তো জমিয়ে রেখেছিলেন’

‘তাও হতে পারে।আসলে ডাকাতি চুরি সব এই গিয়াসের কলোনীতেই হয়।তোমরা তো নবাবী কলোনীতে বসবাস করো!’

রিদম চুপ করে আছে।তখন গিয়াস সাহেব পান্নার নাম ধরে ডাকলেন। পান্না সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছিল।বাবার গলা শুনে ছুটে আসতেই রিদমের সাথে এক ধাক্কা খেলো।
রিদম কোনোরকমে দু কূল বাঁচিয়েছে।পড়লোনা ছিটকে।

‘পান্না তোর রিদম ভাইয়াকে বিকালের নাস্তা করে যেতে বলবি।আর পিংকি কোথায়?’

‘আমি বের হয়েছি,এবার বুবু গোসলে গেছে’

‘ওর দরজার বাহিরে দিয়ে লক করে দে।আমি চাইনা দুই চুম্বক কাছাকাছি হয়ে আটকে যাক’

রিদম হালকা কেশে বললো,’না থাক আঙ্কেল পরে একদিন এসে নাহয় খেয়ে যাবো।’

‘পরে আবার কেন আসবে?আজকেই শেষ খানা খেয়ে যাও।পান্না যা ওরে নাস্তা দে’

‘বাবা এখন তো দুপুরের ভাত খাওয়ার সময়’

‘ওহ! ভাত খাইবা?’

‘না না,নাস্তাই ঠিক আছে।আমি ভাত খেয়েই এসেছি’

পান্না নাস্তা আনতে চলে গেছে।রিদম ও পিছু পিছু যাচ্ছিল ওমনি গিয়াস সাহেব বললেন,’খামোশ!তুমি কই যাচ্ছো?’

‘ইয়ে ঐ যে নাস্তা করতে’

‘এখানে করবা নাস্তা।ঐদিকে যাও কেন?পিংকিকে দেখতে?’

‘না না।আচ্ছা বসছি’

এই বলে রিদম ওনার সামনে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।কি মহা ঝামেলায় পড়তে হলো এই বিয়ের কার্ড দিতে এসে।

‘তোমার ছোট দুলাভাই কি চাকরি করে?নাকি তোমার মতই বেকার!হাহাহাহাহাহা’

রিদম মনে মনে বলছে,’ক্লাস সেভেনের ছেলের কাছ থেকে কি বিসিএস ক্যাডার হওয়া আশা করে এই লোক!’

‘কি হলো বলছো না যে?’

‘জ্বী,দুলাভাই চাকরি করে’

‘ভালো!তা যৌতুক কিছু চেয়েছে??’
———-
ইশান তিথিকে সব গোঁছগাছ করতে বলে একটু অফিসে গেছে,দেশে ফেরার আগে অফিসের কাজ কমপ্লিট করে তারপর যাবে ভেবে।তিথিকে বারবার করে বলে গেছে যেন বাসা থেকে বের না হয়।
কিন্তু তিথি তো বের হবেই।সে বাসার কাছে একটা শপিংমলে সুন্দর একটা জামা দেখেছে, এটা সে তানিয়াকে কিনে দিবে।তাই সে ইশানের পকেট থেকে টাকা সরিয়ে বেরিয়ে গেছে।পরে বাংলাদেশ গিয়ে টাকাটা ফেরত দিবে।আর বিদেশ থেকে ফেরার সময় কিছু না নিয়ে গেলে কেমন দেখায়!
সেই শপিংমলে এসে তিথির যেটাই দেখছে সেটাই ভাল লাগছে কিন্তু তার কাছে তো এত টাকা নাই।

আজকে ইশান বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসলো কারণ তার তিথিকে নিয়ে সন্দেহ জাগছিল মনে।বাসায় এসে যে সন্দেহ সে করেছিল তাই হলো।তিথি বাসায় নেই।
মাথাটা গেলো গরম হয়ে।এখন কি করার!

—–
‘আরে ব্যাডা ওয়ানফু!৫০টাকা কমান তো!নাহয় আমি এটা নিতাম না।এটা কি দেখেন!মশারি দিয়ে জামা বানাই নাম দিছে নেটাংপু!
আচ্ছা নিলাম নেটাংপু!তাই বলে দাম এত বেশি চাইবেন?৫০টাকা কমান নাহয় আমি চলে যাচ্ছি বাংলাদেশ’

দোকানদার তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এটা কোন ধরনের ভাষা সে ব্যবহার করছে আর এটা মানে টা কি হতে পারে?

তিথি আবারও কমাতে বলে কিন্তু দোকানদার কিছু না বুঝে আস্তে করে চলে গেলো ওখান থেকে। তিথি রেগেমেগে শেষমেশ যে দাম ওরা বলেছে সে দামেই জামাটা কিনে হাঁটা ধরতেই ইশানের মুখোমুখি পড়লো।
ইশান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

‘আরে আপনি এসেছেন,ভাল করেছেন। এই দোকানদার আমার থেকে টাকা বেশি চেয়েছে।কিছু বলেন’

ইশান তিথির হাত ধরে টানতে টানতে চললো।তিথিকে আর কিছু বলার সুযোগই দিলোনা।
বাসায় আসার পর ইশান তিথিকে খুব করে বকলো।চিৎকার করলো,কেন সে না বলে বেরিয়েছে।এত মানা করার পরেও কেন একা একা বেরিয়েছে।

তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল শুধু।

‘আমার চেয়ে বেশি বুঝিস?আমি কি জাপানের মিনিস্টার যে তুই যে কোণায় থাকবি তোকে খুঁজে বের করতে পারবো?যেভাবে বিনা ভয়ে ঘুরছিস ফিরছিস মনে হয় তোর কাছে আমাকে ফিল্মের নায়ক মনে হয়,বারবার গুম হবি আর বারবার আমি রক্ষা করবো’

‘অপহরণকারীরা যেটা করেছে সেটাতে আমার হাত ছিল?আমি যাবার আগে সবার জন্য কিছু কিনতে চেয়েছিলাম।এটাই আমার দোষ।আমি আর কোনোদিন আপনার সাথে জাপানে ফিরবোনা,এটার জন্য আপনি মেরেই ফেলুন যদি তাও ফিরবোনা’

এটা বলে তিথি চলে যাচ্ছিল তখনই ইশান ওকে আটকে ধরে।ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ধীরে বলে,’মেরে ফেলার অনুমতি দিলি?’

‘হ্যাঁ,মেরে ফেললে এ জাত যাক’

ইশান তখন তিথির ওড়না মুঠো করে আরও শক্ত করে ধরে বললো,’তবে আজ মেরেই ফেলি।জাতকূল শেষ হয়ে যাক।শেষ হয়ে নতুন কিছুর জন্ম হোক,ঝড় থামুক!’
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে