#মেয়েটি_যেন_ভিন্ন_রকম
(এগারতম পর্ব)
Aise zaroori ho mujhko tum
Jaise hawayein saanson ko
Aise talashun main tumko
Jaise ki per zameeno ko.
এই গানটা অদিতির অসম্ভব ভালো লাগে। একটা হিন্দি মুভির গান। কিন্তু এর আবেদন, এর রেশ যে কাটেই না। অদিতির হাত এখন ভালোই বলা যায়। স্কুলে যাচ্ছে নিয়মিত। ছাত্র – ছাত্রীরা অদিতিকে ভীষণ পছন্দ করে। ফিজিক্সের মতো কঠিন সাবজেক্টকে খুব ঝরঝরে করে হাতে কলমে বুঝিয়ে দেয়৷ এজন্য অবশ্য অদিতিকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। ইউটিউবে দেশে বিদেশের বিভিন্ন লেকচার ফলো করে, নোট নেয়। বিভিন্ন লেকচারের সাথে হাতে কলমে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সূত্রগুলোর বাস্তব পরীক্ষা দেখায়। সেগুলো অদিতি বাসায় আগে নিজে করে, ভালোভাবে পারলে তারপর স্টুডেন্টদের দেখায়। ওর ক্লাসে স্টুডেন্ডরা শতভাগ মনোযোগ দিয়ে করে৷
আমানের সাথে অদিতির আর কথা হয় নি। অদিতি আর কল দেয় নি। বার বার কল করাটা হ্যাংলামি দেখায়। এমনটা অদিতি পারে না।
আজ স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দরজার বাইরে থেকেই মনে হলো ভেতরে বেশ উচ্চস্বরে কথা, হাসি হই হুল্লোড় চলছে। এটা তো তাদের বাসার পরিবেশ নয়! বাবা অবসরের পরে নামাজ পড়া, বই পড়া নিয়েই সময় কাটিয়ে দেন। মা বরাবরের মতোই সংসারের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অদিতি বাসায় ফেরে ক্লান্ত হয়ে আবার ক্লাসের জন্য নোট নেয়া আর ফ্রিল্যান্সিং নিয়েই ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করে। ওর খুব ইচ্ছা বাবার জন্য এক টুকরো জমি কেনা, যেটা বাবার খুবই শখ কিন্তু অদিতিদের জন্যই এই শখটা পূরণ হয় নি। অদিতির ভাই শোভন ব্যবসাতে ভালোই লাভ করছিলো। কিন্তু অদিতির হাতে ফ্রাকচার হওয়ার ঠিক পরপরই ঘোষণা দেয়, সে একটা মেয়েকে পছন্দ করে এবং তাকে বিয়ে করতে চায়। বাবা অদিতিদের ইচ্ছাকে খুব সম্মান করে। কিন্তু মা মনে কষ্ট পায়। অদিতির বাবা অদিতির অসুস্থতার কথা চিন্তা করে কিছুদিন পরে শোভনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে বলে জানায়। কিন্তু শোভন বেঁকে বসে। মেয়েটার নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, এখনই যা করার করতে হবে!
অদিতির মা লুৎফা বেগম আজীবন ছেলের পক্ষ নিয়েছেন। এমনকী ছেলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে মেয়েকে কটূ কথাও শুনিয়েছেন। কিন্তু আজ লুৎফা বেগম যেন অন্য রকম মানুষ হতে গেলেন। নিজের রাগ ক্ষোভ চাপতে না পেরে এতো বড় ছেলের মুখে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। যার বোন মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছে বলা যায়, সে এখন কিভাবে বিয়ের জন্য জিদ করতে পারে! শোভনেরও রাগ উঠে যায়। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে তখুনি বাড়ি আছে আর লোকমুখে অদিতিরা শুনতে পায় – এর পরদিনই সেই মেয়েকে বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছে। মাঝখান থেকে সারা জীবনের সঞ্চয় পেনশনের টাকা থেকে বঞ্চিত হলেন আহসানুল হক। লুৎফা বেগম ইদানীং খুব মনোকষ্টে ভোগেন, ছেলের এই স্বার্থপরতা মানতে পারেন না।
এইসব ঘটনায় ঘরের পরিবেশ থমথমে থাকে। সেখানে কে এসে এমন হাসির হিল্লোল তুললো!
কলিং বেল চেপে ধরতেই দরজা খুলে মুখে বিরাট এক হাসি বুলিয়ে সামনে এসে আমান দাঁড়ায়। অদিতির বুকের হার্টবিট মিস হয়ে যেন। ভেতরে যেতেই দেখে বাবা মা হাসি মুখে ডাইনিং রুমে।
– আরে দেখ, আমি রান্না করবো কি আমান রান্নাঘরে ঢুকে রান্না করেছে। আমরা তো তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম!
হাসি মুখে লুৎফা বেগম অদিতিকে ঘোষণা দেয়ার ভঙ্গিতে জানায়৷ অদিতির তো অবাকের পর অবাক হওয়ার পালা। অদিতির বাবাও কথা শুরু করেন
– আমি বাপু টেস্ট না করে থাকতে পারলাম না। খাশির মাংসের কোরমা তো লা জবাব। আর কতো গল্প যে পারে ছেলেটা।
অনেক অনেক দিন পরে গুমোট আকাশে যেন রোদের ঝলকানি। ভালো লাগে অদিতির। কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে বসে পড়ে। কয়েক রকমের ভর্তা, খাশির মাংস আর ডাল। কিন্তু প্রতিটা আইটেমই অসাধারণ।
– আপনি তো দারুণ রান্না করেন।
– হুম একলা মানুষের সব শিখতে হয়। আর তাছাড়া ছেলেদের জন্য হাস্যকর হলেও সত্য যে, আমি রান্না করতে পছন্দ করি।
– আরে হাস্যকরের কি আছে, সারা দুনিয়ায় সব বড় বড় হোটেলের শেফরা হলেন ছেলে। মেয়েরা ভাবে তারা ছাড়া আমরা না খেয়ে মরবো!
অদিতির মায়ের দিকে তাকিয়ে টিপ্পনী কেটে বলে অদিতির বাবা। অদিতির মা কথা বলে না। খাওয়া শেষে অদিতির বাবার হাতে বাসন কাসন ধরিয়ে দেয় – কাজ করে বোঝ এখন!
অদিতিও হাসে প্রাণ খুলে। আস্তে করে আমানকে ধন্যবাদ দেয়।
– আপনাকে আমার কিছু কথা বলার ছিলো।
আমান হঠাৎ সিরিয়াস মুডে কথা বলে।
– জি অবশ্যই বলেন
– ব্যস্ত থাকেন জানি, তবুও প্রতিদিন নিয়ম করে বাবা মা’কে সময় দেবেন। উনারা এখন ছোট বাচ্চার মতো, আপনার সঙ্গ চায়। আমার নেই, আমি বুঝি কি জিনিস আপনার আছে আর আমার নেই!
হঠাৎ গলাটা যেন ধরে আসে আমানের। দ্রুতই অদিতির বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। লুৎফা বেগম মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেন। অদিতি আমানের সাথে সাথে আসে। আস্তে করে নরম স্বরে বলে
– ধন্যবাদ
– কেন? কিসের জন্য?
– সব কিছুর জন্যই।
– শুকনো ধন্যবাদে কাজ হবে না।
– তাহলে?
– চলেন একদিন কফি খাই!
বুকের ভেতরে রক্ত ছলকে উঠে অদিতির, ভীষণ আপ্লুত হয়। কিন্তু বাইরে বুঝতে দেয় না। মুখে ভদ্রতার পরিমিত হাসি ঝুলিয়ে সম্মতি জানায়।
(চলবে)