যদি তুমি বলো পর্ব-৩৮+৩৯

0
405

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৮
আফনান লারা

তিথি যতদূর চোখ যায় হেঁটে চলেছে।আজ সে কিছুতেই ইশানের কাছে ধরা দিবেনা।ইশান কি মনে করে নিজেকে?
অতীতের একটা ভুল নিয়ে কি মাথা কিনে নিবে।এতদিন যা জ্বালিয়েছে ভাল।
‘আর না,আর সহ্য করবোনা আমি।আরে বিয়ের আগে যা করার করেছি,উনিও যা করার করেছেন তাই বলে কি বিয়ের পরেও করতে হবে!
কিন্তু যাচ্ছি যে আমি,কোথায় গিয়ে থামবো?’

তিথি থামলো।আশেপাশের মানুষগুলোর চেহারা,ব্যবহার,ভাষা কিছুই তার জানা নাই।আসার সময় ফোনটাও আনতে ভুলে গেছে।ফোন এনেও বা কি হবে।সে তো সিম নেয়নি।হোয়াটসএপে গিয়ে তানিয়ার সাথে কথা বলা যেতো কিন্তু তার এমবি শেষ।
ধুর!
‘পালানোর আগে পূর্ব পরিকল্পনা কেন করলাম না!অবশ্য আমি কি জানি এরকম একটা দিন আসবে!
কোথাকার সেই ক্যাবলা ইশান আজ দুটো মেয়েকে নাচাচ্ছে।’

তিথি একটা বেঞ্চিতে বসে পা দুলাতে থাকে।হঠাৎ তার সামনে একটা কার এসে থামে।তিথি ভাবছে ইশান কিনা।পরে দেখে এটা তো নীল রঙের কার।ইশানেরটা ছাই রঙের।কার থেকে দুজন লোক বের হয় এরপর শুদ্ধ
বাংলা ভাষায় বলে,’ম্যাম গাড়ীতে উঠুন’

তবে শুদ্ধ করে বললেও তাদের মুখ থেকে যখন বাক্যটি শোনা গেলো,বোঝাই গেলো যে তারা এটা মুখস্থ করে বলেছে।
তিথি বেঞ্চি শক্ত করে ধররে বলে,’যাব না’

লোকগুলো হাতের ফোন দেখে ‘যাব না” এর মানে বের করে তারাও বাংলায় বলে,’আপনাকে যেতেই হবে’

তিথি তাদের চাল বুঝতে পেরে তখন দুষ্টুমি করে বলে,’তোমরা আমার নাগর লাগো?’

লোকগুলো এবার টেনসনে পড়ে যায়।নাগর মানে কি আবার!
তিথি খিলখিল করে হাসছে।
এদের ইশান পাঠিয়েছে তিথিকে তুলে আনার জন্য।তিথি ও বুঝতে পেরে মজা নিচ্ছে।
——–
রিদমের বাড়ি থাকতেই পিংকি আর পান্না জানতে পারে তাদের বাবা হাসপাতালে ভর্তি।তাই তানিয়া আর রিদমের সাথে ওরা দুজন সোজা হাসপাতালে চলে আসে।
রিদম তো আর এত কিছু জানতোনা তাই সে সাথে করে কমলা চার কেজি কিনে নেয়।তানিয়া টাকা দিছিলো।হাসপাতালে যাবার পর রিদমকে দেখে গিয়াসউদ্দিন এমনিতেও রেগে গেছিলেন,এরপর ওর হাতে কমলা দেখে তার মাথা হয়ে গেলো চড়গ গাছ।
রিদম ভয় পেয়ে লুকিয়ে পড়েছে।গিয়াস সাহেব শুয়ে শুয়ে বলছেন,’দেখ পিংকি!কেন আমি এই বদমাইশটাকে দেখতে পারিনা’

‘বাবা ও তো জানতোনা তুমি যে কমলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছো’

‘চুপ!আবার ও বলা হচ্ছে।পিরিত দেখলে বাঁচিনা!’

তানিয়ার খুব হাসি পাচ্ছিল কারণ গিয়াস সাহেবের পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।সে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রাখে।রিদম তখন ফিসফিস করে বলে সে এখানে থাকতে চায়না আর।
——
লোকগুলো যখন বুঝতে পারে যে তিথি মজা করে চলেছে তখন তারা ইতিউতি না করে তিথিকে জোরপূর্বক গাড়ীতে বসায়।
তিথি অনেক চিৎকার করে তাও পারেনা।তাকে জোর করে আবারও ইশানের বাসার সামনে এনে রাখে ওরা।
তিথি বিরক্তি নিয়ে দরজার বাহিরেই অপেক্ষা করছিল তখনই ইশান দরজা খুলে।
তিথিকে দেখে সে হাসি দিয়ে বলে,’বড় ব্যবসায়ীর বউ হবার এই এক অসুবিধা।যেখানেই লুকাবি সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসবো।’

‘আপনার আর কাজ নাই?আমি ঘুরতে গেছিলাম’

‘ ফ্রি হলে আমিই ঘুরিয়ে আনবো।তোর একা ঘুরতে যাবার কোনো দরকার নাই।’

এই বলে ইশান বের হয়ে তিথিকে টানতে থাকে,তিথিও নাছড়বান্দার মতন বাসায় ঢুকতে চায়না। ইশান এবার ওকে ধরে কোলে নিবে ওমনি কুয়িনার গাড়ী দেখে থামে।কুয়িনা গাড়ী থেকে নামলো। নেমে ওখানেই মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকলো।তিথি কুয়িনাকে দেখে আরও রেগে গেলো কিন্তু তার কি যেন একটা বুদ্ধি মাথার ভেতর খেলে গেছে।
সে ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ওয়াক ওয়াক!আমার না খুব বমি পাচ্ছে সোয়ামি!’

ইশান চোখ বড় করে তাকায় তিথির দিকে।কুয়িনা ওদের কাছে এসে গাড়ীর দিকে তাকাতেই একটা ছেলে গাড়ীর ভেতর থেকে হাতে বেবিদের জামাকাপড় আর খেলনার একটা সেট এনে ইশানকে দেয়।এরপর সে জাপানি ভাষায় কিসব বলে।তিথি ইশানের মুখের দিকে তাকালো।ইশান তো হাসেও না,কাঁদেও না।কোনো রিয়েকশানই দেখালো না।তবে সে বুঝবে কি করে যে কুয়িনা কি বলেছে?

তার পরেও বাচ্চাদের এসব দেখে সে আন্দাজ করলো কুয়িনা হয়ত গিফট দিয়েছে।
তিথি তখন কুয়িনাকে ধরে বললো’অনেক অনেক থ্যাংকস!’

কুয়িনা হাত ছাড়িয়ে নেয় তখন তিথি বলে,’ভাঙ্গবে তবু মচকাবেনা।ফকিন্নি ‘

কুয়িনা এটা আর বুঝলোনা,ইশান তখন জানতে চায় সে এখানে কেন এসেছে।
কুয়িনা নিজের ভাষায় বলে শেষবারের মতন দেখা করতে এসেছে।সে আমেরিকা যাবে পড়াশুনার জন্য।
তিথি আমেরিকা বুঝলো কান পেতে।তারপর ইশানকে ফিসফিস করে বললো,’আপনাকে নিয়ে আমেরিকা যেতে চায়?’

ইশান বিরক্ত হয়ে তখন ঐ লোকদুটোকে ইশারা করে।তাই ওরা দুজন এসে তিথিকে ধরে বাসার ভেতর নিয়ে যায়।যাবার সময় তিথি বলে,’আপনি একটা খারাপ স্বামী।এই লোকগুলোকে বলতেন কুয়িনাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে,সেটা না করে নিজের বউকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে বললেন’
———
গিয়াসউদ্দিনকে সবাই বাসায় নিয়ে এসেছে।তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলছেন’কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা’

পিংকি বাবাকে আপেলের জুস বানিয়ে দিয়ে নিজে আপেলের রস তুলা দিয়ে চোখের নিচে লাগাচ্ছে বসে বসে।পান্না আজকে আসার পথে একটা নার্সারীতে কমলা গাছ দেখেছিল।খালামণির টাকা দিয়ে সেই গাছ কিনে ছাদে লাগিয়ে দিয়েছে। সবসময় বিদেশী জিনিসের প্রতি আকর্ষণ না রেখে দেশী জিনিস ও ব্যবহার করা উচিত।
দিনশেষে দেশী পাশে থাকে,বিদেশী চলে যায়। ‘

গাছটা লাগিয়ে পান্না সিঁড়ি দিয়ে নামছিল ঠিক সেইসময় ছাদের পাশের কলা গাছটা অনবরত নড়ছে দেখে সে একটু কাছে আসে বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে জানার জন্য।
সেদিনের সেই চোর দুটি উঠছে গাছ বেয়ে।তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো।
পান্না দুটো লোককে উপরে উঠতে দেখে নিজে গিয়ে টাংকির পেছনে লুকিয়ে পড়ে।এরপর দেখতে থাকে এখানে কি ঘটছে।

সেই চোর নং ১ হাতে একটা কমলা গাছ নিয়ে উঠলো,এরপর পরের চোরটা হাতে কোদাল নিয়ে উঠেছে।
তারা জানতে পেরেছে গিয়াসউদ্দিনের হার্ট এটাক হয়েছে।তাই চুরির দায়ে মৃত্যুদণ্ড তারা ভাবতেও পারেনা।ঐ গিয়াসের কিছু হয়ে গেলে তখন পুলিশ তো এর তদন্ত করবে।এরপর যদি ওরাই দোষী সাব্যস্ত হয়?

‘ভাল করে গাছটা পুঁতে দে মনির!’

‘ভাইয়ে এখানে যে আরেকটা কমলা গাছ’

‘এ্যাঁ!তার মানে কি আমাদের বাহিরেও আরেকটা চোর আছে? ‘

‘না না!টবে লাগাইছে তার মানে বাসার কেউ এ কাজ করছে।আচ্ছা ভাইয়ে এই গোলাপ গাছ থেকে একটা ফুল আমি নিই?’

‘তুই গোলাপ ফুল দিয়ে কি করবি?’

‘সারাদিন গাছগাছালি তে থাকি তো তাই গায়ের থেকে কেমন একটা গাইচ্ছা গাইচ্ছা গন্ধ আসে।বউয়ে কইছে গোলাপ জল দিয়া গোসল করলে সব গন্ধ দূর হই যাইবো’

‘এ্যাহ!গিয়াসের বংশের ব্যাপারে তোর কোনো ধারণা আছে?সামান্য কমলা ছিঁড়ে খাওয়ায় ব্যাটার হার্টে সমস্যা দেখা দিছে,আর গোলাপ ছিঁড়লে জানি বংশের কোন বাতি নিভে যায়।না না বাপু!এতবার জেল খাটতে পারমু না।পরে দুই জেলে জেলে কাটাকাটি করে একেবারে ফাঁসিই হই যাইবো’

পান্না সব দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।

তখন মনির বললো,’এটা তো চারা গাছ।চারা গাছে কমলা কসটেপ দিয়ে লাগানো কি উচিত হবে?’

‘কমলা দেখলে গিয়াসের প্রাণ ভরে যাবে।সে পুরান কমলার শোক ভুলবে।নে ভাল করে কসটেপ লাগা’

দুজন মিলে কসটেপ দিয়ে কমলা একটা গাছের মধ্যে লাগিয়ে এবার চললো বাড়ির পথে।ছাদ থেকে নামার সময় মনিরের পকেট থেকে সরষে তেলের বোয়াম একটা নিচে পড়ে যায়।তখন পনির বলে,’তুই পকেটে করে সরষে তেল নিয়ে ঘুরোস কেন?’

‘আজ পুকুরে গোসল করবো তো তাই সরষে তেল নিছি’

‘এখন এটা যতবার পকেটে পুরবি ততবার পকেট থেকে পড়ে যাবে।তোর আর সরষে তেল মাখতে হবেনা।তেল ফেলো নেমে পড়’

মনির ও মাথা নাড়িয়ে সরষে তেলের বোয়াম খুলে সব তেল গাছে ঢেলে দিলো।

পনির তখন সেটা দেখে বললো,’ইশ রে এমন করলি কেন!’

‘তুমিই তো বললে তেল ফেলে নামতে’

‘যা বেকুব!তাই বলে গাছেই ফালাবি?আমার মনে পড়ছেনা কলা গাছে তেল দিলে কি যেন একটা হয়!’

মনির আর দেরি না করে গাছ ধরে নামতে গিয়ে হাত-পা পিছলে ধপাস করে নিচে পড়ে গেছে।তখন পনির বললো ‘হুমমম মনে পড়েছে।কলাগাছে তেল দিলে সে গাছে আর উঠা যায়না রে মনির!কিরে তুই কই!এত জলদি নেমে গেছিস🐸?’
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৯
আফনান লারা

কুয়িনার ভালবাসাটুকু বরাবরই এক তরফা ছিল।ইশান কখনওই তাকে ভালবাসেনি।কিন্তু ইশান তাকে যেভাবে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে এসেছিল কুয়িনার মনে হতো সেও হয়ত কুয়িনাকে ভালবাসে ওরই মতন।
তিথির কথা জানলে হয়ত কুয়িনা মনে ভালবাসার বীজ বুনতোনা।
সে সবকিছু সোজা করে কুয়িনা ইশানকে জানায়,এটাও জানায় ইশানের পছন্দ করা ছেলেটিকে সে বিয়ে করতে পারবেনা।পড়ালেখার জন্য চলে যাচ্ছে অন্য দেশে।শেষবারের জন্যই দেখা করতে এলো।

কিন্তু ইশান একবারও কুয়িনাকে ভেতরে এসে বসতে বলেনি,সে কখনওই কুয়িনাকে সুযোগ দিতো না,,, যে সুযোগে কুয়িনার মনে হয় তার মনে প্রেম আছে ওর জন্য।

তিথি বসে বসে ভাবছে ওখানে এত সময় ধরে কি এমন কথা বলছে তারা,ঠিক সেইসময় ইশান বাসায় ঢোকে। তার কর্মচারীদের চলে যেতে বলে এবার।তিথি ইশানের মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করছে কিছু বোঝা যায় কিনা।নাহ,কিছুই বুঝতে পারলোনা সে।তাই হতবাক হয়ে শুধু চেয়েই থাকলো।
ইশান অফিসের পোশাক পরছে নিরব হয়ে,তিথি তখন দরজার এক পাশ ধরে দাঁড়িয়ে বলে,’কুয়িনার জন্য মন কেমন করছে?’

‘না’

‘তাহলে মন এত খারাপ কেন?’

‘খারাপ কারণ কুয়িনা মিথ্যে জেনে চলে গেছে ‘

তিথি তখন জানতে চাইলো কিসের মিথ্যে?

জবাব দিলো না ইশান।হাতে টাই নিয়ে তিথির সামনে এসে দাঁড়ায় সে,এরপর টাইটা তিথির হাতে দিয়ে ইশারা করে পরিয়ে দেবার জন্য।
তিথি টাইটা উল্টে পাল্টে বলে, ‘আমি তো টাই পরাতে পারিনা।’

ইশান তখন নিজের টাইটা পরতে পরতে বলে,’আর কি পারিস না?’

‘বাকি সব পারি’

‘কি কি?’

তিথি তখন বলে সে শার্ট,প্যান্ট পরাতে পারে।তার এমন আজগুবি কথায় ইশান কোনো রিয়েক্ট করলোনা।অফিসের কিছু কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে আসলো বাহিরে। তিথি ওর পিছু পিছু আসতে আসতে জানতে চাইলো সে কখন ফিরবে।
ইশান থামে এরপর বলে তার আসার সাথে তিথির এ কথা জেনে কি কাজ?
তিথি আমতা আমতা করলো।কিন্তু সঠিক উত্তর টা বললোনা।

ইশান চুপচাপ চলে গেছে।তিথির আজ বলতে ইচ্ছে করছিল এই যে ইশান তাড়াতাড়ি আসলে তারা দুজন গল্প করবে।
কিন্তু বলতে যেয়েও সে পারেনি।মুখ আটকে যায় অর্ধেকেই।
সে যদি ইশানের প্রতি অনুভব করা টানের কথা উল্লেখ ও করে তাও হয়ত ইশানের কাছে নেহাত ফাজলামোই মনে হবে।কারণ টা অনেক বড় কবিতার লাইন।

তিথি সোফায় বসে টিভি অন করে।সব জাপানী চ্যানেল।একটা জাপানী সিনেমা চালু করে সে ওটা দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে যায়।মেইডরা বাসার সব কাজ করে চলে যাবার সময় দারোয়ানকে জানিয়ে যায়।ইশানের নির্দেশ ছিল তিথি ঘুমে থাকলে যেন তাকে ওঠানো না হয়।

তিথি চোখ খুলে দেখে চারিদিকে অন্ধকার।মেইডরা যখন গেছে তখন বিকাল ছিল বলে তারা আলো জ্বালিয়ে যায়নি,যার কারণে রাতের অন্ধকার নামতেই সব আঁধার হয়ে গেলো।তিথি একা একা অন্ধকারে হাঁটছে একটা লাইট খুঁজে পাবার জন্য,হঠাৎ তার মনে হলো সুইমিং পুলের দিকে কিছু একটা জ্বলছে।
সে আলোর খোঁজে এগিয়ে এসে দেখে সুইমিং পুলের সম্পূর্ণ কিণারায় ছোট ছোট বাতি জ্বালানো।
তিথি ভাবছে হয়ত প্রতি সন্ধাবেলাতেই এই আলো জ্বলে।কিন্তু নাহ,এটা আজকেই জ্বলেছে।
তিথি আর বাসায় গেলোনা,ওখানেই বসে বসে পানিতে হাত বুলাচ্ছিল,সেসময় বাসার ভেতর কিসের একটা আওয়াজ পেয়ে সে ভয় পেয়ে যায়।এখন তো কেউ থাকার কথা না,তবে বাসায় কে?
ভয় পেয়ে তিথি সুইমিংয়ের কোণায় গিয়ে বসে পড়ে আর দোয়াদরুদ পড়তে থাকে।

কালো পোশাকের একজনকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিল।তিথি দেহের গড়ন দেখে শুরুতে ইশান ভাবলেও কণ্ঠস্বর অচেনা ঠেকলো।তার ভয়টা আরও বেড়ে যায়।সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।ঐ লোকটার হাতে টর্চ লাইট ছিল।
—–
ইশান বাসায় ফেরে তার থেকে এক ঘন্টা বাদে।সে বাসায় ঢোকার আগে দারোয়ানকে কারের চাবি দেয় পার্ক করার জন্য তাই প্রতিদিনের মতন চাবিটা সে বাড়িয়ে ধরে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল।তার কথা বলা শেষ তাও দারোয়ান ফেদার এখনও তার হাত থেকে চাবিটা তুলে নিলোনা।
ইশান অবাক হয়ে সাইডে চেয়ে দেখে ফেদার এখানে নেই।
ফেদারকে ডাকতে ডাকতে ইশান কলিংবেলে নক করে।
মিনিট পাঁচেক পরেও কারো কোনো সাড়া না পাওয়ায় ইশানের ভয় হলো।সে ইন্টারকমে কল দিতে থাকলো। তাও কারোর কোনো সাড়া না পেয়ে ইশান বাধ্য হয়ে পকেটে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খোলে।
ভেতরে ঢুকেই সে তিথির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে চারপাশে ওকে খুঁজতে থাকে।
কিন্তু আফসোস তিথি কোথাও নেই।ইশান সুইমিং পুলে বিচসিট থেকে একটা লেটার পায়।যেটাতে জাপানি ভাষায় লেখা ছিল তারা তিথিকে তুলে নিয়ে গেছে।তার বিনিময়ে তাদের ঠিক কি লাগবে তা পরবর্তীতে তিথির কিছু অংশের সাথে প্রেরণ করা হবে।

ইশান পুল সাইডে বসে বসে চিঠিটা দেখছিল।এর আগেও কুয়িনার সাথে একই ঘটনা ঘটেছিল।কিন্তু কুয়িনা ইশানের কিছু লাগতোনা বলে বিষয়টা বেশি আগায়নি।কিন্তু এখন মামলা সিরিয়াস।
তিথি যে ইশানের স্ত্রী এটা হয়ত ওরা কোনোভাবে জেনে গেছে।ইশান এটাও জানে ওরা আসলে কি চায়।
ওরা ইশানের পুরো কোম্পানির পাওয়ার অফ এটর্ণি নিজেদের নামে করে দিতে বলবে।
ইশান চুপচাপ মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবছে কি করে সে তিথিকে বাঁচাবে।
বিনা কারণে তিথির কোনো ক্ষতি করবেনা এ ব্যাপারে ইশান নিশ্চিত কিন্তু যদি করেও ফেলে!
অবশ্য তিথি তো আর কুয়িনার মতন না।ও মাথা খাটালে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।কিন্তু তাকে তো এভাবে ছেড়ে দেয়া যায়না।কিছু না কিছু করে তিথিকে বাঁচাতেই হবে।ওর উপর ভরসা নাই।যত মারামারি সব ইশানের সাথেই পারে,বাহিরের কারোর সামনে ভেজা বেড়াল।
——-
তিথিকে সুন্দরমতন চেয়ারে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছে সেই দলের লোকজন।তিথি বসে বসে ভাবছে কখন ইশান আসবে,নায়কের মতন এন্ট্রি নিবে আর দুমদাম মারবে।ইশ কি ভাল সিন হবে তখন।তিথির আর তর সইছেনা।
কিন্তু এতক্ষণ কেন লাগছে?
ও হ্যাঁ ইশান তো বাসায় দেরি করে ফেরে।তাই বলে এখনও ফিরলোনা?
তিথির খিধে পেয়েছিল। সে বাংলা,ইংরেজী,হিন্দি,জাপানি যা পেরেছে তাই বলেছে তাও লোকগুলো ওর কোনো কথাই বুঝেনি।একটা লোক এমন ভাব করছিল যেন সে বুঝতেছে কিছু কিছু।
তিথিও খুশি হয়ে যায়।সে লোকটা ইশারা দিয়ে বলে,’খানাপিনা ওয়াংফু,খাবো চাবাই চাবাই কিংফু’

লোকটা মাথা চুলকাচ্ছে। এটা কোন জাতের ভাষা তাই বুঝতেছেনা লোকটা।
তিথি যখন বুঝলো লোকটা তার কথা বুঝতেছেনা তখন সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এরই মাঝে একটা লোক একটা দলিল এনে তিথির সামনে ধরে এরপর কিসব বলে ওর হাত খুলে হাতে কলম ধরিয়ে দেয়।
তিথি কাগজটা দেখে বলে,’সম্পত্তি লাগবে আপনাদের?কিন্তু আপনারা কি জানেন?আপনাদের ইশান স্যার তো আমার নামে একটা ল্যাট্রিন ও রেজিস্ট্রি করে দেয়নি,বাড়ি গাড়ি তো দূরেই থাকুক।আমি যে সই করবো এই সইয়ে আপনারা কিছুই পাবেন না’

লোকটা তারপরেও সই করার জন্য তিথিকে বাধ্য করতে থাকে।তিথিও কম না।সে রেগেমেগে কলম দিয়ে পুরো দলিলে ব্যাঙ,ব্যাঙয়ের ছাতা আঁকিবুকি করে রেখে দেয়।
লোকটা তখন একটা চিৎকার করে চলে গেলো।তিথি এতটা ভয় পেয়েছে যে সে ভাবছে তাকে বুঝি ধরে পিটাবে।কিন্তু নাহ,তারা ইশানকে ভয় পায় বলে তিথিকে একটা টোকাও দেয়নি।
তিথি এবার আবারও ঐ লোকটাকে ইশারা করে খাবার আনতে বলে।লোকটা ওমনি ভেতরের রুমে গিয়ে আসার সময় একটা মদের বোতল নিয়ে এসে তিথিকে ধরিয়ে দেয়।
তিথি তো দেখেই বুঝেছে এটা মদের বোতল।তখন সে বললো,’এই গাধার দল!মদ খাবোনা চিয়াংপু!!বুঝোস না কেন!উনপু উনপু ভাত ভাত?ভাত চিনো?ভাত খাবো!মদ খেয়ে পেট ভরবে না তো রে বাপ!জাপানি ভাষায় ভাতকে কি বলে!
এই ব্যাডা!তোমরা ভাতকে কি বলো?রাইস রাইস?রাইসকে কি বলো তোমরা?’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে