মৌনতা পর্ব-০৬

0
703

#মৌনতা
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________
নারীকে হাসানো সহজ, কাঁদানোও সহজ। কিন্তু নারীর ঘৃণা পাওয়া কঠিন। আর এই কঠিন জিনিসটা যদি একবার হয়ে যায় তাহলে সেই নারীর ভালোবাসা পাওয়াও কঠিন।

আমার মনে কি তবে ঘৃণা তৈরি হতে শুরু করেছে? আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের লেপ্টে যাওয়া কাজল-চোখে তাকিয়ে এই প্রশ্নটাই সবার আগে মাথায় এলো। প্রথমে ভেবেছিলাম, আমি এখান থেকে চলে যাব। পরে মনে হলো, আমি কেন যাব? আমি তো এতটাও দুর্বল নই। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি, অন্যায় করিনি। ভুল করিনি। তবে আমি কেন পালাব? হ্যাঁ, ভুল করার মাঝে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে হয়তো সেটি ঐ মানুষটাকে ভালোবাসা।

আমি চোখের পানি মুছে মুখে পানির ঝাপটা দিলাম। বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। ঠোঁটে জোরপূর্বক টানলাম মিথ্যে হাসি। তারপর বান্ধবীদের কাছে ফিরে এসে আড্ডায় যোগ দিলাম। আমার এই অভিনয়টুকু আর কেউ না বুঝলেও যে সুমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি সেটা আমি ওর চাহনি দেখেই বুঝেছি।

আমাদের আগেই মেহরাব এবং সেই মেয়েটা রেস্টুরেন্ট থেকে চলে গেছে। বাড়ি ফেরার সময় আমি আর সুমা আলাদা এসেছি। নিজেকে কোনোভাবেই আটকে রাখতে পারিনি। যতই বলি, পোড়া মন যেন কোনো কথাই শোনে না। ঠিকই ঐ মানুষটার দহনে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। মানে না চোখের বাঁধও। এত কেঁদেও কি চোখ দুটো ক্লান্ত হয় না? সুমা আমার হাত চেপে ধরে বলল,

“কাঁদিস না প্লিজ! তুই যদি এভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে তো হবে না। তুই ভাইয়ার সাথে কথা বলবি। তাকে জিজ্ঞেস করবি, কে এই মেয়ে।”

“কেন আমার সাথে এমন হয় সুমা? তার অবহেলা মেনে নিয়েও তো একটু ভালো থাকার চেষ্টা করছিলাম। আমার সেই চেষ্টাতেও কি ভুল ছিল? আজ কেন তাকে আমার অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখতে হলো? আমার বুকটা যে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে রে। আমি সহ্য করতে পারছি না।”

সুমারও বোধ হয় আর সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। শুধু আমার মাথাটা টেনে ওর কাঁধে রেখে এক হাতে জড়িয়ে ধরল আমায়। আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ও বাড়ি ফিরেছে। আমি আমাদের বাসায় না ঢুকে মেহরাবদের বাড়িতে ঢুকলাম। আমার ধারণায় ছিল সে বাসায় নেই। না থাকাটাও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ভাবি যখন দরজা খুলে দিয়ে বলল,

“আরে পুষ্পিতা! কী ব্যাপার বলো তো? আজ তোমার বর আগে বাড়িতে ফিরল। আবার তুমিও অনেকদিন পর এলে এই বাড়িতে।”

আমি তখন অবাক না হয়ে পারলাম না। কাঠিন্যতা লুকিয়ে হাসার বৃথা চেষ্টা করলাম। ভাবি আমাকে যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিল। আমি কোনো রকম ভদ্রতা দেখালাম না। দরজায় নকও করলাম না। সোজা চাপিয়ে রাখা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলাম। তিনি ল্যাপটপ নিয়ে বোধ হয় কোনো কাজ করছিলেন। আমাকে দেখে তার মাঝে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেল না। একদম ভাবলেশহীন। আমি সোজা কাজের কথায় চলে এলাম। বললাম,

“আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে।”

তিনি ল্যাপটপ থেকে চোখ না ফিরিয়েই বললেন,

“বলো, শুনছি।”

“কাজ রাখেন এখন।”

“আমি তো শুনতে পাচ্ছি তাই না?”

আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছিল। ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে বিছানার এক সাইডে ফেলে বললাম,

“আপনার সমস্যা কী আমায় বলেন?”

তিনি বেশ শান্তকণ্ঠে বললেন,

“কোনো সমস্যা তো নেই।”

“সমস্যা না থাকলে এমন করছেন কেন? বিয়ের পর থেকে আমাকে ইগনোর করে যাচ্ছেন। কেন? কী করেছি আমি? আপনাকে ভালোবাসা ভুল ছিল আমার? কখনো একটাবার খোঁজ নিয়েছেন আমার? কখনো জানতে চেয়েছেন আমি কেমন আছি? কী চাই?”

“আস্তে কথা বলো। বাড়িতে মা, ভাবি আছে।”

“কেন আস্তে কথা বলব? তারাও জানুক তাদের ছেলে কতটা দায়িত্ববান। তারাও শুনুক তাদের ছেলে ঘরে বউ রেখে রেস্টুরেন্টে মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।”

তিনি আমার কথার মাঝেই ঘরের দরজা আটকে দিলেন। বললেন,

“তুমি একটু শান্ত হও।”

আমি শান্ত হওয়ার বদলে আরও রেগে গেলাম। চিৎকার করে বললাম,

“শান্ত হবো? আমি শান্ত হবো? কীভাবে আমাকে শান্ত হতে বলেন আপনি? আপনার কোনো ধারণাই নেই কতটা কষ্ট আপনি আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে দিয়ে যাচ্ছেন। নতুন করে এখন আবার ঐ মেয়েটাকে যোগ করলেন। আর কত কষ্ট দেবেন আমাকে? কত কষ্ট দিলে আপনার শান্তি হবে? কে ঐ মেয়ে আমাকে বলেন আপনি। কেন আপনি আমার সাথে এমন করছেন? আমাকে যদি মানতে এতই আপত্তি তাহলে কেন বিয়ে করলেন? তখন কেন বলে দিলেন না আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না? দয়া করে এভাবে তিলে তিলে কষ্ট না দিয়ে আমাকে একেবারে মে’রে ফেলেন। আমার দ্বারা আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। আপনি তো…”

আমার পুরো কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই আচমকা তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বিষয়টা বুঝতে আমার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। কথা বন্ধ হলেও এবার যেন আমার চোখ পানি বিসর্জন দিয়ে কথা বলতে লাগল।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে