#মেয়েটি_যেন_ভিন্নরকম
(৩য় পর্ব)
গ্রামের বিয়ের একটা অন্যরকম আনন্দ আছে, মজা আছে। যেমন হলুদে একটা কুলোয় করে দূর্বা ঘাস, ধান, হলুদ, মেহেদী নিয়ে কনের মুখের সামনে ধরে গানের সুরে নানা রকম ছন্দ পড়ে। নানী দাদী গোছের কিছু মুরব্বী মহিলা এসব ছন্দে ছন্দে উরাধুরা নাচ দেয়। রঙ মাখামাখি হয়। এখন অবশ্য সব জায়গায় আধুনিকতার ছোঁয়া, হিন্দি সিরিয়ালের মতো করে সাজ দিয়ে হিন্দি গান বাজিয়ে নাচানাচি করে।
অদিতির এসব দেখতে ভালোই লাগছে। আরো দুইদিন আগেই সে গ্রামে এসেছে। তার আগে সে হবু বরের নাম্বার জোগাড় করে শম্পা আপুকে দিয়েছে কথা বলার জন্য। এই নাম্বার জোগাড় করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয় নি! মা’কে তো কিছুই বলা যায় না। সব কিছুতেই রিএ্যাক্ট করে। উনার কাছে মেয়ে মানে সসম্মানে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো। ভাই তো একটা খচ্চর, এসব বললে কানমলা দেবে৷
বাকি থাকলো বাবা। একমাত্র উনিই অদিতিকে বোঝেন। অন্যের কাছে যা পাগলামি মনে হয়, তার মাঝেও যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করেন। সেই বাবাকেই বলে কয়ে নাম্বারটা জোগাড় করেছে কিন্তু শম্পা আপু এমনই সরল সে কোন ফোন তো দেয় নি বরং বলছে তার নাকি লজ্জা লাগে! কিন্তু অদিতির মনেও একটা খটকা লাগে, ছেলেটা তো অন্ততঃ ফোন দিতে পারতো। বর্তমান সময়ে এসব তো কোন ব্যাপারই না।
শেষে অদিতিই সেই নাম্বারে কল দেয়।
– হ্যাল্লো দুলাভাই! আমাকে ঠিক চিনবেন না। আমি হলাম আপনার শালিকা। একটু দুষ্টু টাইপ মিষ্টি শালিকা। বলেন কেমন আছেন?
ঐপাশের ব্যক্তি তখন ঘোরে আছে। এতো সাবলিল মিষ্টি নারী কন্ঠের কথা শুনে থতমত খায়। কোন রকমে বলে
– জি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?
– কিভাবে ভালো থাকি বলেন! আপনার বিয়ে ঠিক আর এখনো হবু বউ এর সাথে কোন কথাই বললেন না। মোবাইল জিনিসটা আছে কিসের জন্য? কথা বলার জন্য, তাই না?
– জি, ঠিক বলেছেন
– এতো জি জি করছেন কেন? আমি কি আপনার বস নাকি। আপনার হবু বউ এর নাম্বার ম্যাসেজ করছি। একটু তো হাই হ্যালো করেন। না হলে বিয়ের পরে প্রথম কথা হবে – বউ তোমার নাম কি? হি হি হি
ঐপাশের ছেলেটার তখন অবস্থা সঙ্গীন। এমন কাঁচ ভাঙা হাসির সাথে ভৎসনা, যে কোন পুরুষের শেষ করার জন্য যথেষ্ট! তবুও কিছুট ইগোতে লাগায় গলায় শক্তি এনে পাল্লা দেয়ার চেষ্টা করে
– শালিকা যখন এমন সুন্দর করে হাসে, তখন বউ এর খোঁজ তো নিতেই হয়। দেন ফোন নাম্বার কথা বলে দেখি৷
আর বেশি কথা বাড়ায় না অদিতি। সবকিছুতে লিমিট রাখাই ভালো আর ও তো মূলতঃ কিছুটা ইজি করিয়েছে শম্পা আপুর জন্য। তবে অদিতি সফল বটে। সেদিনই শম্পা আপুকে ফোন দিয়েছিলো তার হবু বর। কি কথা হয়েছে না হয়েছে সেটা নিয়ে অদিতির মাথা ব্যথা নেই। তার চাওয়া ছিলো – উভয়পক্ষ পরিচিত হোক, স্বাভাবিক হোক দুই জনই।
তারপর আজকের হলুদের অনুষ্ঠান। শম্পার বোন সম্পর্কের সবাই এক রঙের শাড়ি পরছে আর ছেলেরা পাঞ্জাবী। দেখতে ভালোই লাগছে কিন্তু অদিতির কাছে এটাকে নিছক অপচয় মনে হচ্ছে। কারণ কাপড়ের যে কোয়ালিটি তাতে আরেকবার পরার মতো না কিন্তু সবার জন্য কিনতে গেলে যে টাকা খরচ হচ্ছে তাতে ওর বড় চাচার উপর বেশ চাপই যাবে। এর মধ্যে বড় ফুফুর মেজ মেয়ে শাড়ি পায় নি বলে ফুফু বেশ মুখ ভার করে বসে আছেন। ব্যাপারটা হলো বড় ফুফু সবার বড়। উনার মেয়েরাও প্রায় অদিতিদের মা চাচীদের বয়সীই বলা চলে। এখন উনি যে এমন কালারফুল রঙা চঙা শাড়ি পরতে চাইবেন তা কেউ বুঝতেই পারে নি। আর তাছাড়া কেনার সময় ভুল করে কম পড়ে গেছে৷ এখন ঐ কালারের পাওয়া মুশকিল। তাছাড়া কেনা হয়েছে বেশ দূরের জেলা শহর হতে যা এই গ্রাম থেকে বেশ দূরের পথ।
বিয়ে বাড়িতে এমন ছোটখাটো হট্টগোল হবেই যেন। তবে অদিতিই এসে সমাধানের পথ বের করে। ওর শাড়িটা শম্পা আগেই আলাদা করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো যেন ম্যাচিং ব্লাউজ বানাতে পারে। শাড়ি তো তেমন পরে না, ব্লাউজ না থাকারই কথা। সেই শাড়িটা নিয়েই সে বড় ফুফুর হাতে দেয়।
– তুমি কি পরবা?
– শাড়ি ছাড়াও বহু রকম ড্রেস আছে ফুপি। আমি এই কালারের কাছাকাছি তেমন একটা ড্রেস পরে নেবো। আর তাছাড়া আমি শাড়ি খুব একটা ভালো সামলাতে পারি না।
– অ। তা তোমার মতো বয়সের মেয়েরা আজকাল কিন্তু ভালো শাড়ি পরতে পারে। তুমি তো দেখি একালের সাথে তাল মিলাইতে পারবা না।
– তাল মিলাতে গেলে তো আপনার মেয়ে শাড়ি পাইতো না ফুপি। আর আপনি তখন এভাবে মুখ কালো করে বসে থেকে আনন্দের পরিবেশ অন্য রকম করে ফেলতেন!
অদিতির ফুফু শাড়ি’টা নিলেন বটে কিন্তু মুখ’টা করলো তিতা করলা খাওয়ার মতো। এমন কড়া কথা শোনার অভ্যাস নাই তার। বড় বলে সবাই তাকে সমীহ করে আর বেশি সমীহ করে ঝামেলা বাঁধায় এজন্য!
হলুদের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নেই হলো। মেয়েরা সব শাড়ি পরলেও অদিতি পরলো সাদা কমিজের সাথে সাদা চুড়িদার আর চুনরি বাটিকের মাল্টিকালারের একটা ওড়না। সবার মধ্যেও অদিতি আপন আলোয় ও আত্মবিশ্বাসে ভিন্নভাবে উজ্জ্বল।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো বিয়ের দিন, যা কেউ ভাবতেও পারে নি।
(চলবে)