মেয়ে পর্ব-০৫

0
637

#গল্পঃ মেয়ে
# নীল
পর্বঃ ৫
।।

আমার স্বামী অনেকগুলো মেয়ে বাবু পছন্দ করে না সেই কথা আমার মেয়েরা জানতো না,রাত্রি সবসময় মনে মনে ভাবতো তার বাবা পৃথিবীর বেষ্ট বাবা।কিন্তু রাত্রি হঠাৎ এমন করে কেন কথা বলতেছে।
আমি রাত্রির কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি প্রচণ্ড ভয় লাগতেছে মেয়েটা কিছু শুনে ফেললো নাকি।রাত্রি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে রাত্রি একটুও কষ্ট সহ্য করতে পারে না কিছু হলে মেয়েটা হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে।আমি রাত্রিকে জিজ্ঞেস করি-
.
_রাত্রি মা আমার কান্না কেন করতেছো?
_বাবার নাকি মেয়ে বাবু পছন্দ না তাই বাবা অারশি অান্টিকে বিয়ে করেছে।
_আরে মিথ্যা কথা,তোমাকে কে বলেছে এই মিথ্যা কথা?
_রাবেয়া দাদু বলেছে।
_রাবেয়া খালা দুষ্টুমি করেছে তোমার সাথে যাও খেলতে যাও।
.
আপনি যখন প্রচণ্ড খুশিতে থাকবেন তখন সেটা কিছু কিছু প্রতিবেশীর সহ্য হয় না তারা চায় আপনি অসুখী হোন।আমার তো এখন কষ্টের সময় তাহলে আরো কষ্ট কেন বাহিরের মানুষেরা দিচ্ছে?না হয়তো এটা আমার কপালে লিখা ছিলো।রাত্রি যখন এই কথা শুনে গেছে মেয়েটার কাছে মিথ্যা বললেও লাভ নাই রাত্রি ঠিকে সত্যিটা যাচাই করবে।
.
সন্ধ্যা হলে রাত্রি পড়তে বসে আমি রাত্রির পাশে বসে আছি অানমনে ভাবছি আমার স্বামী হঠাৎ কেন নেশা করতেছে! অারশির সাথে ঝগড়া হলো নাকি না ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে,নাকি প্রতিবন্ধী ছেলে হওয়াতে সেই কষ্টে এমন করতেছে,এইগুলো ভাবতে ভাবতে আমার চোখে হঠাৎ অশ্রু চলে আসছে কেন আমার স্বামী এমন হয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পরে সাজিদ ভাইয়ার ঘরে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে গিয়ে দেখি প্রতিবেশীর বেশ কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।সাজিদ ভাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে “পারু” সাজিদ ভাইয়ের স্ত্রী মাটিতে শুয়ে পারু কান্না করতেছে।আমি সাজিদকে বলি-
.
_সাজিদ ভাই পারুর কি হয়েছে?
_পারু অাত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো।
_কেন কিসের জন্য?
_পারুকে কে নাকি অলক্ষ্মী বলেছে।
_কে বললো?
_পারু বলতেছে না।
.
সাজিদ ভাই পারুর সাথে বিয়ে হয়ে আজ সাত বছর অাজ পর্যন্ত কোনো সন্তান হচ্ছে না তাদের।আজ প্রতিবেশীর কোন মহিলা জানি পারুকে অলক্ষ্মী বলেছে তাই পারু কষ্ট সহ্য না করতে পেরে অাত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো।অাচ্ছা ছেলে মেয়ে অাল্লাহর দান এখানে মানুষের কোনো কিছু করার নাই তাহলে পারুকে কেন সবসময় শুনতে হয় অলক্ষ্মী বৌ।পারু অনেকবার সাজিদ ভাইকে বলেছিলো” বাবুর জন্য আপনি চাইলে আরেকটা বিয়ে করতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নাই।সাজিদ ভাই খিলখিল করে হাসি দিয়ে পারুকে বলতো-
.
_তোমার ভালোবাসার ভাগ আর কাউকে দিবো না,ইনশাআল্লাহ্ আমাদের বাবু দুনিয়াতে আসবে।
.
সাজিদ ভাই খুব ভালো মানুষ পারুকে অনেক ভালোবাসে যেমন আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসতো।প্রতি সাপ্তাহে একদিন ঘুরতে যেতাম আমার স্বামীর সাথে।ঝাল জিনিস আমার স্বামী পছন্দ করতেন না এরপরেও আমার সাথে বসে একসাথে ফুচকা খেতো আজ আমার স্বামী অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।পারুকে কিছু কথা বলে ঘরে চলে আসি।
.
অনেক ক্লান্ত লাগছে আমার কাছে তাই শুয়ে আছি অামার মেঝো মেয়েটা না খেয়ে ঘুমাচ্ছে,মেয়েটা প্রায় সময় এমন করে না খেয়ে ঘুমিয়ে যায় অামার ঘুম পাগলী মেয়ে।রাত্রি পড়া শেষ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে,ফিসফিস করে রাত্রি অামাকে বলে-.
.
_মা একটা কথা বলি?
_হ্যাঁ মা বলো?
_পারু অান্টি কেন অাত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো।
_তোমার অান্টি কারো কথায় কষ্ট পেয়েছে তাই।
_আচ্ছা মা মানুষ অনেক বেশি কষ্ট ফেলে কি অাত্মহত্যা করে?
_অাত্মহত্যা করা মহাপাপ, যারা কষ্ট সহ্য করতে পারে না তারা অাত্মহত্যা করে।
.
অামার রাত্রি মেয়েটা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো,বুঝতে পারলাম না রাত্রি কেন কান্না করতেছে।অামার রাত্রি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
.
_মা তোমার তো অনেক কষ্ট তুমি কি পারু অান্টির মতো এমন করবে?
_না মামুনি আমার কোনো কষ্ট নাই আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
_সত্যি তো?
_হুম সত্যি।
.
অামার রাত্রি মেয়েটা মনের খবর সব জানে,মেয়েটার মাথায় অনেক বুদ্ধি। অাসলেই মাঝে মাঝে যখন কষ্টের ছাপ বেড়ে যায় তখন মন চায় মরে যেতে কিন্তু পারি না অামার মেয়েদের মুখের দিকে তাকালে আমি সব কষ্ট ভুলে যাই কারণ আমার মেয়েদের আমি অনেক ভালোবাসি।
.
চলবে ……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে