#মেয়েটি_যেন_ভিন্নরকম
(২য় পর্ব)
– অদি, পড়ালেখা কেমন চলছে তোমার?
– ভালো বাবা, আর তাছাড়া আমি যেহেতু চাকরি বাকরি করবো না, আমার সিজিপিএ নিয়ে এত্তো চিন্তা নাই। নোট গিলে পরীক্ষায় ধুমধাড়াক্কা রেজাল্ট করার কোনই ইচ্ছা নাই!
অদিতিদের বাড়ির এই একটা নিয়ম। সারাদিন যে যেখানেই থাকুক, রাতের খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাবার খাবে। এটা অদিতির বাবা আহসানুল হকের অলিখিত নির্দেশ। একইসাথে খাবার টেবিলে মোবাইল নিয়ে বসা যাবে না, এটাও কড়াভাবে বলে দেয়া।
– হুম। তাহলে তো ছেলে দেখা শুরু করতে হয়। চাকরি বাকরি যখন করবি না, তাহলে মন দিয়ে ঘর সংসার কর।
– সেই হিসাব করলে তো তোকেই আগে বিয়ে দিতে হয়। চাকরি পাচ্ছিস না, তো বিয়ে করে ঘর জামাই থাক। শ্বশুরবাড়িতে বাজার সদাই করে দিবি।
আরাম করে মুরগীর একটা হাড় চিবাতে চিবাতে বড় ভাই শোভনের খোঁচার বিপরীতে বড় একটা খোঁচা দিলো অদিতি। বাস্তবতা হলো, মাস্টার্স পাস শোভন বেকারই বলা যায়। এখানে ওখানে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে কিন্তু এখনো ব্যাটে বলে মেলে নি।
– তাহলে কী করতে চাও অদি?
বাবা প্রসঙ্গে ফেরেন। সন্তানদের ক্যারিয়ার নিয়ে আর দশজন বাবার মতো উনিও খুব চিন্তিত। আবার এদিকে উনার চাকরির মেয়াদও শেষের দিকে। তখন কোয়ার্টার সহ চাকুরির অন্য সকল সুবিধা পাওয়া যাবে না। ছেলেটা পড়াশোনায় মোটামুটি, এখনো আশাব্যঞ্জক কিছু করতে পারে নি। মেয়েটা সেই হিসেবে অনেক মেধাবী কিন্তু খামখেয়ালি। কখন যে কী করে আর বলে বোঝা মুশকিল৷
আমাদের দেশের বাবা মায়ের এই এক সমস্যা। সন্তান জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে নিজ পায়ে দাঁড়ানো এমনকী ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে বিয়ে দেয়া পর্যন্ত বাবা মা’কে করতে হয়। অথচ অধিকাংশ সন্তান এই বিয়ের পরেই নিজের সংসার সন্তান নিয়ে এমন নিমগ্ন হয়ে পড়ে যে, বাবা মা নামে পরম নি:স্বার্থবান কেউ যে জীবনে আছে তা বেমালুম ভুলে যায়৷
এসব নিয়ে মাঝে মধ্যেই ভাবে অদিতি। দেশের বাইরে, উন্নত রাষ্ট্রে তরুণরা অল্প বয়সেই নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়ে নেয়। এট বিষয়টা অদিতির দারুণ লাগে।
– বাবা আমি ব্যবসা করবো। মানে উদ্যোক্তা। এখন অনলাইনে এবং অফ লাইনে নানা রকম ব্যবসা করে অনেকেই সফল। কাপড় ধুয়ে হোম ডেলিভারি করা থেকে শুরু করে কেটে ধুয়ে পরিস্কার করা মাছ পর্যন্ত বিক্রি করছে। এমন কোন ব্যবসা করবো। আর শোন আমি দুই একটা টিউশনি করতে চাচ্ছি কারণ প্রতিনিয়ত বাবা মায়ের কাছে যে কোন বিষয়ে হাত পাততে আমার লজ্জা করে৷
এবার রে রে করে উঠেন অদিতির মা লুৎফা রহমান।
– হুম এইটাই তো বাকি ছিলো। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াবে। আর তোমার কিসের এতো অভাব শুনি যে টিউশন করাতে হবে?
– লুৎফা এভাবে বলছো কেন? কোন কাজই ছোট তো নয়ই আর টিউশনি করা গরীব বাচ্চাদের কাজ, এমন চিন্তা তোমার মাথায় আসলো কিভাবে? নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশে স্টুডেন্টরা হোটেল রেস্তোরাঁয় কাজ করে সেখানে আমাদের দেশে তো টিউশনি ভালো অপশন। তবে মা, ইদানীং কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং খুব জনপ্রিয় হচ্ছে ঘরে বসে কাজ। তুমি অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারো৷
– শোন শোভনের বাবা, শম্পার বিয়ের কথা ভুলে যেও না। আগামী সপ্তাহেই কিন্তু যেতে হবে।
– ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। কি মজা শম্পা আপুর বিয়ে। এবার গ্রামে যেয়ে কিন্তু এক সপ্তাহ থাকবো।
উল্লাসে মেতে উঠে অদিতি। খাওয়া শেষ করে দ্রুত রুমে এসে মোবাইল খোঁজে। উদ্দেশ্য শম্পাকে একটু খোঁচাখুঁচি করা। শম্পা ওর বড় চাচার মেয়ে। স্থানীয় একটা কলেজে অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়ে। ভীষণ স্নিগ্ধ, মায়াবী আর গুণী একটা মেয়ে। অদিতিরা বাড়িতে গেলে বড় চাচার বাড়িতেই যেয়ে উঠে। শম্পা নানা রকম পিঠা বানায়, চাচী মজার মজার রান্না করে আর গল্পে আড্ডায় ওদের দিন কেটে যায়।
– আপু, তো দুলাভায়ের কি অবস্থা? রাতে ঘুমাচ্ছে নাকি হবু বউ এর চিন্তায় তার রাতের ঘুম হারাম?
টুক করে ম্যাসেঞ্জারে শম্পার উদ্দেশ্যে একটু খোঁচা পাঠিয়ে দেয় অদিতি। গ্রামে এর অনেক আগেই খাওয়া দাওয়া শেষ। সুতরাং শম্পা এখন রুমে, ফোনের কাছেই থাকার কথা – মনে মনে ভাবে অদিতি।
– তা আমি কিভাবে বলবো, তার সাথে কি আমার কথা হয়?
ফিরতি ম্যাসেজ শম্পার।
– কেন, কথা হয় না কেন? তুমি করবা বিয়ে, সংসার করবা তুমি তা টুকটাক কথা তো বলাই উচিৎ৷
– আমাকে যে দেখতে এসেছিলো, সেই সময়ই যা একটু দেখেছি৷ কথা তো হয় নি। আর এক মাসের মধ্যেই বিয়ে ঠিক। আমাকে মা শুধু বলেছে, ছেলে ভালো আছে, ভালো একটা চাকরি করে। পরিবারও ভালো। রাজী হয়ে যা। আমি তো আর কিছু বলি নি। ব্যাস বিয়ের আয়োজন চলছে। কেউ বলে নি যে ছেলে মেয়ে কথা বলুক বা সেই ছেলেও কখনো ফোন দেয় নি।
শম্পার ম্যাসেজের উত্তরে কি লিখবে ভেবে পায় না অদিতি। কিন্তু ওর মনে হয় বিষয়টা ঠিক হচ্ছে না। তার উপরে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। অদিতির তো এটা মনে হলেই আতংক লাগে। অচেনা জায়গায় অচেনা কারো সাথে সংসার করা! নাহ, শম্পা আপুর বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে – এটা নিয়ে কার সাথে কথা বলা যায় ভাবতে থাকে৷
(চলবে)