# গল্পঃ মেয়ে
# নীল
# পর্ব…২
।।
অামার স্বামী কেন মেয়ে বাবু পছন্দ করে না সেটা আমি বুঝতে পারি না।মেয়ে বাবু পছন্দ করে না তা কিন্তু না উনি আমার বড় মেয়ে রাত্রি দুনিয়াতে আসার পরে অনেক খুশি ছিলেন কিন্তু পরপর দুইটা মেয়ে আরেকটা কিছুদিন পরে দুনিয়াতে আসবে হয়তো উনি আর আগের মতো খুশি হতে পারেন নাই।আমার ছোট মেয়েটার ভাগ্য মনে হয় খারাপ সেই দুনিয়াতে আসবে অথচ তারা বাবা তাকে দেখার জন্য আসবে না তার পাশে থাকবে না।আচ্ছা তিনটা মেয়ে হলে ক্ষতি কি!আমি বুঝি না,মেয়েরা’তো তাদের রিজিক নিয়ে দুনিয়াতে আসবে।মহান অাল্লাহ্ তাদের রিজিক দিবে তাহলে এত ভয় কিসের!আমরা’তো পাঁচ বোন ছিলাম কই কখনো আমার বাবার মুখে হায় হতাশ শুনি নাই বাবা সবসময় ভাবতেন তার ঘরে পাঁচজন রাণী আছেন।আসলেই পৃথিবীর সব পুরুষ এক তো আর হয় না।
.
এই দিকে ধীরেধীরে বড় হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে।রাত্রি মেয়েটা বাবা বাবা করে প্রায় সময় কান্নাকাটি করে যদিও সেই বাবার অাদর পেয়েছে তাই তার বাবাকে ভালোবাসে তাকে দেখার জন্য মন চটপট করে।আমার স্বামী তার মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বললেও আমার সাথে তেমন একটা কথা বলতে চায় না।কেউ একজন বলেছিলো-
.
_স্ত্রীকে কোনো কারণে শাস্তি দিতে চাইলে তাহলে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দাও তাহলে দেখবে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরব শাস্তি।
.
এই শাস্তি শরীরে কোনো দাগ বসে না তবে প্রায় সময় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় আমার তো তাই মনে হচ্ছে।আমার স্বামী আমাকে এই কষ্ট দিচ্ছে তাকে একটা ছেলে সন্তান দিতে পারি নাই তাই আমার এবারো মেয়ে সন্তান হবে।
.
রাত্রি তার বাবাকে অনেক রিকুয়েস্ট করাতে আমার স্বামী রাত্রিকে বলে-
.
_আচ্ছা মা কাল সকালে বাড়িতে আসবো।
_সত্যি বাবা?
_হ্যাঁ সত্যি।
.
সব মেয়ে তার বাবার মুখ থেকে মা ডাক হয়তো শুনে না যেমন আমার মেঝো মেয়ে আর ছোট মেয়ে শুনবে না। অনেকগুলো মেয়ে বাবু হলে কিছু কিছু পরিবারে এমন হয় বাবার মুখে মা ডাক শুনে না।
.
সকাল হলে আমার স্বামী বাড়িতে আসে তাও দুই দিনের জন্য প্রতিবার আসার সময় উনি আমার পছন্দের খাবার ফুচকা নিয়ে আসতো তবে এবার নিয়ে আসে নাই তবে আমি খুশি আমার স্বামী আসছে তাতে।আমার স্বামী ফোন রেখে বাথরুমে গেলে তখন তার ফোনটা বেজে উঠে, স্ক্রিনে সুন্দর করে লিখা-My Heart Arshi ❤
.
আরশির নামটা দেখে আমার নিশ্বাসপ্রশ্বাস কেমন জানি থমকে গেলো ও আমার চাচাতো’বোন হয়ে আমার এতবড় ক্ষতি করেছে এই জন্য কাজিন’দের সাথে স্বামীকে বেশি মিশতে না দেওয়া ভালো।অারশির যখন আগের স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে তখন এই সুযোগে আমার স্বামীকে বিয়ে করে নেয়।অারশি ইচ্ছা করলে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে পারতো কারণ সেই সুন্দর,শিক্ষিত, ভূমি অফিসে জব করে কিন্তু সেই আমার চাচাতো’বোন হয়ে আমার ক্ষতি করলো।তবে আমি মন থেকে দোয়া করি অারশি যেনো আমার স্বামীর মনের অাশাটুকু পূরণ করে অামার স্বামীর বংশের প্রদীপ যেনো একটা ছেলে বাবু দুনিয়াতে আসে।
.
দুইদিন শেষ হয়ে গেলে আমার স্বামী চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আমি আমার স্বামীকে বলি-
.
_আর কিছুদিন থাকতে পারবেন না?
_না কাজ আছে দোকানে,কিন্তু কেন?
_আমি প্যাগনেন্ট কিছুদিন পরে আমার মেয়ে দুনিয়াতে অাসবে এই সময় আপনার ভরসা আমার অনেক দরকার।কারণ আপনি ভরসা দিলে আমার ভয় লাগে না।
.
আমার স্বামী মেয়ের কথা শুনে চোখেমুখ লাল হয়ে গেলো রাগে।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভারী কণ্ঠে বলে-
.
_ আমাকে যেতে হবে,চট্টগ্রামে কাজ আছে পরে আসবো সমস্যা নাই।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
.
কি জানি আমার স্বামী আমার ছোট মেয়েকে দেখার জন্য আসে কি না।রাত্রি তার বাবার ব্যাগ কাঁদে নিয়ে এগিয়ে দিতে গেছে ব্রিজ পর্যন্ত কিছুদূর গেলে রাত্রি দৌড়ে দৌড়ে এসে বলে-
.
_আম্মু আম্মু বাবা বলছে কাবিননামা দিতে।
.
আমার রাত্রি মেয়েটা’তো জানে না কি জিনিস এই কাবিননামা।আর তার বাবা এই কাবিননামা দিয়ে কি করবে সেটা যদি জানতো তাহলে জীবনেও আমার মেয়ে তার বাবার হাতে কাবিননামা দিবে না।
.
চলবে