#যতনে_রাখিও
#সূচনা_পর্ব
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম ( অনি )
“আমাকে ডিভোর্স দিবেন না সাজিম! এখানে আমার তো কোনো দোষ নেই। আমি আপনার সব কথা শুনব! আপনার সব কাজ করে দেবো! আপনি যা বলবেন তাই করবো! কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না! তবুও আমাকে ডিভোর্স দিবেন না। আপনার ঘরের এক কোণায় একটু থাকার জায়গা দিলেই হবে।”
সাজিমের হাত ধরে বললো স্নিগ্ধা। সাজিম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা’র দিকে। স্নিগ্ধা কাঁদছে! স্নিগ্ধা’র চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে! স্নিগ্ধা র কান্না দেখেও মন গললো না সাজিমের। স্নিগ্ধার হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে বলল,
“- শোনো, আমি এখানে তোমার ন্যাকা কান্না দেখতে আসিনি। যা বলেছি কান খুলে শুনে নাও। আমি তোমাকে নিজের বউ হিসেবে মানি না। আর মানবো ও না। আমাদের বিয়ে টা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট এর মাধ্যমে হয়েছে। আমি তোমাকে সেই প্রথমেই বলেছি আমার থেকে কোনো আশা তুমি রেখো না। এখন যদি তুমি জেনে শুনে ভুল করে থাকো। তাহলে তো আমার কিছু করার নেই?
স্নিগ্ধা কান্না মাখা গলায় বলল,
“- আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি সাজিম!
সাজিম খানিকটা রাগ নিয়ে বলল,
“- আমি তোমাকে বলেছি আমাকে ভালোবাসো? কেন ভালোবাসলে? এখন যেহেতু ভালো বেসেছো সেহেতু কষ্ট টাও তোমাকে পেতে হবে স্নিগ্ধা!
সাজিমের কথায় স্নিগ্ধা কেঁপে উঠল! তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“- আপনি চাইলে সব সম্ভব হবে । আমাকে কি ভালোবাসা যায় না সাজিম?
সাজিম স্নিগ্ধার দিকে তাকাল। স্নিগ্ধা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে তার অনেক আশা। কিন্তু তা কখনোই হয়তো পূরণ হবার নয়। সাজিম কাট গলায় বলল,
“- না তোমাকে ভালোবাসা যায় না! আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবেো না।
“- কিন্তু কেন সাজিম? আমি কি দেখতে খুব খারাপ?
“- কারণ আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি। তাকেই আমি বিয়ে করতে চাই। নিজের জীবনসঙ্গী করতে চাই। ক্লিয়ার।
“- আমাদের বিয়ে টা যেভাবেই হোক না কেন? বিয়ে টা তো হয়েছে। এখন আপনি সেটা অস্বীকার করতে পারেন না।
সাজিম রক্তচক্ষু চোখে তাকালে স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা ভয়ে চোখ নামিয়ে নিল। সাজিম গম্ভীর কণ্ঠে সুধালো,
“- আমি যা বলছি তাই হবে। আমার কথার কোনো নড়চড় হবে না। তোমাকে আমি কখনোই আমার বউ হিসেবে মেনে নেবো না। তুমি যদি ভেবে থাকে আমাকে তুমি পাবে তাহলে ভুল ভাবছো। এই জাইহান খান সাজিম কখনো তোমাকে তার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবে না।
সাজিম গটগট শব্দ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাজিম চলে যেতেই স্নিগ্ধা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার জীবন টা এমন কেন হলো? কত হাসি খুশি ই তো ছিল। হুট করে কেন তার জীবন টা এলোমেলো হয়ে গেলো। কেন বেচে বেচে তার সাথেই এমন টা হতে হলো? এমন একটা মানুষের সাথে তার বিয়ে হলো যে কি না তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানে না। তার স্বামীর মনে অন্য কোনো নারী। যাকে কি না সে পাগলের মতো ভালোবাসে। তাকে ছাড়া সে ভাবতে পারে না। তাহলে তার কি হবে? তার কপালে কি এই ছিল? খোদা কেন তাকে এমন একজনের সাথে জুড়ে দিল? যার হৃদয়ে অন্য নারীর বসবাস।।
সাজিমের রুমের এক কোণায় বসে ফুপিয়ে কাঁদছে স্নিগ্ধা! কান্না করার কারণে তার চোখ মুখ ফুলে উঠেছে! ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে!
★★★
রাত তখন গভীর৷ স্নিগ্ধা ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে। সাজিম বাসায় ফেরে রাত দুটোয়। রুমে ঢুকে স্নিগ্ধা কে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না। এই রাতে চিৎকার চেচামেচি করতে মোটেও তার ইচ্ছে করছে না। তাই চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার দুচোখে ঘুম। চাইলেও আর সেটা মেলে রাখতে পারছে না। তাই তো বিছানায় এলোপাতাড়ি শুয়ে পড়ল।
____________
ফজরের আজান কানে আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠল স্নিগ্ধা। চোখ ডলে তাকাল। রুম টা অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। স্নিগ্ধা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। ধীর পায়ে সুইচ বোর্ডের কাছে গেল। অন্ধকারে হাতড়িয়ে লাল আলো জ্বালালো।। লাল আলোয় সাজিমে’র মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। স্নিগ্ধা সাজিমের দিকে এগিয়ে গেলো।। সাজিম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।। স্নিগ্ধা এক পা দু পা করে সাজিমের একদম কাছে চলে যায়। স্নিগ্ধা হাত বাড়িয়ে সাজিমের চুলে হাত বুলালো। সাজিম কিচ্ছু টের পেল না। পাবে কি করে সে তো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। স্নিগ্ধা কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল স্বামীর দিকে। ঘুমন্ত সাজিম কে দেখতে খুব কিউট লাগছে। চেহারায় কিউট কিউট ভাব আছে । স্নিগ্ধা মুচকি হাসল। এই মানুষ টা তার বিয়ে করা বর। অথচ তাকে সে চাইলেও পাবে না। এই মানুষ টা যে তাকে চাই না। সে অন্য কাউকে চাই।
সাজিম একটু নড়ে উঠল। স্নিগ্ধা দ্রুত দুরে সরে দাঁড়ায়। যদি সাজিম তাকে তার এত কাছে দেখে তাহলে তাকে আস্ত রাখবে নানে। সাজিম নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেল। স্নিগ্ধা ঘড়ি তে দেখল পাঁচ টা পাঁচ বাজে। সময় নষ্ট না করে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়। হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে বের হয়। তারপর সাজিমের কাছে আসল। আস্তে করে বললো,
“- এই যে শুনছেন? উঠুন, উঠে নামাজ পড়ে নেন।
সাজিম কোনো সাড়া দেয় না। স্নিগ্ধা আবার ডাকল,
“- শুনছেন, নামাজের সময় হয়ে গেছে। উঠে নামাজ পড়ে আবার ঘুমাবেন দরকার হলে।
সাজিম বিরক্ত হয়ে বলল,
“- উফ ডিস্টার্ব করবে না তো। ঘুমোতে দাও।
“- আপনি নামাজ পড়ে আবার ঘুমাবেন। তবুও নামাজ কাজা দিয়েন না।
সাজিম লাফ দিয়ে উঠে রাগী কন্ঠে বলল,
“- তোমাকে না বলছি ডিস্টার্ব করবে না। তাহলে কেন ডিস্টার্ব করছো? কথা কানে যায় না তোমার? তোমার নামাজ তুমি পড়ো। আমি পড়ব না তাতে তোমার প্রবলেম কোথায়? ফারদার যদি ডাক দিছো তাহলে ভালো হবে না বলে দিলাম। বলে সাজিম আবার শুয়ে পড়ল।
সাজিমের কথায় স্নিগ্ধা র চোখ ছলছল করে ওঠে। লোক টা তাকে একটু সহ্য করতে পারে না। স্নিগ্ধা চোখের কার্নিশ থেকে চোখের জল মুছে নামাজ পড়তে বসে।
★★
★
সকাল আটটা। খান বাড়ির সবাই একে একে ঘুম থেকে উঠছে। স্নিগ্ধা সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠছে আর ঘুমোই নি। স্নিগ্ধা ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমোই না। তার ঘুম আসে না। স্নিগ্ধা এখানে আসার পর থেকে দেখেছে। এই বাড়ির মানুষ গুলো অন্য রকম। কেউ ঠিক মতো নামাজ পড়ে না। শুধু সাজিমের দাদু আর বাবা ছাড়া। তারা দু’জন নিয়ম করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আর রইল সাজিমের মা। তাকে দেখলে মনে হয়। অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না। তার কথা বার্তার ধরনেই সেটা প্রকাশ পায়। তিনি স্নিগ্ধা কে একটুও দেখতে পারেন না।
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছেন সাজিমের বাবা আফজাল খান আর দাদা মফিজ খান। স্নিগ্ধা দু’জনের জন্য চা করে আনে। আফজাল খান হাসি মুখে স্নিগ্ধার কাছ থেকে চায়ের কাপ নেয়। তিনি স্নিগ্ধা কে বড্ড স্নেহ করেন।
কাজের মহিলা চুলায় রান্না বসিয়েছে। সাজিমের মম রাশেদা খান এখনো ঘুম থেকে উঠেন নি। তাকে কেউ ডাক ও দেন নি। কারণ তাকে ডাকা নিষেধ আছে। তার যখন ইচ্ছে হবে তিনি তখনই উঠবেন। অন্য দিন সকাল করে উঠলেও আজ এখনো ওঠেন নি। কেন ওঠেন নি স্নিগ্ধা জানে না।
স্নিগ্ধা সাজিমের জন্য কফি বানিয়ে দোতালায় গেল। সাজিম ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে। স্নিগ্ধা সাজিমের জন্য কফির কাপ হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। একটু পর সাজিম ওয়াশরুম থেকে বের হলো। স্নিগ্ধা হাসি মুখে সাজিমের দিকে কফির কাপ বাড়িয়ে দিল। কিন্তু সাজিম যে এমন কিছু করবে স্নিগ্ধা কল্পনাও করেনি।
চলবে~