যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩২
আফনান লারা
ইশানকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিথি চটজলদি তেলের বাটিটা নিয়ে বলে তার কাজ হয়ে গেছে।
ইশান তখন হেঁটে হেঁটে সবকয়টা কর্ণার বন্ধ করে চলে গেলো নিজের রুমে।তিথি ও পিছু পিছু এসে ওর পাশে বসে ঘাড়ে তেলগুলো লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,’আমি আসার আগে এই কাজটা কে করতো?’
‘কেউনা,প্রতি বছরে প্রতি মাসে প্রতি সপ্তাহে যতবার মালিশ করবার প্রয়োজনবোধ মনে করেছি ততবার গুনেছি।বউ আসলে শোধ হবে’
‘এই কাজ আন্টিকে দিয়ে করালেই হতো’
‘মায়ের বয়স হয়েছে।আর তাছাড়া এসব বউরাই করে।’
তিথি মালিশ করে দিতে দিতে দেখে ইশান আবার ঘুমিয়ে গেছে।তাই সে আগেরমতন চিপস খেতে খেতে রুম থেকে বের হয় ওমনি তার হোয়াটসএপে একটা মেসেজ আসে।তানিয়া লিখে রেখেছে তিথির পাঠানো চিঠির ছবিটা দেখে ওর বন্ধু বলেছে এটা একটা প্রেমপত্র। আর যে লিখেছে তার নাম ‘কুয়িনা’
তিথি জানতে চাইলো মেয়েটি কাকে চিঠিটা লিখেছে।তখন তানিয়া বললো এসব লেখা ছিল না।
এরপর তিথি ইশানের রুমে ফেরত এসে অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।আসলেই কি এতগুলা সময়ে ইশান এখানকার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল?
জড়ালেও বা কি!সে নিজেও তো আদিলের সাথে প্রেম করেছে।
তিথি ভাবতে ভাবতেই শুনতে পেলো ইশানের এই বাসার টেলি ফোনের আওয়াজ।সে বাহিরে বেরিয়ে সেই ফোনের কাছে এসে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি গলা শোনা গেলো কিন্তু মেয়েটা কি কি বললো তার কিছুই তিথি বুঝলোনা।
বুঝার জন্য তিথি ইংরেজীতে জানতে চায় মেয়েটি কে,কি তার পরিচয়,ইশানকে কেন ফোন করেছে।
কিন্তু মেয়েটি যখন বুঝলো কলটা ইশান ধরেনি,বরং ধরেছে অন্য কেউ তাই সে সাথে সাথে কলটা কেটে দেয়।
তিথির মাথা ঘুরছে।গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে সে।নতুন নতুন এসব ঝামেলায় পড়তেই হবে তাকে। তানিয়া বলেছিল দ্রুত ওদের ভাষা শেখার প্রেক্টিস করে নিতে।মাথা চুলকে তিথি আবার ইশানের কাছে এসে দেখে সে বিছানায় নেই।পুলের দিকে ওকে দেখা যাচ্ছে।তিথি সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সেই চিঠিটা নিয়ে ইশানের পাশে এসে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখ খোলে।সে জানতে চায় চিঠিটা কার।
তখন ইশান এক নজর চিঠিটা দেখে বলে,’কুয়িনার’
‘কে এই কুয়ারা?’
‘কুয়ারা নয়,কুয়িনা’
‘একই।বলেন সে কে?আপনাকে প্রেম পত্র পাঠাতো কেন?’
ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ওসব কিছুনা।যাই হোক,তুই কি তোর শাস্তির কথা ভুলে গেছিস?’
‘কিসের শাস্তি?’
ইশান আবারও হাসে।এরপর তিথির হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলে,’মনে নেই?’
‘না তো!’
ওমনি ইশান এক ধাক্কায় তিথিকে পুলে ফেলে দিয়ে বলে,’এই তো এই শাস্তি’
তিথি মুখ মুছে মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে বললো,”আপনাকে আমি দেখে নিবো’
ইশান তখন পুলের পাশে বসে বললো,’নে দেখ।প্রাণ ভরে দেখ।আমি এখানেই আছি’
তিথি বিড়বিড় করে হাতের চিঠিটা পানিতে ভাল করে চুবিয়ে সেটাকে ভর্তা বানিয়ে বললো,’সব নষ্ট করে দিব’
‘আলমারিতে আরও আছে।যা খুশি কর’
‘তার আগে আমাকে উঠান,আমি পেট পুরে সাদা গরম ভাত আর ডাল,মাংস খাবো এইসব চিপস টিপসে আমার পেট ভরবেনা’
‘খাবার নিয়ে আসবে আমার সেক্রেটারি।আর হ্যাঁ,আমি কিন্তু উঠাচ্ছিনা।নিজেই উঠ।আমি উঠালে সেটা শাস্তি হলো কি করে?’
তিথি অনেক কষ্টে ঝুলে, ল্যাংড়িয়ে উঠে বসে এখন হাঁপাচ্ছে,সেই সময় পাশের বাসার সেই দম্পতির মধ্যে যিনি ছিলেন মিঃবারি তিনি তার বাসার ছাদ থেকে বললেন,’কি খবর ইশান?কতদিন পরে!’
ইশান হাত নাড়িয়ে হাই দিলো।তখন তিথি হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’উনি বাংলা জানে?’
‘হ্যাঁ’
‘আপনি যে বললেন ওরা জাপানি?’
‘উনার বউ জাপানি’
‘ওহ!ধুর!কোথায় ভাবলাম পাশের বাসার ভাবীর সাথে কুটনামি করবো!তা আর হবেনা মনে হয়!এই বেডার সাথে তো আর কুটনামি করতে পারবোনা!’
ইশান চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালেটা নিয়ে তিথির গায়ে দিয়ে ভেতরে যেতে বললো।তিথি ও উঠে দিলো এক দৌড়।
ইশান পুল সাইডের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে ভাবছে এটাকে কভার করে দিবে,নাহয় মিঃ বারি হুটহাট কথা বলতে ছাদে উঠলে তিথিকে এরকম অবস্থায় দেখে ফেলবে।এরপর তো সে তিথিকে এই পুলে আরও চুবাবে।
তিথি গায়ের জামাটা বদলে অন্য একটা জামা পরে নিয়ে সোফায় বসে আছে।খাবার আসলেই খেয়ে নিবে।
বাংলাদেশে তার চোখের সামনে কত খাবার থাকতো,তখন ইচ্ছাও থাকতোনা কিছু খাওয়ার।আর এখানে খাবার নেই বলে তার এত খিধে পাচ্ছে।
পা দোলাতে দোলাতে তিথি সোফাতেই মাথাটা এলিয়ে দেয়।
মূহুর্তেই তার চোখ লেগে আসে।সন্ধ্যা গিয়ে রাত হয়।ইশান বাহিরে থেকে মিঃ বারির সাথে এত সময় ধরে আড্ডা দিয়েছিল,এরপর সে ভেতরে এসে দেখে তিথি ঘুমায়।ততক্ষণে ওর সেক্রেটারি ও আসে খাবার নিয়ে।ইশান খাবারগুলো রেখে দিলো এরপর তিথির কাছে এসে কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
নিস্পাপ চেহারা!
হাহ!এরকম নিষ্পাপ চেহারা ওর ও ছিল একসময়।অথচ তিথি কোনো তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাই অপমান করে গেছে,তাহলে সে কেন এখন দয়া দেখাবে?
ইশান খাবার গুলো লুকিয়ে রাখতে চাইলো তখনি ওর মনে পড়ে সকাল থেকে ভারী কিছুই খায়নি তিথি,এখন কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
অন্যভাবেও কষ্ট দেয়া যেতে পারে।
এই ভেবে সে আর খাবার লুকালোনা।তিথির কাছে এসে অন্যমনা হয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।যাকে সবচাইতে বেশি ঘৃনা করে সেই আবার ওর মনের মানুষ!
কে বলেছে ঘৃনা আর মনের মানুষ আলাদা হতে হয়?
এই যে ইশানের কাছের মানুষটা একাধারে তার ঘৃনার এবং মনের মানুষ দুটোই।
তিথির কপালে হাত বুলাতে বুলাতে ইশান মাথা নিচু করে ওর কপালে চুমু দিতে যেতেই আবারও তার বাসার সেই নাম্বারে কল আসে।
ইশান তিথিকে রেখে এসে কলটা রিসিভ করতেই শুনতে পায় কুয়িনার গলা।ওমনি সে ফোনটা রেখে দেয় এরপর তিথির দিকে তাকায়।তিথি জেগে যায়নি,তবে কুয়িনার একটা ব্যবস্থা করতে হবে,তা নাহলে তিথিকে ভুল বুঝাতে পারে।
—–
রিদম পিংকিদের ছাদে এসে মোমবাতি সাজাচ্ছে।আজ পিংকির জন্মদিন।
ফেসবুকে দেখেছে এক ছেলে অনেক বছর প্রেম করে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পেরেছে।তার শুরুটা হয়েছিল এভাবেই ছাদে মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মদিনের উইশ করার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু সব তো আর মন মত হয়না।মোমবাতি একটা জ্বালিয়ে রেখে বাকিগুলো জ্বালাতে গিয়ে বাতাসে জ্বালানো সব মোমবাতি নিভে যাচ্ছে।এমন করে দেড় ঘন্টা সে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মেনে সেই মোমবাতির মধ্যেই চিটপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছে।
এই সব দেখলো পিংকির ছোট বোন পান্না।বেশ নাদুসনুদুস দেখতে,আর তাই রিদম ওর নাম দিয়েছিল পান্তুয়া।তার বয়স সাড়ে সাত বছর।
পান্তুয়া রিদমের এমন অবস্থা দেখে পিংকির কাছে ছুটলো।পিংকি তখন চুলে বিনুনি করছিল,পান্না ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’বুবু!টুলাভাই তো মরে গেছে’
‘তোকে কতদিন বলেছি ওটা টুলাভাই নয়,দুলাভাই’
‘আহা শুনো না!’
‘আচ্ছা মরে গেছে?আমার কেমন রিয়েক্ট করা উচিত?
না নাহ!সেকি!কিভাবে?এ হতে পারেনা,না না না’
পান্না গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে পড়লো ধপ করে।
পিংকি তার সদ্য কাজল দেয়া চোখ ডলে কাজল লেপটে বললো,’আজ আমি রিধবা হলাম!মরা রিদমের বউ রিধবা!তা কিভাবে মরলো সে!আমি ফাঁসি চাই!আমার নিজের।কারণ আমি তাকে ভালবাসতে পারলাম না!’
‘উফঃ!কি দেখে যে রিদম ভাই তোমাকে গেইট ফুল দিয়ে প্রোপোজ করেছিল!’
‘আমার অভিনয় নিয়ে তোর হিংসা হয়?আগে বল কিভাবে অজ্ঞান হইছে।ঐ বলদটা মরার মতন না!’
‘দেখলাম মোমবাতির মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে’
”মোমবাতি? ওহ হো!আজ তো আমার জন্মদিন। হাহ!আমি ভুলে গেলাম!’
‘আবার শুরু করছো অভিনয়!মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে টুলাভাইকে বলি তোমাকে রেখে আমাকে বিয়ে করে নিতে।অন্তত ওনার জীবনটা এই ন্যাকামি দেখে শেষ করতে হবেনা!’
‘কিছু বললি?’
‘না বললাম কেমন আছো🐸!
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩৩
আফনান লারা
পান্নাকে সাথে নিয়ে পিংকি ছাদে এসে দেখে রিদম মোমবাতির মাঝখানে ঘুমাচ্ছে। পিংকি ছুটে এসে বললো,’ও মাই ছাদ!!হাউ সুইট!ওওওওওওউ’
রিদম চোখ খুলে পান্নাকে সবার আগে দেখে বললো,’পান্তুয়া ভাল আছ?’
‘জ্বী টুলাভাই’
পিংকি বললো,’তুমি এসব আমার জন্য করেছো রিদেমন!’
‘হ্যাঁ বউ!’
‘উফ!বউ বলবেনা।আমার ভীষণ ভীষণ ভাল লাগে’
পান্না গাল ফুলিয়ে দূরে চলে গেলো।এবার চলতে থাকবে পূর্ণ দৈর্ঘ্য সিনেমা!’
রিদম উঠে বসে বললো,’বিশ্বাস করো,অনেক চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারলাম না।শুধু নিভে যায়!’
‘নিভে দিয়ে একটা গান মনে পড়লো।কিন্তু লাইনটা মনে করতে পারছিনা!কি যেন ছিল’
পান্না ছাদের রেলিং ধরে বলছে,’তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া,আমি অন্ধকারে মইরা যামু ছাদ থেকে পইড়া🐸’
‘ইয়া রাইট!কিন্তু কেমন যেন লাগলো।পান্না তুই কি ভুল বলছিস?লাইনটা কি এমন ছিল?’
‘ঐ পুচকুকে এসব শেখায় কে?তুমি ওর খেয়াল রাখোনা কেন!’
‘আমি এই গানটা শুনছিলাম তখন বোধহয় ও আমার পাশে থেকে মুখস্থ করে নিয়েছে।জানোই তো!বাচ্চারা যা দেখে,যা শুনে তাই মুখস্থ করে ফেলে!’
——
তিথি ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছে দেখে ইশান ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে তিথির গায়ে ঢেলে দিতেই ও লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো।গায়ের ভেজা পোশাকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বললো,’ঘুম থেকে ওঠানোর আরও অনেক ওয়ে আছে!’
‘ওকে ফাইন!তবে আজ থেকে গরম পানি ঢালবো’
তিথি রেগে মেগে ভেতরের রুমের দিকে চলে গেছে।ইশানের কি যে মজা লাগে তিথিকে এরকম অত্যাচার করতে!
সে হাসতে হাসতে নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে বসে।তিথি ভেতরের রুম থেকে পোশাক বদলে তেড়ে এসেছিল ইশানের সাথে লড়াই করার জন্য।কিন্তু এসে দেখে ইশান কাজে ব্যস্ত।
তিথির হঠাৎ করে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।সে এক বালতি পানি এনে ইশানের পিছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,’এই ল্যাপটপে কি কি আছে?’
‘কি আছে!আমার অফিসের সব ডকুমেন্টস।আর কি!’
‘যদি বাই চান্স ওগুলা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি কোনো ক্ষতি হবে?’
‘নাহ,কিন্তু ওগুলা আবার রেডি করতে আমার এক বছরের বেশি সময় লেগে যাবে’
‘তাই?’
‘আচ্ছা তুই এসব কেন জিজ্ঞেস করছিস?’
এই বলে ইশান পেছনে তাকাতেই তিথি তার হাতের বালতির পানি ইশানের গা সহ ল্যাপটপে ঢেলে দিলো।
ইশান তব্দা হয়ে বসে আছে।এটা কি ঘটে গেলো!
তিথি হাসতে হাসতে বলছে,’সেই কবে কি না কি করেছি তাই বলে রোজ রোজ বালতির পানি দিয়া ঘুম ভাঙ্গাইয়া দাঁত কেলাইয়া হাসবেন!তা তো হয়না!’
ইশান মুখ মুছে ল্যাপটপটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো।তিথি তখন পিছিয়ে গিয়ে বললো,’যদি আমার কিছু করছেন তো জাপানের পুলিশ স্টেশনে চলে যাবো।কাছেই আছে’
ইশান গায়ের টি শার্টটা খুলে তিথির দিকে ছুট লাগালো।
তিথিও দিছে এক দৌড়।পুরো বাসায় ছোটাছুটি করতে গিয়ে এক সময়ে পা পিছলে তিথি ভেসমেন্টের সিড়িতে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেছে।ইশান শুরুতে হাসলেও তিথি নিজ থেকে উঠতে পারছেনা দেখে তার হাসি থামলো।নিজেও নেমে ওর হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারলো তিথির পায়ে একটা পেরেক ঢুকে গেছে।ব্যাথার কারণে তিথি বুঝতে পারেনাই তার পায়ে পেরেক ঢুকেছে।সে শুধু বলছিল তাকে উঠাতে।
ইশান তখন তিথির পা থেকে পেরেকটা ধরার চেষ্টা করতেই তিথি সেটা দেখে ফেলে ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো।
‘থাম!আমি ঠিক করে দিবো’
‘কি ঠিক করবেন!আপনার কারণে এমন হয়েছে।আপনার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই সব আমার পা আর শরীরের উপর দিয়ে দখল যাচ্ছে।একবার সিড়ি থেকে পড়ে এক মাস ল্যাংড়া ছিলাম। এখন আবার এইটা।আপনি সিড়ি দিয়ে প্রতিশোধ নিতে চান আমার থেকে?’
‘চুপ!’
তিথিকে ধমকে ইশান এক টান দিয়ে পেরেকটা উঠিয়ে নেয়।এরপর ওকে কোলে তুলে নিলো।তিথি চুপ করে আছে,ধমক খেয়ে আর কিছু বলছেনা সে।
———
রকিব খুবই মা,খালা ভক্ত ছেলে।তার মায়ের কথা হলো বিয়ের সব শপিং তিনি আর তার বোন গিয়ে করবেন।অন্য কাউকে নিবেন না।
এদিকে তানিয়ার অনেক শখ সে নিজের বিয়ের শপিং নিজে দেখে করবে,রকিব ও তা চায় কিন্তু মায়ের এমন সিদ্ধান্তে সে টানাপোড়নে পড়ে গেছে।শেষে তানিয়াকেই সেক্রিফাইস করতে বললো।
তানিয়াও কম না।সে জেদ ধরে বসে আছে সে শপিংয়ে যাবেই!
রকিব ও তাকে মানা করে বসে আছে।
আজ শপিং করার দিন ছিল।কথামতন রকিবের মা এবং খালা এসেছেন শপিংমলে।তারা একটা দোকানেও বসেছেন।শাড়ী বের করা হলো।রকিবের মায়ের ফার্স্ট চয়েস শাড়ী।কিন্তু তানিয়ার প্রিয় হলো লেহেঙ্গা।
ওনারা শাড়ী দেখছিলেন সে সময়ে তাদের পাশে বোরকা পরা একটি মেয়ে এসে বসলো।মেয়েটি চোখে চশমা ঠিক করতে করতে কণ্ঠস্বর মোটা করে বললো,’লেহেঙ্গা দেখান তো।এসব শাড়ী টাড়ী দেখাবেন না!মিডেল ক্লাস রা শাড়ী কিনে কিনে শাড়ী লাটে উঠিয়ে দিয়েছে।লেহেঙ্গা কত সুন্দর দেখতে হয়।রাণী রাণী ফ্লেভার!’
এ কথা শুনে রকিবের মা চোখ বড় করলেন তারপর দোকানদারকে বললেন তাদের ও লেহেঙ্গা দেখাতে।বোরকা পরা মেয়েটা ছিল তানিয়া।তার পছন্দে পানি ঢালা কারোর সাধ্যে নেই।
তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে তার পছন্দের একটা লেহেঙ্গা নিয়ে বললো,’এটা আলিয়া ভাট পরছিল।এটার কপি লেহেঙ্গা তাই না?
আমি নিলে এটাই নিবো।কেউ আটকাতে পারবেনা।যত টাকা লাগে আমি দিব।তারপর দেখিয়ে দিবো বিয়ে কাকে বলে!’
রকিবের মা লেহেঙ্গাটা দেখে বললেন ‘আপা দেখেন তো!কি সুন্দর এটা!’
‘হো ঠিক কইছস।এখন এই মাইয়া তো এই লেহেঙ্গা ছাড়বেনা মনে হয়।কথা বলে দেখ তো’
‘এই যে মেয়ে শুনো’
‘আপনি কি শাহরিয়ার শান্ত?এই যে মেয়ে শুনো বলছেন কেন?’
‘না আমি আহানার ভোলার খালা।শুনো না!লেহেঙ্গা টা কি কোনোভাবে আমাদের দেয়া যায়?’
‘কেনো কেনো!কেনো দিব আমি?আমার এটা লাগবেই’
‘আহা!তুমি আরেকটা দেখো!দিপিকা যেটা পরছে ওটা দেখো ‘
‘রানভীরের বউয়ের লেহেঙ্গা লাগবে আমার,ওর এক্সের না’
‘নাও না।আচ্ছা চা নাস্তার জন্য এই এক হাজার টাকা রাখো’
‘দিলে ভাল দাম দিবেন।এক হাজার টাকায় তো আমি ১০ডজন ডিম ও পাবোনা।’
রকিবের মা বললেন,’আমি আমার ছেলের হবু বউকে খুব ভালবাসি।কিন্তু তাকে আজ শপিংয়ে আনিনি কারণ শুনেছি সে খুব কিপটা।ছেলের টাকা বাঁচানোর জন্য কম দামী সব কিনবে।কিন্তু আমি সেটা চাইনা বলেই তাকে আনিনি।তুমি কত টাকা রাখবে এটা দিয়ে দেয়ার জন্য?আমি ততটাই দিবো।আসলে আমি তো জানিনা আজকালকার মেয়েদের পছন্দ কিরকম!’
তানিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো।সে নিকাব উঠিয়ে রকিবের মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’চাচুমা!আইলাবু!’
‘একি তানিয়া তুমি!’
খালা বললেন,’দেখছস বইন!আমি তোরে কইছিনা গলা চিনা চিনা লাগে!এটাই তানিয়া। আমার কথা মিলছেনি?’
রকিবের মা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো ‘তোমার আসল রুপ বের করতে এই নাটক করলাম।এত করে মানা করছি শপিংয়ে আসিওনা।তাও আসলে!আমাদের বংশের নিয়ম আছে বিয়ের আগে বউ তার শাড়ী,গহনা দেখতে পাবেনা।তাহলে বউয়ের নজর লাগে সব চাইতে বেশি! উফ!তুমি তো খুব ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে!’
তানিয়া জিভে কামড় দিয়ে বললো,’আরে এইসব বাদ দেন।আমার নজর লাগবেনা।লেহেঙ্গায় থুথু দিয়া দিবোনে!’
‘ইহহহহহ।বিয়ের লেহেঙ্গা বউয়ের স্পর্শের বাহিরে থাকতে হয়।নাহয় অমঙ্গল হবে! ‘
তানিয়া বিড়বিড় করে বললো,’তবে বিয়ার দিন এই লেহেঙ্গা রকিবের খালারেই পরাইয়া দিয়েন!’
‘কিছু বলছো তুমি?’
তখন রকিবের খালা বললেন,’আমি শুনছি!ওয়ে কইছে আমি পরতাম এইটা’
তানিয়া তখন দাঁত কেলিয়ে বললো,’মাশাল্লাহ!মাশাল্লাহ!খালার দেখি কানের পর্দাই নাই।তাই পর্দা ফাটার চান্স ও নাই,তাই তো যাই বলি তাই শুনে ফেলে!আসলে আমি বলছি আপনিও একটা শাড়ী নেন।বিয়েতে আপনাকে সবার চাইতে বেশি সুন্দর লাগতে হবে!’
চলবে♥