মোহনেশা পর্ব-০৮

0
758

#মোহনেশা (৮)
-হ্যা ধরেছে তো আমাকে ভু/তে। ভালোবাসার ভু/তে ধরেছে মিঃ সাইক্লোন।
-বয়স কত তোর? (ইরফান)
-সতের। কেন? (মিতুল)
-এটুকু মেয়ে তুই ভালোবাসার কি বুঝিস? (ইরফান)
-ভালোবাসতে বুঝি বয়স লাগে? (মিতুল)
মিতুলের কথায় থতমত খেয়ে যায় ইরফান।
-আসছি। দুপুরে ঠিকঠাকভাবে খেয়ে নিস। আমি কল দেব মাঝে মাঝে। আর শোন বাইরে একদম বের হবিনা। বলেই অফিসের ব্যাগ নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায় ইরফান।
মিতুল এক দৌড়ে বারান্দায় চলে যায়। ইরফান নিচে পৌছেই এক পলক বারান্দার দিকে দিকে তাকায়। হ্যা মিতুল তার দিকেই চেয়ে আছে।
-এই মেয়ে সত্যি আমাকে পাগল করে দেবে। বিড়বিড়াতে বিড়বিড়াতে একটা রিকশায় চেপে বসে ইরফান।

“ডুবে ডুবে ভালোবাসি,তুমি না বাসলেও আমি বাসি।“ গানটা গাইতে গাইতে বারান্দা হতে বেডরুমে প্রবেশ করে মিতুল। কিছুক্ষণ বাদেই কলিংবেল বেজে ওঠে। খুলবে কি খুলবেনা তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায় মিতুল। তাই ইরফানকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে “পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি এসেছে,দরজা খুলে দে।“ মূলত ইরফানই তাকে আসতে বলেছিল মিতুলকে সঙ্গ দিতে।
দরজা খুলে দিতেই পাশের ফ্ল্যাটের আদৃতা মিতুলের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
-তাহলে তুমিই আমার পিচ্চি ভাবি? যতটুকু শুনেছি আর কল্পনা করেছি তুমি তো তার থেকেও পিচ্চি আর কিউটও। (আদৃতা)
আদৃতার কথা শুনে লজ্জামিশ্রিত একটা হাসি দেয় মিতুল।
-আপনি পাশের ফ্ল্যাটের আদৃতা ভাবি? ইরফান ভাই আগেও অনেকবার বলেছে আপনার আর ভাইয়ার কথা। (মিতুল)
-তাই! তা পা/গ/লী মেয়ে স্বামীকে কেউ ভাই বলে সম্বোধন করে? (আদৃতা)
আদৃতার কথায় লজ্জা পেয়ে যায় মিতুল। তুতলিয়ে বলে ওঠে,
-আ…আসলে হয়েছি কি…
-বুঝেছি অভ্যাস নেই তাইতো? প্র্যাক্টিস করো হয়ে যাবে। (আদৃতা)
-আচ্ছা। মাথা নাড়িয়ে জবাব দিয়ে আদৃতাকে বেড রুমে নিয়ে যায় মিতুল। আদৃতাকে বসতে দিয়ে মিতুল দৌড়ে ডাইনিং রুমে চলে যায়। ফ্রিজ থেকে কোকাকোলা গ্লাসে ঢেলে নিয়ে মিটসেফের ভেতরে রাখা চানাচুরের জার থেকে প্রিজে চানাচুর ঢেলে নিয়ে পুনরায় বেডরুমে চলে যায় ।
-আহা এসব কেন আনতে গেলে? (আদৃতা)
-আরে ভাবি খান আর আরামসে গল্প করেন। (মিতুল)

মিতুলের সাথে প্রায় এক দেড় ঘন্টা গল্প করে আদৃতা দুপুরের রান্নার জন্য বাসায় চলে যায়। আর যাওয়ার পূর্বে আগামীকাল শুক্রবার হওয়ায় মিতুল আর ইরফানকে দুপুরে তাদের সাথে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়ে যায়। মিতুল দরজা আটকে দিয়ে ইরফানের ফোন নিয়ে ইউটিউবে গিয়ে পুনর্জন্ম ২ নাটকটা দেখা শুরু করে।

সন্ধ্যায় মিতুলের জন্য একবক্স আইসক্রিম নিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফেরে ইরফান। দরজার সামনে এসে মিতুলকে কল দিতেই মিতুল দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইরফান ভেতরে ঢুকতে নেবে ওমনি মিতুল ঝাপ দিয়ে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে। যেন সে কতকাল পর ইরফানকে দেখছে! মিতুলের কান্ডে ইরফান রীতিমত শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-মিতুল আমার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ছাড় আমাকে। মৃদু সুরে বলে ওঠে ইরফান।
-আপনাকে অনেক মিস করেছি মিঃ সাইক্লোন। সকাল হতে আপনাকে দেখিনা অথচ মনে হচ্ছে কয়েক দশক যেন আপনার সাথে আমার দেখা হয়না। (মিতুল)
-আমিও অনেক মিস করেছি তোকে মিতুল। বলেই মিতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ইরফান।
হঠাৎ ইরফানের মনে পড়ে, তার তো মনেই নেই তার ভার্সিটির বন্ধু-বান্ধবীরা বলে দিয়েছে আজকে আটটা নাগাদ বাসায় আসবে মিতুলকে দেখতে।
-মিতুল আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব আসবে আজ বাসায়। একটু পরেই মনে হয় চলে আসবে। (ইরফান)
-এম্মাহ আমাকে আগে বলেননি কেন? আর তাদের খাওয়াবেন কি রাতে? আমিতো নুডলস ছাড়া আর কিছুই রান্না করতে পারিনা।(মিতুল)
-সেই টেনশন করার লাগবেনা। আমি ফুড পান্ডাতেই অর্ডার করে দিচ্ছি। দাড়া আমি গোসল করে আসি। (ইরফান)
ইরফানের কথায় হাফ ছেড়ে বাচে মিতুল।
-এক মিনিট দাড়ান প্লিজ। (মিতুল)
-আমি বসা থেকে উঠে দাড়াতে পারব না বাপু। (ইরফান)
-দাড়াতে হবেনা আপনি বসেই থাকুন। আমি এখনই আসছি। বলেই তাগাদা দিয়ে ডাইনিং রুমে ছুটে যায় মিতুল। ফিজ থেকে লেবুর সরবতের গ্লাসটা এনে ইরফানের দিকে এগিয়ে দেয়।

গোসল করে বের হয়েই ইরফান ফুড পান্ডায় খাবার অর্ডার করে দেয়। কিছুক্ষণ বাদের কলিংবেল বেজে উঠতেই দুজনে বুঝতে পারে সকলে চলে এসেছে। দরজা খুলতে যাওয়ার আগে ইরফান মিতুলকে বাথরুমের ভেতরের মিররের সামনে গিয়ে হিজাব বেধে নিতে বলে। চটপট হিজাব বেধে নেয় মিতুল।

-ভাই আর যাই বলিস তোর ওই সো কল্ড এক্সের থেকে আমাদের ভাবি যথেষ্ট ভদ্র আর কিউট।
বারান্দায় বসে সব ছেলেরা মিলে আড্ডা দেয়ার সময় ইরফানকে উদ্দেশ্য করে তার এক বন্ধু কথাটা বলে ওঠে।
-তা যা বলেছিস। আমি আসলেই অনেক লাকি ভাই। পুচকি হলে কি হবে? প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন,ভদ্র ,মার্জিত সে। আর আমি এটাও জানি ও ওর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে আজীবন আগলে রাখবে। (ইরফান)
-কদর করিস মেয়েটার। হাবভাব দেখেই বোঝা যায় যথেষ্ট সম্মান করে তোকে আর আই থিংক ভালোও বাসে। (রিয়াদ)
-হুম। (ইরফান)

ইরফানের মেয়ে বন্ধবীরা তো মিতুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মিতুল যে কতবার প্রশংসিত হয়ে লজ্জায় নুয়ে গিয়েছে!
ইরফানের বন্ধু-বান্ধব চলে গিয়েছে ঘন্টাখানেক হবে। মিতুল আর ইরফান মিলে সব এটো থালা-বাসন ধুয়ে নিয়েছে। ইরফান ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছে সে এই ছোট্ট মেয়েটার প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে এক নজর না দেখলে তার মন অশান্ত হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মিতুলের মোহনেশায় তীব্রভাবে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে ইরফান।

রাত একটার দিকে বিছানা ঠিক করে দুজনেই শুয়ে পড়ে।
-দেখেছেন আমি রান্না না জানায় কত ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে? আপনাকে রোজ কষ্ট করে রান্না করতে হচ্ছে। রান্না না হলে বাইরের খাবার খেতে হচ্ছে। আজকে আমি রান্না জানলে কি আর এত কষ্ট হতো আপনার? আসলেই আমি একটা অকর্মার ঢেঁকি। (মিতুল)
-হয়েছে থামেন আপনি। মেয়ে মানুষ যতই রান্নায় অপারগ থাকুক না কেন। একটা সময় ম্যাজিক্যালি তারা রান্না শিখে যায়। এমনকি রান্নায় সুপার লেভেলের এক্সপার্ট হয়ে যায়। বুঝেছেন? আপনিও হয়ে যাবেন। ধৈর্য্য ধরুন এখন। (ইরফান)
-ইশ আমিতো পাগল হয়ে যাবগো জরিনার আব্বা। তুমি এতো কিউট হইও না। (মিতুল)
-কি বললি আমি জরিনার আব্বা? (ইরফান)
-হুম হুম। আমাদের যখন একটা মেয়ে হবে তখন তার নাম রাখব জরিনা। তাহলে আপনি হবেন জরিনার আব্বা আর আমি হব জরিনার আম্মা। ইশ কতো কিউট না ব্যাপারটা? (মিতুল)
-আর একটা উলটাপালটা কথা বললে তোকে ছাদে নিয়ে গিয়ে টুক করে নিচে ফেলে দেব বুঝলি? (ইরফান)
ইরফানের কথায় মুখ বন্ধ করে তার দিকে চোখ পিটপিট করে এক ধেয়ে চেয়ে থাকে মিতুল।
-আমি যখন রান্নায় এক্সপার্ট হয়ে যাব না? তখন আপনি প্রতিদিন আমার রান্না খেয়ে খেয়ে বলতেই থাকবেন, “রাফসান হকের আর আমার বউয়ের রান্না কখনো খারাপ হতেই পারেনা।“ (মিতুল)
-আল্লাহ এই মাইয়াতো আমারে পাগল বানাইয়া দিলো। এহ মাইয়া চুপ করে ঘুমা। (ইরফান)
ইরফানের আহাজারি শুনে মিতুল ফিক করে হেসে ফেলে।

মিতুলকে একটা কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে ইরফান। দুজনই এখন বেশ ব্যস্ত থাকে সারাদিন। ইরফান অফিসের কাজে আর মিতুল পড়াশোনা এবং সংসারের টুকটাক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু নিয়ম করে রোজ রাতে তারা একসাথে বারান্দায় বসে চাঁদ দেখে। বাড়িতেও রোজ দুবার করে কল দিয়ে সকলের খোজ খবর নেয় মিতুল। ইউটিউব থেকে মিতুল এখন বেশ কয়েক পদের রান্না শিখে নিয়েছে। ভেবে নিয়েছে সামনের শুক্রবার ইরফানের জন্য কয়েকটা পদ রান্না করবে সে।

-এই মিতুল আমার ব্যাগে এক প্যাকেট সিগারেট ছিল। তুই সরিয়েছিস? (ইরফান)
-হুম । ফেলে দিয়েছি আমি। অফিস থেকে ফিরেছেন মাত্র এখন সিগারেট দিয়ে কাজ কি? (মিতুল)
-ফেলেছিস কেন তুই? কিঞ্চিত রেগে বলে ওঠে ইরফান।
এবার মিতুল চেহারায় বেশ রাগ ফুটিয়ে তোলে। পায়ের গোড়ালি উচু করে ইরফানের টিশার্টের কলার চেপে ধরে মিতুল বলে ওঠে,
-আমি থাকতে কেন আপনার সিগারেটের প্রতি নেশা থাকবে? আপনার পাশে অন্য কোনো মেয়েকে দাড়াতে দেখলে বা কথা বলতে দেখলে যেমন আমার জেলাস ফিল হয়। তেমনি আপনার সিগারেট খাওয়াতেও আমার জেলাস ফিল হয়। এই মিতুল কোনোকিছুর মোহনেশাতেই আপনাকে আসক্ত হতে দেবেনা। ইন শা আল্লাহ যতদিন পর্যন্ত মিতুল বেঁচে থাকবে একমাত্র মিতুলের মোহনেশাতেই আপনি আসক্ত হতে থাকবেন। মাইন্ড ইট।
হা হয়ে মিতুলের দিকে চেয়ে থাকে ইরফান।

চলবে…
আফিয়া অন্ত্রীশা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে