সেদিন একটা গ্রুপে দেখলাম কার যেন নবম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উনি নয়দিনব্যাপী উপহার পেয়েছেন। আহা, সাথে সাথে ভেবে ফেললাম পনেরতম আসছে সামনে; দু সপ্তাহব্যাপী উপহার পাওয়া কতই না আনন্দের ব্যাপার হবে! বিধিবাম, আমার স্বামী বোধহয় অন্য গ্রহের বাসিন্দা। সে ভুলেই গেলো বিবাহবার্ষিকীর তারিখ। দু সপ্তাহব্যাপী উপহার সে তো কল্পনাতীত কোন ব্যাপার।
আমাদের ড্রায়ারটা কাজ করছিলনা সেভাবে গত কয়েকদিন। সেটার কি হয়েছে দেখতে যেয়ে যখন এদিক ওদিক করা হচ্ছিলো দেখা গেলো ওটার জন্মদিন মানে ক্রয়ের তারিখও আমাদের বিবাহবার্ষিকীর দিনে। নানা কথাবার্তার ফাঁকে এটাও বলে দিলাম, আরে জানো ওটা কেনা হয়েছে দুহাজার পনেরোর অমুক দিনে। স্টিকার লাগানো দেখলাম। ভেবেছিলাম ও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে কেন বলছি।
নাহ দেখা গেলো তাতেও কাজ হলোনা। রাত পেরিয়ে পরদিন দুপুর হয়ে গেলেও কোন বাতচিত না দেখে নিজেই বললাম, তোমার কি লাগবে উপহার?
– ওহ আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমার কি লাগবে বলো?
না লাগবেনা কিছু। আছে তো সবই।
– তাও ঠিক।
তোমার কি লাগবে?
– আমারও সবই আছে। কিছু লাগবেনা।
মনে মনে বলি আহারে আমার দুসপ্তাহব্যাপী উপহার কেন একদিনের উপহারও যে হাতছাড়া হয়ে গেলো!
বিকেলে ফেরার পথে নিয়ে এলো পারফিউম।
– তোমার কমন পড়ে যায়নি তো? কেমিস্ট অবশ্য বলছিল ওর দোকানে তোমার নেয়ার মতো পারফিউম নেই। তুমি নাকি জানো কি আছে ওর দোকানে।
বলতে চেয়েছিলাম, তবে এনেছো কেন? সেটা গিলে ফেলে বললাম, ধন্যবাদ। কিন্তু শুধুই পারফিউম?
– ড্রায়ার ও তো কিনে দিলাম।
ওটাতে কি কেবল আমার কাপড় শুকায়?
– না তা না। তবে তোমার আরাম তো একটু বেশী হয়, কি বলো?
এখন কি আমি ড্রায়ারের ওপর নাকি ভেতরে বসে স্ট্যাটাস দেবো, ‘হ্যালো ফ্রেন্ডস, হাবি দিয়েছে এই ড্রায়ার। গোসল করে গা শুকাতে না চাইলে এটার ভেতর ঢুকে যাবেন। ওহ থুক্কু, আপনি না শুধুই আপনার কাপড়গুলো ঢুকিয়ে দেবেন।’
আমার লাইনে যারা আছেন তারা, ও বলবে, ও আনবে ভেবে মুখে কুলুপ এঁটে থাকলে পরে কিন্তু ঘরের জিনিসপত্র হাতে নিয়েই খুশী থাকতে হবে। বছরের শুরু থেকেই কি উপহার পেতে চান তার লিস্ট করে ফেলুন এবং পেটে কথা চেপে না রেখে মনে করিয়ে দেন ম্যারেজ ডে কিন্তু আসছে।
আমি কি দিয়েছি সেটা জানতে চাহিয়া লজ্জা দেবেননা। ইয়ে মানে ও তো বলেছিল কিছু লাগবেনা তাই খালি হাতেই পার করে দিয়েছি এই বছর।
উপহারের অপেক্ষাতে থাকেন যদি কেউ,
মুখের আগল খুলে দিয়ে কথার তুলুন ঢেউ।
জানিয়ে দিন সকাল সন্ধ্যা কি উপহার চান?
কানে যদি তালা দেয়া থাকে, চিৎকার করে যান।
তোমার ঘরে এসে আমার হাড় মাংস শেষ,
চুলার আগুন জ্বলবেনা আর জানিয়ে দিলাম বেশ।
দেখবেন তখন গতিশীলতা আদতে কাহাকে বলে,
উপহারের থালি নিয়ে দৌড়ে আসবে চলে।
#ডা_জান্নাতুল_ফেরদৌস