যদি তুমি বলো পর্ব-৩৪+৩৫

0
366

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৪
আফনান লারা

তিথি তার মায়ের সাথে কথা বলছে।নালিশ করছে ইশানকে নিয়ে।তার মতে ইশান যত নষ্টের গোড়া।তার কারণেই একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটছে ওর সাথে। কিন্তু মাকে যেন ইশান বশ করে রেখেছে।
মা এক কান দিয়ে কথা ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে ফেলে।
শেষে বিরক্ত হয়ে তিথি ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো।ইশান এসে ফোনটা কানে ধরে শুনতে পেলো তিথির মা বলছেন,’ইশান ছেলেটা কোটিতে একটা!’

ইশান কিছু না বলে মুচকি একটা হাসি দিলো।তিথি বুঝতে পারছে মা এখনও প্রশংসা করে যাচ্ছে তাই তো ইশানের এত হাসি!

নিজের পা ধরে তিথি দেখতে নিলো সেই সময় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে ইশান ফোনে কথা বলতে বলতে ওদিকটায় যায়।রাত তখন সাড়ে দশটা বাজে এ সময় অতিথি আসার কথা না,তাও কে আসলো!
দরজা খুলে ইশান দেখে মিঃ বারি আর তার ওয়াইফ।
ইশান ওনাদের সোফায় বসতে বলে তিথির মায়ের সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখে।

মিসেস বারি উঠে তিথিকে খুঁজতে গিয়ে দেখলেন তিথি পা ধরে বসে আছে।
মিসেস বারি জাপানি ভাষায় দশ লাইন কথা বললেন।তিথি তার কিছুই বুঝলোনা।ও চুপ করে তাকিয়ে আছে দেখে মিসেস বারি বুঝে গেলেন সে তার কথা বুঝতেছেনা।তাই তিনি হাসি দিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে জানতে চাইলেন তিথির পায়ে কি হয়েছে।

তিথি বললো,’ইয়ে আসলে আমার পায়ে পেরেক চাংচুংচাং হয়ে গেছিলো।তারপর আপনার ভাইয়া পংপুং করে ব্যান্ডেজ বাংদিং দিছে’

মিসেস বারি যা ইশারায় বুঝতেছিলেন, তিথির জাপানি বাংলা মিক্সারে সব গুলিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলেন।তিথি ও বুঝলো সে পুংপাং দিয়ে কিছুই বোঝাতে পারেনি।তাই সে মাথায় হাত রেখে বসে থাকলো।একটা বছর এই বেডির সাথে কথাবার্তা শেয়ার কিভাবে করবে সে!
——–
পিংকি পড়া বাদ দিয়ে লিপস্টিক লাগাচ্ছিল,সেসময় পান্না পিংকির নতুন ওড়নাটা পরে ঘুরছিল বারান্দায়।আজ সে বউ সেজেছে।বারান্দায় পায়চারি করছে তার বরের অপেক্ষায়।
রিদম কদম ফুলের ডাটা ঠোঁট দিয়ে কামড়ে ধরে পিংকিদের বাসার সামনের সুপারি গাছটা বেয়ে বেয়ে উঠছে।সে পিংকির সাথে দেখা করবে।
প্রেম টেম কিছুনা।পিংকি যে নোট গুলা করেছে ওগুলা নেয়ার জন্যই তার এখান দিয়ে আসা।
এদিকে সদর দরজা দিয়ে ঢোকা নিষেধ,কারণ পিংকির বাবা আছেন।জানতে পারলে কষিয়ে চড় মেরে দিবেন।রিদমকে তার একেবারে অপছন্দ।

‘হুশহুশ!হুশহুশ!’

পান্না পায়চারি বন্ধ করে বারান্দার গ্রিল ধরে বললো,’কে ওখানে?সাপ ভাইয়া?ফুসফুস করছেন কেন?সাপ ভাইয়া তো ফুসফুস করেনা,ফিসফিস করে!’

‘পান্তুয়া! আমি দুলাভাই’

‘এ্যাঁ!টুলাভাই!আপনি হুশপাশ করছেন কেন!এখানেই বা কি করছেন?’

‘তোমার বোনকে বলো ইংরেজী নোটস দিতে।আমি সেটা নিতে এসেছি’

পান্না মাথা নাড়িয়ে পিংকির কাছে গিয়ে রিদমের কথা বললো।পিংকি তখন ঠোঁটে লিপলাইনার দিয়ে আর্ট করছিল।সে ব্যস্ত বলে খাতাটা পান্নাকে ধরিয়ে দেয়।পান্না ছুটে এসে খাতাটা রিদমকে দিলো।রিদম তখন বললো,’অনেক ধন্যবাদ পান্তুয়া! এই নাও ফুল’

‘টুলাভাই একটা কথা বলবো?’

‘হ্যাঁ বলো!’

‘আপনি যে গাছটাকে সুপারি গাছ মনে করে উঠেছেন সেই গাছটা বাবা সকালেই কেটে বিক্রি করে দিছিলো।এক দাম তিনশ টাকা দিয়ে।এখন আপনি যেটা বেয়ে উঠেছেন এক তলায়!সেটা আসলে সুপারি গাছ না,শুকনা বাঁশ!’

‘কিহ!তাই তো বলি এত পিছলা কেন!’

ওমনি বাঁশের মাঝখান ভেঙ্গে বিকট এক আওয়াজ হলো।রিদম ধপাস করে নিচ তলার উঠানে পড়ে গেছে।এরকম আওয়াজ শুনে গিয়াস সাহেব সদর দরজা খুলে দিলেন এক দৌড়।উঠানে এসে লাইট মেরে দেখলেন তার সকালে কেনা বাঁশটা দুভাগ হয়ে পড়ে আছে।এটা দিয়ে পেয়ারা পাড়ার জন্য এনেছিলেন। এভাবে ভাঙ্গলো কেন!

পান্তুয়া দোতলা থেকে চেঁচিয়ে বললো,”আব্বু আমি এটা ধরে দুষ্টামি করছিলাম, আমার হাত থেকে পড়ে দুভাগ হয়ে গেলো। সরি আব্বু’

‘তোর বোন কি করে রে?’

‘আপু পড়ছে! ‘

গিয়াস সাহেব একবার গেট অবধি গিয়ে রোডটা দেখে চলে আসলেন।রিদম ওখানেই ছিল।পেয়ারা গাছে উঠে বসে ছিল।হাঁটুতে কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।নিচে খড়ের গদি থাকায় খুব একটা ক্ষয় ক্ষতি হয়নি।
পিংকিদের গরু আছে একটা।ওটা ঘুমায় মনে হয়,নাহয় রিদমকে দেখলেই শুধু হাম্বা হাম্বা করে সে।

রিদম যাবার সময় পান্নাকে হাত বাড়িয়ে টাটা দিয়ে চলে গেলো।
———
শপিং করতে না পেরে তানিয়ার মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। সে রকিবের কল রিসিভ করছেনা কিছুতেই।
রকিব বাসায় গিয়ে তানিয়ার জন্য কেনা সব কিছুর পিক একটা একটা করে পাঠিয়ে দেয় তানিয়ার কাছে।
তানিয়া রাগ করে ছিল তাও মেসেজের সাউন্ড শুনে আর থাকতে না পেরে সিন করে দেখে সব কেনা শেষ।
ছবিগুলো ঘেঁটে দেখার পর সে বুঝতে পারলো আসলেই যা যা কেনা হয়েছে তার সবটাই ওর পছন্দের।একটাও মন্দ নাহ।অবশেষে তার রাগ কিছুটা হলেও কমে গেলো।সে একটা ইমুজি রিপ্লাই করে দেয় রকিবকে।
রকিবের ও মনে শান্তি হলো তানিয়ার রাগ ভেঙ্গেছে বলে।

তানিয়া যখন মিটমিট করে হাসছিল তখনই দেখে তার গুনধর ভাই রিদম গরমে,ঘামে চুপসে বাসায় ঢুকছে।যেন ক্ষেতে হালচাষ করে এসেছে।

‘কিরে?কই গেছিলি?এই হাল কেন?’

‘ধান রোপন করা শিখতে গিয়েছিলাম। ভাবছি বড় হয়ে কৃষক হবো’

‘ওহহো!তো আমাদের এইদিকে ক্ষেত আসলো কবে থেকে?পিংকিদের ঐদিকে নাকি?’

রিদম ফ্যানের নিচে বসে বললো,’হুম’

‘পিংকি কেমন আছে?’

‘পান্তুয়া ভাল আছে’

‘জানিস!পান্তুয়া দেখতে খুব কিউট।একেবারে মিষ্টি’

‘হুম’

‘কিন্তু তোর তো ঐ ন্যাকামোটারেই বেশি ভাল লাগে’
——
মিঃ বারি তার বউকে নিয়ে চলে গেলো।এরপর ইশান দরজা লক করে রুমে ফিরতেই দেখে তিথি পা ধরে বসে আছে,ওকে দেখেই বললো,’এখন থেকে আমার পা থেকে দূরে দূরে থাকবেন।বুঝছি তো!আমার পায়ের সাথে আপনার শত্রুতা আছে কোনো।তা নাহলে ঘুরে ফিরে পায়ের পেছনেই কেন লাগা হচ্ছে!’

ইশান কাছে এসে নিচু হয়ে বললো,’ওকে!পা থেকে দূরে থাকছি কটাদিন।’

এটা বলেই সে তিথির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে পাশে শুয়ে পড়ে।তিথি কপালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো এরপর বলে উঠলো,’প্রতিশোধ শেষ?’

তিথির এমন কথায় ইশান ল্যাম্পশেডের পাশ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে তিথির মাথায় ঢেলে বললো,’নাহ!কিন্তু শুরু’

তিথি হতভম্ব হয়ে বসে থাকলো।আর ভুলেও কোনোদিন সে প্রতিশোধের নাম নিবেনা।
———
পিংকি শুয়ে শুয়ে পান্নাকে রিদমের কথা বলছে।রিদম ওর জন্য কত পাগল এসব বলছে। পান্নাও বেশ মনযোগ সহকারে শুনছে।
রিদমকে তার খুব ভাল লাগে।এ বয়সে প্রেমের আবেগ না জমলেও এ বয়সে কাউকে ভাল লাগা যায়।
কাউকে পছন্দ করা যায়।এটা কেবলই ছোট বয়সের একটা ভাল লাগা,এটাতে প্রেমের বাতাস নেই।কিন্তু বন্ধুত্বের বাতাস আছে। পান্না আর রিদমের সম্পর্কটাও ঠিক এরকমই। নাহয় আজ পান্না নিজের উপর দোষ চাপিয়ে রিদমকে বাঁচাতো না।

গিয়াস সাহেব উঠানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার আনা বাঁশটা আলো জ্বালিয়ে দেখছেন এই রাতের আড়াইটার সময়।
গিয়াস সাহেবের স্ত্রী সিমু এসে হাই তুলতে তু্লতে বললেন,’আপনি কি ঘুমাবেন না?’

‘সিমু দেখো!বাঁশটা উপর থেকে পড়লে দুভাগ হতো লম্বালম্বি। অথচ এটা মাঝ বরাবর ভেঙ্গেছে।এর মানে দাঁড়ায়,,, এটাতে কেউ উঠার চেষ্টা করেছে,তবে সেটা কে!পিংকির বারান্দায় উঠে তার কাজটাই বা কি!নাকি সে ছাদে উঠতে চেয়েছে।আচ্ছা ছাদে তো আমার বিলাতি কমলার গাছটা।সে কি গাছটার প্রথম কমলাটা চুরি করে নিয়ে গেলো?’

ওমনি তিনি এক দৌড় দিলেন ছাদের দিকে।গাছের মাঝের ঢালে একটা কমলা ধরে আছে।তার এই গাছটায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই প্রথম একটা কমলা ধরেছে। এই কমলা পাকলে গাছ থেকে ছিঁড়ে অনুষ্ঠান করে উদযাপন করবেন তিনি।এসে দেখলেন কমলায় তালা ঝুলছে। মানে কেউ চুরি করে নাই।
তালাটা তিনি কমলায় স্টিলের দড়ি পেঁচিয়ে ঐ দড়িতে লাগিয়েছেন।
চোর নিতেই পারবেনা।
অথচ তিনি জানেন ও না কমলা গাছের ঐ ঢালটা ছিঁড়ে হাতে নিয়ে নিলে তালা-টালা কোনো কাজে আসবেনা🤭।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৫
আফনান লারা

সকাল সকাল ইশানের আজ অফিস যাবার দিন ছিল।ফ্যাক্টরির কি অবস্থা দেখতে হবে।রেডি হবার পরেও যখন সে খেয়াল করে তিথি উঠছেনা তখন সে ওর কাছে এসে হাত ধরে ডাকে।হাত ধরার পর বুঝলো এতবার করে পানি ঢেলে ভেজানোর কারণে মহারানীর জ্বর হয়েছে।এদিকে ফ্যাক্টরিতে যাওয়া খুবই জরুরি।নোটবুকটা বের করে ইশানের বাসার পুরোনো মেইডদের কল করে সে।তারা আসতে আধ ঘন্টা সময় লাগবে,তাই সে বসে বসে অপেক্ষা করে।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি আসবে,কিন্তু আজকে যাওয়া খুবই জরুরি।তিথিকে একা রেখে যাওয়া উচিত না বলে মেইডদের কল করেছে।তারা বাসার যাবতীয় কাজ করবে প্লাস তিথির খেয়াল ও রাখবে।
ঠিক সময়ে সেই দুজন মেইড চলে আসে।ইশান তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়।
তিথি ইশান চলে যাবার ঘন্টাখানেক পর জেগে ওঠে। ইশান কোথাও নেই দেখে বিছানা ছেড়ে নামে।
পায়ের ব্যাথাটা তীব্র সাথে জ্বর তো আছেই।তিথি ২য় কদম দেবার আগেই একজন মেইড এসে তিথিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হাতের উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে ওর মুখটা মুছিয়ে দেয়।এরপর ওর হাতে ঔষুধের পাতা আর এক গ্লাস পানি দেয়।
তিথি আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলোনা।ইংরেজীতে প্রশ্ন করলো সে।ভাগ্য ভাল মেইডরা ইংরেজী জানতো।তারা ইংরেজীতে তিথিকে উত্তর দেয় তাদের ইশান পাঠিয়েছে।
তিথি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।সে তো ভেবেছিল আজও ভাত তরকারির আশায় তাকে যুদ্ধ করতে হবে।ঔষুধটা রেখে তিথি আগে কিছু খেতে চাইলো।ওরা কত কি আইটেম তৈরি করে ফেলেছিল অল্প সময়ের মধ্যেই।সেগুলো এনে হাজির করে তিথির সামনে।

তিথি খাবার,ঔষুধ সব খেয়ে শুতে যেতেই কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায়।কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কে এসেছে।একটা মেয়েলি গলা শুনে তিথি অনেক কষ্টে উঠে দেখতে যায়।উঁকি দিয়ে দেখে সেদিনের কারে বসা মেয়েটা।হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে।
যে মেইড দরজা খুলেছে সে জাপানি ভাষায় কি যেন বললো।তখন মেয়েটা হয়ত বলেছে সে বাসায় অপেক্ষা করবে।এই বলে সে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে।
তিথি ব্রু কুঁচকে মেয়েটার কাছে এসে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা ওকে দেখে হাসলো না,বরং গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকলো।
তিথির রাগ হলো ভীষণ।সে রুমে ফেরত এসে গায়ের জামা খুলে ইশানের শার্ট একটা পরে আবার ঐ মেয়ের কাছে এসে হাজির হলো।এরপর বললো,’কুয়িনা?’

মেয়েটা মাথা নাড়ায়।তার মানে এই সেই কুয়ারা!
মেয়েটা ইশানের শার্ট তিথির গায়ে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলো। রাগে ফুঁসছে সে।
——–
পরেরদিন সকাল সকাল পিংকি স্কুলে চলে যায়।এদিকে পান্নাও আজ স্কুলে যাবার কথা ছিল কিন্তু বাবা তাকে রিকশাভাড়া দিতে ভুলে গেছিলেন।যার কারণে সে হেঁটে হেঁটে স্কুলের দিকে যাচ্ছে।পিংকি বাবার বাইকে করে চলে গেছে কারণ তার মর্নিং শিফট।

পান্নাদের ক্লাসে একটা ছেলে আছে।নাম সানিম।
সানিম অত্যন্ত বাজে স্বভাবের একটা ছেলে।সাত বছরের একটা ছেলে এতটা বাজে হতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো সানিম।
পরশুদিন ক্লাসে সানিম হোমওয়ার্ক করে আসেনি।যার কারণে তাকে ম্যাম পানিশমেন্ট হিসেবে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।পান্নার সাথে সানিমের ঝগড়া বলে সে মিটমিট করে হাসছিল।যেটা সানিম দেখে ফেলে।আর তাই পান্না একা আসছে এটা দেখে সে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়,হাতে আবির নিয়ে।পান্নাকে সে রঙ দিয়ে চুবাবে।যাতে ও আজ স্কুলে যেতে না পারে।

পান্না তো ভয়ে শেষ।সানিমের হাতের রঙ দেখেই বুঝেছে।সে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে রিদম সাইকেল দিয়ে বাজারে যাচ্ছিল টমেটো আনার জন্য।পান্না বিপদে পড়েছে দেখে সে থামে।এরপর সাইকেল রেখে সে এগিয়ে এসে সানিমের হাত থেকে রঙের পলিথিনটা কেড়ে নিয়ে সব ওর মুখে সব মাখিয়ে দিলো মূহুর্তের মধ্যেই।

‘কিরে ভাল লাগছে?’

সানিম ভয়ে আর রাগে ছুটে পালালো।পান্না হাসি দিয়ে বলে,’টুলাভাই আপনি এখানে?’

‘টমেটো আনতে যাচ্ছি,তুমি স্কুলে যাচ্ছ?’

‘হু’

‘হেঁটে?চলো আমি তোমায় দিয়ে আসি’

রিদম সাইকেলে উঠে পান্নাকেও উঠতে বলে।পান্নাও রাজি হয়।সে রিদমকে শক্ত করে ধরে বসে।
যেতে যেতে পান্না অনেক কথা বলে।সানিম তাকে যে শুধু বিরক্ত করে এসব ও বলে।রিদম তাকে ভয় পেতে না বলে।সাহস দেখিয়ে লড়তে বলে।
——–
‘হ্যালো ইশান ভাইয়া?’

‘আমি তোর ভাইয়া হলাম কবে থেকে? ‘

‘ভাইয়া আপনার প্রাক্তন+বর্তমান গার্লফ্রেন্ড এসেছে বাসায়।তাকে কি খাইয়ে আপ্যায়ন করবো?’

‘প্রাক্তন+বর্তমান কি আবার?’

‘মানে সে আপনার আগেও ছিল,পরেও আছে।কুয়ারা নাম তার।আপনার জন্য বসে আছে,দেরি করে এসে উদ্ধার করেন আমায়’

‘কুয়িনা?দেখি ওকে ফোনটা দে’

‘ইহহহহ!ঠ্যাকা পড়েনি আমার।নিজের কুয়ারাকে নিজে কল দিয়ে প্রেমালাপ করেন’

এই বলে তিথি কলটা কেটে কুয়িনার কাছে এসে বললো,’আমি ইশানের বউ। আমাদের পঁচিশবার বাসর হয়েছে।
私はイシャーンの妻です。私たちは25回生きました。
Watashi wa ishān no tsumadesu. Watashitachi wa 25-kai ikimashita.”””””

তিথি গুগল দেখে জাপানি ভাষায় কথাটা শুনিয়ে দিলো কুয়িনাকে।কুয়িনা তো রেগে আগুন।তাও কিছু করতে পারছেনা,বলতেও পারছেনা।শুধুমাত্র ইশানের অপেক্ষায় আছে সে।ইশান আসলেই এর একটা বিহিত হবে।
তিথি ইশানের কালো রঙের শার্টটা পরে পায়চারি করছে।কখন ইশান আসবে আর কখন সে ইশানের গলা ধরে ঝুলে যাবে কুয়িনাকে দেখিয়ে।

এক ঘন্টার মধ্যেই ইশান চলে আসে।দরজা খুলে দিতেই তিথি ছুটে এসে ইশানের কোলে উঠে গিয়ে বললো,’ওলে আমার জামাই বাবুটা।অফিসে খুব চাপ ছিল?’

‘তোর কি মাথা গেছে?’

‘মাথা নয়,পুরা দেহটাই গেছে।রুমে নিয়ে চলো না আমায়,আহ পায়ে ব্যাথা!’

‘আমাকে দেখে যে স্পীডে ছুটে এলি।আদৌ তোর পায়ে ব্যাথা আছে?’

কুয়িনা এসে দাঁড়ালো ওখানে।তিথি তখনও ইশানের কোল থেকে নামছিল না।ইশান জোর করেই নামিয়ে দিলো ওকে।এরপর ওর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে তিথির হাতে দিয়ে কুয়িনাকে বসতে বললো।কুয়িনা একবার ইশানকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো কিন্তু তিথি কোল থেকে নামার পরপরই ইশানের বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল।যেন সে আগ থেকে জানতো কুয়িনা ইশানকে জড়িয়ে ধরতে চায়।
——–
‘ভাই,,,,এ ভাই? এদের বাড়িতে তো কোনো অলঙ্কার পাইলাম না।তবে কি আজ রাইতে খালি হাতেই ফিরতে হইবো?’

‘না রে।শুনছি এদের ছাদে নাকি কোটি টাকার জিনিস আছে,বিদাশি কমলা।ঐ কমলা নাকি একটাই আছে আর এইডা নাকি গাছ থেকে নিলে সেদিন গিয়াস উদ্দিন পুরা এলাকারে দাওয়াত দিয়া খাওয়াইবো’

‘তাই নাকি!তাইলে চলো আজ আমরা উদ্বোধন টা সারি ফেলি’

‘চল ছোটো!’

দুইটা চোর এই পরিকল্পনা করে ছাদে ওঠে।রাত তখন ২:৪৫বাজে।
সবাই ঘুমে।পিংকিদের বাসায় কোনো দামী কিছু তারা পায়নি কারণ গিয়াস সাহেব বাসায় এসব রাখেন না।চোর তো আর এসব জানতোনা।তারা দুজনে ছাদে এসে কমলা গাছে তালা দেখে দুজনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।

চোর নং ১ বললো,”ভাইয়ে দেখো কি বেকুবের ঘরের বেকুব।ফলের মধ্যে তালা লাগাইয়া রাখছে!হাহাহাহা!’

‘আর হাসিস না।তালাটা খুলমু কেমনে?’

‘ভাই কি যে কন!ঢাল টান দিলেই তো হয়’

‘ঢাল নাহয় ছিঁড়মু।ফলের মধ্যে যে স্টিলের দড়ি পেঁচিয়ে তালা লাগাইছে সেটা ছুটামু কেমনে?’

‘এটা তো ভাববার বিষয়।’

দুজনে ঢাল ছিঁড়ে দড়িটা ছুটানোর জন্য ব্যাগ থেকে করাত বের করে দড়িটায় লাগিয়ে ঘঁষা দেয়ার আগেই দড়িটা গড়িয়ে পড়ে গেলো।এটা দেখে দুজনে আবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ছুরি দিয়ে কমলাটাকে দুভাগ করে দুজনে মুখে পুরে কিছুক্ষণ চিবিয়ে সব ফেলে দিলো।

‘ভাইয়ে এইডা তো দেশী নাশপাতি তাও জঘন্য কাঁচা আর সব কষ!’

দুজনে জামা দিয়ে জিভ আর ঠোঁট মুছে নেয় এরপর গিয়াসউদ্দিনকে মনমত গালি দেয়।
চোর নং ২বলে, ‘বিলাতি কমলা আসলে নাশপাতি সেটা মানুষকে দাওয়াত করার পর জানতে পারলে গিয়াসউদ্দিন হার্ট এটাক করে মরেই যেতো তার চেয়ে বরং হার্ট এটাকটা আমরাই পেলাম🐸’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে