#মেয়েটি_যেন_ভিন্নরকম
(৬ষ্ঠ পর্ব)
আজ অদিতির টিউশনির প্রথম দিন। ছাত্রী ক্লাস সিক্সে পড়ে। আজ মূলতঃ অদিতির ইন্টারভিউ মানে তাকে দিয়ে ছাত্রী পড়ানো চলবে কিনা, এটাই কষ্টিপাথরে যাচাই বাছাই করা হবে। অনেকটা এভাবেই বলেছেন নন্দিতা আপু। আপু অদিতির সিনিয়র। ভালো পরিচয়, উনি নিজে টিউশনি করেন। আপুকেই ধরেছিলো একটা টিউশনি খুঁজে দেয়ার জন্য। বেশ ভালো অভিজাত এলাকায় আপু এই মেয়েকে খুঁজে দিয়েছেন। এখন দেখা যাক কি আছে অদিতির কপালে!
দোতলা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি, অফ হোয়াইট কালারের বড় বাসা। সামনে সবুজ লন। দারোয়ানকে নিজের নাম এবং কেন এসেছে জানাতেই সে আবার ইন্টারকমে যোগাযোগ করে। ঐ পাশ থেকে গ্রীণ সিগন্যাল পেতেই অদিতিকে ড্রইং রুম দেখিয়ে দেয়। এই বাড়িতে অনেক গাছ আছে, এটা দেখে অদিতির খুব ভালো লাগে। ও নিজেও গাছ পছন্দ করে। কিন্তু কোয়ার্টারের ছোট্ট ব্যালকনীতে কাপড় শুকিয়ে আর গাছ লাগানোর জায়গা থাকে না। ড্রইং রুমে নানা রকম পেইন্টিং আছে, যেটা অদিতি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো। এমন সময় একজন মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা নেমে আসলেন।
সুন্দর একটা সুতি শাড়ি পরে আছেন। এমন শাড়ি এখন নানা অনলাইনের পেইজে দেখা যায়। ১০০০-১২০০ টাকা দাম। ভদ্রমহিলার গমের মতো গায়ের রঙের সাথে মাস্টার্ড কালারের শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লাউজে অসাধারণ লাগছে। নাকে একটা ছোট্ট ডায়মন্ডের নোজ পিচ ছাড়া আর কোন অলংকার নেই। বড় চোখ আর একটু চাপা নাকের ফর্সা গোলগাল চেহারা। কিন্তু উনার মুখ জুড়ে কেমন একটা মায়া জড়িয়ে আছে। দেখলেই মনে হয় অনেকদিনের চেনা আন্তরিকতা।
অদিতি ভদ্রতা করে উঠে দাঁড়িয়েছিলো। উনি বসতে বললেন।
– আপনার নাম তো অদিতি আহসান? আমি রেহনুমা খানম। ছুটকি মানে তাবাসসুমের মা। আমরা তাবাসসুমকে বাসায় ছুটকি ডাকি। ছোট কিনা এজন্য। আপনার সম্পর্কে নন্দিতা বলেছে, আপনি ফিজিক্সে পড়েন। সুতরাং মেধাবী সন্দেহ নেই। বরং আমার মেয়েটা ফাঁকিবাজ। দেখেন একটু বুঝিয়ে পড়াশোনায় মন লাগাতে পারেন কিনা। আমার আসলে দরকার ওর বন্ধু হতে পারে মানে ওকে বুঝে এবং বুঝায়ে পড়াশোনায় ফেরাতে পারে এমন কাউকে। আমি নিশ্চিত আপনি পারবেন।
– আমি আপনার মেয়ের মতো, প্লিজ তুমি করে বলবেন।
– মেয়ের মতো তো বটেই। তুমি করেই বলি, আমার এক ছেলে আছে, যে তোমার চেয়ে বড়, এবার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করলো। শোন ছোট হলেও তুমি একজন শিক্ষক, সুতরাং পেমেন্টের বিষয়ে কথা বলাটা বিব্রতকর। নন্দিতা যেটা বলেছিলো সেটাই ফাইন্যাল। তোমার ঢংগী ছাত্রীকে ডাকছি পরিচিত হও।
শেষের কথা বলে মিষ্টি হাসি দিলেন রেহনুমা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো অদিতি। মনে মনে শংকিত ছিলো, না জানি কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়! কিন্তু আন্টি বেশ ভালো। নন্দিতা আপু এই তাবাসসুমকে কিছুদিন পড়িয়েছে কিন্তু এখান থেকে আপুর হোস্টেল অনেক দূরে হওয়ায় আর পড়াবেন না। অদিতিদের বাসা হতে আবার খুব বেশি দূরে নয়।
– মিস আপনি কে ড্রামা দেখেন? কিম সু হিউন কে আপনার কেমন লাগে?
ছাত্রীর মুখের প্রথম কথা শুনে তব্দা খেয়ে কয়েক মিনিট বসে থাকলো অদিতি। ছাত্রীখানা তার কোরিয়ান গার্লদের মতো করে চুল কেটেছে। গালে লাল আভা, নিশ্চিত একটু ব্লাশার লাগিয়েছে। সর্বনাশ, একে কিভাবে পথে আনবে! মনে মনে প্রমাদ গোণে। পরে ভাবে এর সাথে আগে ভাব করতে হবে। যষ্মিনদেশে যদাচারের মতো এর সাথেও এর মতো করেই মিশতে হবে।
– বাহ তোমার তো দারুণ রুচি। কে ড্রামা নাকি আসলেই সেই লেভেলের ভালো। বেশিরভাগ মেয়েরই রুচি খারাপ বুঝলে। এজন্য তাদের সাথে বেশিক্ষণ কথা বলতেও ভালো লাগে না। যাই বলো তোমাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে, একদম কোরিয়ান সুইট গার্ল!
তাবাসসুম খুব খুশি হয়। এই প্রথম একটা মনের মতো মিস পেলো! আগেরগুলো ছিলো সব কাট্টা খোট্টা, এক পড়া ছাড়া কিচ্ছু বুঝতো না। সেই মিস তেমন না, বেশ সুন্দর করেই কথা বলে।
– মিস, আজকে কিন্তু পড়বো না।
– আচ্ছা, ঠিক আছে। তোমার সম্পর্কে বলো। তোমার পছন্দ, ভালো লাগা এসব নিয়ে। কে ড্রামা ভালো লাগে তা তো আগেই বলেছো। এছাড়া আর কি কি বা কাকে ভালো লাগে এসব।
তাবাসসুম অতি উৎসাহে গল্প করতে থাকে। এক ফাঁকে বলে – আমার প্রিয় মানুষ হলো আমার ভাইয়া। পৃথিবীর সবাই আমার বিপক্ষে গেলেও ভাইয়া আমার পক্ষে। আমার জন্ম হলে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন আমার ভাইয়া। আমার সব আবদার, চাওয়া সব ভাইয়ার কাছেই করি। জানেন, আমার ভাইয়া হওয়ার পরে আম্মুর আর বেবি হচ্ছিলো না। তখন ভাইয়া খুব আফসোস করতো একটা ভাই বোনের জন্য। আমি হলে এজন্য ভাইয়া খুব খুশি হয়েছিলো।
ভায়ের কথা বলতে বলতে তাবাসসুমের চোখ কেমন জ্বলজ্বল করে। অদিতির ভীষণ ভালো লাগে৷ ইশ! ওদের ভাই বোনের সম্পর্ক যদি এমন হতো! ওর ভাইয়া ওকে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। অদিতি কোন কাজ না পারলে বা কোন কাজে অসফল হলে ভাইয়া বরং খুশিই হয়। মেয়ে হয়ে অদিতি কেন মেধাবী বা ওর চেয়ে ভালো জায়গায় ভালো সাবজেক্টে পড়ছে এটা ওর ভাই শোভন নিতেই পারে না। আর ওদের মায়ের একচেটিয়া সমর্থন ওর ভায়ের দিকে।
কেমন যেন মন খারাপ হয় অদিতির একই সাথে তাবাসসুমের ভাইকে দেখার বেশ একটা আগ্রহ জাগে।
(চলবে)