মেহেরজান পর্ব-১৩+১৪

0
415

#মেহেরজান
#পর্ব-১৩
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

খাবার টেবিলের ওপর গামলা ভর্তি লুচি দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না মোহিনী। খাওয়ার জন্য হাতে নিতেই বুঝতে পারলেন এইমাত্রই ভাজা হয়েছে। প্রচন্ড গরম। কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করলেন। ফুঁ দিয়ে কয়েকবার হাত বদল করেই খাওয়া শুরু করে দিলেন। এরমধ্যেই পদ্মাবতী আর শকুন্তলা এসে উপস্থিত হলেন সেখানে। পদ্মাবতীর হাতে আলুরদম আর শকুন্তলার হাতে আরও এক গামলা লুচি। পদ্মাবতী আলুরদমটা মোহিনীর সামনে রেখে বললেন,

“এই নে। এটা দিয়ে খা।”

মোহিনী খাবার মুখে নিয়েই কিছু একটা বললেন। স্পষ্ট বোঝা গেল না।

“কী?”

মোহিনী এবার খাবার গিলে বললেন,

“আগে দিয়ে যেতে পারলি না। শুধু শুধু শুকনো লুচি খাচ্ছিলাম।”

“হলোই তো মাত্র।”

মোহিনী আলুরদম দিয়ে একটা আস্ত লুচি মুখে পুড়ে নিলেন। শকুন্তলা বলে উঠলেন,

“আস্তে খা মোহিনী। মুখ পুড়বে তো।”

“পুড়বে না ছোটমা, পুড়বে না। এখন শান্তি মতো খেতে দিন তো।”

“তুই যে এতো কী করে খাস। মাঝেমাঝে আশ্চর্যই লাগে।”

শকুন্তলা চলে গেলেন। পদ্মাবতী জল এনে মোহিনীর সামনে রাখলেন। কপালে হাত দিয়ে বললেন,

“এখন কেমন আছিস? জ্বর কমেছে?”

“একদম। না কমলে কি আর আসতে পারতাম।”

“কত্তোদিন পর দেখলাম তোকে। এই ক’দিনেই একদম শুকিয়ে গেছিস। সত্যিই, জ্বর কখনো এতোদিন থাকে নাকি।”

“আমি তো ভেবেছিলাম এবার ঈশ্বরের দর্শন পেয়েই যাবো।”

“যাহ। কি বলিস এসব।”

“তুই খাচ্ছিস না কেন?”

“খাবো। পরে।”

মোহিনী পদ্মাবতীর মুখের সামনে খাবার ধরে বললেন,

“এই নে। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। খা এবার।”

“হুহ, ঢং দেখে আর বাঁচি না। এতোদিন আমার হাতে খেয়ে এসে আজ এসেছিস আমাকে খাইয়ে দিতে।”

পদ্মাবতী খেতে যাবে তখনই মোহিনী হাত সরিয়ে নিয়ে নিজে খেয়ে ফেললেন।

“থাক। খেতে হবে না তোকে। এমন ভাব করছিস যেন রোজ রোজ খাইয়ে দিস।”

“তাই বলে মুখের থেকে খাবার কেড়ে নিলি এভাবে?”

“যাহ তো।”

মোহিনী বিষম খেতেই পদ্মাবতী তার দিকে জল এগিয়ে ধরলেন।

“আস্তে খা না। খাবার তো আর উড়ে যাচ্ছে না। সাবধানে খা।”

মোহিনী একাধারে ষোলটা লুচি খেয়ে ফেললেন। এরপর একটা লম্বা ঢেকুর তুলে আয়েস করে বসলেন। পদ্মাবতী হা করে মোহিনীর খাওয়া দেখছিলেন। তার উদ্দেশ্যে মোহিনী বললেন,

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? নজর লাগছে না? আমার যদি পেট ব্যথা হয় তো তোর দোষ।”

“হবে না পেট ব্যথা। খাওয়া শেষ তোর নাকি আরও খাবি? এবার চল আমার সাথে।”

“কই যাবো?”

“চল।”
.
.
.
নিজের সব শাড়ি গয়না বের করে বিছানায় ছড়িয়ে ফেলেছেন পদ্মাবতী। একটার পর একটা শাড়ি মোহিনীর গায়ে রেখে দেখে চলেছেন তিনি। মোহিনী বিরক্তির সুরে বললেন,

“কি করছিস বলতো?”

“দাঁড়া সোজা হয়ে। দেখতে দে।”

“না। বল আগে।”

“তোকে সাজাবো আজ। একদম বউয়ের মতো। দেখবো তোকে বউ সাজলে কেমন লাগে।”

“ধুর। পাগলামি করিস না তো।”

“পাগলামি কিসের? বউ তো তুই সাজবিই একদিন। তোর বিয়ের দিন।”

মোহিনী উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। বললেন,

“আমি কই থেকে এসেছি ভুলে গেছিস তুই? দেখেছিস কারও বিয়ে হতে বা কেউ করেছে কখনো বিয়ে এমন মেয়েদের?”

“এমন মেয়ে মানে কী? কেমন মেয়ে? তুই ওদের মাঝে পড়িস না। তুই আলাদা। কারও বিয়ে হয়নি তাতে কী? তোর হবে।”

“তোকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।”

“এইতো বুঝেছিস। এবার তাড়াতাড়ি এই শাড়িটা পরে নে।”

মোহিনী শাড়ি পরতেই পদ্মাবতী গয়না দেখতে শুরু করলেন। নিজের পছন্দ মতো সব গয়না একটা একটা করে মোহিনীকে পরাতে শুরু করলেন। শেষে মোহিনীর চুলগুলো সুন্দর করে খোপা করে ফুল লাগিয়ে দিলেন। মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে বললেন,

“দেখেছিস? কত্তো সুন্দর লাগছে তোকে?”

মোহিনী নিজেকে আয়নায় দেখলেন। নিজেকে একটা নতুন রুপে দেখতে পেলেন তিনি। যা কখনো বাস্তবে পরিণত হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে৷

“বড়মাকে বলবো তোকে আর আমাকে যেন একই বাড়িতে বিয়ে দেয়।”

“যেন বিয়ের পর ঝগড়া করতে পারিস?”

“ঝগড়া কেন করবো? বড়মা আর ছোটমাকে দেখিস না কেমন বোনের মতো থাকে। আমরাও এমন হবো।”

“তা ঠিক। ভাগ্যিস সংসারে অশান্তি তৈরির জন্য ছোটমার মায়ের মতো তোর বা আমার মা নেই। বুড়িটা যখনই আসে এবাড়িতে তখনই কিছু না কিছু অশান্তি করেই যায়। আমাকে তো সহ্যই করতে পারে না।”

“এমন করে বলিস না মোহিনী। উনি যেমনই হোক। আমাদের গুরুজন।”

“ঠিকাছে। বলবো না। আর সে বাড়িতে দু’জন ছেলে না থাকলে কি করবি? তখন সতীন বানাবি আমাকে?”

“যাহ। তাই আবার হয় নাকি?”

“কেন হবে না? তুই চাইলেই হবে।”

“না বাবা না। আমি এটা করতে পারবো না।”

“কেন?”

হঠাৎ অর্ণবের চেঁচামেচি শোনা গেল। মোহিনী বললেন,

“কী হয়েছে? উনি চেঁচাচ্ছেন কেন?”

“চা দিইনি আজ ওনার ঘরে। এজন্য মনে হয়।”

“দিস নি কেন?”

“কাল আমাকে বলে কিনা আমি জগতের সবচেয়ে জঘন্য চা বানাই। তিনি ভালো মানুষ বলে নাকি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছেন।”

পদ্মাবতীর ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন অর্ণব। মোহিনীকে দেখতেই তার উপর চোখ আঁটকে গেল অর্ণবের। পদ্মাবতী বললেন,

“খবরদার। আমার অনুমতি ছাড়া আমার ঘরে ঢুকবেন না আপনি।”

“আমাকে বলছো?”

“আপনি ছাড়া ওখানে আর কেউ নেই অর্ণববাবু।”

“সাহস তো কম নয় তোমার।”

“এখানে সাহসের কি আছে? আমার ঘরে কতো মূল্যবান জিনিস রয়েছে দেখছেন না আপনি? এখন আপনার মনে কি আছে তা তো আর আমি জানি না।”

“নিজের সীমার মধ্যে থাকো মেয়ে। এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।”

“ঠিকাছে ঠিকাছে। কি সমস্যা বলুন?”

“ভাব দেখো মেয়ের, যেন সব সমস্যার সমাধান নিয়ে বসে আছে। চা দাওনি কেন এখনো?”

“আমার হাতের চা আপনার গলা দিয়ে নামবে?”

“উপায় নেই।”

পদ্মাবতী উঠে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে গেলেন। মোহিনী ইতোমধ্যে নিজের গা থেকে গয়না খুলে ফেলেছেন। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অর্ণব তার পথ আঁটকে ধরলেন।

“পথ আঁটকালেন কেন?”

“আপনি কোথায় পালাচ্ছেন?”

“সমস্যা কী আপনার?”

“এতোদিন এলেন না কেন?”

“পথ ছাড়ুন। যেতে দিন আমাকে।”

“আগে আমার কথার উত্তর দিন।”

“আসতে ইচ্ছে হয়নি তাই আসিনি।”

“উহু। এটা নয়।”

“তাহলে?”

“অন্য কথা। সেদিন যে বললাম আপনার প্রেমে পড়েছি।”

“এতে আর এমন কি বড় কথা। আমার প্রেমে পড়েনি এমন পুরুষ খুব কমই আছে।”

মোহিনীর হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন অর্ণব। হাতের সাহায্যে খোপা খুলে দিতেই ঘন কালো চুলে পিঠ ঠেকে গেল মোহিনীর।

“আমাকে তাদের কাতারে ফেলবেন না মেহেরজান। ভুল করেও না।”

“লাগছে আমার। হাত ছাড়ুন।”

“যতক্ষণ না উত্তর দিচ্ছেন, আমি ছাড়বো না।”

“কাল বারোটায় দেখা করুন। উত্তর দিয়ে দেব।”

“কাল ভাইফোঁটা। বের হতে পারবো না তখন। কাজ আছে।”

“এইমাত্র বললেন না আমার প্রেমে পড়েছেন? কী করতে পারবেন আমার জন্য?”

“শুরু হয়ে গেল ন্যাকামি। কী করতে হবে?”

“বললাম তো। কাল দেখা করুন।”

“আমি তখন ব্যস্ত থাকবো মেহের।”

“আমি আপনাকে রাত বারোটার কথা বলেছি অর্ণব।”

মোহিনীর হাত ছেড়ে দিলেন অর্ণব।

“কিহ?”

“আসতে হলে আসুন নয়তো দ্বিতীয়বার আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে আসবেন না।

চলবে…

#মেহেরজান
#পর্ব-১৪
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

কড়ে আঙুলের সাহায্যে অর্ণবের কপালের একদম মাঝখানে চন্দনের ফোঁটা দিতেই উলুধ্বনি আর শঙ্খধ্বনি বেজে উঠলো। কতোগুলা বাক্য বেরিয়ে এলো চিত্রার মুখ থেকে।

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাই ফোঁটা।
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।”

ধান আর দূর্বা অর্ণবের মাথায় রাখলেন তিনি। এরপর মিষ্টি খাইয়ে প্রণাম করলেন। অর্ণব তাকে আশীর্বাদ করে জিজ্ঞেস করলেন,

“এবার বল, কি উপহার চাস তুই?”

“এখন না দাদা। পরে বলবো। সময় হলে চেয়ে নেবো। তখন দেবে তো?”

“তুই যা চাইবি তাই পাবি।”

চিত্রা হাসি দিয়ে শমিতের সামনে গেলেন। পুনরায় শমিতের কপালে ফোঁটা দিতেই আম্রপালি, শকুন্তলা আর অনুরাধা উলু দিয়ে উঠলেন। একইভাবে শমিতকেও ফোঁটা দিলেন তিনি। এরপর পদ্মাবতী এসে শমিতকে ফোঁটা দিয়ে উঠে যেতে নিলেই শকুন্তলা বলে উঠলেন,

“কিরে পদ্মা? শুধু শমিতকে ফোঁটা দিলি যে? অর্ণবকে দিবি না?”

শকুন্তলার মুখ থেকে এমন কথা শুনে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল পদ্মাবতীর। কেন তা তিনি জানেন না। শুধু মনে হচ্ছে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচেন। শকুন্তলা আবার ডাকলেন তাকে।

“কি হলো? আয়।”

অর্ণব শমিতকে খোঁচা দিতেই শমিত চেঁচিয়ে উঠলেন। বললেন,

“ও কেন ফোঁটা পরাবে অর্ণবকে? পদ্মার ভাই তো শুধু আমি। আর তাছাড়া অর্ণব মানে নাকি ওকে বোন হিসেবে? ফোঁটা পরাবে বললেই হলো।”

“তোর আবার কি হলো?”

“কি হবে। কিছু হয়নি তো মামী।”

এই ফাঁকে পদ্মাবতী দৌঁড়ে এক প্রকার পালিয়েই এলেন সেখান থেকে। কিছুটা দূরে আসতেই স্বজোরে ধাক্কা খেলেন মোহিনীর সাথে। আকস্মিক ধাক্কা লাগায় নিজেকে সামলাতে পারলেন না মোহিনী। ধপ করে নিচে পড়ে গেলেন।

“চোখে কি ছানি পড়েছে তোর? দেখছিস না আমি আসছিলাম।”

পদ্মাবতী দ্রুত মোহিনীকে উঠতে সাহায্য করলেন। এখনো হাঁপাচ্ছেন তিনি।

“কি হয়েছে তোর? এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? বাঘ তাড়া করেছে নাকি সিংহ।”

“কিছু তাড়া করেনি। তার চেয়েও বেশি কিছু।”

“কী?”

“ছোটমা আমাকে বলে কিনা অর্ণববাবুকে ফোঁটা দিতে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার দেখেছিস।”

“সাংঘাতিক এর কী আছে এখানে? দিয়ে দিতি।”

“ধ্যাত। দিয়ে দিতি বললেই কি দেওয়া যায় নাকি?”

“কেন? দিতে কি সমস্যা?”

“তুই বুঝবি না। এতো প্রশ্ন করিস না তো। পারলে তুই দিয়ে আয়। আমি কেন দেব?”

পদ্মাবতীর কথায় মোহিনী উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। বললেন,

“আমি দেবো ফোঁটা? তোর অর্ণববাবু জানতে পারলে মাথা ঘুরে পরবেন।”

মোহিনী বাড়ির ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলেন। তবে তিনি কী বলে গেলেন তা ঠিক বোধগম্য হলো না পদ্মাবতীর। এখন আবার সেখানে যেতে মন সায় দিল না তার। নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। তার ঠিক কিছুক্ষণ বাদে ঘরের দরজায় কেউ কড়া নাড়লেন। পদ্মাবতী ভেতর থেকেই বললেন,

“আমি ফোঁটা পরাতে পারবো না।”

বাইরে থেকে জবাব এলো,

“ফোঁটা পরাতে হবে না তোকে। দরজাটা খোল। আমাকে আসতে দে ভেতরে।”

গলাটা মোহিনীর। পদ্মাবতী তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলেন। মোহিনী ভেতরে ঢুকলেন। হাতে বেশ বড়সড় একটা থালা। পদ্মাবতী জিজ্ঞেস করলেন,

“এটায় কি?”

মোহিনী থালার ওপর থেকে ঢাকনা সরালেন। থালায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খুব সুন্দর করে সাজানো। এতো রকমের মিষ্টি দেখেই পদ্মাবতীর জিভে জল চলে এসেছে। ঢোক গিলে বললেন,

“এতো মিষ্টি কই পেলি?”

“বড়মা আলাদা করে রেখেছিলেন আমার জন্য। যেতেই দিয়ে দিলেন। বললেন তোর ঘরে এসে খেতে।”

“এতোগুলো মিষ্টি কি তুই একা খাবি মোহিনী?”

“কেন? সন্দেহ আছে কোনো?”

“না। কোনো সন্দেহ নেই। তুই যে একবারেই পুরোটা খেতে পারবি তা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

“তুই যদি চাস তো তোকেও দিতে পারি কিছুটা।”

“দে তাহলে।”
.
.
.
খুব সাবধানে সদরদরজা খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন চিত্রা। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দীপের সাহায্যে সামনে এগুচ্ছেন তিনি। আজ আর বাড়ির আশেপাশে ডাকেননি শ্যামল তাকে। বেশ দূরেই ডেকেছেন। তাও আবার সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন। বাড়ি থেকে অনেকটা দূরেই চলে এসেছেন চিত্রা। হঠাৎ জোরে হাওয়া বইতেই দীপের শিখাটা ধপধপ করে উঠলো। চিত্রা অন্য হাতের সাহায্যে তা আড়াল করে নিভে যাওয়া থেকে আঁটকালেন। আরেকটু সামনে এগুতেই শ্যামলকে দেখতে পেলেন। সামনে গিয়ে বললেন,

“তুমি আমাকে সবসময় এমন শুনশান জায়গায় ডাকো কেন বলো তো। আমার আসতে কত সমস্যা হয় জানো?”

“আরে এমন জায়গায় না ডাকলে ধরা খেয়ে যাবো না?”

“ধরা খাওয়ার যখন এতোই ভয় তাহলে আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নিলেই তো পারো। তখন অন্তত এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে হবে না। সবার থেকে লুকিয়ে এভাবে তোমার সাথে দেখা করতে আমার কতটা খারাপ লাগে জানো তুমি?”

চিত্রা নাক টানলেন।

“আরে কাঁদছো কেন তুমি? আর সবসময় এতো বিয়ে বিয়ে করো কেন বলো তো। আমি কি কোনোদিন বলেছি যে বিয়ে করবো না?”

“তবুও। শোনো শ্যামল, তুমি যদি বিয়ের প্রস্তাব না পাঠাও তাহলে আমি আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করবো না তোমার সাথে।”

“পাঠাবো তো। আর চারটা মাস অপেক্ষা করো। তারপরই আমার বাবা-মাকে নিয়ে তোমার বাড়িতে যাবো।”

“সত্যি?”

“সত্যি, সত্যি, সত্যি। তিন সত্যি। এবার খুশি?”

“অনেক। জানো আজ ভাইফোঁটায় দাদার কাছে কী বলেছি?”

“কী বলেছো?”

“দাদা যখন জিজ্ঞেস করেছে কী উপহার চাই তখন বলেছি পরে চাইবো। এবার বলো তো আমি পরে কী চাইবো?”

“সেটা আমি কি করে বলবো বলো তো?”

“আরে বুদ্ধু, তোমাকেই তো চাইবো। দাদাকে রাজি করানোর এর চেয়ে ভালো উপায় আমার কাছে ছিল না।”

“বাহ! বেশ বুদ্ধি তো তোমার।”

“তা নয়তো আবার কি।”

শ্যামল চিত্রাকে জড়িয়ে ধরতেই চিত্রা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন। বললেন,

“আমি এখন আসি শ্যামল। পরে আবার আসবো।”

“সবসময় এতো চলে যাবো চলে যাবো কর কেন তুমি? এইমাত্রই তো এলে।”

“উহু। তুমি আর আঁটকিয়ো না আমাকে। যাই এবার।”

“আরে চিত্রা দাঁড়াও। চিত্রা। সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছো নাকি? কী হলো? চিত্রা।”

চিত্রা দাঁড়ালেন না। চলতেই থাকলেন। ধীরে ধীরে রাতের আঁধারে মিলিয়ে গেলেন। শ্যামলের অভিব্যক্তিতে বিরক্তি প্রকাশ পেল। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বললেন,

“ধুর। আজও চলে গেল। গেলে যাক। একদিন না একদিন তো তোকে বাগে পাবোই চিত্রা। আর ক’টাদিন নাহয় অপেক্ষা করি।”

বাড়িতে ঢোকার পথেই কারও আসার শব্দে নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে ফেললেন চিত্রা। দীপটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলেন। একটু পরই দেখতে পেলেন অর্ণব বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন। ভ্রুকুটি করে ফেললেন তিনি। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন,

“দাদা এতো রাতে কই যাচ্ছে?”

শকুন্তলাকে জল নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে দেখতেই চোখ কপালে উঠে গেল তার।

“মা এখনো জেগে আছেন!”

মনের মধ্যে উঁকি দেওয়া হাজারো প্রশ্ন সরিয়ে দিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন চিত্রা।
.
.
অকেক্ষণ যাবৎ নদীর পাড়ে বড় একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন অর্ণব। মোহিনীই তাকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। তবে মোহিনী এখনো আসেননি। অনবরত হাই তুলছেন অর্ণব। ঘুমে বারবার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার। অবশেষে গাছের নিচেই বসে পড়লেন। বসে ঝিমুতে ঝিমুতে কখন যে চোখ লেগে গেল তার, টেরই পেলেন না। যখন ঘুম ভাঙলো, চোখ খুলে দেখলেন চারদিক একদম পরিষ্কার। সূর্যের আলো এসে চোখে লাগছে তার। সবকিছু বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগলো। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,

“আপনি তাহলে এলেন না মেহের।”

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে