যদি তুমি বলো পর্ব-২৬+২৭

0
429

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৬
আফনান লারা

নানু ভাবলেন ইশান হয়ত সব বুঝছে।কিন্তু নাহ।ইশান এইবার বেঁকে বসেছে।সে বলে তিথির দোষ যদি কেবল দোষই হতো তবে নিশ্চয় সে মাফ করে দিতো। কিন্তু তিথি তো দোষ করেনি।সে করেছে অন্যায়।
অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।তিথি সেকালে ইশান আর তার মাকে যে অপমান করেছিল এ কথা ইশান আর ওর মা বাদে আর একটা মানুষ ও জানেনা ওর পরিবারের,এমনকি তিথির পরিবারের কেউই জানেনা।
আর তাই নানু ইশানের কাছে সব শুনে অবাক হলেন।সব শুনার পর তিনি বললেন,’তবে তিথি যদি দোষই করে থাকে তাহলে ইশান কেন তাকে বিয়ে করেছে।’

এর জবাবে ইশান কিছু বলেনা।কিছু সত্য সবাইকে বলতে হয়না।সাময়িকের জন্য সে সত্য চাপা রাখলে দুই পক্ষেরই মঙ্গল ঘটবে।
নানু কোনো জবাব না পেয়ে চলে এলেন।তবে তিনি ইশানের না বলা কথাটি ঠিকই বুঝে গেছেন।আর তাই মিটমিট করে হাসছেন।
তিথিকে অনেকক্ষণ না দেখে ইশানের চিন্তা হলো।বিদেশে গেলেও সে সবসময় তিথির উপর নজর রাখতো।যাতে সে কোনো ছেলের ফাঁদে না পড়ে যায়।শেষে বাধ্য হয়ে আদিলকে লাগায় কাজে।আদিল ওর বিশ্বস্ত লোক।সে তিথিকে না ছোঁয়ার শর্তে সই করে কাজটা করেছে। এবং এর জন্য ইশান তাকে ঢাকায় স্থায়ী ভাবে থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
রুম থেকে বের হয়ে ইশান ঘুরতে ঘুরতে মামির সাথে খেলো এক ধাক্কা।
এই মামি হলেন সানজিদা মামি।উনি তিথির একাধারে মামি হোন আবার বান্ধবীও হোন।তিথির ক্লাসমেট ছিলেন তিনি।
সেই সূত্রে ইশানকে তিনি চিনতেন,দু একবার তিথিকে ডিস্টার্ব করতে দেখেছিলেন।কিন্তু বিয়েতে ইশানকে দেখে চিনতে না পারলেও বারবার মনে হচ্ছিলো ওকে কোথাও একটা দেখেছেন।
এখন আবারও ওর মুখটা সামনে দেখে তিনি আন্দাজ করে বললেন,’আচ্ছা তুমি কি পানপাড়া হাই স্কুল চিনো?’

ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’চিনি।আপনাকেও চিনি।’

‘আচ্ছা তুমি কি তিথিকে আগে থেকে চিনতে?’

ইশান হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়।মামি তো অবাক।হা করে তাকিয়ে রইলেন।এত বছর পর আগের ইতিহাস আবার সামনে চলে আসলো!ভাবা যায়!
এই ছেলেটা তিথিকে যখন ডিস্টার্ব করতো তখন মনে মনে তিনি হিংসা করতেন।তার জন্য যদি এমন একটা ছেলে পাগল থাকতো তবে কতই না ভাল হতো!
সেই ছেলে শেষ পর্যন্ত তিথির জন্যই থেকে গেলো!
তিথির কথা মনে পড়ায় মামি বললেন তিথি নানুর রুমে।
এই বলে তিনি কাজে চলে গেছেন।ইশান নানুর রুমে এসে তিথিকে ঘুমাতে দেখে ওর কাছে আসে।অনেকক্ষণ ওকে দেখে সে তিথির হাত ধরে চুড়ি গুলো সব খুলে নেয়।তিথি গভীর ঘুমে থেকে বিড়বিড় করে বলছিল ‘চুড়ি নিলে শাস্তি মাফ!’

ইশান চুড়িগুলো নিয়ে চলে আসে।তিথির ঘুম ভাঙ্গলো ঠিক দশটায়।সে উঠে বসতেই নানু ওর হাতে পানির মগ দিয়ে বললেন ইশান গাড়ীতে বসে ওর অপেক্ষা করছে।সে যেন দ্রুত তৈরি হয়ে যায়।খাওয়া দাওয়া গাড়ীতেই করে নিতে পারবে,তিনি খাবার প্যাকেট করে দিয়েছেন।তিথি শুরুতে কিছুই বুঝতে পারলোনা।পরে হুশ ফেরায় বললো সে তো যাবেনা।সে এখানেই থাকবে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা।নানু এক প্রকার জোর করেই ওকে তুলে ফেললেন বিছানা থেকে এবং বললেন এইসব ঘাউরামি বাদ দিয়ে সংসারে মন দিতে।সবসময় সব বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে প্রতিযোগিতা করা উচিত নয়।

তিথিকে তিনি ঠেলে গাড়ীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।ইশান সানগ্লাস পরে বসে ছিল।তিথি ওর পাশে বসে বললো,’আমাকে ছাড়া ভাল লাগেনা।আবার আমাকে নাকে দড়ি দিয়েও ঘোরাবে! ‘

ইশান যেন কথাটা শুনলোইনা,একটা ভাব নিয়ে বসে আছে সে।
সে এবার নানু বাড়ি থেকে তিথিকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে।মা,আপু সবাই ততক্ষণে বাসায় ফিরেও গেছেন।
ইশান তিথিকে বাসায় রেখে অফিসের কাছে চলে গেছে।এদিকে তিথিকে একা পেয়ে ইশানের মা ধরলেন ওকে ভাল করে।তিনি জানতে চাইলেন তারা কি কারণে হঠাৎ নানুর বাড়ি গেলো।

‘আমি গিয়েছিলাম,কিন্তু উনি ও এসে পড়লেন।কোনো দাওয়াত ছিল না।আমি এমনিতেই গেছিলাম’

‘তুমি জানোনা? তুমি গেলে আমার ছেলেও যাবে?তুমি যে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নও তা জানা আছে আমার।ইচ্ছে করে আমার ছেলেকে ওতদূর নিয়ে গেলে।ও যে তোমার জন্য পাগল এটা তো জানোই।আবার কি প্রমাণ করাতে চাও?’

তিথি চুপ করে আছে।কিছু বললেই আবার আগুন লাগবে।তার চেয়ে বরং চুপ করে থাকাই ভাল।ইশানের মা আরও অনেক কিছু বলে চলে গেছেন।
আগেকার তিথি হলে দু চারটা কথা মুখের উপর বলে দিতো।এখনকার তিথি বলে সে চুপ থেকে গেলো।

ইশানের জাপানে যেতে হবে জরুরি একটা কাজে।তাদের নতুন একটা ফ্লেভারের নুডুলস তৈরি হয়েছে সেটার উদ্ভোধন করবে সে।তিথিকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ইশান সেটা না ভেবে অন্য একটা প্ল্যান করেছে।সে তিথিকে দেশেই রেখে যাবে যাতে করে তিথি ইশানের অনুপস্থিতিটা হারে হারে টের পায়।
যদি ওকে সাথে করে জাপান নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে দেখা গেলো সে টের পাওয়ার বদলে ইশান নিজেই তিথির প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পড়বে।
আর তাই সে তার প্ল্যানের টিকেট দারোয়ানকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে তিথি সেটা দেখে কি রিয়েকশান দেয় তা জানার জন্য।
দারোয়ান ওর কথামতন টিকেটটা বাসায় দিয়ে আসে।
ভাগ্যক্রমে দরজাটা তিথিই খুলেছিল।সে টিকেটের খাম হাতে নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে যায়।ইশানের চিঠি বলে সেটা পড়ে দেখার কৌতুহল তাকে বাধ্য করে খামটা ছেঁড়ার জন্য।
আর তাই সে রুমে গিয়ে খামটা খুলেও ফেলে।
দেখলো ইশানের জাপান যাওয়ার টিকেট,পরশু ভোর ৬টায়।
ইশান ভেবেছিল তিথি মনখারাপ করবে,কিন্তু সেটা না হয়ে হলো তার উল্টো। তিথি দারুণ খুশি হলো।সে একটু শান্তিতে থাকবে ভেবে আনন্দে আটখানা হয়ে রুমে ঘুরতে লাগলো।
কি শান্তি!ইশান চলে গেলে সে ঐদিনই বাবার বাড়ি চলে যাবে।তানিয়ার বিয়ের আয়োজনে মশগুল থাকবে।কত মজা হবে তার।মাথা থেকে বোঝা নেমে যাবে।কয়েকদিন শাস্তি পেতে হবেনা।
তিথির আর আনন্দ ধরছেই না।
ওদিকে ইশান অফিসে থেকে মিটমিট করে হাসছিল তিথির অবস্থা চিন্তা করে।
——
ইশান সেদিন বাসায় ফিরলো একটু জলদি করেই।কারণ তার দেখার ছিল তিথি কি করে।
কিন্তু তিথির হাবভাব দেখে ইশান আশ্চর্য হয়ে যায়।তিথিকে দেখে মনে হয় সে হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে।

আর তাই ইশান গাল ফুলিয়ে নিজের ব্যাগে জামাকাপড় ঢুকাচ্ছিল।তখন তিথি এসে নিজেও তাকে হেল্প করতে থাকে।
ইশানের আরও রাগ বেড়ে গেলো এসব দেখে।সে ব্যাগটা সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে নিজের কাজ করতে থাকে।
আর কাজ করতে করতে বলে,’আমার টিকেট কোথায়? ‘

তিথি এক দৌড়ে সেটা এনে দিতেই ইশান বললো,’এত খুশি হবার কি আছে?আমি কি তোকেও নিচ্ছি?’

‘নিচ্ছেন না বলেই তো আমি এত খুশি’

‘ওহ রিয়েলি?ওকে ফাইন।আমার সাথে এবার তুইও যাচ্ছিস।অনেকবছর আগে তোকে বলেছিলাম একদিন তোকে আমি বিলেত নিবো, এই শুনে তুই খুব হাসছিলি।এবার তোর হাসির চৌদ্দটা আমি বাজাবো’

তিথির মুখটা ছোট হয়ে গেলো।সে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে থেকে জানতে চাইলো ওখানে ইশানের বাসায় আর কে কে থাকে।

ইশান হাসি দিয়ে বলে,’আমি গোটা একটা ফ্ল্যাটে একা থাকি।পাশের ফ্ল্যাটে একটা কাপল থাকে।এরপর দূর দূরান্তে বাসা বাড়ি নেই,সব বন আর বন।’

তিথি ঢোক গিলে বলে,’তার মানে ওখানে আমি আর আপনি একা?’

‘জ্বী’

তিথি এক দৌড় দিলো।ইশান বুঝলোনা সে দৌড় কেন দিলো,আর দৌড়টা দিয়ে গেলোই বা কোথায়।
তিথি আসলে ইশানের মায়ের রুমে গেছে।উনি যদি শুনেন ইশান তার বউকে সমেত জাপান চলে যাচ্ছে তবে তিনি এই অঘটন কিছুতেই ঘটতে দেবেন না।কারণ ইশানের সাথে তো তার কথা হয়েছে, সে সবসময় তিথিকে শাস্তি দেবে।বিদেশ নিয়ে যাওয়া মানে তো শাস্তি হতে পারে না।
এইসব শুনে তিনি নিশ্চয় তিথির যাওয়া ক্যানসেল করতে পারবেন।

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৭
আফনান লারা

ইশানের মা বসে বসে খাতায় কিছু লিস্ট লিখছিলেন।জাপানের কিছু প্রোডাক্ট তার লাগবে।ইশান চলে যাবে শুনে ওগুলোর লিস্ট করছেন তাকে দেবেন বলে।তিথি বেশ অনেকক্ষণ ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওনাকে দেখছিল। কি দিয়ে কথাটা শুরু করবে তাই ভাবছে।ইশানের চেয়ে ইশানের মাকে তার বেশি ভয় হয়।অনেক ভেবেচিন্তে সে ঠিক করে কথাটা সে তামিয়াকে দিয়ে পেশ করাবে।তাই দরজা থেকে ভেতরে না গিয়েই সে চলে যায় সোজা তামিয়ার রুমে।
তামিয়া শুয়ে শুয়ে তার হবু বর আকাশের সাথে ফোনে কথা বলছিল।তিথি দরজায় নক করে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘আসবো আপু?’

‘কে তিথি?আসো!’

তামিয়া কল কেটে উঠে বসে।তিথি ভেতরে এসে চুপিচুপি দরজাটা লাগিয়ে তামিয়ার পাশে বসে এরপর ওর হাতদুটো ধরে বলে,’একটা হেল্প করবে আপু?’

‘কি?’

‘তোমার আম্মুকে বলবে,, ইশান আমাকেও তার সাথে করে জাপান নিয়ে যাচ্ছে’

‘কি বলো!এটা তো দারুণ ব্যাপার।মা তো জানবেই,এখন জানানোর কি আছে?’

‘এখন জানাও,তাহলে উনি শুনলে আমাকে আর জাপান যেতে হবেনা’

‘এটা কেমন কথা?তুমি জাপান যেতে চাও না কেন?ওহ আচ্ছা বুঝলাম।ভাইকে ভয় পাচ্ছো?তোমার ধারণা ওখানে গেলে ভাই তোমাকে আরও জ্বালাতন করবে?হাহাহাহাহা!!হাসালে!বরং ওখানে গেলে তোমাদের মাঝখানের দূরত্বটা অনেক কমে যাবে।তুমি বুদ্ধি দিয়ে ভাবো।এটা তোমার সংসার জীবনের জন্য অনেক ভাল একটা আইডিয়া।তোমার তো দৌড়ে দৌড়ে যাওয়া উচিত।তা না করে তুমি কিনা ক্যানসেল করার পিছনে ছুটছো?’

তিথি ঢোক গিলে বললো,’তুমি বুঝতেছো না আপু।আমার সত্যিই যেতে ইচ্ছে করছেনা।আমার অনেক ভয় করছে।তুমি তোমার ভাইকে চিনোনা।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি যখন চাইতেছো আমি মাকে গিয়ে কথাটা বলি।তবে তাই হবে’

এটা বলে তামিয়া চলে গেলো মাকে বলার জন্য।তিথিও পিছন পিছন গেছে।বাহিরে দাঁড়িয়ে ওনার ভাবগতি দেখবে।
তামিয়া মায়ের কাছে যেতেই তিনি বললেন তার কিছু লাগবে কিনা বলতে,লিস্টে এড করে দিবেন।তামিয়া তখন মায়ের হাত থেকে লিস্ট টা সরিয়ে বলে,’মা তুমি কি জানো ইশান তিথিকেও নিয়ে যাচ্ছে?’

‘মশকরা করছিস?’

‘না তো।সত্যিই এটা।’

মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।এত বড় কথা কিনা সে লুকিয়েছে!ওনার চোখ বড় করা দেখে তিথি আনন্দে নাচতে নাচতে যেই না পিছনে মুড়লো ওমনি জোরেশোরে এক ধাক্কা খেলো ইশানের সাথে।ওর মুখে এত হাসি দেখে ইশান বললো,’আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছিস?’

‘না,তবে সেরকম কিছু ‘

ইশান কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সে মায়ের রুমে ঢুকে গেলো।তামিয়াকে দেখে রুম থেকে চলে যেতে বলে সে মায়ের পাশে এসে বসে।তামিয়াও ফোন টিপতে টিপতে চলে যায়।মা তো রেগে আগুন,তিনি তামিয়া চলে যাবার পরই ইশানকে প্রশ্ন করলেন কেন সে তিথিকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
তিথি বাহিরে থেকে সব কথা শুনছে চুপটি করে।

ইশান বললো,’মা তুমি ভাবছো আমি ওকে ভালবেসে নিচ্ছি?মোটেও না।আমি ওকে আরও বেশি শাস্তি দেবার জন্য নিচ্ছি ‘

মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এরপর বললেন,’কিরকম শাস্তি?ওখানে গিয়ে আর কিরকম শাস্তি তুই দিবি?’

‘মা বোঝো,ওখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।ওরে যে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তা সুন্দর মতন দিতে পারবো।’

মা ভাবলেন কিছুক্ষণ এরপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,’তবে তাই হোক।যেটা ভাল মনে করিস, কর।’

তিথি নিজের মাথায় নিজে একটা বাড়ি দিলো।এত জোরে দিলো যে ইশান শুনে ফেললো।সে রুম থেকে বের হয়ে দেখে তিথি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে যাচ্ছে।

‘এই যে তিথি ম্যাডাম!’

তিথি জিভ কামড়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে।

‘সবই তো শুনলেন,এবার নিজের জামাকাপড়, পাউডার লোশন সব গুছান দ্রুত’

তিথি পেছনে তাকিয়ে বললো,’কতদিনের জন্য?’

‘দিন বলছিস কি!বছর ও হতে পারে’
———-
ইশান ওকে কষ্ট দিতে দিতে কঙ্কাল বানিয়ে ফেলবে এই ভেবে তিথির হাত চলছেনা।সে জামা একটা নিয়ে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকছে।তার এমন অবস্থা দেখে ইশান নিজেই ওর ব্যাগ প্যাক করে দিচ্ছে।তিথির ভয়ে ইশান আরও মজা পাচ্ছে।ওখানে গেলে ওকে আরও ভয় দেখিয়ে মজা নেওয়া যাবে।
ইশানের মুখে হাসি দেখে তিথির কলিজা শুকিয়ে গেলো।সে সোফায় বসে বসে ভাবছে আজ রাতেই সে পালাবে।কিছুতেই এই ছেলের সাথে বিদেশ পাড়ি দেয়া যাবেনা।

ঠিক তাই একটা পরিকল্পনা করে তিথি।সে আজ রাতে পালাবে।নানু বাড়িও যাবেনা,বাবার বাড়িও যাবেনা,বান্ধবীর বাড়িতেও যাবেনা।সে যাবে হোটেলে।ইশান জাপান চলে যাওয়া পর্যন্ত হোটেলে গাপটি মেরে বসে থাকবে সে।

রাত বারোটা বাজতেই ইশান অফিস থেকে ফেরে।সে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে যেতেই তিথি পা টিপে টিপে বেরিয়ে যায়।সকলে নিজ নিজ রুমে।সদর দরজার আশেপাশেও কেউ নাই।তিথি তার পার্সটা নিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে দিলো এক ছুট।কিন্তু আফসোস, ইশান মনে হয় আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল।সে দারোয়ানকে বলেছে তিথিকে দেখলে যেন বের হতে না দেয়।দারোয়ান সে জন্য কড়া পাহারা বসিয়ে রেখেছে।
তিথিও কম না।
সে বিল্ডিংয়ের পিছনে গেলো বাউন্ডারি টপকে যাবে বলে।বাউন্ডারি দেখে তিথির ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।
স্কুলের টিফিন টাইমে এভাবে বাউন্ডারি টপকে সে ক্লাস মিস দিতো।
এখনও সেরকমই মনে হচ্ছে।বাউন্ডারি খাঁমছে ধরে সে উপরে ওঠার চেষ্টা করতে যেতেই কেউ একজন ওর আঁচল ধরে এক টান দিয়ে ওকে নিচে ফেলে দেয়।
মাটিতে ধপাস করে পড়ে তিথি মাথা তুলে তাকালো।ইশান খালি গায়ে,গলায় তোয়ালে ঝুলানো।সে কোমড়ে হাত রেখে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে।

‘জাপান যাবার ভয়ে যে কোণায় পালাস না কেন,ইশতিয়াক তোকে বের করে আনবেই।দারোয়ান আমায় ইনফর্ম করে দিয়েছে তুই যে পালাচ্ছিস!’

তিথি মাথা চুলকে বললো,’পালাবো কেন?আমি প্রেক্টিস করছিলাম’

‘জাপানে আমার যে ফ্ল্যাট আছে এক তলার।সেটাতেও চারিদিকে বাউন্ডারি করা।মন মত প্রেক্টিস করে নিস’

এই বলে ইশান তিথির হাত ধরে টেনে উঠায়।তিথি হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলে, ‘যাব না’

এই বলে সে বসেও গেলো।ইশান তখন তিথিকে ধরে কোলে তুলে নেয় এরপর হাঁটতে হাঁটতে বলে,’তুই যাবিনা তোর ছায়া যাবে’

তিথি নিরবে ইশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কোনো হাতাহাতি সে করলোনা।শুধু এক দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকিয়ে রইলো।যেন তার খুব ভাল লাগছে এভাবে করে যেতে।ইশান কিছুদূর যাবার পর টের পেলো তিথি তাকে বাধা দিচ্ছেনা।
তাই সে তিথির দিকে তাকায় তখনই।চোখে চোখ পড়তেই তিথি মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলে,’নামবো’

‘এতক্ষণ ভাল লাগছিল?এখন লজ্জায় পড়ে নামতে চাইছিস?’

‘মোটেও না’

ইশান দরজার সামনে এসে তিথিকে নামিয়ে দেয়।তিথি তখন বাহিরে গেটের দিকে তাকিয়ে ভাবে তার আর পালানো হলোনা।

ইশান ওকে টেনে বাসায় ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে বললো,’ফের যদি দেখি পালানোর চেষ্টা করেছিস তবে এভাবেই কোলে তুলে এরপর নিচে ফেলে দিবো’

তিথি মুখ গোমড়া করে যেতে যেতে মায়ের রুমের কাছে গিয়ে থেমে যায়।তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলে,”আমাকে দেখতে না পারলে কোলে তুলেছেন কেন?’

এ কথা সে ইচ্ছে করে বললো যাতে মা শুনে।এরপর উল্টো পাল্টা ভাবে।

ইশান তিথির কথা শুনে থামলো।সেও বুঝেছে এত রাতে তিথি এত জোরে কেনোই বা কথাটা বলেছে।তখন সে তিথির কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,’মা রাতে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমায়।তোর এত মিষ্টি গলা তিনি শুনবেন না’

তিথি কপালে হাত দিয়ে ইশানের পিছু পিছু গেলো।মনে হয় তার ভাগ্যে জাপান যাওয়াই লেখা আছে।কি বিপদ!

হঠাৎ তার মনে পড়লো পাসপোর্ট গায়েব করলে তার আর জাপান যেতে হবেনা।তাই সে ফোন নিয়ে তানিয়াকে কল করে তার পাসপোর্ট টা লুকিয়ে ফেলার জন্য।
তানিয়া কল ধরে যেটা বলে সেটা শুনে তিথি বোকা বনে গেছে।
তানিয়া বলে ইশান কয়েকদিন আগেই লোক পাঠিয়ে তিথির পাসপোর্ট নিয়ে গেছে জরুরি দরকারে।
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে