#যখন_আমি_থাকবোনা
#পর্ব_৭ এবং পর্ব ৮
#লেখক_দিগন্ত
মুক্তি বাকের চৌধুরীকে বলে,
-“আর কত নাটক করবেন আপনি? আমি জানি আপনিই মতিয়া মান্নানের খু*নি। আপনি ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারে না। আপনি, আমার বাবা আব্দুল মান্নান, আব্দুল্লাহ হক আর মিরাজ হোসেন মিলে আমার মাকে মে*রে ফেলেছিলেন। আপনাদের শাস্তি দেওয়াই আমার মূল উদ্দ্যেশ্য। যেটা আমি অবশ্যই পূরণ করব।”
বাকের মুক্তির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আমি জানি তুমি মতিয়ার মেয়ে নেহা।”
মুক্তি অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। বাকের চৌধুরী কিভাবে এই কথাটা জানল? তার তো এটা জানার কথা না।
মুক্তিকে গভীর চিন্তায় মগ্ন দেখে বাকের চৌধুরী বলে,
-“তুমি আগে আমার কাছে অতীতের ব্যাপারে শোন। তাহলেই সবকিছু বুঝলাম পারবে।”
অতীত~~~
মুশফিক রহিম তার একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করেন। কিন্তু তিনি তার মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তাই তো মতিয়াকে জিজ্ঞাসা করে,
-“তোমার কি কাউকে পছন্দ? আমি তোমার বিয়ের কথা ভাবছি।”
মতিয়া তার বাবার কাছে কিছু লুকায় না। ভার্সিটির মাঠে সেইদিন যেই ছেলেকে সে ভালোবেসেছিল তার নাম বলে দেয়। মতিয়া বলে,
-“হ্যাঁ আব্দুল মান্নান নামের একজনকে। সে আমাদের কলেজ লাগোয়া ভার্সিটিতেই পড়ে।”
মুশফিক রহিম খুব খুশি হয়ে যায় মতিয়ার কথা শুনে। বলে,
-“ঐ ভার্সিটিতে যেই আব্দুল মান্নান আছে সে তো আমার বন্ধু আসাদ মান্নানের ছেলে। বাহ্ বেশ ভালো আমি তাহলে বিয়ের কথাবার্তা শুরু করে দেই। তুমি এখন ভেতরে যাও।”
মতিয়া খুশিমনে নিজের রুমের ভেতরে যায়। পরের দিন কলেজে যাওয়ার পথে আবার নিজের পছন্দের মানুষটাকে দেখতে পায় মতিয়া। দূর থেকে বাকের চৌধুরীও তাকে দেখে। আসলে মতিয়া যাকে পছন্দ করেছিল সে বাকের চৌধুরীই। বাকের চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। যাকে বলে গলায় গলায় ভাব। সেদিন অনুষ্ঠানে একে অপরের ব্যাজ পরিবর্তন করে নিয়েছিল তারা। যার কারণে মতিয়া বাকের চৌধুরীকে দেখে ভেবেছে সে আব্দুল মান্নান।
বাকের নিজের চুলের স্টাইল ঠিক করে মতিয়ার সামনে আসতে চায়। কিন্তু তার আগেই মতিয়া কলেজে ঢুকে যায়। কলেজে বাইরের লোকদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না তাই বাকের কিছু করতেও পারে না। অপেক্ষা করতে থাকে ছুটি হওয়ার।
কিন্তু কিছু জরুরি কাজে বাকেরকে চলে যেতে হয়। টানা এক সপ্তাহ কাজের জন্য বাইরে থাকতে হয়েছিল তাকে। এই এক সপ্তাহে রাজনৈতিক দলের হয়ে অনেক কাজ করে সে নেতাদের নজরে আসে। বিশেষ করে মুশফিক রহিমের নজরে আসে সে।
মুশফিক রহিম এরমধ্যে তার বন্ধু আসাদ মান্নানের সাথে মতিয়া আব্দুলের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে নিয়েছি। এক মাসের মধ্যে বিয়ের কথা ঠিক হয়। তবে আপাতত কথাটা গোপন রাখা হয়।
আসাদ মান্নান যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যান। অবশেষে তার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। মুশফিক রহিম বর্তমানে দলের প্রধান নেতা। অনেক সম্পত্তি আর ক্ষমতা তার। তার মেয়েকে ছেলের বউ বানাতে পারলে সোনায় সোহাগা।
__________
বাকের কাজ সেরে ফিরে এসে আবার মতিয়ার সাথে দেখা করে। এবার ফুল দিয়ে তাকে নিজের মনের কথাও বলে। সাথে এও বলে,
-“আমি আজ তোমার কাছে উত্তর চাইব না। কাল দুপুরে এই সময়ে আমাকে উত্তর দেবে।”
পরেরদিন যথাসময়ে মতিয়া এসে জানায় সেও বাকেরকে ভালোবাসে। বাকের খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়৷ মতিয়া লজ্জায় চলে যায়। তখনো অব্দি মতিয়া জানতে পারে না বাকেরের আসল নাম। এরপর রোজই তাদের দেখা সাক্ষাৎ কথাবার্তা হতো।কিন্তু মতিয়া বাকেরের নাম জানতে চায়না আর বাকেরও নিজের নাম বলে না। তাই তাদের মধ্যে সবকিছু ধোঁয়াশা থেকে যায়।
এরমধ্যে একদিন মুশফিক রহিম সবার সামনে নিজের মেয়ের সাথে আব্দুল মান্নানের বিয়ের ঘোষণা দেন। খবরটা রাজনৈতিক মঞ্চে বেশ সাড়া ফেলে, পেপার পত্রিকার হেড লাইনের প্রধান খবরে পরিণত হয়।
বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আসার পর মতিয়াকে আর বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয়না। মতিয়াও খুশি ছিল কারণ সে জানত মুশফিক রহিম তার সাথে তার ভালোবাসার মানুষটার বিয়েই ঠিক করেছে। অন্যদিকে বাকের যখন সংবাদটা পায় তখন সে কষ্টে,দুঃখে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। মতিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কারণ তার বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ। দুইদিন পরই তার বিয়ে।
বাকেরের একবার মনে হলো মুশফিক রহিমের সাথে কথা বলবে। কিন্তু সেটাও সম্ভব ছিল না। কারণ মুশফিক রহিমের সাথে এত সহজে দেখা করা যায়না। তার সাথে দেখা করার জন্য অনেক আগে থেকে তার সেক্রেটারির সাথে কথা বলতে হয়।
শেষে অনেক কষ্ট করে মতিয়ার বিয়ের একদিন আগে গোপনে তার রুমে যায় বাকের। রুমে গিয়ে মতিয়াকে নিয়ে পালিয়ে আসতে চায়। এই প্রথম মতিয়া তার ভুলটা আবিস্কার করে। সে যাকে আব্দুল মান্নান ভাবত সে আসলে বাকের। মতিয়ার চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। নিজের করা ভুলের জন্য আফসোস হয়। কিন্তু নিজের বাবার মান সম্মানের কথা চিন্তা করে মতিয়া বাকেরকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়।
বাকের এবার আব্দুল মান্নানের কাছে যায়। যেহেতু আব্দুল মান্নান তার বন্ধু তাই তাকে বিশ্বাস করে সব কথা বলে। আব্দুল মান্নান সব শুনে বাকেরকে আশ্বাস দেয় যে সে সব ঠিক করে দেবে।
আব্দুল মান্নানের সাথে দেখা করে ফেরার পথে বাকেরের একটি এক্সিডেন্ট হয়। তারপর বাকেরের আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর বাকের জানতে পারে এক সপ্তাহ ধরে সে অসুস্থ ছিল। এরমধ্যে আব্দুল মান্নানের সাথে মতিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। সবটা শুনে অনেক কষ্ট হয় তার। কিন্তু বাকের নিয়তি মনে করে সবকিছু মেনে নেয়।
এসব ঘটনার পর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাকের। ধীরে ধীরে রাজনীতিতে নিজের নাম বৃদ্ধি করে। মুশফিক রহিমের সবথেকে ভরসার পাত্র হয়ে ওঠেন।
মুশফিক রহিম আচমকা একদিন স্টোক করেন। তার কেন জানি মনে হয় তার হাতে আর বেশি সময় নেই। নিজের মেয়েকে তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তাই তার একমাত্র চিন্তা নিজের বোনের মেয়ে আলেয়াকে নিয়ে। আলেয়াকে সুপাত্রে দান করতে পারলেই তার শান্তি৷
তাই মুশফিক রহিম একদিন আলেয়া ও বাকেরকে একসাথে ডেকে বলে,
-“আমি বুঝতে পারছি আমার হাতে আর বেশি সমন নেই৷ আমার একটা শেষ ইচ্ছে আছে, আলেয়াকে বাকেরের সাথে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিতে ম*রতে চাই।”
আলেয়া ও বাকের দুজনেই হতবাক হয়। আলেয়া কখনো নিজের মামাকে তার আর আব্দুল্লাহর ব্যাপারে বলেনি। এবার বাকের বলতে চাইলেও তাকে বাধা দিয়ে বলে,
-“মামার কাছে আমি ঋণী। তিনি নিজের মেয়ের মতোই আমাকে মানুষ করেছেন। তাই তার এই শেষ ইচ্ছে আমি পূরণ করতে চাই।”
এভাবে আরেকটি ভালোবাসা ধ্বংস হয়ে যায়। আব্দুল্লাহকে কষ্ট দিয়ে তার সামনেই তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু ও প্রেমিকার বিয়ে হয়।
এর কিছুদিন পরেই মুশফিক রহিম মারা যান।
____________
সময় বহমান, দেখতে দেখতে ১২ বছর অতিবাহিত হয়৷ বাকের ও আলেয়ার কোলজুড়ে তখন ১০ বছর বয়সী আশরাফ ও ৮ বছর বয়সী বিপ্লব।
অন্যদিকে, আব্দুল মান্নান ও মতিয়ার দুই মেয়ে স্নেহা ও নেহা। যাদের বয়স যথাক্রমে ৭ ও ৫। দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকায় তাদের বাচ্চাদের মধ্যেও বেশ ভাব। বিশেষ করে নেহা ও বিপ্লবের একে অপরের সাথে খুব ভাব। সবসময় তারা বর বউ খেলে।
সবকিছু আপাতদৃষ্টিতে সুন্দর মনে হলেও ভিতরের রহস্যগুলো ধীরে ধীরগতির সামনে আসতে থাকে। মতিয়া আবিষ্কার করে কিছু তিক্ত সত্য। তার বাবা স্বাভাবিক ভাবে মারা যায়নি। তাকে মে*রে ফেলা হয়েছিল। এর পেছনে কার কার হাত আছে এটারই অনুসন্ধানে নামে সে।
এই অনুসন্ধানে যেটা বেরিয়ে আসে সেটা আরো বেশি ভয়ানক ছিল। মতিয়া জানতে পারে তার বাবার মৃত্যুর পেছনে তার স্বামী আব্দুল মান্নানের হাত রয়েছে। ক্ষমতার লোভে আব্দুল মান্নান সহ তার বন্ধু মিরাজ হোসেন এবং আব্দুল্লাহ হক রয়েছে এর পেছনে। আব্দুল্লাহ মূলত আলেয়াকে হারানোর ক্ষোভ থেকেই কাজটা করেছিল।
মতিয়া সবটা জানার পর প্রমাণ সংগ্রহে নেমে পড়ে। একসময় সব প্রমাণও সংগ্রহ করে ফেলে। কিন্তু আব্দুল মান্নান জেনে যায় সবকিছু। তিনি মতিয়াকে মে-রে ফেলার জন্য তার পেছনে লোক লাগায়। স্নেহা স্কুলে ছিল তাই মতিয়া তার ছোট মেয়ে নেহাকে নিয়ে পালিয়ে আসে বাড়ি থেকে।
এই পরিস্থিতিতে ভরসা করার মতো একজনকেই পায় মতিয়া। আর সে হলো বাকের চৌধুরী। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার ফোনে কল করে। অন্যদিকে বাকেরের মন মেজাজও ভালো নেই। আজ সে অনেক বড় একটা সত্য জানতে পেরেছে। যে ১২ বছর আগে আব্দুল মান্নান ও মতিয়ার বিয়ের আগে তাদের যে এক্সিডেন্ট হয়েছিল তার পেছনে আব্দুল মান্নানের বাবা আসাদ মান্নানের হাত ছিল। কয়েক বছর আগে লোকটা মা*রা গেছে। তাই আজ কিছু করতে পারছে না। তা নাহলে ঠিকই তার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করত।
অন্যদিকে আব্দুল মান্নান তার বন্ধু মিরাজ হোসেনকে বলে,
-“মতিয়াকে মে*রে ফেলবি কিন্তু আমার মেয়ে নেহার যেন কোন ক্ষতি না হয়।”
মিরাজ তাই করে। মতিয়া সবেমাত্র বাকেরকে ফোন করে। বাকের ফোন রিসিভ করতেই বলে,
-“তোমাকে অনেক বড় একটা সত্য..”
কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে মিরাজ এসে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে। নেহাকে টেনে হিচড়ে বের করে নিয়ে তারপর মতিয়াকে গাড়িতে লক করে দেয়। কিছুক্ষণ পর একটি ট্রাক এসে,গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়।
নেহা চিৎকার করে বলছিল,
-“আমি সবকিছু জানি। আব্বু, মিরাজ আঙ্কেল মিলে নানাকে মে*রে ফেলেছে। আম্মু আমায় বলেছে। এখন আম্মুকেই মা*রা হলো।”
মিরাজ নেহার মুখ চেপে ধরে আব্দুল মান্নানকে সব জানায়। আব্দুল মান্নান বলে,
-“আমার মেয়ের কোন ক্ষতি করবে না। প্রয়োজনে ওকে দূরে পাঠিয়ে দাও, আটকে রাখো তাও ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়।”
মিরাজ হোসেন তাই করে। প্রথমে নেহাকে আটকে করে পরে সুযোগ বুঝে নিজের বোনের কাছে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়। এসব কিছুর বিনিময়ে আব্দুল মান্নানকে ভয় দেখিয়ে একসময় প্রাইম মিনিস্টার হয়ে যায়।
(চলবে)
#যখন_আমি_থাকবোনা
#পর্ব_৮(অন্তিম পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
মুক্তি বাকের চৌধুরীর মুখে সবকথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তার মানে তার ধারণা ভুল ছিল। মুক্তি এতদিন ভাবত বাকের চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, আব্দুল্লাহ হক ও মিরাজ হোসেন মিলে তার মা’কে খু*ন করেছে। আজ মুক্তি বুঝতে পারছে তার ধারণা কতটা ভুল ছিল।
মুক্তি বাকের চৌধুরীর সামনে এসে বলে,
-“আজ আমি অনেক অজানা সত্য জানতে পারলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমার মা’কে এভাবে মে*রে ফেলা হয়েছিল। শুধু তাই নয় আমার নানাকেও। প্রতিশোধ তো প্রায় সম্পূর্ণ। এখন শুধু আব্দুল মান্নানকে তার পাপের শাস্তি পেতে হবে।”
বাকের চৌধুরী মুক্তিকে বলে,
-“ভালো করে ভেবে দেখো। উনি কিন্তু তোমার বাবা। তুমি কি ওনার উপর প্রতিশোধ নিতে পারবে?”
-“আমার কাছে ওনার একটাই পরিচয় উনি আমার মায়ের খু*নি। আমি ওনাকে ওনার পাপের শাস্তি অবশ্যই দেব।”
বাকের চৌধুরী বলে,
-“তার আর কোন দরকার নেই। আমি অলরেডি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আব্দুল মান্নানের গাড়িতে টাইম বো*ম্ব সেট করেছি। এতক্ষণে ও বোধহয়…”
স্নেহা বাকের চৌধুরী কে ফোন করে বলে,
-“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আঙ্কেল আমার মায়ের খু*নিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমি যখন প্রথম সবটা জানতে পেরেছিলাম আমারো খারাপ লেগেছিল। এখন আর খারাপ লাগছে না।আমার মা এখন খুব খুশি হয়েছে। যেখানে আছেন সেখান থেকেই।”
-“তোমার জন্য অনেক বড় একটা উপহার পাঠিয়ে দিচ্ছি আমি।”
-“কি উপহার?”
-“তোমার বোন নেহাকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মুক্তিই হলো নেহা।”
স্নেহা খুব খুশি হয় কথাটা শুনে। এতদিন ধরে তার বোন তার চোখের সামনে ছিল অথচ সে চিনতেও পারে নি।
বাকের বলে,
-“আর একটু অপেক্ষা করো শুধু।”
বাকের ফোনটা কে*টে দিয়ে মুক্তিকে বলে,
-“যাও তুমি তোমার জীবনটা সুন্দর ভাবে উপভোগ করো। #যখন_আমি_থাকবোনা তখন কিন্তু আমার অবর্তমানে তোমাকে সবকিছু সামলাতে হবে। আমার পরিবার, আমার রাজনীতি সব।”
মুক্তি বলে,
-“আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ। কিন্তু আর যাই হোক আমি রাজনীতি করব না। আমার একদমই ভালো লাগে না এসব। শুধুমাত্র এই রাজনীতির জন্য আমার পুরো জীবন বদলে গেছে। আমার মা, নানা সবার মৃত্যুর কারণ এই রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে আমি জড়াবো না।”
-“যা ভালো মনে করো। তবে আমার পরিবারকে কিন্তু তোমাকেই সামলাতে হবে। আব্দুল মান্নানকে খু*নের দায় নিয়ে আমি জেলে যাব। তুমি আমার পরিবারকে সামলে নিও।”
-“জি আচ্ছা।”
অন্যদিকে বিপ্লব এতক্ষণে জেনে গেছে যে মুক্তিই আসলে নেহা। সবটা জেনে খুব খুশি হয়েছে সে। এখন শুধু মুক্তির ফিরে আসার অপেক্ষা।
বিপ্লব মুক্তিকে ফোন করে। মুক্তি ফোন রিসিভ করতেই বিপ্লব অভিমানী সুরে বলে,
-“আমার থেকে সবকিছু কেন লুকালে এভাবে?”
মুক্তি বলে,
-“আমি কিছু লুকাইনি। তুমিই আমাকে চিনতে পারলে না। এখানে আমারকি কোন দোষ আছে নাকি? সব দোষ তোমার।”
-“দোষ গুনের হিসাব বাদ। এখন তুমি চলে আসো শুধু একবার। তারপর সবকিছুর জবাব দেব।”
-“#যখন_আমি_থাকবোনা তখন কাকে জবাব দেবেন?”
বিপ্লব রেগে গিয়ে বলে,
-“একদম বাজে কথা বলবে না। তুমি সবসময় থাকবে। আমার হয়ে থাকবে তুমি।”
বিপরীত দিক থেকে মুক্তির আর কোন আওয়াজ আসে না। বিপ্লব হ্যালো হ্যালো করতে থাকে কিন্তু মুক্তি কোন জবাব দেয়না।
_____________
১ বছর পর,
বিপ্লব আজ বিয়ের সাজে প্রস্তুত হচ্ছেম আজ তার বিয়ে। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপ্লব। স্নেহা বিপ্লবের সামনে এসে দাঁড়ায়। বিপ্লব স্নেহাকে দেখে হালকা হেসে বলে,
-“তোমার বোন বলেছিল #যখন_আমি_থাকবোনা তখন আমার মূল্য বুঝবেন। আমাকে ফিরে পেতে চাইবেন। তখন চাইলেও আর ফিরে পাবেন না৷ ও কিন্তু ওর কথা রেখেছে। নির্দয়ের মতো আমায় একা রেখে চাপ গেছে। আমিও ওর অনুপস্থিতিতে বুঝতে শিখেছি ওর মূল্য কতোটা। এখন আমি চাইলেও ওকে ফিরে পাবো না। শুধুমাত্র তোমাদের কথায় নতুন ভাবে জীবনটা শুরু করতে হচ্ছে।”
স্নেহা হা হুতাশ করে বলে,
-“কি করবো বলো? আমার বোনের জীবনটা কেমন জানি ছিল। মেয়েটা কষ্ট করেই গেল সারাজীবন। এখন আমাদেরকে কষ্ট দিয়ে চলে গেলো।”
আশরাফ হঠাৎ রুমে এসে বলে,
-“স্নেহা তুমি এখানে কি করছ? নিজের খেয়াল রাখার কথা একটুও মনে থাকে না তোমার। ভুলে যেওনা তোমার গর্ভে কে বেড়ে উঠছে। নিজের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের জন্য কিছু করার কথা ভাবো।”
স্নেহা আশরাফকে বলে,
-“তুমি এত চিন্তার করো না ডাক্তার বাবু। তোমার বাচ্চা আর বাচ্চার মা দুজনেই ভালো থাকবে।”
আশরাফ মুচকি হাসে। এখন স্নেহার সাথে তার সম্পর্ক একদম স্বাভাবিক। শুধু তাদের পরিবারের অবস্থাই অস্বাভাবিক। বাকের চৌধুরী আব্দুল মান্নানকে খু*নের দায়ে জেলে, মুক্তিও নিখোঁজ। সবমিলিয়ে তাদের পরিবারের পরিস্থিতি একদম ভালো নয়।
আশরাফ বিপ্লবের সামনে এসে বলে,
-“তুই চল এখন। বিয়েটা করে নিতে হবে।”
বিপ্লবের মত না থাকার পরেও সে চলে যায় আশরাফের সাথে। স্নেহা মুক্তিকে স্মরণ করে বলে,
-“কোথায় হারিয়ে গেলি তুই বোন। হারিয়েই যদি যাবি তাহলে ফিরে এলি কেন? সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে আবার চলে গেলি। এখন তোকে ছাড়া কি করব আমি। তোকে যে খুব মনে পড়ে।”
•
বিয়ের আসরে বসে আসে বিপ্লব। পাত্রীর আসার কোন খোঁজ খবর নেই। হঠাৎ করে কেউ একজন এসে বলে,
-“পাত্রী আসছে। কিন্তু শর্ত হলো সে মুখ ঢেকে আসবে৷ বিয়ের আগে কেউ পাত্রীর মুখ দেখতে পারবে না।”
সবাই অবাক হলেও এই অদ্ভুত শর্ত মেনে নেয়।
কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। বিপ্লব খুব অমনোযোগী হয়ে বিয়েটা করে নেয়। কবুল বলার পর পাত্রীকে খুব তড়িঘড়ি করে বিদায় দিয়ে দেওয়া হয়।
নতুন বউয়ের সাথে বাসর ঘরে পাঠানো হয় বিপ্লবকে। বিপ্লবের এখন খুব বিরক্ত লাগছে। মেয়েটা সেই কখন থেকে মুখ ঢেকে আসে। কোন কথাও বলছে না।
বিপ্লব নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সামনে এসে বলে,
-“আপনি কি এখনো মুখ দেখাবেন নাম তাহলে বিয়েটা করলেন কেন?”
পাত্রী কোন উত্তর দেয়না। বিপ্লবের বিরক্তির পাল্লা শেষ হয়ে যায়। এরমধ্যে তার ফোনে একটি কল আসে। কল রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে,
-“মুক্তি এখনো বেঁচে আছে। সেদিন কয়েকজন তাকে কিডন্যাপ করেছিল। কারা করেছিল সেটা বলা যাবে না। কারণ তারা কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্যে এমনটা করে নি। তারা একটি গোপন মিশনে যুক্ত ছিল। সেই মিশনের কাজে মুক্তিও যুক্ত ছিল। যাইহোক সেই গোপন মিশন সম্পূর্ণ হয়েছে। আমি এনাল সেই মিশনের প্রধান। এই মিশনটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে বাইরের কাউকে এই মিশনের ব্যাপারে জানান যাবে না।”
বিপ্লব প্রশ্ন করে,
-“মুক্তি কোথায়?”
কিন্তু কলটা কে*টে দেয়। বিপ্লব কোন উত্তর না পেয়ে কাঁদতে থাকে। এ কি করে ফেলল সে। মুক্তির ফিরে আসার অপেক্ষা না করেই বিয়ে করে নিল। বিপ্লবের নিজের উপর রাগ করতে থাকে। সে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“চলে যান এখান থেকে। আপনার প্রয়োজন নেই আমার লাইফে।”
মেয়েটি গান গেয়ে ওঠে,
-“ভালোবাসার অপারসুখে
পাইনা তোকে এই বুকে
ম-রছি আমি ধুকে ধুকে
থাকবে কি পাশেই আমার দুখে
বুঝবি তুই খুঁজবি তুই
#যখন_আমি_থাকবোনা
হাত বাড়িয়ে ডাকবি তুই
আর তো ফিরে আসবোনা।”
বিপ্লব অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
-“মুক্তি..তুমি ফিরে এসেছ!”
(সমাপ্ত)