যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৬
আফনান লারা
কুয়িনা এখানে এসেছিল ইশানের সাথে দেখা করতে।অনেকদিন পর তাদের দেখা হবার পরেও এয়ারপোর্টে ঠিকমত কথা তারা বলতে পারেনি।এখন সেই সুবাদেই সে ইশানের সাথে দেখা করতে সোজা তার বাসায় চলে আসে।
তিথি ইশানকে বললো,’মেয়েটা কি একাই পাগল নাকি আপনিও তার জন্য এক কালে পাগল ছিলেন?’
‘তোর কি জ্বলে?যদি তাই হয় তবে হ্যাঁ।আমরা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ছিলাম’
এটা শুনে তিথি রাগ করে ইশানের বুক থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়।যত প্ল্যান তার করা ছিল,ইশানের এই একটা কথায় সব কিছু মাটি হয়ে গেলো।সে রাগ করে রুমে চলে এসে ইশানের শার্টটা গায়ের থেকে খুলে নিজের জামা পরে নেয় এরপর গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
ইশান মেইডদের বললো কুয়িনাকে নাস্তা দিতে এরপর সে তিথির কাছেই আসতেছিল তখন কুয়িনা তার পথ আটকে দাঁড়ায় এরপর ওর সাথে বসতে বলে।
ইশান তখন তাকে বাধা দিয়ে বলে তার ফ্রেশ হতে হবে আগে।অফিস থেকে তো মাত্রই এসেছে।
এরপর সে রুমে এসে দেখে তিথি রাগ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।
ইশান চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তিথির কাছে এসে ওর পা ধরে দেখলো ক্ষতটা ভাল হয়েছে কিনা।এরপর সে কুয়িনার কাছে আসে।
তিথি চুপিচুপি নেমে দেয়ালে কান পেতে শুনছে আসলেই তারা কি বলে।
কিন্তু তিথির দূর্ভাগ্য ইশান আর কুয়িনা জাপানি ভাষায় কথা বলছিল।সে কান পেতে সব শুনেও কিছুই বুঝতে পারলোনা।
ইশাব কুয়িনাকে চলে যেতে বলে।তার সাথে কুয়িনার কখনওই প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।আসলে কুয়িনা এক তরফাই ইশানকে ভালবেসে এসেছে।শত চেষ্টা করেও সে ইশানের মন গলাতে পারেনি।ইশানের মনে তো কেবল তিথিই বাস করে।তিথি যদি সেটা বুঝতো!
কুয়িনা তাও জেদ করে বসে থাকে।সে যাবেইনা।সে মানতে নারাজ তিথি যে ইশানেরই বউ।সে বিশ্বাসই করছেনা উল্টে জেদ বাড়াচ্ছে।
তিথি এইটুকু বুঝতে পারলো যে কুয়িনা ন্যাকা কান্না করে তার কোনো অনুরোধ ইশানের উপর করছে যেটা ইশান মানতে নারাজ।
ইশান কুয়িনার উপর বিরক্ত হয়ে ডানে মাথা ঘুরাতেই তিথিকে দেখতে পেলো,সে লুকিয়ে লুকিয়ে ওদেরকেই দেখছে।
তখন ইশানের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে চট করে উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা টেস্ট হজমীর প্যাকেট বের করে সেখান থেকে একটা ট্যাবলেট তুলে তিথিকে ধরে খাইয়ে দিলো এরপর ওকে এনে বাহিরে দাঁড় করিয়ে দুই আঙ্গুল ওর মুখে ঢুকিয়ে সে কুয়িনার কাছে ফেরত চলে আসে আবার,যেন কিছুই হয়নি।
এদিকে মুখে আঙ্গুল দেয়ায় তিথি ওয়াক্ ওয়াক্ করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে চলে গেছে।আর ইশান কুয়িনাকে বোঝালো তার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।
কুয়িনা এক মিনিটের জন্য হতবাক হয়ে ছিল।তার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।এটা কি করে হয়!
তিথি বমি করে এসে ইশানের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে মনমত গালি দিলো।কুয়িনা কিছুই বোঝেনি উল্টে ইশান উঠে তিথির কপালে চুমু খেয়ে এরপর পেটে চুমু খেয়ে ওকে যেতে বললো কুয়িনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।
‘এই আপনি আমার পেটে চুমু খেলেন কেন?পেটে কি বাচ্চা আছে নাকি?’
‘ট্রিপল’
‘এই ট্রিপল মানে কি?’
——-
পান্না ক্লাসে বসে দারুণ খোঁশ মেজাজে ছিল।এ প্রথম বার সে সানিমকে ভয় পাচ্ছেনা উল্টে মন চাইছে সানিমকে ইচ্ছেমত পেটাতে।তার পরেও সানিম কিচ্চু করতে পারবেনা কারণ তার ছায়া হিসেবে রিদম আছে।
পিংকি ক্লাস থেকে ফেরার সময় পান্নাকে সাথে নিয়ে ফিরছে আজ।
যেতে যেতে সে বললো আজ তারা রিদমদের বাসায় যাবে আগে।পান্না তো অবাক হলো,তারা রিদমের বাসায় কেনো যাবে?
তখন পিংকি জানায় রিদমের বোন তানিয়া রিদমকে দিয়ে নাকি ওদের যেতে বলেছে।গেলেই শুনবে।
পান্না ভীষণ খুশি হলো।রিদমদের বাসায় যাবার তার অনেকদিনের ইচ্ছা।আজ তা পূরণ হবে।
বাসার কলিংবেল চাপ দিয়ে পিংকি পান্নাকে জিজ্ঞেস করে তার চোখের কাজল ঠিক আছে কিনা।পান্না মাথা নাড়ায়।
দরজা খোলে তানিয়া।
সে পান্না আর পিংকিকে দেখে অনেক খুশি হয়ে যায়,সেবার রাস্তায় তাদের দেখেছিল প্রথম।সে ওদের হাত ধরে ভেতরে এনে সোফায় বসায়।পিংকি তো শুরুতেই কথা জুড়ে দেয় তানিয়ার বিয়ে প্রসঙ্গে।
পান্না এ সুযোগে উঠে রিদমকে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে সে তিথির রুমটা পায় যেটার দরজায় কাগজে লেখা ছিল”Ronaldor রুম এটা।দূরে থাকো! ‘
পান্না মুচকি হাসি দিয়ে দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।সে দেখে রিদম শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছে।পান্না ও এসে বসে।পান্না বসতেই রিদম বললো,’টুকু যাও তো।কার্টুন দেখার সময় ডিস্টার্ব করবেনা’
‘আপনি এত বড় ছেলে হয়ে কার্টুন দেখেন?’
এটা শুনে রিদম লাফ দিয়ে ঠিক হয়ে বসে পড়ে আর ল্যাপটপ টা অফ করে দেয়।পান্না ফিক করে হেসে বলে ‘কাউকে বলবোনা,প্রমিস’
‘তুমি এখানে কি করো!’
‘আপনি নাকি আপুকে আসতে বলেছিলেন এখানে’
‘ওহ হ্যাঁ!পিংকি কোথায়?’
‘তানিয়া আপুর সাথে গল্প করে।আপনিও চলুন’
‘নাহ,আমি এখানেই ঠিক আছি।কিছু খাবে?জুস?কোক?’
‘নাহ!ভাত খাবো ‘
রিদম মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উঠে যায় বাহিরে। পান্নাও পিছু পিছু আসে।রিদম একটা প্লেটে ভাত,মুরগীর রোস্ট নিচ্ছে।
পান্না বলে,’আমরা যখন বাসায় ঢুকেছি তখনি আমি রোস্টের ঘ্রাণ পেলাম।তাই ভাত খাবো বলেছি। ঠিক করেছি না?’
রিদম ওকে খাবারের টেবিলে বসিয়ে খাবার দিয়ে পিংকির কাছে আসে।কিন্তু পিংকি তানিয়ার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিল।
তাই রিদম আবার পান্নার কাছে চলে আসে।এসে দেখে পান্না খাচ্ছেনা।
‘কি হলো খাও না কেন?’
‘আমি দুপুরে স্কুলের থেকে এসে নিজের হাতে ভাত খাইনা।আম্মু খাইয়ে দেয়।’
‘আমার আম্মু তো বাসায় নেই আচ্ছা দেও আমি খাইয়ে দিই’
এটা বলে রিদম হাত ধুয়ে এসে পান্নাকে এক লোকমা খাইয়ে দিয়ে বললো,’ঐ ছেলেটা তোমায় আর কিছু বলেছে?’
‘নাহ।সে খুব ভয়ে আছে’
‘বেশ হয়েছে।এরপর আবার তোমায় জ্বালাতন করলে আমায় বলবে। আমি ঠিক করে দিবো’
—–
কুয়িনা কেঁদে ফেললো তিথির বাচ্চা হবে শুনে।ইশান পড়ে গেলো মহাঝামেলায়।
মেয়ে মানুষ কাঁদলে ছেলেদের ভাল লাগার কথা না।এখন ইশান কি করলে ও কাঁদবেনা তাই ভেবে চলেছে তখন কুয়িনা ইচ্ছে করে এগিয়ে ইশানকে ঝাপটে ধরলো শক্ত করে।
তিথি লুকিয়ে সব দেখলো।মেয়েটা ইশানকে জড়িয়ে ধরেছে দেখে তিথির যেন পায়ের তলার মাটিটাই সরে গেছে।
সে হনহনিয়ে আসতে যেতেই পায়ে ব্যাথা পেয়ে নিচে বসে গেলো।ইশান ওকে পড়তে দেখে কুয়িনাকে ছাড়িয়ে ছুটে এসে তিথির পা দেখতে থাকে আর জানতে চায় আবার কিসের সাথে চোট পেয়েছে।
কুয়িনার কাছে এটা খুব খারাপ লাগে।সে কাউকে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো বাসা থেকে।সে যাবার পর তিথি চেঁচিয়ে বলে,’সব মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে হবে?’
‘আর কাকে ধরলাম?আর ওকে আমি ধরিনি,সে আমাকে ধরেছে।তোকে ধরলে তো চেঁচিয়ে ঘর মাথায় তুলোস’
তিথি তখন মুচকি হাসি দিয়ে ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’এই নিন ধরলাম’
ইশান হঠাৎ তিথিকে ছাড়িয়ে বলে,’তোর শাস্তি এখনও শেষ হয়নি’
এটা বলে সে তিথিকে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় এরপর ওকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বলে,’নে শুয়ে পড়’
‘এত তাড়াতাড়ি?’
‘হুম।আর এটাই আজকের শাস্তি’
——
পান্নাকে রিদম খাইয়ে দিচ্ছে দেখে পিংকি পান্নাকে অনেক বকলো,এভাবে কারোর বাসায় এসে ভাত খাওয়ার জন্য।
তখন রিদম তাকে বুঝায় যে পান্না তো ছোট মানুষ।
‘আচ্ছা রিদম তোমার রুম দেখাবেনা?’
রিদম এবার পিংকিকে নিয়ে তার রুম দেখাতে চলে যায়।পান্না তখন পানি খাচ্ছিল,সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তাদের দিকে।তানিয়া মিষ্টির বাটি ওর সামনে ঠেলে দিয়ে বলে,’পান্তুয়া মিষ্টি খাবে?’
পান্না হাসি দিয়ে চামচ দিয়ে মিষ্টিটা কেটে দুভাগ করে চুপচাপ।তখন তানিয়া ওকে বলে,’তুমিও যাও,রিদমের রুমটা দেখে আসো।সে ইউনিকভাবে সাজিয়েছে।ভাল করে দেখে আসো,বাটিটা সহ নাও, যাও’
পান্না খুশি হয়ে বাটি নিয়ে চলে গেলো ওদের পিছু পিছু।
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৭
আফনান লারা
ইশান টায়ার্ড হয়ে ওর পাশেই শুয়ে পড়েছিল।ওর ঘুমন্ত চেহারা দেখে তিথির মনে পড়ে যায় সেই আগেকার দিনের কথা।তখন ও ইশানের মুখটা এরকম নিষ্পাপ ছিল।তখন সে হটিয়ে দিতো আর এখন!
বিছানা থেকে নেমে সোফায় বসার ইচ্ছা হলো তার,কিন্তু ইশান যে তাকে শাস্তি দিয়ে ঘুমাচ্ছে নিশ্চিন্তে।আর শাস্তিটি ছিল তিথি ঘুমাবে।ঘুম না আসলে কার কি করার!
এদিকে ইশান তার হাতে তিথির ওড়না পেঁচিয়ে ঘুমায়।সে কি জানেনা তিথি ওড়না ফেলেই যেতে পারে!
কিন্তু সে জানে তিথি যাবেনা।
আসলেই তিথি গেলোনা,সে বিছানাতেই বসে রইলো।বসে বসে ইশানকে আর কুয়িনাকে নিয়ে ভাবতে থাকলো।তিথির উপর প্রতিশোধ নেয়ার না থাকলে এতদিনে হয়ত কুয়িনাকেই ইশান বিয়ে করে বাচ্চা পয়দাও করে ফেলতো,
কুয়িনাও এরকম কাঁদতো না!
কুয়িনা তো ইশানের অফিসের একজন সাধারণ অফিসারের মেয়ে।তাহলে ইশান ওর সাথে এরকম মিষ্টি ভাষায় কথা কেন বলছে?তার কি কোনো দূর্বলতা আছে?
ইশানের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তিথির চোখেও ঘুম নেমে এলো।
সকাল হতেই ইশানের কড়া সাউন্ডের এলার্ম বাজতে থাকে।
সবেমাত্র ভোর ৫টা বাজে। অবশ্য ইশানের এত ভোরেই ওঠার অভ্যাস। সে উঠেই এলার্মটা দ্রুত বন্ধ করে দেয়।কারণ সে চায়না তিথিও উঠুক।
সে তার কাজের কারণে এলার্ম দিয়েছে।তিথির ওড়না থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে ইশান বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় এরপর তৈরি হয়ে বেরিয়ে যাবার সময় মেইডদের ডেকে দিয়ে যায়।মেইডদের বলে নাস্তার ব্যবস্থা করতে।সে এসে তিথির সাথে ব্রেকফাস্ট করবে।
তিথি ওঠেনি তখনও,কারণ ইশান ওর ঘুম ভাঙ্গার মতন কিছুই করেনি।
ইশান নিজের গাড়ী নিয়ে যাচ্ছে সামনের একটা পার্কে।সেখানে তার দেখা হবে কুয়িনার বাবা তাশচুর সাথে।তাশচু হলো ইশানের কর্মচারী।
অফিসারের সাধারণ একটি পদ।
ইশান তাশচুকে আগাম বার্তা দেয়নি সে যে আসবে।ইশান ভাল করেই জানে সে পার্কে আসলে তাশচুর সাথে দেখা হবে।কুয়িনাকে নিয়ে আলাপ করা জরুরি বলেই এত ভোরে তার এখানে আসা।
তাশচু খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে এক্সারসাইজ করছিল,ইশান ওকে দেখতে পেয়ে ওদিকেই আসছে সেসময় তাশচু ও ইশানকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’গুড মর্নিং স্যার’
তখন ইশান ওনার হাত ধরে বেঞ্চিতে বসায়।এরপর কুয়িনাকে নিয়ে প্রসঙ্গ ওঠায়।
অনেকবছর আগে ইশান যখন প্রথম জাপানে পদার্পণ করে তখন তাশচু ছিল ইশানের ডান হাত।তাশচু ইশানের কোম্পানি দাঁড় করাতে অনেক হেল্প করেছে যার কারণ ইশান তাশচুকে অফিসার পদ দিয়ে রেখেছে। যেখানে তাশচুর যোগ্যতা ছিলনা এত বড় একটি কোম্পানির অফিসার হওয়া।তাশচুর সাথে মিশতে মিশতে ইশানের কাছাকাছি হয়ে ওঠে কুয়িনাও।কারণ তাশচু সব অনুষ্ঠানে,সব ট্যুরে তার একমাত্র মেয়ে কুয়িনাকে সাথে নিয়ে আসতো।ইশান কখনও সে নজরে কুয়িনাকে খেয়াল না করলেও কুয়িনা সর্বদা ইশানকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকতো।একটা সময়ে সে বুঝতে পারে সে ইশানের প্রতি দূর্বল।আর ইশানকে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখে কখনও কোনো মেয়ে গঠিত বিষয় নজরে না আসায় কুয়িনা সিদ্ধান্ত নেয় সে তার অনুভূতির ব্যাপারে ইশানকে জানাবে।কিন্তু নিজের বাবা যে কোম্পানিতে চাকরি করে,সেই কোম্পানির ওনারকে প্রস্তাব দেয়ার মতন সাহস খুঁজে পাচ্ছিল না কুয়িনা।
এর মাঝেই ইশানের গার্লফ্রেন্ড মনে করে দূর্বৃত্তরা একবার কুয়িনাকে অপহরণ করে।
তারা তিন কোটি টাকা দাবি করে ইশানের কাছে।ইশান তিন কোটি টাকা দিয়ে কুয়িনাকে উদ্ধার করলেও পুলিশের সাহায্যে সে টাকাটা ফেরত আনতে পেরেছিল এবং তাদের যথাযথ শাস্তি ও দিতে পেরেছিল।
এদিকে কুয়িনাকে বাঁচিয়েছে বলে কুয়িনা ইশানের প্রতি প্রচণ্ড রকমের দূর্বল হয়ে যায়।সে ইশানকে সরাসরি তার অফিস কেবিনে ঢুকে বলে দেয় তার মনের কথা।
ইশান কুয়িনাকে বেরিয়ে যেতে বলে তখনি,কারণ সেদিন ইশান প্রচণ্ড রেগেছিল তিথি আদিলের হাত ধরতে চেয়ে ছিল এটা জেনে।
কুয়িনা কান্না করতে করতে চলে আসে বাসায় এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে,খাওয়াদাওয়া ঠিক মত করেনা।ইশানের মেজাজ ঠিক হবার পর সে ফল,ফুল নিয়ে কুয়িনাকে দেখতে তাশচুর বাসায় যায়।কুয়িনা ধরে নেয় তার স্বপ্ন বুঝি সত্যি হবে।কিন্তু নাহ!ইশান কোনো ছলনা করেনি তার সাথে।কুয়িনাকে দেখতে গিয়ে সে ঠাণ্ডা মাথায় কুয়িনাকে তিথির কথা বলে।
তিথিকে সে ছোটকাল থেকে ভালবাসে,এইসব ক্লিয়ার করে জানিয়ে দেয়,এবং এটাও বলে যে কুয়িনাকে সে জাপানের নাম করা, শিক্ষিত এবং ধনী,সুদর্শন ছেলের সাথে বিয়ে দিবে যে ইশানের চাইতেও বেস্ট হবে।কিন্তু কুয়িনা রেগে যায়,সে বলে সে বিয়ে করলে ইশানকেই করবে তা নাহলে যত কোটিপতি আনুক সে করবেনা।এরপর আর ইশান কিছুই বলেনা,চলে আসে ওখান থেকে। ওটাই ছিল তার সাথে কুয়িনার শেষ দেখা সেদিন।
এরপরই ইশান বাংলাদেশ চলে যায় কারণ সে জানতো আর কদিন থাকলে কুয়িনা আরও পাগলামি করবে।
এরপর ইশান যে বিয়ে করেছে সে খবর তার পুরো কোম্পানি জানছে সাথে কুয়িনাও।কিন্তু কুয়িনা সেটা মানতে রাজি না।তার কথা হলো এতগুলো বছর সে চোখের সামনে ইশানকে সকালের নাস্তা থেকে শুরু হয়ে রাতের ডিনার অবধি লক্ষ করার পরেও যাকে সিঙ্গেল দেখে এসেছে সে কি করে হুটহাট বিয়ে করে নিতে পারে!হাতে একটা মেয়ে থাকার পরেও কেন সে পরিবারের পছন্দে বিয়ে করতে যাবে।কুয়িনা ভাবতেও পারেনা ইশান পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করেছে।
এসবকিছু তাশচুকে বলার পর ইশান একটা ছেলের কার্ড দেয় তাশচুকে।ছেলেটার নাম কামপা।সে চিনের অধিবাসী এবং জাপানে তার ইশানের সাথে অন্য একটা ব্যবসার শেয়ার আছে।
ইশান সেই ছেলেটার সাথে কুয়িনার বিয়ে দেবার জন্য কাশচুকে বলে দেয়।এবং এটাও বলে কুয়িনা যেন আর কোনোদিন ইশানের বাসায় না আসে।ইশান চায়না তার স্ত্রীর সাথে কুয়িনাকে নিয়ে মনমালিন্য হোক।
তাশচু ক্ষমা চায় ইশানের কাছে,সে যদি আরও আগে জানতো কুয়িনা এরকম পাগলামি করছে তাহলে আরও আগেই ওকে আয়ত্তে নিয়ে আসতো।
তাশচুর সাথে কথা বলে ইশান তিথির কাছে চলে আসে।তিথি উঠার পর থেকে মেইডদের জিজ্ঞেস করে করে জ্বালাতন করছে যে ইশান গেছে কোথায় তাও এত ভোরে।কিন্তু মেইডরা তো কিছুই জানেনা তারা বলবে কি করে।
এরপর ইশান এসেছে দেখে তিথি ওর উপর চড়াও হয়।সে জানতে চায় এত ভোরে ইশান কোথায় গেছিলো।
ইশান উত্তর দিলোনা,মেইডদের বললো নাস্তা টেবিলে দিতে।তিথি মনে করে ইশান হয়ত কুয়িনার সাথে দেখা করতে গেছিলো তাই সে প্রচণ্ড রেগে যায় এবং কাউকে কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় একা একা।
——-
গিয়াস সাহেব আধুনিক হাসপাতালের পাঁচ তলায় ভর্তি।তার আত্নীয় স্বজন সকলে এক এক করে হাতে তিন/চার কেজি কমলা নিয়ে তাকে দেখতে হাসপাতালে ভীড় জমাচ্ছেন।ওনার অসুস্থতার কারণ হলো আজ দুপুরবেলা ভাত খেয়ে ছাদে যেয়ে তিনি তার একমাত্র কমলাটি দেখলেন না।গাছ ফাঁকা দেখে তার ছোট খাটো একটা হার্ট এটাক হয়েছে।
এখন যারাই তাকে দেখতে আসছে তারাই ওনার জন্য দেশী রঙ টসটসে কমলা রঙের কমলা নিয়ে আসছেন।
সেই কমলা দেখে তিনি আরও শোকে কাতর।তার অসুস্থতা আরও বৃদ্ধি পেলো।তার এমন ভাব দেখে বাকি আত্নীয়রা কমলার পরিবর্তে নাশপাতি আনতে শুরু করলেন যা কিনা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এবার তার শরীর আরও খারাপ হয়ে গেলো নাশপাতি গুলো দেখে,কারণ তিনি ছাদে তার কমলার মতন দেখতে নাশপাতি একটা পেয়েছিল যেটা কিনা দুভাগ করা ছিল।তার আবারও মনে পড়ে গেলো উদ্ভোধন করা হলো না,কেক কাটা হলোনা,বিলাতি কমলাটাও খাওয়া হলোনা।
অবশেষে তার এক আত্নীয় তার জন্য কমলাও আনলেন না,নাশপাতিও আনলেন না।তিনি বুদ্ধি করে কলা নিয়ে এনেছেন।
কিন্তু নিষ্পত্তি ছিল ওখানেই!কমলার শোকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কলার খোসায় পিছলে পড়ে গিয়াস সাহেব হাঁটুতে ব্যাথা পেয়ে পা অবশ করে ফেলেছেন,সে পা এখনও ঠিক হয়নি।ডাক্তার বলেছে দেড় মাস লাগবে।
আত্নীয়দের এমন আদিখ্যেতা দেখে গিয়াস সাহেব কোনোমতে সব ফলের ব্যাগ ধরে পাঁচ তলার জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন রেগে মেগে🐸!’
চলবে♥