যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩০
আফনান লারা
ঔষুধটা ছিল তিথির স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য।ছোট থেকেই ওর স্মৃতিতে সমস্যা। নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা,কথা সে ভুলে যায়।একেবারেই ভুলে যায়।ইশান ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে আর তাই সে এই ঔষুধটা আনিয়েছে।
তিথি ভেবেছে অন্য কিছু তাই তো সে ফেলে দিলো।
ইশান ওকে নিয়ে বাসায় ফিরতেই দুজনে দেখে সোফায় মা আর তামিয়া বসা।তিথি ভাবলো সে এখন ঝাড়ি খাবে কিন্তু মা তাকে ঝাড়ি না দিয়ে চুপ করে ছিলেন।ইশান তখন তিথির পিঠে চিমটি দিয়ে আস্তে করে বললো মায়ের পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ বসতে।
তিথিও তাই করে।কিন্তু বসতে গিয়ে তার অনেক ভয় হচ্ছিলো।
তামিয়া ঘুরে এসে তিথির পাশে বসলো।এখন তিথি মাঝখানে আর দু পাশে মা আর তামিয়া।
কেউ কিছু বলছেনা।ইশান ও তার রুমে চলে গেছে।মা অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর বললেন,’আমাদের সাথে সংয়ের মতন বসে না থেকে নিজের জামাইয়ের কাছে যাও।তার কি লাগবে দেখো।আর হ্যাঁ!বিদেশে গিয়ে আমার ছেলেকে জ্বালাতন করবেনা একদম।ও যা বলবে শুনবে। সে তো আর তোমায় গিলে ফেলবেনা!’
তিথি বিড়বিড় করে বললো,’গিলেই ফেলবে।যে দামড়া ছেলে আপনার!’
‘কিছু বললে?’
‘নাহ তো’
‘বিড়বিড় আমার পছন্দ না,তার পরেও তুমি যেটা বললে তা আমি শুনে ফেলেছি।ছেলেরা তো দামড়াই হয়!সে যাই হোক।ওখানে গিয়ে ঘাউড়ামি করবেনা।তোমার তো আবার ঘাউড়ামি করার স্বভাব!এখন যাও ইশানের কাছে,ওর কিছু কাজ বাকি ছিল।তুমি আসতে দেরি করছো বলে ও তোমায় আনতে গেছে।কতবার করে বলেছি ড্রাইভারকে পাঠা,তোর যেতে হবেনা।
কে শোনে কার কথা!ওনার বউকে তো ড্রাইভার একা পেয়ে চুমু খাবে!কেমন বউ ওনার!মুখের নাই ছিরি!’
তিথি হা করে ইশানের মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সিনেমার শাশুড়িদের মতন কথা বলছে আন্টি।তবে একটা কথা ঠিক বলছে তার মুখের আসলেই কোনো ছিরি নাই।
এরপর তিথি যাবার সময় দাঁত কেলিয়ে বলে গেলো,’মুখের ছিরি নাই দেখেই আপনার ছেলে উন্মাদ আমার প্রেমে,ছিরি থাকলে তো এই বংশ ধংস হয়ে যেতো’
এই বলে তিথি দিলো এক দৌড়। মিসেস আরাফাত তেলেবেগুনে জ্বলছেন।তামিয়া এক পাশে মিটমিট করে হাসছিল।
তিথি দৌড়াতে দৌড়াতে রুমে ঢোকার সময় ইশানের সাথে এক ধাক্কা খেলো।ইশান প্রায় পড়েই যাচ্ছিল,কোনোমতে সে দেয়ালটা ধরে দুজনকেই পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালো।
তিথি ইশানের দিকে চেয়ে থেকে বললো,’আচ্ছা আমার কি দেখে আপনি এত উন্মাদ হলেন বলবেন?’
‘আমি উন্মাদ? তাও তোর জন্য?’
‘আমি বলিনি, কথাটা শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি মা বলেছেন।ছেলে সম্পর্কে ছেলের মায়েরা কোনোদিন মিথ্যা বলেনা।’
ইশান তখন জানতে চাইলো আর কি বলেছে।
তিথি আয়নার কাছে গিয়ে নিজের মুখটা দেখতে দেখতে বললো,’বলেছে আমি অপরুপা সুন্দরী তাই আপনি এত উন্মাদ ‘
‘আমার মা এ কথা বলতেই পারেনা!মায়ের কাছে তুই সুন্দর না’
‘আর আপনার কাছে?’
ইশান কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো।তিথি ব্যাগগুলো খুলে দেখছে কিছু বাদ গেছে কিনা।খুলতেই একটা সুতা তার হাতে পড়লো।সুতাটা চেনা চেনা লাগলো। হঠাৎ মনে আসলো মামির প্রেগন্যান্সির সময় ওনার হাতে ঠিক এরকমই একটা সুতা ছিল।তাহলে এটা ওর ব্যাগে কেন!
সুতাটা সরিয়ে রেখে তিথি অন্য কাজে চলে যায়।ইশান যখন রুমে ফেরে তখন দেখে ঐ সুতাটা টেবিলের উপর বলপয়েন্ট দিয়ে রাখা।
সে প্রচণ্ড রেগে যায়।সুতাটা তুলে ব্যাগে ভরতে ভরতে তিথিকে ডাকে।
তিথি কাঁথা টেনে শুয়ে পড়েছিল,খুব ভোরে ফ্লাইট কিনা।তাই।
ইশান কাছে এসে ওকে ঘুম থেকে তুলে বসালো।
তিথি চোখ ডলতে ডলতে বললো,’কাল যাবেন না নাকি?’
‘তুই এটা সরিয়েছিস কেন?’
‘তো সরাবোনা?আপনি তো বলছিলেন আমাকে কখনও ছুঁবেন ও না।তাহলে ঐ সুতার কাজ কি?’
‘মানে?’
‘ঐ সুতা তো গর্ভবতী নারীরা পরে।আমি গর্ভবতী নাকি কোনোদিন হবো?’
ইশান তিথির হাত ছেড়ে দিলো।তিথি তো ভাল পেঁচে ফেলেছে!
তিথি আবারও শুয়ে পড়ে।
ইশান নিজেও অনেক ক্লান্ত।আজ তার অনেক দখল গেছে।তাই সে তিথির পাশে শুতেই তিথি আবারও উঠে বসে।ইশান ওকে উঠে বসতে দেখে কিছু বললোনা,কিন্তু তিথি বললো,’আপনি কি করতে চাইছেন?’
‘ঘুমাতে চাইছি’
তিথি বালিশটা নিয়ে উঠে পড়লো।সে সোফায় ঘুমাবে।যাওয়াই ধরছিল তখন ইশান বললো ঐ সোফার কভারে অস্বস্তি লাগে।সে নিজেও ঘুমাতে পারেনা ওখানে,তিথিও পারবেনা।
তার পরেও তিথি চেষ্টা করলো,আসলেই ঐ কভারে কিছু একটা সমস্যা আছে।ঘুম কেড়ে নিয়ে যায়।বাধ্য হয়ে ইশানকে ডান বাম থেকে লক্ষ করে তিথি আবার আগের জায়গায় এসে শুয়ে পড়লো।
ইশানের গায়ের তীব্র পারফিউমের গন্ধ এসে নাকে লাগতেই তিথি নড়েচড়ে ওঠে। এ প্রথম সে ইশানের পাশে একসাথে ঘুমাবে।
ভাবতেই তার আর ঘুম আসছেনা,ভয় কাজ করছে।
ইশান মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে,তিথি ওকেই দেখছিল। আগের ইশানের গায়ের রঙ এত উজ্জ্বল ছিল না।কালো কুচকুচে ছিল।মুখে কি এমন লাগিয়েছে!নাকি কোম্পানির নুডুলস খেয়ে এই অবস্থা!
তা হলে তো শুধু মুখ সাদা হতো।সারা শরীর সাদা করছে কেমনে!
তিথি একটু একটু করে হাত বাড়িয়ে ইশানের হাতে ঘষা দিলো।ক্রিম থাকলে উঠে যায় কিনা।
ওমনি ইশান চোখ বন্ধ রেখে বলে ওঠে,’আগের ইশান রোদেপুড়ে বাবার ক্ষেতে ধান বুনতো বলে সারা রঙ কালো কুচকুচে ছিল।শহরে এসে রোদে পোড়া দাগ উঠানোই জন্মের আসল রঙ চলে এসেছে।ঘষে তুলা যাবেনা’
তিথি জিভ কামড়ে হাতটা সরিয়ে ফেলে।ইশান তাকে ধরে উত্তমমধ্যম দেয়নি এই অনেক।তারপর সে ভাবে একটা প্রশ্ন!ইশান এত টাকার মালিক হলো কি করে!
ওর তো কোনো কোটিপতি মামা,চাচা নাই যে ওকে তুলে ধরবে!
কৌতুহল নিয়ে তিথি ইশানকে প্রশ্নটা করে বসে।
ইশান তখন বললো,’একবার কোনো জেদ ধরলে এবার সেটা দেশে হোক কিংবা বিদেশ।তা পূরণ হবেই’
তিথি একটু এগিয়ে বললো,’না মানে কেউ হেল্প না করলে এতদূর নিজ থেকে যাওয়া তো অসম্ভব ‘
‘আমাদের ভিটার জমি বিক্রি করে সবাইকে ভাঁড়া বাসায় রেখে বিদেশ গিয়েছিলাম।’
তিথি চুপ করে থাকলো। তাকে পাবার জন্য ইশান কত কি সেক্রিফাইস করেছে!
তিথি আবারও কি বলার জন্য মুখ খুললো ওমনি ইশান ওর মুখে হাত দিয়ে বললো চুপ করতে এবং ঘুমাতে।
তিথি সোজা হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশান একটা চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়।ওর কানের লম্বা চিকন স্বর্ণের দুলটা লেপটে আছে।এই দুলটা ইশান তার আয়ের প্রথম টাকা দিয়ে কিনেছিল।তা বোধহয় তিথি কোনোদিন জানবেনা।
“”””যে পুরুষ নারীকে উন্মাদের মতন ভালবাসে,তার সেই উন্মাদনা সেই নারী কখনওই বোঝেনা,কেউ এসে বুঝিয়ে দিলেও বোঝেনা!
আর যে নারী বোঝে তাকে কোনোদিন কোনো পুরুষ উন্মাদের মতন ভালবাসেনা।””””
ইশানের চোখ বলছে তিথি একবার তাকে জড়িয়ে ধরুক নিজ থেকে,সে অতীতের সব আঘাত ভুলে তাকে কাছে টেনে নিবে।
হঠাৎ ইশানের মনে আসলো মাকে করা তিথির অপমান।এটা তো এত সহজে ভোলার নয়!
ওমনি ইশান উঠে বসে বললো,’উঠ!’
‘ওমা কেন!’
‘বলছি উঠ!’
তিথি তাই উঠে বসলো। ইশান ওর দিকে হাতটা বাড়িয়ে ধরে বললো,’নে হাত টিপ’
‘কেনো?আমি ঘুমাবোনা?’
‘নাহ’
এই বলে ইশান শুয়ে পড়ে।তিথি তখন ওর হাত টিপতে টিপতে বলে আপনার মাকে অপমান করেছি সে কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেছে বুঝি?’
ইশান কিছু বলেনা কিন্তু মনে মনে ঠিকই হাসছিল।
তিথি হাত টিপতে টিপতে ওর হাতের উপরই ঘুমিয়ে পড়ে।খুব ভোরে ইশানের ফোনে এলার্ম বাজতেই সে জেগে গেলো। চোখ দুটো মেলে দেখে তিথির মুখ।
সেকালে ইশান চাইতো তার প্রতিটা সকাল যেন এই মুখ দেখেই শুরু হয়।তার ইচ্ছাটা থমকে থাকলেও এখন তা পূর্ণতা পেয়েছে।
তিথির কপালে হাত দিয়ে সেখানে ঠোঁট ছোঁয়াতে যেতেই তিথি হাত নিয়ে ইশানের চুলের মুঠি ধরে ঘুমের ঘোরে বললো,’আম্মু ঝাড়ু ধরছি শক্ত করে,এইবার দেখো কত সুন্দর করে ঘর ঝাড়ু দিয়ে চকচকা বানিয়ে দিবো।’
এই বলে সে ইশানের চুল টানা শুরু করে।ইশান অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।তারপর তিথির চুলের মুঠি ধরে বললো,’এইবার আমি চকচকা করবো”
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৩১
আফনান লারা
ইশানের কথায় আর চুলের টান খেয়ে তিথি উঠে বসে।হঠাৎ মনে পড়ে যায় তাদের এখন চলে যাবার সময়।
সে উঠেই তাড়াহুড়ো শুরু করে দেয়।কি থেকে কি করবে এসব নিয়ে পেরেশান হয়ে ওঠে।কিন্তু ইশান তাকে বুঝিয়ে দিলো তাদের দেরি হচ্ছেনা,এত পেরেশানির কিছু নেই।
মা,বোন সবাইকে বিদায় দিয়ে তারা দুজনে এয়ারপোর্টে পৌঁছায় অবশেষে।
তিথিদের বাসার সবাই এসেছে ওকে বিদায় দিতে।রিদম তো প্রায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।টুকু তার খুব আদরের কিনা তাই!
তিথি কান্না করেনি,কারণ সে ইশানকে ফোন কলে বলতে শুনেছে তারা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
এই শুনেই তার জাপান যেতে কোনো ভয় কাজ করছিল না।আনন্দে আনন্দে সে প্লেনে উঠে বসেছে।
তার এত আনন্দর মানে ইশান জানতে চাইলে সে কিছুই বলেনা,কারণ বললেই তো ইশান আবার তারিখ পিছিয়ে আনবে।
তার চেয়ে ওর অজানাই থাকুক।জাপানে ফিরে তিথি ইশানের পাওয়ারের এক অন্য রুপের সাথে পরিচিত হলো।ইশানকে যতটা সম্পদশালী সে ভেবেছিল সে তার চেয়ে দশগুণ বেশি।
এয়ারপোর্টে তার পাঁচজন কর্মচারী রিসিভ করতে দাঁড়িয়ে ছিল।তারা সকলেই জাপানি।
তিথিকে দেখেই তারা ফুলের তোড়া হাতে ধরিয়ে দেয় আর জাপানি ভাষায় কত কি বলে।তিথি কিছুই বুঝেনা তাই ইশানের দিকে তাকায় বুঝার জন্য।
ইশান জানে এর উত্তর কি, তাও সে তিথিকে রাগাতে বললো,’ওরা বলেছে ভাবী ভুটকি’
এটা শুনে তিথি রেগে বললো,’তোমরা ভুটকি!তোমাদের গাল দেখছো?একেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতোন’
কর্মচারীরা কিছুই বুঝলোনা।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে তাদের একজনের থেকে তার এখানকার কারের চাবিটা নিয়ে তিথিকে কারে গিয়ে বসতে বলে।তিথি কারে বসতে গিয়ে দেখে কারের মধ্যে ইশানের নুডুলসের লোগো।
সে কারে অনেকক্ষণ বসে থাকে।ইশান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঐ লোকগুলোর সাথে কথা বলছিল।যেন এখানেই সে মিটিং শুরু করে দিয়েছে।
তিথি কারের ফ্রণ্ট মিররে নিজেকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে সে কি আসলেই এত মোটা!
তিথি ইশানকে ডাকতে যাবে তখনই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে ওদের কারের পেছনে উঠে বসে।সে তিথিকে দেখেই জাপানি ভাষায় কিসব বলে গেলো ফটাফট। তিথি কিছুই বুঝলোনা।কিন্তু মেয়েটাকে তার সুবিধার লাগলোনা,এভাবে না বলে কারোর কারে ওঠা কোন ধরনের অসভ্যতামি!
কিছুক্ষণ পর ইশান কারের সামনে এসে বললো,’আরেহ আমার কার এটা নয় সামনের টা।তুই আরেকজনের কারে উঠে বসে আছিস কেন?’
‘ওহ তাহলে এই মেয়েটার কার এটা।তাই তো বলি চাং চুং বলতেছে কেন!’
তিথি সরি বলে কার থেকে নেমে দিলো এক দৌড়, তার কিছু সময় পর থেমে বললো,”ওটা আপনার কার না হলে তাতে আপনাদের নুডুলসের লোগো কেন?’
‘ওটা আমার কোম্পানির জেনেরাল অফিসারের কার।’
‘তাহলে আপনি কি?’
‘আমি ওনার!বুঝছিস? আমার কারে লোগো নাই,স্টাম্প লাগানো আর গ্লাসের নিচে কোম্পানির নাম’
‘এটা কোম্পানির নাম?আমি ভাবছি সাপ একটা শুয়ে আছে’
ইশান তিথির গাল টিপে ধরে বললো,’এখন থেকে এই সব চাং চুং,সাপের মতন লেখাই তোকে মুখস্থ করতে হবে।বুঝেছিস?এখন চুপচাপ বস।এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে’
‘আপনার অফিসারের বউটা খুব সুন্দর’
‘ওটা বউ না,মেয়ে ‘
‘পাগল হয়ে যাবো মনে হয়।আবহাওয়া ভাল না।মাথাটা কেমন করছে। সব ভুলভাল দেখছি আর বলছি’
তিথি গাড়ীর ভেতরে বসে পড়ে একবার পেছনে তাকালো তারপর জিজ্ঞেস করলো অফিসারের মেয়ে ওর সাথে আলাপ করতে আসেনি কেন।
ইশান এর উত্তর দিলোনা।তিথি আবারও জিজ্ঞেস করে কিন্তু এইবারও ইশান কিছু বলেনা।
ইশানের বাসা Suwa city তেই।মিউজিয়ামের একটু পরে।
তাই খুব একটা দেরি হলোনা তাদের।বাসায় ফিরে তিথি তো অবাক।আসলেই তাদের পাশে শুধু একটাই বাসা এর ধারের কাছেও কোনো বাসা নেই।
বাসার দরজা খুলে দিয়ে ইশান কাকে যেন ফোন করতে করতে পুল সাইডের দিকে চলে গেছে।তিথি ভেতরে এসে অবাক হয়ে গেলো।সিনেমা গুলোর বাসার মতন সাজানো সব।
তিথি দেখতে দেখতে একেবারে সোজা ইশানের রুমে চলে এসেছে।আসার সময় তানিয়া বলেছিল তার এক জাপানি বন্ধু বলেছিল সে তোষকের নিচে অনেক কিছু মূল্যবান লুকিয়ে রাখে। এটা তো তারাও করে।কথাহলো জাপানি মূল্যবান জিনিস খুঁজে পাওয়ার আলাদা আনন্দ।তিথি দাঁত কেলিয়ে তোষকটা উল্টে দেখে তাতে কিছু খাতার পৃষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই নেই।
লেখা গুলাও জাপানি,কিন্তু লাল লাল লাভের ইমুজি আঁকা দেখে ওর মনে ঘটকা লাগলো তাই সে পৃষ্ঠা গুলো গুছিয়ে তার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেই ইশানকে দেখে ওখানে সে দাঁড়িয়ে আছে।তার এই কার্য অবশ্য ইশান দেখেনি।
ইশান ওর কাছে জানতে চাইলো সে ইশানের রুম চিনেছে কি করে।
‘এত বড় রুম আর কার হতে পারে!’
এই বলে তিথি পুলটা দেখতে চলে যায়।ইশান বিছানায় বসে মাথায় হাত দিলো। তার মাথা অনেক বেশি ব্যাথা করছে।ফ্লাইট করে আসলেই এই অবস্থা হয়।
তিথি সব ঘুরে দেখে রুমে এসে দেখলো ইশান শুয়ে আছে।
সে ওর খুব কাছে এসে দেখতে লাগলো ব্যাপারটা কি।হঠাৎ এরকম কাতলা মাছের মতন শুয়ে আছে কেন।
অনেক দেখেও কিছু বুঝতে না পেরে সে নিজের ব্যাগটা টেনে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।এরপর সেই কাগজগুলো বের করে ছবি তুললো তারপর তানিয়াকে হোয়াটসএপে সেগুলো পাঠিয়ে বললো ওর বন্ধুকে দিয়ে ট্রান্সলেট করে পাঠাতে।
এই কাজটা রেখে এবার সে ইশানের রান্নাঘরে এসে হাজির।আগের মতন,নুডুলসের প্যাকেট ছাড়া কিছুই নেই।
তিথির খুব খিধা পেলো কিন্তু নুডুলস খেতে মন চাইছেনা,হঠাৎ তার মনে আসলো পাশের বাসার কথা।ওদের কাছে যাবে?না না!কি ভাববে তারা।আর ওদের ভাষাও তো ওর জানা নেই।
অনেক চিন্তাভাবনা করে ইশানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে তিথি।ওর উঠা অবধি আর কোনো সুযোগ নেই কিছু খাবার।
—–
তিথি সময় কাটানোর জন্য মেসেঞ্জারে মাকে একটা কল দেয়।
মা সবার আগে বললেন,’কিরে কিছু খেয়েছিস? ‘
‘কি খাবো মা!নুডুলস ছাড়া আর কিছু নাই’
‘মানে কি!ওখানে যাবার পর থেকে কিছুই খাসনি?’
‘নাহ’
‘ওখানকার কোনো রেস্টুরেন্টের নাম্বার নোট করে রেখেছে কিনা ইশান।চেক কর তো,থাকলে অর্ডার করে দে।’
‘কিভাবে করবো।ওরা তো জাপানি ভাষায় কথা বলবে’
‘আচ্ছা তুই কি বোকা?ইংরেজীতে তো কথা বলতে পারিস।সেভাবে বলবি’
মায়ের ঝাড়ি খেয়ে তিথি সেই নোটবুক খুঁজে বের করে।এরপর খুঁজতে থাকে রেস্টুরেন্টের নাম্বার।বেশ কিছু সময় পরও সে নাম্বার না পেয়ে নোটবুকটা ছুঁড়ে মারলো কিন্তু ইশান এসে সেটা ধরে ফেললো সঠিক সময়ে।নোটবুকটা গুছিয়ে রেখে সে বললো,’কিসের এত রাগ?’
‘আমায় না খাইয়ে মারতে এনেছেন?জার্নি করে আসলে খিধা লাগেনা মানুষের?’
ইশান তিথির হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে আসে তখন তিথি চেঁচিয়ে বললো,’এখানে নুডুলস ছাড়া কিছু নেই’
তখন ইশান নিচু হয়ে একটা ডেস্ক টান দেয়।সেটাতে চিপস আর বিসকুটের প্যাকেট ছিল।ডেস্কটা হাইড করা ছিল বলে তিথি খুঁজে পায়নি।
চিপস দেখে তিথি ছোঁ মেরে এক প্যাকেট নিয়ে বললো,’চিপসে কি আর পেট ভরে?’
ইশান তখন তিথির দুপাশ দিয়ে দু হাত নিয়ে তাকের উপর রেখে বলে,’তবে কিসে ভরবে?আদরে?’
তিথি ইশানকে সরিয়ে দিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো,’জাপানি কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম জমিয়েছিলেন?সারা বাসায় মেয়েলি গন্ধ’
‘মেয়েলি গন্ধ তো থাকবেই।নিজের গায়ের গন্ধ চিনিস না?”
এই বলে ইশান তিথির হাত ধরে নোটবুকটার কাছে এনে আঙ্গুল দিয়ে বললো,’তরমুজের ইমুজি দেয়া এটা রেস্টুরেন্টের নাম্বার বুঝেছিস?’
‘ওহ তাহলে এই ব্যাপার?তবে এখানে গোলাপের ইমুজি দেয়া নাম্বারটা কার?’
‘রোজ ফাইভ স্টার হোটেলের।সংক্ষেপে রোজ’
তিথি তাও সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ইশান তখন ঘাড় চাপতে চাপতে বলে গেলো চিপস খেয়ে এসে একটু ওর গায়ে গরম তেল মালিশ করে দিয়ে যেতে।ওর খুব খারাপ লাগছে।শরীর টানছেনা।
তিথি এবার রান্নাঘরে ঢুকে ভাবছে সামান্য দেয়াল টেনে ফাস্ট ফুডের কর্ণার বের করা গেলে বাকি দেয়াল টেনে আরও অনেক কিছু বের করা যাবে।
তাই ভেবে সে একটা দেয়ালে হাত দিয়ে এক টান দিতেই বড় একটা কর্ণার খুলে গেলো।এতে সব মসলাপাতি সাজানো ছিল।তেল ছিল না।
তিথি এক এক করে এবার সব কর্ণার খুলে খুলে দেখছে।সর্বশেষে একটা কর্ণার থেকে সে তেল খুঁজে বের করলো।
ইশান গায়ের জামা খুলে অনেকক্ষণ শুয়ে ছিল।তিথি দেরি করছে বলে অনেক কষ্টে উঠে এসে দেখে তার গুণধর বউ রান্নাঘরের বারোটা কর্ণার খুলে বসে আছে।
চলবে♥