মেয়ে পর্ব-০৪

0
614

# গল্পঃ মেয়ে
# নীল
# পর্বঃ ০৪
।।

আমার ছোট মেয়ে মারা গেছে অথচ আমার স্বামীর মাঝে কোনো কষ্টের ছাপ দেখছি না।এই সময়ে সেই আমার পাশে থেকে আমাকে সান্ত্বনা দিবে যে আর সেই বলতেছে”উনি নাকি চট্টগ্রাম চলে যাবে সেখানে নাকি তার অনেক কাজ।আমার মেঝো মেয়েটা এখনো অবুঝ সেই এখনো বুঝতেছেনা তার ছোট বোন যে আর কখনো আসবে না হাউমাউ করে কান্নাকাটিও আর কখনো করবে না,কারণ সেই চিরদিনের জন্য কবরে শুয়ে আছে।আসলেই সেখানে শান্তির যায়গা কেউ সেখানে মেয়ে বলে তাকে অবহেলা করবে না।আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগতেছে আমার মেয়ের জন্য কেমন জানি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছে এই চার দেয়ালের ভিতরে তাই আমি আমার স্বামীকে বলি-
.
_একটু ছাদে যাবেন আমার সাথে?
_এত রাতে ছাদে কেন?
_অামার কেমন জানি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছে কেমন অস্থির অস্থির লাগতেছে।
_এই অন্ধকার রাতে ছাদে যাওয়ার দরকার নাই ফ্যান একটু বাড়িয়ে দিয়ে শুয়ে থাকো।
_একটু সময় থেকে চলে আসবো,কিছুক্ষণের জন্য চলেন না?
_না ঘুমাও কাল সকালে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।
.
অনেক রিকুয়েস্ট করেছি উনি অামার সাথে ছাদে যান নাই।অামার মেয়ে রাত্রি যখন আমার পেটে ছিলো এই সময় প্যাগনেন্ট অবস্থা অামার খুব অস্থির লাগতো ঠিক মতো ঘুমাতে পারতাম না তখন আমার স্বামী নিজে আমাকে ছাদে নিয়ে যেতো।অন্ধকার রাত আমার ভয় লাগতো তাই আমি ভয়ে ভয়ে তাকে বলতাম-
.
_অন্ধকার আমার খুব ভয় লাগে।
.
আমার স্বামী খিলখিল করে হাসি দিয়ে বলতো-
.
_পাগলী আমি আছি না তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখো দেখবা আর ভয় লাগবে না।
.
আসলেই আমার ভয় লাগতো না আমার স্বামী পাশে থাকলে আমার ভয় লাগে না উনার ভরসা আমার মনে শক্তি জাগে আজ সেই স্বামী বদলে গেছে অনেক বদলে গেছে।
.
একপাশ হয়ে শুয়ে আছি হঠাৎ আমার স্বামীর মোবাইল বেজে উঠে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি অারশি ফোন করেছে আমার স্বামী মোবাইল হাতে নিয়ে ছাদে চলে যায় তখন আমার খুব খারাপ লাগছে,ইচ্ছা করছিলো চিৎকার দিয়ে কান্না করি কিন্তু কিছু কিছু সময় চিৎকার দিয়েও কান্না করা যায় না,নিরবে শুধু চোখের অশ্রু ঝরে।ভালোবাসার মানুষটা হারিয়ে গেলে যতটুকু কষ্ট লাগে না তার চেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যখন তারপাশে কাউকে দেখি।আজ এই কষ্টটুকু আমি পাচ্ছি শুধু আমার পেটে বারবার মেয়ে বাবু আসতেছে তাই।
.
সকাল হলে আমার স্বামী চট্টগ্রাম চলে যায়,আমি জানি উনি আর তেমন একটা খোঁজখবর আর নিবে না।এমনটাই হয়েছিলো অামার বন্ধু জেসির সাথে তাদের তো লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো কিন্তু তারপরেও তার বারবার মেয়ে বাবু হওয়াতে তার স্বামী অরেকটা বিয়ে করার আগে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায় যদিও আমার বন্ধু জেসি তার স্বামীকে বলেছিলো-
.
_ ছেলে মেয়ে অাল্লাহর দান আমার কি করার আছে?প্রতিদিন হায় হতাশ না করে চাইলে ডিভোর্স দিয়ে দাও আমি আমার মেয়েদের নিয়ে সুখে থাকবো,অবশেষে হয়ে গেলো তাদের ডিভোর্স।
.
অনেকদিন হয়ে গেছে আমার স্বামী বাড়ি আসতেছে না আমি জানি অারশি এখন প্রেগন্যান্ট কিছুদিন পরে তার বাবু দুনিয়াতে অাসবে হয়তো তার কেয়ার করতেছে কারণ আমার স্বামীর স্বপ্ন অারশি পূরণ করবে।বাড়ি আসে না সেজন্যে তার উপর আমার রাগ নাই কিন্তু দুই একদিন পরপর ফোন করলে তো হয় সেটাও উনি করে না।আমার মাঝে মাঝে খুব চিন্তা হয় তাই সাজিদ ভাইকে বলি-
.
_সাজিদ ভাই ব্যবসার কাজে যদি চট্টগ্রাম যান তাহলে আপনার ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসিয়েন।
_আচ্ছা ভাবী দেখা করে আসবো।
.
সাজিদ ভাই জানে আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, কিছুদিন পরে এক এক করে সবাই জেনে যাবে হয়তো আমার মেয়ে রাত্রিও শুনবে।কিছুদিন গেলে সাজিদ ভাই চট্টগ্রাম থেকে আসে। সাজিদ ভাই আমার সাথে কথা বলার সময় সবসময় হাসিখুশিতে কথা বলে কিন্তু আজ উনার কথায় কেমন কষ্টের চাপ দেখা যাচ্ছে।আমি অাশ্চার্য হয়ে সাজিদ ভাইকে বলি-
.
_সাজিদ ভাই কোনো খারাপ খবর নাকি?
_হুম।
_কি বলেন আমার স্বামীর কি হয়েছে?
_ভাইয়া নেশা করে কেমন জানি হয়ে গেছে।
_কিসের জন্য?
_অারশি মা হয়েছে তার ছেলে বাবু দুনিয়াতে অাসছে কিন্তু ছেলেটা প্রতিবন্ধী।
.
অারশির ছেলে বাবু প্রতিবন্ধী তার জন্যে কেনো অামার স্বামী নেশা করবে এটার জন্যে কোনো কারণ আছে?কারণ আমার স্বামীর তো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার তো ছেলে বাবু চাই।তার তো ছেলে বাবু দুনিয়াতে অাসছে তাহলে উনি খুশি নাই কেন?

আমার রাত্রি মেয়েটা স্কুল থেকে এসে মা মা করে চিৎকার দিচ্ছে মেয়েটার মা ডাক দিলে অামার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সু্খী মা আমি।রাত্রির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত্রি কান্না করতেছে,রাত্রি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
.
_মা বাবার তো মেয়ে বাবু পছন্দ না তুমি একটা কাজ করিও আমাদের রাতে খাওয়ার সময় খাবারে বিষ মিশিয়ে দিও তাহলে তুমি তোমার ভালোবাসা ফিরে পাবে।
.
হঠাৎ আমার মেয়ে রাত্রি এমন কথা কেন বলতেছে?
।।
চলবে ……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে