মেহেরজান পর্ব-৪১+৪২

0
401

#মেহেরজান
#পর্ব-৪১
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

পদ্মাবতী চা দিয়ে গেলে অর্ণব খবরের কাগজ হাতে নিয়ে চা খেতে লাগলেন। শান্তি দেবী নিজের ঘর থেকে বের হয়ে সবাইকে একবার দেখে এসে অর্ণবের পাশে বসলেন।

“কী ঠাম্মা? চা খাবে নাকি খবর পড়বে?”

“ওসব দেশ বিদেশের খবর জেনে আমার কী লাভ?”

“তাহলে চা খাবে?”

“না, ওটা তুই-ই খা। তারচেয়ে খবরের কাগজটা পড়ে আমাকে বরং দুটো খবরই শোনা।”

“এই যে বললে এতে তোমার লাভ নেই?”

“শুনলে ক্ষতিও তো নেই। তুই শুরু কর বলা। আমি শুনি।”

অর্ণব পড়তে যাবেন তার আগেই শকুন্তলা বললেন,

“খবরের কাগজ থেকে আর কী খবর শুনবেন মা? ওর থেকে বড় খবর তো পাড়ায় হয়ে গেছে।”

“কী হয়েছে?”

ছাদে থেকে নেমে এলেন আম্রপালি। শকুন্তলার বলার আগেই তিনি প্রশ্ন করলেন,

“বাইরে পুলিশ দেখলাম। কেন এসেছে?”

শকুন্তলা বললেন,

“সেটাই তো বলছিলাম। আরে ওই রাঘব মাস্টার দুমাস আগে আরেকটা বিয়ে করলো না? তো ওর আগের বউ নতুন বউকে কাল রাতে মে/রে ফেলেছে। মে/রে ফেলেছে তো ফেলেছেই আবার আজ পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বলছিল সতীনের সংসার করার চেয়ে ম/রে যাওয়া ভালো। নিজে তো ম/রতে পারবে না। ওতো সাহস নেই। তাই সতীনটাকেই মে/রে ফেলেছে।”

পদ্মাবতী নিজের কাজ ফেলে অবাক হয়ে শকুন্তলার কথা শুনছেন। শেফালীও নিজের কাজ থামিয়ে দিয়েছেন এ কথা শুনে। আম্রপালি বলে উঠলেন,

“কী সাংঘাতিক কান্ড!”

অর্ণব বলে উঠলেন,

“মানে কী? তাই বলে একেবারে খু/ন করে ফেলবে?”

শান্তি দেবী খিকখিক করে হেসে উঠলেন। তার হাসিতে সবাই ভ্রুকুটি করে চেয়ে রইলেন। তিনি বললেন,

“বেশ হয়েছে। উচিত শিক্ষা হয়েছে ওই রাঘব মাস্টারের। ঘরে বউ বাচ্চা থাকতে আরেকটা বিয়ে করতে গেল কেন? পুরুষ মানুষ বলে যা খুশি তাই করবে নাকি? এজন্যই বলে সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়। নিজের সুখের সংসার নিজেই নষ্ট করেছে। এখন এ-কূলও গেল, ও-কূলও গেল। বিয়ে করার স্বাদ একদম ঘুচে গেছে ব্যাটার। এবার থাকুক বউ ছাড়া। দেখুক কেমন লাগে।”

শান্তি দেবী হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
.
.
.
বাইরে দুটো বিড়ালছানা খেলছে। একদম বাচ্চা। আশেপাশে তাদের মাকে দেখা যাচ্ছে না। মোহিনী জানালায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে ওদের খেলা দেখছেন। আচ্ছা, ছানা দুটোকে কি তিনি বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসবেন? একদম না, এরপর দেখা যাবে তারানা তাকেই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। বিড়ালছানা দুটোকে বাড়িতে আনার চিন্তা যেভাবে এসেছিল আবার সেভাবেই চলে গেল মাথা থেকে। পেছন থেকে ঊর্মিলা বললেন,

“তোর গয়নাগুলো তো খুব সুন্দর মোহিনী। এভাবে অযত্নে ফেলে রেখেছিস কেন?”

মোহিনী বাইরে দৃষ্টি রেখেই বললেন,

“তোর পছন্দ হলে রাখতে পারিস। আমি আর ওগুলো পরিনা এখন।”

“নুপুরও?”

“না। নুপুর নয়। ওগুলো অর্ণব দিয়েছিলেন আমায়। ওগুলো বাদে সব।”

“আচ্ছা। তুই তো এখন আর নাচ করিস না। তোর ঘুঙুরজোড়া আমাকে দিবি? আমার খুব পছন্দ ওগুলো।”

চকিতে পেছনে ঘুরলেন মোহিনী। চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

“একদম না। ভুলেও ঘুঙুরের দিকে নজর দিবি না। ওগুলো শুধু আমার। এই তুই যা তো এখন ঘর থেকে। গোছাতে হবে না তোকে কিছু। আমার যা যা লাগবে না আমি পাঠিয়ে দেবো তোর ঘরে।”

“তুই রেগে যাচ্ছিস কেন?”

মোহিনীর নিজেরও মনে হলো তিনি অযথাই রাগারাগি করলেন। যে কথাগুলো শান্তভাবেই বলা যায় সেগুলো শুধু শুধুই রাগ দেখিয়ে বললেন। মোহিনী বসে পড়লেন। ঊর্মিলার সাথে পরীও ছিল। একদম চুপ করে বসেছিল মেয়েটা। ও কখন ঘরে এসেছে বুঝতেই পারেননি মোহিনী। পরীর উদ্দেশ্যে বললেন,

“আমাকে একটু জল খাওয়া তো পরী। দেখিস, আবার জল ভরতে গিয়ে মেঝেতে ফেলিস না যেন।”

পরী জল এনে মোহিনীকে দিয়ে তার কোলে চড়ে বসলেন। মোহিনী জল খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“তুই কখন এলি?”

“তুমি ধমক দেওয়ার একটু আগে।”

মোহিনী হেসে বললেন,

“আমি কাকে ধমক দিলাম?”

“ঊর্মিলা দিদিকে।”

“তুই তো খুব দুষ্ট হয়েছিস পরী। কখন আসিস কখন যাস কিচ্ছু টের পাওয়া যায় না।”

পরী ভ্রু কুঁচকে মোহিনীর দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমার দৌঁড়াদৌঁড়িতে যখন ঘুমাতে পারতে না তখনও দুষ্ট বলতে আর এখনও বলছো। হায় ভগবান, কোথায় যাবো আমি?”

পরীর কথায় মোহিনী আর ঊর্মিলা দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। মোহিনী বললেন,

“আপনাকে কোত্থাও যেতে হবে না মালকিন। আপনার বাড়িতেই আপনি থাকবেন।”

পরী লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,

“আমার বাড়ি এটা?”

“হুম।”

“রজনী দিদি যে বলে তার কথা না শুনলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।”

ঊর্মিলা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,

“ওর ওতো সাহস আছে নাকি? ওকেই তো সেদিন বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম। শুধু আম্মা দয়া করে আবার বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছে বলে। শয়তান মেয়ে একটা। এরপর তোকে কিছু বললে তুই চুল টেনে ছিড়ে দিয়ে বলবি তোকে এ-বাড়ি থেকে বের করে দেব।”

“রজনী দিদি শয়তান মেয়ে?”

“হ্যাঁ, তোর মোহিনী দিদির সাথে খুব খারাপ করেছে ও।”

এমন সময় রজনী পরীকে ডাকতে ডাকতে খাবারের থালা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। পরীকে দেখেই বললেন,

“চল তাড়াতাড়ি। তোকে খাইয়ে দেই। এতো সময় নেই। অনেক কাজ আছে আমার।”

“যাবো না তোমার সাথে। তুমি শয়তান মেয়ে।”

“কী বললি?”

“হ্যাঁ, তোমার হাতে খাবোও না আর। তুমি কষ্ট দিয়েছো আমার মোহিনী দিদিকে।”

রজনী কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। মোহিনী বললেন,

“খাবারের থালাটা রেখে যাও। পরীকে আমি খাইয়ে দেব।”

রজনী থালাটা রেখে চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন। মোহিনী উঠে হাত ধুয়ে আসলেন। পরীকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন,

“খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকবি না বললাম। তাড়াতাড়ি খাবি।”

পরী ঘাড় কাত করলো। মোহিনীর পাশে বসে বললো,

“মোহিনী দিদি, আমাকে তোমার মতো নাচের পোশাক কবে বানিয়ে দেবে?”

“যখন তুই নাচ করবি।”

“আমি কবে নাচ করবো?”

“বড় হয়ে।”

“বড় তো হয়েছিই। আর কত বড় হবো?”

“আরও বড়। এখন শুধু নাচটা ভালো করে শেখ।”
.
.
.
মধ্যরাত…। অর্ণব ছাদে উঠে সবেমাত্র একটা সিগার জ্বালিয়েছেন। তবে তা শেষ করা হয়তো তার কপালে ছিল না। কিছুটা দূরেরই একটা দৃশ্য দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেছে। যা বোঝার বুঝে গেছেন। আর দাঁড়াতে পারলেন না তিনি। সিগারটা ফেলেই চলে গেলেন সাথে সাথে। নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একই দৃশ্য দেখছেন আম্রপালি। ভয়ে পাথর হয়ে গেছেন তিনি। গলা শুকিয়ে গেছে তার। নিচে তাকাতেই অর্ণবকে দ্রুত গতিতে দৌঁড়ে যেতে দেখলেন।

বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। পরী ভয়ে মোহিনীকে জড়িয়ে ধরে তার সাথে একদম মিশে আছে। তারানা সদরদরজা ভালো করে লাগিয়ে তার সামনে ভারী আসবাবপত্র এনে রেখেছেন। সেখানে আবার দু’জন মেয়েকেও দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন যেন কোনোমতেই কেউ দরজা ভেঙে ভেতরে না ঢুকতে পারে। রজনী বলে উঠলেন,

“ওরা মোহিনীকে মা/রতে এসেছে আম্মা। মোহিনীকে না পেলে আমাদের সবাইকে মে/রে ফেলবে। তুমি ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছো না কেন? ওর জন্য কি আমরা ম/রবো?”

“সেদিনের মা/রের কথা ভুলে গেছিস না? আবার মা/র খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে তোর?”

“কেন? আমি ভুল তো কিছু বলিনি। আমি আগেই বলেছিলাম, এই মোহিনীর জন্য আমাদের সবাইকে একদিন বিপদে পড়তে হবে। এখন হলো তো। আরও পাঠাও ওকে অন্যের স্বামীর সাথে লীলাখেলা করতে। সবার চোখের সামনে ও অর্ণবের সাথে ঢলাঢলি করছে। কেউ দেখছে না মনে করছো? গায়ের লোক ওকে ছেড়ে দেবে ভেবেছো?”

রজনীর কথা শুনে আশেপাশের কিছু মেয়েও একই কথা বলা শুরু করেছে। তারানা ধমক দিতেই আবার সব শান্ত। রজনীর দু’গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,

“তোর মুখে খুব বুলি ফুটেছে যে আজ? একদিনেরই অপেক্ষায় ছিলি বুঝি? তুই করাচ্ছিস না তো এসব? শুনে রাখ রজনী, এসবে যদি তোর হাত থাকে তো গলা কে/টে এ-বাড়িতেই পুতে রাখবো তোকে।”

তারানার কথায় রজনী একদম চুপসে গেছেন। তারানা সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,

“কাউকে যদি আমি কোনোরকম বাড়াবাড়ি করতে দেখি তো সবার আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করবো। ওদের হাতে না ম/রলেও আমার হাতে নিশ্চিত ম/রবি।”

মোহিনী চোখ বন্ধ করে পরীকে জড়িয়ে ধরে আছেন। সকলের কথাই কানে যাচ্ছে তার। কিন্তু জবাব দেওয়ার ইচ্ছে করছে না। এসবের জন্য নিজেকেই দ্বায়ী মনে হচ্ছে তার। একমাত্র তার কারণেই সবার জীবন এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। তারানা এসে জানালা সামান্য ফাঁকা করে বাইরে তাকালেন। লোকগুলোর হাতে মশাল। কয়েকজন বাড়ির চারদিকে কেরোসিন ঢালছে। তারানার মনে হলো অতীতের পুনরাবৃত্তি দেখছেন তিনি। একটা শুকনো ঢোক গিললেন তিনি। মুখ থেকে আপনা-আপনিই বেরিয়ে এলো,

“হে ঈশ্বর, রক্ষা করো আমাদের।”

মোহিনী চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

“এসবের পেছনে জানো কে আছেন তারামা? তোমার মালকিন।”

“কী সব বলছিস মেহের? মাথা ঠিক আছে তোর?”

“আমি ঠিকই বলছি। তিনি যদি এসব না করান তো কার এতো সাহস যে আমাদের মা/রতে চাইবে?”

তারানা প্রত্যুত্তরে কী বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। মোহিনী আবার বলে উঠলেন,

“তিনি এসব না করিয়ে থাকলেও, তিনি এটাই চান যে আমি ম/রে যাই। নয়তো কোথায় আজ তিনি? একবারও এলেন না আমাদের বাঁচাতে?”

পরী বলে উঠলো,

“মোহিনী দিদি, আমরা কি ম/রে যাবো?”

“কেউ ম/রবে না। অনেক হয়েছে। এবার যা করার আমিই করবো।”

পরীকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। কোনোমতে আসবাবপত্র সরিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বাইরে। কেউ আঁটকাতে চেয়েও পারলেন না। মোহিনীর চোখে যেন আগুন জ্বলছে। যার তেজ এই শত মশালের চেয়েও বেশি। এখানকার সকল অপরিচিত মুখের মাঝে তার পরিচিত একটা মুখ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। একটা গাছের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে সবটা দেখতে লাগলেন। সেদিকে কারও খেয়াল নেই। মোহিনী চিৎকার করে বললেন,

“আমাকে পোড়াতে এসেছো না তোমরা? তাহলে পোড়াও আমাকে। আমিও দেখি কার এতো সাহস। আসো, সামনে আসো।”

মোহিনীর এমন কান্ডে লোকগুলো কিছুটা হকচকিয়ে গেছে। একজন মশাল নিয়ে ছুটে আসতেই মোহিনী তার বুকে স্ব-জোরে লাথি মে/রে ফেলে দিলেন তাকে। বাকিরা ক্রুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতেই কেউ একজন সামনে এসে দাঁড়িয়ে বাঁধা দিলেন তাদের। তাকে দেখেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মোহিনী।

“অর্ণব।”

“আপনি ভেতরে যান মেহের। এদিকটা আমি দেখছি।”

মোহিনী দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে চলে এলেন। অর্ণবকে দেখা মাত্রই গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তি দ্রুত সে জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন।

আম্রপালি এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ বাদেই লোকগুলোকে ফিরে যেতে দেখলেন। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। বুঝলেন এখন সব ঠিক আছে। ঘরের ভেতরে যাবেন ঠিক এমন সময় কাউকে খুব সাবধানে বাড়ির দিকে আসতে দেখলেন। চোখ ছোট ছোট করে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলেন। চিনতে পেরেই বুকটা ধক করে উঠলো তার। অস্ফুট স্বরে বললেন,

“পদ্মা!”

অর্ণবকে দেখলেও পদ্মাবতীকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেননি আম্রপালি। তার মানে তিনি অনেক আগেই গেছেন বাইরে। অর্ণবের পেছন পেছন যে যাননি সে ব্যাপারে নিশ্চিত আম্রপালি। হোক না হোক কিছুক্ষণ আগের ঘটনার সাথে পদ্মাবতীই জড়িত। চিন্তাটা মাথায় আসতেই মাথা ভনভন করতে শুরু করলো আম্রপালির। সবকিছু ওলট-পালট মনে হতে লাগলো। দ্রুত ভেতরে চলে গেলেন তিনি। পদ্মাবতী নিজের ঘরে ঢুকতে যাবেন এমন সময় পেছন থেকে আম্রপালি বলে উঠলেন,

“দাঁড়া।”

চকিতে পেছনে ফিরলেন পদ্মাবতী। আম্রপালিকে দেখেই ঘামতে শুরু করলেন।

“কোথায় গিয়েছিলি তুই?”

“বাগানেই ছিলাম বড়মা। ঘরে ভালো লাগছিল না। তাই একটু হাঁটাহাঁটি করে এলাম।”

আম্রপালি স্ব-জোরে পদ্মাবতীর গালে চড় বসিয়ে দিলেন। বললেন,

“মিথ্যে বলিস আমাকে? আমি দেখেছি সবটা। একটু আগে যা যা হলো সবটা তুই করিয়েছিস পদ্মা। কী করে পারলি এটা করতে? ছিঃ। লজ্জা হচ্ছে আমার তোকে দেখে। তোর দ্বারা এমন কাজও সম্ভব!”

পদ্মাবতী আম্রপালির পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

“আমাকে ক্ষমা করুন বড়মা। অনেক বড় ভুল করেছি আমি। কিন্তু আপনি তো বোঝেন আমাকে। আপনি তো জানেন আমি এসব কেন করেছি। শেষবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর কোনোদিনও এমন করবো না।”

“আমাকে ছাড় পদ্মা।”

আম্রপালি নিজের পা ছাড়িয়ে নিলে পদ্মাবতী সেখানে বসেই কাঁদতে লাগলেন। আম্রপালি চলে যেতে যেতে বললেন,

“যা করেছিস, করেছিস। ভুলে যা সব। ঘুণাক্ষরেও যেন কেউ জানতে না পারে। অর্ণব তো একদমই নয়। ও জানতে পারলে আমি আর তোকে বাঁচাতে পারবো না পদ্মা।”

চলবে…

#মেহেরজান
#পর্ব-৪২
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

“তুই কী চাইছিস আমি বুঝতে পারছি না মেহের। কোনো ভুল কিছু করিস না।”

“আমি কোনো ভুল করবো না তারামা। আমি শুধু অর্ণবকে চাই। আর ওই পরিবারের সর্বনাশ। ধ্বংস হোক ওরা।”

মোহিনীর কথা শুনে তারানার বুকটা কেঁপে উঠলো।

“তোকে খুব অচেনা লাগছে মেহের। তুই তো এমন মেয়ে না। এতটা নিষ্ঠুর তো তুই কখনোই ছিলি যে অন্যের অমঙ্গল কামনা করবি।”

“এখানে আমার দোষ নেই তারামা। শুরুটা ওরাই করেছিল। আমাকে আঘাত করেছে ওরা। এর ফল তো পেতেই হবে ওদের। আর অর্ণবকে ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ওদের আঘাতের চেয়ে শতগুণ বেশি আঘাত ফেরত দেব আমি ওদের। অর্ণবও আমার হবে। ওরাও শেষ হয়ে যাবে।”

তারানা মোহিনীর কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বললেন না। গলার স্বর উঁচু করে রজনীকে ডাকতে ডাকতে বললেন,

“আমার ঘর থেকে পানের ডালাটা এ ঘরে দিয়ে যা তো। কি রে, কোথায় ম/রলি? রজনী।”

ওপাশ থেকে জবাব এলো,

“আসছি আম্মা।”

রজনী পানের ডালা নিয়ে এসেই তারানাকে একটা পান সাজিয়ে দিলেন। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারানা পান চিবুতে চিবুতে বললেন,

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখনো এখানে? আমাদের কথা শোনার অপেক্ষায় আছিস? টাকা পেয়েছিস আবার এখানকার খবর ওখানে পৌঁছাবার জন্য?”

“কী বলছো আম্মা? আমি তো বাড়ি থেকেই বের হই না।”

তারানা পানের পিক ফেলে বললেন,

“তো আগে কি ওরা আসতো তোর সাথে দেখা করতে?”

রজনী চুপ করে রইলেন। সেদিনের পর থেকে সুযোগ না পেলে রজনী তারানার মুখে মুখে খুব একটা তর্ক করেন না। এ-বাড়িতে যে তার অবস্থানটা নড়বড়ে হয়ে গেছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন তিনি। এখন সকলের সাথে তাকে বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। তাকে চুপ থাকতে দেখে তারানা বললেন,

“দ্বিতীয়বার আমার চোখ ফাঁকি দেবার চেষ্টাও করিস না রজনী। ভগবানের দিব্যি করে বলছি, একদম জানে মে/রে ফেলবো তোকে আমি। যাহ এখন।”

শেষের বাক্যটা তারানা ধমকের সুরে বলতেই রজনী দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। মোহিনী বলে উঠলেন,

“শোনো।”

রজনী থেমে জিজ্ঞেস করলেন,

“কী?”

“দরজাটা আগের মতো চাপিয়ে দিয়ে যেও।”

তারানা বললেন,

“কী হলো? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কী বললো শুনিসনি?”

রজনী দরজা চাপিয়ে কটমট করতে কর‍তে চলে গেলেন। বাইরে এসে নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বললেন,

“তোদের দুটোকে একদিন বাগে পাই। দেখিস কী করি। আমাকে করা সব অপমানের বদলা নেব।”

হঠাৎ কোনো কিছুর বিকট শব্দে তারানা আর মোহিনী দুজনেই জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

“কী হলো বলো তো তারামা।”

“দেখে মনে হচ্ছে দুর্ঘটনা।”

“আমাদের বাড়ির সামনেই?”

“হোকগে। তাতে আমাদের কী?”

“কী বলছো তারামা? রাত ক’টা বাজে দেখেছো? এরা এখানে ম/রে গেলেও কেউ দেখতে আসবে না।”

“কী করবি তাহলে?”

“নিয়ে আসি?”

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারানা মোহিনী আর চরণকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। গাড়ির ভেতরে শুধু আহত অবস্থায় এক অচেতন মহিলাকে দেখতে পেলেন। এদিক-ওদিক তাকাতেই রাস্তার একপাশে গাড়ির চালককে দেখতে পেলেন। নিশ্চয়ই মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল ব্যাটা। দেখে মনে হচ্ছে গাড়ি গাছের সাথে ধাক্কা লাগার আগেই সে লাফ দিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিল। তাই তেমন কিছু হয়নি। মোহিনী আর চরণ ধরাধরি করে কোনোমতে সেই মহিলাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এলেন। খালি পড়ে থাকা একটা ঘরে এনে শুইয়ে দিলেন। শুইয়ে দিয়ে মোহিনী আর তারানা একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। অন্য মেয়েরা কৌতূহলী হয়ে দরজার বাইরে ভীড় জমিয়েছিল। তারানা ধমক দিতেই জায়গাটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।
.
.
.
পরেরদিন সন্ধ্যেবেলা তার ঘরে চা নিয়ে ঢুকতেই মোহিনী দেখলেন তিনি উঠে বসার চেষ্টা করছেন। মোহিনী চা রেখে তাকে উঠে বসতে সহায়তা করলেন।

“আমাকে একটু জল দেবে?”

মোহিনী জল এনে তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন,

“এখন কেমন আছেন আপনি?”

গলাটা ভিজিয়ে মহিলাটি জবাব দিলেন,

“ভালো। মনে তোমাদের অনেক অসুবিধায় ফেলে দিয়েছি আমি।”

মোহিনী উঠতে উঠতে বললেন,

“ওতোটাও না। শুধু রাতে ডাক্তার খুঁজে আনতে একটু অসুবিধা হয়েছিল। আসলে এ-বাড়িতে কেউ ম/রতে বসলেও সহজে তাকে দেখতে কোনো ডাক্তার আসতে চায় না। যাদের মধ্যে মানবতা একটু বেশি, তারা আসে। অবশ্য এর জন্য অতিরিক্ত টাকাও দিতে হয় তাদের।”

“আমার জন্য তোমাদের যত টাকা খরচ হয়েছে, আমি তা ফেরত দিতে পারি।”

বলেই নিজের ব্যাগ খুঁজতে লাগলেন তিনি। মোহিনী বুঝতে পেরে বললেন,

“আপনার সব জিনিসপত্র আমার ঘরে রাখা আছে। আর টাকা লাগবে না। ওসবের অভাব নেই আমাদের।”

“তবুও।”

মোহিনী কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললেন,

“আপনাকে এদেশের বলে মনে হয় না। বাংলাটা কিন্তু খুব সুন্দর বলেন। কার বাড়িতে এসেছেন আপনি?”

“অভ্র চৌধুরীকে চেনো? তার সাথেই দেখা করতে এসেছি আমি।”

চমকে উঠলেন মোহিনী। নিজের কাজ থামিয়ে দিলেন। পুনরায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,

“আপনি ওনাকে কীভাবে চেনেন? কী হন আপনি ওনার?”

“তুমি চেনো ওকে?”

“হ্যাঁ।”

“আমার নাম ব্রেন্ডা। আমি অভ্রর বন্ধু। বিলেতে একসাথে থাকতাম আমরা।”

“একসাথে মানে একই বাড়িতে?”

“হ্যাঁ।”

“চায়ে চিনি কয় চামচ দেব?”

“এক চামচ।”

মোহিনী চা নিয়ে এসে ব্রেন্ডার সামনে বসলেন।

“আপনারা একসাথে থাকেন তবুও বন্ধু বলছেন? শুধু বন্ধু নাকি প্রেমিকা?”

ব্রেন্ডা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,

“বললে ভুল হবে না।”

“কিন্তু আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তিনি তো এখানে নেই। কলকাতায় আছেন।”

“জানি আমি। এজন্যই সোজা এখানে এসেছি। মাস দুয়েক আগেও এসেছিলাম আমি। কিন্তু খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। ওর বাড়ির লোক আমাকে দেখা করতে দেয়নি ওর সাথে।”

“ওনার বাড়ির লোক?”

“অভ্রর ভাইপো।”

“ভাইপো মানে…।”

“অর্ণব। দুমাস আগে দেখা হয়েছিল আমার ওর সাথে। ও গিয়েছিল কলকাতায়। কিন্তু অভ্রর সাথে দেখা করতে দেয়নি। ফিরে গিয়েছিলাম। আবার এসেছি। তবে এবার দেখা করেই ফিরবো।”

মোহিনী বুঝতে পারলেন অর্ণব একারণেই কলকাতায় গিয়েছিলেন। তিনি ব্রেন্ডার উদ্দেশ্যে বললেন,

“আপনি অভ্র চৌধুরীর সাথে দেখা করতে চান কেন? যার জন্য এতোদূর থেকেও বারবার ছুটে আসছেন।”

“সেটা আমি এখন তোমাকে বলতে পারবো না।”

“অসুবিধা নেই।”

“কিন্তু আমি এখন ওর বাড়িতে যাবো কী করে? আমি তো ওর বাড়ি চিনিই না।”

“এটা কোনো সমস্যা নয়। এ গ্রামের সবাই তার বাড়ি চেনে। যতই হোক, জমিদার বলে কথা।”

“তোমার নামটা আমার জানা হলো না এখনো।”

“সবাই মোহিনী বলেই ডাকে।”

“খুব সুন্দর নাম।”

তারানা একবার ঘরের ভেতরে উঁকি দিয়ে তাদের কথা বলতে দেখে চলে গেলেন। টকটকে লাল ঠোঁট, কপালে বড় একটা টিপ, চোখে মোটা করে দেওয়া কাজল, গায়ে ঝলমলে শাড়ি, গয়না। তারানার পুরুষালী দেহে এমন বেশভূষা বড্ড বেমানান লাগলো ব্রেন্ডার কাছে। গতবার কলকাতায় এমনই কয়েকজনের একটা দলের সাথে দেখা হয়েছিল তার। টাকার জন্য প্রচন্ড বিরক্ত করছিল তাকে। কিন্তু তারানা তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, ভিন্ন একটা মানুষ বলে মনে হলো ব্রেন্ডার। মোহিনী বললেন,

“উনি আমার তারামা। উনিই আমাদের সবার মা এখানে। আমাদের দেখাশোনা করেন।”

“আচ্ছা। তোমরা এখানে কী করো? প্রস্টি’টিউশান?”

“ইংরেজি বুঝি না। আর ওতো কঠিন শব্দ তো একদমই না। চৌধুরী বাড়ির মালকিন আমাকে অনেক স্নেহ করতেন বলে বাংলা লিখতে পড়তে শেখার সুযোগটা হয়েছিল।”

“আমি বলতে চাইছিলাম তোমরা কি পতি’তা? দেহ’ব্যবসা করো এখানে?”

ব্রেন্ডার কথাটা মোহিনীর মনে প্রচন্ড আঘাত করলো। হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে গেল। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

“সবাই ভাবে এখানে দেহের ব্যবসা হয়। কিন্তু এখানে যে মনেরও ব্যবসা হতে পারে এটা কেউ ভাবে না। আমাদেরও মন আছে। সেটারও লেনদেন হয়। তবে আমরা দেহ’ব্যবসা করি না। এতটা খারাপ অবস্থা আমাদের হয়নি। এটা বাইজীবাড়ি। আমরা নাচ করি, গান করি। এসবের মাধ্যমেই এখানে আসা পুরুষদের মনোরঞ্জন করি।”

“আমাকে ভুল বুঝো না তুমি। তখন এ-বাড়িতে ডাক্তার না আসতে চাওয়ার কথাটা তুমি এমনভাবে বললে। আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কোথায় আছি। আর সকালের দিকে একবার যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন আশেপাশে অনেক মেয়েদের দেখলাম। কিন্তু কাউকে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তার আগেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দুর্বল লাগছিল অনেক।”

“আমাদের পতি’তা ভাবার পরও আমাদের হাতের চা আপনার গলা দিয়ে নামলো?”

“অন্য কারও নামতো কি না জানিনা। কিন্তু আমার গলা দিয়ে নেমেছে।”

“বাদ দিন এসব কথা। আপনি না চৌধুরী বাড়িতে যাবেন?”

“হ্যাঁ, তুমি আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসতে পারবে?”

“এখন? বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। এখন গিয়ে আর কী করবেন? আপনি বরং কাল সকালে যাবেন।”

“তাই ভালো হবে হয়তো।”

“ও-বাড়িতে গিয়ে নিজেকে কী বলে পরিচয় দেবেন? আপনাকে আগেই জানিয়ে দিচ্ছি। প্রেমিকা নামক কোনো বস্তুর ও-বাড়িতে কোনো মূল্য নেই।”

“তাহলে কী বলবো?”

মোহিনী স্মিত হাসলেন।
.
.
.
আম্রপালি একটা মেয়েকে বাড়ির সব কাজ ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মেয়েটাও কৌতূহল নিয়ে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। আম্রপালি সব বোঝানো শেষ করার পর জিজ্ঞেস করলেন,

“বুঝতে পেরেছিস তো সব?”

“হ্যাঁ, সব বুঝে গেছি।”

“আর কোনো প্রশ্ন আছে?”

“শুনেছিলাম তোমাদের বাড়িতে নাকি কোনো মেয়েই বেশিদিন টিকতে পারে না। অনেক কাজ দাও। কই? আমার কাছে তো একটুও বেশি মনে হলো না। এসব তো রোজই করতে হয় আমাকে।”

“কিছুদিন কর। তখন বুঝবি। তারপর যদি থাকতে পারিস তো বলিস। আর প্রতিদিন এমন দেরি করে আসলে চলবে না। আজ এসেছিস তো এসেছিস। কাল থেকে আরও সকালে আসতে হবে। একদম ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে।”

মেয়েটা ঘাড় কাত করলেন।

“ওহহ, তোর নামটা যেন কী?”

“পূর্বা।”

“ঠিকাছে। তোর স্বামী কী করে?”

“কিছু করে না। খায় আর সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। আমি ঢুকতে দেই না ঘরে। বাইরেই পড়ে থাকে সারারাত।”

অভিমানের সুরে কথাগুলো বললেন পূর্বা। পরক্ষণেই আবার অনুরোধ করে বললেন,

“মাসি, তোমাদের বাড়িতে তো অনেক কাজ। তুমিই এখানে কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দাও না ওকে। ওই, তোমাদের ওই গেটের দারোয়ানের চাকরিটাই নাহয় দাও।”

“আচ্ছা। আমি দেখবো।”

“বাড়িতে কেউ আছেন?”

আম্রপালির কথা শেষ হতে না হতেই কেউ বলে উঠলেন কথাটা। আম্রপালি সদর দরজার দিকে তাকাতেই একজন মহিলাকে দেখতে পেলেন। পরনে শার্ট-প্যান্ট। মাথায় সোনালী চুল। চোখে চশমা। সাথে বড় একটা কাপড়ের ব্যাগ। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“আপনাকে তো চিনলাম না।”

ব্রেন্ডা দু’হাত জোড় করে বললেন,

“নমস্কার। আমি ব্রেন্ডা। অভ্র চৌধুরীর স্ত্রী।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে