মেয়ে পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
828

#গল্পঃ মেয়ে
# নীল
#পর্বঃ ৬( অন্তিম পর্ব)
।।

ইদানিং রাতে কেনো জানি ঘুম আসে না খুব চেষ্টা করি ঘুমাতে এরপরেও ঘুম আসে না।আমার বাবার একটা উক্তি ছিলো-পেটে ক্ষুধা আর মনে কষ্ট থাকলে রাতে কখনো ঘুম হবে না।অাসলেই আমার বাবার কথাটুকু সঠিক আমার খুব কষ্ট হয় অামার স্বামীর জন্য।খুব ভোরে উঠে গেলাম অনেক ইচ্ছা করতেছে স্বামীর সাথে মন খুলে কথা বলি।অদৌ কি সেই আমার সাথে কথা বলবে?রাত্রি ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে গেলো।আমাকে বারবার বলতেছে তার বাবার কাছে ফোন করার জন্যে।ভোর বেলায় হয়তো অামার স্বামী ঘুমাচ্ছে এরপরেও ভয়ে ভয়ে স্বামীর কাছে ফোন দিলাম।অাগে অনেকবার ট্রাই করার পরে আমার স্বামী কল রিসিভ করতো আজ একবার কল করতে না করতে আমার স্বামী কল রিসিভ করেছে তাও আবার খুব ভোরে।আমি আমার স্বামীকে সালাম দিয়ে বলি-
.
_কেমন আছেন?
.
অামার স্বামী চুপ হয়ে আছেন কোনো কথা বলছে না কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে নিশ্বাসের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে অামার স্বামী হাউমাউ করে কান্না শুরে দিলেন।আমার রাত্রি বাবার কান্নার আওয়াজ শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাত্রি নিজেও বাবার কান্না শুনে ও কাঁদতে লাগলেন।এই প্রথম আমার স্বামীর মুখে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পরে উনি ফোন রেখে দেন।
.
অামার খুব ভয় লাগছে আমার স্বামীর কি হলো।ভোরবেলায় গেলাম সাজিদ ভাইয়ার বাড়ি। সাজিদ ভাই ইচ্ছা করলে খোঁজখবর নিতে পারবেন।সাজিদ ভাইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখি অনেক মানুষ।এই সকাল সকাল এতো মানুষ কেনো আসলো অাবার?পারু আবার অাত্মহত্যা করতে চেয়েছে নাকি,এই বলে সাজিদ ভাইয়ার বাসায় ভিতরে যাই।বাসার ভিতরে দেখি পারু একটা ছোট “ছেলে” বাবু নিয়ে বসে আছে।অনেক খুশি পারু।পারুর ঠোঁটে হাসির অাভাস। এই প্রথম পারুকে এতো খুশিতে দেখছি।আমাকে দেখে সাজিদ ভাই বলে-
.
_আসেন ভাবী অামার বাচ্চা দেখে যান,এতো সুন্দর সন্তান কেউ ডাস্টবিনে ফেলে যায়?
.
আসলেই ছেলে বাবুটা অনেক সুন্দর। সকাল বেলায় ফজরের নামাজ পড়ার সময় এই ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনা যায়।সবাই নামাজ শেষ করে গিয়ে দেখে ডাস্টবিনের পাশে ছেলেটা কান্না করতেছে। কি অদ্ভুত কাণ্ড ছেলে বাবুর এতো কদর তারপরেও ছেলে বাবু ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে চলে যায়।কেউ এই বাচ্চা নিতে রাজি হচ্ছে না কারণ এই বাচ্চার পরিচয় নাই।যেই বাচ্চার পরিচয় নাই সেই বাচ্চাকে গ্রামের ভাষায় জারজ সন্তান বলে।সাজিদ ভাই ছেলে বাবুর দিকে তাকিয়ে খুব মায়া লাগছে তাই লালনপালন করতে ডাস্টবিন থেকে নিয়ে আসছে।এখন থেকে সেই পারুর ছেলে।
.
সাজিদ ভাই অনেক খুশি আজ।কিছুক্ষণ পরে সাজিদ ভাই আমাকে বলে-
.
_ভাবী একটা কথা ছিলো?
_জ্বি বলেন?
_আরশির সাথে ভাইয়ার ঝগড়া হয় এক পার্যায়ে অারশির সাথে ভাইয়ার ডিভোর্স হয়ে যায়।
_কেন কিসের জন্যে?
_অারশির মা হয়েছে সেই ছেলেটা প্রতিবন্ধী কিন্তু অারশি সেই ছেলের যত্ন নেয় না ঠিক মতো।কি করে যত্ন নিবে ও থাকে অফিসে।নজরুল ভাই বলেছিলো জব ছেড়ে দিতে কিন্তু সেই জব ছাড়বে না, এই নিয়ে ঝগড়া হয়ে ডিভোর্স হয়ে যায়।এই জন্যে নজরুল ভাইয়া নেশা শুরু করেছে।
_ছেলেটা এখন কার কাছে?
_নজরুল ভাইয়ার কাছে।
.
সাজিদ ভাইয়ার মুখে এই কথা শুনে অনেক কান্না করেছি।মানুষ বলে কান্না করলে নাকি কষ্টের ছাপ কমে কিন্তু অারশি অামার অস্তিত্বকে কষ্ট দিয়েছে, অারশি আমাকে যেমনে কষ্ট দিয়েছে ঠিক তেমন আমার স্বামীকে সেই কষ্ট দিলো।
.
সন্ধ্যা হলে আমার মেয়ে রাত্রি পড়তে বসে।ঠক! ঠক করে দরজা কে জানি শব্দ করলো।দরজা খুলে দেখি আমার স্বামী তার কোলে প্রতিবন্ধী ছেলেটা।রাত্রি তার বাবাকে দেখে দৌড় দিয়ে বাবা বলে চিৎকার করে তার বাবার হাত ধরলো।আমার স্বামী প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে আমার কোলে দিয়ে রাত্রিকে কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে দেখে অামার খুব মায়া হলো ঠিক আমার স্বামীর মতো চেহারা।আমি জানি ছেলেটা কখনো হাঁটতে পারবে না হয়তো এটা আমার স্বামীর কপালে লিখা ছিলো।
.
রাতে সবাই বলে অনেকদিন পরে এক সাথে ডিনার করলাম।অামার ঘুম পাগলী মেয়েটাও আজ তার বাবার কোলে বসে ভাত খাচ্ছে।রাত্রি অনেকবার জিজ্ঞেস করলো-মা মা ছেলে বাবুটা কার বাচ্চা?
রাত্রিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম-তোমাদের জন্য তোমার বাবা নিয়ে আসছে।
.
রাত্রি একদিন সত্যিটুকু ঠিকে জানবে কিন্তু কখনো সৎ ভাই বলে অবহেলা করবে না।আমার এক শিক্ষক বলেছেন- সৎ মা’ সৎ ভাইরা অত্যাচার করলেও কখনো সৎ বড়বোন ছোট ভাইয়ের উপর অত্যাচার করে না।
.
রাত অনেক হয়ে গেছে,সবাই ঘুমাচ্ছে। আমার স্বামী এই রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আজ অন্ধকার নাই চারদিকে চাঁদের অালো।এই চাঁদের অালো আমার খুব পছন্দ অনেকদিন হলো চাঁদের অালো দেখি না।চার দেয়ালের মাঝে বন্দী ছিলাম।অামার স্বামী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।পিছন থেকে আমার স্বামীর কাঁদে হাত দিয়ে বলি-
.
_রাত অনেক হয়েছে ঘুমাবে না?
.
হঠাৎ করে আমার স্বামী আমাকে জড়িয়ে ধরলো, খুব শক্ত করে।আমার কপালে অালতো করে চুমু দিয়ে বলে-
.
_তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে।অাসলেই ছেলে,মেয়ে সব অাল্লাহর দান।সব ভুল আমার।
.
অনেকদিন পর আমার স্বামী আমার কপালে চুমু দিলো।সব অভিমান কেনো জানি চলে গেলো এই মানুষটার উপর আমি ফিদা।এই নজরুল সাহেবের উপর আমি কখনো অভিমান করে থাকতে পারি নাই আজও পারলাম না।তার দুই চারটা ভালোবাসার কথা শুনে সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।আমি স্বামীকে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আমি বলি-
.
_আর কখনো এমন করবে না তো?
_না কখনো না!
_আমার মেয়েদের খুব করে ভালোবাসবে।
_আচ্ছা।
_প্রতি সাপ্তাহ একদিন ফুচকা খাওয়ার জন্য বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যাবা ঠিক আগের মতো।
.
আমার স্বামী কান্না শুরু করে দিলেন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে-
.
_আচ্ছা পাগলী ঠিক আছে।
.
সারারাত চাঁদের অালো দেখলাম আমি আর আমার উনি।আমার স্বামীর মুখে পাগলী ডাক শুনতে খুব ভালো লাগে,মন চায় তার জন্যে তখন পাগল হয়ে যাই।
.
একটু ঘুমিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে উঠে যাই।অাজ সকালটা খুব সুন্দর আজ আমি অনেক খুশি।আমার মেয়ে রাত্রি অাজকে ও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যায়।আজকে উঠার কারণ আছে রাতুল সকাল সকাল কান্না করতেছে তাই রাতুল কে কোলে নিয়ে আমার রাত্রি মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।

।। সমাপ্ত ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে