মেহেরজান পর্ব-৭+৮

0
439

#মেহেরজান
#পর্ব-৭
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

কিছুক্ষণ আগেই শ্মশানে নিজের বাবাদের মুখাগ্নি করে এসেছে অর্ণব আর শমিত। একদিকে আম্রপালি একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন। চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ঝরছে। আরেকদিকে অনুরাধা বিলাপ করে কাঁদছেন। খবর পেয়েই চলে এসেছেন তিনি। শকুন্তলা তাকে সামলাতে ব্যস্ত। কেউ যেন তাকে ধরে রাখতে পারছেন না। একটু পর পরই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। নিজের মায়েদের এমন অবস্থায় কি করবে তা নিজেরাই বুঝতে পারছে না অর্ণব শমিত। দুজনের চোখই অশ্রুসিক্ত। অর্ণব একটু পর পর পাঞ্জাবীর হাতায় চোখ মুছে নিচ্ছে। কাল পর্যন্ত হেসেখেলে বাড়ানো ছেলে দু’টো যে আজ এমন কঠিন সময়ের সম্মুখীন হবে তা কেইবা জানতো। শমিত দৌঁড়ে অনুরাধার কাছে গেল। রানী আর তরু মিলে বাচ্চাদের সামলাচ্ছেন। তরু এসে শকুন্তলাকে বললেন,

“ওর তো মনে হয় খিদে পেয়েছে ছোট বউদি। তাই এতো কাঁদছে। কি করবো?”

“আমার কাছে দে।”

চিত্রাকে নিয়ে শকুন্তলা তার ঘরে চলে গেলেন। অর্ণব এসে আম্রপালির কাছে বসল। সবাই অনুরাধাকে সামলাতে ব্যস্ত। আম্রপালির খেয়াল যেন কারও নেই। সে একা এক কোণায় বসে আছেন। অর্ণব আম্রপালির চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললো,

“মা, কেন কাঁদছেন আপনি? একদম কাঁদবেন না। আপনার একেকটা অশ্রুকণা যে আমার বুকের উপর বিশাল একেকটা পাথর হয়ে পরে।”

অর্ণবের এমন কথা তার দিকে ঘুরে তাকালেন আম্রপালি। এই ছোট্ট ছেলের মুখ দিয়ে এমন কথা কিভাবে বের হলো? এতো বড় কবে হয়ে গেল সে? নাকি পরিস্থিতি বানিয়ে দিল?

“আপনি কাঁদবেন না মা। বাবা চলে গিয়েছে তাতে কি? আপনার খেয়াল রাখার জন্য আমি তো আছি।”

আম্রপালি অর্ণবকে বুকে জাপ্টে ধরে আর্তনাদ করে উঠলেন।

চিত্রাকে খাইয়ে ঘুম পারানো মাত্রই সাবিত্রী শকুন্তলার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।

“মা, তুমি কখন এলে?”

“এইমাত্রই এসেছি।”

“বাবা কই?”

সাবিত্রী খাটে বসতে বসতে বললেন,

“তোর বাবা নিচে আছে। একটু বসতে দে তো এখানে আরামে। সারা বাড়ি ভরা লোকজন। এই গরমে আর কিছুক্ষণ ওখানে থাকলে মরেই যেতাম।”

“তুমি তাহলে বসো এখানে। আমি নিচে যাই।”

“তুই কই যাচ্ছিস? বস না এখানে। এতোদিন পর মায়ের সাথে দেখা হলো আর তুই চলে যাচ্ছিস?”

“কি করবো তাহলে? ওদিকে হয়তো দরকার পরতে পারে আমার।”

“বাকিরা সামলে নিবে ওদিক। তুই এখানে বস কিছুক্ষণ। তা হ্যা রে, জামাই আসবে না?”

“খবর পাঠানো হয়েছে। আসবে কিনা জানি না।”

“আসবে আসবে। সেই বিলেত বলে কথা। আসা যাওয়া কি মুখের কথা নাকি যে হুটহাট করে চলে আসবে? মেয়ের জন্মের খবর শুনে আসেনি তো কি হয়েছে, ভাইয়ের মরার খবর শুনে ঠিকই দৌঁড়ে আসবে।”

দরজায় কারও কড়া নাড়ার শব্দ হলে শকুন্তলা গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।

“কি হয়েছে রানী?”

“ওই শ্মশানের লোকেরা এসেছে টাকা নিতে। কি করবো?”

“দেরাজের চাবি তো দিদির কাছে। তার কাছে গিয়ে চা।”

“এখন বড় বউদির কাছে চাইবো?”

“ঠিক আছে। তুই গিয়ে ওদের বসতে বল। আমি আসছি।”

“আচ্ছা।”

শকুন্তলা দরজা লাগিয়ে এসে নিজের আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করলেন। সাবিত্রী বলে উঠলেন,

“দেরাজের চাবি এখনো আম্রপালির কাছে কেন?”

“মানে? বড় বউদের কাছেই তো থাকে।”

“তা থাকে। কিন্তু তার জন্য বড় বউদের দায়িত্বও পালন করতে হয়।”

“দিদি করেনি?”

“করেছে কিন্তু এক বছর ধরে যে স্বামী বিছানায় পরা ছিল, সংসারের কোনো খরচ চালিয়েছে? পুরো সংসার তো তোর বরের টাকায় চলে। এখন তো আবার আরও কতগুলো এসে জুটেছে। অনুরাধা আর ওর ছেলে। আর ওই বাচ্চা দুটোকে কই থেকে এনেছেরে? এটা বাড়ি নাকি অনাথাশ্রম? বাচ্চা তুলে এনে ঘরে তুললেই হলো। ওদের খরচ কি আকাশ থেকে পরবে?”

“তুমি বসো। আমি টাকাটা দিয়ে আসি।”

“কিরে? এতগুলো কথা বললাম কিন্তু তুই কানেই তুললি না কিছু?”

“কি বলবো আবার?”

“তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।”

“আমার সংসারটা নাহয় আমাকেই দেখতে দাও মা।”

শকুন্তলা চলে যেতে উদ্যত হলে সাবিত্রী তাকে আঁটকালেন।

“আরে দাঁড়া না। পুরো কথা তো শোন। এতোক্ষণ যা বলেছি ভুলে যা। এখন যা বলি মন দিয়ে শোন। আম্রপালি ওই বাচ্চা দুটোকে কই থেকে এনেছেরে?”

“পদ্মা দিদির কোনো এক বান্ধুবীর মেয়ে। কেউ নেই তাই নিয়ে এসেছে। আর মোহিনীকে বাগানবাড়ি থেকে এনেছে।”

“বাগানবাড়ি মানে ওই বাইজীবাড়ি?”

“হ্যাঁ।”

“ছিছিছি। আম্রপালির মাথা কি গেছে নাকি যে ওখান থেকে বাচ্চা নিয়ে এসেছে? শোন আমি কি বলি।”

“কি?”

“বাড়িতে পাঁচ পাঁচটা বাচ্চা। সবার ভরণপোষণের দায়িত্ব তো তোর বরকেই নিতে হবে। তাই বলছি কি পারলে এদের বিদায় কর। পদ্মাকে আম্রপালি কোথাও যেতে দেবে না। মোহিনীকে বের করতে হবে। কিছু একটা করতে হবে যেন যেখান থেকে নিয়ে এসেছিল সেখানেই দিয়ে আসে।”

“যদি না দেয়?”

“দেবে দেবে। আর…”

“আর?”

“তোর বর তো বিদেশে একা থাকে। তা এবার এলে অর্ণব আর শমিতকে পাঠিয়ে দে না তার সাথে।”

“পাগল নাকি? দিদি কখনো মানবে না।”

“আরে আমি তো ওদের ভালোর জন্যই বলছি। এখানে থাকলেও ওদের দায়িত্ব তোর বরের আর ওখানে থাকলেও তাই। এতে তোরও ভালো।”

“আমার কি ভালো?”

“ভালো নয় তো কি? বরকে একা ছেড়ে দিয়েছিস। যদি ওখানে কিছু করে বসে?”

শকুন্তলা একটু ভেবে বললেন,

“দিদি মানবে না। অর্ণবকে কখনো দূরে যেতে দেবে না তার থেকে।”

“মানবে। আমি বোঝাবো।”

“কিভাবে?”

“পরেই দেখিস।”
.
.
নিস্তব্ধ রজনীতে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে বিছানায় বসে আছেন আম্রপালি। নিজের শাঁখা, সিঁদুর, রঙিন শাড়ী ছেড়ে গায়ে সাদা থান জড়িয়েন তিনি। পাশেই মোহিনী আর পদ্মাবতী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। খোলা জানালা দিয়ে জোৎস্না এসে বাচ্চা দুটোর মুখে লাগছে। আম্রপালি অপলক দৃষ্টিতে দেখে চলেছেন তা। সামনে কি হবে জানা নেই আম্রপালির। তবে এইকয়দিনেই বাচ্চা দু’টোর প্রতি অসম্ভব পরিমাণে মায়া জন্মে গেছে তার। টেবিলে রাখা হ্যারিকেন এর আলোও নিভু নিভু পর্যায়ে। আম্রপালি উঠে গিয়ে বোতল থেকে কেরোসিন ঢেলে দিলেন।

“আসবো আম্রপালি?”

“মাসিমা, আপনি? ভেতরে আসুন।”

সাবিত্রী ভেতরে এসে ঘুমন্ত বাচ্চা দুটোকে একবার দেখলেন।

“এতো রাতে? এখনো ঘুমাননি আপনি।”

“ঘুমাওনি তো তুমিও। আমি ঘুমাইনি তারও কারণ আছে। এই গরমে কি আর ঘুম আসে। তার উপর বিদ্যুৎ-ও নেই। ঘরে আর কতক্ষণ থাকা যায়। তাই বের হলাম। দেখলাম তোমার ঘরের দরজা খোলা। আবছা আলো জ্বলছে। বুঝলাম তুমি জেগে আছো।”

আম্রপালি কোনো উত্তর দিলেন না। হাতজোড়া একত্র করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

“তুমি কি এখন ঘুমাবে?”

“না।”

“বসো তাহলে। তোমার সাথে দুটো কথা বলি।”

আম্রপালি এসে তার সামনে বসলেন।

“আমি জানি এখন তোমার মনের অবস্থা কেমন। তোমার বয়সও বেশি না। চাইলেই আবার বিয়ে করতে পারবে।”

সাবিত্রী এমন কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন আম্রপালি। তিনি যে এরকম কিছু বলবেন তা আন্দাজ করেননি আম্রপালি। সকালে বিধবা হওয়া মেয়েকে যে রাতেই এমন কথা শুনতে হবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। সাবিত্রী বিষয়টা বুঝতে পেরেই প্রসঙ্গ পাল্টালেন।

“কিন্তু তুমি তা করবে না আমি জানি। দ্বিতীয় বিয়ে করার মেয়ে তুমি নও। তোমাকে এখন এই কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা জানি না তবুও বলছি।”

আম্রপালি কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন,

“কি কথা?”

“শুনলাম দুটো মেয়েকে নিয়ে এসেছো। ওরাই বোধহয়?”

মোহিনী আর পদ্মাবতীর দিকে ইঙ্গিত করে কথাটা বললেন সাবিত্রী।

“হ্যাঁ।”

“খুব মিষ্টি দেখতে। দুজনেই। ওরা দুজনই কি এখন থেকে তোমার কাছে থাকবে?”

“হ্যাঁ। আমার কাছেই থাকবে ওরা।”

“ভরণপোষণ করতে পারবে দুজনের?”

“মানে?”

“আমার কথা খারাপভাবে নিও না আম্রপালি। আমি সবার ভালোর জন্যই বলছি। আমি এটা বলছি না যে তুমি আমার মেয়ের সংসারে বসে বসে খাচ্ছ। এটা তোমারও সংসার। কিন্তু একা চলার সামর্থ্যটা তোমার নেই। একবছর ধরে তোমার স্বামী শয্যাশায়ী ছিল। তখন সবটা তোমার দেবরকেই দেখতে হয়েছে। কিন্তু এযাবৎ বাড়িতে মাত্র ছ’জন মানুষ ছিলে। এখন তো অনুরাধা আর ওর ছেলেও আছে। তার উপর তুমি দুটো বাচ্চাকে নিয়ে এসেছো। কি লাভ বোঝা বাড়িয়ে?”

চোখদুটো অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠেছে আম্রপালির। সাবিত্রী কি বলতে চাচ্ছেন বুঝতে কোনো প্রকার সমস্যা হচ্ছে না তার। তিনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলছেন না। সোজাসাপটাভাবেই বলছেন। যতটা বলছেন তা কথার সৌজন্যতা বজায় রাখতে। কিছু সময়ের ব্যবধান কতটা অসহায় করে দিয়েছে তাকে। একটা মানুষের চলে যাওয়া তাকে কোথায় থেকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছে তা হারে হারে টের পাচ্ছেন আম্রপালি।

“আমি বলছি না দুজনকেই রেখে আসতে। পদ্মাবতীর যে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই, যাওয়ার জায়গা নেই তা আমি ভালো করেই জানি। কিন্তু মোহিনীর তো আছে। ওকে তো যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে আসতে পারো।”

“আমি বুঝতে পেরেছি।”

“আরেকটা কথা বলবো?”

“বলুন।”

“অভ্র তো অর্ণবের বাবার মতোই। ও এবার এলে অর্ণবকেও ওর সাথে পাঠিয়ে দিলে পারো। শুধু অর্ণব না, শমিতের কথাও বলছি আমি।”

চোখে জমিয়ে রাখা অশ্রুর বাঁধ ভেঙে গেল আম্রপালির।

“কেন? ওকে বড় করার মতো সামর্থ্যও কি আমার নেই? এতোদিন কি আমি ছিলাম না?”

“আমি সেটা বলিনি আম্রপালি। বাড়িতে একটা পুরুষ মানুষ নেই একমাত্র তোমাদের ওই চাকর রামু ছাড়া। ওদের কাছে বড় হবে? এতোদিন বাবা নামক বটবৃক্ষের ছায়া ছিল। এখন তো তাও নেই। একবছর তোমার সামলানো আর বাকী জীবন তোমার কাছে বড় হওয়ার মাঝে অনেক পার্থক্য।”

কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে তা ভাবতেও পারেননি আম্রপালি।

“আমি ওদের ভালোর জন্যই বলছি আম্রপালি। অর্ণব আর শমিত অভ্রর কাছে ভালোই থাকবে। আমার বলা কথাগুলো একবার ভেবে দেখো।”

সবেমাত্র আম্রপালির ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল অর্ণব। সাবিত্রীর বলা শেষের দুই বাক্য ভালোমতোই কর্ণকুহর হয়েছে তার। আর্তনাদ করে বলে উঠলো,

“বাবা চলে যেতে না যেতেই আপনি আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন মা?”

অর্ণবের করা প্রশ্নে হতবাক হয়ে গেলেন আম্রপালি। অর্ণব যে এখনো জেগে আছে তা জানতেন না তিনি। আর কখনই বা এখানে এসে দাঁড়ালো? পদ্মাবতী চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। অর্ণব আবার বলে উঠলো,

“সেদিন দোষ করেছিলাম বলে আপনি আমাকে এতোদিন নিজের থেকে দূরে পিসির বাড়িতে রাখলেন। এবার কি দোষ করেছি যে একেবারের জন্য কাকুর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন?”

আম্রপালি অর্ণবের করা কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারছেন না। অর্ণব নিজের মতো বলে গেল,

“আপনি যদি আমাকে আবার আপনার থেকে দূরে পাঠিয়ে দেন, আমি আর কোনোদিনও আপনার কাছে ফিরবো না মা। মনে রাখবেন, আমি আর কখনো আপনার কাছে ফিরবো না।”

চলবে…

#মেহেরজান
#পর্ব-৮
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

চারদিকে একটা উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে। করবে নাই বা কেন। দূর্গাপূজো বলে কথা। আজ অষ্টমীর শেষ। কিছুক্ষণ বাদেই সন্ধিপূজো। সকলের মনই আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। তবে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম আছেন একজন। আম্রপালি, যার আনন্দের কারণটা সবার থেকে ভিন্ন। তার খুশির বাঁধ ভেঙেছে আজ। আজ বিশ বছর পর নিজের ছেলেটাকে দেখবে সে। অর্ণবের সেদিন এর বলা কথাগুলো এখনো কানে বাজে তার। অর্ণব বারবার চিৎকার করে বলছিল “আমি আর আপনার কাছে ফিরবো না মা”। হলোও তাই। অভ্র বাবু দেশে ফেরার একমাসের মাথায় অর্ণবকে নিয়ে বিলেত চলে গেলেন। আম্রপালির ওপর অভিমান করে জেদ ধরেই চলে গেল সে। অর্ণব নিজের কথা রেখেছে। বিগত বিশ বছরে না ফিরেছে, না কোনোরকম যোগাযোগ করেছে আম্রপালির সাথে। এতোগুলো বছরে অসংখ্য চিঠি পাঠিয়েছেন আম্রপালি। কিন্তু প্রতিবারের মতো কখনোই তার জবাব আসেনি। ইশশশ! ছেলেটাকে যদি সেদিন একবার আঁটকাতে পারতেন তিনি। নিজেকে বড্ড বেশি বোকা মনে হয় আম্রপালির। শেষ মূহুর্তে সেও যদি অনুরাধার মতো বেঁকে বসতেন, শমিতের মতো অর্ণবকেও যেতে না দিতেন তাহলে আজ তার ছেলে তার কাছে থাকতো। কেমন মা সে? নিজের ছেলেকে নিজের থেকে দূরে করে দিলেন। ভেবেছিলেন আর কোনোদিন হয়তো নিজের ছেলেকে দেখতে পারবেন না তিনি। কিন্তু ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনেছেন। তাই তো এতোগুলো বছর পর নিজের ছেলেকে ফিরে পাচ্ছেন। সেদিন দুঃখে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছিল, আজ আনন্দে হচ্ছে। মনে মনে অসংখ্য কথা চিন্তা করতে করতে তার ধ্যান ভাংলো দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে।

” ডেকেছিলেন মামী?”

“হ্যাঁ, ভেতরে আয়। পদ্মা কইরে?”

শমিত ভেতরে না এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়েই উত্তর দিলেন।

“পদ্মা তো বাড়িতে নেই।”

“কই গিয়েছে সে?”

“গিয়েছে হয়তো কোথাও। মোহিনীর সাথে।”

“খুঁজে নিয়ে আয় তো।”

“বাচ্চা নাকি ও? খুঁজতে যাবো কেন?”

“আহ। এতো কথা বলিস কেন? বাচ্চা নয়তো কি হয়েছে? কাজকর্ম তো সব বাচ্চাদের মতোই করে। এখন কথা না বাড়িয়ে ডেকে আন ওকে। শকুন্তলা সেই সকাল থেকে খুঁজছে ওকে।”

“আচ্ছা।”

“ওমা, ওমন হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? জলদি যা।”

শমিত একপ্রকার দৌঁড়ে চলে গেলেন।
.
.
.
আলতা রাঙা নিটোল পায় নুপুরের রুনুঝুনু ধ্বনির আলোড়ন তুলে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে দৌঁড়ে চলেছে পদ্মাবতী। পরনে লাল পাড়ের সাদা শাড়ী। মাঠের মাঝখানে একটা আমগাছ। তাতে দোলনা পাতা। পদ্মাবতী দৌঁড়ে গাছের নিচে এসে ধপ করে দোলনায় বসে পরলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে পদ্মাবতী বললেন,

“সেই সকালে ছোটমা বলে রেখেছিল শ্বেতপদ্ম নিয়ে আসতে। কম পরেছে ক’টা। তখন থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কখন থেকে তোকে খুঁজছি জানিস? ক’টা পদ্ম তুলে এনে দে না।”

উপর থেকে জবাব এলো না। পরিবর্তে তেঁতুলের কতোগুলো বিচি এসে পরলো পদ্মাবতীর উপর। চকিতে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।

“কিরে? কি বলছি তোকে শুনেছিস? কথা কানে যাচ্ছে না? কি খাচ্ছিস? দে তো আমাকে। এই মোহিনী।”

মোহিনী কতোগুলো তেঁতুল পদ্মাবতীর দিকে ছুড়ে মারতেই পদ্মাবতী খপ করে তা ধরে ফেললেন।

“আমগাছে চড়ে বসে তেঁতুল খাচ্ছিস? আর কোনো কাজ নেই তোর?”

এবার জবার এলো।

“না।”

“তাহলে আমাকে ক’টা পদ্ম তুলে দে?”

কথাটা বলেই পদ্মাবতী আবার দোলনায় বসে পরলেন।

“পারবো না।”

“কেন পারবি না? তুই জানিস আমি সাঁতার জানি না। এমন করছিস কেন মোহিনী? দে না একটু এনে।”

“তোর সব কাজ কি আমাকে করতে হবে? মাসে কত টাকা বেতন দিস আমাকে?”

“আমার কাছে টাকা চাইছিস তুই? আমার যা আছে সবই তো তোর। যা নিতে মন চাইবে নিয়ে নিস।”

“গাছে উঠে আয়।”

“পাগল নাকি? গাছে উঠবো তাও আবার শাড়ী পরে? আমি গাছে উঠতে পারি না জানিস না? তুই নিচে আয়।”

মোহিনী লাফ দিয়ে নিচে নামলেন।

“কি আছে তোর?”

“কিছুই না।”

“এখন নেই তো কি হয়েছে। যখন হবে তখন ছিনিয়ে নিবো দেখিস।”

“কি নিবি?”

“তোর সব।”

“আচ্ছা নিস। এখন ফুল এনে দে।”

এমন সময় দূর থেকে কারও ডাক কানে আসলো তাদের।

“এই পদ্মা মোহিনী।”

এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেলেন দূরে দাঁড়িয়ে শমিত হাত নেড়ে ডাকছেন তাদের।

“সেরেছে। শমিতদা খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছে এখানে। ফুল না নিয়ে বাড়ি গেলে ছোটমা অনেক বকবে।”

“বকবে না। চল আমার সাথে।”

মোহিনী পদ্মাবতীর হাত ধরে উল্টো দিকে দৌঁড় লাগালেন। শমিত দূর থেকে তা দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেলেন।

“এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”

“বাড়ির পেছন দিক দিয়ে ঢুকে দিঘি থেকে পদ্ম তুলে দেব। চল এবার।”
.
.
.
ঘাট বাধানো জল ভরা দিঘি। অসংখ্য পদ্ম ফুটে আছে। একগুচ্ছ শ্বেতপদ্ম নিয়ে দিঘি থেকে উঠে এলেন মোহিনী। সারা গা আর চুল থেকে টপ টপ করে পানি ঝরছে। মোহিনী এসে দাঁড়াতেই পদ্মাবতী তৎক্ষনাৎ পদ্মগুলো নিজের হাতে নিয়ে নিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন চিত্রা।

“কিরে পদ্মা? তুই এখানে কি করছিস? মা কখন থেকে তোকে খুঁজছে জানিস।”

“পদ্ম তুলতে এসেছিলাম।”

“হ্যা রে মোহিনী, মা তো পদ্মাকে পাঠিয়েছিল পদ্ম আনতে।”

“আমিই তো এনেছি।”

“তাই তো জল মোহিনীর গা থেকে ঝরছে। তাই না?”

পদ্মাবতী মোহিনীর দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার চিত্রার উদ্দেশ্যে বললেন,

“ছোটমাকে কিছু বলিস না চিত্রা। জানিসই তো ছোটমা কেমন। খুব বকবে।”

“আচ্ছা বলবো না। বাড়িতে চল।”

“মোহিনী, তুইও চল আমার সাথে। ভিজে গেছিস একদম। আমার একটা শাড়ি দেবো বের করে। ভেজা জামা ছেড়ে ওটা পরে নিস।”

“না, তুই আর চিত্রা যা। আমি এখন আর বাড়িতে যাবো না। পরে আসবো।”

“সন্ধ্যায় আসবি তো?”

“না, আজ আর যাবো না। বাড়ির সামনের দিকে এতো ভীড় কেনরে?”

পদ্মাবতী আর চিত্রা তাকিয়ে দেখলেন আসলেই ভীড়। চিত্রা বললেন,

“দাদা এসেছেন মনে হয়।”

“শমিতদা?”

“না, অর্ণব দাদা।”

পদ্মাবতী বললেন,

“আরে বড়মার ছেলে। আজ বিশ বছর পর এসেছে। কাকুর মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া থাকলেও সে কোনোদিন আসেনি এখানে। দেখবি নাকি?”

“না। তোরা দেখেছিস?”

“কিভাবে দেখবো? আজই তো এলো।”

“আচ্ছা। তোরা দেখ। আমি পেছনের দিক দিয়েই চলে যাচ্ছি।”

চিত্রা আর পদ্মাবতী চলে গেলেন। মোহিনী কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন। কি ভেবে যেন ঘুরে আবার বাড়ির সামনের গেইটের দিকে যাওয়া শুরু করলেন।

মোহিনী উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। না, কিছুতেই দেখা যাচ্ছে না। এতো ভীড়! একটামাত্র মানুষ এর জন্য এতোগুলো মানুষের দেখতে আসার কি দরকার ভেবে পেলেন না মোহিনী। কিন্তু তিনি নিজেও তো দেখতে এসেছেন। হয়তো তার মতো বাকিরাও একই কৌতূহল মেটাতে এসেছেন। মোহিনী পায়ের গোড়ালি উঁচু করে আরেকবার দেখার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকির পর দেখতে পেলেন গেইটেই বাইরে একটা সাদা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনেই কালো স্যুট পরিহিত এক যুবক। দেখে অনেক লম্বা মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই চেহারা দেখতে পাচ্ছেন না। যুবকটি লম্বা হলে কি হবে, তিনি নিজে তো খুব একটা লম্বা নন। তাই এতো উঁকিঝুঁকির পরও দেখতে পাচ্ছেন না। মোহিনী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আর বৃথা চেষ্টা করলেন না।

বাড়িতে ফিরতেই মোহিনী দেখলেন এক মেয়েকে অন্য দুজন মেয়ে ধরে রেখেছে জোর করে। দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি বিবাহিত। চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন,

“থাকবো না আমি এখানে। তোদের মতো মেয়েদের সাথে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। বিয়ে কি, সংসার কি এসবের তোরা কি জানিস? তোরা তো শুধু নেচে দু পয়সা কামাতে জানিস। ছাড় বলছি আমাকে। তোদের ওই নোংরা হাত দিয়ে ছুবি না আমাকে।”

রজনী মোহিনীকে আসতে দেখে ওর কাছে এগিয়ে গেল। রজনী তারানার খাস মেয়ে। প্রমিতা এখন নেই। তার জায়গাটা এখন রজনীই নিয়েছে।

“কিরে? এমন ভিজলি কি করে?”

“দিঘিতে নেমেছিলাম পদ্ম তুলতে। এই মেয়ে কে?”

“সৌদামিনী।”

“কোথায় পেলে?”

“নদীতে ডুবে যাচ্ছিল। তুলে নিয়ে এসে শুনি মরতে গিয়েছিল।”

“কেন?”

“বাচ্চাকাচ্চা হয়না তাই স্বামী নতুন আরেকটা বিয়ে করে একে ছেড়ে দিয়েছে। তাই গিয়েছিল নদীতে ঝাপ দিয়ে ডুবে মরতে।”

“দিতে তাহলে মরে যেতে।”

“কি করবো বল। এতো কঠিন হতে তো পারি না। আমাদের মনে যে তোর থেকে মায়াদয়া একটু বেশিই। তুই আর ভেজা কাপড়ে থাকিস না। ঠান্ডা জ্বর বাঁধিয়ে বসলে আম্মা রেগে যাবে। দ্রুত গিয়ে শুকনো কাপড় পরেনে। আজ জলসা হবে মনে আছে তো?”

“হ্যাঁ।”
.
.
.
এখন সন্ধ্যেবেলা। চারদিকে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, কাশরঘন্টা আর ঢাকের ঢ্যাং কুর কুর শব্দ। সাথে ধূপের গন্ধ। এরই মাঝে ছাদে মদের বোতল আর সিগার নিয়ে বসেছেন অর্ণব। সাথে বসেছেন শমিত। দেশে ফিরে নিজের সেই পুরনো সাজ পোশাক ধুতি-পাঞ্জাবীতে ফিরলেও স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি। বিলেতে থাকতে হয়তো প্রতিদিনের সন্ধ্যার সব কাজের তালিকায় এটাই থাকতো। পেয়ালায় মদ ঢেলে এক চুমুকে খেয়ে আবার সিগারে টান দিলেন অর্ণব। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক পুরনো অভ্যেস।

“মদের নেশায় পেলো কিভাবে তোমাকে?”

অর্ণব আরেকটা পেয়ালা শমিতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“বিশ বছরে দূরত্ব কি এতোটাই বেড়ে গেছে যে তুই থেকে তুমিতে চলে গেছিস?”

“আমরা তাহলে আগের মতোই বন্ধু বল?”

“এই নে। খা।”

“আমি এসব খাই না।”

“খাস না? ভালো তো। আমার সাথে তুই বিলেতে গেলে কাকুর চক্করে তোরও এসবের অভ্যেস হয়ে যেত।”

“ছোট মামা এসব খায়?”

“সেও খাওয়া শিখেছিল এক বিদেশিনীর চক্করে পরে।”

“বলিস কি? ওখানে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কও ছিল মামার? তোর কারও সাথে হয়নি সম্পর্ক?”

“অর্ণব বিদ্রুপসূচক হাসলেন। উঠে ছাদের কিনারে গিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দূরে কোথাও ইশারা করে বললেন,

” ওখানে এতো আলোকসজ্জা কেন? আর গ্রামের অন্যান্য বাড়িগুলো থেকে এতো দূরে কেন ওই বাড়িটা?”

শমিত উঠে এসে অর্ণবের পাশে দাঁড়ালেন।

“ওটা বাইজিবাড়ি। আজ জলসা হবে সেখানে। অন্যান্য গ্রাম, শহর থেকে মানুষ আসবে অনেক। শুনেছি ওখানকার মেয়েরা নাকি অনেক রূপবতী হয়।”

“গেছিস কখনো?”

“উহু।”

“তাহলে বলিস কিভাবে যে অনেক রূপবতী হয়?”

“শুনেছি। আর আমি ওখানে গিয়েছি জানলে মা বাড়ি থেকে বের করে দেবে।”

“আর কতদিন মায়ের আঁচল ধরে থাকবি? এখন মায়ের আঁচল ধরে আছিস, বিয়ের পর বউয়ের আঁচল ধরবি। নিজে কি করবি?”

“ব্যাপার আঁচল ধরার না। তবুও আমি যাইনি। আর মোহিনী কম কিসে? সেও তো অনেক সুন্দরী।”

“মোহিনী কে?”

“পদ্মার বান্ধবী। মোহিনীই তো ওখানকার একমাত্র মেয়ে যে সারা গ্রাম চড়ে বেড়ায়। কারও সাহস নেই আঁটকানোর। অন্য মেয়েদের তেমন একটা দেখা যায় না। কিন্তু মোহিনীকে সবাই চেনে।”

“ওহহহ।”

“তুই কি ওখানে যাওয়ার কথা ভাবছিস নাকি? কি রে, যাবি নাকি একবার?”

অর্ণব পুরো মদের বোতল শেষ করে বললেন,

“চল।”

বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই অর্ণবের চোখ পরলো ঘুঙুর পায়ে নৃত্যরত এক নর্তকীর উপর। তবলার সাথে তাল মিলিয়ে নেচে চলেছে। গা ভরা গয়না আর ভারি ঘাগড়া পরা। অর্ণব ভেবে পেলেন না এতো ভারি পোশাক সে সামাল দিচ্ছে কি করে। সাত বছর বয়সী এক মেয়ে এসে অর্ণবের হাত ধরে তাকে ইশারায় নিচু হতে বললো। অর্ণব নিচু হলে সে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমরা এখানে মোহিনী দিদির নাচ দেখতে এসেছো না?”

অর্ণব একটু ভেবে উত্তর দিলেন,

“হ্যাঁ। নাম কী তোমার?”

“আমি পরী। এসো। এখানে বসো।”

মেয়েটি অর্ণব আর শমিতকে টেনে নিয়ে এসে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে চলে যেতেই শমিত বললো,

“উঠে আয়। পেছনের কোণায় চল। এখানে বসলে কেউ চিলে ফেললে মায়ের কাছে খবর পৌঁছাতে দেরি হবে না।”

অর্ণব বিনাবাক্য ব্যয়ে উঠে শমিতের সাথে পেছনে গিয়ে বসলেন।

“যে মেয়েটাকে নাচতে দেখছিস, ওই মোহিনী।”

অর্ণব এবার ভালো করে মোহিনীর দিকে তাঁকালেন। শমিত ঠিকই বলেছিলেন। মেয়েটা দেখতে আসলেই অনেক রূপবতী।

“বড় মামী মানে তোর মা ওকে অনেক আদর করেন। হ্যাঁ রে, মোহিনীকে তো তোর চেনার কথা। তুই চলে যাওয়ার আগে একমাস তো ও আমাদের বাড়িতেই ছিল। পরে বড় মামী ওকে রেখে গেছেন এখানে। আমরা দুজন পদ্মা আর মোহিনীর সাথে কত্তো খেলতাম। ছোটবেলার কথা মনে নেই তোর?”

শমিতের এমন কথায় হঠাৎ করেই অর্ণবের ছোটবেলার অনেক স্মৃতিই মনে পরে গেল। আসলেই তো সে মোহিনীকে চেনে। কি জোরেই না অর্ণবের গালে খামচে ধরেছিল সে। অর্ণবের চুল টেনে ধরা, গাল খামচে ধরা তো তার নিত্যদিনকার কাজ হয়ে উঠেছিল। পদ্মা এমন ছিল না। সে ছিল খুব শান্ত। কিন্তু মোহিনী একদমই তার উল্টো। প্রচন্ড চঞ্চল একটা মেয়ে। কথাগুলো মনে পরতেই অর্ণব অজান্তেই হাত দিয়ে নিজের গাল স্পর্শ করে বললেন,

“মনে আছে।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে