যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৮
আফনান লারা
তিথিকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ইশান ব্যাগগুলো সরিয়ে রেখে বলে,’যেমন কর্ম তার তেমনই তো ফল হবে তাই না? আর তুই কি আমাকে আদৌ ভয় পাস?যেভাবে না যাওয়ার জন্য বাহানা করছিস!’
তিথি কিছু বলেনা।ওখানে গেলে তার যে তেরোটা বাজবে তার দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে মনে কল্পনা করে চলেছে সে।কাল বাদে পরশু তাদের ফ্লাইট।তিথির খাওয়া দাওয়া উঠে চলে গেছে।ইশান তাকে মেরেও ফেলতে পারে এই চিন্তায় তার নির্ঘুম রাত কেটেছে।ইশান এ রাতে বাসায় ছিলনা।শাওয়ারটা শেষ করে কোথায় যেন গেছে।
তিথি মন খারাপ নিয়ে তানিয়ার সাথে কিছু সময় কথা বললো।তানিয়া তাকে আশস্থ করেছে যাতে ভাল কিছু নিয়ে ভাবে।হতে পারে ইশান তাকে খুব ভালবাসা দেবে।
তানিয়ার কথা আর ইশানের বড় বোন তামিয়ার কথা যেন এক রকম হয়ে গেলো।আসলেই কি ইশান তাকে খুব ভালবাসবে?
নাকি সবই তার মনের ভুল।ইশান হয়ত তাকে অনেক বেশি কষ্ট দেবে যা সহ্য করার মতন হবেনা।
এইসব ভাবতে ভাবতেই সকালটা হয়ে যায়।
তিথি জানে কলা মুড়ি সে পাবেনা।তাই একটা পাউরুটির টুকরো নিয়ে সে চলেই যাচ্ছিল তখন পেটের খিধে বললো আরও কিছু চাই।
তাই সে ঠিক করে একটা কাপ নুডুলস খাবে।নুডুলস কোম্পানির মালিকের বউ হবার সুবিধা হলো ঘরে শুধু নুডুলস আর নুডুলস পাওয়া যাবে।মাঝরাতে কিংবা ভোরবেলা ক্রেভিংস হলে নুডুলসকে হাতের কাছে পাওয়া যাবে।
তিথি খুশি হয়ে নুডুলসে গরম পানি ঢেলে রুমে চলে আসে।নুডুলসটা খাওয়ার সময় তার চোখ গেলো প্যাকেটে লেখা এটার ফ্লেভারের নামের দিকে।
মিন্ট ফ্লেভার।তিথির হঠাৎ মনে পড়ে যায় ইশান যে ফ্লেভারের নুডুলসের উদ্ভোধন করতে জাপান যাচ্ছে সেই নুডুলসই এটা।
উদ্ভোধন হবার আগে এটার সেম্পল আসতেও তো সময় লাগার কথা।আর এটার তো বানানোর ডেট লেখা এক বছর আগের।তার মানে এটা পুরোনো ফ্লেভারের।
তবে ইশান তাকে নিয়ে কেন জাপান যাচ্ছে?পুরোটাই তাহলে নাটক!
তিথির আর খাওয়া হলোনা।মাথায় বড় একটা চিন্তা ঢুকে গেলো।
এখন তার কি করা উচিত?
ঠিক ঐ সময়ে ইশান বাসায় ফেরে।কাল রাতে আদিলের সাথে একটা ক্লায়েন্টের সমস্যার কারণে সারারাত তাকে অফিসে কাটাতে হয়েছে নাইট ডিউটি অফিসারের সাথে।
ওটার সমাধান করেই সে মাত্র ফিরলো।তিথির সামনে নুডুলস দেখে প্রথমে তার কিছু সন্দেহ হলো না।
তিথি ইশানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।ইশান গায়ের শার্টটা খুলছিল তখন তিথি বললো,’কোন ফ্লেভারের নুডুলস উদ্ভোধন করবেন বলেছিলেন যেন?’
‘মিন্ট’
‘তাহলে এটা কি?’
ইশান পেছনে তাকায়।তিথির হাতের নুডুলসটাও মিন্ট ফ্লেভার।ইশান আবারও নিজের কাজে মন দেয়।
তখন তিথি উঠে এসে বলে,’আমি জানতে চাই এত মিথ্যা কথা কেন? আপনি কি জন্য আমাকে জাপান নিয়ে যেতে চাইছেন?’
ইশান কিছু বলেনা।তিথি এবার প্রচণ্ড রেগে যায়।সে চিৎকার করে বলে যত কিছু হয়ে যাক না কেন সে জাপান যাবেনা।এই বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ইশান ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে বলে,’আমার স্ত্রী হিসেবে এটা তোর দায়িত্ব যে আমার কথা শোনা।জাপান হোক কিংবা মহাকাশের কোনো গ্রহ হোক।আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাবো তোকে আমার সাথে সেখানেই যেতে হবে এবং এটা পালন করতে তুই বাধ্য।’
‘না আমি বাধ্য নই’
ইশান তিথির হাত ছাড়লোনা।চুপ করে তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।তিথি ওর কাছে আবারও জানতে চাইছে কেন তারা জাপান যাবে যেখানে এই মূহুর্তে জাপান যাবার কোনো প্রয়োজনই নেই।
এবার ও ইশান জবাবটা দেয়নি।কিন্তু সে আরও কিছু বলতে চাইছিল তখনই মা এসে পড়েন সেখানে।
তিনি নামাজ পড়ে এসেছেন এদিকে।ইশান আর তিথিকে এমন অবস্থায় দেখে তিনি দ্রুত ওদের রুমে ঢোকেন।তারপর জানতে চাইলেন কি হচ্ছে এখানে।
ইশান তিথির হাতটা ছেড়ে দেয় সাথে সাথে।তিথি ওনার দিকে ফিরে সবটা বলে দেয়।সে বলে দেয় যে ইশানের জাপানে কোনো কাজই নেই।সে অন্য উদ্দেশ্যে যাচ্ছে কাজের নাম করে।
মা এ কথা শুনে ইশানের দিকে তাকালেন ওর উত্তরের আশায়।তখন ইশান বললো,’মা তুমি যাও।আমি আসছি’
মা মাথা নাড়িয়ে চলে যেতেই তিথিও তার পিছু পিছু যাওয়া ধরলো কিন্তু ইশান আর তাকে যেতে দিলোনা।সে তিথির আগেই এসে ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে।তিথি ভীষণ ভয় পেয়ে যায় ওর এমন কাজে।
ইশান তখন বলে,’তুই যদি আমার সাথে জাপানে না যাস তবে তোকে জোর করে নেয়ার ক্ষমতা আমার কাছে।কিন্তু যদি সেই জোরটা আমার সবার সামনে করতে হয় তবে এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে তিথি।খুব খারাপ!
আমি চাইনা বাহিরের মানুষের সামনে কোনো সিনক্রিয়েট হোক।চুপচাপ আমার সাথে কাল ভোরবেলা রওনা হবি।যদি এর আগে কোনো হট্টগোল তুই করেছিস তবে ইশানের আর যেসব রুপ তোর দেখা বাকি আছে সেগুলো খুব দ্রুত দেখিয়ে দিবো ‘
তিথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ‘তবে তাই হোক!দেখান আপনার রুপ।দেখি আর কত নিকৃষ্ট হতে পারেন আপনি’
কথা শেষ করার আগেই তিথি গালে একটা কামড় খেলো।আচমকা ঘটে যাওয়ায় সে কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা।কামড়ের ব্যাথার শিহরণে সে গালে হাত দিয়ে ইশানের দিকে ভ্যাবলার মতন শুধু চেয়ে রইলো।ইশান ওর গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বলে,’বত্রিশটা দাঁতের দাগ বসিয়ে দিয়েছি।জাপান না গেলে আরও দাগ বসবে’
তিথি কাঁদবে,না চিৎকার করবে সেটার অংক কষাকষি করছে।এদিকে ইশান তার মায়ের কাছে চলেও গেছে।তিথি কোনো উপায় না পেয়ে তানিয়াকে কল করে।
তানিয়াকে সে এই ঘটনার কথা বলে সাহায্য চায়।
তানিয়া কামড়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
‘টুকু তোমার মনে আছে?সেবার ইশান ভাইয়া তোমায় হাতে কামড়েছিল?তুমি তার একটা কথা শুনো নি বলে?’
‘ভুলে গেছিলাম।এখন মনে পড়লো’
তানিয়া হাসির জন্য কথাই বলতে পারছেনা। তিথি বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে আয়নার সামনে গিয়ে হাতে পাউডার ঢেলে গালে ঘঁষতে লাগলো।তামিয়া দেখলে এবার সেও হাসবে।
‘একটা পাগলের সংসার করছি আমি!’
——-
‘মা বলো কি বলবে’
‘তুই জাপান কেন যাচ্ছিস?’
ইশান মায়ের হাত ধরে ওনার পাশে বসে।এরপর বলে,’হ্যাঁ,আমার একটা ইচ্ছে আছে।কিন্তু সেটা পরে জানবে।এখন না’
‘আমি যেন না শুনি যে তুই এত সহজে ঐ মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস।খবরদার!’
‘আরেহ না।ওসব কিছুনা।সে এত সহজে ক্ষমা পাবেনা’
এই বলে ইশান চলেই যাচ্ছিল হঠাৎ মা ওকে আবারও দাঁড়াতে বললেন।এরপর আলমারি থেকে একটা বক্সের ভেতরের সুতা বের করে বক্সটা সহ ইশানকে দিলেন।এরপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,’হয়ত তোদের আসতে এক বছরের বেশি লাগতে পারে।এত দিন তো আর মেয়েটাকে শাস্তি দিবিনা।একদিন না একদিন ক্ষমা করতেই হবে।আমি আশা করি সু খবর দিবি আমায়।সুতাটা তখন ওর হাতে পরিয়ে দিস। ‘
ইশান অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার অবাক করা চাহনি দেখে মা বললেন তিনি তিথিকে ক্ষমা করেননি এখনও।তার পরেও তার তো স্বামীর থেকে কিছু অধিকার পাওনা আছে এগুলো তো আর অস্বীকার করা যায়না।
ইশান চলে আসে ওখান থেকে।রুমে এসে দেখে তিথি পাউডার মেখে সারা মুখ সাদা বানিয়ে ফেলেছে।কিছুতেই দাগটা কারোর নজরে আসতে দেবেনা।ইশান ব্যাগ খুলে সুতাটা ভেতরে ঢুকিয়ে তিথির দিকে তাকায়।এরপর দুষ্টু করে একটা হাসি দিয়ে বলে,’বাচ্চা কয়টা নেয়ার ইচ্ছা থাকা উচিত নতুন দম্পতির?’
এ কথাশুনে তিথি চমকে তাকায় ওর দিকে।তার মানে তার সন্দেহটাই কি সত্যি হতে যাচ্ছে!
ইশান বসে বসে হাসছিল।তিথি তখন গালে হাত রেখে দূরে সরে গিয়ে বলে,’কি করবেন আপনি?’
‘আমি কি করবো?জাস্ট জানার ইচ্ছে হলো’
‘আআআআপপপপনি না বলছেন ঔসব কোনোদিন করবেন না।তাহলে হঠাৎ জানার ইচ্ছে কেন হচ্ছে?’
‘আমার সেখানে যে একটা বউ আছে তার সাথে প্রেমালাপ করবো।আচ্ছা,তুই নিজেকে কি ভাবছিস?নাহয় তোকে এক কোণায় বসিয়ে রাখবো।তোর তো এত ভাবার দরকার নেই,তুই শুধু আমাকে এটা বল শুরুতে কয়টা বাচ্চা নেয়া ভাল?’
তিথি আড় চোখে তাকিয়ে আছে।ইশান আবারও বললো,’আহা বললাম তো,জাপানে গেলে আমার সেখানে যে বউ থাকবে তাকে ভালবাসবো।তোর তো ভাবার প্রসঙ্গই আসেনা’
‘প্রসঙ্গ আসে,কারণ জাপানে গেলে সেখানে আমিই আপনার বউ হিসেবে থাকবো।কথা ঘুরিয়ে বললেও উত্তর টা একই দাঁড়ায় মিঃইশতিয়াক!’
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৯
আফনান লারা
ইশান মিটমিট করে হাসছে।তিথি ইদানিং খুব চালাক হয়ে গেছে।ঘুরিয়ে বললেও ঠিকই ধরে নেয়।এদিকে তিথি আরও চিন্তায় পড়ে গেলো।তার মানে ইশান তাকে নিয়ে একেবারে জাপান চলে যাচ্ছে না তো?
ভয়ে ভয়ে সে আরও একবার কল দিতে চায় তানিয়াকে কিন্তু পরে ভাবলো তানিয়া তো ঘুরেফিরে একই কথা বলবে।তার চেয়ে বরং শশীকে একটা কল দিলে সে আসল পরামর্শ দিতে পারবে।
সেইসব ভেবেই তিথি কল দিলো শশীকে।শশী চারদিন হলো ফ্যামিলি ট্যুর দিয়ে দেশে ফিরেছে।
ফ্রি ছিল অনেকটাই।তিথির কল তাকে আরও আনন্দিত করে দেয়।সে খুশি হয়ে তিথির সাথে কথা বলতে থাকে।কথা বলার এক সময় গিয়ে তিথি ওর কাছে পরামর্শ চায় ইশানের সাথে বিদেশ যাওয়া নিয়ে।তানিয়া পজিটিভ পরামর্শ দিলেও শশী দিলো নেগেটিভ পরামর্শ। তার নাকি দূর সম্পর্কের এক বোন হাসবেন্ডের সাথে বিদেশ গিয়ে মরা লাশ হয়ে ফিরেছে।তাকে নাকি খুব মারতো,একদিন মারার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সে একেবারে মরেই গেলো।
এ কাহিনী শুনে ভয়ে তিথির গলা শুকিয়ে আসলো।এদিকে ইশান খবরের যে চ্যানেলটা দেখছে তাতে দেখাচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন।
তিথি কলটা রেখে চোখ বড় করে ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর ভাবে ইশান তো আর তাকে মেরে ফেলবেনা।এই টুকু ভরসা আছে
তা চিন্তা করে বড় করে একটা শ্বাস নিলো সে তারপর বললো,’টিভিটা অফ করুন তো।অসহ্য!’
ইশান আগাগোড়া কিছুই বুঝলোনা।তাও টিভিটা অন করে উঠে এসে তিথির থুঁতনি টেনে ধরে বললো,’তুই আমাকে আদেশ করবি নাকি আমি তোকে আদেশ করবো?’
‘আমি’
এটা শুনে ইশান ওর থুঁতনিটা আরও জোরে টেনে দিয়ে বললো,’ইউ আর রঙ।আমি তোকে সবসময় আদেশ করবো।তুই আদেশ করার বয়স পার করে ফেলেছিস।তোর বয়স টা সেকালে থাকাকালীন অনেক আদেশ করেছিস। আর নাহ’
এটা শুনে তিথি দূরে সরে যায়।তারপর কত কি ভাবতে ভাবতে রুম ছেড়ে পালায়।ইশান ভাবে এখন যত পালিয়ে নিক।ওখানে গেলে পালিয়েও দরজা খুঁজে পাবেনা।
কাল ভোরবেলা তারা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
তিথি তার আগে বাবার বাসায় আসলো সবার সাথে দেখা করে নেয়ার জন্য।
তানিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেছে।পরের মাসে তার কাবিনের তারিখ আর এদিকে তিথি চলে যাচ্ছে।
তখন তিথি তাকে বোঝালো সে আসার চেষ্টা করবে।
ইশান জানতোনা তিথি যে ওর বাসায় গেছে।
সে অফিস থেকে ফিরে তিথিকে কোথাও না দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো। পরে অবশ্য তামিয়া আপু বললেন ওর বাসায় যাওয়ার কথা।
ইশান তখন হাঁপ ছেড়ে বেঁচে চলে যাচ্ছিল তখন তামিয়া ওকে দাঁড়াতে বলে।তার পাশে বসতেও বলে।
ইশান তাই ওর পাশে বসে,তখন তামিয়া বললো,’জানি তুই আর আম্মু তিথির উপর প্রচণ্ড রেগে আছিস।কিন্তু ইশান,একটা কথা বলি শুন।তিথি বড্ড ভাল একটা মেয়ে।আমি জানি সে তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু তখন ওর বয়সটা নিয়ে একটু ভাব।তখন তার মধ্যে ম্যাচিউরিটি ছিল না বিদায় সে অনেক কিছু না জেনে বলে ফেলেছিল।ক্ষমা করে দিয়ে,সব ভুলে ওকে জীবনের সব সুখ দিস যা তুই ওকে সবসময় দিতে চেয়েছিলি। ‘
ইশান চুপ করে সব শুনলো।তামিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আরও একবার ভেবে নেওয়ার কথা বলে।
——-
তিথি বাসায় গিয়ে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে।তার বাসায় ফেরার কথা একেবারে মনে ছিল না।
এদিকে রাত এগারোটা বেজে যাবার পরেও তার বিকেলের ঘুমটাই শেষ হচ্ছেনা দেখে ইশান নিজেই ওকে নিতে চলে আসে।ও আসার পর তানিয়া ওকে জানায় সে তিথিকে জাগানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
তিথি ইচ্ছে করেই এত দেরি করছে।ইশান তখন তিথির রুমে এসে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দেয়।
‘কে রে তানু!এত জ্বালাস কেন!চারিদিকে শুধু জ্বালানোর মানুষ সব!’
ঘুমের ঘোরে এসব বলতে বলতে তিথি অন্যদিকে মুড়িয়ে শোয়।
ইশান ওর কাছে এসে কানের কাছে বলে,’ইশান এসে গেছে’
তাতেও তিথি ওঠেনা।এবার ইশান সোজা গিয়ে টেবিলের উপর থেকে পানির জগটা এনে জগের ঢাকনা খুলো এক জগ পানি তিথির গায়ে ঢেলে দিলো।
তিথি এক লাফে উঠে বসে।মাথার চুল থেকে পানি চিপে চিপে বের করে বললো,’কার এত বড় সাহস?’
তখন ইশান ড্রিম লাইট নিভিয়ে রুমের মেইন লাইটটা অন করে।
তিথি ইশানকে দেখে হকচকিয়ে কাঁথা জড়িয়ে নেয় সারা শরীরে।তখন ইশান বললো,’নাটক বন্ধ করে শাড়ী চেঞ্জ করে আয়।ফ্লাইটের কথা ভুলে গেলে আবার মনে করিয়ে দিবো’
তিথি মাথায় হাত দিয়ে এলোমেলো হয়ে উঠে শাড়ীটা বদলাতে চলে গেছে দ্রুত।চোখের ঘুম এখনও যায়নি তাও ইশানের ভয় অনেক। যার কারণে ঘুম বাদ দিয়ে আগে ও যা বলেছে তা করে নিতে হবে।
ইশান রুম থেকে বের হতেই রিদম দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেলে চিৎকার করে বলে,’দুলাভাই অনেক মিস করবো আপনাদের,এ্যা এ্যা এ্যা!’
‘আরেহ আরেহ!শান্ত হও
আমরা তানিয়ার বিয়েতে আসবো তো আবার’
‘না না।এ হতে পারেনা ভাইয়া ‘
রিদমের এমন ওভার একটিং দেখে ইশান প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেও পরে বুঝলো আসল রহস্য।সে আসলে ওদের সাথে জাপান যাবার জন্য এরকম কান্নাকাটি করছে।
ইশান তখন ওকে নিজের পাশে বসিয়ে বলে,’আচ্ছা তুমি ইন্টার পরীক্ষা টা দিয়ে নাও।এরপর তোমাকেও নিয়ে যাবো’
রিদম মুচকি হাসি দিয়ে চেহারায় লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বললো,’ঐ যে আমাদের বাসায় আসার গলির মোড়ে একটা পিংক কালারের বিল্ডিং আছেনা?চার তলা’
‘হ্যাঁ’
‘ওটার তিন তলায় পিংকি নামের একটা মেয়ে আছে।যদি আমার সাথে ওরেও জাপান যাবার সুযোগটা করে দিতেন!’
ইশাম সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,’আচ্ছা তোমার বয়স কত?’
‘বারো’
‘আর ওর বয়স কত?’
‘সাড়ে এগারো’
‘মারহাবা!সোনায় সোহাগা!আগে তোমরা বড় হয়ে নাও তারপর নাহয় তোমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে একসাথে নিয়ে যাবো’
রিদম তখন আরেকটু কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,”সেটাই তো!বিয়েই তো সমস্যা। পিংকিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে’
‘এ্যা?সাড়ে এগারো বছরের মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে?’
‘আরে ওর বড় বোনকে বিয়ে করাবে।তো এই চাপটা ওর উপর পড়বেনা?ওর বোনের পরে তো ওর বিয়ে হবার কথা।এই জন্য ভাবি কমার্সের স্টুডেন্ট রা কি আর সাইন্স বুঝবে!’
‘তুমি বুঝি সাইন্স নিয়ে পড়ো?তুমি তো সবে ক্লাস সেভেনে পড়ো’
‘ভবিষ্যতে পড়বো তো।ওসব বাদ দিন।তার আগে আমার কাজটা ঠিক কবে হবে সেটা বলতে পারবেন?’
ইশান অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে।তারপর সে বললো খুব শীঘ্রই ওদের নিয়ে যাবে।
তিথি একটা থ্রি পিস পরে এসে ইশানের সামনে দাঁড়াতেই ইশান উঠে দাঁড়ায় চলে যাবার জন্য তখন তিথির বাবা এসে ওর হাতটা ধরে এরপর শক্ত চোখে চেয়ে থেকে বললেন তিথির খেয়াল রাখতে। আর বেশি কিছু বলতে পারলেন না।মনে অনেক কষ্ট নিয়ে তিনি কথাগুলো শেষ করতে পেরেছেন।ওরা অনেক দিনের জন্য চলে যাচ্ছে বলে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছিল তার।
তিথি ও কান্নাকাটি করছিল আসার সময়।
পথে ইশান ড্রাইভ করতে করতে পকেট থেকে একটা ঔষুধের পাতা বের করে তিথির দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো আজকে থেকে এটা খেতে।
তিথি কপাল কুঁচকে অনেকক্ষণ ধরে পাতাটা উল্টেপাল্টে ইশান কে কোনো কিছু না বলেই পাতাটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো।ইশান চুপচাপ গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিল।তিথি মাথা উঁচু করে গর্ববোধ করছে কাজটা সে করতে পেরেছে বলে।
ইশান কিছুক্ষণ পর আরেকটা পাতা ধরে বললো,’আমি জানতাম তুই ওটা ফেলে দিবি।তাই নরমাল একটা ঔষুধের পাতা দিয়েছিলাম।’
‘তো এটাও দিন।এটাও ফেলে দিইই’
ইশান মুচকি হেসে বললো,’এটা আর দিবোনা।জোর করে খাওয়াবো’
চলবে♥